কালকের আসল গল্পটা



কাল যে গল্পটা বলতে বলতে জাতীয়সঙ্গীতের গল্পটায় চলে গিয়েছিলাম সেটা আজ বলব। শুরুটা একই রকম হবে বলাই বাহুল্য। স্বাধীনতা দিবস কেমন পালন করলেন আপনারা সবাই? পতাকা-টতাকা তুললেন? জাতীয়সঙ্গীত-টঙ্গীত গাইলেন?

আমার এসব কিছুই করা হয়নি। সকালবেলা উঠতে চায়ের জল বসাতে বসাতে অবান্তরের জন্য মনে মনে পোস্ট ভাঁজছিলাম এমন সময় মা ফোন করে কথা নেই বার্তা নেই বললেন, “সোনা তোর ইতিহাস ভূগোল বইগুলো সব দিয়ে দেব ভাবছি।”

পাঁচ সেকেন্ড হাঁ করে থাকার পর আমার মাথায় ঢুকল মা কী বলতে চাইছেন। সিঁড়ির নীচের আলমারিটা ভর্তি করে আমার স্কুলের যে বইখাতাগুলো রাখা আছে সেগুলোর কথা। ইতিহাস ভূগোল ব্যাকরণ ভৌতবিজ্ঞান অঙ্ক। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। থরে থরে সাজানো, ক্লাস ধরে ধরে। একটিও মিসিং নেই।

প্রথমটা আমি হাঁইমাই করে উঠেছিলাম। নিজেদের পুরোনো শাড়ি আর শার্ট আর আলমারিভর্তি ধুদ্ধুড়ে আলুভাজা ফাইল তো কই ফেলে দেওয়ার কথা মনে হয়না, আমি বাড়িতে থাকিনা বলে আমার জিনিসগুলোই বুঝি চক্ষুশূল? এসব বলে যথাসম্ভব প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ চাপ সৃষ্টি করার পর মা যখন তাড়াতাড়ি বললেন, “না না থাকবে থাকবে” তখন আমি ভেবে দেখলাম সত্যিই ওগুলো আর রেখে দেওয়ার মানে হয়না।

দীর্ঘশ্বাস চেপে বললাম, “আরে না না, ইয়ার্কি করছিলাম। মায়া বাড়িয়ে আর লাভ নেই। দিয়ে দাও।”

বলে তো দিলাম, কিন্তু তার পরের দুঘণ্টা ধরে ক্লাস এইটের ইতিহাস বই থেকে ফজলুল হকের মুখ, নাইনের ভূগোল বই থেকে হিমবাহের চ্যাপ্টার আর ক্লাস ফোরের বাংলা বই থেকে কাতুকুতু বুড়োর ছবি চোখের সামনে ভেসে বেড়াতে লাগল।

আজকাল শুনি ছাত্রছাত্রীদের খাতাবই, ব্যাগ, ইউনিফর্ম জলের বোতল এমনকি টিফিনবাক্স পর্যন্ত স্কুল থেকে কিনতে হয়, কিন্তু আমাদের সময় স্কুল আর দোকানের মধ্যে তফাৎ স্পষ্ট ছিল। বুকলিস্ট নিয়ে বই কিনে আনার পর বাড়িতে একটা মলাট দেওয়ার মহাযজ্ঞ বসত। ব্রাউন রঙের বাঁশ কাগজ, কাঁচি, আঠার শিশি, সাদা কাগজ---যেটা চৌকো করে কেটে বইয়ের ওপর লেবেল লাগানো হবে, আর যার ওপর মা ছবির মতো করে আমার নাম, শ্রেণী, বিভাগ আর স্কুলের নাম লিখে দেবেন---সব নিয়ে মেঝের ওপর ছড়িয়ে বসতেন মা, আর মায়ের পাশে আমি। মা দক্ষ হাতে বইয়ে জামা পরাতেন, আমি কাঁচিটা আঠাটা এগিয়ে দিতাম। খালি হাতে নিখুঁত সরলরেখায় কাগজে ভাঁজ ফেলতেন মা, বাড়তি কাগজ এদিকে ওদিকে গুঁজে দিতেন, মলাট বইয়ের গায়ে আঁটোসাঁটো হয়ে চেপে বসত। ভালো দোকান থেকে বানানো জামার মতো ফিটিং হত তার।

মলাট দেওয়ার কথা মনে পড়ায় “হাউ টু মেক আ ডাস্ট জ্যাকেট” গুগল করতে ইউটিউবের এই ভিডিওটা সবার প্রথমে এল। দেখতে গিয়ে এক মিনিটেই ধৈর্য শেষ। মলাট দেওয়ার প্রতিযোগিতায় এদের আমি বলে বলে হারাব। এনি ডে।  

যাই হোক। মলাট দেওয়ার পরের ক’দিন খাতাবইয়েরা রাজকীয় যত্নআত্তি পেত। আস্তে করে খুলছি, আস্তে করে বন্ধ করছি, ধরে ধরে ব্যাগের ভেতর পুরছি আর ব্যাগ থেকে বার করছি যাতে কোণা দুমড়ে না যায়, মিনিটে মিনিটে ফুঁ দিয়ে বইয়ের গা থেকে অদৃশ্য ময়লা ওড়াচ্ছি।

নিজের মুখে নিজের প্রশংসার মতো শোনাবে তবু বলছি, আমার বইয়েরা বছরের শেষেও প্রায় নতুনের মতোই থাকত। দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ার অভ্যেস কোনোদিনই ছিল না। আর পাতার কোণে ফুলপাতা, সুন্দরী মহিলার প্রোফাইল আঁকার বদঅভ্যেসও না। ইন ফ্যাক্ট আমার বইখাতার পারিপাট্য দেখে মা একবার খুব লজ্জা লজ্জা মুখ করে স্বীকার করেছিলেন যে ওই খাতার পাতায় নাকমুখ আঁকার অভ্যেসটা মায়ের নাকি খুবই ছিল। শুনে আমি এমন হতাশ হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়েছিলাম যে মা বেশ কিছুক্ষণ বেচারা ভাব করে ঘুরেছিলেন।

তবে সবটা তো আর নিজের হাতে থাকেনা। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম, পিসির এক বন্ধু তার দু’বছরের বিচ্ছু শিশুকন্যাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। আমি বাথরুমে না কোথায় একটা গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি সামনের ঘরে পিসি আর পিসির বন্ধু গল্প করছেন, আর পুঁচকে মেয়ে হাঁটিহাঁটি পায়ে আমাদের আদ্যিকালের বাড়ির গামবাট চৌকাঠ টপকে টপকে আমার পড়ার ঘরে ঢুকে, বুককেস থেকে অর্ধেক বই টেনে মাটিতে ফেলে, একখানা বই কোলের ওপর খুলে মেঝের ওপর পা মেলে গুছিয়ে বসেছে। হাতে একখানা উদ্যত খোলা পেন।

বুকফাটা আর্তনাদ করে বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে এসে পড়লাম, আমার চিৎকারে দুষ্কৃতী বাচ্চাটি ভয় পেয়ে আমার থেকেও বেশি জোরে কেঁদে উঠল, সামনের ঘর থেকে পিসি আর পিসির বন্ধু হাঁসফাঁস করে দৌড়ে এলেন কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।

এখনও মনে আছে বইটা কীসের ছিল। ইতিহাস। ভাগ্যিস পাতাটা সূচীপত্রের ছিল তাই ওটাকে মলাটের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া গিয়েছিল। দুবেলা চোখ পড়ে বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হতনা।

এখন আর বইয়ের সে যত্নও নেই, পড়াশোনাও শিকেয় উঠেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বইগুলো কিনে আনার পর যত্ন করে মলাট দিয়ে ওপরে লেবেলে নিজের নামধাম লিখলে কি ওগুলোর ওপর মায়া আরেকটু বেশি পড়ত? কে জানে।

Comments

  1. ভাগ্যিস, আমি স্কুলে পড়াকালীন আপনার সাথে আমার মায়ের দেখা হয়নি। আমার ওই সাতটা পাপের সবগুলিই ছিল... দোমড়ানো কোনা, ছেঁড়া মলাট, ফুল-পাতা, মহিলার প্রোফাইল, আন্ডারলাইন, মার্জিনে কমেন্টস... কটা হল?
    আর আপনার এখন অব্দি ক্লাস টু-র বইপত্র রাখা আছে? আমার তো পরীক্ষার আগে খোঁজ খোঁজ পড়ত, পরীক্ষার পরদিন তো খুঁজেই পাওয়া যেত না, মা অব্দি কোনোদিন চেষ্টা করেননি। তবু কিমাশ্চর্যম, রিপোর্ট কার্ড দেখানোর পর কোনোদিনই পিঠে কিছু পড়েনি। এই লেখাটা মাকে দেখালে আর রক্ষে নেই...

    দেখেছিস, কি লক্ষ্মী গোছানো মেয়ে। আর আমার কপালে জুটেছ একটা আস্ত বাঁদর। হ্যাঁরে, তোর কি অন্যদের দেখেও একটু ইচ্ছে করে না যে জিনিসপত্র গুলো গুছিয়ে রাখি? তুই কি সারাজীবন এভাবেই আমাকে জ্বালিয়ে খাবি?...

    তবে ষষ্ঠ বর্ষে হাফ-ব্লাড প্রিন্সের গল্প পড়ে মার্জিনে কমেন্টস লেখার আপসোসটা একটু কমেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হুম দেবাশিস, বুঝেছি আপনি বেজায় দস্যি বাচ্চা ছিলেন। এখন কি শান্তশিষ্ট ল্যাজবিশিষ্ট হয়েছেন? জানেন তো বাজারে এরকম একটা থিওরি চালু আছে?

      হ্যাঁ ভাগ্যিস আমাদের স্নেপ সাহেব মার্জিনে কমেন্টস লিখে রেখেছিলেন, নাহলে আর হ্যারিকে কেরামতি করতে হচ্ছিল না, বলুন?

      Delete
  2. আর চিনাদের গায়ের মতো হলুদ রঙের কাগজের মলাট থাকতো না? ক্যালেন্ডারের সাদা মলাট? নেম-স্টীকার? মলাটের যে অংশটা সূচীপত্রে ঘষা খায়, সেটার ভিতরের দিকটা আবার কেটে ভাঁজ করে, বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে ঢোকানো থাকতো না? আর বাজারে যখন চকচকে-সেলফোনে-মোড়া-রেনকোট-মলাটের প্রাদুর্ভাব হলো, তখন কি করলেন? ম্যাট-ফিনিশ-বাঁশ-পাতাতেই থেকে গেলেন না রেনকোট ভাসিয়ে নিয়ে গেলো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আরে মলাট পৃষ্ঠপোষকদের দেখা পেয়ে আমার মন যারপরনাই খুশি হয়ে যাচ্ছে। এই সেরেছে অনির্বাণ, আমি তো সেই সেকেলে ম্যাটফিনিশ বাঁশ পাতাতেই থেকে গিয়েছিলাম। আমার বাবামায়ের আবার একটা বস্তাপচা ধারণা ছিল (এখনও আছে) যে পড়াশোনার ব্যাপারটা যত গরিব-ভাবে করা যায় চরিত্রগঠন ততই ভালো হয়। কাজেই আমার কপালে আজীবন চারটাকা মাইনের ইস্কুল আর রেনকোটহীন বইয়ের মলাট জুটেছে। অল্প ভিজলে ফ্যানের তলায় রেখে শুকিয়ে নাও, বেশি ভিজলে নতুন মলাট দিয়ে নাও। সিম্পল।

      Delete
    2. আহা প্রাদুর্ভাব বললাম যে। প্রাদুর্ভাব মানে বুঝতে হবে আঙ্গুর ফল টক। আমার কপালে ওই চকচকে মলাট জোটে নি। রেনকোট মলাটটা আমার দেওয়া নাম। ওই মলাট বৃষ্টিতে ভিজলেও কিছুই লাভ হতো না, কারণ শুধু একটা দিকই চকচকে সেলোফোন থাকতো। যে দিকটা মলাটের ভেতর দিকে থাকতো, সেটা দুয়োরাণী, ম্যাট-ফিনিশ।

      আর হ্যাঁ, মলাট না জুটলেও চরিত্রগঠন কিছুই হয় নি। আমার বাবা একশো বছর আগে জন্মালে নির্মম জমিদার হতেন। আমাকে, বাড়ির সামনের খোলা মাঠে, ইতিহাসের খাতা নিয়ে, একটা গরুর সাথে টাগ-অফ-ওয়ার করতে হয়েছে।

      গরুর মুখ আর আমার হাত। বেশীরভাগ পুরোনো হিন্দি সিনেমার শেষ দিকের মতো, আরো পিছিয়ে গেলে কৌরবসভায় বস্ত্র-হরণ। গরু পরম শান্তিতে খাতা চিবোচ্ছে। আর কোয়ার্টারের লক্ষ লক্ষ উৎসুক জানালা দিয়ে, কোটি কোটি অপলক চোখ সাগ্রহে অপেক্ষা করছে।

      Delete
    3. কী সাঙ্ঘাতিক! ইতিহাস খাতা মুখস্থ না, কণ্ঠস্থ না, একেবারে পেটস্থ করে ফেলতে চায়, ভয়ানক স্কলার গরু দেখছি। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, আপনি মাঠে ইতিহাস খাতা নিয়ে গেছিলেনই বা কেন? শান্তিনিকেতনি স্টাইলে মাঠে মাঠে ঘুরে পড়ছিলেন নাকি?

      Delete
    4. দেখেছো!! অনির্বাণদা সারা জীবন আমাদের এই আষাঢ়ে গপ্পোটা খাওয়ানোর চেষ্টা করে এখন এখানেও দিচ্ছে! :D
      গপ্পোটার আমার যা মনে পড়ছে, সেটা হলো, আমাদের হিরো অন্যান্য সব দিনের মতো সেদিন বিকেলেও ইতিহাস বইটাকে একইসাথে স্লিপিং পিল আর পিলো হিসেবে ব্যবহার করে সুখনিদ্রা দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় কাকু এসে চারটি বিরাশি সিক্কা দিয়ে বলেন, 'আর এ সব পড়ে কাজ নেই, ও তোর গরুতে খাক...' এবং খাতাটিকে ফ্রিসবির মতো জানালা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন। এর পরই ওই অতি পরিচিত এবং আলোচিত ঘটনাটি ঘটে...
      আমরা এ সবই বিশ্বাস করেছিলাম, যদ্দিন না আমাদের সাথে কাকুর পরিচয় ঘটে- বিশ্বাস করুন, ওই অমায়িক ভদ্রলোকের পক্ষে তখনই এরকম করা সম্ভব, যখন ছেলেটির সাথে বাঁদরের মাত্র একটি লেজের তফাৎ...

      Delete
    5. প্রায় এরকমই। আরো কিছু সূচনা/উপসংহার আছে, সে আমি পরে লিখে ফেলবো।

      কুন্তলাদির কিছু কিছু লেখা পরে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি একটা ব্লগ খোলার কথা ভাবছি। গোটা পাঁচেক কমিটেড পাঠক পেলেই, ওয়ান, টু, থ্রি :D

      Delete
    6. হাহাহাহা, দুর্দান্ত গল্প কিন্তু।

      Delete
  3. kuntaladi, tumi je amar kumbhomelaye hariye jaowa didi ei bishoye ami 100% nishchit. khali amar boi er molat dewa, labeling er kaj gulo amar bapi korto. tobe amader bari ta nehati chhoto, tai badhyo hoye beshirvag boi khatai amake eke oke daan kore dite hoyeche. joto na porechi tar theke boi khatar poriman amar borabori ektu beshi chhilo. ma bole bidyer jahaj. purotai sarcasm bolai bahulyo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুহেলি ভালোই করেছ দান করে দিয়ে, বোঝা বাড়িয়ে লাভ কী। যা ঢোকার তো মাথার ভেতর ঢুকেই গেছে।

      Delete
  4. amar notun boigulo gune gune 6 din thik thakto tarpor bechara der ja dosa hoto na...sobgulor akhon tokhon obstha.......ami boi khatar moddhe kimbhut kimakar bachcha meye ,ghar,gach,fulakte khub pochondo kori...amar officer node pad eo tara swa-mohimai biraj korche.....sobcheye valobasi ki akte jano,,,,chokh...duto khub sundor chokh.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, তুমি এই চোখ আঁকার দলের লোক বুঝি? আমার আবার আঁকাআঁকিটা একেবারেই আসেনা।

      Delete
  5. Class VII porjonto besh malat deoa, label sente naam lekha esab sundor abhyas chhilo. Naam abar nije likhtam na baba athoba dada ke die lekhatam karon tader haater lekha bhalo chhilo. bachhorer sesh obdi tara bhalo abosthatei thakto. kintu ami seriously parashona shuru korechhi class IX theke. Takhon amar sab boi-i prai second hand. Dadar chhilo, tar age omuker chhilo tomuker chhilo! Kajei tader abosthao tathoibacho chhilo. Sei boi gulor ekta bishal subidhe chhilo sei Snape-er boi-er mato comments! Kon proshno ta kato shale esechhe, konta moderately imp konta highly important esab lekha thakto! Jodio boii gulo ke khub-i bhalobastam kintu tader proti malat ityadi-r sneho barshon-er kono tagid onubhab korini. ar ekekta subject-er takhon minimum 8-9ta kore boi, ato malat debar chaite takhon aro anek interesting byapar ghotchhilo jeebone. Tobe hyan amar madhyamik-er physical education work education-er khata jodi dekhte, tobe bujhte malat deoa kake bole! kintu ete amar credit 0 karon amader parar bubuni di sab malat die diechhilo! tar art and craft-er haat chamotkar chhilo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওরে বাবা হ্যাঁ রুচিরা, ওই খাতাগুলোর কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কত লোকে কত কায়দা করত আমি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখতাম। আমি এবং আমার মা, কেউই 'ক্র্যাফটি' বলতে যেটা বোঝায় সেটা নই, কাজেই আমার খাতাগুলো নেহাতই মুখমোছা দেখতে হত।

      Delete
  6. ebar aar swadhinota dibas e pataka-tataka tola holo na...tobe gotobochar "swadhinota potluck" e (jeta ekmatro amerikay jotey pare....komola, sadha aar sabuj fried rice...hindustani ra "triranga" fried rice boley) ekta prize peyechilam :)))

    ReplyDelete
  7. Ami jokhon Diocesan school e portam tokhon amader school er thekei boi kena hoto. Molat dito ma, ar hater lekha bhalo bole naam likhe dito baba. South Point e re-used/handed down boi khub cholto. Tai 6 theke 12 porjonto amar rarely kono boi kinte hoyeche. Tobe label ar sticker amar khub personalized chilo. Bechhe bechhe boi khatay mojar mojar sticker lagatam ami. Boi e chhobi anktam na, tobe khatar pashe meyeder mukh-chokh-hair style ami anktam :)
    Amar boi bodhoy ekhon ar kichui nei. Koyekta 11-12 er boi bodhoy ache. Engineering er kichu boi Kakun rode daye, dhulo jhhare ekhono, kintu Madhyamik er sob daan kore diyeche ma. ABTA'r test paper porjonto!

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেকি ABTAর টেস্টপেপারকেও কাকিমা রেহাই দেননি? এটা নেহাতই হৃদয়হীনতার কাজ হয়েছে। তুমিও শিল্পীমানুষ ছিলে দেখছি। বাঃ বাঃ।

      Delete
  8. amar school theke alada ekrokom noteboi dewa hoto...taar prothom koek patay school shomporke jabotiyo totthyo, anthem, ittyadi, front cover-e school-er logo. proti class-e erom 4-5 ta khata bhorti classnotes jomto. ami phd korte jawar shomoy obdhi shegulo tuley rakha chhilo. oi noteboi-er proti patar bhnaje bhnaje kotto kotto smriti...oke fela jaye? kintu ma kobe jani chupi chupi taader fele diyechhilo. shey dukkho jiboneo bhulbo na.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সিরিয়াসলি সোমনাথ, মায়েদের এই সবকিছু ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা কোথা থেকে আসে বলতো? স্রেফ এই রহস্যটা উদ্ঘাটন করার জন্য আমার মা হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

      ইস তোমার ক্লাসনোট্‌সগুলোর জন্য আমারই দুঃখ হচ্ছে বিশ্বাস কর

      Delete
  9. আহা সেইসব মলাট। যদিও আমাদের সময় নিয়ম করে বইয়ের দোকানি একদম হিসেব করে কাটা ব্রাউন পেপার ফ্রি-তে দিত মলাটিকরনের উদ্দেশ্যে, আমার আবার কোনোকালেই ওই ব্রাউন পেপারের মলাট পোষাত না৷ ভেবে দেখেছি দুটো কারণ ছিল তার। এক তো, ক্লাসশুদ্ধু লোক ওই এক রঙের জামা পড়ায় বই-এ, আর দ্বিতীয় কারণটি অদ্ভুত। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে, চা পাতার দোকানে ঠিক ওই কাগজে তৈরী ঠোঙ্গাতে চা পাতা দিত। কিরকম ছোট ছোট হত প্যাকেট গুলো, কেমন যেন 'জাতে ওঠেনি' টাইপ। তাই মনে হত ওই কাগজে মলাট করলে আমিও জাতে উঠব নি। তাই বাপের শরণাপন্ন হতাম, আর বাবা তার ভান্ডার থেকে বের করে আনতেন অমূল্য সব রত্নরাজি। একদম প্রথমদিকে ছিল 'সোভিয়েত ইউনিয়ন' লেখা আর খটমট বাংলায় কিসব লেখা অথচ সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভরা মোটা কাগজের মলাট। ফিনিশটাও গ্লসি। সেগুলো কোনো কারণে আসা বন্ধ হয়ে গেল, তারপর এলো একই ধরনের কাগজ তবে দেশী, আর তাই অনেক পাতলা। সেগুলো ছিল কোনো ইংরেজি খবরের কাগজের (বোধ হয় দি স্টেটসম্যান, শনিবার দিত) সাপ্লিমেন্টাল।এই কিসসা চলল বারো ক্লাস অব্দি। তারপর মলাটটা অপসনাল হয়ে গেল। দু একটা ভালোলাগার বইকে জামা পরালে, জ্যাঠা টাইপের বন্ধুরা আওয়াজ দিত বলে খুব একটা সাহস করতাম না আরকি। আর বই ফেলে দেওয়া নিয়ে একটা ঘটনা মনে পরছে, ক্লাস সিক্সে, গরমের ছুটিতে চুটিয়ে অঙ্ক করেছি, বাবার দোকানের পুরনো একটা হিসেবের খাতায়, যাকে গোদা বাংলায় খোতেন খাতা বলা হত, লাল শালুতে মোড়া। ( সে এক সময় ছিল। বাড়িতে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া এগিয়ে রাখা হত। হয়ত করেছি দশম অনুশীলনী শেষ, বন্ধু জিগালে বলতাম এই সবে ৫ এ পরেছি, বন্ধুও মুচকি হেঁসে বলত 'হ্যা, আমিও এই কাল শুরু করব পঞ্চম অনুশীলনী ।) কি কুক্ষণে মামাবাড়ি গেছিলাম, ফিরে এসে খাতার খোঁজ করতে গিয়ে শুনি সে খাতা আরো অনেক পুরনো হিসেবের খাতার সাথে কাগজওয়ালার কাছে বিক্রি হয়ে গ্যাছে। সেদিন সন্ধ্যেতে আমি হাপুস নয়নে কেঁদে ভাসালাম, মা না থাকতে পেরে কেঁদে ফেলল, আর বাবা দেখি মুখটা কেমন কাঁচুমাচু করে দূর থেকে পায়চারীই করে গেল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহারে আবির, তোমার থেকেও আমার কাকুর জন্য খারাপ লাগছে বেশি। তোমার তো বাহারি মলাটের ব্যাপার ছিল দেখছি। ভালো ভালো।

      কিন্তু আমাকে একটা কথা বল, আমি কি তোমার কোনো কমেন্ট ভুলে ডিলিট করে দিয়েছি? একটা কোথাও গোলমাল হয়েছে মনে হচ্ছে, কোথায় হয়েছে সেটা ধরতে পারছি না।

      Delete
  10. আরে না কুন্তলাদি। ওটা আমারই ভুল, মানে ব্লগস্পটে আমি খুব একটা সরগর নই এখনো অব্দি। তাই কমেন্ট এডিট করতে গিয়ে ডিলিয়ে দিয়েছি।
    আর আহা, তা তো কাকুর জন্য খারাপ লাগবেই, আমার রক্ত নিংড়ে জল করা পরিশ্রমের গুড় খেল কাগজওয়ালা তার বেলা কিছু না!! তারপর যখনই ওই একই অঙ্ক করতে যেতাম, একটু আটকে গেলেই মনটা হুহু করে উঠত। মনে মনে চাইতাম - ফিরিয়ে দাও আমার সেই ১২ টা বছর থুড়ি ১৮ টা অনুশীলনীর অঙ্ক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা আবির, আরে না না তোমার জন্যও সমবেদনা রইল।

      Delete

Post a Comment