অন্দরমুখী



উৎস গুগল ইমেজেস

ইন্টারনেটের প্রথম ফেভারিট বিষয় হচ্ছে বেড়ালছানার ভিডিও, দ্বিতীয় হচ্ছে সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর তৃতীয় হল গিয়ে ইনট্রোভার্টস। ইনট্রোভার্টদের নিয়ে এত কথা, এত চার্ট, এত গ্রাফ, এত আন্টি অ্যাসিড, কুয়াশায় মিলিয়ে যাওয়া রেললাইনের সেপিয়া রঙের ছবির ওপর এত কোটেশন লেখা হয়েছে যে ইয়ত্তা নেই। সেগুলো নাকি আবার লিখেছেন ইনট্রোভার্টরাই।

এই পালে নতুন করে হাওয়া দিয়েছেন সুসান কেইন। দু’হাজার এগারোতে তাঁর লেখা বই “কোয়ায়েট” বেস্টসেলার হওয়ার পর থেকেই মানবজাতির মুখচোরা দলটির প্রতি ইন্টারনেটের কৌতূহল মাত্রা ছাড়িয়েছে। এরা কী খায়, কী পরে, কখন ঘুমোয়, কী ভাবে – এ সব খবর জানার জন্য সকলেই উন্মুখ। বেড়ালছানার ভিডিও দেখার সাইট খুললেই কুইজ, আপনি কি ইনট্রোভার্ট? অনলাইন জামা কিনতে গেলেই সমীক্ষা, আপনি কি ইনট্রোভার্ট?

এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মত অন্যান্য সব ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত মতের মতোই। আমি মনে করি বিষয়টায় ফস্‌ করে কোনও মতামতে পৌঁছনো কঠিন। এই যেমন আমার কথাই ধরা যাক। আমি কি ইনট্রোভার্ট? ইদানীং রোজ বিকেলবেলা সাইলেন্সারবিহীন পালসারে চেপে যে সব শিবের ভক্তরা ডাণ্ডা উঁচিয়ে হানি সিং-এর গান বাজাতে বাজাতে উল্লসিত চিৎকার করতে করতে দিল্লির রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছেন তাঁদের পাশে রেখে আমাকে দেখলে আমি ইনট্রোভার্ট, আবার আমার বাবার পিসতুতো ভাই ‘ন’ জেঠু, যিনি বাড়িতে লোক এলে দৌড়ে দোতলায় গিয়ে ঘরের দরজা দিয়ে বসে থাকতেন তাঁর সঙ্গে তুলনা করলে আমি পুরোদস্তুর পার্টি অ্যানিম্যাল। স্টাফ মিটিং চলাকালীন আমার মুখ দেখলে যে কেউ বলবে আমি ইনট্রোভার্ট, কিন্তু আবার শুক্রবার সন্ধ্যের আড্ডায় ‘ফেলুদা বড় গোয়েন্দা না ব্যোমকেশ’তর্কে আমার হম্বিতম্বি দেখলে কারও কোনও সন্দেহই থাকবে না যে আমি আসলে এক্সট্রোভার্টের ঠাকুরদাদা। রিইউনিয়ন কিংবা পার্টিতে যাওয়ার অনীহা দেখে বিচার করলে আমি তর্কাতীত ভাবেই ইনট্রোভার্ট, কিন্তু আবার ব্লগ খুলে নিজের জীবনের খুঁটিনাটির কথা ঢাক পিটিয়ে প্রচারের উৎকট বাসনা দিয়ে বিচার করলে আমি কোনও অংশেই ইনট্রোভার্ট নই।

তাছাড়া এই ইনট্রোভার্ট-এক্সট্রোভার্ট দ্বন্দ্বের মধ্যে একটা ভালোমন্দ দাগানোর গন্ধ আছে যেটাও সমস্যার। বেশি কথা বলে কি না, পার্টিতে যেতে ভালোবাসে কি না, এই দিয়ে আমরা হরদম মানুষের চরিত্র বিচার করি। আমি নিজেই করি। এবং আমি নিজেই জানি যে এই বিচার অর্থহীন। কম কথা বলার কারণ যে বিচক্ষণতাই হতে হবে তার কোনও মানে নেই। হয়তো বক্তার গলায় ব্যথা বলে তিনি কথা বলছেন না। হয়তো তিনি কথা বলছেন না এই ভেবে যে তাঁর কথা বোঝার মতো বুদ্ধিমান মানুষ এখনও এই পৃথিবীতে জন্মায়নি। হয়তো কেউ মুখে কথা বলছে না এদিকে মনে মনে সর্বক্ষণ কথা বলে চলেছে। অনেকদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে একজন বিজ্ঞানী মনে মনে বলা কথা মাপার একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। আমিও যে ক্ষেত্রবিশেষে মুখ বন্ধ রাখি, সে কি বিচক্ষণ বলে? মোটেই না। মুখ বন্ধ রাখি তার কারণ আমি মার্ক টোয়েনের ওই কথাটা জানি। আর মানিও।
It is better to keep your mouth closed and let people think you are a fool than to open it and remove all doubt.

কিন্তু আমি কী জানি বা মানি সে দিয়ে কিছু এসে যায় না। ইনট্রোভার্ট-এক্সট্রোভার্ট ইত্যাদি শুধু শব্দ নয়, এরা মানুষের মনের জটিল গতিপ্রকৃতির নাম।

বোনাস কুইজঃ ‘মানুষের মনের ব্য্যাপারটাও জিয়োমেট্রির সাহায্যে বোঝানো যায়। সাদাসিধে মানুষের মন স্ট্রেট লাইনে চলে; প্যাঁচালো মন সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে, আবার পাগলের মন যে কখন কোন দিকে চলবে তা কেউ বলতে পারে না – একেবারে জটিল জিয়োমেট্রি।’

কোন গল্পের লাইন? 

সে জিয়োমেট্রির খোঁজ যাঁরা রাখেন তাঁরাই বলতে পারবেন ইনট্রোভার্ট কারা, ইনট্রোভারশন কী, সেটা খায় না মাথায় দেয়। যেমন ওয়েলেসলি কলেজের মনস্তত্ত্বের মাস্টারমশাই জোনাথন চিক। তাঁর একটি পেপারের নাম হল Four Meanings of Introversion: Social, Thinking,Anxious, and Inhibited Introversion। আঠেরো থেকে সত্তর বছর বয়সের পাঁচশো জন লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জোনাথনবাবু ইনট্রোভারশনের একটি মডেল বানিয়েছেন, নাম দিয়েছেন STARS ফর সোশ্যাল, T ফর থিংকিং, A ফর অ্যাংশাস, R ফর রেস্ট্রেইনড। জোনাথন বলছেন ইনট্রোভার্ট এই চার রকমেরই হতে পারে।

The uniting principle of all four kinds is, of course, a tendency to turn inward rather than outward — but beyond that, it gets more complicated.” 

এই কমপ্লিকেশন কাটিয়ে নিজের মনের তল পেতে গেলে আপনি এই কুইজটা খেলে দেখতে পারেন। আমি খেলেছি। তাতে এই বেরিয়েছে। মোটের ওপর আমার অন্তর্মুখিনতার বেশিরভাগটাই সামাজিক। প্রায় চল্লিশ শতাংশ। খানিকটা অন্তর্মুখিনতা এসেছে সংযম থেকে, খানিকটা উদ্বেগ থেকে। আর ভাবনাজনিত অন্তর্মুখিনতার অংশটুকু, প্রত্যাশিতভাবেই, সবথেকে কম।

(ছবিটা ঝাপসা এসেছে তাই বলে দিচ্ছি। ওপরের অক্ষে সোশ্যাল ইনট্রোভারশন, ডানদিকের অক্ষে রেসট্রেইনড, নিচের অক্ষে অ্যাংশাস এবং বাঁদিকের অক্ষে থিংকিং ইনট্রোভারশন মাপা হয়েছে।)


আপনি কোন রকমের ইনট্রোভার্ট?   

    

Comments

  1. S-T-A-R:
    Approximately, 38-39-37-41.

    আপনার মতই, চল্লিশের আশেপাশে।
    বোনাস কুইজের উত্তর সোনার কেল্লা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুইজের উত্তর যে ঠিক হয়েছে সেটা তো বলাই বাহুল্য। ইন্ট্রোভারশনের মাপ মিলেছে দেখে খুশি হলাম।

      Delete
  2. STAR 80-60-40-20..sob jor sonkhya...r lekhata feluda mone porchhey kintu golpota mone porchey na

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ তুমি তো বেশ সামাজিক অন্তর্মুখী দেখতে পাচ্ছি, চুপকথা। গুড গুড।

      Delete
  3. khub shundor lekha...
    ;-)
    bhabchi uttor ta...kon typer introvert!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, দয়িতা। কুইজটা খেলে ফেলুন, তাহলেই ভাবনার সমাধান হয়ে যাবে।

      Delete
  4. Nice read..Sotti oi bapar ta ki irritating na? Idaning Noida teo roj bikele oi jonno Traffic jam lege jacche; tobe ei bochhor kintu Dilli te jothesto bristi holo.. :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে তুমি নয়ডায় থাকো বুঝি, রণদীপ? আমার পড়শি তো তার মানে। সত্যি এবার দিল্লিতে বৃষ্টির বহর দেখে আমি ইমপ্রেসড।

      Delete
    2. Just ei bochhor thekei.. :) Aajkeo to khub brishti holo..

      Delete
    3. বাঃ, এন আর সি তে স্বাগতম। বৃষ্টি হলেই ভালো, না হলেই তো ভ্যাপসা গরম।

      Delete
  5. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার অন্তর্মুখিনতায় ভাবনার ভাগ বেশি দেখে ইমপ্রেসড হলাম, শিবেন্দু। অবান্তরে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
    2. My privilege no doubt. Abantor a prayosho-e eleo comment to beshi kora hoyna, ba korleo sign korar dhairjyo nei, ami chupchap back-bencher shrota. Shebhechchha-soho.

      Delete
    3. ও তাই নাকি? গুড গুড।

      Delete
  6. চার টাইপ এর introvert বার করতে পেপার লিখেছে! হা হতোস্মি !

    ReplyDelete
    Replies
    1. তাও তো এঁর পেপারটা নিয়ে এত লোকে কথা বলছে, কুইজ বানিয়ে খেলছে, কাকলি। বেশিরভাগের পেপার তো তারা আর তাদের অ্যাডভাইসর ছাড়া আর কেউ ছুঁয়েও দেখবে না।

      Delete
    2. eita dekho :)
      http://www.huffingtonpost.com/entry/10-comics-that-perfectly-sum-up-what-its-like-to-be-an-introvert_55c3adcfe4b0f1cbf1e429cc?ncid=fcbklnkushpmg00000032

      Delete
    3. বাঃ, বেশ মজার কমিকসগুলো, কাকলি। ওই যে সার্কলে বসে নিজের সম্বন্ধে কিছু বলার ব্যাপারটা ওটা আমার সবথেকে বেশি মিলেছে। লিংকটা পাঠানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  7. amar elo STAR => 38-42-40-38 .. topic ta darun go... 3rd paragraph ta ekdom mile geche... acha tomar ekta school life er photo dekhlam facebook e.. tomader batch er kono didi lagiyeche... :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. যাক, তোর আর আমার স্কোর কাছাকাছিই আছে দেখছি, ঊর্মি।

      Delete
  8. STAR => 35-41-25-30

    eta arekta khela,personality type ber korar.. dekhte paro
    http://www.humanmetrics.com/cgi-win/jtypes2.asp

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয় দেখব প্রিয়াঙ্কা। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  9. STAR--- 43-28-35-38....

    besh interesting laglo proshno gulo :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, গুড গুড, অরিজিত।

      Delete
  10. Abantor er samnyo poriborton bhalo laglo. :-)

    STAR--- 48-38-40-30.... besh interesting

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি বুঝেছেন! খুশি হয়ে গেলাম ইচ্ছাডানা। থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।

      Delete
  11. introvert-extrovert charo to ekta kind ache jara ambivert....amr ma jamon sobetei extro..baba into..ami kothao thik moto khap khulte na pare ambi hoe giechi amr dharona..:(

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহা, দুঃখ পাচ্ছেন কেন অনিরুদ্ধ, ভাবুন, আপনি হচ্ছেন গিয়ে বেস্ট অফ বোথ ওয়ার্ল্ডস।

      Delete
  12. 36-34-34-31 এল। ভাল করে ব্যাখ্যা করে বল তো গুরু কেসটা কী

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমিও কুইজটুকুই খেলেছি প্রিয়াঙ্কা। তার গভীরে গিয়ে বেশি কিছু বুঝিনি। তোমার স্কোর জেনে ভালো লাগল।

      Delete
  13. STAR = 50-50-40-35, approx. model ta khubi interesting.
    ami tomar 'no' jethur motoi akdom. tobe blog khule dhak petate amaro bhalo lage. asole introvert holeo sobari akta na akta outlet dorkar pore mone hoy. by the way, mone mone amio sarakhon kotha boli.
    onekdin por abar ferot elam Kuntala di. asha kori bhalo acho. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে কুহেলি, কেমন আছ? আমি দিব্যি আছি। ওই আউটলেটের ব্যাপারটা আমারও মনে হয়।

      Delete

Post a Comment