জানাশোনার আগেই



অফিসে বসে কাজের ভান করতে করতে এমন বোর হয়ে গেলাম যে মাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মা তুমি কখনও বোর হও?’

মা খুব উদাস হয়ে বললেন, ‘কই আর হই। ওই একটা জিনিস আর হওয়া হল না। তোরা কেমন চাইলেই ঝটপট বোর হয়ে যাস, দেখেশুনে আমার এত ইচ্ছে করে হই, কিন্তু কিছুতেই আর হতে পারি না। আসলে আমাদের ছোটবেলায় ‘বোর হওয়া’ ছিল না বলেই বোধহয়। যে নয়ে বোর হয় না, সে কি চাইলেও নব্বইয়ে বোর হতে পারে, তুইই বল?’

বলে মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ করে রইলেন, আমার খোঁচাখুঁচির উত্তরে আনমনা হুঁহাঁ করে দায় সারতে লাগলেন। বুঝলাম কথোপকথন আর বেশি এগোবে না।

ফোন ছেড়ে দিলাম, কিন্তু মায়ের কথাটা মাথায় ঘুরতে লাগল। বোর হওয়া কাকে বলে সেটা না জেনেই খানিকটা বড় হয়ে যেতে পারলে কি বোরডমের হাত থেকে আজীবনের মতো নিস্তার পাওয়া যায়? ইগনোরেন্স কি তবে সত্যি সত্যি ব্লিস?

ঠাকুমাকে ফোন করে ‘কেমন আছ কী করছ কী খাচ্ছ’ সারার পর জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা ঠাকুমা, তুমি কখনও ডিপ্রেশন ফিল করেছ?’

‘অ্যাঁ? কী? ডিরেশন?’

‘আরে ডিপ্রেশন, ডিপ্রেশন, বিষণ্ণতা। যেটা হলে কাজ করতে ইচ্ছে করে না . . .’

ঠাকুমা আঁতকে উঠলেন। ‘কী সাঙ্ঘাতিক! কাজের সঙ্গে ইচ্ছের কী সম্পর্ক? কাজ করতে ইচ্ছে করছে না বলে যদি বসে থাকতাম, সংসারটা চলত? আর আমাদের আমলের শাশুড়িরা তোমাদের শাশুড়িদের মতো ছিলেন না, ওসব অনিচ্ছেটনিচ্ছের কথা তুললে আর রক্ষা রাখতেন না।’ আমি বললাম, ‘হুম্‌, বুঝলাম। কাজের অনিচ্ছের না হয় অপশন ছিল না, কিন্তু আরও সিনড্রোম আছে। এই যেমন ধর সারা গায়ে ব্যথা . . .’

ঠাকুমা বললেন, ‘সে তো সর্বক্ষণ হত। আমাদের বড় ভাতের হাঁড়িটা দেখিসনি বোধহয় তুই, যেটা তোর মা ধুয়েমুছে বাংকে তুলে রেখেছে? একএকবারে পনেরো জনের ভাত রান্না হত ওই হাঁড়িতে। বারে বারে উবু হয়ে ওই হাঁড়ি উনুন থেকে নামাও ওঠাও, গায়ে ব্যথা না হলেই আশ্চর্যের কথা।’ আমি মরিয়া হয়ে বললাম, ‘যখন তখন কান্না পাওয়া, লোকের মুখদর্শন করতে ইচ্ছে না করা, অকারণ মাথায় রক্ত উঠে যাওয়া . . .’ ঠাকুমা লজ্জিত গলায় বলতেন, ‘যেত তো। শ্বশুরবাড়িতে তো আমার নামই পড়ে গিয়েছিল রগচটা বলে। আমার কাকাশ্বশুর বলতেন আমাদের জগার বউয়ের সব ভালো, খালি মাথাটা একটু গরম। তবে তারও দাওয়াই ছিল। রাগ হলে চারটের মধ্যে যেটাকে হাতের কাছে পেতাম, আচ্ছা করে সেটার কান মুলে দিতাম। তাতেও রাগ না পড়লে এগালে ওগালে খান দুই থাপ্পড়। ব্যস। রাগের ‘র’ও বাকি থাকত না। কিন্তু তুই যে কী বললি ডিরিকন না কী, সে সবে কখনও ভুগিনি।’

ফোন রেখে গরম চায়ের খোঁজে বেরোলাম ঠাকুমার কানটা এতদিনে পুরো গেছে। পুরোটা সময় গলা ডি-শার্পে রেখে চেঁচাতে চেঁচাতে গলার ভেতরটা চিরে গেছে একেবারে।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে বান্টিকে পিং করলাম। হতভাগা আমার স্ট্র্যাটেজি ফলো করে আজকাল হরবখত ইনভিসিবল হয়ে থাকে, কারণ জানতে চাইলে বলে ‘শঠে শাঠ্যং’। পাঁচবার ‘আছিস আছিস’ করার পর প্রভুর দেখা মিলল। সব খুলে বললাম। মায়ের হাইপোথেসিস, ঠাকুমার এভিডেন্স। শব্দের প্রচলনের আগে জন্মে গেলে সেই শব্দের প্রকোপের হাত থেকেও কি বাঁচা যায়?

বান্টি বলল, ‘এইসব আজেবাজে বিষয় বাদ দিয়ে কাকিমার মতো শার্প লোকের তোমার মতো হাবুলচন্দর মেয়ে কী করে হল সেটা নিয়ে রিসার্চ করলেই তো পারতে। অফ কোর্স, কাকিমার হাইপোথেসিস ঠিক। এই আমার কেসটাই দেখ না। ঠিকসময় ‘ডুড’ শব্দটা না জেনে কী ঝামেলায় পড়েছি, এখন এত চেষ্টা করেও আর ডুডহুড প্রাপ্ত হতে পারছি না। দূর দূর, এক একসময় মনে হয় সব ছেড়েছুড়ে হিমালয়ে চলে যাই।’

আমি ‘ষাট ষাট’ বলে ফোন রেখে দিলাম। তারপর বেশ কয়েকদিন ধরে ইন্টারভিউ নিয়ে ও পর্যবেক্ষণ চালিয়ে জানতে পারলাম যে আমাদের খবরের কাগজওয়ালার ‘সময়ানুবর্তিতা’ এবং আমার সহকর্মীর ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’ শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচয় ঘটার আগেই ব্যক্তিত্বের বিকাশ মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়েছে।

সেই সেদিন থেকে বসে বসে ভাবছি, ‘প্রোক্র্যাস্টিনেশন’ শব্দটা জানার আগেই যদি বড় হয়ে যেতে পারতাম।


Comments

  1. hahaha ..ei lekhata asamanyo ....darun maja pelam pore ..:)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, তিন্নি।

      Delete
  2. কি ভালো লেখা।আর আমি ও সত্যি কখনো bore হইনা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে কী সুমনা। তোমার ছোটবেলায় তো বোর শব্দটা ছিল বলেই আমার ধারণা (আন্দাজ বলাটাই বেশি ঠিক), তাও তুমি বোর হও না। এটা পুরোটা তোমারই কৃতিত্ব বলতে হবে।

      Delete
  3. Replies
    1. আরে হাসছ কি, আমার সমস্যাটা সত্যি।

      Delete
  4. Arrey Kuntala, ami to amar chhele meyke dekhi kothay kothay bored. Amra toh koi chhotobelate eto bore hotam na! Tomar theory (maane mashimar theory) ta besh mone dhorlo!

    ReplyDelete
    Replies
    1. সিরিয়াসলি রুণা। মায়ের যুক্তিটা আমারও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।

      Delete
  5. সেটাই তো কুন্তলা ,আমি নিজেই জানিনা কেন যে আমি বোর হইনা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা সুমনা, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার মায়ের মতো হাবভাব অনেকটা। তুমি অ্যাকচুয়ালি দুঃখ পাচ্ছ যে কেন তুমি বোর হও না। আমি তোমাকে আশ্বাস দিচ্ছি, বোর হওয়ার থেকে বোরিং আর কিছু নেই, সেটা হও না যে সে জন্য তোমার শুধু হাঁফ ছাড়াই উচিত।

      Delete
  6. আচ্ছা ক্রিয়েটিভিটির সাথে কি কোন যোগাযোগ আছে বোর হওয়ার?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এইটা একটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন করেছ দেবশ্রী। এ বিষয়ে আমার থেকে যাঁরা ভালো বলেছেন তাঁদের কয়েকজনের কথাবার্তার লিংক দিই দাঁড়াও এই সুযোগে।

      The Heady Thrill of Having Nothing to Do by Scott Adams http://online.wsj.com/news/articles/SB10001424053111903454504576486412642177904?mg=reno64-wsj&url=http%3A%2F%2Fonline.wsj.com%2Farticle%2FSB10001424053111903454504576486412642177904.html

      Creativity by Scott Adams
      http://dilbert.com/blog/entry/creativity/

      Creativity and Boredom by Sugata Banerjee
      http://sugatabanerji.blogspot.in/2011/07/creativity-and-boredom.html

      এঁরা সকলেই দাবি করছেন যে বোর হওয়া আসলে ভালো ব্যাপার এবং বোর হওয়ার সঙ্গে সৃষ্টিশীলতার একটা গাঢ় সম্পর্ক আছে। থাকতে পারে। আশ্চর্যের কিছু নয়। সারাদিনে খেয়েদেয়ে অফিস গিয়ে সংসার সামলেই যদি চব্বিশঘণ্টা ফুড়ুৎ হয়ে যায় তাহলে সৃষ্টি করা মুশকিল। তাছাড়া সিনেমাটিনেমাতেও দেখেছি, আর্টিস্টদের মুখে সর্বক্ষণ একটা ভয়ানক বোরড লুক দেওয়া থাকে। এই মুহূর্তে দিল চাহতা হ্যায় সিনেমাটার একটা দৃশ্য মনে পড়ছে। অক্ষয় খান্না (তিন বন্ধুর মধ্যে একমাত্র যাঁর আর্ট নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা আছে) কোনও একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া এড়াতে মাকে বলছেন যে তিনি যেতে চান না, কারণ গেলেই তিনি বোর হয়ে যাবেন। তখন অক্ষয় খান্নার মা বলছেন সে আর নতুন কথা কি, ছেলেকে তিনি যতটুকু চিনেছেন তাতে পৃথিবীর খুব কম জায়গায় গেলেই ছেলে বোর হবেন না।

      অর্থাৎ আর্টিস্টের সঙ্গে বোরডমের সম্পর্ক একটা যে আছে, সেটা মেনে নেওয়া যায়।

      তবে আরেকরকম যে বোরডম হয়, যেখানে বোর হচ্ছি কিন্তু কিস্যু করতে ইচ্ছে করছে না, ইচ্ছে করছে না বলে কিছু করছিও না, কিছু করছি না বলে আরও বোর হয়ে যাচ্ছি---আমি বোরডমের এই ভিশিয়াস সার্কলটার কথা বলতে চেয়েছি। সে বড় মারাত্মক জিনিস। যিনিই ভুগেছেন তিনিই জানবেন।

      Delete
    2. তোমার দেওয়া লিঙ্কগুলো পড়ে দেখে জানাব. আমি বেশ কিছুদিন একই ধরনের কাজ করলে বোর হয়ে যাই (ঘুম আর খাওয়া ছাড়া).

      Delete
    3. সর্বনাশ! করেছেন কি? স্কট এডামস আর আমার ব্লগের লিংক একসাথে! আমারটা তো পুরো ফাঁকিবাজি, নিজেই ভুলে গেছিলাম কি লিখেছিলাম। তবে এখন আবার পড়ে বুঝতে পারছি, ওই প্ল্যানটায় সামান্য হলেও কাজ দিয়েছিল।

      Delete
    4. আরে স্কট অ্যাডামসের এই লেখাটায় তো আপনার লেখার লিংক থেকেই পৌঁছেছিলাম, আপনার লেখাটার কথা না উল্লেখ করলে কেমন একটা ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাচ্ছি মনে হত না? (আপনাকে ঘোড়া বলিনি কিন্তু, ওটা স্রেফ উপমা)

      Delete
    5. Ekta valo research topic dili re! Tobe vabchi NOshtoneer er charulotar kotha. Ki kori ki kori vab Chilo ekta, seta ki boredom noy! Ei proshonge aro kota shobdo mone porlo jemon hubby! Born ra ekhon Delhi boulder vashay sobai hubby! Wage shobdotar procholon chilona bole kina janina aagekar born war ekhonkar hubby ra kintu Ek not! Nader borers hubby TARA boulder gift dey jar chobi agar fb the pawa jaye. Borera sesob korena . r o onusondhaan korte hobe.

      Delete
  7. ki r korbe...kono jinistai beshidin valo lagena. Bored hoteo bored lagbe khuub joldi. ami jeta kori seta holo ghumoi r eka shopping r cinema dekhte jai...tate kaj hoy ektu holeo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই এক জিনিস বেশিদিন ভালো না লাগার রোগটা ভয়ংকর, রাখী। করার মতো কাজের অপশন যত বেশি, ভালোলাগা উঠে যাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সিও তত বেশি বলাই বাহুল্য। একা সিনেমা দেখতে যাওয়া আমারও একসময় প্রিয় বিনোদন ছিল।

      Delete
    2. এ প্রসঙ্গে নারায়ণ সান্যাল একবার বলেছিলেন যে পল্লবগ্রাহিতা ওনার প্রধান দোষ, উনি সেজন্য ক্রমশ "জ্যাক অফ অল ট্রেডস, মাস্টার অফ নান" হয়ে পড়ছেন। তার ফলে দেখা যায় উনি যদিও অনেক বিষয়ে বই লিখেছেন, অনেক কাজই শেষ করেননি, বা ভালো ভাবে ফলো-আপ করেননি। আমার মনে হয় ক্রিয়েটিভ মানুষেরা অনেকেই এক জিনিসে বেশিদিন আটকে থাকতে চাননা। শুধুমাত্র ভ্যারাইটির জোরেই আমি যেজন্য মানিকবাবুকে চাপলিন বা হিচকক-এর থেকে ওপরে রাখি। শুধু সাসপেন্স বা ডার্ক কমেডিতে আটকে থাকেননি, কোনও এক ধরণের সিনেমাতেও না।

      Delete
    3. আপনার সঙ্গে একমত, আবার একমত নইও। হিচকক আর সত্যজিৎ নিয়ে দুইখান কথা কওয়ার আসে। মানে আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে মনে হয় যে সত্যজিৎ বোধহয় জঁনর সিনেমার ঘেরাটোপে আটকে থাকার পক্ষে বড় বেশি প্রতিভাবান ছিলেন। আমি বলছি না যে হিচককের প্রতিভা কম পড়িয়াছিল, কিন্তু ওই আরকি। এখন হতেই পারে যে সত্যজিতের কোনও একটা বিষয়ের গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না বলেই তিনি ভূত থেকে গোয়েন্দা থেকে নরনারীর প্রেমে লাফিয়ে বেড়িয়েছেন, কিন্তু সেটা আমার মনে হয় না। তবে আমি বেশি বুঝি না। এমনি মনে হল বললাম।

      Delete
  8. মনে হচ্ছে, কাজ না করে শুধু ভান করলে বোর হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি একটা কথা শুনেছিলাম, change of job means and really brings recreation. চেষ্টা করে দেখতে পারো। আসলে আমার অবস্থাও তোমার মায়ের মত। মনে হয়, তোমরাও সত্যিই বোর হও না। ওটা একটা কথার কথা। জল খাও আর ঘুমিয়ে পড়ো। জেগে গিয়ে ব্যস্‌, নতুন সৃষ্টির জন্য তৈরী।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এইভাবে কখনও ভাবিনি মালবিকা। মানে আমরা ভাবছি বোর হচ্ছি, কিন্তু আসলে হচ্ছি না? হুম্‌। এবার থেকে খেয়াল করে দেখব তো।

      Delete
  9. sob bujhlum... sudhu oi ‘প্রোক্র্যাস্টিনেশন’ shobdo ta chara. otar mane ki????

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটু পরে বলছি, অর্ণব।

      Delete
    2. otar mane sadhu bhasay lyad khaowa...ar chiloto bhasay gorimosi kora

      Delete
  10. বোর হওয়া নিয়ে কিছু বলব না, তবে প্রোক্র্যাস্টিনেশন নিয়ে বোধহয় একটা থিসিস লিখে ফেলতে পারি। সবথেকে মজার ব্যাপার, একটা কাজ এড়াতে গিয়ে যে আরো কত হাজার কাজ করে ফেলি সেটা পরে ভাবলে হাসি পায়। যেমন, এখন আমার মাথায় ডেডলাইনের বিকট চাপ, তাই আমি সকাল থেকে আলমারি গোছালাম। আপাতত এক্সেল ফাইল খুলে রেখে সেদিকে একবারও না তাকিয়ে ভীষণ মন দিয়ে অবান্তর পড়ছি। এর পরে নির্ঘাত আরেকটা খুব অদরকারি কাজ মাথায় এসে যাবে। তবে ডেডলাইন থাকলে কিন্তু আমার বাড়িটা খুব ঝকঝক করে। নিজের লেখাপত্তরও বেশ তরতর করে এগোয়, আবার সত্যিকারের লেখার সময় অন্য একটা কাজ খুঁজে পেতেই হয়। অতএব, আমার অভিজ্ঞ মতামত-প্রোক্র্যাস্টিনেশন গিভস বার্থ টু ক্রিয়েটিভিটি, লং লিভ প্রোক্র্যাস্টিনেশন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, এ ব্যাপারে একেবারে হাই হায়ার হায়েস্ট ফাইভ অদিতি। আমারও ডেডলাইনের সময় অন্য কাজে ভয়ানক মন বসে। তবে তুমি আমার থেকে ভালো, অ্যাট লিস্ট আলমারি গোছাও, আমি স্রেফ ক্যান্ডি ক্রাশ খেলি।

      Delete
  11. এখানে অনেক কথাই বলার ছিল, তবে আমার বাড়িতে লং উইকেন্ডে অতিথি আসার ফলে আমি আসল সময়ে আলোচোনাটা মিস করে গেছি। অবশ্য এমন কিছু আহামরি বক্তব্য নয় আমার, আমার এক দাদুর ভাষায় বলতে গেলে "আলো বিশেষ নেই, চোনার ভাগটাই বেশি।" ব্যাপার হলো আমি যখন ছোটবেলায় এলাহাবাদে যাই তার কিছুদিন পরেকার ঘটনা এটা, সম্ভবত ক্লাস ওয়ান-এর। আমার এক বন্ধু আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল আমি বোর হয়ে গেলে কি করি? আমি বোর হওয়া শব্দটা জানতামনা, আর এমনিতেই হিন্দি কথা অর্ধেক বুঝতামনা, তাই ওটা যে একটা ইংরেজি শব্দ তাও বুঝিনি। আমি জানতে চাইলাম বর হওয়া মানে কি, এবং সে বেচারাকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছিল বোঝাতে। এতে মনে হয় সত্যি কথাটার মানে না জানলে ব্যাপারটা এড়ানো যায়। আপনি ইন্টারনেট খুলে এখুনি জিঞ্জিরিয়ার সিম্পটম দেখতে বসুন, দেখবেন সবকটা আপনার সঙ্গে মিলছে। অথচ তার আগে হয়ত রোগটার নামই শোনেননি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এইটা এক্কেবারে মিলে গেছে। মানে একেবারে 'এক্কেবারে'। আমি যতদিন সিনসিয়ারিটি, মোটিভেশন ইত্যাদি ভালো ভালো কথাগুলো জানতাম না, ওগুলোর একটারও অভাব ঘটেনি। জেনে যে কী বিপদ হয়েছে সে কী আর বলব।

      আর আলোচোনা নিয়ে ভাববেন না। আলোচোনায় আলোর ভাগ বেশি থাকলে আমার আবার সেই জায়গাগুলো ট্যান হয়ে গিয়ে শুধু চোনাটুকুই মাথায় ঢোকে। এই যে আপনি কী সুন্দর গল্প দিয়ে বুঝিয়েদিলেন, এর জায়গায় পাঁচপাতা থিওরি কপচালে কার কী লাভ হত?

      অতিথিসৎকার ভালো হয়েছে আশা করি। এখন একটু হাঁপ ছাড়ুন।

      Delete
  12. আমার যুবাবস্থায় Alberto Moravia’র একটা বই পড়ে (কোন বই আর মনে নেই) bored হওয়ার বিষয়টার সাথে পরিচয় হয় | সেটা কলেজের কথা (১৯৬৬ – ৭১) | কিন্তু, সত্যি bored হতে শুরু করি চাকরি জীবনের শুরুতে | ট্রেনিং নিতে আমার কোম্পানি এক কলেজে পাঠিয়েছে – একে পড়াশুনা শেষ করার পর, আবার পড়ার চাপ, আর অন্যদিকে চাকরির মাইনে হাতে পেয়ে যা খুশি করার আনন্দ থেকে বঞ্চিত, কেন না কোনও কারণে কোম্পানি আমার মাইনে পাঠাচ্ছে না | সেই সময়, মনে আছে, সন্ধ্যায় হলেই আমার এক অতি বিনম্র সর্দারজী বন্ধু আমাকে এসে ডাকত, আমরা হেঁটে বেড়াতে যেতাম, আর আমি ওকে literally ‘bore’ করতাম bored হচ্ছি বলে | বেচারি লেখাপড়ায় ও খেলাধুলায় চণ্ডীগড় এর কোনও এক কলেজের সেরা ছাত্র – ও অনেক চেষ্টা করেও আমার কথার মানে বুঝতে পারত না | আমার ধারণাই হয়ে গিয়েছিল যে সর্দারজীরা (এবং অন্যান্য অবাঙালিরা) bored হয় না, এটা চিন্তাশীল মানুষের দোষ, এবং যেহেতু আমি bored হচ্ছি, অতএব আমি ষোলো-আনা বাঙালি | আমার এই bored হওয়ার ব্যাপারটা অনেক বছর থাকে, এবং পরে যেমন যেমন জীবনের চাপ বাড়ে তেমন তেমন এর জ্বর কমে |
    এমন কি হতে পারে যে জীবনের চাপের সাথে মানসিক শক্তির ভারসাম্য না থাকলে, মানসিক শক্তির পাল্লা বেশি ভারী হলে মানুষ bored হয় - যদি সে bore হওয়ার বিষয়টার সাথে পরিচিত থাকে, আগে থেকেই ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার তো মনে হয়, একেবারেই হতে পারে ইন্দ্রনীরবাবু। সমস্যাটা বেসিক্যালি যথেষ্ট কাজ না থাকার। কাজ কম, বিনোদন বেশি (আমার জীবনের গল্প এটা) হলে বোরডম আসবেই। এই ক'দিনে আমি এটুকু বুঝেছি যে বিনোদন আর অবসর দুটোই অত্যন্ত ওভাররেটেড ব্যাপার। মাত্রা ছাড়ালে দুটোই সমান বোরিং।

      আপনার কলেজের টাইমিং-এর সঙ্গে (ছেষট্টিটা যদি ঊনসত্তর হয়, অর্থাৎ ৬৯-৭১) আমার মায়ের কলেজজীবন মিলে গেছে।

      Delete

Post a Comment