তাওয়াং ৬ঃ ফেরা



গাড়ি দুলতে দুলতে চলল। জানালার কাচে গাল রাখল ঘন বাষ্প, ওয়াইপারের নাগালের বাইরে উইন্ডস্ক্রিনের কিনারায় বরফ আইস হতে শুরু করল। সবাই চুপ। অর্চিষ্মান ফিসফিসিয়ে বলল, মনে হচ্ছে না যত ভালোই হোক, এবার বরফ শেষ হলে পারে?

বরফপাতের মধ্যে একটা ভুতুড়ে ব্যাপার আছে। ভূতে আমার আর অর্চিষ্মানের যেমন অবিশ্বাস তেমন ভয়। আমাদের ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ে, শনশনিয়ে কালবৈশাখী ছোটে, বা অত বাড়াবাড়ি কিছু না হলেও, স্রেফ গরম লাগলেও ফ্যান পাঁচে ঘোরে ক্যাঁচকোঁচিয়ে। মোটমাট একটা শব্দকল্পদ্রুম ঘটে। এদিকে বরফ পড়ে নিঃশব্দে, আশপাশের সমস্ত শব্দ শুষে নিয়ে। ভুতের আবির্ভাবের আদর্শ পরিবেশ। আমাদের বর্ষানিশীথে যে ভুতেরা আসেন রামনাম করলে তাঁরা পিছু হটলেও হটতে পারেন, বরফের নৈঃশব্দ্যে আসেন যাঁরা তাঁরা কীসে ভাগেন আমাদের জানা নেই। কাজেই বরফের ভুতুড়েপনায় আমাদের অস্বস্তি।

অস্বস্তি কাটল একটি অসম্ভবে। দেভের সুমোও ফাঁসল। অট্টহাস্য করে দেভ বলল, আরে বাঁদিকে গেল না তো গাড়িটা কিছুতেই। চাকা ঘুরতে আর গাড়ি দুলতে শুরু করতেই লাফিয়ে নামার উপক্রম করলাম। গাড়ির দরকার নেই, গোটা রাস্তা হেঁটে যাব। আমার নামার আগেই ঠেলাঠেলি সারা হয়ে গেল এবং আবার চলতে শুরু করলাম পরের গন্তব্যের দিকে।


এ তল্লাটে অগুন্তি লেক। সবথেকে বিখ্যাত Shonga-tser। কোয়েলা ছবিতে এই লেকের সামনে গানের সঙ্গে নেচে মাধুরী দীক্ষিত যাকে মাধুরী লেক নামে জগদ্বিখ্যাত করেছেন। উনিশশো পঞ্চাশ সালে ভূমিকম্প  ও ফ্ল্যাশ ফ্লাডে বোল্ডার ইত্যাদি পড়ে লেকের জন্ম। মৃত গাছেদের গুঁড়িরা এখনও হৃত টেরিটোরি পাহারা দিচ্ছে। লেক-লাগোয়া আর্মি ক্যাফেতে, পাহাড় বেয়ে খানিকটা নেমে আসার জন্যই হয়তো, সুপ কফির পাশাপাশি ছোলেভাটুরে, মোমো ইত্যাদিও পাওয়া যায়। কফি আর মোমো খেলাম। বরফ আরও জোরে পড়তে শুরু করল। ড্রাইভারেরা চিন্তিত মুখে ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন কারণ বরফ জমে আইস হতে শুরু করেছে। সব সওয়ারি সমান হন না। কেউ একবার ডাকলেই চলে আসেন। কেউ দু’বার। কেউ পাঁচবার। কেউ আবার যত ডাকা হবে ইচ্ছে করে তত দেরি করবেন কারণ তাঁরা পয়সা দিয়েছেন, দেরি করতে তাঁরা এন্টাইটেলড। লেক দেখা হয়ে গেছে, মোমো খাওয়া হয়ে গেছে, ড্রাইভারকে শিক্ষা দিতে বসে বসে চাটনি চাটছেন। অন্যকে শিক্ষা দিতে, উশুল করতে, নিজের হক বুঝে নিতে যে পরিমাণ এনার্জি লোকে খরচ করে, ভাবা যায় না। সর্বক্ষণ যুদ্ধং দেহি ভঙ্গিতে জীবনের মধ্য দিয়ে চলাও তো কঠিন। ড্রাইভারকে শিক্ষা দেওয়ার তালে থাকলে, মোমো, প্রকৃতি তো ছাড়ুন, স্বয়ং মাধুরী এলেও মনোযোগ দিতে পারব না।

হোটেলে ফিরে দেভের প্রাপ্য চুকিয়ে টাটা করলাম। গেটে একদল টুরিস্ট জটলা করছিলেন। পরে বুঝেছিলাম দলের বয়স্ক মহিলারা সম্ভবত বুম লা-র অগম্যতাসংক্রান্ত গুজব শুনে যাবেন কি না দোনোমোনো করছিলেন। দলের তরুণ তুর্কিরা কনভিন্স করানোর চেষ্টা করছিল যে গুজবটা বাজে এবং বুম লা যাওয়া অতি সোজা। এমন সময় সিনে আমাদের প্রবেশ। এক যুবক আমাকে দেখিয়ে বলল, এই তো, ইনি পর্যন্ত এই বয়সে ঘুরে এলেন, আর তুমি পারবে না?

যাঁকে বলা তিনি ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। অভয়দাত্রী মুখ করলাম। অন্যের অনুপ্রেরণা হওয়ার থেকে কিক কম আছে। মহিলা বললেন, বাট শি ইজ নট অ্যান ওল্ড লেডি।

ছেলেটি কনফিউজড। ইউ আর নট?

বললাম, খেলা হোক। তোমার কী ধারণা? আমার বয়স কত?

উত্তরটা জেনেই প্রশ্নটা করেছি। ভিডিও কলে প্রথমবার দেখে আমার ক্লাসমেট-কন্যাও আমাকে এই বয়সটা অ্যাসাইন করেছে।

সিক্সটি?

টুরিস্ট মহিলা প্রতিবাদ করলেন, সিক্সটি তো ম্যায় হুঁ। ইয়ে সিক্সটি নেহি হ্যায়। যেন আমি ফলস আইডি দেখিয়ে বারে ঢোকার চেষ্টা করছি।

বয়স বললাম। যতটা ভেবেছিলাম ছেলেটি তার থেকেও বড় হাঁ করল। সান্ত্বনা দিলাম। এ ভুল হামেশা হয়। যত দোষ এই চুলের রঙের। অন্যরকম কিছু আঁচ করাই অস্বাভাবিক। আর এক সপ্তাহ পর দেখা হলে ছেলেটাকে একটা মোক্ষম উদাহরণ দিতে পারতাম। তাওয়াং থেকে ফিরে প্রথম শনিবার লুচি খেতে বঙ্গভবন গেছি, গেটে সই করার পর আই কার্ড আনেনি রিয়েলাইজ করে অর্চিষ্মান তোমারটা দাও বলেছে যেই, সিকিউরিটি মহিলা বকে উঠেছেন। সাইন আপনে কিয়া, আইডি মাম্মিজী দিখায়েঙ্গে? তখন যে বেস্ট উদাহরণটা হাতে ছিল সেটাই দিলাম। বললাম, আমাকে রেগুলারলি এয়ারপোর্টে সিনিয়ার সিটিজেনের লাইনে পাঠিয়ে দেয়।

কী বলেন?

কিছুই না। ওই লাইনটা সবথেকে ছোট থাকে। চুলকালোরা যখন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখে আর ঘাম মোছে ততক্ষণে আমি ফুড কোর্টে বসে কফি খাই আর পা নাচাই।

গুড। ইউ শুড টেক অ্যাডভান্টেজ অফ ইট।

আবার কী।

বালক কয়েক সেকেন্ড ভুরু কুঁচকে আমাকে পরীক্ষা করে আশ্বাস দিল, আচ্ছা লাগতা হ্যায় লেকিন।

লজ্জার মাথা খেয়ে আর থ্যাংক ইউ বললাম না। শুধু ভাবলাম, প্রথম যখন রুপোলি ঝিকোবে এই বালকের মাথায় অথবা গালে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এরও যদি মনে হয়, বাঃ, আমি যেমন তাতেই তো  দিব্যি লাগছে আমাকে, বৃদ্ধাশ্রমের জানালার পাশে গলায় বিব বেঁধে বেবিফুড খেতে খেতে সে ভালোলাগার আঁচ একেবারে কি পাব না?

সন্ধেবেলা তাওয়াং-এর যুদ্ধ মেমোরিয়ালে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। বৃষ্টি হচ্ছে টিপটিপ। ক্লান্ত দেহ। তার ওপর মিউজিয়াম জিনিসটা আমাকে বিশেষ টানে না, যুদ্ধবিগ্রহের মিউজিয়াম তো আরওই না। নেহাত হোটেলের টিভিতে সি আই ডি পাওয়া গেল না, নিমরাজি হয়ে গেলাম।

মিউজিয়ামে উনিশশো বাষট্টির যুদ্ধের শহীদদের নামসংবলিত ফলক, আবক্ষ মূর্তি, অস্ত্রশস্ত্র, পোশাকআশাক। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-এর শুরুতে স্থানীয় সমাজ সংস্কৃতিতে সামরিক বাহিনীর সংযোগ এবং পরে বাষট্টির যুদ্ধের খুঁটিনাটি। ছাদঢাকা অ্যাম্ফিথিয়েটারে দর্শকাসন। না হলে এই বৃষ্টিতে মুশকিল হত। সাজানো বাগানের ওপর পর্দা খাটিয়ে আলোশব্দের খেলা। বাগানের মাঝখানে শ্বেত বুদ্ধমূর্তি। অর্চিষ্মান বলল, আয়রনিক্যাল না? বললাম, কে জানে। হয়তো সমস্ত যুদ্ধ আসলে শান্তিতে পৌঁছনোরই চেষ্টা কাজেই বুদ্ধের উপস্থিতি সুটেবল।

বললাম বটে, কিন্তু সত্যিটা হল আমারও এত যুদ্ধটুদ্ধ নিয়ে কথাবার্তায় অস্বস্তিই লাগে। যতই ইনএভিটেবল হোক, না হলেই যেন ভালো। তাছাড়া যুদ্ধশেষে খোলা মাঠে সারিবাঁধা জ্বলন্ত চিতার দৃশ্যে যখন চোখ জ্বলবেই, প্রেক্ষাপটে মারাত্মক আপবিট কণ্ঠে 'দেশবাসী, দুঃখ পেয়ো না আমাদের অনেক ভাগ্য যে আমরা দেশের জন্য প্রাণ দিতে পেরেছি' গেয়ে উঠলে বিরক্তই লাগে। কিছু বাজে লোকের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কতগুলো প্রাণ চলে গেল, এর মধ্যে ভাগ্যের কী আছে? এই সব দৃশ্য আমার মধ্যে শুধু কান্নারই জন্ম দেয়, গর্ব কিংবা দেশপ্রেম নয়। তাছাড়া দেশপ্রেমে দীক্ষিত হতে আমার ভীষণ ভয়, নির্ঘাত বর্ডারে গিয়ে চায়না মুর্দাবাদ চেঁচিয়ে ফেলব। বা কয়েন উল্টে নিয়ে ইন্ডিয়া জিন্দাবাদ।

দেশপ্রেম না হয় শিখিনি। তা বলে এই যে এই ক’দিনে জওয়ানদের কাছ থেকে দেখলাম, এঁরা কেমন শহীদদের ছেলেমেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্কুল কলেজ হাসপাতাল চালান, ক্রাইসিসের মুহূর্তে দেশবাসীর সাহায্যে ঝাঁপান, অনন্ত ধৈর্য নিয়ে সিভিকসেন্সহীন সিভিলিয়ানদের হ্যান্ডল করেন, ম্যাগি বানিয়ে দেন, কার ঠাণ্ডা লাগছে তাকে হিটারের কাছে পাঠান, কার হাঁটু দপদপাচ্ছে তার জন্য চেয়ার আনান, গোটাটাই চরম ইন্সপায়ারিং। তা বলে সব ফেলে দেশবাসীর সেবায় লেগে পড়ার মন্ত্রেও কি দীক্ষিত হয়েছি? কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে? হইনি। স্বার্থপরের মতো  একটা জিনিসই শিখেছি যা শুধু এবং শুধুই আমার কাজে লাগতে পারে। শিখেছি বলাটা প্রিম্যাচিওর, বলা ভালো নজর করেছি।

এবং নজর করেছি খুব অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। বুম লা-য় বা সেলা পাসে, বরফে আটকে যাওয়া রাস্তায় কিংবা পনেরো হাজার ফুটের অলটিচিউডে, যেখানে সবাই হাঁসফাঁস আর ওঁদের ভঙ্গি বাগানে বেড়ানোর, সে সব জায়গায় নজর করলে তবু একটা কথা ছিল। কিন্তু তাওয়াং-এর এই অপেক্ষাকৃত অনুকূল পরিস্থিতিতে, বরফ নেই, ঠাণ্ডা প্রচুর কিন্তু বুম লা-র তুলনায় তুশ্চু , মিউজিয়ামের শান্ত প্রেক্ষাপটে দু’জন জওয়ানের সঙ্গে দেখা হল। দেখা ঠিক বলা যায় না কারণ যা দেখাদেখি সব আমার দিক থেকেই ঘটেছে। অ্যামফিথিয়েটারে ঢোকার গেটে, সাদা পোশাকে, একজন পাশে একটা চায়ের সিলিন্ডার, অন্যজন পাশে মোমোর পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চা নিয়ে অল্প সরে দাঁড়িয়ে ওঁদের দেখলাম। নির্লজ্জের মতোই। জায়গাটা অন্ধকার ছিল, আশা করি ওঁরা আমার বেহায়াপনা টের পাননি।

বিন্দুমাত্র বাহুল্যবর্জিত ওঁদের শরীরস্বাস্থ্য দেখার মতোই। কিন্তু আমি সে সব দেখছিলাম না। আমি দেখছিলাম, ওই যে ওঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, মিনিমাম চল্লিশপঁয়তাল্লিশ মিনিট তো বটেই, আগের শো শুরু হওয়ার গোড়া থেকেই, একবারও এ পায়ের ভর ও পায়ে ট্রান্সফার করছিলেন না। দেওয়ালে হেলান দিচ্ছিলেন না। রেলিং-এর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিপাত করছিলেন না, একটুখানি তশরিফ ঠেকালে কেমন হয় ভঙ্গিতে। শো ভাঙার আগে ঘরের ভেতর থেকে জনগণমন শোনা গেল, তখন ওঁরা এক্সট্রা সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, কী করে জানতে চাইবেন না। জনগণমন শেষ হতে কেমন একটা গোড়ালি ঠুকলেন।

পঁয়তাল্লিশ মিনিট তো দূর, আমি পাঁচ মিনিটও সোজা হয়ে, না নড়ে দাঁড়াতে পারি না। ইন ফ্যাক্ট, ওঁদের সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে আমার সোজা হয়ে দাঁড়ানোরও মিল নেই। ওঁরা স্কেলের মতো দাঁড়ান, আমি খুব টান হয়ে দাঁড়ালেও আবছা এস-এর ফিলিং আসে।

এতক্ষণ দাঁড়াতে ওঁদের কি পা ব্যথা করছে না? আমার থেকে কম করছে কিন্তু করছে শিওর। কিন্তু ওঁরা নিজেদের শরীর, এবং সঙ্গে সঙ্গে মনকেও, পুশ করেছেন। যতই পা ব্যথা করুক বসে পড়ার অপশনটা নিজেদের জন্য রাখেননি। বোরের হদ্দ হয়ে গেলেও হাই তোলার কল্পনাটাও মনের কোণে ঠাঁই দেননি। লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের বিবিধ সন্দেহজনক বক্তব্যের মধ্যে একটা আমার মনে ধরেছে। যুদ্ধ অস্ত্র দিয়ে জেতা হয় না, হয় মনের জোর দিয়ে। কথাটা বাস্তবের যুদ্ধে কতটা খাটে জানি না, কিন্তু আমি যে ধরণের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাই, যাচ্ছি, যাব এ জীবনে, তাতে সম্ভবত খাটবে। কেমন হবে নিজেকে পুশ করতে পারলে? যতটুকু নিজের সীমা বলে মেনে নিয়েছি, তার বাইরে নিজেকে ঠেলতে পারলে? কমফর্ট জোনের বাইরেটা কেমন একটু হেঁটে দেখে আসতে পারলে?


বাকি পড়ে রইল তাওয়াং মনাস্টেরি। আসলে বাকি পড়ে থাকল আরও অনেক কিছু, কিন্তু কর গুনে যাদের যাদের সঙ্গে দেখা করব ভেবেছিলাম তাদের মধ্যে মনাস্টেরি শেষ বা শেষের আগের জন। তাওয়াং মনাস্টেরি ভারতের সর্ববৃহৎ। সেই যে পেমা বলেছিল, পূর্ণিমায় পনেরোদিন ব্যাপী উৎসবের শেষ, সেই পূর্ণিমা আজ। দলে দলে লোক চলেছে মনাস্টেরির দিকে, সকলেই সেজেগুজে সকলেই হাসিখুশি। সবথেকে বেশি সেজেছে পুঁচকেরা। আমি আর অর্চিষ্মান নির্লজ্জের মতো সেই হাঁটুসমান হাইটের মানুষদের দেখছিলাম। বলছিলাম, ওরে বাবা ওকে দেখো, ও মা গো ওটাকে দেখলে? বাবা মা বা অন্যান্য অভিভাবকদের হাত ধরে চলেছে ছোট ছোট মানুষ, বড় মানুষদের তিন ভাগের এক ভাগ আয়তনের  আর বড়দের পোশাকের তিন ভাগের এক ভাগ সাইজের কার্বনকপি পোশাক পরে। বড়দের পোশাকের তুলনায় জৌলুস যদিও তিরিশগুণ। হাবভাব বড়দের মতো করার চেষ্টা কিন্তু মাঝে মাঝেই প্রকৃতি আত্মপ্রকাশ করছে। কেউ গম্ভীর মুখে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা লাফ দিয়ে ফেলছে, কেউ মনাস্টেরির মস্তবড় দরজাটার গায়ের নাটবল্টুতে এমন ভাবে হাত বোলাচ্ছে যেন ওর থেকে আগ্রহোদ্দীপক জিনিস এই দেড় বছরের জীবনে আর প্রত্যক্ষ করেনি।


আগের দিন পেমার প্রশ্রয়ে সাহস বেড়ে গেছে, ভিড়গিজগিজে মঠে ঢুকে পড়লাম। ঝলমলে পোশাকের ভিড়ে আমাদের ফ্যাকাসে লিভাইস আর একদা আকাশি শার্টে বিন্দুমাত্র লজ্জা পেলাম না। মনাস্টেরির লোকজন ভারি ভদ্র, ছবি তোলায় বাধা সৃষ্টি করেন না। ভক্তদের অধিকাংশই ক্যামেরা বার করে ছবি এবং ভিডিও তুলছেন দেখে আমরাও একদম শেষ দিকে দ্রুত কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম।


বিরাট বিরাট ছবি,আর মূর্তির পাহারায়, জনারণ্য আর দেওয়ালের মধ্যের আট ইঞ্চি ফাঁক গলে প্রদক্ষিণ করতে করতে পুরীর গর্ভগৃহ প্রদক্ষিণ করার স্মৃতি মনে এল। যুগযুগান্ত আগে করেছিলাম, পাণ্ডা গোপাল কুণ্ঠিয়ার বদান্যতায়। অন্ধকার গর্ভগৃহের তিনমূর্তির পেছনের অন্ধকারতর ফালিটুকু পেরোনোর সময় যা ভয় লেগেছিল। তাওয়াং মঠ অবশ্য অন্ধকার না। তবে গা ছমছমে তো বটেই। দেওয়ালে বুদ্ধের বিরাট বিরাট অবতারেরা আঁকা হয়ে আছেন, ঘাড় তুলে তাঁদের দিকে দেখতেও বুক ঢিপঢিপ করে। পায়ের কাছে তাঁদের নামপরিচয়ওয়ালা লেবেল, গুঁজে রাখা দশ, কুড়ি, পঞ্চাশের নোটে ঢাকা পড়ে গেছে। অর্চিষ্মান মৃদুস্বরে একবার থাক না কুন্তলা বলা সত্ত্বেও নোটগুলো খুব আলতো আঙুলে সরিয়ে সরিয়ে সব ক’জন অবতারের নাম পড়ে এসেছি। না হলে সত্যিই খুব অস্বস্তি হত। মঞ্জুশ্রী লেখা লেবেলটা পড়ে অগুন্তিবারের মতো এবারও অবাক হলাম। সত্যিই তো, বুদ্ধের আরেকনাম যে মঞ্জুশ্রী, বারবার ভুলে যাই কী করে।


আর রইল নুরানাং ঝরনা। জাং শহরের কাছে বলে একে জাং ঝরনাও বলে থাকেন কেউ কেউ। নুরানাং নদী এই ঝরনা হয়ে এসে ঝাঁপিয়েছে তাওয়াং নদীতে, তারপর রওনা দিয়েছে ভুটানের দিকে। 


নামা শুরু হল। পথের দু'পাশে পূর্ণিমাতিথির পিকনিকের দল। মাঠে শতরঞ্চি পেতে রংচঙে ভিড়। ছোট্ট সাউন্ডসিস্টেম, মাইক হাতে ধরে কেউ গান শোনাচ্ছেন ঘরোয়া জলসায়। 'মনপা বয়েজ' লেখা টেম্পোর ভেতরে কুল ছেলেপুলে। মনপা হচ্ছে অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম সংখ্যাগুরু জনজাতি।

তাওয়াং টুরস-এর প্যাকেজে শেষ রাত দিরাং-এ। অগ্নিককে বলে বমডিলায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। একটা নতুন শহর দেখার আশায়। দিরাং বাজারে অগ্নিক, হিমাংশু, সাক্ষী আর দীপকের সঙ্গে শেষ দেখা হল। হ্যান্ডশেক। কিসমতে থাকলে ফির মিলেঙ্গে কহিঁ। তারপর সাক্ষী আর দীপক আমাকে বিশ্বের সেরা বিদায়কালীন গিফট দিলেন, ফুচকা খাইয়ে। ওঁরা অবশ্য ওঁদের ভাষায়, চলিয়ে গোলগপ্পে খাতে হ্যায়, বলেছিলেন কিন্তু আ রোজ বাই এনি আদার নেম ইত্যাদি। দারুণ ছিল ফুচকাটা। ছোট্ট, মুচমুচে, পুরটা আমাদের মতো আলুর নয় ঠিক, কীসের বুঝতে পারিনি, বা আলুর হলেও সঙ্গে অন্য কিছু মেশানো হয়েছে। মচৎকার খেতে। জ্ঞান হতেই ঠিক করেছিলাম পৃথিবীর যেখানে যেখানে যাব ফুচকা পাওয়া গেলে খাব। এবং র‍্যাংকিং করব। দ্বিতীয় অংশটা অবচেতনে ছিল। অবচেতনের তৃতীয় লেয়ারে ছিল সে র‍্যাংকিং-এ বাকি সমস্ত জায়গার ফুচকাকে আমার বেড়ে ওঠার বাঙালি ফুচকার (যদিও ফুচকা আমার ধারণা আদতে বিহারি) থেকে ওঁচাতর প্রমাণ করার দায়। সে সব দায় চুকেছে। নতুন শহরে ফুচকার জ্ঞাতিগুষ্টি দেখলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও থামি, খাই, কিন্তু র‍্যাংকিং-এর পরিশ্রমে যাই না। সত্যিটা মেনে নিয়েছি। পৃথিবীর সমস্ত ফুচকাই আসলে ভীষণ ভালো খেতে।

বমডিলার হোমস্টে-র ব্যবস্থা অগ্নিক করে রেখেছিল। শহর দেখার সুযোগ আমাদের হবে না। অন্য স্টপগুলোর মতোই বমডিলা ঢুকতে ঢুকতে সূর্য অনেকক্ষণ ডুবে যাবে, পরদিন গুয়াহাটির পথে রওনা দিতে হবে সূর্য ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। রাতে হোমস্টে-তে ঢুকতে ঢুকতে, ডিনার খেতে খেতে, খেয়ে উঠে ডেজার্টস্বরূপ কমলালেবু বলের মতো লুফতে লুফতে পঙ্কজ অন্তত এগারোবার বলল, আজ রাত করবেন না, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন, কাল তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে, আর উঠে, ইয়ে, আমাকে একটা ফোন করে দেবেন। আড়ালে অর্চিষ্মানকে বললাম, আমরা তো কোনওদিন কখনও লেটে বেরোইনি তাহলে ও এত কাঁটা হয়ে রয়েছে কেন? অর্চিষ্মান বলল, আমাদের নিয়ে নয়, ও কাঁটা হয়ে রয়েছে নিজেকে নিয়ে। যে ও উঠতে পারবে না। গোটা সতর্কতাবাণীর মধ্যে ওকে ফোন করার অংশটাই ইম্পরট্যান্ট। দুজনের তিনটে ফোনে তিরিশটা অ্যালার্ম সেট করে ঘুমের সাধনায় নামলাম। কোনও কাজকে সাধনা ঘোষণা করলে যা ঘটে, নিরানব্বই শতাংশ কেসে সিদ্ধিলাভ অসম্ভব হয়। এগারোটা, সাড়ে এগারোটা, বারোটা।  ঘুমের দেখা নেই। গুজগুজ ফুসফুস করে এবারের ভ্রমণ নিয়ে জাবর কাটতে লাগলাম।

অ্যালার্মেরা ডোবাল না। উঠে পড়ে পঙ্কজকে ফোন করে ডেকে দেওয়ার পনেরো মিনিটের মধ্যে পঙ্কজের ফিরতি ফোন। ও নাকি ফুল রেডি হয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে। তাড়াহুড়োর কোনও ব্যাপার না, আপলোগ আরামসে আইয়ে। গলায় অত উদারতা কেবলমাত্র জিতে গেলেই ফোটে।

আগের দিন দোল গেছে, সেদিন হোলি। পিচকিরি নিয়ে রাস্তার ধারে অপেক্ষারত ছোট ছেলেমেয়ের রঙিন দল। বাঁদুরে রংমাখা বাইকবাহিনী। ভালুকপং-এ খাওয়ার বিরতি ঘোষণা করল পঙ্কজ। ভালুকপং-এর একটুখানি অরুণাচলে,  একটুখানি আসামে। আমরা থামলাম আসামের ভালুকপং-এ। প্রথমে রাস্তার বাঁদিকের দোকানে ঢুকলাম। ভদ্রলোক বললেন, হোলির জন্য কর্মচারীরা কেউ আসেনি। সরি। নো প্রবলেম, হ্যাপি হোলি বলে রাস্তার ওপারের ডানদিকের দোকানটার দিকে চোখ পড়ল। হলুদ সালওয়ার কামিজ পরা মহিলা কড়াইয়ের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে, পাশের ঝুড়িতে লুচির ঢিপি। লুচি আলুর তরকারি চা অর্ডার করতে করতেই মহিলার বারদুয়েক ফোন এল এবং মহিলা স্পষ্ট বাংলায় কথা বললেন। কাজেই আমি বাংলায় শিফট করলাম। মহিলা খুবই মিশুকে, আমাকে তুমি তুমি করে কথা বললেন। যেমন, চায়ে চিনি নামমাত্র, খেয়ে দেখো ঠিক খেয়ে নিতে পারবে। দাম দেওয়ার সময় দাদা উপস্থিত হলেন। বিল হয়েছে দুশো, পাঁচশোর নোট বার করলাম, দাদা হাত উল্টোলেন। অর্চিষ্মান পেছন থেকে বলল, খুব উপকার হবে দাদা, যদি খুচরো করে দেন। দাদা নির্বিকার। বললাম, ঠিক আছে, জিপে করে দিচ্ছি। অ্যাপ খুলছি, দাদা বললেন, ওয়েস্ট ব্যাংগলের কোনখানে বাড়ি আপনার?

এই শক্ত প্রশ্নটার উত্তর এতদিনে মুখস্থ হয়ে গেছে। বললাম, হাওড়া মেন লাইন জানেন? উত্তরপাড়ার নাম শুনেছেন? শ্রীরামপুর চেনেন? দাদা বললেন, চিনব না ক্যান? উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগর… লাফিয়ে বললাম, রিষড়া। ওই রিষড়ায় আমার বাড়ি। চেনেন?

দাদা বললেন, কতবার গেসি। রিষড়ায় আমার কাকার বাড়ি। খাড়ান। কিউ আর কোডের দিকে ফোন তাক করছি, দাদা থামালেন। যদিও অন্যের ওয়ালেটের ভেতর তাকাতে নেই, তবু তাকালাম এবং স্পষ্ট দেখলাম দাদার আঙুল বিলি কাটছে এবং তুলে আনছে তিনটে কড়কড়ে, উজ্জ্বল বেগুনি নোট।

রিষড়া পাঁচ, নাকতলা শূন্য।

আর কিছু বলার নেই তবু গল্পটা শেষ করতে মন চাইছে না, মনে হচ্ছে বেড়ানোটা আরেকবার শেষ হয়ে যাবে। আমার মুখ চেয়েই হয়তো, দুর্দান্ত চালিয়ে পঙ্কজ যখন সময়ের প্রায় দু'ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেছে, মঙ্গলদৈ-এর মতো অসামান্য নামের জনপদ পার হয়ে গেছি, তখন রীতিমত জোরে 'ফট' শব্দ, এবং মাইক্রোসেকেন্ড পরে “টায়ার ফাটিছে!”-র উল্লসিত উচ্চারণে একটি দ্রুতগতি দ্বিচক্রযানে চড়ে দুজনের উধাও হওয়া। আঙুল দেখিয়ে আমাদের গাড়ির পেছনের ডানদিকের চাকার দিকে নির্দেশ করতে করতে। পঙ্কজ নেমে টায়ার পালটাল। আমাদের গাড়ি নেই, টায়ারও নেই, টায়ার ফাঁসার টেনশনও না। তবু আগ্রহভরে দেখলাম। কীসের পর কী। স্থির করলাম কাজটা অত কঠিনও না। যদি কখনও গাড়ি হয়, টায়ার হয় এবং সে টায়ার ফাঁসে, টেনশনের কারণ নেই।

এবার সত্যিই শেষ। সকলি ফুরায় ফুচকার প্রায়। গুয়াহাটি থেকে প্লেন ঠিক সময়ে ছেড়ে দিল্লিতে ঠিক সময়ে নামল। বেল্ট থেকে সুটকেস তুলে বেরিয়ে এলাম। প্রিপেড ট্যাক্সির ওদিকের জানালা দিয়ে অর্চিষ্মান তাকিয়ে রইল, এদিকের জানালা দিয়ে আমি । শেষ বসন্ত তখনও অকৃপণ দিল্লির হাওয়ায়, রোদে, শিমূলফুলে। চেনা সিগন্যালে ট্যাক্সি দাঁড়াল। অর্চিষ্মান মুখ ফেরাল। এই রাস্তাটা . . . বুঝলাম টেলিপ্যাথিদেবী আবার টুকি দিয়েছেন। জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে ওর বাক্যটা সম্পুর্ণ করলাম। মাসল মেমোরিতে ঢুকে গেছে না?

আজকাল ভাবনাটা আসে। যখন আর নতুন কোথাও যাওয়ার থাকবে না, নতুন দেশ দেখার, নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা ফুরোনো সেই সময়টায় কী থেকে যাবে? কাদের মুখ? কোনসব দৃশ্যরা? এক্সোটিক পর্বতচূড়ার বরফে খেলার? এক্সোটিক শহরের গা-ছমছমে রাজপথের?  কেন যেন মনে হয় সে সব দৃশ্য এবং মুখের দলে কিছু চমক আমার জন্য অপেক্ষা করবে। অন্তত আমি চাই করুক। শুধু যার থেকে যাওয়া নিয়ে একটুও চমকাব না, সে হচ্ছে এই রাস্তাটা। মাঝরাতে, ভরদুপুরে, শীত গ্রীষ্ম ও বসন্তে যা বিবিধ এক্সোটিক দৃশ্য এবং মানুষের কাছ থেকে আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছে বারবার। 

                                                                                                                                                                     (শেষ)

Comments

  1. অসামান্য একটি লেখা। বিশদ পরে লিখছি

    ReplyDelete
  2. Dharabahik uponyash-er motoi odhir agrohe porer porbo-r jonno wait korchhilam. ebong shesh hotey besh dukhho holo.
    Judhho shomporke tomaar shonge ekmot ( ete aar aschorjyo hobaar kichhu nei). Amra collossium-e boshe romancho upolobdhi korbo bole kichhu lok ke morte hobe shudhu na...more bolte hobe "we who are about to die salute thee", othoba oi.."amaar chhele meyer shoubhagyo je ami tader onko bhul-er jonno bokuni na diye desher jonno praan diyechhi".

    Shey jai hok..ei lekhatar shob theke boro impact holo je Ami Tawang Travels-er Agnik Gogoi er shonge jogajog kore Tawang jabaar plan korchhi May maashey. shob thik thaak hole ami eka ba der jon-e oi shomoy oi pothe jaabo aar tomaar list -er shonge miliye nebo

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম ঠিক বলেছ। আমরা দেশপ্রেমের আঁচ পোহাবো আর ফেসবুকে সকালবিকেল পাকিস্তানের গর্দান নেব বলে একদল লোককে শহীদ হতে হবে। যত্তসব।

      অগ্নিকদের সঙ্গে তাওয়াং যাচ্ছ? কী মজা! ভালো লাগবে দেখো। ও খুব পরিশ্রম করে তাওয়াং টুরস দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। করে ফেলেছে, ইন ফ্যাক্ট। খুব ভালো আর মনখোলা ছেলে। আমাদের কথা বলতে পারো। মানে বলার দরকার নেই, এমনি যদি ইচ্ছে হয়।

      Delete
  3. ভারী ভালো হয়েছে। বেশ কদিন তোমার সাথে সাথে ঘোরা হচ্ছিল, নতুন মানুষ আর জায়গা দেখা...
    পরের বেড়ানোটা জলদি হোক, আরেকটা মচৎকার লেখা পড়ি।
    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
  4. bhishon bhishon bhishon bhalo laglo. khub moja holo tomar travelogue poRe. asha kori amrao jeye uthbo kichu bochorer moddhe.

    Army-r byapare ekmot. Juddhor byapareo ekmot. aamra goto bochor jaisalmer theke longewala border post aar war memorial/museum dekhte gechilam.. okahne ekta short film o dekhano holo.. Army-r lokjoner discipline aar otithiporayonota dekhar moto.. Holir din gechilam.. chardike sob bondho.. morubhumir sanghatik gorom.. 2to nagad pouchechilam.. oi gorom, oi bheeR - kintu ki odbhut bhalo kore sobaike manage korchilen.. ice cream stall er bhodrolok er moto dhoirjo pele aami borte jetam.. oi gorome 100ta purush, mohila, baccha tarosware ice cream order korche, phelche, eta noy, ota korche.. uni je ki kore matha thanda rakhlen.. anyway, oi tollate tanot mata temple ta khub bhalo.. odbhut bhalo legechilo.. soldier der atmiyo porijonra okhane tader mongol kamona kore jaan.. the atmosphere was loaded (amar language khubi knacha)..

    bhalo thakben.. aaro onek beRano hok.

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। আরে ল্যাংগোয়েজ তো দিব্যি। লোডেড অত্যন্ত এক্সপ্রেসিভ শব্দ, যা বোঝাতে চেয়েছেন সেটা অন্য শব্দ দিয়ে বোঝানো মুশকিল হত। আমরা অনেকদিন ধরে জয়সলমীর যাব যাব করছি, আমি কলেজে পড়তে বাবামায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম। আরেকবার যাওয়ার ইচ্ছে দুজনে। কিন্তু যখনই মনে পড়ে বা সুযোগ হয়, ভয়ানক গরম থাকে। দেখা যাক কবে যাওয়া হয়। গেলে সীমান্তে ঘুরে আসব ঠিক। এই জায়গাটার কথা জানা ছিল না। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  5. অসাধারণ লেখা, মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়লাম| সব চেনা জায়গার নামগুলো পড়তে অন্যরকম ফিলিং হচ্ছিলো| মঙ্গলদৈ- কতদিন বাদে শুনলাম|
    ফেরার পথে তাওয়াংয়ের ঠিক পরে পরেই যেসব জায়গায় থামলে সেগুলো কি যাবার পথেও পড়েছিলো ?
    মনাস্টেরীর ছবিগুলো দুর্দান্ত হয়েছে|
    আচ্ছা, অর্চিষ্মানের বুঝি চুল পাকেনি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখেছেন, আবার ৈ-কারে গোলমাল করেছি। মঙ্গলদৈ ঠিক করে দিচ্ছি।

      তাওয়াং-এর ঠিক পর বলতে তো মনাস্টেরি আর জলপ্রপাত। মনাস্টেরি তো শহরেই, জলপ্রপাতটা বোধহয় একটু ঘুরপথে গিয়ে দেখতে হয়, কাজেই যাওয়ার পথে পড়েনি। ওগুলো সাইটসিয়িং-এর অংশ।

      অর্চিষ্মানের চুল পাকেনি তো বটেই, ও আমার থেকে বছর পাঁচেক পেছনেও দৌড়চ্ছে, কাজেই ঠিক বয়সেও যদি চুল পাকে, এখনও পাকতে দেরি আছে। তার ওপর নাকতলার মায়ের ধাত যদি পেয়ে থাকে তাহলে দিল্লি বহুত দূর, কারণ মায়ের চুল এখনও বিশেষ পাকেনি। এইসব হলে আমাকে এখনও বহুদিন মাম্মিজীর রোলে অভিনয় করতে হবে। জঘন্য।

      Delete
    2. আহা চুল পাকার আবার ঠিক বয়েস আছে নাকি| সেই ভাবতে গেলে তোমারই কি পাকার বয়েস হয়েছে! তবে তুমি যে রং করোনা তার জন্য হ্যাটস অফ| আমি রং করি, অনেক আগেই আমার চুল পেকেছে|

      Delete
    3. আরে ধুর, রং করা না করায় কিছু এসে যায় না, অমিতা। সবই মায়া। এগুলোকে, মিথ্যে বলব না, একসময় গুরুত্ব দিতাম। মাথার মধ্যে অনেক ঠিকভুল, ভালোমন্দ, উচিতঅনুচিত ছিল, যেগুলো হাস্যকর। এখন করি না, স্রেফ করি না বলেই। ও দিয়ে কিছু প্রমাণট্রমাণ হয় না, করারও নেই।

      Delete
  6. Tomader shonge amio jeno beriye elaam Kuntala. Thank you eto shundor shob jayegar hodish deyar jonne.
    Accha ... tomader Majuli trip e o kono ek mohila bolechilen na "Apni keno jaben, beta ke bolo .... " eyi dhoroner kichu :-)
    Amio notun jayega r phuchka khai. Recently Greece giyechilam ... okhane kintu paini :D :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. গ্রিস তো খুব সুন্দর জায়গা, শর্মিলা। ভালো ঘুরেছ নিশ্চয়? লিখবে ব্লগে? না লিখলেও ক্ষতি নেই। এমনি বললাম। তবে গ্রিসে ফুচকা নেই শুনে দমে যাচ্ছি।

      মাজুলিতে এ রকম একটা কিছু ঘটেছিল, না? ভুলেও গেছি। সাংলা গেছিলাম যখন তখন যে ঘটেছিল মনে আছে। মন্দির থেকে নামছি, একটা লোক দাঁত বার করে, ইয়ে তো আপকি মাম্মি লাগতি হ্যায়। যত্তসব। তবে ওই লোকটা বাজে ছিল। স্রেফ আঘাত দিতেই বলেছে। ভেবেছে ঝুরঝুর করে গুঁড়িয়ে যাব বোধহয়, রাস্তার র‍্যান্ডম লোকের আমার বয়স আর চেহারা নিয়ে মন্তব্য শুনে। পোলাপান।

      তাওয়াং যাও প্লিজ। গ্রিস রোমের থেকে কিছু কম না। এটা কিন্তু একদম রসিকতা করে বললাম।

      Delete
    2. Ish ...erokom lok o hoye?! Icche kore keu omon bole? Kintu tumi je eta gaye makhona etei oder kumotlob here jaye.
      Amar Greece er proti ekta taan chilo duto karone ... ek hocche history ar ek oi Corfu dekhar icche chilo Gerald Durrel er lekhar bhokto bole.
      Amader desh onek beshi sundor ... Tawang nischoi jabo ... tomar posts pore khub icche korche jete.

      Delete
    3. আরে কর্ফু-র ওই বইটা আমারও ফেভারিট। এত ফেভারিট যে ভুলে দু'কপি কিনে ফেলেছি, দুটোই তাকে সাজানো আছে। যাও যাও তাওয়াং যাও। তাওয়াং যেতে যদি কাউকে ইনস্পায়ার করতে পারি তাহলে লেখা সার্থক হবে, সত্যি।

      Delete
  7. Onekdin agei porechi, bola hoyni, dharabahik upnonyas er moto interest niye porlam ... Jaygar songe manusher kotha miliye tomar ei travelogue gulo ekdom jomat ... Onek din por peye bhalo laglo porte..

    ReplyDelete

Post a Comment