আরও একবার



গত আটচল্লিশ ঘণ্টা সব রাস্তা খাদের ধারে এসে থেমেছিল। নিজের রাস্তা ফুরোনোটায় অত কান্না পায় না, যত টুঁটি টিপে ধরে অন্যদের রাস্তা অনন্ত সম্ভাবনা, প্রাপ্তি ও অর্জনের দিকে ধাবিত হওয়াটা। ষষ্ঠ রিপুটা এমনি এমনি ষষ্ঠ নয়, যথার্থেই ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

এই সব সময়ে উইল পাওয়ারটাওয়ার পাগলের প্রলাপ। ডোপামিনের যে কটা বাহ্যিক অনুঘটক আছে তার মধ্যে, হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত একমত, সকালের সূর্য অন্যতম। নিজেকে ঠেলে মেলা গ্রাউন্ডে পাঠিয়েছিলাম ভোরে। ফিরে এসে বুঝলাম ঠেলা যথেষ্ট হয়নি। অর্চিষ্মানের ঘুম ঠেলে ভাঙাতে হবে।

অটো চড়ে গেলাম কফি খেতে। ডিফেন্স কলোনির কফি শপ। আগে যাইনি কখনও। দোকানে ঢুকে মাছির মতো ধাবিত হলাম আলোকিত জানালার দিকে। দুটো চেয়ারের যেটাতে রোদ পড়েছে, অর্চিষ্মানকে সুযোগ না দিয়েই দখল করলাম। করার পর একবার বলেছিলাম অবশ্য, আমার চেয়ারটা বেটার, তুমি আসবে এদিকে? ওর 'না' বলার পূর্ণ নিশ্চয়তা নিয়েই।

ক্রমাগত ঝড়বৃষ্টি হয়ে দিল্লির বসন্তটা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দোসরা এপ্রিল বেলা সাড়ে এগারোটার সময় ফ্যান চালাতে হচ্ছে না, স্মৃতিতে প্রথম। সেই বসন্তের আঁচ পোয়াতে পোয়াতে কফি খেলাম। ঘণ্টাখানেক ধরে সূর্যালোকের সেঁকে টের পেলাম ডোপামিনের রুদ্ধ স্রোতের মুখ খুলছে। অর্চিষ্মান বলল, কোথাকার কোন কফির দোকানটা ওর এত ভালো লেগেছিল, এখনও মনে আছে। বা এত বাজে যে ভুলতে পারেনি। আমিও বললাম। এই সব ভালোলাগা, খারাপ লাগার পেছনের আসল কারণগুলো খুঁজে বার করার চেষ্টা হল। মনে পড়ল দুজনের একসঙ্গে যাওয়া কফির দোকানের কথাও।

বাড়ি ফিরেছি। এই আশা নিয়ে ল্যাপটপ খুলেছি যে হয়তো এখনও সব ফুরোয়নি। আরেকবার চেষ্টা করে দেখার কারণ হয়তো এখনও রয়ে গেছে।

Comments

  1. ভালো থেকো কুন্তলা, তুমি আর অর্চিষ্মান দুজনেই

    ReplyDelete
  2. একি! খুব ভালো থাকুন আপনারা।

    ReplyDelete
  3. Ek dine duto post? Bah.

    ReplyDelete
  4. Ekkebare sothik kotha. Mon othoba shoreer kharap laglei ami prothome onekta jol kheye niyi, tarpor (nehat pagol pagol gorom na hole) baire ektu surjer aloy hete ashi. Beshirbhaag somoy shoreer/mon dui-i onekta sere jay. Tahole ei je ami, ar ei je amar balcony te ek rotti money plant -- amader tofat ta kothay bolo. Jol ar surjo pelei dujonei jokhon tortoriye barchhi. :/

    Bhalo theko Kuntala di. Surjer alor jano kokhono obhab na hoy.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার জন্যও একই চাওয়া রইল, বিম্ববতী।

      এটা একটা জীবনভর মনে রাখার মতো কথা বললে। বেসিক্যালি, ঝামেলা হলে গাছেদের রোদজল পথ্যে শিফট করতে হবে।

      Delete
  5. অবশ্যই ফুরোয়নি। আর সত্যিই রোদের বিকল্প নেই। ইনফ্যাক্ট গাছপালাদেরও বিকল্প নেই। অক্সিজেনের জন্য বলছিনা, মন কুঁকড়ে মনে হচ্ছে আর কিচ্ছু পাওয়ার নেই, করার নেই, যাওয়ার নেই কিংবা অকারণ অস্থিরতা গ্রাস করছে এমন সময় মেঘ বৃষ্টি অবস্থাতেও স্রেফ গাছ, পাহাড়ে যাও (শহরে না) মন আস্তে আস্তে সমে ফেরে এ আমি বহুবার দেখেছি।।
    ভালো থেকো।
    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত। যাদের এটা হয়, তারা 'ঠিক হয়ে যাবে' বললে আশ্বাস লাগে। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  6. সত্যি রোদের কোনো বিকল্প নেই। আমি বেংগালুরুতে থাকি আর থেকে থেকেই রোদের অভাবে প্রায় পাগল পাগল হয়ে যাই - ডোপামিনের অভাব যে কি প্রভাব ফেলে সে যে নিজে না ভুক্তভুগী, সে বুঝবেনা। আপনার মত আমিও সকালের রোদ সেঁকাতে বিশ্বাসী।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম শর্বরী। সূর্য যে কী পরিমাণ হেল্প করে মানসিকভাবে, ভাবা যায় না।

      Delete

Post a Comment