মটর কা পানি, ন্রুসিংহ কা খাজা



বাবামায়ের প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই। সন্তানকে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার ওয়ান শট গেমে ওঁরা আশাতীতরকম ভালো পারফর্ম করেছেন, কিন্তু এবার পুরী গিয়ে একটা করার মতো অভিযোগ জন্মাল। আমাকে এতদিন এতবার পুরী নিয়ে গিয়েও ওঁরা আমাকে মটর কা পানি একবারও খাওয়ালেন না কেন।  


মটর কা পানি ব্যাপারটা শুনতে যতটা অদ্ভুত, দেখতেও ততটাই। স্টোভের ওপর একটা বড় চ্যাৎনা পাত্রে কতগুলো ফ্যাটফেটে মটর একগলা জলের মধ্যে ভাসছে। আপনি গিয়ে দাঁড়ালে একটা মগে ওই মটর খানিকটা, মটরের জল খানিকটা, কাঁচা লংকা, তেঁতুল জল বেশ করে ঘুঁটে, ছোট স্টিলের বাটিতে ঢেলে চামচ সহযোগে আপনাকে দেওয়া হবে। সে বাটির রক্তশূন্য চেহারা আগে কখনও না দেখে থাকলে আপনার দশটাকা এইভাবে খরচ করার সিদ্ধান্তটার প্রতি সন্দেহ জাগতে বাধ্য।

যতক্ষণ না আপনি চামচে করে ওই ফ্যাকাসে তরল তুলে চুমুক দিচ্ছেন। ধোঁয়া ওঠা গরম। চোখে জল এনে দেওয়া ঝাল। আর সে টকের কথা মনে করলে এই সি আর পার্কের বাড়িতে হিটারের গায়ে সেঁটে বসে জিভে জল এসে যাচ্ছে। ওই সর্বরোগশোকহর তরল যতক্ষণ আপনার গলা দিয়ে নামবে ততক্ষণ বসের মুখ মনে পড়বে না, গ্যারান্টি।

দুঃখের বিষয়, বাটিটা শেষ হয়ে যাবে। আশার থেকে দ্রুত। তখন আরও এক বাটি নিয়ে হাফ হাফ করে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। দু’নম্বর মার্কেটে যদি মটর কা পানি বসত আমি রোজ, উইদাউট ফেল, খেয়ে বাড়ি ঢুকতাম। মটর কা পানির সঙ্গে আমি আমার ফেভারিট স্ট্রিট ফুডের তুলনা করতে চাই না, কিন্তু চেনা ঘুগনির থেকে এনি ডে বেটার। অর্চিষ্মানও এ মতে হাই ফাইভ। 

আমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিলেন আরও অনেকে। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে একজনের চেহারাটাই সবথেকে বেশি মনে আছে। হাতখানেক হাইট। অর্চিষ্মানের মুখের দিকে তাকাতে গেলে মাথা নব্বই ডিগ্রি পেছনে হেলাতে হয়। সারা দেহ দস্তানা থেকে মোজা থেকে মাংকিটুপিতে এমন আঁটোসাঁটো মোড়া যে হাতপা নাড়ানোর অবস্থাতে নেই। খালি গোল মুখ, নাক আর কাজলটানা ড্যাবা ড্যাবা চোখ দৃশ্যমান। সেই অবস্থায় তিনি অল্প অল্প হাঁ করছেন আর গার্জেন নিজের খাওয়ার ফাঁকে চামচে করে মটরের জল ওই হাঁয়ের মধ্যে পুরে দিচ্ছেন। ওই মারাত্মক ঝাল, অম্লানবদনে গিলে আবার হাঁ। মনে মনে ‘জিতে রহো বাচ্চু’ আশীর্বাদ করে পরের গন্তব্যের দিকে গেলাম। 

গন্তব্য খাজাপট্টি। মন্দিরের গায়েই গলি। পুরীর সমুদ্রের পরেই যে জিনিসটা এতদিন (এতদিন কারণ এতদিন আমি মটর কা পানি খাইনি) আমার পছন্দের ছিল তা হচ্ছে খাজা। আমি নিজে কখনও খাজা কিনেছি বলে মনে পড়ছে না। বাবামায়ের সঙ্গে যদি বা কেনার সাক্ষী থেকে থাকি সে অনেক ছোটবেলায়, কোথা থেকে কেনা হয়েছিল মনে নেই, কাকাতুয়া টাকাতুয়া হবে। এ বাদ দিলে জীবনে খাওয়া বেশির ভাগ খাজাই আমাকে জোগাড় করতে হয়নি, আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী কেউ না কেউ পুরী যেতেই থাকেন, বাড়ি বসে খাজার সাপ্লাই পেয়ে গেছি।

এবার নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে খাজা কিনে খেতে হবে। অফিসের রিসার্চে মন বসে না কিন্তু পৃথিবীর বাকি সব কিছু নিয়েই রিসার্চ করি। খাজা নিয়েও করেছি। রিসার্চে বেরিয়েছে জগন্নাথ মন্দিরের সন্নিকটস্থ খাজাপট্টির অভ্যন্তরস্থ ন্রুসিংহ সুইটসের খাজাই পুরীর অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ খাজা।

লখনৌয়ের দস্তরখোয়ানই হোক কিংবা ভোপালের গলির বিরিয়ানির দোকান, যে কোনও আইকনিক দোকানে খেতে গেলেই ডুপ্লিকেটের অসুবিধে ফেস করেছি। একই নামে ঘাড়ের কাছে নয়তো রাস্তার উল্টোদিকে আরেকটা দোকান। চোখে দেখে কোনটা আসল বোঝার উপায় নেই। পুরীর ন্রুসিংহ সুইটসও তার অন্যথা নয়। গলির মুখ থেকেই নৃসিংহ, নরসিংহ, আসল ন্রুসিংহতে খাজাপট্টি ছয়লাপ। কিন্তু অরিজিন্যাল ন্রুসিংহ সুইটস বার করতে কোনও অসুবিধে হবে না। কারণ পৃথিবীর যত খাজা খদ্দের একটাই দোকানে ভনভন করছে। 


ন্রুসিংহ সুইটসে খাজা কিনতে গেলে আপনাকে একটা নিয়ম মনে রাখতে হবে। সময় এবং ধৈর্য অনন্ত নিয়ে যেতে হবে। ওর পর কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখলে চলবে না। আমরা এ নিয়ম জানতাম না, কপালগুণে মঙ্গলাজোড়ি থেকে ফেরার পথে গেছি, খাজা কিনে হোটেলে চলে যাব। আর কোনও কমিটমেন্ট নেই। দোকানের সামনে অন্তত পাঁচ সারি লোক, মাথার ওপর নোট ধরা হাত তুলে চেঁচাচ্ছেন। কেউ লাইন ভেঙে ঢুকছেন। কেউ কেউ তৃতীয় সারি থেকে ক্রমাগত নিজের অর্ডার তোতাপাখির মতো চেঁচিয়ে চলেছেন, আশু খাজাপ্রাপ্তির কোনও সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও। এর মধ্যে কেউ কেউ পেছনে দাঁড়িয়ে হাতের তেলোখানা আমার পিঠে মেলে রেখেছেন পাছে আমি শুকনো ডাঙায় ব্যালেন্স হারিয়ে ওঁর ওপর পড়ে যাই। উনিই লাস্ট সারি, এমন নয় যে ওঁকে কেউ পেছন থেকে ঠেলছে এবং উনি টাল সামলানোর জন্য আমাকে ধরে আছেন। জাস্ট আরেকটা বডি সামনে আছে তাই উনি সেটা ছুঁয়ে আছেন।  

শারীরিক স্পর্শ বিষয়ে আমাদের দেশের লোকদের এই অসীম উদাসীনতা আমাকে বিস্মিত করে। যে কোনও লাইনে দাঁড়িয়ে দেখবেন, পেছনের জন আপনার গায়ে সেঁটে দাঁড়াবেন। তাঁকে এড়ানোর জন্য এক ইঞ্চি এগিয়ে যান, পত্রপাঠ এগিয়ে এসে আবার গায়ে সেঁটে যাবেন। খালি জায়গা নষ্ট করার বদভ্যেস ভারতীয়দের নেই। অপেক্ষা করলাম, মহিলা হয়তো খেয়াল করছেন না, খেয়াল করলে হাত সরিয়ে নেবেন। পাঁচ মিনিট পর ফিরে বলতে হল, হাতটা নামান দয়া করে। এই সব করে আমি অবশেষে ক্রমে চতুর্থ, তৃতীয় লাইনে এলাম আর বুঝলাম ভিড়টার আসল কারণ কী। খদ্দেরের ভিড় নয়। খদ্দের তো আছেই। অসংখ্য। কিন্তু তাঁরা খাজা কিনে সরে এলে এই ভিড়টা হয় না। হতে পারে না। 

দেরিটা হচ্ছে টেস্ট করতে গিয়ে। আধঘণ্টা চেঁচিয়ে গলা ভেঙে, ঠেলেঠুলে অবশেষে লাইনের সামনে এসেছেন। হতেই পারে না, টেস্ট করে খাজা খারাপ লাগলে না কিনে ফিরে যাবেন। তবু টেস্ট করার জন্য আকুতি। কেউ কেউ আবার টেস্ট করার কথা ভুলে গিয়েছিলেন। পাঁচ কেজি খাজা প্যাক করিয়ে পেছন ফিরেই মনে পড়ে গেছে, ফ্রিতে আধখানা খাজা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।  সঙ্গে সঙ্গে টার্ন অ্যারাউন্ড। ভাইয়াআআআ থোড়া টেস্ট করা দোওও। ভয়ানক ব্যস্ত কর্মচারীরা যতক্ষণ না সে আকুতিতে সাড়া দিয়ে খচাৎ করে একখানা খাজা ভেঙে ওঁর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন ততক্ষণ এ হাতে পাঁচকেজি খাজার প্যাকেট নিয়ে ও হাত বাড়িয়ে থাকবেন। চমকের আরও বাকি ছিল। কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন পেছন থেকে একটি শীর্ণ হাত এগিয়ে এসে বলল,  ভাই একটা খাজা দাও না, টেস্ট করব। আমি ভাবছি উনি কি আশা করছেন আমি সামনের ঝুড়িতে রাখা খাজা তুলে ওঁকে পাস করব? কারণ আমি সেটা করব না। তারপর বুঝলাম উনি গোটা খাজা এমনকি আধখানা খাজাও চাইছেন না, উনি চাইছেন দাঁড়িপাল্লার কোণে যে গুঁড়ো খাজা পড়ে আছে সেগুলো। সিরিয়াসলি চাইছেন। আমি একটা চাকলা মতো তুলে দিলাম।হাত আবার এগিয়ে এল, আরেকটু দাও ভাই, ওঁকেও একটু টেস্ট করাব। এবার আর চাকলাও ছিল না। বললেন, গুঁড়োই দাও, ওতেই চলবে। 

দেখেশুনে আমার সন্দেহ হচ্ছে ন্রুসিংহ সুইটসের খাজাতে, বিশেষ করে টেস্ট করা খাজাতে কোনও দৈবীশক্তি থাকলেও থাকতে পারে। আমরা টেস্ট করিনি তাই বলতে পারব না। তবে কিনে আনা খাজাগুলো, সত্যিই এতদিন যে নন-ন্রুসিংহ খাজা খেয়েছি তাদের থেকে অনেক ভালো। অল্প মিষ্টি, কুড়কুড়ে, রসালো। মচৎকার।

ওই গলিতে মালাই কা পুরি (বেসিক্যালি মোষের দুধের ঘন সর চিনি ছড়িয়ে ভাঁজ করে কলাপাতায় পরিবেশিত) নামের একটি চমৎকার জিনিস পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা যেতে যেতে সেটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। শুধু সর কাপে করে বিক্রি হচ্ছিল, কিন্তু আমরা খেলাম না। এ ছাড়াও ছেনা জিল্লি (ছানার জিলিপি তবে ছোট সাইজের আর প্যাঁচটা অনেক টাইট), চমচম, সিংহের মাথার মতো রসগোল্লা জাতীয় সুখাদ্যে ভর্তি। আমরা গলি পরিদর্শন করে এলাম কিন্তু খেলাম না কিছুই। মটর কা পানি খেয়ে মুখটা বেশ ঝালটক হয়ে ছিল সেটা মিষ্টি দিয়ে মাটি করতে মন চাইল না। তাছাড়া সেদিনই বি এন আর এ শেষ রাত, আর রেলওয়ে হোটেলের রান্না সত্যিই ভালো, হোটেলেই খাওয়া যাবে’খন।

পুরীতে আর খালি একটা সকাল বাকি। আরও কয়েকটা দ্রষ্টব্য বাকি রয়ে গিয়েছিল, দেখতে হলে হয় সেগুলো দেখতে হয় নয় সমুদ্রের সঙ্গে শেষ দেখা সারা যায়। আমরা কোনটা বাছলাম তাতে কোনও সারপ্রাইজ নেই। বি এন আর -এ কলকাতা থেকে আসা ট্রেনের সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সকাল আটটায় চেক আউট। ব্রেকফাস্ট করে ব্যাগ ক্লোক রুমে রেখে চললাম সমুদ্রের দিকে। প্রথমে ভেবেছিলাম আধঘণ্টা মতো থাকব। সেদিন পা ভেজানোর লোভটুকুও করা যাবে না, কারণ ওই জামায় আমাকে বাড়ি পর্যন্ত আসতে হবে আর অর্চিষ্মানকে উঠতে হবে ভুবনেশ্বরের গেস্টহাউসে। কাজেই আধঘণ্টার বেশি থেকে করবই বা কী। কিন্তু তারপর রবিবারের সকালের স্নানার্থীতে তট ভরে উঠল আর আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলাম। নিজেরা স্নান করার থেকে কোনও অংশে কম রোমহর্ষক নয় অন্যদের স্নান করতে দেখা। আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে এক নুলিয়া ভদ্রলোকের ছাউনির নিচে চেয়ার প্রতি বিশটাকা ভাড়া দিয়ে আরও আধঘণ্টা বসলাম। একজন ভারায় মিষ্টির ডেকচি নিয়ে যাচ্ছিলেন, শালপাতায় করে চমচম খাওয়া হল। ছবি তুলব ভেবেছিলাম কিন্তু এতই ভালো খেতে যে খাওয়ার আগে ফোন তাক করতে করতেই চমচম ফিনিশ।




*****

এবারের বেড়ানোর শেষটা একটু বেশি দুঃখের। আমার জন্য দুঃখের কারণ আমাকে একা একা বাড়ি ফিরতে হবে আর অর্চিষ্মানের জন্য দুঃখের কারণ ওকে এখন আরও দুদিন কনফারেন্সে হেসে হেসে কথা বলতে হবে। কাজেই আমাদের ইচ্ছে ছিল ভুবনেশ্বরে ফিরেও আরেকটু সময় একসঙ্গে কাটানো। মন্দিরটন্দির দেখার সময় থাকবে না, তবে অন্য একটা কাজ তো থাকেই। যে কাজটা কখনও ফুরোয় না। সকালে খেলেও দুপুরে খেতে হয়ে। দুপুরে খেলেও রাতে না খেলে চলে না।

হোয়্যার টু  ইট ইন ভুবনেশ্বর সার্চ দিতে অনেক জায়গার নাম বেরিয়েছিল তারপর যাওয়ার পথে প্লেনে অর্চিষ্মানের সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল যাঁর বাড়ি ভুবনেশ্বরে। আমরা তাঁকে যেই না  জিজ্ঞাসা করেছি, আচ্ছা কোথায় খাওয়া যায় বলুন তো, উনি বললেন, এটার উত্তর আমি জানি, আমার বাড়িতে। ভারি সজ্জন লোক, আমাদের অনেক করে বলছিলেন, কিন্তু আমরা ‘না না এবার সময় নেই পরের বার প্রমিস’ অনুনয়বিনয় করাতে বললেন, ওডিশা হোটেল। 

নামজাদা খাওয়ার জায়গার লিস্টে সবেতেই এই নামটা আগে আমরা দেখেছি। ওডিশা হোটেলের দুটো দোকান, মেনটা চন্দ্রশেখরপুরের ইনফো সিটিতে, শাখাটি শহীদ নগরে । প্রথম রাতে এসে ভুবনেশ্বরের যে হোটেলে উঠেছিলাম সেটাও শহীদ নগরেই। হোটেলে ঢুকেছিলাম রাত দশটা পাঁচে আর দোকান খোলা ছিল সাড়ে দশটা পর্যন্ত। গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছিল ছশো মিটারের রাস্তা। অন্ধকারে না দৌড়ে যতখানি জোরে হাঁটা যায় হেঁটে চললাম দোকানের দিকে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই কোনও খাইয়ে নেই। বৃহস্পতিবার আবার ওই শাখাটিতে কেবল নিরামিষ পাওয়া যায়। আমরা রুটি তরকারি, ভেজ থালি ইত্যাদি নিয়েছিলাম। আমার আবার সবেতে পাকামো। মেনুতে যে নামটা চেনা যাচ্ছে না, নিজেকে অ্যাডভেঞ্চারাস প্রমাণ করতে সেইটিই অর্ডার করা চাই। একটা পদ সে ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করেছে মনে হল আর অমনি আমি বলে বসলাম চুঁই বেসর খাব। কোঁকড়াচুলো ছেলেটি হেসে ঘাড় নেড়ে চলে গেল। আমার কেমন সন্দেহ হওয়াতে গুগল করে দেখি হে ভগবান আমি সজনে ডাঁটার ঝোল অর্ডার করেছি। হাঁকডাক করে অর্ডার বদলালাম, বললাম অ্যাডভেঞ্চার মাথায় থাকুক, আপনি রাই (সর্ষে) মাশরুমই আনুন ভাই।


অর্চিষ্মান আবার কোথায় পড়েছে যে ওডিশা হোটেলে ভুবনেশ্বরের বেস্ট মাটন ঝোল পাওয়া যায়। কাজেই আমরা ফেরার দিনও ওডিশা হোটেলেই লাঞ্চ খাব স্থির করলাম। এবার আর ব্রাঞ্চে নয়, চন্দ্রশেখরপুরের ইনফোসিটির মেন দোকানে। আমার জন্য আলুকপির ঝোল, ডাল আর অর্চিষ্মানের জন্য পাঁঠার মাংস, ভাত নেওয়া হল। আলুকপির ঝোল যত ভালো সম্ভব ওঁরা তত ভালোই রান্না করেছিলেন। পাঁঠার ঝোল সম্পর্কে অর্চিষ্মানও একই মতামত দিল। কিন্তু যে জিনিসটা খেয়ে আমরা দুজনেই উচ্ছ্বসিত হলাম সেটা হচ্ছে মিক্সড ভাজা। কুমড়োফুল ভাজা, উচ্ছে ভাজা, শাক ভাজা, বরবটি ভাজা - সে একেবারে চমৎকার ব্যাপার। এক প্লেট খেয়ে আরেক প্লেট অর্ডার করা হল। ডেজার্টে গুলাবজামুন আর ক্ষীর নিলাম। ক্ষীরখানা একেবারে ফাসক্লাস। 



ওডিশা হোটেলের সবই ভালো, খালি ধাঁই কিরি কিরিটা একটু বেশির দিকে। মানে ক্ষীর আর বিল একই সঙ্গে এসে যাচ্ছে টাইপের। অথচ এমন নয় যে আমাদের টেবিলে বসবে বলে কেউ অপেক্ষা করছেন। আসলে ব্যস্ত দোকান বলেই বোধহয় ওটা অভ্যেস হয়ে গেছে, যখন ব্যস্ততার দরকার নেই তখনও সিস্টেম বিদ্যুৎবেগে কাজ করে।

একসঙ্গে থাকাটা আরও একটুখানি টেনে লম্বা করার জন্য গুগলম্যাপে নিকটবর্তী কফির দোকান সার্চ করে বারিসতা বেরোল, সেখানে গিয়ে ক্যাপুচিনো আর হানি জিঞ্জার টি নিয়ে আধঘণ্টা বসলাম। আর সত্যিই সময় নেই। ওলা ডেকে এয়ারপোর্ট। কাঁচের দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা অর্চিষ্মানকে টাটা করে ইন্ডিগোর কাউন্টারের দিকে হাঁটা লাগালাম আর আমাদের বেড়ানো সত্যি সত্যি ফুরিয়ে গেল।



Comments

  1. Kono mane hoy!! Ki taratari furie gelo

    ReplyDelete
    Replies
    1. সব ছুটিই তাড়াতাড়ি ফুরোয়, কাজেরই খালি অন্ত নেই।

      Delete
  2. জুনিয়রের দৌলতে দুদিন ওড়িয়া alphabet শিখছিলাম,আপনার তোলা ছবিতে সাইনবোর্ডের নিচের লেখাটা থেকে আমি এই প্রথমবারের মত চারটে ওড়িয়া শব্দ পড়ে ফেললাম, ..ଭଲ ଘିଅରେ ଖଜା ମିଳେ (ভল ঘিঅরে খজা মিলে)। পুরী মঙ্গলাজোড়ির ঘোরাঘুরি পড়ে দারুণ লেগেছে।

    ময়ূরী

    ReplyDelete
    Replies
    1. বা, এটা তো ভালো বিদ্যা শেখা হয়েছে। ভেরি গুড, ময়ূরী।

      Delete
  3. chhutigulo asar agei bhalo. Elei boddo pot kore furiye jay. Abar tokhon porer chhutir jonya ha pityes kore bose thaka.

    ReplyDelete
  4. Ebaar Puri ar o ekbaar jetei hobe ... oi matar ka pani r jonne. Ami konodin shuni o ni, khai o ni. Darun jinish mone hocche.
    Tomar berano r golpo pore amar ekkhuni bari chole jete icche korche. Tobe ekhane ekta Odisha hotel kuleche recently ... mon bhore okhane mangshor jhol khacchi aajkal :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. মটর কা পানি আমার এ বারের পুরীর সেরা আবিষ্কার, শর্মিলা।

      Delete
  5. Matar ka pani ta khabar jonnoi e abar puri jete hobe dekhchi. Onekdin berate jaina apnar beranor lekha pore mon voracchi, sesh hoe gelo bole ektu kharap lagche, chuti asbe asbe e valo.

    ReplyDelete
  6. আপনার লেখার ধাক্কায় আমি এখন দীঘা চলে এসেছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো করেছেন, নালক। আরাম করে ঘুরে আসুন।

      Delete
  7. Khub bhalo lekha, Ami kokhono Puri jayini :(
    'My name is red' er review er opekkha roilo..

    ReplyDelete
    Replies
    1. অ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ!!! শিগগিরি পুরী গিয়ে পাপ লাঘব কর, রণদীপ। অপেক্ষা জানিয়ে ভালোই করলে, আমি 'রেড' দু'পাতা পড়ে রেখে দিয়েছি, দাঁড়াও শেষ করে রিভিউ দেব।

      Delete

Post a Comment