পার্বতীর পারে ২


নৈশাহারের বিরতি শেষ। অর্চিষ্মান মুঠোভরা মৌরি মুখে ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাসে উঠল। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইসাব গুনতি সেরে বাস চালু করার সংকেত দিয়ে ড্রাইভারের কেবিনের পর্দা টেনে দিলেন। বাসের আলো নিভে গেছে। অর্চিষ্মান কানে গান গুঁজে চোখ বুজে হেডরেস্টে মাথা হেলিয়েছে। সামনের রো-এর বেটার এনার্জি অবশেষে ফুরিয়েছে। চারদিক চুপচাপ। খালি ড্রাইভারের কেবিনের কেউ দেড় মিনিট অন্তর সশব্দে কফ তুলে ফেলছেন। হোপফুলি জানালার বাইরে। আমাদের সিটের কোণাকুণি সিটে একটা ছেলে ফোন ঘাঁটছে। চরাচরে ওই একটিমাত্র আলোর আয়তক্ষেত্র।

সবকিছু থেকে মন সরিয়ে জানালার বাইরে স্থাপন করলাম। এ প্রাণ রাতের ভলভো। রাস্তার ধারের অন্ধকারে কখনওসখনও দোতলার জানালায় একলা আলো। পরীক্ষার পড়া? ইনসমনিয়া? প্রেমের শুরু? প্রেমের শেষ? রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা শূন্যে ঠেকেছে, মিছিল করে চলেছে শুধু প্রকাণ্ড পাঞ্জাব লরির দল - মধ্যরাতের হাইওয়ের রিয়েল মাফিয়া। সে মিছিলের ফাঁক গলে গলে লং ড্রাইভের পাহাড়মুখো বাস। পুরুষকণ্ঠ। ড্রাইভারজি ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। সাক্ষাতে আর ফোনে কথা বলার টোনে কত তফাৎ। এত রাতে কে জেগে আছে ওঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য? নির্ঘাৎ অন্য কোনও ভলভোর চালক। এক গাড়ি ঘুমন্ত লোকের মাঝখানে জেগে জেগে গাড়ি চালাতে হচ্ছে ওঁকেও।

সবাই পর্দা টেনে দিয়েছে। আমি টানিনি। অর্চিষ্মানকে জিজ্ঞাসা করেছি রাস্তার আলো চোখে পড়লে ওর অসুবিধে হবে কি না, বলেছে হবে না। আমি সিটে শরীর ছেড়ে দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। চলন্ত গাড়ির জানালার পাশ আমার মধ্যে সর্বদাই একটা কিছুর জন্ম দেয়। তারকেশ্বর লোকাল দিত, দুশো উনিশ, ছশো পনেরো, গ্রেহাউন্ড, উবার ট্যাক্সি, ওলা অটো সবাই দিয়েছে। চলন্ত গাড়ির জানালার পাশে আমি বিশুদ্ধ একা। হ্যাপিনেসের বিপজ্জনক কাছাকাছি। মগজের আকাশে ভাবনা এলোমেলো ভাসে। এই ড্রাইভারজির কথোপকথন নিয়ে ভাবলাম, এই অর্চিষ্মানের কিছুক্ষণ আগের একটা ভঙ্গি ভেসে উঠে মিলিয়ে গেল, এই মনে পড়ল ধাবায় গোলাপি রঙের শর্টস্কার্ট পরা মেয়েটাকে কী সুন্দর লাগছিল। একটা দোকানের জটলা পেরোলাম কিন্তু অন্ধকার বোর্ডে জায়গার নাম পড়ার উপায় নেই। অর্চিষ্মান নড়ছেচড়ছে। কুন্তলা, জীবনের অসারসত্য আজই সব ফিগার আউট করে ফেলো না, নেক্সট বেড়ানোর জন্য কয়েকটা রাখ। আবার স্থির হয়ে গেছে সব। একটা রিংটোন বেজে উঠে থেমে গেল। কতদিন পর শুনলাম। ঘুটঘুটে ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে ঘুরছি। মা? মা? একটা বিকেল চিরদিনের মতো ফুরিয়ে যাচ্ছে। 

কোণাকুণি সিটের ছেলেটার ফোন নিভে গেছে। ড্রাইভারজির কথোপকথনও শেষ। এখন শুধু ঘণ্টার ঝর্নার এ এস এম আর দেড়মিনিট অন্তর অন্তর কফ তোলা ও ফেলা। কুলকুণ্ডলিনী দুলে উঠল। বাসটা একটা লরিকে ওভারটেক করেছে। কী অসম্ভব স্পিডে চলছে বাসটা। নিমেষে পুরো জেগে উঠেছি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তার মানে। কীসে ভাঙল? ওভারটেকের তীক্ষ্ণ বাঁকে পেটের ভেতর সবকিছু দুলে ওঠায়? নাকি একটা সুরেলা গলার চিৎকারে? সোনা, ধরে বস! হ্যান্ডল শক্ত করে ধরে আবার চোখ বোজার আগে দেখছি দিগন্তে উঁচু হয়ে উঠেছে উঁচু উঁচু তিনকোণা কালো ছায়া। কাঁধে টোকা পড়ছে। কুন্তলা দেখো দেখো, এখন ঘুমিয়ো না। চোখের পাতা ঠেলে নরম আলো ঢুকে পড়ছে। তিনকোণা ছায়াগুলো এখন আরও উঁচু; গাঢ় উজ্জ্বল কমলা পোঁচ ছড়িয়ে গেছে একটা থেকে আরেকটার চুড়োয়।

ড্রাইভার কেবিনের পর্দা সরে গেছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইসাব চুল আঁচড়ে, গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে টোটাল প্রফেশনাল। চিরুনি হাঁটকে চুলটা ভদ্রস্থ করলাম। অর্চিষ্মান হাতে জল নিয়ে মুখে ঘষছে। ওর প্যারালাল সিটের ভদলোক ভদ্রমহিলা কম্বলের দুটো ঢিপি হয়ে গেছেন। হাত তুলে আমার এসির ভেন্টটা ঘুরিয়ে বন্ধ করছি। গান চলছে মৃদু। হাম তুমহে ইতনা পেয়ার করেঙ্গে কে লোগ হামে ইয়াদ করেঙ্গে। গোলাপি বালিশরা তালে তালে আলতো ধাক্কাধাক্কি করছে। এ মধুমাসের গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না অবশ্য। তুম ভুলে তো তুম হরজাই, হাম ভুলে তো হরজাই। তখন আবার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সে যদির কথা নদীতে। আপাতত না কোই ডর না কোই গম, দিল মে হামেশা পেয়ার কা মৌসম।

বাস বাঁদিকে ঘুরে ব্রেক কষল। চায়পানি বাথরুমকে লিয়ে আধাঘণ্টা ব্রেক। একেকটা কোম্পানির গাড়ি একেকটা দোকানে দাঁড়ায়। আমাদের বাস রিও কোম্পানির। নেমে দেখি আরেকটা রিও লেখা হলুদ বাস পাশে দাঁড়িয়ে। চারপাঁচটা বাঙালি ফ্যামিলি দেখলাম। দোকানের চায়ে চুমুক দিয়ে মনে হল কফি নিলেই বুদ্ধিমানের হত। ব্রেক শেষ। বাস চলল।

আবার সিদ্ধান্তের সময় উপগত। পার্বতী কর্তৃপক্ষ ঊনত্রিশ তারিখে ঘর নেই, তাঁবু আছে বলে কাল রাতে সেই যে মুখে বড়া দিয়েছেন আর খোলেননি। রাত এগারোটার সময় অর্চিষ্মানকে বলেছিলাম কিছু তো জানাল না, কাল সকালেই খোঁজ নিতে হবে মনে হয়। অর্চিষ্মান বলেছিল এখনই ফোন কর। আমি বললাম এই রাত এগারোটায়? অর্চিষ্মান বলল আরে হোটেল তো। তখন মনে পড়ল গল্পউপন্যাসে পড়েছি বাড়ির বড়রা বকেঝকে বলছেন যখন খুশি ঢুকছ যখন খুশি বেরোচ্ছ, এটা কি হোটেল পেয়েছ? অর্থাৎ লোকের বাড়িতে রাত এগারোটায় ফোন না করা গেলেও হোটেলে ডেফিনিটলি যায়। ফোন করিনি অবশ্য। হোয়াটসঅ্যাপে জেন্টল রিমাইন্ডার পাঠিয়েছিলাম। ওঁরা সরি সরি ভুল হয়ে গেছে বলে কিউ আর পাঠিয়েছিলেন। অ্যাডভান্স করাতে বুকিং কনফার্ম করেছিলেন।

সিদ্ধান্তের ব্যাপারটা হচ্ছে বাস থেকে কুলুতে নামব না ভুনতারে। দিল্লি থেকে বাস ডিরেক্ট কসোল যায় না। আপনি কুলুতে নেমে লোকাল বাস বা গাড়ি নিয়ে কসোল যেতে পারেন আবার কুলুর আগের স্টপেজ ভুনতারে নেমে লোকাল বাস বা গাড়ি নিয়ে কসোল পৌঁছতে পারেন। আমরা কুলু টার্গেট করেই বসে ছিলাম, পার্বতী কুটির থেকে ফোন করে জানালেন ভুনতারে নামাই বুদ্ধিমানের হবে। ফোনও রাখলাম আর অ্যাসিসট্যান্ট ভাইসাবও চেঁচালেন ভুনতার! ভুনতার! আমরা খচমচিয়ে নেমে পড়লাম।

একটা বড় চৌমাথা। দুপুরে কী হবে জানি না, ভোরে ফাঁকা আর পরিষ্কার। খবর পেলাম বাসে করে কসোলের পুরো রাস্তা যাওয়া যাবে না, ল্যান্ডস্লাইড হয়েছে, ছোট গাড়ি ভাড়া নিয়ে যেতে হবে। যাঁরা খবর দিলেন  সকলেই গাড়ির মালিক। কাজেই মন খুলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অর্চিষ্মান এদিকওদিক বিশ্বাসযোগ্য লোক খুঁজছিল।

আমিও খুঁজছিলাম। বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ করানো আর ডান-বাঁ-ডান দেখে রাস্তা পেরোনোর ট্রেনিং দেওয়ার স্টেজে মা শিখিয়েছিলেন রাস্তাঘাটে সমস্যা সমাধানের তিনটে অপশন। এক, পুলিস। দুই, ওষুধের দোকান। তিন নম্বর অপশন দিতে গিয়ে মা বলেছিলেন, সোনা আশেপাশে তাকিয়ে দেখবি কাউকে মা মা দেখতে কি না। তার কাছে দৌড়ে যাবি।

খুবই ভাসা ভাসা ইন্সট্রাকশন। গোলমেলেও। কিন্তু সাইকোথেরাপিস্টরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগে একটা মানুষের যা গোলমাল হওয়ার হয়ে যায়। এবং পঁচানব্বই পর্যন্ত টানলেও সেই গোলমালগুলো থেকে মুক্তি মেলে না। অর্চিষ্মান যখন একেতাকে জিজ্ঞাসা করে বেড়াচ্ছিল টের পাচ্ছিলাম আমার বুকের ভেতর একটা ভাসাভাসা আর গোলমেলে ফিলিং নড়ছেচড়ছে। রাস্তার ওপারের চায়ের ঝুপড়ির ভেতরের ছায়াটার মতো। অর্চিষ্মানকে এক মিনিট বলে দৌড়ে রাস্তা পেরোলাম। বয়ামের ওপার থেকে ছায়ার মালিক আবির্ভূত হলেন।

অন্তর্লীনা উপন্যাসেই সম্ভবতঃ নারায়ণ সান্যাল একটি দৃশ্য লিখেছিলেন। দরজা খুলে নায়ক (সম্ভবতঃ কৃশানু) নায়িকাকে (সম্ভবতঃ স্বাহা, নামটা আমার যা পছন্দ হয়েছিল ওই সময়। এতদূর ভেবেছিলাম আমার সারনেম সাহা হলে আমি এফিডেভিট করে নিজের নাম স্বাহা করে দিতাম। মায়ের আপত্তিও শুনতাম না।) প্রথমবার দেখছে। যেন একটা ব্যক্তিত্ব দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তেমনি আমার মনে হল ফুসকো বিস্কুটের বয়ামের আড়াল থেকে একটা প্রত্যয় আত্মপ্রকাশ করল। ভদ্রমহিলার চলাফেরা, বাসনকোসন নাড়াচাড়া, সাজগোজের মধ্যে কোথাও কোনও ইয়ে, মানে, হতেও পারে, তাই বুঝি নেই। ঝকঝকে মুখ, তকতকে কপাল, চিকমিক টিপ। কসোল যেতে চাই শুনে বললেন, বাস যাবে না। রাস্তা খারাপ। ছোটা গাড়ি যায়েগি।

বিশ্বাস করলাম না (যদিও করা উচিত ছিল, পাঁচে শেখা গোলমেলে ইন্সট্রাকশন আজকাল মাঝেমাঝেই হাইন্ডসাইটে অব্যর্থ প্রমাণ হয় যখন বুঝি বয়স হচ্ছে এবং ক্রমশঃ গোলমেলে হয়ে উঠছি) আপনি নিজের চরকায় তেল দিন, আমরা কীসে যাব আমাদেরই বুঝে নিতে দিন বুকে নিয়ে মুখে বললাম ও তাই বুঝি? কী সাঙ্ঘাতিক। তবু বাসগুলো কোথা থেকে ছাড়ছে যদি বলেন। প্রত্যয় আঙুল তুলে চৌমাথার উল্টোদিক দেখিয়ে দিলেন। দৌড়োলাম।

সরকারি বাস। সর্বাঙ্গে ধুলো। ধুলোধূসরিত আলপনা, শিবঠাকুর। মণিকরণের বাস বলে বোধহয় ওয়াহ গুরু কি ফতেহ্‌-ও জুড়ে দিয়েছে। বাসটা বিপজ্জনকরকম কাঁপছিল। অর্থাৎ ইঞ্জিন চালু হয়ে গেছে।  হাতটাত নেড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে বাসে উঠলাম। আমরা লাস্ট দুই প্যাসেঞ্জার। লাস্ট রো-তে জানালার পাশে সিট মিলল। দেড়শো ডেসিবেলে পাঞ্জাবী ভাংড়া-হিপহপ চলছে। ক্রমশঃ নিশ্চিত হচ্ছি পাঞ্জাবী ভাংড়া-হিপহপ আধুনিক ভারতবর্ষের সংগীতের বল্লভভাই প্যাটেল। বিন্ধ্যহিমাচলের যাবতীয় সাংগীতিক সংস্কৃতির ভেদাভেদের ওপর বুলডোজার চালিয়ে মহান মিলন ঘটাতে এসেছেন।

গান চলল। বাস চলল। বাস থামল। লোক নামল। লোক উঠল। আমার স্মৃতিও চলল। যেদিকে স্মৃতির চলা সম্ভব, পেছন দিকে। উনিশশো সাতানব্বই সাল। মার্চ মাস। নাকি এপ্রিল? মোটকথা বসন্ত। মাধ্যমিকের পর দিদিভাইদের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছি। মুকুটমণিপুর। ভোরের ট্রেন থেকে নেমে এবার বাস। বাসস্ট্যান্ডের নাম খাতরা। গনগনে রোদ, গিজগিজে ভিড়, আমরা ফুরফুরে। কারণ আমরা সোয়া ষোলো। গরমেও হিহি, ভিড়েও হিহি, কাঁধে ভারী ব্যাগ, দুটো পা পর্যন্ত পাশাপাশি পাতার জায়গা নেই তাতেও হিহি। হিহির চোটে পেট ব্যথা। বাসের অডিও সিস্টেমে স্পিকারের জায়গায় একটা স্টিলের থালা উল্টো করে সাঁটা। থালার সর্বাঙ্গে ফুটো। কী গান বাজছিল মনে নেই, কী ভলিউমে বাজছিল ভুলিনি। ভলিউমের চোটে স্টিলের থালা থরথরিয়ে কাঁপছিল। গানের গুঁতোর সঙ্গে থালার কাঁপুনির খনখন, আমৃত্যু মনে থাকবে।

একটা পরিবার উঠল। মা ও চার সন্তান। ছোটটা মায়ের কোলে, বাকিরা আশেপাশে। একটা সিমেন্টের বস্তায় যাবতীয় মালপত্র। বড় মেয়েটা, মেরেকেটে চোদ্দ, ওস্তাদ টাইপ। মা আর ছোট ভাইবোনদের অর্চিষ্মানের পাশের তিনটে খালি সিটে বসতে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে রইল। আকাশি রঙের সালওয়ার কামিজ, মুখে আলতো মুচকি হাসি। একটা ফোনের গর্বিত মালিক। ফোনটা বাজামাত্র কামিজের ভেতর থেকে বার করে স্পষ্ট গলায় কথা বলছে। ভাবছিলাম উঠে ওকে বসতে দিই কিন্তু অদ্ভুত ভাবতে পারে ভেবে সাহস হচ্ছিল না। এমন সময় ঠিক ওর সামনের সিটের মহিলা উঠলেন। ওঁর স্টপ এসে গেছে। মেয়েটাকে বললেন, বৈঠ যা। মেয়েটা উৎসাহ দেখাচ্ছে না এদিকে আশেপাশের লোক সিটটার দিকে চোরাগোপ্তা দৃষ্টি হানছে। মহিলার স্টপ এসে যাচ্ছে, বাস পাগলের মতো লাফাচ্ছে, মহিলা সিটটা গার্ড দিতে দিতে মেয়েটাকে ধমকাচ্ছেন, বৈঠ যা বৈঠ যা। মহিলার মুখটা ভালো করে দেখে রেখেছি। ভুলে যাব জানি কিন্তু ভালোলাগাটা মনে থাকবে।

সিটে বসেই মেয়েটা মায়ের কাছ থেকে সিমেন্টের বস্তার দায়িত্ব নিল। হাত বাড়িয়ে মেজবোনকে ডাকল, ইধার আ। মেজবোন মেরেকেটে বারো। লজ্জা লজ্জা হেসে হ্যান্ডেল ধরে ধরে দিদির কাছে গেল। পরনে টুকটুকে লাল চুমকি বসানো কামিজ, কল্পনাতীত কোঁচকানো। ডেফিনিটলি ওর জন্য কেনা হয়নি। পায়ের কালো চটিটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের। একপাটি এখনও জুতো বলে চেনা যাচ্ছে। অন্য পাটির অর্ধেক সোল খুলে বেরিয়ে গেছে। দুই বোন কানে কানে ফিসফিসিয়ে হাসাহাসি করছে। বাসটা একটা প্রকাণ্ড ঝাঁকুনি দিল। আমার সঙ্গে সিটের সংযোগ সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়েছে। অর্চিষ্মান বলছে কী করছ কুন্তলা ধরে বোস। দাও ব্যাগ দাও। বলে আমার কোলের ব্যাকপ্যাক টেনে নিজের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি ইনডিপেন্ডেন্ট উওম্যান, ব্যাগ টেনে ফেরত নিচ্ছি। অর্চিষ্মানের ওপারে বসা সেজ বাচ্চাটা, মেরেকেটে পাঁচ, গড়িয়ে অর্চিষ্মানের গায়ে সেঁটে গেছে। বাচ্চাটির হাত থেকে স্টিলের টিফিনবাক্স, ভাগ্যিস খালি, মাটিতে পড়ে গেছে। বড় মেয়েটা চেঁচিয়ে টিফিনবাক্সটা কুড়িয়ে নিজের জিম্মায় নিচ্ছে। অর্চিষ্মান বাচ্চাটাকে সরি সরি বলছে। বাচ্চাটা অর্চিষ্মানকে সন্দিগ্ধ লুক দিচ্ছে।

কন্ডাকটর টিকিটের দাম নিয়েছেন কিন্তু টিকিট দেননি। ওঠার পরেই জানতে পেরেছি ল্যান্ডস্লাইড সত্যি, বাস গোটা রাস্তা যাবে না সত্যি, ছোট গাড়ি যাবে সেটাও সত্যি। জরি বলে একটা জায়গায় নেমে বাকি রাস্তাটুকুর ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য নব্বই টাকার বদলে ষাট টাকা করে একশো কুড়ি টাকা ভাড়া নিয়েছেন। কন্ডাকটর ভাইসাবের নাকচোখমুখত্বক তো ভালোই, সবথেকে ভালো হচ্ছে মুখমণ্ডলের প্রশান্তি। আমার এ রকম মুখ দেখলে হিংসে হয়। আমার মুখ এ রকম নয়। আমার মুখ পাঁচশোরকম ভায়োলেন্ট ইমোশন মাখামাখি। হিংসে কমাতে জানালার বাইরে তাকালাম। সাইকেল না কীসের দোকানে দুটো ছেলে বসে আছে। চব্বিশপঁচিশ হবে। একজনের দিকে দ্বিতীয়বার ফিরে তাকাতে হল। অর্চিষ্মানকে বললাম এ সব দিকের লোক ভালো দেখতে হয় কিন্তু। অর্চিষ্মান বলল আমি তো কবে থেকে বলছি। তা বলছে বটে। বুঝলে কুন্তলা, দিল্লিতে যত সুন্দর দেখতে লোক দেখবে খোঁজ নিয়ে দেখ হয় পাঞ্জাবি নয় পাহাড়ি।

বাসটা যা ঝাঁকাচ্ছিল বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। তবে এটা ড্রাইভারজির দোষ না। ধস নেমে রাস্তাটা বেসিক্যালি পাহাড় হয়ে গেছে। তার মধ্যে আমাদের লাস্ট রো। দুজনের কোলে ব্যাকপ্যাক, পায়ের কাছে কাঁধের ব্যাগ। একবার ঝাঁকুনিতে ব্যাগ গড়িয়ে সিঁড়িতে পড়ে গেল। দরজা খোলা থাকলে রাস্তায়, রাস্তায় পড়লে গড়িয়ে সোজা পার্বতীতে চলে যেত। কক্স অ্যান্ড কিংস-এর ব্যাগ। এই ব্যাগ নিয়ে মাবাবা বেড়াতে যেতেন। নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।

এর মধ্যে পার্বতী কুটির কলিং। হ্যালো বললাম। ওপার থেকে চেনা পরিশীলিত কণ্ঠ। আই নিড টু অ্যাপোলজাইজ। আই ওভারবুকড। ইয়োর টেন্ট ইজ নো মোর অ্যাভেলেবল।

নিজের যে জিনিসটা আমি ভেতর থেকে অপছন্দ করি তা হল ইমোশনাল প্রতিক্রিয়াশীলতা। রাগ, দুঃখ, আনন্দ সবই আমার মারাত্মক দ্রুত এবং মারাত্মক তীব্র হয়। অথচ নিজেকে চমকে দিয়ে ওই বাসের ঝাঁকুনি ওই কানফাটানো হিপহপের মধ্যে আমি বললাম, ওকে। আমি ঠাণ্ডা রইলাম বলে ভদ্রলোকও গরম হওয়ার সুযোগ পেলেন না। আপনি একটুও চিন্তা করবেন না কুন্তলাম্যাম, আপনার টাকা রিফান্ড করে দেব। নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে নতুন হোটেল খুঁজে দেব। না হলে আমার নাম অমুক না।

ফোন কেটে অর্চিষ্মানকে খবরটা দিলাম। অর্চিষ্মানের রাগ, দুঃখ, আনন্দ সবই ধীর এবং কমের দিকে। আমি সমস্যা নিয়ে ভাবি ও সমাধান নিয়ে। বলল লিটল ইটালিতে ফোন করে দেখ যদি আজকেও থাকতে দিতে পারে। করলাম। ভদ্রলোক এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। মনটা খচ করে উঠল। গুড ফ্রাইডের উইকএন্ডে চাইতেই ঘর পাওয়া যাচ্ছে? যাকগে মরুকগে। লিটল ইটালি ফোন না রাখতে রাখতে পার্বতী কুটির কলিং। ওঁরা আমাদের বিকল্প অ্যাকোমোডেশন ঠিক করে ফেলেছেন। লাফিয়ে বললাম কেয়া বাত। কোথায় কোথায়?

ভদ্রলোক বললেন গিংলিংগুং। অ্যাকচুয়ালি ভদ্রলোক গিংলিংগুং বলেননি কিন্তু যেটা বলেছেন আর বাসের ঝাঁকুনি ও হিপহপ পেরোতে পেরোতে আমার কানে শব্দটা যে অবয়ব ধারণ করেছে একটা জিভে বলতে হলে সেটাকে গিংলিংগুং-ই বলতে হয়। গিংলিংগুং কেবিন অ্যাকোমোডেশন , মচৎকার সার্ভিস, মচৎকার ভিউ। আমি আরও দু'বার নামটা জিজ্ঞাসা করলাম। প্রথমবার ভদ্রলোক বললেন গিংমিংটুং, পরের বার লিংমিংগুং। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, ইউ আর ভেরি কাইন্ড বলে ফোন রেখে দিলাম। অর্চিষ্মান বলল নামটা না বুঝেই রেখে দিলে তো? আমি বললাম আরে ভাই শুনলে তো কতবার জিজ্ঞাসা করলাম। আমি ওকে স্ট্রেসহীন অবস্থায় অর্চিষ্মান সম্বোধন করি। অল্প স্ট্রেসে বস্‌ আর বেশি স্ট্রেসে ভাই। অর্চিষ্মান চুপ করে গেল। পরিস্থিতি নরম করার জন্য বললাম নামটায় অনেকগুলো গ আর অনুস্বর আছে তবে গ্যাংটকে গণ্ডগোল নয়। বলে দাঁত বার করলাম। অর্চিষ্মান চোখ ঘোরাল।

এতক্ষণ আমাদের বুকিং-এর ঝামেলা চলছিল বলে বাইরের দৃশ্য থেমে ছিল না। জঙ্গলছাওয়া পাহাড়ের বুক চিরে হইহই করে পার্বতী যেমন ছোটার ছুটছিল অর্চিষ্মান বলল স্পিড দেখেছ? পড়লেই পটল। সায় দিলাম। একমিনিট ভেবে বললাম হ্যাঁ কিন্ত পড়া ডিফিকাল্ট হবে। ঝোপঝাড়ে আটকে যাব। অর্চিষ্মান বলল হুম্‌ম্‌ম্‌, খুব জোরে ঠেলতে হবে। বলতে বলতে চশমার আড়ালে ওর চোখ ঘষা কাচের গুলির মতো হয়ে উঠল। পাক্কা পঁয়ত্রিশ গোনার পর সারা শরীর ঝাঁকিয়ে ঘোর ছিঁড়ে বেরিয়ে গলা ঝেড়ে বলল পার্বতী বিয়াসের ট্রিবিউটরি, তাই না? বললাম সে রকমই তো বইতে লেখা ছিল। পার্বতী বিয়াসের উপনদী। অর্চিষ্মান বলল আর ডিস্ট্রিবিউটরিগুলোকে কী বলে? বললাম শাখানদী। অর্চিষ্মান বলল ট্রিবিউটরি ডিস্ট্রিবিউটরি বেটার। কনট্রিবিউট করে তাই ট্রিবিউটরি, ডিস্ট্রিবিউট করে তাই ডিসট্রিবিউটরি। উপফুপো শাখাফাখার থেকে বোঝা সহজ। জবাব দিলাম না। কত লোক তো পৃথিবী ফ্ল্যাট বিশ্বাস করে জীবন কাটিয়ে দেয়।

এমন সময় কন্ডাক্টটর এসে বললেন রাস্তা খুলে গেছে কাজেই আপনাদের তিরিশ তিরিশ আরও ষাট দিতে হবে। খুব খুশি হয়ে ষাট টাকা দিয়ে দিলাম। ভুনতার চৌমাথায় পাওয়া সমস্ত বিনাপয়সার পরামর্শ এককান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দেওয়ার দূরদর্শিতায় নিজেদের পিঠ চাপড়ালাম। বাস ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে চলল। কন্ডাকটর টিকিট কাটা সেরে পেছনের সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালেন। আমি যে অনুভূমিক রেলিংটা ধরে আছি সেটায় হেলান দিয়ে। আমি কোথায় ধরব বুঝতে পারছি না। এখন রেলিং ধরলে মনে হতে পারে আমি ওঁর কোমরে খোঁচা দিচ্ছি। তার থেকে খরস্রোতা পার্বতীতে পড়ে মৃত্যুও বরণীয়। অর্চিষ্মান আমার সংকট বুঝে, এখানটা ধর, বলে ও নিজে উল্লম্ব রেলিং-এর যে জায়গাটা ধরেছে সেখানটা দেখাচ্ছে। দেখাতে দেখাতেই বুঝতে পেরেছে কেন ওই জায়গাটা আমার পক্ষে ধরা সম্ভব না। ওহ্‌, তুমি তো আবার...বলে বাকিটুকু গিলে মুচকি হাসছে। ওর ছয় তিনের প্রিভিলেজ যে আমার পাঁচ দুইয়ের কাছে অ্যাভেলেবলই নয় সেটা ও ঘনঘন ভুলে যায়। বা ভুলে যাওয়ার ভান করে।

এমন সময় একটা রামঝাঁকুনি মেরে বাসটা একেবারে থেমে গেল। জানালার কাচে কপাল সেঁটে দেখলাম যতদূর চোখ যায় গাড়ির লাইন। কন্ডাকটর ফোনে কথা বলতে বলতে কোথায় নেমে চলে গেলেন। ড্রাইভার চেঁচিয়ে বললেন আপনারা নেমে কিছুটা হেঁটে যান, সামনের মোড়ে নতুন বাস ওয়েট করছে।

সবাই নেমে হাঁটতে শুরু করল। আমরাও করলাম। পাছে নতুন বাসে সিট না পাওয়া যায় সে জন্য বাকি হাঁটিয়েদের যথাসম্ভব ইনকন্সপিকুয়াসলি অতিক্রম করে যেতে লাগলাম। মেলাগ্রাউন্ডে যেমন করি। ভার্বাল কমিউনিকেশন অ্যাভয়েড করে চোখে চোখে তাকিয়ে স্পিড বাড়াই। অতিক্রম করে আবার চোখে চোখে হাই ফাইভ দিয়ে সামনের টার্গেট সেট করি। আবার স্পিড বাড়াই।

এই করে মোটামুটি বাসের সব যাত্রী আর নদীর ও পারের মালানা হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্টকে পেছনে ফেলে অনেকটা হেঁটে একটা জায়গায় পৌঁছলাম যেখানে রাস্তাটা একটা খাদ ঘিরে অশ্বক্ষুরাকৃতি চেহারা নিয়েছে। ক্ষুরের একদিকে কংক্রিটের তপ্ত ব্যারিকেডে তশরিফ ঠেকিয়ে বসলাম। কে কাকে মনে নেই,  জিজ্ঞাসা করলাম পথে বাস দেখলে? অন্যজন বলল থাকলে তো দেখব।

ওপরে রোদ নিচে কংক্রিটের ব্যারিকেডের মধ্যে বসে আছি তো আছিই। ট্যাক্সি যাচ্ছে, বাইক যাচ্ছে, পদাতিক যাচ্ছে, বাসের দেখা নেই। অবশেষে যাঁদের ওভারটেক করেছিলাম সেই সহযাত্রীরা একে একে আবির্ভূত হলেন। প্রথম দেখা গেল তিন মহিলার এক গ্রুপকে। এঁরা হাটার স্পিডে কড়া কম্পিটিশন দিয়েছিলেন। মোড় ঘুরে আমাদের দেখেই হাসিতে তাঁদের শরীর দুলে উঠল মনে হল। চোখ সরিয়ে নিলাম। একে একে বাসের প্রায় সব লোক এসে উপস্থিত হলেন। শুধু কন্ডাকটর মিসিং। মোড়ের মাথায় অর্চিষ্মানের ওপাশে বসা মা ও চার সন্তানের পরিবার ভেসে উঠলেন। ওঁরা হাঁটা না থামিয়ে আমাদের পেরিয়ে যাচ্ছেন অর্থাৎ বাসের জন্য অপেক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেজ মেয়েটার ডানপায়ের চটিটার ভাঙা হাফসোল প্রতি পদক্ষেপে ফ্যাট ফ্যাট করে রাস্তায় আছাড় খাচ্ছে। অনেকেই অপেক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দেখলাম। এক লম্বা ও এক বেঁটে পুরুষ জুটি, লম্বা পুরুষটির মুখ সর্বদাই হাসিহাসি, আমাদের পরপরই এসে ব্যারিকেডে বসেছিলেন, প্যান্ট ঝেড়ে হাঁটা দিলেন। আমাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন তিন সুবেশা মহিলার দল। পাশে এসে বসার পর আড়চোখে দেখেছি দিব্যি হাসিখুশি তিনজন, আমার মতো ক্রনিক উদবেগে ভোগা চেহারা না। বললেন শায়দ আগে হোগি বাস। বলে হাঁটতে হাঁটতে ঘোড়ার ক্ষুর পেরিয়ে ছায়াঘন জঙ্গলের ভেতর ঢুকে গেলেন।

অর্চিষ্মান আর আমি ফাঁকা রাস্তায় বসে রইলাম। ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বাস নেই। সম্ভবতঃ ছিল না কোথাও। আসছে না ফর শিওর। আমার সরকারিফেটিশ এই ট্রিপে চোট খেয়েছে। ফুডিং লজিং ট্রান্সপোর্ট মিলিয়ে ওই একটিবার সরকারি পরিষেবার দ্বারস্থ হয়েছিলাম, সে ষাট টাকা মেরে পালিয়েছে। ফাঁকা ট্যাক্সিও পাচ্ছি না যে প্রাইড বিসর্জন দিয়ে, ভুনতারের লোকজনের পরামর্শ না শোনা ভুল হয়েছে কান মুলে উঠে পড়ব। পার্বতী কুটিরে ফোন করে বিপদের কথা জানালাম। আপনারা কি গাড়ি পাঠাতে পারবেন? পরিশীলিত কণ্ঠ বলল, নিশ্চয় কুন্তলাম্যাম। ট্যাক্সির নম্বর দিয়ে দিচ্ছি আপনি নিজে কথা বলে নিন। এক কাজ করুন, কুন্তলাম্যাম, ট্যাক্সি নিয়ে পার্বতী কুটিরে আসারও দরকার নেই। সোজা গিংপিংশুং-এ ... থ্যাংক ইউ বলে ফোন রেখে দিলাম।

ট্যাক্সিওয়ালা বললেন দু'মিনিটে জানাচ্ছি। পাঁচ মিনিট পর ফোন করাতে জানালেন ওঁর কাছে এখন কোনও ট্যাক্সি অ্যাভেলেবল নেই কাজেই ভেরি সরি।

রোদ অন্ধ করছে। পিঠের ব্যাগ পাথর। অদূরে তিনটে দোকানের জটলা। মাঝখানের দোকানটার--যার বোর্ডে রণবীর সিং-এর হস্তধৃত পেপসির বোতলের নিচে অল ক্যাপসে লেখা শিব সুইটস--দিকে এগোলাম। কর্তৃপক্ষ বলতে এক ভদ্রলোক, এক ভদ্রমহিলা, একটি কিশোরী। ভদ্রলোক খদ্দের সামলাচ্ছেন। ভদ্রমহিলা রান্না করছেন। কিশোরী এঁটো থালাবাটি তুলছে। আমরা অর্ডার দিয়ে বসে আছি। পাশের টেবিলে একদল জোয়ান ছেলেমেয়ে পনেরো সেকেন্ডে একেকটা করে রুটি খাচ্ছে। মহিলা রুদ্ধশ্বাসে রুটির পর রুটি বেলছেন, সেঁকছেন, ফুটবলের মতো ফোলাচ্ছেন। কুড়ি হাত দূর থেকেও বোঝা যাচ্ছে বিশ্বমানের রুটি।

আমরা দেরি দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। বললাম যা রান্না আছে তাই দিয়ে দিন, রুটিও চলবে। ভদ্রলোক আশ্বাস দিলেন কিচ্ছু দেরি হয়নি। বলে হাঁক পেড়ে দুই নিমরাজি যুবককে ধরে আনলেন। তারা দোকানের কোণে লুকিয়ে থাকা আরেকটা রান্নাঘরে আমাদের অর্ডার রেডি করল। ভদ্রলোক সেগুলো  টেবিলে পৌঁছে দিলেন। একপ্লেট আলু পরোটা, একপ্লেট ম্যাগি।

আমাদের বাস টাকা মেরে পালিয়েছে, আমাদের হোটেল বুকিং বাতিল। আমরা অতীতের সমস্ত বাজি হেরেছি, আমাদের ভবিষ্যৎ রোদে ঝলসে গেছে। কিন্তু আমাদের বর্তমান এখনও অক্ষত। অতীতের অভিশাপমুক্ত, ভবিষ্যতের ভাবনাহীন।

সে বর্তমানের আলুপরোটা আর ম্যাগিতে মন দিলাম। যে রোদ এতক্ষণ চামড়া পোড়াচ্ছিল, টেবিলের কোণা ঘেঁষে লাজুক হেসে বসল। নরম, পাতলা আলুর পরোটা দু'আঙুলে ছিঁড়ে মুখে পুরলাম। কাল রাতে পাঞ্জাবি ধাবার পরোটার থেকে একশোগুণ বেটার। স্বাভাবিক। প্রত্যাশা সর্বদাই পারফরম্যান্স খারাপ করে। পাঞ্জাবি ধাবায় শুধু পরোটা বানালে হবে না, সাইজে বড় করতে হবে, মাখখ্‌ন মারতে হবে। পরোটা বানানোর থেকে ডিগবাজি খাওয়া বেশি। শিব সুইটসের পাহাড়ি আলুপরোটার অত প্রমাণের দায় নেই। তাই সে খোলা মনে ভালো হতে পেরেছে।

ম্যাগির কথা আর নতুন করে কী বলব। আমার জীবনের একটা বড় সাইজের আনন্দকণা ওটা। (অর্চিষ্মান বলছে ওরও নাকি) পাহাড়ে, সমতলে ম্যাগি আমাকে এ জীবনে অনেক আনন্দ দিয়েছে। হোস্টেলে, বাড়িতে, তুঙ্গনাথের টপে।

অর্চিষ্মান চা বলল। একমত হতে গিয়েও মাইন্ড চেঞ্জ করলাম। কাল রাতের চা স্মরণে এল। বললাম আমি চায়ে নেই জলে আছি। চা জল সেরে টাকা মিটিয়ে নবোদ্যমে ট্যাক্সি শিকারে নামলাম। গুগল ম্যাপে দেখাচ্ছিল পার্বতী কুটির হেঁটে সাত কিলোমিটারের কাছাকাছি। একবার ভাবলাম হেঁটেই মারি। তারপর মনে হল ক্লান্ত শরীরে পিঠে বোঝা নিয়ে হঠকারিতা হয়ে যাবে।

রাস্তার এপারে অর্চিষ্মান, ওপারে অল্প এগিয়ে আমি দাঁড়ালাম যাতে আমাদের যৌথ জাল গলে একটি ফাঁকা ট্যাক্সিও পালাতে না পারে। ফাঁকা ট্যাক্সি প্রায় আসছিলই না, যে ক'টা আসছিল মাথা নেড়ে পালাচ্ছিল। দশ মিনিট পেরোলে নিয়মমতো আমার অ্যাটেনশনে টান পড়ল। কান চুলকোতে চুলকোতে চোখ বুজে হাই তুলছি এমন সময় অর্চিষ্মান চেঁচিয়ে উঠল কুন্তলা কুন্তলা কী করছ ওটাকে ধর... চোখ খুলে দেখলাম একটা ট্যাক্সি ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে অর্চিষ্মানকে পেরিয়ে আমার দিকে প্রবল বেগে এগিয়ে আসছে। আবার চোখ বুজে ফেলে সেটার সামনে ঝাঁপ দিলাম।

ভাইসাব রাজি হয়ে গেলেন। ওঁর পার্বতী কুটির পাতা হ্যায়। পাঁচশো রুপেয়া লাগেগা। এটা দরাদরির সময় নয়। উঠে পড়লাম। পরিশীলিত কণ্ঠের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে সেই চমৎকার কেবিনে ডিরেক্টলি না গিয়ে আপাতত পার্বতী কুটিরেই যাচ্ছি। কারণ এক, অর্চিষ্মান মনে করাল, কেবিনের নাম আমরা এখনও জানি না। অধোবদন হলাম দেখেই বোধহয় বলল নাম জানলেও একবার পার্বতী কুটির যাওয়া দরকার। বুকিংও ফোনে ফোনে, ক্যান্সেলও ফোনে ফোনে, এতখানি চোরে কামারে দেখা নেই বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

কাজেই ট্যাক্সি চড়ে পার্বতী কুটিরের দিকে চললাম। পথের মাঝে পড়ে পাওয়া আবার একটুকরো বর্তমানের আকাশবাতাস দেখতে দেখতে। একদল গাছ, নাম জানি না, তন্বী কাণ্ড, নমনীয় শাখা, চিকন পাতা। সবথেকে অপূর্ব সে পাতাদের রং। বৃষ্টির পর রিষড়ার বাগানের কলাপাতার মতো। যদিও এই পাতাগুলো কুচি কুচি। গাছগুলো যেন হাত তুলে যত পারা যায় আলো শুষে নিচ্ছে।

ভাইসাব জানতে চাইলেন আমরা কেরালা সাইডের কি না। আমাকে এই প্রশ্নটা এত লোকে এতবার করেছে যে অনেকবার ভেবেছি মালয়ালমে হাই হ্যালো গুডমর্নিং শিখে রাখব। এখানে প্রশ্নটা স্পেসিফিক্যালি আমাকে করা হয়নি কাজেই অর্চিষ্মান দাবি করছে ওকেও ভদ্রলোক কেরালার বলে ধরে নিয়েছেন। মালয়ালি পুরুষদের একটা পার্টিকুলার লুক দুজনেই পছন্দ করি। সে জন্যই বোধহয় অর্চিষ্মান অত খোলা হেসে নিজের বাঙালিত্বের ওনারশিপ স্বীকার করল। এবার প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় যে প্রশ্নটা আসে সেটা হচ্ছে ভাইসাব কোন সাইডের।

রিয়ারভিউ মিররে চোখে চোখ রাখলেন ভাইসাব। মালানা পাতা হ্যায়?

নেহি হ্যায় আবার?

ম্যায় মালানা সে হুঁ। আবার রিয়ারভিউ মিররে চোখে চোখ।

কুছ লাগেগা তো বোলনা। অর্চিষ্মান কিউ-টা পিক আপ করবে কি না দোনামোনা করছে। শেষমেশ করেই ফেলল। দাম কী রকম?

ঝর্নার মুখচাপা পাথর সরিয়ে নিল কেউ। বিজনেস ক্রিম পার তোলা দেড় হাজার, রেড আইস দো হাজার, মিডিয়াম ক্রিম ঢাই হাজার, সুপার ক্রিম পাঁচ সে শুরু হোকে আট হাজার।

আমি বললাম, ওরে বাবা। এত?

ভদ্রলোকের দয়ালু চোখ আয়নায় আমার দিকে ঘুরল। নো ক্যান্সার, ম্যাডাম। গ্যারান্টি।

মেনে নিলাম। এ গ্যারান্টির কাছে আট হাজার তুশ্চু। আমরা আর কথা বাড়াচ্ছি না দেখে ভাইসাব বললেন ফোন নম্বর লে লো, অগর মন করে তো কল কর লেনা। রুম ডেলিভারি হো যায়েগা।

পরিষেবার কোয়ালিটিতে চমৎকৃত হয়ে জানালার বাইরে তাকাতেই চেনা মুখ। তিন সুবেশা অনুদ্বিগ্নবদনা মহিলা রাস্তার পাশে ব্যারিকেডে বসে পা দোলাচ্ছেন। আমরা রোককে রোককে, ইনকো লে লেতে হ্যায় বলতে বলতে ভাইসাব শোঁ করে পেরিয়ে এলেন। একজন কো হি লে সকতে হ্যায় সারজি।

আমরা জানালা দিয়ে জোরে জোরে হাত নাড়লাম। মহিলারাও প্রত্যুত্তরে জোরে জোরে হাত নাড়লেন। এক মিনিট কাটতে না কাটতে সামনে লম্বাবেঁটে জুটি। এবার আমরা উদ্যোগ নিয়ে গাড়ি থামালাম। দুই ভদ্রলোক আমাদের চিনতে পেরে গাড়ির কাছে এগিয়ে এলেন। লম্বা ভদ্রলোকের মুখে এই এতখানি হেঁটে আসার পরও একই হাসি। ওঁরা আমাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছেন। বলছেন, থোড়া আগে ছোড় দো। আমরা বলছি জরুর জরুর, ড্রাইভারজি নিরুত্তর। বলছেন সির্ফ এক কো লে সকতে হ্যায়। ভদ্রলোক দুজন হাসিমুখে সরে দাঁড়ালেন। গাড়ি চলতে শুরু করল। আমরা চুপ করে গেছি দেখেই বোধহয় ড্রাইভারজি বললেন ইয়ে নেপালি লোগ আচ্ছে নহি হোতে হ্যায় ম্যাডাম।

এঁরা নেপালি বুঝি? কৌতূহলী হলাম। এই সহজ সত্যটা ধরতে না পারার আমার অক্ষমতায় ড্রাইভারজির চোখে একটুক্ষণ আগের দয়া ফিরে এল। দেখা নহি, পি রাখ্‌খা হ্যায়?

অ্যাঁ! তাই নাকি? ডবল চমৎকৃত হলাম। ভদ্রলোকদের ন্যাশনালিটি তো বুঝিইনি, ব্লাড অ্যালকোহল কাউন্ট সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলাম। ড্রাইভারজি আমাকে আশ্বস্ত করলেন তিনি গুল মারছেন না। নেপালি লোগ অ্যায়সে হি হোতে হ্যায়।

ওঁর বিশ্বাসের দার্ঢ্যে আমরা সম্পূর্ণ ঘাড় পাতছি না দেখেই বোধ হয় বললেন তাই বলে কি সবাই হয়? হাতে গোনা নেপালি ভালো বেরিয়েছে এমনও দেখা গেছে। বাদবাকি সব এ রকমই।

পাঁচমিনিট কাটতে না কাটতে সামনে আবার কয়েকটা মানুষ। মা ও সন্তানরা। বললাম এঁদের তুলে নিই প্লিজ, ভাইসাব কান দিলেন না। একজনকে হলে তুলতাম, প্রমিস। অর্চিষ্মান একবার বলল, এতটুকুটুকু বাচ্চা, কতদূর হাঁটবে? ড্রাইভারজির গলায় সমবেদনা ফুটল। জেনুইনই মনে হল। সে আর কী করা যাবে সার। হাঁটার নসিব নিয়ে জন্মেছে। দেখছেন না বাবা নেই। নির্ঘাত মদ খেয়ে কোথাও উল্টে পড়ে আছে। ইয়ে ভি তো নেপালি হ্যায়।

আমি পেছনের কাচ দিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। পিঠে ব্যাগ কোলে বাচ্চা নিয়ে মা হাঁটছেন। সিমেন্টের বস্তাটা বড় মেয়েটার এক হাতে। এক হাতে সেজ বাচ্চাটার হাত। মেজ বাচ্চাটা দিদির পাশ ঘেঁষে তাল রাখছে।

তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রথমবার একটা জিনিস স্ট্রাইক করল। সেই বাস থেকে দেখছি অথচ খেয়াল করিনি। মায়ের কোলে পুঁটলিসম বাচ্চাটার লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারছি না, সেটা বাদ দিলে যে তিনটে বাচ্চা মাকে ঘিরে হাঁটছে তিনটেই মেয়ে।

আমি জানি না বাচ্চা মেয়েগুলো নেপালি কি না, বাচ্চা মেয়েগুলোর বাবা নেপালি কি না, তিনি মদ খেয়ে কোথাও উল্টে পড়ে আছেন কি না। আমি শুধু দেখতে পাচ্ছি একজন একলা মা রাস্তায় হেঁটে চলেছেন। সংসার এবং সন্তানসমূহ - যাদের তিন চতুর্থাংশ মেয়ে - নিয়ে। একজন পুরুষের ফেলে দেওয়া হাফসোল জুতো পরে।

কতদূর হাঁটবেন? আমি জানি না। আমি শুধু জানি আমি গাড়ি থামিয়ে এঁদের তুলব না। আমি এও জানি আমার মতো লোকেই পৃথিবীটা ভর্তি। গাড়ি বাঁক পেরিয়ে গেল। একমুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করলাম। আমি জানি না মা কী করে পারবেন। ওইটুকুটুকু মেয়ে কী করে পারবে। তবু আমার সমস্তটুকু দিয়ে বুকের ভেতর, মাথার ভেতর বারবার উচ্চারণ করলাম। ব্রেক দা লুপ। ব্রেক দা লুপ। ব্রেক দা লুপ। গেট আউট। গেট আউট। গেট আউট।




Comments

  1. কী লেখা!
    পাঠককে সেই সময়খণ্ডের মধ্যে, লেখকের মনের মধ্যে মগজের মধ্যে মায় রক্তস্রোতের মধ্যে পুরে ফেলা-

    ReplyDelete
    Replies
    1. বিশ্বাস করলাম কিন্তু।

      Delete
  2. দারুন!
    আর শেষটা দুর্দান্ত হার্ড হিট্টিং।

    লেখার শুরুর দিকের জানলার বাইরের দেখার বর্ণরা পড়তে পড়তে, আমার নিজের শীতের শেষের দিকের লোকাল ট্রেনে চড়ে বসার কথা মনে পড়লো। জানলার বাইরে সরে সরে যাওয়া পৃথিবী দারুন লাগে দেখতে। মাঠ ঘাট, ক্ষেত, গাছ পালা, আবার দেখবো বলে শিয়ালদাহ থেকে অফ টাইমের লোকাল ট্রেনে চড়ে বসেছিলাম। আর সেই ট্রেনের এক ফেরিওয়ালার সুর করে হাঁকতে হাঁকতে যাওয়া এই কটা লাইন এখনো মনে আছে, শেয়ার করে দিলাম:
    ট্রেন বড়ি লম্বি হ্যায়
    কাহানি বড়ি পুরানি হ্যায়
    সেই পুরানি পরম্পরায় তৈরি মানিব্যাগ
    মানি শেষ হয়ে যাবে, মানিব্যাগ থেকে যাবে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওরেন্না। এ তো ফিলজফি। এই মুক্তো ভাগ করে নেওয়ার জন্য থ্যাংক ইউ, রাজর্ষি।

      Delete
  3. দুর্দান্ত বললে কম হবে। সেই কবে থেকে অবান্তরের পাঠক আমি, লেখার বদল টের না পাওয়ার মতো রেগুলার পাঠক। মানে বোঝাতে পারলাম না, বাড়ির লোকে যেমন রোগা মোটা চট করে ধরতে পারে না, অনেকদিন পর পারে তেমন আর কি। এই লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হল, বেশ অনেকটা বদলল হয়ে গেছে অবান্তরে। তাকিয়ে পুরোনো লেখা পড়লাম, আতে এ তো অনেকদিন ধরেই হচ্ছে।
    যাই হোক, এই লেখাটা অতি সুন্দর হয়েছে।
    তবে তোমরা দুজনেই দেখছি ভয়ানক মাথা ঠান্ডা লোক! আমি হলে ওই সময় নির্ঘাত চিৎকার চেঁচামেচি মন খারাপ ইত্যাদি করে অস্থির হতাম। এতটা নির্লিপ্ত কবে হতে পারবো কে জানে!

    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত। আমাকে কেউ মাথা ঠাণ্ডা বলেছে শুনলে অর্চিষ্মান একসঙ্গে হেসে আর কেঁদে ফেলবে। তবে আমি মাথা ঠাণ্ডা হওয়ার চেষ্টা করছি। ঠিক মাথা ঠাণ্ডা না, তুমি দ্বিতীয় যে শব্দটা ব্যবহার করলে সেটা। নির্লিপ্ত। হয়ে যেতে পারলে দারুণ হবে।

      Delete
  4. Asamanyo lekha Kuntala. THrillar er moton rudhhoshwase porlam porpor duti porbo! Sesh line e ese ki je bhalo laglo. Apnar lekhar keypad akkhoy hok!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সায়ন। আপনার মতো পাঠকও সব লেখকের নসিব হোক।

      Delete
  5. এখনো অবধি তোমার বেড়ানোর গল্প আমার কাছে বেস্ট লক্ষ্ণৌ। এই লেখাটা বিশাল কম্পিটিশন দিচ্ছে তার সঙ্গে। :) খুব ভাল লাগল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. লখনউ আরেকবার যেতে হবে। মনে করিয়ে ভালো করলি, ঊর্মি।

      Delete
  6. দুটো ব্যাপার মন টানলো। এক তো অবশ্যই ব্রেক দা লুপ, আর দ্বিতীয় ব্যাপারটা হোলো, চলন্ত গাড়ির জানালার পাশে হ্যাপিনেস এর বিপজ্জনক কাছাকাছি। দুটো চরম হ্যাপিনেস চিত্রকল্প আছে আমার, তারমধ্যে এটা একটা। সাথে অবশ্য একটু বিজিএম(শানু নয়), আর জানলা খোলা থাকাটাও ঢোকালে ভালো হয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এইবার দ্বিতীয় চিত্রকল্পটা জানার অশ্লীল কৌতূহল হচ্ছে।

      Delete
    2. এখানে ইমোজি নেই কেন বলুনতো? মুখ চেপে হাসির ইমোজিটা দিতে চাইছিলাম।
      দ্বিতীয়টা তেমন কিছু নয়, এর ঠিক উল্টো বলা চলে.. আড্ডা
      একটা ছাদ, বা ঘর, গোল করে সবাই বসে বা আধশোয়া হয়ে আছি, সেইসব লোকজন, যাদের কাছে আমি, আমি থাকতে পারি, বা প্রায় আমি।
      হ্যাহ্যা হিহি চলছে, হাসির ঠেলায় কথা উড়ে যাচ্ছে, ঘন ঘন হাই-ফাইভ পড়ছে। মাঝখানে একটা টেবিল বা মাদুর, বা মেঝের ওপর কিছু থালা বাটিতে ভালো ভালো খাবার রয়েছে, শেয়ার করা যায়, এমন.. যেগুলো হাতে হাতে ঘুরছে। হাসির চোটে মাঝে মাঝে চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসছে।

      Delete
    3. 🤭 রাইট ক্লিক করলে একটা ইমোজির অপশন আসছে আমার।

      এটাও চমৎকার চিত্রকল্প। কিন্তু আমি এই দৃশ্যটা থেকে এতদিন বাইরে যে ভুলেই গেছি।

      Delete

Post a Comment