সাইকেল



নিজস্ব সম্পত্তি বলতে তখন আমার বাঁশপাতার মলাট দেওয়া সহজপাঠ আর কিশলয়, গোটা দুই লাইনটানা খাতা, অবিকল জাহাজের মতো দেখতে একটা লাল রঙের পেনসিলবক্স, বক্সের মধ্যে লালকালো ডোরাকাটা নটরাজ পেনসিল আর মাথার ওপর সবুজ বর্ডার দেওয়া সাদা ইরেজার। সাদা অংশটায় বড় করে K লেখা। K ফর কুন্তলা। মা একবার ভুলে P লেখা ইরেজার কিনে এনে দিয়েছিলেন বলে অভিমানে চোখে জল এসে গিয়েছিল। কিন্তু আমার চোখের জলের তোয়াক্কা তখন কেই বা করছে। ঠাকুরদার বাড়ির এককোণে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকি, বাবামা দয়া করে যা খেতে দেন মুখ বুজে খাই, যা পরতে দেন বিনা প্রতিবাদে পরি। এমন সময় যদি একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি বারান্দায় আমার মাপমতো একটা সাইকেল দাঁড় করানো আছে, তাহলে প্রাণে পুলক জাগে কি না?

আমার প্রথম সাইকেল। কোম্পানিটোম্পানি সব ভুলে গেছি, শুধু চোখে লেগে আছে তার উজ্জ্বল হলুদ রং। পাড়ার সমবয়সীরা তখন অনেকেই সাইকেলে চড়ে। কিন্তু সে ছেলেমানুষ সাইকেল, সিটের পেছনে হেলান দেওয়ার মতো উঁচু পিঠ। আমার সাইকেলে ওসব কিছু নেই। ছিমছাম দুটি চাকা, দু’পাশ দিয়ে ডানার মতো বেরিয়ে থাকা দুটি স্ট্যান্ড। হঠাৎ করে হাত টলে গিয়ে সাইকেল কাৎ হয়ে পড়লে তারা আমাকে পতন থেকে রক্ষা করবে।

কিন্তু মা ধরিত্রীর টান বলে কথা, নশ্বর স্ট্যান্ডের সাধ্য কি তাকে রোধ করে। আমি ধুপধাপ পড়তাম, আর হাঁটুতে কনুইয়ে কপালে একএক করে ব্যান্ড এড জড়ো হত। একবার পতন বেশ বড় রকমের হয়েছিল। আমার দোষ নেই। বসাকবাড়ির সামনে ডাঁই করে বালির পাহাড় রাখা ছিল। আমি কার সঙ্গে যেন সাইকেলের রেস দিতে দিতে প্রবল বেগে এসে সোজা সেই পাহাড়ে উঠে গেলাম। সাইকেলের চাকা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বাঁইবাঁই ঘুরতে লাগল, আমি ছিটকে গিয়ে ক্ষয়া পিচের এবড়োখেবড়ো রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়লাম। নিমেষে সব অন্ধকার। যখন চোখ খুললাম তখন বসাকবাড়ির বারান্দায় কে জানে কার কোলে শুয়ে আছি, চারদিক থেকে একগাদা মুখ আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়েছে আর পাশের বাড়ির মেডিক্যাল কলেজের ফার্স্টইয়ারের বিশ্বপাকা ছাত্রটি গম্ভীরমুখে বসে বসে আমার সারা গায়ে লুকোপ্লাস্টার সাঁটছে।

আমার জীবনের দ্বিতীয় আর শেষ সাইকেলটি হিরো সাইকেল। মেরুন রঙের। ওটা না থাকলে আমি হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করতে পারতাম না। সকালে উঠে সাইকেল চেপে শ্যামলস্যারের টিউশন, ন’টার সময় পক্ষীরাজের স্পিডে বাড়ি ফিরে কোনওমতে মাথায় জল ঢেলে নাকে মুখে গুঁজে শাড়ি পেঁচিয়ে স্টেশন। কাননকাকু রাস্তায় রেডি হয়ে থাকতেন, আমি লাফ দিয়ে নেমে কাকুর বাড়ানো হাতের দিকে সাইকেল ফেলে প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটতাম। বিকেলেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হত। দূর থেকে ধুঁকতে ধুঁকতে আমাকে আসতে দেখেই কাকু ঝুপড়ির ভেতর থেকে সাইকেল বার করে এনে দিতেন। আর এতকিছুর প্রতিদানে আমি ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ পয়সা বার করে কাকুর হাতে দিতাম।

পঞ্চাশ পয়সা। কত বুড়ো হয়ে গেছি ভাবা যায়?

জীবনে যে ক’টা শিক্ষা আমার সত্যি সত্যি কাজে লেগেছে তার প্রথম তিনের মধ্যে পড়বে সাইকেল চালানো। কবেকার জিনিস। তারপর মানবসভ্যতা কত এগিয়ে গেল, কতগুলো যুদ্ধবিগ্রহ হয়ে গেল, কত কম্পিউটার এল গেল, কিন্তু সাইকেলের মতো ভালো জিনিস আর একটিও আবিষ্কার হল কি? 

মিনিম্যালিস্টিক, স্বাস্থ্যপ্রদ, আরামদায়ক, ইকো-ফ্রেন্ডলি, স্বাধীন।
উৎস গুগল ইমেজেস

এখানে আসার পরের সপ্তাহেই আমার কয়েকজন সহকর্মী সাইকেল কিনে ফেলেছিলেন। আমিই গা করিনি। যে রকম পাহাড়ের ওপর বাড়ি, হেঁটে উঠতেই জান বেরিয়ে যায়, সাইকেল ঠেলে উঠতে হলে আর দেখতে হবে না। কিন্তু প্রতি সোমবার অফিসে গিয়ে সাইকেলওয়ালাদের উইকএন্ড অ্যাডভেঞ্চারের আর রাইনের তীর ধরে দূরদূরান্তে পাড়ি দেওয়ার গল্প শুনতে শুনতে মনের জোর ক্রমশ কমে আসছিল সেটাও টের পাচ্ছিলাম।

শেষ বাধাটা ভেঙে দিলেন মিসেস বার্শ। (বার্চ শব্দটা ভুলে শুনেছিলাম, অ্যাদ্দিনে ওঁর নামটা খাতায় কলমে দেখে ভুল ভাঙল।) লন্ড্রিরুমে সেদিন দেখা হয়ে গেল। জলদগম্ভীর স্বরে “হালো” বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে কী যেন মনে করে ঘুরে তাকালেন মিসেস বার্শ।

বাই দ্য ওয়ে, ডু ইউ নিড আ বাইক?

ওঁর বন্ধুর নাকি লক্ষলক্ষ বাইক পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তাই সহৃদয় বন্ধু মিসেস বার্শকে জিজ্ঞাসা করেছেন ওঁর কোনও ভাড়াটের সাইকেলের দরকার আছে কি না।

দরকার তো আছেই। পরদিন অফিস থেকে ফিরে গুটিগুটি গেলাম সাইকেল দেখতে। মিসেস বার্শের বাড়ি পাহাড়ের আরও ওপরে। এক বিরাট গেটের ওপারে ততোধিক বিরাট হাউসিং-এর কোটি কোটি ফ্ল্যাটের কোনও একটাতে থাকেন তিনি। গেটের পাশে লাগানো বাক্সের ফোনে আমার আসার খবর দিতে মিসেস বার্শ ভেতর বোতাম টিপলেন। চিচিংফাঁকের মতো লোহার দরজা ঘরঘরিয়ে খুলে গেল। আমি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম। আমার পেছনে আবার ঘরঘরিয়ে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

গ্যারেজে মিসেস বার্শ আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কোটিকোটি সাইকেলের সারি পেরিয়ে গ্যারেজের শেষপ্রান্তে গিয়ে অবশেষে আমার জন্য তুলে রাখা সাইকেলটির দেখা মিলল। পাতলা ফুরফুরে চেহারা, গায়ের রং হালকা বেগুনি।

লাইক ইট?

আমি ভীষণ আলতো করে সাইকেলের গায়ে হাত রাখলাম। সাইকেলের ব্যাপারটাও কুইডিচের ঝাঁটার মতোই। বাইরে থেকে দেখে যা-ই মনে হোক না কেন, সারথি বাহন বাছবেন না, আসলে বাহনই সারথিকে বাছবে। সাইকেল আমার ছোঁয়ায় কোনওরকম হেলদোল দেখাল না, নিষ্প্রাণ ধাতুর মতো মটকা মেরে রইল। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রাউ বার্শকে বললাম যে আমার সাইকেল পছন্দ হয়েছে, এবার আমি একে টেস্ট ড্রাইভে নিয়ে যেতে চাই।

সাইকেল হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে গ্যারেজের বাইরে এলাম। ফ্রাউ বার্শ বুদ্ধি করে আগে থেকেই সাইকেলের সিট আমার উপযুক্ত হাইটে নামিয়ে রেখেছিলেন। চড়ে বসতে কোনও অসুবিধেই হল না। ডান পা প্যাডেলে সেট হয়ে গেল। এবার শুধু ভরসা করে বাঁ-পাটা মাটি থেকে তুলে ফেললেই ব্যস।

জে এন ইউ চলে যাওয়ার পর আমার হিরো সাইকেলের একমাত্র কাজ ছিল সিঁড়ির তলায় পড়ে পড়ে ধুলো খাওয়া। প্রথম ছুটিতে বাড়ি ফিরে এসে দেখেছিলাম সিঁড়ির তলা খাঁ খাঁ। শুনলাম বাবার কোন এক বন্ধুর ছোটমেয়ে সাইকেল শিখছে, তাই তাকে সেটা দান করে দেওয়া হয়েছে। হয়ত দুঃখ হওয়া উচিত ছিল, হয়নি। সাইকেলের মতো তুচ্ছ জিনিস নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায় তখন আমার।

কিন্তু এবার ঘামাতে হল। সাইকেলে হাফবসা হয়ে যখন দেখলাম চোখের সামনে ঢালু পিচরাস্তা অপেক্ষা করে রয়েছে, মিসেস বার্শ কোমরে হাত দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে পায়ে তাল ঠুকছেন, তখন আমার আর কোনও সন্দেহই রইল না যে গোটা ব্যাপারটাই একটা চরম ব্যাড আইডিয়া। তাঁতির এঁড়ে গরু কেনার মতো। দিব্যি ট্রামে বাসে চেপে ঘোরাঘুরি করছিলাম, হঠাৎ যে কেন সাইকেল চাপার বদবুদ্ধি হল কে জানে। এই বুড়ো বয়সে সাইকেল থেকে পড়ে হাত পা ছড়ে লোক হাসাতে হবে এখন।

দুইহাতে হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরলাম। বন্যার জলের মতো অতীত থেকে হলুদ স্ট্যান্ড সাইকেল আর মেরুন হিরো সাইকেলের স্মৃতি ভেসে এল। ওরা যেমনি আমার পোষ মেনেছিল, এ ফিরিঙ্গি সাইকেলও কি তেমনি মানবে? আমি মাথার মধ্যে বাংলায় নির্দেশ দেব, এইবার দাদা দয়া করে ডাইনে বাঁকুন, এইবার স্পিড তুলুন, সর্বনাশ! উল্টোদিক থেকে গাড়ি আসছে, এবার আপনার যা প্রাণে চায় তাই করুন, আমার মাথায় কিছু আসছে না---এ জার্মান সাইকেল সে সব বুঝবে?

আরেকটা দৃশ্য মনে পড়ে গেল। সর্বাঙ্গে লুকোপ্লাস্টার পরিবৃত হয়ে বসাকজেঠুর কোলে চেপে বাড়ি ফিরেছি। জেঠুর পেছন পেছন পটাই আমার হলুদ সাইকেল হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে এনেছে। কাকিমা কাকিমা বলে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। মা বেরিয়ে এসে আমার মূর্তি দেখে চোখ কপালে তুলছেন। বসাকজেঠু বলছেন, কিচ্ছু চিন্তা কোর না বউমা, এটাই তো আছাড় খাওয়ার বয়স। বাবা বলছেন, ঠিক বলেছেন দাদা। তাছাড়া শিখতে গেলে তো পড়তেই হবে। একবার শিখে গেলে তো আর চেষ্টা করেও পড়া যাবে না।

বাবা ভুজুং দিয়েছিলেন কি না সেটা একরকম পরীক্ষা করার জন্যই আমি বাঁপা মাটি থেকে তুলে ফেললাম। প্যাডেল ঘুরল। মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য শরীরের নিচে সাইকেল একবার দুলে উঠে সোজা হয়ে গিয়ে ঢালু রাস্তা দিয়ে নাকবরাবর ছুটে চলল।  

পড়িনি! মিসেস বার্শ পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলছেন, এনজয়, কিন্তু ওসবে কান দেওয়ার পরিস্থিতি নয় এখন। রিমোট কন্ট্রোলে লোহার দরজা ঘরঘরিয়ে খুলে যাচ্ছে, আমি সাইকেলের ওপর মাথা উঁচু করে বসে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসছি। হ্যান্ডেলের ওপর আমার হাতের মুঠো জাঁকিয়ে বসছে। প্যাডেলের ওপর পায়ের পাতা। সামান্য এঁকেবেঁকে সিটের ওপর শরীর অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছি। সাইকেলকে এখনই বুঝিয়ে দিতে হবে, কে কার বস্‌।

যদিও এখানে কেউ বাজায় না, তবু আমি দু’বার টুং টুং করে বেল বাজিয়ে নিলাম। কী মিষ্টি আওয়াজ।

এবার থেকে অফিসকাছারি সব সাইকেল চেপেই হবে। সপ্তাহান্তে টুকটাক বাইসাইকেল ট্রিপও হতে পারে। সাইকেলের পেছনে একটা ঝুড়ি বসানো আছে, তার ভেতরে ক্যামেরা পুরে নিতে কোনও অসুবিধেই হবে না। ছবি তুলে এনে দেখাব আপনাদের।


Comments

  1. taratari cycle-er chhobi chai. shiggir.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, নিশ্চয় নিশ্চয় মনস্বিতা।

      Delete
  2. wow! ki maja ,cycle chobi chai :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও দারুণ মজা লাগছে। ছবি তুলে দেখাব শিগগিরি।

      Delete
  3. জিও কুন্তলা!
    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা মিঠু, থ্যাংক ইউ।

      Delete
  4. Ishhh. Ki bhalo!

    Ami cycle chalate pari na, jano? Ki lojja, ki lojja! Pnochish bochhor bodh hoy too late. :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে লজ্জা কীসের বিম্ববতী? এইভাবে দেখ ব্যাপারটা। তুমি ধর বাঁচবে আশি বছর। এর মধ্যে পঁচিশ বছর তোমার সাইকেল না জানা অবস্থায় কেটেছে, কিন্তু এখন যদি তুমি শিখে ফেল, নেক্সট পঞ্চান্ন বছর তোমার সাইকেল জানা অবস্থায় কাটবে। আজীবনের শিক্ষা। তুমি তিরিশ বছরে শিখলেও লেট নয়, পঞ্চাশ বছর বাকি থাকবে।

      কাজেই যদি প্রাণে ইচ্ছে থাকে শেখার, লেগে পড়। অল দ্য বেস্ট।

      Delete
    2. বিম্ববতীঃ It's never too late to learn!

      শুধু দেবাশিস চৌধুরীর গান শেখাটা বাদ দিলে! আমার শ্যালিকা বেশ ভালো গান জানেন, গুটিতিনেক ডিগ্রিফিগ্রি আছে। আমি তেনাকে ভুজুংভাজুং দিয়ে আমাকে গান শেখাতে রাজি করালাম। দিন চারেক মাথার ঘাম পায়ে ফেলার পর তিনি কাঁদোকাঁদো মুখে আমায় বললেন - তোমার দ্বারা মনে হয় হবে না, বুঝেছ! তুমি বরং গলফ খেলাটা শিখে নাও। আমার খুব আঁতে লাগলো, আমি গিয়ে মাকে কমপ্লেন করলাম। মা বললেন - তুই ছেলেবেলায় ছড়াটা অবধি ছন্দে বলতে পারতিস না, তুই কোন আক্কেলে গান শিখতে গেলি?

      Delete
  5. এখনকার জগতে নির্মল হাসি বড়ই দুষ্প্রাপ্য। দেবার মত এলেমদার লোকও বিরল। তাই এইসব ছোট্ট ছোট্ট লেখার মাধ্যমে তুমি যে কত পুণ্য সঞ্চয় করছ, তাই ভাবি। লেখার মজা চাখতে চাখতে কুইডিচকে প্রথমে পড়লাম পুঁইডাঁটা (কিছু মনে কোরো না, আমার প্রথম দর্শনে একটু উল্টোপাল্টা পড়ার অভ্যাস আছে। বাংলা ব্যকরণে তাকে যে কি বলে?)। তারপরই মনে হল, পুঁইডাঁটা চিবোলে তো ঝাঁটা হয় না! তবে বোধহয় সজনে ডাঁটা (আমি তখন তাই চিবোচ্ছিলাম যে)। অবশেষে যা হোক, আসল শব্দটা ঠিকভাবে মাথায় ঢুকল। মিসেস বার্শ আমার মনে দূর অতীতের একটু সুবাস ছড়িয়ে গেলেন। সেই কোন কালে বিএ ক্লাসে মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে বাবা বুঝিয়েছিলেন, ইংরাজির চ জার্মানদের উচ্চারণে শ হবে; তাই আমরা যেন চার্ল্‌স্‌ দ্য গ্রেটকে শার্লামেন নয়, শার্লেমান বলে শিখি। ব্যাপারটা অকিঞ্চিৎকর, কিন্তু ইংরাজি-বাংলা-জার্মান-ফ্রেঞ্চ সব ভুলে জগাখিচুড়ি হয়ে গেলেও চ-শ এতদিন পরেও জ্বলজ্বল করছে। যা হোক,জার্মানি গেলে বলেই তো এতদিন পর সাইকেলের সঙ্গে পুরোনো মহব্বৎ ফের জেগে উঠল। মিঠুর মত আমিও বলি জিও কুন্তলা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার বাবা একেবারে ঠিক শিখিয়েছিলেন। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম মালবিকা।

      Delete
  6. arey darun byapar...cycle ta bombay te baddo miss kari! ekhane rasta r traffic er ja haal, akhono sahas kare kine uthte parini....
    post ta pare ektu hingshe hachhe!! ake cycle tay rhine er subatas..!!
    chabi dakhar apekhhay thaklam.
    happy cycling :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সায়ক।

      Delete
  7. এই সময়ে থানাগড়ের বাবুদের এক ছেলে এক বাইসিক্‌ল্‌ কিনিয়া আনিয়া চড়া অভ্যাস করিতেছিল। রসিক সেটাকে লইয়া অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই এমন আয়ত্ত করিয়া লইল যেন সে তাহার নিজেরই পায়ের তলাকার একটা ডানা। কিন্তু কী চমৎকার, কী স্বাধীনতা, কী আনন্দ! দূরত্বের সমস্ত বাধাকে এই বাহনটা যেন তীক্ষ্ম সুদর্শনচক্রের মতো অতি অনায়াসেই কাটিয়া দিয়া চলিয়া যায়। ঝড়ের বাতাস যেন চাকার আকার ধারণ করিয়া উন্মত্তের মতো মানুষকে পিঠে করিয়া লইয়া ছোটে। রামায়ণ-মহাভারতের সময় মানুষে কখনো কখনো দেবতার অস্ত্র লইয়া যেমন ব্যবহার করিতে পাইত, এ যেন সেইরকম।
    রসিকের মনে হইল এই বাইসিক্‌ল্‌ নহিলে তাহার জীবন বৃথা। দাম এমনই কী বেশি। একশো পঁচিশ টাকা মাত্র! এই একশো পঁচিশ টাকা দিয়া মানুষ একটা নূতন শক্তি লাভ করিতে পারে — ইহা তো সস্তা। বিষ্ণুর গরুড়বাহন এবং সূর্যের অরুণসারথি তো সৃষ্টিকর্তাকে কম ভোগ ভোগায় নাই, আর ইন্দ্রের উচ্চৈঃশ্রবার জন্য সমুদ্রমন্থন করিতে হইয়াছিল— কিন্তু এই বাইসিক্‌‍ল্‌‍টি আপন পৃথিবীজয়ী গতিবেগ স্তব্ধ করিয়া কেবল একশো পঁচিশ টাকার জন্যে দোকানের এক কোণে দেয়াল ঠেস দিয়া প্রতীক্ষা করিয়া আছে।

    ReplyDelete
  8. khub kore cycle chalao.. kintu khawa dawa o koro bhalo kore.. noile kintu oi pahar e cycle chorate dum ber hobe.

    jano, ami jokhon Italy te chhilam.. sekhane ami cycle chore e university jetam.. r jothriti pahar er upor cycle chorate hasfas obostha hoto... temon e ekdin ami cycle niye pahar er sathe judho korchhi.. emon somoi ek buro jethu (dadu bollam na, boyos to amar o kom holo na) amar pas diye cycle chaliye jete jete 'hya hya' kore jibh ber kore amai bhengiye dekhiyechhilen. ekhon o kono somoi hasfas korle jethur mukh bhengano mone pore jai.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিকই বলেছ গোবেচারা, এখানকার দাদুরা আমার থেকে অন্তত একশোগুণ বেশি ফিট। এত লজ্জা করে দেখলে।

      Delete
  9. Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ দেবশ্রী।

      Delete
  10. Priyo Kuntala Di,
    Asadharan bhalo akta mon bhalo kara lekha..:)
    Tomar chtobelay cycle sekhar galpo sune, amar nijer barobelay cycle sekhar katha mone pore galo.Amader barir samnei chilo baro rasta,ar sekhan diye jatayat karto sab bishal bishal gari.Tai maa kono din o bhuleo cycle kine dite raji hon ni. Sab samayei bhoy peten, pache ami cycle e chore, beghore praan ta harai..:(

    Kintu jakhan seshmesh M.Sc r samay Kanpur e hostel e jete halo, takhan agatya buro bayas e cycle sikhtei halo. Amar cycle ta abasya amar tulonay akarae ektu baro chilo...:(..ami matite paa petam na...r tarfole ja hoar tai hato...dhup dhap nijeo parchi...pathchalti lokjankeo dhakka marchi...:(

    Erakam kare pray mash khanek katlo. Ektu ektu chalate sikhechi, r rastay ektu gari ghora,lokjaner bheer dekhlei top kare bhalomanusher mato cycle theke neme parchi..pache abar dhakka takka diye aksho bar sorry bolte hay..:).Sei samayei akta ghatana ba durghatana ghatlo, jar par theke ami bola jay motamuti accident ghatanoy khanto dilam.

    Akdin class er seshe phanka raasta diye cycle chaliye hostel e firchi. Amon samay akta bishal baro school bus akebare pechone ese marlo ak horn. Byas amar sab confidence jadumantrobole akebare vanish hoye galo....ami bhoyer chote soja chokh bandho kare handle dilam chere...r akebare sotan Hostel er gate e giye marlam dhakka...hat paa bhoyanok rakam kete chore giye akebare jata kando!!!!...amader hostel er buro darwaan ha ha kare chute elo...amake r amar tribokroshanku cycle take anek kashte dhare tullo..chokher jol r naker jol muche jakhan finally ektu dhatshto holam...takhan se bechara khub dukkhu dukkhu mukh kare amay jigasa karlo..."Didi aap break kyun nahin lagati?"...ar seta shune ami sanghatik rakam obak hoye take jigasa karlam..."yeh cycle mein break kahan hota hain?"...amar proshno sune tar kirakam abostha hayechilo seta bolai bahulyo...kintu ami tarpar theke cycle e break er uposthiti samparke gyan labh kare...nijeke ebong baki lokjanke ahoto kara theke biroto holam...:)

    ReplyDelete
    Replies
    1. পিয়ালি, অসাধারণ গল্প। আমার অভিজ্ঞতা তোমার থেকে একেবারে উল্টো। আমি আবার সাইকেল দেখলে তার ব্রেকের খবরটাই আগে নিই। চলার আগেই থামার চিন্তা করি।

      তবে তুমি এম এস সি পড়ার সময় সাইকেল শিখেছ, এটা একটা দারুণ ব্যাপার। বিম্ববতী যদি এই কমেন্টটা পড়ে তাহলে নিশ্চয় অনুপ্রাণিত হবে।

      Delete
  11. UP'r gram e biye te patro joutuk hisebe "cycle" pay...tate bou ke chapiye niye nijer bari phere...chotobelay prochur notun bou (in bridal finery) cycle er pechone boshe achey aar bor (topor equivalent) pore chalachey scene dekhechhi :)
    jibone ekbar cycle chepe jammu theke kanyakumari trip korbar ichhe achey.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সাইকেল চেপে উত্তর থেকে দক্ষিণ? ভালো আইডিয়া কিন্তু। আমাকে খবর দিয়ো একটা শম্পা প্লিজ। আমিও যাব।

      Delete
  12. Kuntala-di, prothombaar tomar snge same time e same boi poraar coincidence ta holo! Ami oboshyo online porchi golposomogro ta, thik kaj koraar time e, kaj e phanki diye!
    Dhaalu jaegae cycle chalate ki bhoe laage na? khali mone hoe pore jaboi jabo! Ami onek beshi boyeshe cycle chalano shikhechi, kintu shekhaar por khoob anondo hoechilo, campus er modhdhe eka eka gaan shunte shunte khoob cycle chore ghure beratam, onek somoye brishti te bhijte bhijte o cycle chalatam. Kichu gaan amar permanent cycle songs hoe geche, onnno jaegae shunleo cycle chalanor din gulo mone korie dae.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমিও অনলাইনই পড়ছি পরমা। সাইকেল সম্পর্কে তোমার আমার মত মিলে গেছে। আমার অবশ্য সাইকেল চালানোর গান নেই তেমন কিছু, তবে হাঁটার গান ডেফিনিটলি আছে।

      Delete
  13. porlam..cycle bettanto besh laglo..

    ReplyDelete
  14. '....ব্যাপারটাও কুইডিচের ঝাঁটার মতোই..." eta darun diechho :-), ar beguni cycle er kotha shunei darun lagchhe, chhobi dekhle je aro bhalo lagbe jani :-), kintu camera cycle er jhurite sabdhane nio... :-). Aj nischoi tumi ar tomar cycle berie porbe..chhobi dio please.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ ইচ্ছাডানা, আমি সাইকেল নিয়ে মহানন্দে চললাম আর জিনিসপত্রও ঝুড়ি থেকে পড়তে পড়তে চলল, সে রকম যাতে না হয় সে জন্য একটা বেল্টের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ওই যে সেই ব্রাজিলের ক্যামিলার কথা বলেছিলাম, সে-ই করে দিয়েছে। বড় ভালো মেয়েটি। কিন্তু বিপদের কথা হচ্ছে, আজ হয়তো বেরোনো নাও হতে পারে, প্রচুর কাজ জমে রয়েছে। তবে দেখা যাক, এখনও তো সবে কলির সকাল। বেরোলে নিশ্চয় ছবি দেখাব।

      Delete
    2. ক্যামিলার byabostha besh bhalo :-) , kal berono hoeni mpone hochhe, koi baat nehi , next week e nischoi chhobi asbe :-)

      Delete
    3. হাহা, দেখা যাক ইচ্ছাডানা।

      Delete
  15. শুনেছি সাঁতার আর সাইকেল কেউ একবার শিখলে জীবনে ভোলেনা। আমারও জীবনের দ্বিতীয় সাইকেলটা (টবু ট্রাই সাইকেল ধরলে তৃতীয়) মেরুন রঙের ছিল। বি এস এ এস এল আর। কত যে চালিয়েছি সেটা এলাহাবাদে। আছাড়ও খেয়েছি অনেক। এখন সেটা আমাদের হুগলীর বাড়ির গ্যারেজে ধুলো খাচ্ছে।

    এ দেশে আসা মাত্রই আমার এক দাদা আমায় একটা গিয়ার-অলা সাইকেল দান করেছিল। সাথে হেলমেট। দুয়েকদিন সেটা চালিয়ে বুঝলাম যে (ক) আমার রাস্তার ডান-বাঁ গুলিয়ে যাচ্ছে, (খ) এদেশ আমাদের দেশের মতন সমতল নয়, এক মাইল সাইকেল চালাতেই হাঁপ ধরে যায়, (গ) নেওয়ার্কে সাইকেল চালিয়ে ঘোরা নিরাপদ নয়, এবং (ঘ) অক্টোবর পড়তে না পড়তে ঠান্ডা হাওয়ায় কষ্ট হওয়া শুরু হল। সেটা সেই শীতে যে গ্যারেজে ঢুকলো, আজও বেরোয়নি। কদিন ধরে ভাবছি ওটা বের করলে হয়. আপনার লেখা পড়ে নতুন করে উত্সাহ পেলাম। এখন অবশ্য আমার গাড়ি আছে। শেষমেষ হয়ত সাইকেলটা ক্রেগসলিস্টে যাবে। আপনার সাইকেলটার ছবি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক বলেছেন সুগত, আগে সাইকেল ছাড়া চলত না, এখন সাইকেল চালানর অজুহাত খুঁজে বার করা যায় না। সময় যে কীভাবে বদলায়।

      Delete

Post a Comment