তুমি একা, আমি একাই



বাড়িঘর ঝেড়েমুছে এক বালতি পেঁয়াজি ভেজে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে প্রসেনজিৎ বেরিয়ে গেল, ফ্যান জোর আর লাইট নিভুনিভু করে আড্ডা শুরু হল। অনুপস্থিত বন্ধুদের নিয়ে তুমুল চর্চা চলছে, এমন সময় চমকে মুখ চাপা দিল একজন। ভুলেই গেছি বলতে। খবরটা পেয়েছ?

খবরটা এই নয় যে অমুকে প্রকাণ্ড মাইনের চাকরি পেয়েছে কিংবা মিটু খেয়েছে। খবরটা হচ্ছে, অমুক নিজের নতুন বাড়িতে একটি ঠাকুরঘর বানিয়েছে যেখানে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর লোকনাথবাবা রামঠাকুর সবাই আছেন।

ইলন মাস্কের প্রথম মঙ্গলাভিযানের টিমে সিলেক্টেড হওয়ার খবর পেলে কম অবাক হতাম। বন্ধুটি আমার দেখা গেরিলাতম নাস্তিক। ছিলেন, আই গেস। সেটা অবশ্য একদিক থেকে আমার অবাক হওয়াকে নাকচ করে। কারণ গুলতি থিওরি। একটা গুলতি যত জোরে এদিকে টানা হবে, টান যখন ঢিলে হবে (সাধারণতঃ হয়) ঢিল তত জোরে, তত ওদিকে গিয়ে পড়বে। ঠাকুমার কথাটা একটু ঘুরিয়ে নিলে, যে যত বড় হিঁদুর পোলা, মুসলমান হলে সে তত উদ্যমে গোয়াল কে গোয়াল সাবাড় করবে। কত কেস যে দেখলাম।

হাসাহাসি থামলে দ্বিতীয় কারণটা মাথায় এল। অবাক যে আর হলাম না তাই নয়, এক মুহূর্তে ক্লিয়ার হয়ে গেল ঘটনাটার পেছনে কী কাজ করেছে।

একাকীত্ব।

ক্লিয়ার হয়ে গেল কারণ বছরকয়েক ধরে আমিও, জীবনে প্রথম, জাগতিকতার ঊর্ধ্বে কোনও কিছুর ওপর বিশ্বাসের বিষয়টা নিয়ে ফাঁকেফোকরে নাড়াচাড়া করেছি। কারণ বছরকয়েক ধরে আমি জীবনে প্রথম এমন করে বুঝেছি একাকীত্বের মানে।

বা হয়তো বুঝেছি একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতার ফারাক। কারণ আমি নিঃসঙ্গ নই। সিনেমা দেখার লোক আমার আছে, বেড়াতে যাওয়ার লোক, ভিডিও কলে হো হো হেসে গড়িয়ে পড়ারও। যাদের আমি গত ছত্রিশ বছর ধরে চিনি, এবং এদের সঙ্গে একটা এক্সটেন্ট পর্যন্ত সুখদুঃখ ভাগও করি। 

সেটা না হলে বিপদ হত। কারণ কেবলমাত্র রচনাবই ভরানোর জন্য 'মানুষ সমাজবদ্ধ জীব' বাক্যটা পেড়ে আনা হয়নি। আমরা সিংহের মতো প্রখর নই, চিতার মতো দ্রুত নই, কুমীরের মতো নিঃশব্দ নই। একা পড়লে এদের প্রত্যেকের হাতে বেঘোরে মরা গ্যারান্টি ছিল। বাঁচা তো দূর, একা আমরা পেট ভরানোর  ক্যালরি পর্যন্ত জোগাড় করতে পারতাম না, আশ্রয় বানাতে পারতাম না, শিক্ষাদীক্ষা রুচিসংস্কৃতি তো স্বপ্ন। এটা অস্তিত্বের গোড়া থেকে, নিজের অত্যাশ্চর্য সারভাইভ্যাল ইন্সটিংক্ট দিয়ে মানুষ জেনে এসেছে। খাদ্যসংগ্রহ যেমন আমাদের বেসিক জৈবিক প্রয়োজন, দলপাকানো ততটাই বেসিক সামাজিক প্রয়োজন। একা মানুষ বোকা নয়, মৃত।

দলপাকানোর, বা ভালো করে বললে, সঙ্গ জোগাড়ের স্ট্র্যাটেজি ইন্টারনেটে একশো একটা দেওয়া আছে, অত টাইপ করার আমার টাইম নেই কাজেই তিনটে স্ট্র্যাটেজি এখানে লিখছি।

এক, চ্যাট করে সঙ্গ জোগাড় হবে না। টাইমপাস হতে পারে। টাইমপাস চাইলে প্রাণভরে টাইপ করুন, সঙ্গ প্রত্যাশা করলে এফর্ট বাড়াতে হবে। চ্যাট করে কেন সঙ্গ হবে না, কোথায় লেখা আছে হবে না এ সব ব্যাখ্যায় যাওয়ার দরকার নেই কারণ যা সত্যি তা সত্যিই। চোখের দেখা দেখতে হবে, কানের শোনা শুনতে হবে। চ্যাটের বদলে ফোনে কথা বললেই দেখবেন কত বেটার লাগছে। সামনে বসে হাহা হাসলে আরও মজা। এই যে সবাই বলে যে স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল পঁচিশ বছর পর আর মনে হল মাঝখানে  পঁচিশ মিনিটও কাটেনি, কারণ হচ্ছে একটা দীর্ঘসময় ধরে এদের পাশাপাশি বসেছি, ছুঁয়েছি, ভাগ করে টিফিন খেয়েছি, খাতা দেখে টুকেছি, রাগ করেছি, ঝগড়া করেছি। এটা হজম করতে আমাদের একবিংশ শতকের রোম্যান্টিক উন্মুক্তমনাদের যত খচখচই করুক না কেন, প্রিয় বই, প্রিয় গান, প্রিয় ইজমের থেকে কিছু কম কার্যকরী নয় পাশাপাশি বাস করার অভিজ্ঞতা। প্রক্সিমিটি ইজ মোর ইম্পরট্যান্ট দ্যান সিমিলারিটি অফ ইন্টারেস্ট।

দুই, সঙ্গ একটা দুমুখো কনসেপ্ট। সঙ্গ জোগাড় এবং রক্ষার প্রধান শর্ত হচ্ছে নিজে ভালো সঙ্গী হয়ে ওঠা। বিশ্বশুদ্ধু সবাইকে এ বোকা, ও হাঁদা, ও ডকুমেন্টারির বদলে পাঠান দেখে ম্যাগো - এই সব করে নাক সেলোটেপ দিয়ে আকাশে সেঁটে ঘুরব আর লোকে আমাকে সঙ্গ দিতে হেদিয়ে মরবে, কেন? তাকে কি পাগল কুকুরে কামড়েছে? আরেকটু নরম হয়ে, আরেকটু মানিয়ে নিয়ে, আরেকটু নিজে চুপ করে অন্যকে কথা বলতে দিলে ক্ষতি নেই কিছু। বরং কর্মফলদেবী প্রসন্ন হবেন, আমাদের কথা শোনার লোকও পাঠিয়ে দিতে পারেন, কে বলতে পারে? অনেক সময় অন্যের কথা শুনতে শুনতেও এক ধরণের আত্মীয়তা তৈরি হয়। আপনি হয়তো তাকে তেমন বন্ধু ভাবতে পারলেন না, কিন্তু সে আপনাকে বন্ধু ভাববে। বন্ধু পাওয়া না গেলেও বন্ধু হওয়ার একধরণের আরাম তো হল।

তিন নম্বর এবং আমার মতে সবথেকে এফেক্টিভ উপায় হচ্ছে  একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতার মধ্যের ফারাকটাতে মন দেওয়া। কষ্ট যখন হচ্ছে কীসের কষ্ট হচ্ছে? কথা বলার লোক না পাওয়ার? নাকি একা থাকার? কারণ দুটোর মধ্যে কেবল একটা কষ্টের। অন্যটা নয়। একা যখন থাকি তখন কি আসলে একা থাকি? থাকি এমন একজনের সঙ্গে, এই পৃথিবীতে একমাত্র যার সঙ্গে আমাকে সারাজীবন থাকতে হবে। নিজের সঙ্গে। এ সহবাসে যতই কান্না পাক, ডিভোর্স দেওয়া যাবে না। একমাত্র রাস্তা, নিজেকে ভালো লাগিয়ে নেওয়ার। ভালো ব্যাপার হচ্ছে, নিজেকে ভালো লাগানোর উপায়গুলো একা একাই প্র্যাকটিস করতে হয়। গান ভালো লাগলে কষে রেওয়াজ করে গাইয়ে হয়ে যান, গল্পের বই ভালো লাগলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাড় গুঁজে মারাত্মক ভালো গল্প লিখে ফেলুন ইত্যাদি। এই কাজগুলো একা করতে হবে, আর যত এই কাজগুলো করবেন দেখবেন একা থাকতে কান্না তো পাচ্ছেই না উল্টে মনে হচ্ছে লোকজন কখন বিদেয় হবে একটু একা থাকা যাবে।

আর যদি একবার নিজেকে নিজে ভালো লাগিয়ে ফেলা যায়, সঙ্গলাভ বাঁয়ে হাত কা খেল। এটা একটা  আগ্রহোদ্দীপক ঘটনা যে আমার সঙ্গের দরকার ফুরোলেই লোকে সঙ্গ দিতে হেদিয়ে মরে। আমি যত সঙ্গের জন্য হন্যে হই, পছন্দের সঙ্গীরা তত ল্যাজ তুলে পালায়।

আমার সন্দেহ, আমাদের অধিকাংশের সমস্যাটা নিঃসঙ্গতার নয়, একাকীত্বের। নিঃসঙ্গতায় ভোগা এ যুগে প্রায় অসম্ভব। দল আমরা যথেষ্ট পাকিয়েছি, প্রয়োজনের বেশিই পাকিয়েছি। আমরা আর সারভাইভ করার জন্য লোক খুঁজি না। মানুষ ছাড়া দিব্যি চলে যায়, চলে না ফোনের চার্জ ফুরোলে। আমাদের জীবন ঠ্যালার জন্য আস্ত আস্ত শহর নগর বাজার স্থাপিত হয়েছে, বসেছে কাজের লোক সাপ্লাই এজেন্সি। বন্ধু সাপ্লাই এজেন্সি। পাঁচহাজার পেরিয়ে গেলে বন্ধুত্বের ইট পেতে লোকে মাছি পর্যন্ত তাড়াবে, কখন ডাক পড়ে। কাজেই আমরা ঠিক সঙ্গ চাইছি না, চাইছি সংযোগ। সেটা ওই ইট পেতে বসে থাকা, বা যারা ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ বেসিসে ঢুকে পড়াদের মধ্যে ক'জন দিতে পারবে আমি জানি না। আমার লিস্ট নেই, যাঁদের আছে তাঁরা পারলেও পারতে পারেন।

তা বলে কি আমি সঙ্গ চাই না? খুবই চাই। একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতা আলাদা হলেও মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ তো নয়। ওই যে সেদিনের আড্ডার কথা বললাম, ও রকম আড্ডার পথ চেয়ে সারা সপ্তাহ  দিন গুনি। কিন্তু  কী মনে পড়ে অন্নপূর্ণার শিঙাড়ার দাম দিতে  চব্বিশ টাকার বদলে দুশো চল্লিশটাকা জিপে করে দিই, কেউ দেখছে না তবু কাকে দেখিয়ে দেওয়ার তাড়নায় শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, কোন হতাশায়, কীসের ভয়ে রোজ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনও আড্ডায় কোনওদিন কাউকে বোঝাতে পারব না। অর্চিষ্মানকে তো দূর, মাকেও পারিনি। মায়েরটাও বুঝিনি কোনওদিন।

তা বলে কি মা, অর্চিষ্মান, আমি, সবাই বন্ধুত্বের পরীক্ষায় ফেল?

বমডিলার শেষ রাতে, হোমস্টের অপরিচিত বিছানায় শুয়ে আছি। অনেক সাধনার পর ঘুম এসেছে। যথারীতি ভেঙেওছে। ফোন জ্বালিয়ে দেখছি, দুটো সাঁইত্রিশ। বাড়ি হলে উঠে গিয়ে পাশের ঘরে কানে গান গুঁজে পায়চারি করা যেত, দুশ্চিন্তা কনভার্ট হয়ে যেত দিবাস্বপ্নে। কিন্তু এখানে অচেনা ঘরে, অন্ধকারে পুরোনো চশমা পরে যত্রতত্র ঠোক্কর খেয়ে নখ ওপড়াব। তাছাড়া অর্চিষ্মান আচমকা চোখ মেলে অপরিচিত ঘরের মধ্যে ছায়াশরীর দেখে হার্টফেল করে যদি?

অর্চিষ্মানের মাঝরাতে জেগেটেগে ওঠার ব্যামো নেই, নরম নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমোচ্ছে। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম। আমারই কথা (নিঃসঙ্গতার আরেকটি দোসর, সর্বক্ষণ নিজের কথা ভাবা। কোনটা কজ আর কোনটা এফেক্ট কে জানে)। আমার কী হবে। আমার কী হল না। আমাকে কেন কেউ বুঝল না, আমাকে কেউ ভালোবাসল না। অর্চিষ্মান পাশ ফিরল। আর আমার মাথায় একটা সিনারিও এল। অবিকল এই বমডিলা, এই হোমস্টে, এই রাত, এই মোবাইলে দুটো সাঁইত্রিশ, এই আমি, এই আমার আমিসর্বস্ব ভাবনা। খালি অর্চিষ্মান নেই।

ওই ঠাণ্ডায় ঘেমে গেলাম।

কাজেই একাকীত্ব থাক না থাক সঙ্গ লাগবে। সঙ্গ দিয়ে একাকীত্ব না ঘুচলেও সঙ্গ লাগবে। যতদূর যা দেখে বুঝেছি, একাকীত্ব ঘোচানো যায় না। ঘোচাতে চাইবই বা কেন। একরাশ ঝুঁকি নিয়েই বলছি, পৃথিবীতে কোনও মহৎ কর্ম, এক রাজনীতি ছাড়া, দল বেঁধে হয়নি। সমাজসংস্কারও শুরু হয় একজন দুজনের মাথা থেকেই, তারপর দল পাকিয়ে সে সব সংস্কার ভণ্ডুলের চেষ্টা হয়। সমাজসংস্কার, গান গল্প শিল্প সিনেমা, মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার, সব একা একা করেছে লোকে। 

আড্ডা ভেঙে গেল। পেঁয়াজি ফুরিয়ে গেল। রাত এগারোটার পর সি আর পার্কের মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড, গেটে গেটে তালা। পঁহুছা হুয়া উবারভাইসাব না হলে ও ন্যাভিগেট করতে চোদ্দপুরুষের মুখ স্মৃতিতে আসবে। এঁকেবেঁকে, পাঁচশো মিটার সোজা রাস্তা, আড়াই কিলোমিটার গলিঘুঁজি পেরিয়ে বাড়ির দরজায় এসে উপস্থিত হল বন্ধুর উবার। টা টা বলে ওপরে আসতে আসতে ভাবলাম, কেমন সুন্দর সঙ্গলাভ হল। একাকীত্ব ঘুচল না। কারণ মানুষ একাকীত্ব ঘোচাতে পারে না।

মানুষের বেশি কেউ পারে কি? লোকনাথবাবা? বন্ধুর ঠাকুরঘর কল্পনা করলাম। একজন  আলটপকা লোকের একটা আলটপকা পরিস্থিতিতে বলা কথা মনে পড়ল। অস্বস্তিজনকরকম ভালো দেখতে হলিউডি হিরো ম্যাথু ম্যাকনাহে প্রাইজ নিতে মঞ্চে উঠে বলেছিলেন, হোয়েন ইউ ট্রাস্ট গড, ইউ গেট আ ফ্রেন্ড। অ্যান্ড দ্যাট ফ্রেন্ড, মাই ফ্রেন্ড, ইজ ইউ।

এই গড কে আমি জানি না। লোকনাথবাবা সম্ভবত না। নো অফেন্স মেন্ট। উনি রণে বনে যেখানেই থাকুন না কেন, আমার একাকীত্বে থাকেন না। ওঁর দোষ নেই। আমি স্বার্থপরের ঝাড়, অন্য কারও গডকে নিজের ভাবতে পারব না, যেমন পারব না নিজের গডকে অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করতে। তিনি আর আমি, মাঝে কেহ নাই, কোনও বাধা নাই ভুবনে। আমার জীবনদেবতা শুধু আমারই একাকীত্ব জুড়ে বিরাজ করবেন। মনে করাবেন, আমি একাই একশো।

সে দেবতার পদশব্দ এখনও পাইনি জীবনে। পেলে, ফিরিয়ে দেব না।

Comments

  1. একই কথা আবারও বলছি। কথাটা ক্লিশেও শোনাতে পারে। আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই আমার কাছে!

    আমি বেশ কিছুদিন ধরে এই একাকীত্ব-নিঃসঙ্গতা নিয়ে অনেক বই পড়ছি (বা পড়ার চেষ্টা করছি)। কিন্তু কোথাও এই 'পার্সোনাল টাচ'-টা পাইনি/পাচ্ছি না যেটা আপনার থেকে পেলাম। এর অবশ্য এটাও কারণ হতে পারে যে, ২০১৫ থেকে অবান্তর পড়তে পড়তে আপনি খুবই 'পরিচিত' একজন হয়ে উঠেছেন আমার কাছে। তাই আপনার বলা কথার প্রিটেক্সট, কনটেক্সট প্রায় অনেকটাই বুঝতে পারি। ফলেই খুব অনুভব করতে পারি আপনার কথা। বা এর কারণ শুধু আপনার লেখার হাতও হতে পারে।

    আমি আপনাকে এই বিষয়ে লিখতে বলেছিলাম একপ্রকার বাধ্য হয়েই। কোথাও 'শান্তি' না পেয়ে।

    আমি আপনার থেকে বয়সে অনেকটা ছোট। শ্রদ্ধা নেবেন!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে, শ্রদ্ধা একদমই করবেন না। ওপরের কথাগুলো নিজেই মেনে চলতে পারি না। কিন্তু চাই আপনি পারুন 🙂মানে যদি চান আরকী। একা লাগাটা নর্ম্যাল। আপনি ছোট বলে বলছি, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই বোধ বাড়বে। কাজেই একাকীত্ব ভালো লাগিয়ে নেওয়াই ভালো।

      Delete
  2. Amar kichu ekanto nijoshho dharona boli. Porokaal ba ishhor e bishwas ashe jiboner boro kichu faka bhoranor jonno. Ekakitto to oboshhoi ekta boro karon. Khub nikotjoner mrittu mene neyoata koto shohoj hoye jae jodi bhabi she chirotore harie jae ni, ishhorer kache ache. Amar sathe abar dekha hoar shujog ache.
    Ekakitto shomporke apnar sathe sohomot. Nijer shongo upobhog korte na parar moto ovishaap aar hoe na. Amar porichito prochondo successful manush chini, spouse aar dui bacha nie bhora shongsaar. Kintu ek dondo o nijer basae thakte chaan na. Nijer basay bose thakle naki jhogra korte ichha kore. Onar therapist er proyojon hoi majhe majhei. Ami bolbo, er mool karon apni jeta bollen setai, nijer shongo bhalo na laga.
    Charidike eto depression dekhe dekhe bhoy dhore geche. Amar 8 bochorer meye ke nie khub bhoy hoi. Ekta matro bacha amar…sobai bole o khub ekakitte bhugbe boro hoye. Ami chesta korchi oke eka somoy katanor upay shekhate. Golper boi pora, chobi aka, piano bajano….kintu o to ekhono khub choto, shob kore ami korai bole. Asha korchi boro hoye nije emon kichu ekta beche nebe jeta o shotti e upobhog kore.
    Onek kotha bole fellam. Bhalo thakben…….Moutushi

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, আমিও আগে ভাবতাম যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা ইনহেরেন্টলি আলাদা অবিশ্বাসীদের থেকে। অর্থাৎ এটা একটা পার্মানেন্ট অবস্থা, বদলায় না। এখন আর তা মনে হয় না। হয়তো বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের তেমন জোর থাকলে বদলায় না, কিন্তু সবার কি তেমন জোর থাকে?

      আপনি যাঁর কথা বললেন তাঁর অবস্থা তো সাংঘাতিক। বাড়িতে থাকলে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করলে কী অশান্তি। বাড়িতেই তো লোকে ঝগড়া না করার জন্য থাকবে। খুবই কঠিন অবস্থা।

      আমার যদিও বাচ্চা মানুষ সম্পর্কে আধখানা কথাও দাঁতের ফাঁক দিয়ে বার করা উচিত না, তবু বলি। আপনি যে আপনার মেয়েকে এই অপশনগুলো চিনিয়ে রাখছেন এটা চমৎকার ভালো বিষয়। আমার মাও আমাকে যখন রেওয়াজে বসতে বাধ্য করতেন রাগ হত, কিন্তু এখন বুঝি কী অসামান্য কবচকুণ্ডল মা দিয়ে গেছে আমাকে। বাবাও দিয়েছেন। শুধু বলব, বাচ্চারা ভীষণ দেখে শেখে, কাজেই ও যদি দেখে যে আপনি নিজের সময়, সে যত অল্পই হোক, সুন্দর করে কাটাচ্ছেন, সেটা স্মৃতিতে থেকে যাবে। এবং ও জানবে যে বড় হলেও নিজের সময় বার করে ভালো থাকা যায়। আমরা অনেকেই, বিশেষ করে মায়েদের, এই অপশনের কথাটা না জেনেই বড় হয়েছি। ব্যাপারটা ভালো হয়নি।

      Delete
    2. Ami ekhono obishhashider dole. Kintu transformation onek dekhechi. Ejonno bishhashi/obishhashi die aar judge kori na. Kintu bhondami dekhle seta nie ektu kotha na bolle (oboshhoi arale) amar ga chulkae. Amar Dida'r bishhash aamrittu thik chilo, sei amoler manushder jonno seta normal mone hoi. Amader amole permanent kono kichu akre thakata mone hoi khub kothin
      Bachhara dekhe shekhe sei bishoy e ami ekmot. Kintu ekhaneo bepar ache. kono ek karone bachhara (nijer kothai bolchi) ekta boyosh er por thik kore kichutei ma-baba'r moto hobe na. Amar ma shudhui kaj korto, bishram nite dekhini. Ekhon amar shudhu aram korte ichha kore, kichutei ma'r moto continuously kaaj korbo na thik kore felechilam. Hoito ba amar meye thik korbe "ma'r moto aram kore kore carrier er barota bajabo na. kaj kore prithibi paltie debo". Kichui bola jae na.
      Ajke office eshe khamokha kotogulo kotha likhchi apnar kaache, kono kaj na kore. Amar obostha ajke bishes subidhar na. Boss er boka khabo mone hochhe......Moutushi

      Delete
    3. মৌটুসি, আপনার দিন তো শেষ হয়ে গেছে। আশা করি ভালো কেটেছে। মাঝে মাঝে একেকদিন কাজ না করা ভালো।

      আমিও এখনও অবিশ্বাসই করছি প্রাণপণ। ভণ্ডামি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী দুই দিকেই আছে। কোনও একদিক আঁকড়ে থাকার ক্ষমতা যে ক্রমে ক্রমে কমছে এটা একটা ইন্টারেস্টিং থিওরি। ভেবে দেখতে হবে।

      Delete
  3. অনেকদিন ধরে এইটা নিয়ে ভাবছিলাম। কিরম সুন্দর মনের কথা গুলো বলে দিলে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাই ফাইভ, বিম্ববতী। গ্রেট মেন ইত্যাদি।

      Delete
  4. ekta shomoy chhilo, mone hoto nijer shongo ektu alada kore pabaar jonno craving hoto. bhabtam aha, jodi eto kichu "Daitto"r modhye ektu "space" petam...tahole koto bhalo hoto. churi chamari kore bachano shomoy ta netflix deke, ba kono bohumulyo cafe te giye kindle niye katano jeto. Majhe majhe eo bhebechhi...ah jara solo trip-e jete paare... n dimension-er simultaneous equation solve na korei jara shomoy bar kore chole pare kothao.. tara koto lucky.
    ei jonnoi bodhoy oi kotha ta achhe..."be careful what you wish for".
    nijeke kharap laagey na. Infact amaar to mone hoy ami besh bhaalo lok...shei dik theke problem nei... kintu ei je odhel space, ophuronto shomoy...ei niye korbo ki? constraint na thakle optimization problem solve hobe ki kore??
    to shey jai hok... joto din er solution-er jonno kono baba othoba maa-r proyojon na hochhe, khub ekta problem nei...

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধুস, একটা বর্ণ এডিট করতে গিয়ে গোটা কমেন্ট হাওয়া হয়ে গেল। "বুঝছ" লিখতে গিয়ে "বুজছ" লিখে ফেলেছিলাম।

      ঠিকই বলেছ, বি কেয়ারফুল হোয়াট ইউ উইশ ফর। ঢাকা না বরিশাল কোনদিকের মুখে শুনেছিলাম মনে নেই, কিন্তু "উমাম পাও না" বলা হত ঘন ঘন। আমাকে না ঠিক, ইন জেনারেল। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বোঝার কাছাকাছি অর্থ। স্পেসটেসের উমাম আমিও পেয়েছি খানিকটা রিসেন্টলি। আর না। যতদিন পারব, সংসারে লেপ্টে থাকব। প্রিভিলেজের সমস্যা হচ্ছে, জিনিসটা থাকতে থাকতে আইডেন্টিফাই করা শক্ত। একাকীত্ব জিনিসটা ক্ষেত্রবিশেষে প্রিভিলেজ। একাকীত্বের অভাবও।

      প্রবলেম নেই। হবেও না। সব ভালো হবে।

      Delete
  5. এইসময় এরকম একটা পোস্টের ভীষণ দরকার ছিল, অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মেনশন নট, আধিরা।

      Delete
  6. লেখাটার বহু বহু জায়গা এত এত সহমত আর কোট করে করে পারা যাবে না। এমনকি কমেন্টেও যে লিখেছ না, যে ওই প্রিভিলেজ ব্যপারটা যতক্ষন থাকে বোঝা যায় না, ওটার সাথে অব্দি ভয়ানক রকম সহমত হলাম।
    ইয়ে "গত ছত্রিশ বছর ধরে যাদের চিনি" পার্টটা কিরকম হল? জ্ঞান হওয়ার আগের চেনাটা কাউন্ট করছ না? কিন্তু সেই সময়ের কী কোনো ছাপই রয়ে যায় না কোথাও?
    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. থাকে বুঝি? আমার আসলে জ্ঞান হওয়ার আগে পরে মিলিয়ে চার পাঁচ জনের ছাপ আছে, এবং তারা সবাই জ্ঞান হওয়ার পরের।

      Delete
  7. আমিও এই অবিশ্বাসী থেকে বিশ্বাসী পরিণত হওয়া মানুষের মধ্যে একজন। আগে ভাবতাম নিজের জীবন নিজেই গড়ে নেবো খেটেখুটে। কারো করুণা চাওয়ার দরকার নেই, এমনকি ইশ্বর এর ও না। যখন পাএর তলা থেকে মাটি টা সরে গেল আর বেশিভাগ তথাকথিত আত্মীয়স্বজন পাস কাটিয়ে চলে গেল। তখন ভগবান এর দিকেই হাত টা বাড়িয়ে দিলাম। অন্তত মনের জোর পাওয়ার জন্য এছাড়া আর কোনো পথ পেলাম না। আর একটা জিনিষ খেয়াল করেছি সন্তান সম্পর্কে সমস্যা হলে বাবা মা দের মধ্যে এই পরিবর্তন টা বিশেষ করে আসে। আমার ক্ষেত্রেও তাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, এই সন্তানের ব্যাপারটা আমি দেখেছি। অনেক অবিশ্বাসীর অবিশ্বাসে টান পড়ে গেছে এই ভেবে যে তাঁর অবিশ্বাসের দাম সন্তানকে না চোকাতে হয়। তবে টাকাপয়সা গাড়িবাড়ির আশায় ঈশ্বরবিশ্বাস লালন করার থেকে মনের জোরের জন্য বিশ্বাসী হওয়া বেটার।

      Delete
  8. সুন্দর লিখেছেন। আপনি পড়ুয়াদের অনুরোধ রক্ষা করে বিষয় নিয়ে লেখেন দেখে ইচ্ছে হচ্ছে কোনো একটা বিষয়ের আর্জি জানিয়ে রাখি। কিন্তু আপাতত কিছুতেই উপযুক্ত বিষয় পাচ্ছি না।

    একটা জিনিস লক্ষ করলাম - ঈশ্বর বা দেবতা বিষয়ে মানুষ সাধারণত বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীর দলে। আগে অবিশ্বাসী ছিলাম, এখন বুঝি যে বিশ্বাস করার যেমন কারণ পাইনি, তেমন অবিশ্বাস করারও তো কারণ পাইনি। উপলব্ধি হচ্ছে না মানে তো এই নয় যে নেই। ফলত এখন বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস দুটোই হারিয়ে ফেলে এই বিষয়ে হয়তো একরকম নিঃসঙ্গই হয়ে গেছি। হয়তো আবার কোনোদিন বিশ্বাস বা অবিশ্বাস ফিরে পাবো, কে জানে।

    আপনি লেখা শেষ করেছেন নিজস্ব দেবতার কথা বলে। আমার আজকাল মনে হয় ধর্মটাও এরম হলে ভালো হত। ভাষা, বিজ্ঞান, গণিত, যেমন স্কুলে পড়ানো হয় আর পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেরকম ধর্ম নিয়ে একটা পেপার থাকুক। কিন্তু এখানে কোনো এক্সিস্টিং ধর্মের চর্চা হবে না - এখানে প্রত্যেক ছাত্রকে তার নিজস্ব ধর্ম গড়ে তোলার অনুশীলন করানো হবে - এরম ধর্ম যা আগে না কেউ কখনো দেখেছে, না কেউ কখনো শুনেছে, যা হবে একান্ত তার। এইরকম ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতাটা হয়তো থাকবে না, কিন্তু সহনশীলতা বাড়াবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেরেছে, কোনও টপিক না পেয়ে শেষটায় 'ভারতীয় সংবিধানে নারী ' নিয়ে কিছু লিখতে বলে ফেলবেন না যেন।

      আপনার ধর্মশিক্ষা সম্বন্ধে আইডিয়াটা ইউনিক, এবং জটিল। একটু ভেবে নিয়ে মতামত জানাব।

      Delete
    2. হাহাহা - না না - ওরম কঠিন বাস্তববাদী বিষয় বেশ ভয় পাই। বাস্তব তো রোজই আনইনভাইটেড গেস্ট হয়ে এসে উপস্থিত হয় - তাই যে সময়টায় ওটাকে দূরে রাখা সম্ভব, সেখানে যেঁচে ওটাকে নিয়ে আসার একেবারেই পক্ষপাতি নই আমি।

      Delete

Post a Comment