সময়ের দোষ



গত ক’দিন ধরে ভেবে ভেবে আমি সময় ও কাজের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে একটা সিন্যারিও বিল্ডিং এক্সারসাইজ করেছি। এই দেখুন।


সময়
কাজ
কাজ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা
১.
আছে
আছে
শূন্য
২.
আছে
নেই
নট অ্যাপ্লিকেবল।
৩.
নেই
আছে
সামান্য। যদিও কাজের গুণগত মান নিয়ে কিছু না বলাই ভালো।
৪.
নেই
নেই
নট অ্যাপ্লিকেবল।

(ফুটনোটঃ বান্টি বলছে দুই আর চার নম্বর সিন্যারিওটা রিয়্যালিস্টিক নয়। বলছে, এ ধরণের আবোলতাবোল এবং অ্যাকাডেমিক্যালি নন-রিগোরাস কাজকর্মের জন্যই ইকনমিস্টদের নাকি কেউ সিরিয়াসলি নেয় না।)

ইকনমিস্টদের নিক আর না নিক, বান্টিকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কোনও কারণ নেই কাজেই আমরা আমাদের বক্তব্যে ফিরে আসি। না বোঝার কিছু নেই, তবু ওপরের চার্টটা একবার ছোট করে ব্যাখ্যা করে দিই। অপ্রয়োজনীয় কথা বলব না এমন মুচলেকা যখন লিখে দিইনি তখন আমাকে ঠেকায় কে।

দেখতেই পাচ্ছেন, ওপরের চার্টটায় সময় ও কাজের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আমাদের সম্ভাব্য সিন্যারিওটি হচ্ছে কাজের হওয়া না হওয়া, আর সে সিন্যারিওটির নেপথ্য চালক হচ্ছে সময় আর কাজের থাকা না থাকা।    

একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার লক্ষ্য করছেন? চারটি পরিস্থিতির ভেতর কাজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে একমাত্র তিন নম্বরে। যখন সময় নেই। ডেডলাইন ঘাড়ের ওপর কিংবা পেরিয়ে গেছে। বস্‌ হাতে খাঁড়া তুলে নিয়েছেন। ফিউচার হাঁড়িকাঠে মাথা দিয়ে থরথর করে কাঁপছে। ঠিক তখনই কাজ হলে হবে। না হলে আর হল না।

বান্টির মতো, সব পরিস্থিতিকেই যদি কমন সেন্স দিয়ে পর্যালোচনা করার বদঅভ্যেস যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি এতক্ষণে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। বলছেন, বাজে বকলেই হল, কাজ সারার জন্য বেস্ট সিন্যারিও হচ্ছে প্রথমটা। কাজ আছে, সময়েরও অভাব নেই, অতএব চালাও পানসি বেলঘরিয়া। তেড়ে টু ডু লিস্ট লেখো আর জমে থাকা কাজের বংশ নির্বংশ করো।

তাহলে আপনার ভুল আমাকে ধরিয়ে দিতেই হবে। বলতে হবে, কমন সেন্স দিয়ে দুনিয়া চলে না, চলে অভিজ্ঞতা দিয়ে। যদি না চলত তাহলে পরীক্ষার মাঝের ছুটিগুলোতে সবাই পড়ে ফাটিয়ে দিত আর কেউই জেমসের রং বেছে খেত না (কী লাভ, সবই একই জায়গায় যাবে যখন)।

কিন্তু তবু সকলেই জেমসের রং বেছে খায়। বান্টির মতো কিছু পাষণ্ড বাদ দিয়ে। ভাগ্যিস খায়। মানবজাতির প্রতি আমার বিশ্বাসের তলানিটুকুও না হলে এতদিনে উধাও হয়ে যেত।

এই যেমন আমার অভিজ্ঞতার কথাই ধরা যাক। আমার ইদানীংকার দৈনিক রুটিনের (বা রুটিনের আদ্যোপান্ত অভাবের) দিকে যদি আপনি নজর দেন তাহলে দেখতে পাবেন আমার হাতে এখন সময় কম নেই। অন্তত কম পড়ার কোনও কারণ ঘটেনি। অর্চিষ্মান বাড়িতে না থাকার আড়াইখানা সুবিধের মধ্যে এইটা অন্যতম। সকালসন্ধ্যের ফালতু আড্ডা থেকে আধ প্লাস তিন, মিনিমাম সাড়ে তিন ঘন্টা বেঁচে যাওয়া।

সাড়ে তিন ঘণ্টা! ভাবা যায়! সাড়ে তিন ঘণ্টায় কী না করতে পারে একটা মানুষ। উচ্চমাধ্যমিকের একটা হাফের পরীক্ষা শেষ করে ফেলতে পারে, অফিসটাইমে রিষড়া থেকে গড়িয়া পৌঁছে যেতে পারে, মহব্বতেঁ সিনেমাটাও প্রায় গোটাটাই দেখে ফেলতে পারে (শেষেরটার জন্য অবশ্য শুধু সময় নয়, কলজের জোরও থাকতে হবে।)

আর আমি কি না জীবনধারণের বেসিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারছি না। স্নানখাওয়ার টাইম নিয়ে সেই আগের মতোই টানাটানি পড়ছে, অবান্তরের ভাগে সেই ছাঁট-সময় ছাড়া কিছু জুটছে না।

শুরুটায় ভয়ানক অবাক হয়েছিলাম। যাচ্ছে কোথায় সময়গুলো? টিভি, ইন্টারনেট, গল্পের বইয়ে বেশি খরচ করছি বলে তো মনে হচ্ছে না, পড়ার বইখাতাও তাকে বসে ধুলো খাচ্ছে যেমন কে তেমন, তবে হচ্ছেটা কী? সময়গুলো কি পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে, নাকি আমি যখন অন্যদিকে তাকিয়ে আছি তখন ষড়যন্ত্র করে ঘড়ির কাঁটার কান মূলে এগিয়ে দিচ্ছে?

অনেক তক্কে তক্কে থেকে অবশেষে বার করে ফেলেছি। এগুলোর কিছুই নয়। বেঁচে যাওয়া সময়টায় আমি বসে বসে ভাবছি, ‘আরে অনেক তো সময় আছে, এই আর দশ মিনিট পর থেকে কাজে লাগলেই হবে এখন।’

আর সমস্ত কমন সেন্সের মাথায় চাঁটি মেরে সেই দশ মিনিট মিনিট থেকে ঘণ্টায়, ঘণ্টা থেকে দিনে, দিন থেকে মাসে, মাস থেকে বছরে, বছর থেকে . . . প্যাটার্নটা বুঝতে পেরেছেন আশা করি।

সেই দশ মিনিটের পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট মিস হয়ে গেছে, তার জায়গায় কোনওমতে এই পোস্টটা গুঁজে দিয়েছি। যদিও এর ভাগে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বেশি একটি সেকেন্ডও বেশি খরচ করা যাবে না। টাইম নেই। 'নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো' মনে করে এই হুড়ুমদুড়ুম পোস্টই পাবলিশ করে দৌড়ে অফিস যাব। পড়ে যদি বিচ্ছিরি লাগে তাহলে আমাকে দোষ দেবেন না যেন। মনে রাখবেন দোষ আমার নয়, আমার হাতে থাকা অফুরন্ত সময়ের।

      

Comments

  1. dekhun amar dorshon khub porishkar...jokhon haate somoy ache tokhon toh kajer chaap niye chinta korar kono karon e nei..kono ek somoye dhire susthe korlei holo..ar jokhon jothesto somoy nei...tokhon ar chinta kore ba kaj kore ki hobe?o to emnio hobe na..omni o na :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, বাঃ এটা বেশ ভালো দর্শন তো ঋতম। অ্যাপ্লাই করে দেখলেই হবে।

      Delete
  2. Kolje noy, aporishim murkhami-r jor-e 'Mohabbatein' dekhte gechhilam hall-e. Amar protyekta dnaat jodi keu nora diye thuke bhenge daye, taholeo sheirokom jontrona hobey na. Ami sure.
    Afuronto shomoy haate thakle ekta adbhut byapar hoy. Kichhutei ghum paye na. Ghum paye shudhu afuronto kaj thakle.

    ReplyDelete
    Replies
    1. নোড়া কথাটা অনেকদিন পর শুনলাম। ভালো লাগল। মহব্বতেঁ হলে দেখার অনুভূতিটা একেবারে ঠিক ঠিক ভাষায় প্রকাশ করেছ। ফুল মার্কস। আমার আজকাল কী হয়েছে জানি না, সবসময়ই ঘুম পায়। অফিসেও মাঝে মাঝে হেড ডাউন করে থাকি।

      Delete
    2. ah ha! ;) fatigue akta anyotamo lokkhon... setai nay to?

      Delete
    3. ভাগ্যিস চোখ মারলেন, না হলে আমি ভাবতাম আপনি সিরিয়াসলি এই প্রশ্নটা করছেন।

      Delete
  3. Ami etar konotar modhyei pori na. Kokhonoi kaaj kora hoye othe na amar. Somoy thakleo noy, na thakleo noy. :/

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধ্যাত, এটা বিনয়।

      Delete
  4. dhuuussh ,,,pocha post.

    ReplyDelete
  5. Ei je, ei byapare sesh katha http://chadashim.thegsc.co.il/files/sites/2/2013/01/calvin-and-hobbes-last-minute-panic.gif

    ReplyDelete
    Replies
    1. Ami ei link tai dite jachchhilam, apni diye fellen. :)

      Delete
    2. Hehe..ekdom satti katha, tai na? :)

      Delete
    3. এটা আমার ফেভারিট (অন্যতম)।

      Delete
    4. হাই ফাইভ, কোয়েল।

      Delete
  6. I am sure you have read Parkinson's law. That explains your finding. - Gautam Banerji

    ReplyDelete
    Replies
    1. যা বলেছেন কাকু।

      Delete
  7. amar khetre "kaj samponno hobar sambhobona" sob somei - zero :-( ...

    ReplyDelete
    Replies
    1. যাঃ, এটা হতেই পারে না ইচ্ছাডানা। কিছু কিছু কাজ হয়তো পড়ে থাকে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, বেশিরভাগ কাজই আপনি শেষ করেন।

      Delete
  8. কাজ থাকে কাজের মত, আমি থাকি আমার মত, নিজের কাজ নিয়ে। কেউ কারো ব্যাপারে নাক গলানো পছন্দ করিনা।

    আরো একটা ব্যাপার আছে। অনেক ছোটবেলায় পড়েছিলাম "কর্মেই মুক্তি"। মুক্তিটা যে ঠিক কি থেকে, সেটা বুঝে উঠতে পারিনি, কেউ বোঝাতেও পারেনি। কাজেই কর্ম করাও আর হয়ে ওঠেনি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি এখনও বিশ্বাস করি অরিজিত, কর্মেই মুক্তি। যদিও মুক্তি পাইনি এখনও। কী থেকে মুক্তি? অকর্মের অসহনীয়তা থেকে হয়তো।

      Delete

Post a Comment