শিলং




মে মাসের গোড়ার দিকেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল যে বেড়াতে যাওয়ার সম্ভাবনা টলোমলো। বিয়ের ছুটি যৎসামান্য। তারপর দিল্লিতে ফিরে এসে দুজনের অফিসেই দক্ষযজ্ঞ শুরুর ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। তখন একটা লম্বা উইকএন্ড নিয়ে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানটা যে খাটবে না সেটাও বুঝতে পারছিলাম।

তাই বলে কি বেড়ানো বাদ দেওয়া যায়? কক্ষনও না। এ বেড়ানো তো বেড়ানো নয়, খুড়োর কলের সামনে ঝোলানো হাতেগরম ফুলকো লুচি। বিয়ের প্রস্তুতির ডামাডোলের মধ্যে রোজ সকালে উঠে আমি একবার নিজেকে মনে করাতাম, এই তো আর ক’টা দিন, তারপরেই পাহাড় পাহাড়, ছুটি ছুটি।

কাজেই আমরা ঠিক করলাম দিল্লির ভরসায় বেড়ানোটা ফেলে রাখা উচিত হবে না। বউভাতের পর ওই যে তিনদিন লৌকিকতা বাবদে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, সেটা ভ্রমণখাতে খরচ করে ফেলা হোক। ভীষণ ভয়েভয়ে প্রস্তাবটা দিতে আমাদের অবাক করে দিয়ে দুপক্ষের মা-ই বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বেড়িয়ে এস। আবার কখন যাওয়া হয় না হয়। কোথায় যাবে কিছু ঠিক করেছ?”

ঠিক মানে একটা আন্দাজ তো ছিলই। কলকাতার নাগালে পাহাড় বলতে তো দার্জিলিং আর গ্যাংটক। তিনদিনের মধ্যে ব্যাপারটা সারতে হবে বলে গ্যাংটক বাদ হয়ে গেল। পড়ে রইল দার্জিলিং।

দার্জিলিং আমার আর অর্চিষ্মান দুজনেরই খুব প্রিয় জায়গা। লক্ষবার গেছি, আরও লক্ষবার যেতে পারি। যাবও। তাছাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘায় অলকানন্দা রায়কে দেখা ইস্তক আমার ওই জ্যাকেটের গলার ওপর দিয়ে শাড়ির আঁচল দেখা যাচ্ছে, এই পোশাকে ম্যালে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সাধ। কিন্তু তবু কেমনকেমন লাগতে লাগল। কোথায় ভাবছিলাম খাজ্জিয়ারের নীরবতায় দু’দিন দম নেব, আর শেষে কি না দার্জিলিং-এর হট্টগোলে? তাও কি না সামার ভেকেশনের সিজনে?

টপ করে শিলং-এর নামটা মাথায় এসে গেল। কোথা থেকে কে জানে। শিলং আমি ছোটবেলায় বাবামায়ের সঙ্গে একবার গেছি। তখনই শহরটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। পত্রপাঠ প্লেন, হোটেল সবকিছু বুক করে ফেলা হল।

যাত্রার শুরুতেই কলকাতা-গুয়াহাটি বিমানযাত্রা। কলকাতার নতুন এয়ারপোর্টটা বেশ ঝকমকে। সিলিং-এ আবার ঐক্য বাক্য মাণিক্য প্রেম হাওয়া রোদ্দুর এইসব লেখা।


ট্রিপ অ্যাডভাইসরের কথামতো আমাদের গুয়াহাটি থেকে শিলং যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি বা বাস নিতে হত। এয়ারপোর্টে নেমেই মেঘালয় ট্যুরিজমের ছিমছাম কিয়স্ক চোখে পড়ল। পরিপাটি রিসেপশনিস্ট দুমিনিটের মধ্যে আমাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন। চালকের নাম বিজয় সিং। আদতে নেপালি কিন্তু জন্মেছেন, বড় হয়েছেন শিলং-এ।

যাত্রা শুরু হল। আমি ভারতবর্ষের সবক’টা রাজ্য দেখিনি, কিন্তু যেক’টা দেখেছি তারমধ্যে সুন্দরীতম আসাম। নদী, পাহাড়, সবুজ সব মিলিয়ে আসামের গোটা ব্যাপারটা এত মোলায়েম, এত নরম, শান্ত, ভেজাভেজা---যে ভালো না লেগে পারা যায় না। আসামের মানুষেরাও ওই প্রকৃতিটার ছাঁচে গড়া। ধীর, শান্ত, ভালোমানুষ।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের পথ ধরলেন বিজয় সিং। কী সুন্দর ইউনিভার্সিটি। রাস্তার দুপাশে সারি দেওয়া ঘন গাছের ফাঁকেফাঁকে ছড়ানো পুরোনো বিল্ডিং। টিপটিপ বৃষ্টিতে ছাতা মেলে মেয়ের দল এ বিল্ডিং থেকে ও বিল্ডিং-এ চলেছে। আমরা জানালায় নাক ঠেকিয়ে দেখতে দেখতে চললাম। ঘোর ভাঙল বিজয়বাবুর গলায়।

“ভেজ ইয়া ননভেজ?”

শুরুতে খানিকটা থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম। তারপর বুঝলাম আমাদের লাঞ্চের ব্যাপারে জানতে চাইছেন ভদ্রলোক। আমরা তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, “ননভেজ, ননভেজ।”

“ননভেজ বোলে তো? কেয়া কেয়া চলতা হ্যায়?”

আমরা বুক ফুলিয়ে বললাম, “সব চলতা হ্যায়।”

বিজয়বাবু দেখি বিশ্বাস করছেন না।  

“সব বোলে তো?”

“সব বোলে তো সব। পাঁঠা মুরগি বাছুর বরাহ সাপ ব্যাঙ বিচ্ছু সব।”

বিজয় সিংজী উৎফুল্ল হয়ে বললেন, “তব তো আপ লোকাল খানা খা পায়েঙ্গে।”

পায়েঙ্গে মানে কী? লোকাল খানাই খায়েঙ্গে। ঘণ্টাদুয়েক চলার পর একটা জায়গায় এসে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে বিজয় সিং জানালেন লাঞ্চের জায়গা এসে গেছে।

পথের পাশে একটা পাকাবাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা। দোকানের গুণগত মান যাচাইয়ের যেটা সবথেকে বড় প্রমাণ, স্থানীয় লোকের ভিড়, সেটা দেখি এ দোকানে পুরোমাত্রায় বিদ্যমান। ছেলেবুড়োমহিলাপুরুষ সকলেই কাঠের বেঞ্চিতে বসে একটা স্টিলের থালা থেকে চামচে করে কীসব খাচ্ছে। বিজয় সিংজী বুঝিয়ে দিলেন। এখানে হচ্ছে প্লেট ব্যবস্থা। একটা প্লেটে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ মাংস যা খুশি নিতে পারেন। সেটা শেষ হয়ে গেলে ওই থালাতেই সবকিছু বা আপনার যেটা চাই সেটা আবার নিতে পারেন।

আমরা ভাত তরকারি মাংস নিলাম। কাউন্টারের ওপার থেকে একজন অল্পবয়সী খাসি মহিলা হাসিমুখে প্লেট এগিয়ে দিলেন। ভাতটা স্থানীয় চালের, ওঁরা বলেন রেড রাইস। দেখতে অনেকটা সাদাভাত লালশাক দিয়ে মাখলে যেমন দেখায় সেরকম। তার পাশে রাখা আলু আর বিন্‌স্‌ ভাজা, ঝোলসহ দুপিস মাংসের টুকরো, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ ভালো খেতে এবং অসম্ভব ঝাল, কুচো টমেটো শশা ধনেপাতার স্যালাড আর তার সঙ্গে একচামচ, বিশ্বাস করবেন না, ঘন সবুজ খারকোল বাটা।

একেই বলে নিয়তি। বিয়ের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মা যে কথাটা প্রথম বলেছিলেন সেটা হচ্ছে, “ইস্‌ কত ভেবেছিলাম তোকে একটু খারকোল বাটা খাওয়াব, এত ভালোবাসিস। সময়ই হল না, ধুর।”

আমি প্লেট বেঞ্চিতে নামিয়ে রেখে মাকে ফোন করলাম। মা ভীষণ খুশি হয়ে বললেন, “খাও খাও মা, পেট ভরে ভালো করে খাও।”

কী ভালো করেই না খেলাম। ওই আলু বিন্‌স্‌ ভাজা দিয়েই আমার পুরো ভাত উঠে যেত, নেহাত মাংসের জন্য কিছুটা বাঁচিয়ে রাখতে হল। মাংসটির কথা এখনও মনে করে দিল খুশ হয়ে যাচ্ছে। ধোঁয়া ওঠা গরম, মুখে দিলে মিলিয়ে যায় নরম, আর তেমনি ঝাল। কিছু ঝাল খেতে পারে বটে ওদেশের লোক। বাঙালদের প্রায় হারিয়ে দেয় আর কি। তার ওপর দেখি চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো করে আবার বাটিভর্তি লালসবুজ লংকা বেঞ্চির ওপর রেখে গেছে। আশেপাশের সবাই উদাস মুখে ওই ঝাল মাংস মুখে পুরে দিব্যি কটাস্‌ করে লংকায় কামড় বসাচ্ছে। আমাকেও চক্ষুলজ্জার খাতিরে একটা লংকা খেতে হল। স্বীকার করছি, একফোঁটা জল এসেছিল চোখে। সেই দেখে অর্চিষ্মানের হাঁটু থাবড়ে কী হাসি। বলে কি না, “আরও যাও বীরত্ব দেখাতে।”

আরও দু’ঘণ্টা চলার পর হোটেল এসে গেল। আমাদের হোটেলটা গোটাটাই একসময় ছিল ত্রিপুরারাজার বাড়ি। রবীন্দ্রনাথ এই বাড়িতে রীতিমতো বাস করেছেন। তাঁর ব্যবহার করা পালংক এখনও হোটেলে রাখা আছে, অ্যামেরিকান সাহেমমেমেরা খচাৎ করে ডলার ফেলে সেই খাটে শোয়। বাড়ির এক অংশে এখনও রাণীমা থাকেন শুনলাম।


আমাদের পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল। হোটেল ছিল শহর থেকে একটু দূরে। বিজয় সিংজী প্রথমে সেই নিয়ে খুব আক্ষেপ করছিলেন, “কাঁহা জঙ্গল মে আ কে বৈঠ গয়ে” কিন্তু আমরা তাঁকে বোঝালাম যে জঙ্গলই আমাদের পছন্দ। সেদিন বিকেলে আমরা রুমসার্ভিসে দার্জিলিং চা আর গরমগরম ফিশ ফিংগার আনিয়ে এম টিভি দেখতে দেখতে খেলাম। ঘরের ভেতর এত ঠাণ্ডা ছিল যে ব্লোয়ার চালিয়ে রাখতে হয়েছিল।

পরদিন ভোরবেলা উঠে খুচখাচ ফোটোসেশন সেরে ব্রেকফাস্ট খেতে যাওয়া হল। অপশন ছিল নানারকম। পরাঠা থেকে পাউরুটি, সিরিয়াল থেকে সসেজফ্রাই। আমরা ডিম পাউরুটি সসেজ খেয়ে উঠতে না উঠতেই বিজয় সিং ভেঁপু বাজিয়ে এসে গেলেন। তিনজনে মিলে চেরাপুঞ্জির পথে বেরোনো গেল।



বছর দশেক আগে যখন চেরাপুঞ্জি এসেছিলাম ভীষণ মজা লেগেছিল। একটা জায়গা, সেখানে সর্বক্ষণ টিপটিপ বৃষ্টি পড়েই চলেছে। এত বৃষ্টি হলে যা হয়, লোকজন পাত্তাই দিচ্ছে না। ছাতামাতা ছাড়াই দিব্যি রাস্তাঘাটে চলাচল করছে। বৃষ্টির থেকেও যেটা বেশি মজা লেগেছিল সেটা হচ্ছে মেঘের ছড়াছড়ি। একটা দোকানে বসে আমি মা আর বাবা লাঞ্চ খাচ্ছিলাম আর দোকানের জানালা দিয়ে ধোঁয়ার মতো কীসব ঢুকে আসছিল। বাবা বলেছিলেন, ওগুলো আসলে মেঘ। বিশ্বাসই হয়নি।

কিন্তু এবার সেসব আবার দেখতে পাওয়ার আশার বদলে বুক ধুকপুক করছিল বেশি। বিয়েবাড়িতে একঘর আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল যাঁরা সদ্য চেরাপুঞ্জি ঘুরে এসেছেন। মুখ বেঁকিয়ে বলেছিলেন, মেঘ বৃষ্টি কিস্যু নেই, স্রেফ খটখটে রোদ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ আবহাওয়ার ভোল পালটে ছেড়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, “ওসব চেরাপুঞ্জি গিয়ে কী হবে, তার থেকে বরং কাছেই সাউথ ইস্ট এশিয়ার ক্লিনেস্ট ভিলেজ আছে সেটা দেখে আয়।”

আমরা অবাধ্য ছেলেমেয়ে, কথা না শুনে চেরাপুঞ্জিতে যাওয়াই ঠিক করেছিলাম। ভুল যে করিনি, আধঘণ্টাখানেক চলার পরেই সেটা বোঝা গেল। দুপাশের কুয়াশা ক্রমশ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠল, জানালার কাঁচে বিন্দুবিন্দু জলের ফোঁটা জমে উঠল, শেষে হেডলাইট জ্বালানো ছাড়া গতি রইল না। বিজয় সিংজী কেবল মাথা চাপড়াতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, “কেয়া ঘটিয়া নসিব, কুছ ভি দেখনে কো নেহি মিলেগা। আপলোগোকা পুরা পয়সা বরবাদ হো গয়া...”


আমরা এদিকে গাড়ির ভেতর বসে প্রায় লাফাতে লাগলাম। এই তো চেয়েছিলাম। মেঘালয়ে এসে যদি মেঘ না দেখি তাহলেই তো পয়সা বরবাদ। ঝলমলে রোদ্দুর চাইলে তো ফ্লোরিডা গেলেই হয়। বিজয় সিংজী ঘন কুয়াশার দিকে আঙুল দেখিয়ে দেখিয়ে বলতে লাগলেন, এখানে অমুক জলপ্রপাত আছে, ওখানে তমুক জলপ্রপাত, আর বলতে বলতে তাঁর দুঃখ উথলে উঠতে থাকল। আমাদের মন তো খারাপ হলই না, কুয়াশার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে আরও চাঙ্গা হয়ে উঠল।


অবশেষে চেরাপুঞ্জি পৌঁছলাম। মওসমাই গুহায় একটা দুঃখের ব্যাপার ঘটেছিল, সেইটা বলি। মওসমাই গুহা ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে। ট্যুরিস্টদের জন্য গুহায় সুন্দর আলোর ব্যবস্থা করা আছে। সিস্টেমটা হল একদিক থেকে ঢুকে আরেকদিক থেকে বেরোতে হবে। বিজয় সিংজী বলে দিয়েছিলেন, গুহার ভেতর জল থাকলে না এগোতে। গুহার মুখে পৌঁছে দেখি আশেপাশে যে গুটিকতক লোক আছে সবাই বাঙালি। সারা রাস্তাতেই এঁদের সঙ্গে দেখা হতে হতে এসেছে। আমরা চা খেতে নেমে দেখেছি এঁরা ফ্রুট স্যালাড খাচ্ছেন। আমরা কুয়াশার ফোটো তুলতে নেমে দেখেছি এঁরাও গাড়ি থামিয়ে ফোটো তুলছেন। গুহায় পৌঁছেও এঁদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। দুদলই নিজেদের জন্য এবং ক্যামেরার জন্য টিকিট কাটলাম।

ওঁরা গটগটিয়ে এগিয়ে গেলেন। আমাদের দুজনেরই আবার ধীরেসুস্থের বাতিক, আমরা একবোতল লিমকা কিনে আরাম করে খেতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে গুহার দিকে এগোতে গিয়ে দেখি আগের দলটি ফেরত আসছে। ব্যাপারখানা কী? আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজনের তিতিবিরক্ত গলা শুনতে পেলাম, “আরে ধুর, এটা আবার গুহা নাকি। সে গেছিলাম বোরাগুহায়, আরাকুভ্যালিতে...” বলে উপকারী ভদ্রলোক আমাদের উদ্দেশ্য করে, “যাবেন না, মেঝেতে একগাদা জল জমে আছে...” ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলেন।

আমরা দুজন খুব হাসতে হাসতে, নিচুগলায় কাওয়ার্ড ইত্যাদি বলেটলে বীরবিক্রমে গুহার দিকে এগোলাম। অর্চিষ্মান আমারও আগে গটগট করে গুহায় ঢুকে গেল। গুহায় তিনচারটে ল্যাম্প জ্বলছিল বটে, কিন্তু সূর্যের আলোর তুলনায় সে হাস্যকর। হঠাৎ আলো থেকে আঁধারে এসে পড়ায় আমার চশমার অ্যাডজাস্ট করতে একটু টাইম লাগছিল, আমি ধীরে ধীরে দেওয়াল ধরে ধরে এগোচ্ছিলাম। এমন সময় অর্চিষ্মান মুখ চুন করে ফিরে এসে বলল, “যাওয়া যাবে না মনে হয়, বুঝলে।”

আমি ভয়ানক খুশি হয়, “বোঝা গেছে নাকতলার দৌড়, এইবার দেখবে মফস্বলের কামাল” বলে এগিয়ে গেলাম। যা হওয়ার তাই হল। মায়ের ফেভারিট প্রবাদ, ‘অহংকার পতনের মূল’, অক্ষরে অক্ষরে ফলল। সত্যি দেখি গুহার মেঝেতে জল জমা আছে, তার ওপর দিয়ে কাঠের সরু সরু দুটো পাটাতন ফেলা।

আমরা গম্ভীরমুখে গুহা থেকে বেরিয়ে এলাম। আসতে আসতে দেখলাম একটি পাঞ্জাবি ফ্যামিলি গুহার দিকে এগোচ্ছে। বাবা মা আর বছর পাঁচেকের একটি ছেলে। একবার ভাবলাম বলি যে যাবেন না। কিন্তু বললাম না। বাইরে এসে বাকি লিমকাটুকু খেয়ে ব্যর্থতার জ্বালা ভুলছি, মিনিট দশ পরেই দেখি গুহার এক্সিট দিয়ে পাঞ্জাবি পরিবার অক্ষত দেহে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছে। সবার আগে লাফাতে লাফাতে বাঁদর ছেলেটা।

স্থানীয় দোকানিদের কাছ থেকে শুনে বোঝা গেল একজন বাঙালিও সেদিন সকাল থেকে ওই গুহা পেরোতে পারেনি, প্রথম যে অবাঙালি পরিবারটি এসেছে, তারাই পেরেছে।

রাগ ধরে না বলুন?

যাই হোক, ফেরার পথে বিজয় সিংজীর মন ভালো করে দিয়ে ঝলমলে রোদ্দুর উঠেছিল আর আমরাও যাবতীয় প্রপাত স্বমহিমায় দেখতে পেয়েছিলাম।


ফেরার পথে আর বলার মতো কিছু ঘটেনি। সকালের সসেজগুলো শুধু পেটের মধ্যে আবার বাছুরে পরিণত হয়ে গুঁতো মারছিল, গাড়ি দাঁড় করিয়ে পাহাড়িরাস্তার নিয়মরক্ষা বমি করে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেল। এইসব করেটরে আমরা এমন নেতিয়ে পড়লাম যে বিজয় সিংজী বললেন, “লাগতা হ্যায় আজ আপলোগ সিটি মে ঘুম নেহি পায়েঙ্গে।”

আমরা এমন ভাব দেখালাম যেন, ম্যাগো, সিটিটা আবার একটা ঘোরার জায়গা হল? ঘরে ফিরে ব্লোয়ার চালিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে সেই যে ঘুমোলাম, ঘুম ভাঙল একেবারে দরজায় রুমসার্ভিসের টোকায়।

ডিনারে আমরা আগে থেকে খাসি খাবার অর্ডার করে রেখেছিলাম। জাডো বলে একরকমের ভাত হয় আর তার সঙ্গে পর্ক কারি। আমাদের যেহেতু কোনও ধারণাই নেই, তাই কারির রকমটা হোটেলের লোককেই ঠিক করতে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকনা তুলতেই সুগন্ধে ঘর ভরে গেল। সবুজ রঙের কারি। শুনলাম ওটাকে বলে দো জেম। তিল দিয়ে রান্না করতে হয়। ভীষণ ভালো খেতে।          

পরদিনই ফেরার পালা। আগের দিনের অভিজ্ঞতা মনে থাকায় আর সসেজমুখো হলাম না। স্রেফ কর্নফ্লেক্স খেয়ে রওনা দিলাম। কোনও জায়গা থেকে ফেরার পথে কেমন একটা ক্লান্তি কাজ করে না? সেদিন রাস্তাটা ঝিমিয়েই কেটে গেল। মনে হচ্ছিল এবার বাড়ি পৌঁছলেই হয়। ঘণ্টাচারেক পর যখন রাস্তার দুপাশে “ছিটি ছেলুন চপ” জাতীয় ব্যানারের আবির্ভাব হল, আর দেখলাম আশপাশ দিয়ে যত গাড়ি ওভারটেক করছে তাদের সবার একদিকে STOP আর অন্যদিকে “রও” লেখা, তখন মন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বুঝলাম গুয়াহাটি এসে গেছে।
         

Comments

  1. শিলং! ভারতের সবচেয়ে সুন্দর দুটো হিল স্টেশনের মধ্যে একটা, অন্যটা ইয়েরকাড। এটা কিন্তু ব্যাক্তিগত মতামত, তাই পেটাবেন না।

    নেতাজি ক্ষুদিরামের দেশের লোক হয়ে কিনা গোড়ালি ডোবা জল পেরোতে পারলেন না? সত্যি! রেখেছ বাঙালি করে... ইত্যাদি ইত্যাদি।

    আর শিলং সিটি ঘুরে দেখেন নি? এই সেরেছে!

    যাই হোক, পাগলের প্রলাপে কান দিয়ে কাজ নেই। আপনাদের ভালো লেগেছে তো? সেটাই তো কাম্য ছিল।

    নিচের লিঙ্কটা আগে পড়েছেন কি?

    http://www.tagoreweb.in/Render/ShowContent.aspx?ct=Verses&bi=FF66344F-BF40-404F-D85B-407E73D94158&ti=FF66344F-BF40-45EF-E85B-407E73D94158

    আমার সবচেয়ে প্রিয় দুটো লাইন...

    দোষ গাইতে চাই যদি তো তাল করা যায় বিন্দুকে
    মোটের উপর শিলং ভালোই, যাই না বলুক নিন্দুকে

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ কী সুন্দর লিংক। থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ দেবাশিস।

      ইয়েরকাডের নাম শুনিনি। কালটিভেট করে দেখতে হচ্ছে।

      Delete
    2. Yeracaud... South Indiay... Salem name akta station theke 30 km dure... ami ei December-e jachchi hayto :)

      Delete
    3. তুমি ডিসেম্বরে ইয়েরাকুদে বেড়াতে যাচ্ছ আর এখন তোমার মন ভালো নেই? ইয়ার্কি হচ্ছে? এখন থেকেই বেড়াতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখ তাহলে আর মন খারাপ হওয়ার চান্সই পাবে না।

      Delete
    4. দেবাশিস,দারুণ লিঙ্ক। ধন্যবাদ।
      মিঠু

      Delete
    5. আমি এই লেখাটা বারবার এসে পড়ে যাচ্ছি। লেখিকা এবং বিষয়বস্তু, দুটোই আমার খুব প্রিয় কিনা! আমার খুব আপসোস হচ্ছে যে আপনারা কেবল তিন দিনের জন্য শিলং গিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে গুয়াহাটি থেকে আসতে যেতেই ৪x২=৮ ঘন্টা আপনাদের খরচ হয়ে গেল।

      ওহ, STOP কে অসমিয়াতে রব (ROBO) বলে, রও নয়। আর নাগা চাদরটা কোত্থেকে জোটালেন? আগেই ছিল, না শিলং গিয়ে কিনেছেন?

      Delete
    6. "শিলং প্রিয়"র থেকেও "লেখিকা প্রিয়" শুনে বেশি খুশি হলাম দেবাশিস। সেটাই তো, বড্ড হুড়োহুড়ি হয়ে গেল এবারটা। কিন্তু এটা না হলে আর হতই না বিশ্বাস করুন। নাই মামা কানা মামার প্রবাদটা মনে করে চলেই গেলাম আর কি। তবে শিলং-ও পালাচ্ছে না আর আমরাও থাকছি। কাজেই দুদলের আবার দেখা হবে। হবেই।

      আরে আমরা তো মিনিম্যালিস্ট প্যাকিং করতে গিয়ে কিস্যু গরম জামা নিই নি। এদিকে শিলং পিকে উঠে দেখি কনকনে হাওয়া, শিরশিরে শীত। ওইখান থেকেই চাদরটা কিনলাম। বিজয় সিংজী আবারও মাথা চাপড়ালেন, হায় হায় ট্যুরিস্ট পয়েন্ট সে কিঁউ লিয়া, কিতনা বুদ্ধু বনা দিয়া...ইত্যাদি বললেন, কিন্তু আমার চাদরটা এত পছন্দ হয়েছে যে বুদ্ধু বনাতে একটুও মাইন্ড করছি না।

      Delete
    7. মিঠু, কুন্তলা, তিন্নিঃ

      লিঙ্কটা পছন্দ হয়েছে জেনে আপনাদের একটা বাও করলাম

      Delete
    8. একগাল হাসি নিয়ে এই লেখা, চাদর গায়ে কুন্তলাদির ছবি, তার উপরের ছবি আর দেবাশিস বাবুর দেওয়া লিঙ্ক পড়ছি তো পড়েই চলেছি।
      আপনাদের দু'জনকে, আর কুন্তলাদির ছবিটার জন্য অদেখা অর্চিষ্মানবাবু(দা?)কে কি কি বলে ধন্যবাদ দেবো জানিনা... খুব খুব খুব ভাল লাগলো...
      একটা অনুরোধ, কুন্তলাদি, ওই রেলিঙের সামনে শাল জড়ানো ছবিটা এবং/ অথবা তার উপরের ছবিটার 'র' ফাইলটা আমায় মেল করবেন ('র' না থাকলে আসল জে.পি.জি হলেও চলবে, তবে র হলে ভাল)? কারণটা পরে বলছি।

      Delete
    9. ওকে সুনন্দ। একটু অপেক্ষা কর প্লিজ।

      Delete
  2. আরে শেষের কবিতার দেশে গেছিলে এর থেকে আর কি রোমান্টিক হতে পারে?আমারো শিলং ঘোরা । তবে লাবণ্যর দেখা পেলে? ছবিগুলো খুব শান্ত,নরম শিলঙের মত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. লাবণ্যের দেখা পাইনি ভালোই হয়েছে মিঠু। আমার শেষের কবিতা মোটে পছন্দ নয়। শিলং পছন্দ যদিও।

      Delete
  3. Replies
    1. শিলং সত্যি দারুণ।

      Delete
    2. sudhu শিলং noy...lekha..lekhar maje chobi..chobir modhhe শিলং..sobkichu milia ekta darun bepar..megh er dike cheye daria chobita amar khub e bhalo legeche..

      Delete
    3. ওহ, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সৌমেশ।

      Delete
  4. ki sundor tomader hotel ta... sob chobi gulo dekhe boddo berate jete ichhe korchhe, tao kono shanto hill-station e.. mon ta udash hoye gelo go..

    ReplyDelete
    Replies
    1. হোটেলটা আমারও ভীষণ ভালো লেগেছিল সোহিনী। চট করে ছুটি নিয়ে ঘুরে আসা যায় না? মেয়ের তো গরমের ছুটি চলছে বোধহয়। শিলং না হলেও কাছাকাছি কোথাও যেতে পারো। বকখালি, গাদিয়ারা।

      Delete
  5. hmm... akhon mon-ta ektu ektu bhalo lagchhe... kemon ghure elum shillong virtually - aha! Tumi abishyi amar barir pash diyei ghure ele... yep, ami from Tripura :) oi saat-ta pahari rajyer akta - namkora sundori! Khub sundor lekha, khub sundor chhobi, aro sundor dadar hatu thabre hasi-ta :)

    Kharkol ki? Kharkon pata? Kharkon hole amar markatari priyo (drool) :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. তুমি ত্রিপুরার মেয়ে? কী ভালো। আমি ভীষণ ছোটবেলায় একবার আগরতলায় গিয়েছিলাম, গিয়েই হাম হয়ে গিয়েছিল, কিচ্ছু ঘুরতে পারিনি।

      এই রে, আমি তো ওটাকে খারকোল বলেই জানি মনস্বিতা। খারকোন কথাটা শুনিনি আগে। তবে এত কাছাকাছি নাম যখন একই জিনিস হবে বোধহয়।

      Delete
  6. Ore baba onek kotha bolar ache, boddo chaap jachhe, tai se sob kotha pore bolbo. byapar hochhe, tomake ekkebare boss dyakhachilo biyer din! boubhater din o. aar holud saRi ta darun hoyeche. kintu sobcheye joruri jeta mathay elo ta holo, tomar biye jekhane holo sekhane Netaji thakten, aar honeymon er jaygay Rabindranath! tomader aar pay ke :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ একেবারে বাঙালি মনীষীদের পকেটে পুরে ঘুরছি যাকে বলে সুমনা। 'বস্‌"""' বিশেষণটায় যারপরনাই উৎফুল্ল হয়েছি। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  7. btw tomar shesher kobita bhalo lageni poRe tomake virtual hug dilam!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাই ফাইভ সুমনা।

      Delete
  8. K, tomar kolom er doga ebong abantor er pata....prothom thekei ekta tukhor combo. tobe biyer khobor ta chapanor por theke ekebare full form e eshe gechey. ebar porer step (arthat flipkart) ta neyar samay eshe gelo mone hochhe :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. বলছ শম্পা? থ্যাংক ইউ।

      Delete
  9. Amar Shillong! Chotobelae thaktam!

    ReplyDelete
  10. Replies
    1. তুমি ছোটবেলায় শিলং-এ থাকতে শকুন্তলা? কী সাংঘাতিক ব্যাপার। খোদ লীলা মজুমদারের দ্যাশের লোক দেখছি তুমি। হিংসে করছি।

      Delete
  11. ১) কীর'ম 'ঝাউবাংলোর রহস্য' মনে পড়ে গেল।
    ২) তুই কি 'ভুট জলোকিয়া' খেলি নাকি? :O
    ৩) শকুন নিজের তামাম পরিবারবর্গের থেকে লীলা মজুমদারকে বেশি ভালবাসে। তুই এইসব বললে ও আনন্দে মনুমেন্ট থেকে ঝাঁপ না দিয়ে বসে!

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে কী, শকুন্তলাকে ছোট করে শেষে কি না শকুন? কী অন্যায় কথা।

      Delete
    2. o shob polapaner kotha ami patta dei na, shokun bollo ki agun bollo ki ashe jaay bolo? Modda kotha hochhe Ar Konokhane r proti ta Shillong reference amar ghure dekha :)

      Delete
  12. Ki sundor sobuj sobuj sob chhobi! Ei May masher rukkho dillite boshe eisob dekhleo chokh juriye jay. :)

    p.s. Kharkol bata ta ki bostu?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দিল্লিতে গরমখানা কেমন পড়েছে বল দেখি বিম্ববতী?

      এইরে, বাঙালদের লক্ষকোটি বাটাবুটির মধ্যে খারকোলও একরকমের বাটা আরকি। আমার যদ্দুর মনে পড়ছে ব্যাপারটাকে ঘন সবুজ ধনেপাতার মতোই দেখতে। আর রসুন লংকা দিয়ে বাটলে খেতে অমৃতের মতো।

      Delete
    2. Se ki. Ami toh ekebare kath bangal. Ami konodin khaini toh. Dida nishchoi jane. Jigyesh kore dekhbo khon!

      Also, agey bolte bhule giyechhilam. Jodi oi til diye banano sobuj pork curry khete abar ichche hoy, tahole Hauz Khas Village er Yeti Kitchen ey giye khete paro. Sakkhat omriter moto khete. Daam-o beshi noy. :)

      Delete
    3. উফফ কী ভালো খবরটাই না দিলে বিম্ববতী। থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ। আজকেই ইয়েতি কিচেনে যাব। কে আটকায় দেখি।

      Delete
  13. তা আগে বললেই তো হোতো, আমরা কি আর বিরক্ত করতে শিলঙ যেতাম ....

    এবং খারকোল - হেইডা কি অনে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আগে থেকে তো ঠিকই ছিল না, বলব আর কী করে।

      খারকোল...কী করে বোঝাই বলুন দেখি। দাঁড়ান মাকে জিজ্ঞাসা করে বলব'খন।

      Delete
  14. এটা কি কচুপাতা টাইপের কিছু?
    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. উঁহু, কচুপাতা টাইপস নয় মিঠু। আমার ধারণা কচুর থেকে ধনেপাতার সঙ্গে খারকোলের মিল বেশি।

      Delete
  15. Darun beranor galpo pore gelam, khub bhalo laglo tomader thakar jaigati. Ar oi paha, megh, sobuj..... ki je sundor.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি শিলং গেছেন ইচ্ছাডানা? না গেলে ঘুরে আসতে পারেন। আপনার ভালো লাগবেই।

      Delete
    2. na jaoa hoini, tobe ekhon amar top list e chole galo :-) ...

      Delete
    3. Pakdondi, nischoi porechho kuntala , tumi sei jaig theke eto sundor chhobi tule ene dile bole abar kore dhonyabad die gelam :-)

      Delete
  16. aamaar'o priyo shohor Shillong, Boro Pishi'r baari. aamaara Itanagar thekey Kolkata jokhon aashtaam summer'er chhuTi'te, Guwahati'r opor diye jaawaa aashaar shomoy Shillong ekTa detour hoto. horek mojaar jaaygaa chhilo oTaa. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইস্‌ তোমাদের সবারই দেখছি শিলং নিয়ে প্রচুর ব্যক্তিগত স্মৃতি রয়েছে। শিলং আপাতত আমার "আবার যাব" লিস্টের টপে রয়েছে।

      Delete
  17. Replies
    1. বাঃ, সেটাই তো চাই।

      Delete
    2. arekta kotha..kharkol khao shuney hebbi khushi holam..amar motoni bangal tahole :P tao kharkol khawa bangal abar.

      Delete
    3. এই তো, একজন খারকোল চেনে। কী আরাম যে লাগল শুনে।

      Delete

Post a Comment