খ্যাতি
মূল গল্পঃ Fame
লেখকঃ Arthur Miller
*****
সেই দেওয়ালে স্লোগান লেখা
ঢিকিয়ে চলা ট্রামগাড়ি, সেই বাসের জানালা থেকে উড়ে আসা থুতু আর পানের পিকের ছোপ ধরা রাস্তা,
সেই রাস্তার পাশে বন্ধ শাটারের সারি। সেই সিগন্যালে সিগন্যালে দামি
গাড়ির বন্ধ জানালার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া ভিখিরি শিশুর দল, সেই
পিৎজার দোকান, সেই লেটেস্ট ফ্যাশনের জামা পরা ন্যাড়ামুণ্ডি,
অন্ধ পুতুলের প্রদর্শনী। সব একই রকম থাকে, তবু
বছরের এই সময়টা সবকিছুর ওপর একটা আলগা চটকের আচ্ছাদন পড়ে। রোদ নরম হয়ে আসে,
হাওয়ার সঙ্গে কোথা থেকে একটা মৃদু অথচ তীব্র গন্ধ ভেসে আসে। তিরিশের
ওপর যাদের বয়স তারা জানে ওটা ছাতিমের গন্ধ। সব মিলিয়ে মনে হয় শহরটা বোধহয় এখনও
পুরো মরে যায়নি। এখনও প্রাণ আছে কোথাও।
অবশ্য এসব কথা অমৃত খেয়াল করছিল
না। ছ’লাখ পঁচিশ হাজার
টাকার ব্যাপারটা ওর মাথায় ঘুরছিল। রিসেন্ট উপন্যাসটার ফিল্ম রাইটস্ পঞ্চাশ লাখ
টাকায় বিক্রি হয়েছে তার। নিয়মমতো সাড়ে তেরো পার সেন্ট হিসেবে ছ’লাখ পঁচিশ হাজার পাওয়ার কথা সুব্রতর। সুব্রত অমৃতর এজেন্ট, যে এই সব বিক্রিবাটা দেখাশোনা করে। প্রথমবার টাকার অংকটা শুনে চমকে
গিয়েছিল অমৃত। ওর মুখ দেখে সুব্রত কিছু আঁচ করেছিল বোধহয়। ডবল চেক করার ছুতো করে
ক্যালকুলেটরের বোতাম টিপতে টিপতে জোরে জোরে বলেছিল, তেরো
পয়েন্ট পাঁচ পার সেন্ট ইনটু পঞ্চাশ লাখ . . . সিক্স ল্যাখস্
থার্টি ফাইভ থাউজ্য্যান্ডস্।
এর ওপর আবার ট্যাক্স। ভুরুটা আরও কুঁচকে গেল অমৃতর। উল্টোদিক থেকে এক সুন্দরী মহিলা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসছিলেন, অমৃত ভুরুটা কুঁচকে রেখেই সোজা হেঁটে গেল। থামলেই সেই এক কথোপকথন। "আপনার লেখা আমার এত ভালোলাগে, এত বুদ্ধিদীপ্ত এবং সেনসিটিভ, আর আপনার সেন্স অফ হিউমারের কথা তো . . ."
নিজের কর্কশতায় নিজেই বিরক্ত হল
অমৃত। আর কীই বা করবে লোকে? তাকে চিনেও না চেনার ভান করে (বা সত্যি সত্যিই না চিনে - সম্ভাবনাটার কথা
মাথায় আসতেই শিউরে উঠল অমৃত) চলে যাবে? নিজেদের ভালোলাগার
কথা যেচে তাকে জানাতে আসছে এ তো ভালো কথা। প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য অমৃত ঠিক করল এর
পরের মানুষটি, যে তাকে অমৃত সান্যাল বলে চিহ্নিত করতে পারবে
তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে, হেসে কথা বলবে অমৃত।
সন্ধ্যে নেমে গেছে। দোকানের
জানালায় জানালায় আলো। শোকেসের ভেতর মহার্ঘ মোবাইল ফোনেরা সার বেঁধে শুয়ে আছে।
পঞ্চাশ মাইনাস সোয়া ছয়, কত হয়? ট্যাক্সম্যাক্স ধরে না হয় দশই বাদ দিল। এখন
অনায়াসে এসব দোকানে ঢুকে একখানা দুর্দান্ত দামি ফোন কিনে ফেলতে পারে অমৃত। কিন্তু
অমৃত কিনবে না। কারণ অমৃত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। সারি সারি মহার্ঘ, কিন্তু ওর কাছে মূল্যহীন ফোন থেকে চোখ সরিয়ে কাঁচে ফুটে ওঠা নিজের
প্রতিবিম্বর দিকে তাকাল অমৃত। উসকোখুসকো চুল, কাঁচাপাকা দাড়ি, খাড়া নাক, চকচকে
দুটো চোখ চশমায় ঢাকা। চশমার ফ্রেমের মডেলটা সময়ের থেকে
অন্তত বছর পঁচিশেক পিছিয়ে। আঠেরো বছর নাগাদ শেষবার পাওয়ার বাড়ার পর থেকে আর বদলানো
হয়নি। গায়ে পাড়ার দোকান থেকে কেনা সস্তা চেকশার্ট, ঢিলে
ট্রাউজারস। বছর তিনেক পুরোনো বাটার চপ্পলের সোলের আঠা খুলব খুলব করছে।
এত সম্মান, এত অর্থ,
এত পুরস্কার, এত স্বীকৃতি, স্বপ্নের মতো এই অবিশ্বাস্য সাফল্য পাওয়ার পরও ও যে নিজের বাইরেটাকে অবিকল
রাখতে পেরেছে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে একটা বেশ চাপা গর্ব আছে
অমৃতর। চেহারা দেখে কেউ আন্দাজ করা মুশকিল যে এই
লোকটার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। তিনটে ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এর লেখা। চারটে উপন্যাস
থেকে তিনটে বাংলা, একটা হিন্দি ব্লকবাস্টার সিনেমা হয়েছে,
দ্বিতীয় হিন্দি সিনেমার জন্য উপন্যাস রেকর্ড দামে বিক্রি
হয়েছে সদ্য। পুরস্কারের ব্যাপারটা যদি ছেড়েও দেয়, বিখ্যাত
লেখকরা অনেকেই আলুথালু চেহারার হন অমৃত জানে, কিন্তু এই
লোকটা যে মিনিট চল্লিশ আগে লিটারেরি এজেন্টকে সোয়া ছ'লাখটাকা
কমিশন দিয়ে এসেছে, সেটা? সেটা অমৃতকে
না চিনলে, শুধু চেহারা দেখে কেউ কখনও ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে
পারবে না।
কনুইযে হঠাৎ একটা হ্যাঁচকা টান
পড়ল অমৃতর। একটা মুশকোমতো ছেলে, টাইট টিশার্ট, এই নেমে আসা সন্ধ্যের মুখেও চোখে
সানগ্লাস। অমৃতর কনুইটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
“অমৃত স্স্যানাল?”
অশিক্ষিত উচ্চারণে জেরার ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করল ছেলেটা।
কনুইটা ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়িয়ে নিল
অমৃত।
“না। তবে অনেকেই
ভুল করে।”
চিন্তার ছিঁড়ে যাওয়া সুতোটা
ধরার চেষ্টা করতে করতে আবার পা চালাল অমৃত। কব্রজি উল্টে সময় দেখল।
পাঁচটা চল্লিশ। মধুমিতা চক্রবর্তীর বাড়িতে ডিরেক্টরের সঙ্গে মিটিং শুরু হবে
সাতটায়। অমৃতর যে সব উপন্যাসগুলো থেকে বাংলায় সিনেমা হয়, সেগুলোর
চিত্রনাট্য ও নিজেই করে। প্রথমটার করেনি, এবং ঠেকে শিখেছে।
তার অত সাধের লেখার ওই পরিণতি! নিজের লেখার সম্মানরক্ষার একটা তাগিদ তো থাকেই,
তাছাড়া চিত্রনাট্য লিখতে ওর ভালোও লাগে। উপন্যাস লেখার মধ্যে যে
একাকিত্বটা আছে সেটা চিত্রনাট্য লেখায় নেই। সিনেমা বানানো বেশ একটা গমগমে ব্যাপার।
প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, প্রোডাকশনের লোকজন, এই এতগুলো লোক কয়েকমাসের জন্য
অমৃতর সৃষ্ট কতগুলো শব্দের সুতোয় গেঁথে আছে, এই অনুভূতিটা
বেশ মজার লাগে অমৃতর।
ঘণ্টাদেড়েকের এই খালি সময়টায় কী
করবে ভাবতে লাগল অমৃত। সিনেমা দেখবে? কাছাকাছি একটা হল আছে বটে। পুরোটা দেখা হবে না, কিন্তু
অন্ধকারে খানিকক্ষণ ঘাপটি মেরে থাকা যাবে। এই জায়গাটায় বড্ড ভিড়। পাশ দিয়ে এক
দম্পতি অমৃতর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করতে করতে হেঁটে গেল। ফুটপাথে একটা লোক খবরের
কাগজ, ম্যাগাজিন সাজিয়ে বসে আছে। একদম ওপরের সারির একটা
ম্যাগাজিন কভারে অমৃতর মুখ। বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে অমৃতর দিকেই তাকিয়ে আছে।
বাংলা সাহিত্যে নতুন জোয়ার শীর্ষক প্রচ্ছদ নিবন্ধ ছেপেছে পত্রিকাটা। ওর মুখটা যে
পত্রিকাটার মলাটে থাকবে সেটা জানলে বারণ করে দিত অমৃত। এখন ফুটপাথ, চায়ের দোকানে, রেলস্টেশনে, এয়ারপোর্টে,
লোকের বাড়ির টেবিলে অমৃতর শ্মশ্রুগুম্ফশোভিত মুখ শোভা পাচ্ছে। এই সব
পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে ওর দাড়ি কেটে ফেলার কথা মনে হয়। কিন্তু পরক্ষণেই একটা
দুশ্চিন্তা মগজে খোঁচা দেয়। দাড়ি কেটে ফেললে আর যদি ওকে কেউ চিনতে না পারে?
উল্টোদিকের ফুটপাথে একটা বারের
সাইনবোর্ড জ্বলছেনিভছে। নামটা চেনা চেনা লাগল অমৃতর। এখানে বসেই সময়টা কাটানো যাক।
বড় বড় পা ফেলে রাস্তা পেরিয়ে দরজা ঠেলে দোকানে ঢুকে পড়ল অমৃত। বার কাম রেস্টোর্যান্ট।
লাল রঙের ফাঁপানো গদির চেয়ার, ছাদ থেকে ঝোলা মৃদু ঝাড়বাতির আলোয় বেশ একটা দামি আমেজ। ভেতরটা দেখে অমৃতর
বিশ্বাস বদ্ধমূল হল যে সে এখানে আগে এসেছে। কিন্তু কার সঙ্গে? মদ খাওয়ার অভ্যেসটা ওর হালের। আর হালে এই দোকানে আসেনি সে। তা হলে?
বারের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা লাল
টুলে চড়ে বসল অমৃত। দোকান এখনও বেশ ফাঁকা। কাউন্টারের উল্টোদিকে সাদাকালো ইউনিফর্ম পরা
মাঝবয়সী বারটেন্ডার দাঁড়িয়ে গ্লাস মুছছে। গম্ভীর ঠোঁটের নিচে এক চিলতে ছাগলদাড়ি।
হাত তুলে লোকটার দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটা স্কচ আনতে বলল অমৃত। মাথা নেড়ে ছাগলদাড়ি
সরে গেল। মনে হল না অমৃতকে চিনতে পেরেছে। এই সব জায়গায় অবশ্য চিহ্নিত হওয়ার কথাও
নয়, কিন্তু টালিগঞ্জের এক নম্বর নায়িকা জিভের ডগা দাঁতে
ছুঁইয়ে "আই ল্ল্লাভ অমৃত সানিয়াল'স স্টোরিস" বলে উদ্ধৃতি দেওয়ার পর খুব
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও ইদানীং অমৃতকে ভক্তদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
স্কচ এসে গেল। গ্লাসে চুমুক
দিতে দিতে বারের কাঁচের দেওয়ালে নিজের ছায়া দেখতে লাগল অমৃত। গোমড়া মুখ, ঝুঁকে পড়া
কাঁধ। কাঁধের পেছনে খানিকটা দূরে একটা টেবিলে বসা দুটো অল্পবয়সী মেয়ে সোজা তার
দিকে তাকিয়ে আছে। এরা কি এসে কথা বলবে? অবশ্য বললেই বা কী
বলবে? সেই এক চর্বিতচর্বণ। “আপনি কি
অমৃত সান্যাল?” উত্তরে অমৃত মাথা ডানদিকে বাঁদিকে হেলালে
কথোপকথন ওখানেই শেষ, ওপরনিচে হেলালে আবার সেই “রুচিশীল, বুদ্ধিদীপ্ত, উইটি”
বিশেষণের বন্যা।
এই ছকের বাইরে শেষ কবে কথা
বলেছে সেটা চেষ্টা করেও মনে করতে পারল না অমৃত। স্বাভাবিক লোকেরা যে সব বিষয় নিয়ে
কথা বলে। রাজনীতি, ফুটবল, শচীন তেণ্ডুলকর, গ্রীষ্ম
বর্ষা শীত। অমৃতর প্রতিভা আর সাফল্য ছাড়া অন্য যে কোনও বিষয় নিয়ে শেষ কবে কথা বলেছে? অথচ এমন তো নয় যে অমৃতর সঙ্গে কথা বলার লোকের
অভাব। এই যে বারে বসে একা একা মদ খাচ্ছে অমৃত, রাস্তায়
হাঁটছে, ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রাস্তা পেরোবে বলে
দাঁড়িয়ে আছে, যে কোনও মুহূর্তে যে কেউ এসে অমৃতর সঙ্গে কথা
বলতে শুরু করতে পারে। সবথেকে বিশ্রী ব্যাপারটা হচ্ছে আজকাল ওরকম
কথার জন্য একরকম প্রত্যাশাই করে থাকে অমৃত। না হলেই মনে হয় কী যেন একটা হল না।
নিজস্ব একটা সংসার থাকলে কি
অন্যরকম হত? গ্রীষ্ম বর্ষা
শীত, মাছ মাংসের দর ইত্যাদি অবান্তর কিন্তু পুষ্টিকর বিষয়
নিয়ে কেউ স্বাভাবিক কথোপকথন চালাত রোজ অমৃতর সঙ্গে। গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে নিজের
ছায়াটার দিকে আরেকবার দেখল অমৃত। তাহলে হয়তো মুখটা সর্বক্ষণ এমন বাংলার পাঁচের মতো
হয়ে থাকত না অমৃতর। বেশ কয়েকবছর আগের কথা মনে পড়ে গেল ওর। শ্যামবাজারের
ভাড়াবাড়ির বীভৎস গরম চিলেকোঠার ঘরে বসে সারাদুপুর লিখত অমৃত। হাত ব্যথা হয়ে গেলে
পেন নামিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকত। দুপুরের রোদের তেজে রংজ্বলে যাওয়া
আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে উদ্ভট নানারকম কল্পনা করত। কল্পনা করত ভয়ানক বিখ্যাত
হয়ে গেছে ও। কাগজে কাগজে ইন্টারভিউ ছাপা হচ্ছে ওর। স্টেজে উঠে প্রাইজ নিচ্ছে। বেস্টসেলার তালিকার মাথায় গ্যাঁট হয়ে বসে আছে ওর একটার পর একটা উপন্যাস। রাস্তায় বেরোনো মাত্র অটোগ্রাফ নিতে ছেঁকে ধরছে প্রাণবন্ত, উচ্ছল, শান্ত,
গভীর মেয়ের দল।
আজকাল বুক লঞ্চ কিংবা প্রিমিয়ার
পার্টিতে কিংবা রাস্তায় যে সব মেয়েরা অমৃতকে ছেঁকে ধরে, তাদের অন্তত
একজনের মুখ মনে করার চেষ্টা করল ও। পারল না। সব মেয়ের মুখ 'ভক্ত' নামের ভিড়ে মিশে গেছে। গত কয়েক বছরে একটি
নারীর সঙ্গেও সার্থক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি সে।
দু’নম্বর গ্লাসটা
শেষ করার পর অম্নেৃতর মনে পড়ল এই বারে সে কবে এসেছিল, কোন
টেবিলে বসেছিল। ওই যে, কোণার ওই টেবিলটায়। উল্টোদিকে কে ছিল
সেটাও মনে পড়ে গেল অমৃতর। কল্লোল সেন। কলকাতার বাংলা লিটল ম্যাগাজিন ইন্ডাস্ট্রির
একজন চাঁই, নিজেই নিজেকে বলতেন জহুরী। বলতেন, লেখে তো অনেক
লোকেই, লেখক বানাতে পারে ক’জন? প্রচুর খেটেখুটে লেখা প্রথম উপন্যাসের তিননম্বর ড্রাফটটা কল্লোলদাকে দেখাতে এনেছিল অমৃত।
ভেনুটা কল্লোলদা বেছেছিলেন। অমৃতর টিউশনির পয়সাতে মদ আর মাংস খেতে খেতে হেঁচকি
তুলতে তুলতে ম্যানুস্ক্রিপ্টটা উল্টেপাল্টে দেখেছিলেন। লেখাটা নিয়ে যত কথা
খরচ করেছিলেন তার থেকে বেশি খরচ করেছিলেন মাংসের সুসিদ্ধতা নিয়ে। শেষ চুমুকটা দিয়ে
একটা পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কাগজের তাড়াটা অমৃতর দিকে প্রায় ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন,
“চলবে, তবে নাথিং গ্রাউন্ডব্রেকিং।”
বারের লোকটাকে ইশারা করে আরেকটা
পেগ বানাতে বলল অমৃত। খালিপেটে মদ খাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না বোধহয়। মরুক গে। এজেন্টকে ছ’লাখেরও বেশি টাকা কমিশন দেওয়ার ঘটনাটাকে “গ্রাউন্ডব্রেকিং”
বলতেন কি না কল্লোল সেন সেটা হঠাৎ খুব জানতে ইচ্ছে করল অমৃতর।
“এক্সকিউজ মি?”
ছাগলদাড়ি বারটেন্ডার কাউন্টারের
ওপাশ থেকে ঝুঁকে পড়েছে।
“এক্সকিউজ মি
স্যার, আপনি . . .”
“হ্যাঁ, আমিই অমৃত সান্যাল।” অনাবশ্যক জোরের সঙ্গে বলল অমৃত।
যা ভয় পেয়েছিল তাই, নেশা হয়ে গেছে ওর।
লোকটা দাঁত বার করে হাসল।
“চিনতে পেরেছি,
স্যার। লাস্ট উইকে টিভিতে আপনার
ইন্টারভিউ দেখাল তো।” অমৃতর পেছনদিকে কাউকে একটা
উদ্দেশ্য করে ডানহাতটা তুলল লোকটা।
“আমাদের স্যার
বলছেন আপনার ড্রিংকস অন দ্য হাউস।”
পেছন ফিরে লোকটাকে দেখতে পেল
অমৃত। চোখে
সানগ্লাস, কালো সিল্কের শার্টের বুকের বোতাম খোলা। সেই
ফাঁকটা দিয়ে একাধিক সোনালি চেন দেখা যাচ্ছে। লাল রঙের সুতো বাঁধা পুরুষালি কবজি
তুলে অমৃতর দিকে নাড়াল লোকটা। অমৃত গ্লাসটা হাতে তুলে
নিয়ে হেসে মাথা নোয়ালো। টিভিতে সেলিব্রিটিদের যেমন করতে দেখেছে।
দোকান গুটি গুটি ভরে উঠছে। শুক্রবার সন্ধ্যে, ভিড় হবে মনে হয়। এইবার কেটে পড়া উচিত। বারে কিছু লোক এসে বসছে। তার দিকে তাকাচ্ছে কেউ কেউ। কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে একটা টেবিলে কলকল করছে, এই পকেট থেকে খাতা বার করল বলে।
উঠে পড়ল অমৃত। টুল থেকে নেমে
দরজার দিকে এগোতে যাবে, এমন সময়, “অমৃত সান্যাল?”
অমৃতর থেকে প্রায় এক হাত বেঁটে
একটা লোক অমৃতর পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। বেঁটে এবং মোটা। মোটা শরীরের ওপর প্রায় গোল
একটা ফর্সা মুখ। চিবুক প্রায় নেই, কিন্তু চোখেমুখে একটা আত্মবিশ্বাস ঝলকাচ্ছে। তার কারণটা বোঝা শক্ত নয়। ডান
হাতটা মুঠো করে তর্জনী অমৃতর বুকে প্রায় বন্দুকের নলের মতো করে ঠেকিয়ে করে
রেখেছে লোকটা, সেই আঙুলে এবং বাকি তিনটে আঙুলে তিনটে পাথর।
প্রত্যেকটা সোনায় বাঁধানো। লোকটার টাকা আছে। এবং খুব সম্ভবত আর কিছু নেই। খালি
টাকা থেকে জাত আত্মবিশ্বাসের একটা ভোঁতা ব্যাপার থাকে, এ
লোকটার সর্বাঙ্গে তার ছাপ স্পষ্ট।
“অমৃত সান্যাল?”
গোল মুখটা আবার নড়ে উঠল।
“হ্যাঁ।” একটা দীর্ঘশ্বাস চাপতে গিয়েও পারল না অমৃত। এ নির্ঘাত অটোগ্রাফ চাইবে। চাই কি
নিজের জীবন থেকে গল্পের প্লট সাপ্লাই দেওয়ার প্রস্তাবও করতে পারে।
"আমাকে
চিনতে পারছিস না?"
অমৃত হকচকিয়ে গেল।
"না তো।"
“আমি জিতু।
জিতেন্দ্র বড়ুয়া? আমাকে চিনতে পারছিস না?” লোকটা মুখ হাঁ করল। সত্যি সত্যি অবাক হয়ে গেছে লোকটা। জিতেন্দ্র বড়ুয়াকে
যে কেউ না চিনতে পারে, এই সম্ভাবনাটা যেন লোকটা এর আগে কখনও
তলিয়ে দেখেনি।
নেশার ঘোরটা সরিয়ে অমৃত এবার
মগজের ওপর জোর প্রয়োগের চেষ্টা করল। বোঝাই যাচ্ছে জিতেন্দ্র বড়ুয়াকে অমৃতর চেনা
উচিত। জিতেন্দ্র নামটা যদি কমনও হয়, বড়ুয়া বলে কারও সঙ্গে পরিচয় হলে মনে থাকার কথা। অন্তত এর ভঙ্গি দেখে মনে
হচ্ছে বেশ ঘনিষ্ঠ পরিচয়ই ছিল। বড়ুয়া, বড়ুয়া, একটা ক্ষীণ সাড়া জাগছে কী স্মৃতিতে, নাকি পুরোটাই
কল্পনা করছে অমৃত?
"মানে,
ঠিক কোথায় আলাপ হয়েছিল যদি . . ."
"সাঁতরাগাছি
রেলকলোনি হাই স্কুল, ক্লাস থ্রি থেকে সেভেন পর্যন্ত চারচারটে
বছর আমরা এক ক্লাসে, এক সেকশনে, এক
বেঞ্চে পাশাপাশি বসতাম, আমি, তুই,
বিশ্বজিৎ, তারপর তোর বাবা চিত্তরঞ্জন না
দুর্গাপুর কোথায় বদলি হয়ে গেল . . ."
মনে করার আশায় এবার ক্ষান্ত দিল
অমৃত। বাবার বদলির চাকরিতে অন্তত খানপাঁচেক স্কুল ঘুরেছে অমৃত। সাঁতরাগাছির
স্কুলটাতেই তার মধ্যে টানা সবথেকে বেশি বছর ছিল বটে, কিন্তু কিছুই
মনে পড়ছে না। পড়ার কথাও নয়। নিজের জীবনের ওই অংশগুলোর ওপর বহুদিন হল বিস্মৃতির
পর্দা টেনে দিয়েছে সে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অমৃত হাসল একটু।
“আমার
স্মৃতিশক্তি আসলে বেজায় খারাপ। কিন্তু নামটা একটু একটু মনে পড়ছে বটে।”
জিতেন্দ্র বড়ুয়া সামান্য আশ্বস্ত হলেন মনে হল।
জিতেন্দ্র বড়ুয়া সামান্য আশ্বস্ত হলেন মনে হল।
“তুই কিন্তু
একটুও বদলাসনি। মানে দাড়িটা কেটে নিলে সেই একেবারে ক্লাস সেভেনের অম্রিত্তি।”
এর উত্তরে কিছু একটা না বললে
চলে না।
“তা এখন কোথায়…”
আছেন, আছ, আছিস শব্দগুলো
উহ্য রেখে অমৃত প্রশ্নটা ভাসিয়ে দিল হাওয়ায়।
এইবার বড়ুয়াবাবুর মুখচোখ
জ্বলজ্বল করে উঠল।
“আমি রিটেলে আছি।”
'আর বলতে হবে না,
বুঝে গেছি' ভঙ্গি করে ওপর নিচে মাথা হেলাল
অমৃত। জিতেন্দ্র বড়ুয়া গর্বিত ভঙ্গিতে একবার চারপাশটা দেখলেন। তারপর সন্তানহীন
বন্ধুদম্পতির সামনে নিজেদের ছেলের দুষ্টুমি নিয়ে বাবামায়ের কপট নালিশের ভঙ্গিতে বললেন,
“হেবি ঝামেলার কাজ। ম্যানেজারিয়াল দিকটার গোটাটাই আমাকে দেখতে হয়।
আজ দিল্লি, কাল বম্বে। ফ্যামিলির জন্য একফোঁটা সময় দিতে পারি
না। এই তো গত রোববার হায়দেরাবাদ থেকে ফিরলাম। নেক্সট ইয়ার সুইডেনে যেতে হতে পারে।”
মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অমৃত। সুইডেন না হয় শেওড়াফুলি হলে একটা বিপর্যয় ঘটত সন্দেহ নেই।
মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অমৃত। সুইডেন না হয় শেওড়াফুলি হলে একটা বিপর্যয় ঘটত সন্দেহ নেই।
জিতেন্দ্র বড়ুয়া এবার অমৃতর
দিকে তাকালেন। ঠিক অমৃতর দিকে নয়, অমৃতর সস্তা শার্ট আর কুঁচকোনো কলারের দিকে। অমৃতর বেঁকে যাওয়া ডাঁটির
চশমার দিকে, ধূলিধূসরিত বাটার চপ্পলের দিকে।
“আমার কথা ছাড়,
তুই কী করছিস বল।”
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অমৃত
সত্যি কথাটাই বলল।
“আমি লিখি।”
জিতেন্দ্র বড়ুয়া চোখ কপালে তুললেন। লেখা যে একটা কাজ হতে পারে এটা তাঁর কাছে নতুন খবর। খুব আস্তে ঠোঁটের কোণে অল্প একটা হাসি ফুটল তাঁর। হাসিটার বেশিরভাগটাই ঠাট্টা, কিন্তু পুরোনো বন্ধুর প্রতি খানিকটা করুণাও যেন মিশে আছে কোথাও।
“লিখিস? কী লিখিস?”
মাঝরাস্তায় দাঁড় করিয়ে কারা যেন
কী সব যেন বলে অমৃতকে?
বুদ্ধিদীপ্ত, সেনসিটিভ . . . আর . . . ও হ্যাঁ, সেনস অফ হিউমার।
অমৃতর মস্তিষ্কের যে অংশটার জ্ঞান এখনও টনটনে, সেটা বুঝল ওগুলোর একটাও যদি বিন্দুমাত্রও সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে অমৃতর এখন বলা উচিত যে, সে কবিতা লেখে। প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র ঠেঙিয়ে এসে সন্ধ্যেবেলা যেটুকু সময় পায় তাতে যতটুকু হয় আরকি। দুয়েকটা ছাপা হয় ছোটখাট পাড়ার পত্রিকায় কিংবা পুজোর সুভেনিরে, ব্যস। কিন্তু অমৃত
সেটা বলার সুযোগ পেল না। কারণ ততক্ষণে অমৃতর নেশাগ্রস্ত মগজ পথ আটকে দাঁড়িয়েছে।
"গল্প,
উপন্যাস।"
"উপন্যাস!" জিতেন্দ্র বড়ুয়ার অভিব্যাক্তি থেকে করুণার অংশটা উড়ে গিয়ে এখন
শুধু ঠাট্টা পড়ে আছে।
"আমি পড়েছি, এমন কিছু লিখেছিসটিখেছিস নাকি?"
"আমি পড়েছি, এমন কিছু লিখেছিসটিখেছিস নাকি?"
অমৃতর নেশাগ্রস্ত মগজ ফণা তুলল।
"পড়েছেন কি
না জানি না, তবে দেখে থাকতে পারেন।"
"দেখে?" হাসিটা এখনও আছে, তবে একটা সতর্কতা গুঁড়ি মেরে উঠছে কি এবার জিতেন্দ্র
বড়ুয়ার মুখে?
"'অহল্যাকথা',
যেটা থেকে 'মুক্তি' নামে
বাংলা ছবিটি হয়েছে সেটা আমি লিখেছি।" কথাগুলো মুখ থেকে
বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে আফসোস হল অমৃতর। কিন্তু এখন আর ফেরার সুযোগ নেই। ফিরতে কি আদৌ
চায় অমৃত?
"আর
হিন্দিতে এ বছর একটা সিনেমা বেরিয়েছে ''তমন্না' বলে, ওটার যে অরিজিন্যাল বাংলা গল্পটা, 'ইচ্ছে', সেটাও আমি লিখেছি।"
জিতেন্দ্র বড়ুয়ার মুখ থেকে হাসিটা সম্পূর্ণ মুছে গিয়ে এখন রয়েছে বিশুদ্ধ আতংক। চোখদুটো গোল
গোল হয়ে গেছে, ফর্সা মুখ লাল। সোনার আংটি পরা আঙুলগুলো আবার উঠে এল অমৃতর দিকে।
"অ-অমৃত
স-সান্যাল?"
"হ্যাঁ।"
"ওহ!" নিজের অজান্তেই এক পা পিছিয়ে গেলেন জিতেন্দ্র বড়ুয়া। "আ-আপনার
সঙ্গে আলাপ হয়ে খ্-খুব ভালো লাগল।" এখন আর ভুল করার কোনও সম্ভাবনা নেই। কে সফল, আর কে সাফল্যের ভান করছে, বারের ওই মিটমিটে হলুদ আলোতেও তা দিনের আলোর মতো জ্বলজ্বল করছে।
সেই চোখ ধাঁধানো সত্যির আঘাতেই বোধহয় নেশাটা সম্পূর্ণ ছুটে গেল অমৃতর। ইচ্ছে হল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, এতক্ষণে আমি তোকে চিনতে পেরেছি জিতু" এই বলে লোকটার আংটি পরা আঙুলগুলো নিজের আঙুলে জড়িয়ে নেয়, "আমিই ক্লাস থ্রি থেকে সেভেন পর্যন্ত তোর পাশে বসতাম রোজ," বলে লোকটার কপালে সদ্য ফুটে ওঠা ঘামের বিন্দুগুলো মুছিয়ে দেয়। মিটিং চুলোর দোরে পাঠিয়ে ছোটবেলার বন্ধুকে নিয়ে বসে মদ খেতে খেতে আড্ডা মারে। সাধারণ বিষয় নিয়ে, স্বাভাবিক মানুষের মতো।
সেই চোখ ধাঁধানো সত্যির আঘাতেই বোধহয় নেশাটা সম্পূর্ণ ছুটে গেল অমৃতর। ইচ্ছে হল, "হ্যাঁ হ্যাঁ, এতক্ষণে আমি তোকে চিনতে পেরেছি জিতু" এই বলে লোকটার আংটি পরা আঙুলগুলো নিজের আঙুলে জড়িয়ে নেয়, "আমিই ক্লাস থ্রি থেকে সেভেন পর্যন্ত তোর পাশে বসতাম রোজ," বলে লোকটার কপালে সদ্য ফুটে ওঠা ঘামের বিন্দুগুলো মুছিয়ে দেয়। মিটিং চুলোর দোরে পাঠিয়ে ছোটবেলার বন্ধুকে নিয়ে বসে মদ খেতে খেতে আড্ডা মারে। সাধারণ বিষয় নিয়ে, স্বাভাবিক মানুষের মতো।
কিন্তু অমৃতকে সে সুযোগ
দিলেন না জিতেন্দ্র বড়ুয়া। কোনওমতে নিজেকে সামলে নিয়ে, অমৃতর দিকে
একটা কাষ্ঠহাসি ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত দরজা দিয়ে বেরিয়ে শহরের ভিড়ে মিশে গেলেন। বিখ্যাত
লেখককে অবশেষে ফাঁকা পেয়ে দুয়েকজন গুটি গুটি হাতে অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে এগিয়ে গেল।
বাঃ অনুবাদটা খাসা হয়েছে। বেশ লাগল পড়ে।
ReplyDeleteধন্যবাদ, সোমনাথ।
Deleteবাঃ!
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, সৌরাংশু।
Deleteদারুণ। :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, অরিজিত।
Deleteঅ - সা - ধা - র - ণ। দারুন লাগলো। ইদানীং তোমার কয়েকটা লেখা সের'ম দাগ কাটেনি। অনেকদিন পর এটা একেবারে জমিয়ে দিয়েছ। শুভ বিজয়া। ভালো থেকো।
ReplyDeleteধন্যবাদ, চন্দ্রচূড়। শান্তি পেলাম। তোমাকেও শুভ বিজয়ার অনেক ভালোলাগা আর ভালোবাসা জানাই।
Deletekintu 13.5% X 50L = 6.75L je ....
ReplyDeleteShubho Bijaya.
"চিন্তার ছিঁড়ে যাওয়া সুতোটা ধরার চেষ্টা করতে করতে আবার পা চালাল অমৃত। কব্রজি উল্টে সময় দেখল।" .. "কবজি" হবে তো!
ReplyDeleteশুভ বিজয়া, কৌশিক। ভুল ঠিক করে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Deleteবেচারা অমৃত। নিজের তৈরি জালে নিজেই বন্দী।
ReplyDeleteঠিক ঠিক, চুপকথা।
DeleteDaaaaaaarun...... Ek niswas a porlam...
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ভট্টা।
Deleteগত কয়েক বছরে একটি নারীর সঙ্গেও সার্থক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি সে।.........line ta darun laglo bises kore sarthok kothatar jonno....kin2 je lok sales line e kaj kore hilli dilli kore lekha tao je ekta kaj na janar moto ahamok hobe? boddo typecast laglo..ajkal sobai sobkichur ek2 ek2 jane mone hoe....Subo bijoy!! :)
ReplyDeleteআপ্নাকেও বিজয়ার অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অনিরুদ্ধ।
DeleteBesh bhalo laglo golpota pore.
ReplyDeleteধন্যবাদ, সুস্মিতা।
Deleteprothom ta porte porte bhabchilam khun ta kokhon asbe... ha ha ha.... eta besh bhalo laglo pore...
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ঊর্মি।
Deletegalpota onyorakom, darun hoechhe .
ReplyDeleteধন্যবাদ, ইচ্ছাডানা।
DeleteDaroon, daroon. :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী।
Deleteবাহ, সত্যি আশা করি তোমার অনুবাদ গল্প গুলো একদিন সংকলন হয়ে বেরোবে। সার্থক ভাবানুবাদ।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, কাকলি। তোমার মুখে ফুচকা এগরোল পড়ুক।
Deletepujor bastotar modhey ekta galpo namiye diecho..jio..full jio..darun laglo go kuntala di..just hevy
ReplyDeleteধন্যবাদ।
DeleteKhub bhalo hoechhe!
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, রুণা।
Deletedarun bhalo !! Bratati
ReplyDeleteহাহা, থ্যাংক ইউ, ব্রততী।
Delete