The Silkworm
‘Why?’ asked Strike
heavily.
‘Why what?’ said Robin,
looking up at him.
‘Why do people do this?’
‘Blog, you mean? I don’t
know . . . didn’t someone once say the unexamined life isn’t worth living?’
‘Yeah, Plato,’ said Strike,
‘but this isn’t examining a life, it’s exhibiting it.’
*****
বইয়ের নাম এক্কেবারে ভুলে গেছি, লেখকের নাম হয় রুথ
রেন্ডেল নয় পি. ডি. জেমস। দুজনেই ইংরেজ, দুজনেই দুঁদে গোয়েন্দা গল্প লিখিয়ে।
একজনের সৃষ্টি চিফ ইনস্পেকটর ও পরবর্তীকালে কম্যান্ডার অফ মেট্রোপলিট্যান পুলিশ
সার্ভিস অ্যাডাম ডালগ্রিশ, ফুলটাইম পুলিশ ও হাফটাইম কবি; অন্যজনের সৃষ্টি চিফ
ইন্সপেক্টর রেজিন্যাল্ড ওয়েক্সফোর্ড, কবিতার সঙ্গে সম্পর্ক অজ্ঞাত।
এই দু’জনের একজনের কোনও একটা বইয়ের মুখবন্ধ
লিখেছিলেন আরেকজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক। আমি কোনওদিন তাঁর নাম শুনিনি, তবে আমি আর ক’জন
ইংরিজি সাহিত্যিকের নামই বা শুনেছি। লেখার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয়েছিল নিশ্চয় একজন
কেউকেটা হবেন। তাছাড়া রুথ রেন্ডেল বা পি. ডি. জেমস দুজনেই পরিচিত নাম, ধরে নেওয়াই
যায় তাঁদের বইয়ের মুখবন্ধ যাকেতাকে দিয়ে লেখাননি প্রকাশক।
মুখবন্ধের গোড়াতেই লেখক একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে
দিয়েছিলেন, গোয়েন্দাগল্পে তাঁর রুচি নেই। কোনওদিন ছিল না, এখনও নেই, ভবিষ্যতে যে
জন্মাবে এমন সম্ভাবনাও নেই। অন্তত তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। তবে তিনি এ গল্পের
মুখবন্ধ লিখতে রাজি হলেন কেন? হলেন, কারণ এই গল্পটি ‘অন্যরকম’। ফার্স্ট হাফে চুরি,
কিডন্যাপ, খুন কিছু একটা দুর্ঘটনার অবতারণা আর সেকেন্ড হাফে সে দুষ্কর্মের রহস্যভেদ
করতে গোয়েন্দার দাপাদাপি – গড়পড়তা গোয়েন্দা গল্পের এই ন’টা-ছ’টা ছকে এই গল্প বাঁধা
হয়নি। এ গল্পে ইমোশন আছে। রিয়েল ইমোশন। অসুখী দাম্পত্য, অবৈধ প্রেম, অবসাদ – আরও
যা যা দুর্দশা থাকলে রক্তমাংসের হয়ে ওঠে একটি মানুষের চরিত্র, সার্থক হয় তার বেঁচে
থাকা, সে সবই প্রভূত পরিমাণে আছে এই গল্পে। দুয়েকটা যা খুনজখম আছে এদিক সেদিক,
সেগুলো নেহাত লেখকের সৃষ্টিসুখের খেয়াল চরিতার্থ করার জন্যই আছে, না থাকলেও রচনার
বিন্দুমাত্র রসভঙ্গ হত না। সাধ করে গোয়েন্দাগল্পের দাঁড়কাকের সাজ সেজে থাকলেও এ
গল্প মোটেই Genre
fiction নয়, রীতিমত পেডিগ্রিওয়ালা Literary fiction.
আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন, হিংসা, দ্বেষ, লোভ এমনকি কখনও
কখনও বিশুদ্ধ প্রেমজাত মার্ডার যদি সাহিত্য না হয় তাহলে হরমোনের প্রকোপে পড়ে ভুল
লোককে বিয়ে করে ফেলে জীবনভরের ডিপ্রেশন সাহিত্য হবে কেন, কিন্তু আপনার এ সব
অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কেউ বসে নেই।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, আপনি যদি উপরোক্ত মুখবন্ধ লেখকের
মতো হন তাহলে গোয়েন্দাগল্প হওয়া সত্ত্বেও ‘দ্য সিল্কওয়ার্ম’ পড়ে দেখতে পারেন।
জটিলতার সাধ আপনার মিটে উপচে পড়বে। গল্পের গোয়েন্দা/ নায়ক করমোরান স্ট্রাইকের কথাই
ধরা যাক। আফগানিস্থানের যুদ্ধে এক পায়ের অর্ধেক খরচ হয়ে গেছে, অগুন্তি মিথ্যে আর অপরিসীম
মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর ষোলো বছরের পুরোনো গার্লফ্রেন্ডের হাত থেকে
রেহাই মিলেছে (গার্লফ্রেন্ডটি অবশ্য অত সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী নয়, সে বিয়ের মণ্ডপে
বসেও এস এম এস পাঠিয়ে খোঁচাচ্ছে), বিখ্যাত রকস্টার বাবার বাবাত্ব প্রমাণ করার জন্য
ডি. এন. এ. পরীক্ষার দরকার পড়েছে। করমোরানের সহকারী রবিন। রবিন সহানুভূতিসম্পন্ন,
সপ্রতিভ ও সুন্দরী। রবিনের বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে হাইস্কুল সুইটহার্ট ম্যাথিউর
সঙ্গে। ম্যাথিউ রূপবান, পয়সাওয়ালা এবং সন্দেহবাতিক।
এইবার মুখবন্ধওয়ালা বলবেন, ‘আহা, চরিত্রে খানিক জটিলতা ঠেসে
দিলেই যে গোয়েন্দাগল্পকে সাহিত্যক্লাবের মেম্বারশিপ দেওয়া হবে সে কথা তো আমি
বলিনি। তার সঙ্গে সঙ্গে রচনাখানিকে সমকালীন সমাজের মুখের সামনে আয়নার মতোও তো তুলে
ধরতে হবে, নাকি? চরিত্রদের পাশাপাশি পাঠকের চোখের সামনে রক্তমাংসের করে তুলতে হবে
তাদের পারিপার্শ্বিক, তবে না?’ তাহলে আমি বলব, সে অগ্নিপরীক্ষাতেও সসম্মানে পাশ
করেছেন রবার্ট গ্যালব্রেথ (এই নিয়মরক্ষা রসিকতাটা আমরা একবারই করব, এরপর থেকে
লেখককে জে. কে. রাউলিং বলে ডাকা হবে।) দু’হাজার দশের নভেম্বর মাসের লন্ডন ছত্রে
ছত্রে পাতায় পাতায় ছবির মতো ফুটিয়ে তুলেছেন। শীত পড়ছে লন্ডনে, কুয়াশার মধ্যে
টিমটিম করছে অফিসার্স পাবের নিওন আলো সাইনবোর্ড, ঘন হয়ে বরফ জমছে কবলস্টোনের খাঁজে
– ক্রমশ সংকটময় হয়ে উঠছে করমোরান স্ট্রাইকের প্রসথেটিক পায়ের পক্ষে। সব প্রতিকূলতা
উপেক্ষা করে এভিডেনসের সন্ধানে অলিগলিতে ঘুরছে করমোরান আর রবিন। ব্যাকইয়ার্ডওয়ালা অট্টালিকা
থেকে বারোয়ারি ব্যালকনিওয়ালা সারি সারি ইঁটের দাঁত বার করা দেড়কামরার ফ্ল্যাট। যার সিঁড়ির সামনে জটলা করে বসে আছে
সতেরো আঠেরো উনিশ বছরের ছেলের দল। চেনা অচেনা মেয়ে দেখলে দু’আঙুল মুখে পুরে সিটি দিয়ে
উঠছে।
কিন্তু আপনি যদি আমার মতো হন – আচ্ছা আমার মতো হতে
হবে না, স্টিফেন কিং-এর মতোই না হয় হলেন – তবে আপনার মন ভরতে আরও কিছু লাগবে। আপনি
বলবেন, ‘It’s also
important to remember it’s not about the setting, anyway – it’s about the
story, and it’s always about the story.’ শুনে কেউ কেউ বলবেন,
‘এত সোজা কথাটা এত ঘটা করে বলার কী আছে? গল্প শুনতে বসেছি, বিষয়টা গল্প হবে নয় তো
কি গল্পের গরু হবে?’ তবে আমি বলব কথাটা অত সোজাও না। সেদিন আড্ডায় ঋতুপর্ণর
মূল্যায়ন চলছিল, এমন সময় একজন বললেন, ‘ছেলেটার মধ্যে পার্টস ছিল, গ্রেট না হলেও
গুড এনাফ তো হতেই পারত, স্রেফ গল্প বলার লোভ সামলাতে না পেরে ভোগে চলে গেল।’ আমি কিছু বললাম না, খালি মনে মনে
ঋতুপর্ণকে আরও একবার থ্যাংক ইউ দিলাম। ভাগ্যিস উনি গুড এনাফ হবার লোভটা সামলেছেন,
আমরা তাই চাট্টি ভালো গল্প শুনে বেঁচেছি।
জে. কে. রাউলিং-এর অতি বড় নিন্দুকও মেনে নেবে,
গল্পটা মহিলা সত্যি বলতে পারেন। সে গল্পের মালমশলা নিয়ে লোকের আপত্তি থাকতে পারে,
চলনবলন নিয়ে থাকা মুশকিল। দ্য সিল্কওয়ার্ম-ও তার ব্যতিক্রম নয়। গল্পটা ছোট করে
আপনাদের বলছি।
নিশ্চিন্তে পড়ুন, কথা দিচ্ছি ফস্ করে দুষ্কৃতীর নাম ফাঁস করে দেব না। অন গড ফাদার
মাদার।
করমোরান স্ট্রাইকের পশার তখন জমে উঠেছে, দলে দলে ভদ্রমহিলারা
স্বামী পাহারা দেওয়ার জন্য লাইন লাগাচ্ছেন, পালে পালে ভদ্রমহোদয়রা রিসেপশনিস্ট
(এবং শয্যাসঙ্গী) পাহারা দেওয়ার জন্য লাইন লাগাচ্ছেন, ঝাঁকে ঝাঁকে পেজ থ্রি-র
রিপোর্টাররা সমাজের উঁচুতলার নর্দমা ঘেঁটে কী রুইকাতলা উঠল সে জানার জন্য লাইন লাগাচ্ছেন,
এমন সময় একদিন সকালে ক্ষ্যাপাটেমতো এক ভদ্রমহিলা এসে বললেন, তাঁর লেখক স্বামী রাগ
করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন, করমোরানকে তাঁকে খুঁজে আনতে হবে।
করমোরানের তখন হাতে অলরেডি অনেক কেস, ওয়েটিং লিস্টে
আরও কে জানে কত। ভদ্রমহিলার রকমসকম সাজপোশাক দেখে পারিশ্রমিক সম্পর্কেও আশান্বিত
হওয়ার কোনও কারণ ছিল না, তবু করমোরান ‘না’ বলতে পারল না। ওর ষষ্ঠেন্দ্রিয় বলল, ব্যাপারটা
আরেকটু তলিয়ে দেখ হে। অন্যরকম কিছু থাকলেও থাকতে পারে।
ষষ্ঠেন্দ্রিয় অতি গোলমেলে জিনিস। সবারই থাকে, কিন্তু
সবার সমান কাজে দেয় না। অটোর মিটার চলবে কি না, বৃষ্টি নামবে কি না – এই সব জরুরি
ব্যাপারেও আমার ষষ্ঠেন্দ্রিয় কক্ষনও কাজ করে না, কিন্তু করমোরান স্ট্রাইক কি না
গল্পের হিরো, তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় একেবারে ম্যাজিকের মতো কাজ করল।
নিরুদ্দিষ্ট লেখক আওয়েন কোয়াইনের খোঁজে বেরিয়ে
স্ট্রাইক আকণ্ঠ ডুবে গেল লন্ডনের প্রকাশনা জগতের গোলকধাঁধায়। মেগালোম্যানিয়াক
লেখক, পাঁড় মাতাল সম্পাদক, বদের বাসা প্রকাশক। এই জগতটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন
বলেই হয়তো (কিংবা ভালো লেখক বলেও হতে পারে, কে জানে) বইয়ের শুকনো পাতায় এমন জ্বলজ্বলে
করে তাকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন রাউলিং। ঈর্ষা, বিদ্বেষ, প্রতিশোধস্পৃহা, কৃতঘ্নতায় কিলবিল করা একটা জগৎ। আর এই বিতিকিচ্ছিরি জগৎটার মধ্যে ঘোরাফেরা করতে করতেই করমোরান স্ট্রাইকের হাতে এসে
পড়ল আওয়েন কোয়াইনের শেষতম উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি, Bombyx Mori.
Bombyx Mori হল রেশমপোকার ল্যাটিন নাম। নিজের
চারপাশে অচ্ছেদ্য আবরণ তৈরি করে তার ভেতর রূপান্তরের পথ চেয়ে বসে থাকে কীট, কিন্তু
তার অপেক্ষা শেষ হওয়ার আগেই মানুষ তাকে তুলে এনে ফেলে ফুটন্ত জলের কড়াইয়ে। যাতে প্রজাপতি
হয়ে উড়ে যাওয়ার সময় সেই মহার্ঘ আবরণ ছিঁড়েখুঁড়ে নষ্ট না করে ফেলতে পারে সে, তার আগেই
জ্যান্ত সেদ্ধ হয়ে মরে যায়। তখন সন্তর্পনে তার গা থেকে খুলে নেওয়া হয় সিল্কের
অক্ষত বুনোট।
সাধারণ মানুষ থেকে সার্থক লেখক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটাও একই।
কোটিকে গুটিক প্রজাপতি হতে পারে, বাকিদের ফুটন্ত জলে জ্যান্ত ডুবিয়ে মারে চারপাশের
পৃথিবী, সমাজ, সংসার, পরিস্থিতি, সময়। কোয়াইনের মতো লেখক হলে অবশ্য অন্য কারও
দরকার পড়ে না। লেখকের নিজের ফাঁপা দম্ভ আর অভিমানই যথেষ্ট।
কোয়াইনের খোঁজে লন্ডন চষে ফেলতে ফেলতে অবশেষে এক
হাড়কাঁপানো রাতে, লন্ডনের অভিজাত পাড়ার এক খাঁখাঁ অট্টালিকার প্রকাণ্ড হলের
সিলিংছোঁয়া উত্তরের জানালার নিচে, বলিপ্রদত্ত পশুর মতো পড়ে থাকা প্রাণহীন কোয়াইনকে
আবিষ্কার করল করমোরান স্ট্রাইক।
গল্প হল, এবার গল্পের ছিদ্রান্বেষণের পালা। জে. কে. রাউলিং-এর প্রতি আমার পক্ষপাতিত্বের কথা আমি মেনে নিচ্ছি। নিয়েও, সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে বলছি, দ্য সিল্কওয়ার্ম-এ আমি কোনও খুঁত খুঁজে পাইনি। করমোরান স্ট্রাইকের প্রথম বিখ্যাত কেস দ্য কুকু’স কলিং-এ যে খামতির বিষয়ে অনেকেই নালিশ করেছিলেন – রহস্য সমাধানের ফাইন্যাল ক্লু স্ট্রাইকের মাথায় কখন এল কীভাবে এল সে বিষয়ে পাঠক জানতে পারল না, হঠাৎ একদিন যেন স্বপ্নাদেশ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে খুনিকে জাপটে ধরল – এই গল্পে সে খুঁত সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠেছেন রাউলিং। প্রতিটি ক্লু হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে পাঠককে জানিয়েছেন, সে ক্লু থেকে কী কী সিদ্ধান্তে পৌছনো যায় সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন, এবং এত কিছু করার পরেও যথোচিত সাসপেন্স বাঁচিয়ে রেখে চারশো পঞ্চান্ন পাতার বইয়ের চারশো ঊনচল্লিশ নম্বর পাতায় গিয়ে খুনির মুখ থেকে মুখোশ টেনে খুলেছেন।
আমি কানায় কানায় খুশি।
অথচ দ্য সিলকওয়ার্মে আমার অখুশি হওয়ার মতো ব্যাপার
ভূরিভূরি ছিল। গল্পের শুরুতে যে মুখবন্ধলিখিয়ে কথা বললাম, ঠিক যে যে সাহিত্যসুলভ শর্ত
পূরণ না করতে পারলে উনি গোয়েন্দাগল্প চিমটে দিয়ে ছুঁতে পারেন না, এককালে (এখনও
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই) সেই সেই শর্ত পূরণ করার চেষ্টা দেখলে আমার সে গোয়েন্দাগল্পের
প্রতি করুণা হয়। সোশ্যাল সায়েন্সকে সায়েন্সের ভেক ধরতে দেখলে যেমন হয়, দেশী জিভে
কষ্টার্জিত অ্যাকসেন্টেড বুলি শুনলে যেমন হয়, শহরে পৌঁছে হাঁটাচলাকথাবলা থেকে মফস্বলের
শেষ চিহ্নটুকু ঘষে তুলে ফেলার প্রাণান্তকর পরিশ্রম টের পেলে যেমন হয়। মিস মার্পলের
পুরুষসংসর্গহীন জীবনে যৌনহতাশার প্রমাণ
থাকলে তাঁকে আমার আরও একটু বেশি রক্তমাংসের লাগত, ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিন্নভিন্ন
লাভলাইফের আঁচ থাকলে আমার এরক্যুল পোয়্যারোকে ভালোবাসতে একটু সুবিধে হত, বা কোনান
ডয়েল যদি সাহস করে হোমস-ওয়াটসনের ব্রোম্যানসের ছবিটা আরেকটু খোলসা করে আঁকতেন
তাহলে হাউন্ড অফ বাস্কারভিলসের বজ্জাত কুকুরটাকে দেখে ঘাড়ের চুল আরও বেশি
খাড়াখাড়া হত – এ আফসোস আমার কক্ষনও হয়নি,
এ জন্মে হওয়ার চান্সও নেই। সোজাসাপটা খুনখারাপির গল্পে এই সব ‘ক্যারেকটার বিল্ডিং’
আমার স্রেফ বিঘ্ন ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
রাউলিং-এর গল্পে এ সব বিঘ্ন যথেষ্ট আছে। গোটা গোটা চরিত্র
সৃষ্টি করেছেন রাউলিং - ম্যাথিউ, শার্লট, স্ট্রাইকের সহোদর কিন্তু ভিন্ন
ঔরসজাত দিদি, বন্ধুর পরনিন্দাপ্রিয় গসিপখেকো বউ। আওয়েন কোয়াইনের মৃত্যুরহস্য
সমাধানের সঙ্গে এদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, এরা গল্পে শুধু আছে স্ট্রাইক আর
রবিনকে পাঠকের কাছে আরও একটু স্পষ্ট করে তোলার জন্য।
তবু আমার এদের বিঘ্ন মনে হয়নি। বিয়ের পিঁড়ি থেকে
পাঠানো শার্লটের এস এম এস এবং করমোরান স্ট্রাইকের তৎপরবর্তী নার্ভাস ব্রেকডাউনের জায়গাটা ফসফস করে পাতা উল্টে পেরিয়ে আবার যেখানে সাসপেক্ট, মোটিভ, অপরচুনিটি নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে গিয়ে থামিনি, বরং
শার্লটকে দেখে শিউরেই উঠেছি। কপালকে ধন্যবাদ দিয়েছি, ভাগ্যিস এমন পার্টনারের
পাল্লায় পড়িনি। রবিনকে ধরে ঝাঁকিয়ে বলতে ইচ্ছে করেছে, কীসের আশায় ও এখনও ম্যাথিউর
প্রেমে পড়ে আছে, কেন এক্ষুনি এই ফাঁপা নিরাপত্তার মুখে লাথি মেরে যেদিকে দু’চোখ
যায় চলে যাচ্ছে না?
এর কারণ বেশ কয়েকটা হতে পারে। এক, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে
আমার সহনশীলতা চমৎকার রকম বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই,
গোয়েন্দাগল্পের শাখাপ্রশাখার প্রতি আমার গোড়ার বিরাগটা যত না বিরাগ, তার থেকে বেশি
আঁতে ঘা লাগার ফল। আগাথা ক্রিস্টিকে যারা অসাহিত্যিক বলে উড়িয়ে দেয় তাদের প্রতি প্রতিশোধ। আর তিন, জে. কে. রাউলিং-এর প্রতি আমার আনুগত্য এমনই অন্ধ যে তিনি যাই করুন না কেন,
আমার সেটাই ভালো লাগতে বাধ্য।
কোন কারণটা ঠিক আমি জানি না, জানার দরকারও নেই। শুধু
জানি, অনেক অনেক দিন বাদে আমি একটা গোটা (মোটাও বটে) বই একটানা পড়ে শেষ করেছি।
জীবনযাপনের ফাঁকে ফাঁকে বই পড়া নয়, বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্নান করেছি, খেয়েছি,
ঘুমিয়েছি। টিভি বা ইন্টারনেট আমার মনোযোগের দুর্গের দখল নেওয়া তো দূর, আলতো দাঁতও
ফোটাতে পারেনি।
Ore baba. Ei lekhata purota porlam na (jodi kono spoiler bhul kore pore feli?) Amar ekhon daroon durdosha. Dictionary sizer "Goldfinch" boita just ordhek pora hoyechhe. Odike Flipkart er doulote "Silkworm" delivered hoye bedside table ey boshe dab dab kore amar dikey takiye achhe. Kintu "Goldfinch" ta hut kore chhere onyo boi ekhon dhorteo parchhi na. Ki dhormosonkot baap re baap.
ReplyDeleteগোল্ডফিঞ্চ কিনেছ? গুড গুড। পড়ে নাও, তারপর ডিসকোর্স করা যাবে। আমি স্পয়লার কিছু লিখিনি, তবে তোমার যদি ভয় লাগে, পরেই পোড়ো। একটা কথা শুধু বলে রাখি, দারুণ বই। তোফা বই।
DeleteEi puro weekend ta ar kichhu na kore ruddhoshwasey pore fellam boita. Ki je bhalo laglo! Prokashonar jogotta ekdom thikthik phutiye tulechhe. Kotthao kono kgamti nei. Ar ami toh shesh obdhi bujhte parini khuni ke.
DeleteTar opore abar dupur theke jhomjhom kore brishti porchhe, ratre world cup final. Ekdom perfect happiness jaake bole ar ki. :)
যাক। নিজের রেকো দেওয়া বই অন্যেরও ভালো লেগেছে জানলে বড্ড ভালো লাগে। গোয়েন্দা গল্পের একজন পৃষ্ঠপোষকের কাছ থেকে সহমত পেয়ে আরও বেশি ভালো লাগছে। কাল কেমন বৃষ্টিটা হল বল বিম্ববতী? শোঁ শোঁ করে হাওয়া যেই শুরু হয়েছিল, আমরা ঘরে ধুলো ঢুকে যাওয়ার তোয়াক্কা না করে জানালাটানালা সব হাট করে খুলে দিয়েছিলাম। তারপর অবশ্য বৃষ্টিতে বিছানা ভিজে যাচ্ছে দেখে বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু তবুও দারুণ আরাম হয়েছে।
Deleteআগে 'দ্য কুকু'স কলিং' টা পড়তে হবে, তারপর এটা পড়ব। অনেক পিছিয়ে পড়ছি দেখা যাচ্ছে! :(
ReplyDeleteতবে গোয়েন্দাগল্পের বিরুদ্ধে যাঁরা, তাঁদের মাথায় পড়ুক বাজ! আমার তো মনে হয় দিন-আনি-দিন-খাই গল্প-উপন্যাস লেখার চেয়ে একটা খাঁটি গোয়েন্দা উপন্যাস লেখা অনেক কঠিন।
পড়ে ফেলুন অরিজিত। ঠিকঠাকই লাগবে মনে হয়। গোয়েন্দা গল্প লেখা তো শক্তই, সমস্যা খাড়া কর, তার সমাধান যোগাও, ইয়ার্কি নাকি?
Deleteএসব আবার বলার কী আছে? রোলিং যা লিখবেন সবই ভাল।
ReplyDeleteহাহা, যা বলেছ।
Deleteআমিও পড়েছি। Pre-order করে। আপনার রিভিউ এর সাথে একমত। গল্প,প্লট,ক্লু characterization সবই বেশ লেগেছে। দুদিনে শেষ করেছি , এক্কেবারে ছাড়তে পারিনি। তবে লন্ডনের ডেসক্রিপশন আর কোরমরান-রবিন কেমিস্ট্রির কোনো জবাব নেই। এখন আমার প্রিয়তম স্যাটেলাইট এর লিস্টে রবিনের স্থান বেশ ওপরের দিকেই। বিশেষ করে স্ট্রং কিন্তু রিয়ালিস্টিক মহিলা স্যাটেলাইট বলে আরও বেশি করে কারণ এই প্রজাতিটি খুবই রেয়ার। আর পার্সোনাল এলিমেন্ট এর জায়গাটা একদম মোক্ষম ধরেছেন।
ReplyDeleteএই ফাঁকে চুপিচুপি একটা কথা বলি - বইটা পরার পর যখন অবান্তরে দেখলাম আপনিও পড়ছেন , তখন থেকেই এই রিভিউটার জন্য চাতক পাখির মত অপেক্ষা করছিলাম। আজকে পড়ে খুব ভালো খুব ভালো লাগলো , অনেক ধন্যবাদ।
হাই ফাইভ, হাই ফাইভ। মত মিলেছে দেখে শান্তি পেলাম। রবিন নিয়ে এক্কেবারে একমত। অসম্ভব জ্যান্ত চরিত্র। রাগ, অভিমান, অধিকারবোধ, সংশয়, প্রেম, লোকলজ্জা, ভালনারেবিলিটি (এটার বাংলা কী জানি না)---সব ঠিক যেমনটি চাই তেমনটি আছে রবিনের মধ্যে। রিভিউ-র জন্য আপনার অপেক্ষা সফল করতে পেরেছি জেনে খুব ভালো লাগছে।
DeleteEi post ta ekhon porbo na. Boita shuru korchhi.
ReplyDeleteআরে পড় পড় সোমনাথ, কেমন লাগল বোলো।
DeleteOnekdin agei shesh korechhi, kintu ekhane janate bhule gechhilam. Cuckkoo's calling jotota bhalo legechhilo, totota laglo na. Boddo beshi abantor proshongo ene felechhen mohila ei golpe. Aar Robin-er shorbokkhoner 'tumhe ho na ho mujhko to itna yakeen hai, mujhe pyar tumse nehi hai nehi hai' ta ektu biroktoi korechhey amake. Mone hoyechhey lekhika cinema ke full paisa wasool 3 ghonta tanar cheshta chaliye jachhen. Dorkar chharao du ekta item song diye. Cuckoo's calling eo chhilo. Oi chotto kore sex er obotarona. Khoma kore diyechhilam. Etay parlam na. Plot e onek maar pyach, kintu pathok-pathikar mon shei golok dhadhay habudubu na kheye 'ish abar oi khelo meyetar kachhey chhut-te holo bechari cormoran ke' te chole jabe. In fact, hoyto prejudiced bharotiyo male bolei, majhe majhe none hochhilo Robin ektu bosser podosheba kore dilei paare!
DeleteMot-er opor ettu disappointed. Tobe hyan. Porer boitao porbo. Gograshey. Shei kolomer jortake osshikar kore laabh nei.
হাহা সোমনাথ, আমার মনে হয় রাউলিং করমোরানকে প্রতিটি গল্পে একটি করে সেক্সুয়াল এনকাউন্টারের সুযোগ করে দেবেন পণ করেছেন। এবং করমোরানের সঙ্গিনীরা সবাই ধ্রুপদী অর্থে আকর্ষণীয় হবে। কুকু'স কলিং-এ একেবারে সুপারমডেল; সিল্কওয়ার্মের মেয়েটি মডেল না হলেও চেহারা, ও আর্থসামাজিক দিক থেকে করমোরানের থেকে ঢের ওপরে।
Deleteঅবান্তর প্রসঙ্গের ব্যাপারে আমার মত তোমার বিপরীত। কুকু'স কলিং-এই আমার বরং গল্পটাকে তালছাড়া লাগছিল বেশি। এখানে শুরু থেকেই বেশ ক্লু-ট্লু ড্রপ করতে শুরুর করেছেন (সম্পাদকের কাশি ইত্যাদি)। রবিনের আত্মত্যাগের ভাবটা আমারও না পসন্দ, বিশেষ করে ওই হতভাগা ম্যাথিউর জন্য।
Boita portei hochhe to. odike to shunchhi "Harry Potter is Back in New JK Rowling Story"... :-)
ReplyDeleteএই বইটা সত্যি পড়তে পারেন ইচ্ছাডানা। মন ভরে রেকমেন্ড করছি। আর ওই হনতুন হ্যারি পটারের ব্যাপারটা আমিও শুনলাম, তলিয়ে দেখতে হচ্ছে।
Deleteachcha cuckoo's calling na pore thakle eta pore bojha jabe..kono osubidhe hobe na to? tahole subhosyo sighram bole surur korbo..
ReplyDeleteএকেবারেই বোঝা যাবে ঋতম। এই রহস্যের সঙ্গে কুকু'স কলিং রহস্যের কোনও সম্পর্কই নেই। মাঝে মাঝে আগের গল্পের রেফারেন্স আছে, কিন্তু সেটা এই গল্পের রসাস্বাদনে বিঘ্ন ঘটাবে না বলেই আমার বিশ্বাস। আপনি শুভস্য শীঘ্রম বলে শুরু করে দিন।
Deleteachcha..jene haaf chere bachlum..ar apnio amake "apni" bola ta bondho korun didi..ami mote 24.apni sunlei mone hoy keu jeno bari ese baba ke dakche :P :)
Deleteহাহা ঋতম, আচ্ছা তোমাকে এবার থেকে তুমি বলেই ডাকব। তুমি তাড়াতাড়ি সিল্কওয়ার্ম পড়ে ফেল, তারপর আমাকে জানিও কেমন লাগল।
DeleteDutoi Kinlum...week end e ses korte hochhe
ReplyDeleteকেয়া বাত কেয়া বাত অর্ণব। লেগে পড়। কেমন লাগল আমাকে জানিও কিন্তু।
DeleteVodromohilar ami oti boro fan.. office er jhonjhate duto porte ektu time besi laglo bote.. kintu ses....silkworm er ses ta to ami office e bose bose porlam...boss majhe majhe takachhilen bote, kintu tokhon ar seta dekhar ichhe chilo na
ReplyDeleteMatro kodin age boita sesh korlam, durdanto legechhe. Apnar review er songe puro ekmot. r hyan, prothom golpotar thekeo eta beshi bhalo :)
ReplyDeleteইয়েস! হাই ফাইভ, অরিজিত।
Deleteপড়লাম। "পড়লাম" না বলে গোগ্রাসে গিললাম বলাই ভাল। এত মোটা বই এত কম সময়ে শেষ কবে শেষ করেছি? সেও এনারই লেখা, হ্যারি পটার ৫, ৬, ৭। আমার অবশ্য প্লট নিয়ে ছোট দুয়েকটা আপত্তি আছে, কিন্তু ওভারঅল এক্কেবারে অসাধারণ। আমি সবসময়েই বলি যে অন্যান্য ফ্যান্টাসি গল্প, যেমন লর্ড অফ দ্য রিংস বা গেম অফ থ্রোন্স পড়লে মনে হয় একটা অন্য জগৎ, কিন্তু হ্যারি পটার পড়লে মনে হয় যেন আমাদেরই দুনিয়ার গল্প, তাই চরিত্রগুলোকে আরও অনেক জীবন্ত লাগে। রবার্ট গ্যালব্রেথ-এর লেখাতেও সেই ম্যাজিক আছে। এর পর Career of Evil পড়ব।
ReplyDeleteআপনার সিল্কওয়ার্ম ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল, সুগত। আমি আপনাকে ভয় পাওয়াতে চাই না, কিন্তু গ্যালব্রেথের চারটের মধ্যে এই গল্পটাই আমার বেস্ট লেগেছে আপাতত। আপনি বাকিগুলোও পড়ুন, তারপর নোট চালাচালি করা যাবে।
Delete