মুক্তি
একটু পুরোনো দিনের
অ্যামেরিকান ভূতপ্রেতের সিনেমা দেখার যাঁদের অভ্যেস আছে, তাঁদের হয়তো ভিনসেন্ট
প্রাইসকে মনে থাকবে। আমার অবশ্য ছিল না। মানে ভদ্রলোকের চেহারাটা আমার মনে ছিল,
কিন্তু তাঁর নাম যে ভিনসেন্ট প্রাইস সেটা আমার মনে ছিল না।
তাহলে আমি হঠাৎ তাঁকে নিয়ে এত উৎসাহিত হয়ে পড়লাম
কেন? রেডিও শুনে। সত্তরের দশকে বিবিসি-র হরর অ্যান্ড মিস্ট্রি বিভাগে ‘দ্য প্রাইস
অফ ফিয়ার’ নামে একটি নাটকের সিরিজ প্রচারিত হত। সেই অনুষ্ঠানের হোতা ছিলেন
ভিনসেন্ট প্রাইস। অনুষ্ঠানে ভিনসেন্ট প্রাইস নিজের চরিত্রেই অভিনয় করতেন। অর্থাৎ কি না, অভিনয় করতে
প্রাইস কোথাও একটা গেছেন আর সেখানে গিয়ে তাঁর একটা কোনও ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে, বা
শুটিং-এর শেষে কেউ একজন পাবে বসে প্রাইসকে নিজের কোনও ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার কথা বলেছে –
দ্য প্রাইস অফ ফিয়ার-এর একেকটি পর্বে প্রাইস সেগুলো শ্রোতাদের বলতেন। অবশ্য সব
গল্প যে ভূতেরই হত তেমন নয়। অলৌকিক ঘটনা কিংবা কখনও কখনও খুনখারাপির গল্প নিয়েও
ভিনসেন্ট প্রাইস এপিসোড ফেঁদে বসতেন। ব্রিটেনে তো বটেই, ব্রিটেনের বাইরেও অসম্ভব
জনপ্রিয় হয়েছিল ‘দ্য প্রাইস অফ ফিয়ার’।
অনেক বিখ্যাত লেখকদের গল্প
সামান্য এদিকওদিক করে, বা নতুন করে তাঁদের দিয়ে গল্প লিখিয়ে দ্য প্রাইস অফ ফিয়ার-এর
একেকটি পর্ব তৈরি হত। রিমেইনিং টু বি সিন (Remaining To Be Seen) সে রকমই একটা গল্প। উনিশশো তিয়াত্তরের শেষের দিকে এটি
প্রচারিত হয়। গল্পটি কে লিখেছিলেন সে সম্পর্কে কোনও তথ্য আমি ইন্টারনেট খুঁজে
পাইনি। কোথাও কোথাও লেখা আছে যে ভিনসেন্ট প্রাইস নিজে ‘দ্য প্রাইস অফ ফিয়ার’-এর
কয়েকটি পর্ব লিখেছিলেন, কিন্তু রিমেইনিং টু বি সিন যে তাঁর লেখা, সে কথাও কোথাও
লেখা নেই। আপনারা যদি খুঁজে বার করতে পারেন, তবে আমাকে জানাবেন প্লিজ।
*****
অখিল সাহা আর সুধাংশু সান্যালের
মিলটা চট করে চোখে পড়ত না। একজন চিমসে ধরণের, অন্যজন গাঁট্টাগোঁট্টা; একজনের
বড়বাজারে তিনপুরুষের চায়ের দোকান টিমটিম করেও আর চলছে না, অন্যজন সাতচল্লিশের
দাঙ্গায় বাবামায়ের হাত ধরে শেয়ালদায় নেমে হাবড়ার উদ্বাস্তু কলোনিতে বড় হয়ে নাইট
স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে কনস্টেবলের চাকরিতে ঢুকে অবশেষে লালবাজারের মাঝারি পদে
পৌঁছে অবসর নিয়েছেন। অবসর নিয়ে এই ভদ্রেশ্বরের পাড়ায় তিনটে ঘর, একটা বারান্দা,
একটা রান্নাঘর আর দেড়খানা বাথরুমওয়ালা একটা বাড়ি বানিয়ে উঠে এসেছেন। পাঁচ কাঠা
জমির ওপর বানানো প্রায় ভেঙে পড়া অখিল সাহার তিনপুরুষ পুরোনো বাড়ির পাশে।
কিন্তু দু’জনের মিল ছিল। একটা
নয়, দুটো নয়, তিনতিনটে। প্রথম দুটো মিল আলাপের প্রথমদিনই ধরা পড়ে গিয়েছিল। সেই
যেদিন প্রায় বাহাত্তর ঘণ্টা টানা বৃষ্টির পর যে বিকেলবেলা ঝকঝকে রোদ্দুর উঠেছিল আর
অখিল সাহা তাঁর ভাঙাচোরা পাঁচিলের পাশে উবু হয়ে বসে ঝুঁকে পড়ে খুরপি হাতে জমি
খুঁড়ে চারা পুঁতছিলেন আর সুধাংশু সান্যাল হনহন করে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন, সেই দিনই। সুধাংশু সান্যাল আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে হাত নেড়ে কুশল
বিনিময় করতে করতে চলছিলেন, গোটা তিন নেড়ি কুকুর লেজ নেড়ে নেড়ে তাঁর পিছু পিছু
চলছিল। এমন সময় তাঁর চোখ পড়ল ভাঙা পাঁচিলের ওধারে উবু হয়ে বসে থাকা অখিল সাহার
ওপর। ঠিক অখিল সাহার ওপরেও নয়, অখিল সাহার পাশে মাটিতে শুইয়ে রাখা চারাগাছগুলোর
ওপর।
“গোলাপি চাঁপা!”
অখিল সাহা চমকে উঠে মুখ তুললেন।
ঠোঁটের দুপাশে লেগে থাকা থুতুর বিন্দু চেটে নিয়ে কাঁপা গলায় বললেন,
“অ্যাঁ?”
উত্তর না দিয়ে পাঁচিলের
ভাঙা অংশটা টপকে জমির ভেতর ঢুকে এলেন সুধাংশু সান্যাল। নেড়ি কুকুরগুলো এই
অপ্রত্যাশিত বাধায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পাঁচিলের বাইরে দাঁড়িয়ে লেজ নেড়ে নেড়ে
পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ভাবতে লাগল। একটা ছানা কুকুর সুধাংশু সান্যালের পেছন পেছন
পাঁচিল টপকানোর উপক্রম করছিল, বাকিরা “ঘেউ” করে উঠে তাকে বারণ করল।
“যাস না, ডেঞ্জার জোন।”
সুধাংশু সান্যাল পায়ের
আঙুলের ওপর ভর দিয়ে বসে বললেন,
“কোত্থেকে পেলেন মশাই, এ জিনিস?”
অখিল সাহা একবার ঝট করে
পেছন দিকে তাকিয়ে নিলেন। তিনি এখন যেখানে বসে আছেন, তাঁর শোবার ঘরের জানালা থেকে সে
জায়গাটা স্পষ্ট দেখা যায়। সাধারণত তিনি যতক্ষণ বাগানে কাজ করেন, ততক্ষণ জানালাটা খোলা
থাকে। আজ নেই। অচেনা লোকটা হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই বাড়ির মধ্যে ঢুকে আসায় (এবং শোবার
ঘর থেকে ঘটনাটা দেখতে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনায়) অখিল সাহার মুখে যে আতংকের ভাবটা
ফুটেছিল সেটা একটু কমল। তিনি এই রবাহূতের দিকে তাঁর চশমার ঘোলাটে কাচের মধ্য দিয়ে
ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন। লোকটার হাসিহাসি, গোলগাল মুখ দেখলেন, পরিপাটি জামাকাপড়
দেখলেন। কিন্তু সব ছাপিয়ে সেই মুহূর্তটা যে কারণে অখিল সাহার স্মৃতিতে গাঁথা হয়ে
গেল সেটা হচ্ছে লোকটা গোলাপি চাঁপার গাছ চিনতে পারে। ফুল দেখে না, গাছ দেখে না,
চারা দেখেই।
সুধাংশু সান্যাল উঠে
দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে প্রশংসার দৃষ্টিতে চারদিকে তাকালেন। ফলফুলের গাছে ভরা
বিরাট বাগান, বাগানে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। অখিল সাহাও খুরপি হাতে উঠে দাঁড়ালেন।
“আমরা এখানে নতুন এসেছি।
মাসখানেক হল। ওই তো, ওই সাদা রঙের বাড়িটা।”
চোখ নাচিয়ে অখিল সাহার জমির
অন্য প্রান্তের পাঁচিলের ওপারের বাড়িটার দিকে ইঙ্গিত করলেন সুধাংশু সান্যাল।
“মীনাক্ষী, আমার বউ,, একবার
আপনাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিল। বাড়িতে কেউ ছিল না বোধহয়।”
অখিল সাহা উত্তর দিলেন না। বাড়িতেই
থাকেন তাঁরা সবসময়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সবসময় দরজা খোলা হয় না। বারণ আছে। সদর ঘরের পাশের ঘরের
জানালায় পচা কাঠে ঘুণ ধরে একটা ‘এস’ আকৃতির ফুটো হয়ে গেছে, সেটা দিয়ে আগে দেখা হয়
অপেক্ষারত অতিথিরা মনের মতো কি না। মনের মতো হলে দরজা খোলা হয়, না হলে হয় না।
“যাই হোক, আলাপ হয়ে ভালো
লাগল। আমার অবশ্য বাগান
নেই, কিন্তু কয়েকটা টবের ব্যবস্থা করে আপনার থেকে কয়েকটা চারা নেব।”
পেছন ফিরে
পাঁচিল টপকাতে গিয়েও কী ভেবে ঘুরে দাঁড়ালেন সুধাংশু সান্যাল।
“আপনি দাবা খেলেন?”
অখিল সাহা হকচকিয়ে গেলেন।
“দ্-দাবা?”
“দাবা। খেলেন?”
অখিল সাহার বুকের ভেতর কী
একটা নড়াচড়া করে উঠল। একটা দৃশ্য। দুপুর। গনগনে রোদ। চিলেকোঠার ঘরের অ্যাসবেসটসের
ছাদ ভেদ করে এসে সে রোদের তাপ সারা শরীর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে
এক মনে লাইব্রেরি থেকে ধার করে আনা ম্যাগাজিনের পাতা কাঁচি দিয়ে কাটছে কিশোর অখিল সাহা।
কালো চুলের সোনার ছেলে ফিশার, ববি ফিশার, দুনিয়া কাঁপাচ্ছে তখন দাবায়। অখিল সাহা
তার ছবি কাটছে, সাঁটছে চিলেকোঠার দেওয়ালে। চোদ্দো বছরের অখিল সাহার দুচোখে স্বপ্ন
খেলা করে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের কথা ভাবতে গেলে মাথা ভোঁ ভোঁ করে, কিন্তু এটাও তো ঠিক,
এ পাড়ার নেতাজী সংঘ, ও পাড়ার মিলন সংঘ মিলিয়ে তার থেকে ভালো দাবা আর কেউ খেলে না। তার বয়সী ছেলেরা তো
নয়ই, এমনকি ঘোষজেঠু, যিনি এককালে কলকাতার ক্লাবে দাবা খেলতে যেতেন, তাঁকেও অখিল
সাহা আগের সপ্তাহেই হারিয়েছে। বিশ্ব না হোক, একদিন যদি সে সত্যি সত্যিগোটা ভদ্রেশ্বরের
সেরা দাবাড়ু হয়ে ওঠে? গোটা কলকাতার? গোটা ভারতবর্ষের?
পরমুহূর্তেই দৃশ্যটা,
চিলেকোঠার ঘরটা, দেওয়ালের পোস্টারগুলো, তিলে তিলে হাতখরচার পয়সা বাঁচিয়ে কেনা
প্লাস্টিকের দাবার বোর্ড আর ঘুঁটিগুলো, কুলুঙ্গিতে রাখা এরওর কাছ থেকে ধার আনা
কয়েকটা চটি দাবার বই ঢিল পড়া পুকুরের জলের মতো ছিটকে গেল, তার জায়গায় এসে জায়গা নিল
বড়বাজারের ঘুপচির দোকানঘরে বড় বড় চায়ের বয়ামের ছায়ায় বসে অনন্ত অপেক্ষা, বাবামার
মৃত্যু, সংসার।
শিউরে উঠে বাস্তবে ফিরে আসলেন
অখিল সাহা।
“নাহ্, ওই একসময় বোর্ড
নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম, ব্যস।”
“আরে আমিই কি একেবারে ববি
ফিশার নাকি?” হা হা করে হেসে উঠলেন সুধাংশু সান্যাল। “আমারও ওই নাড়াচাড়া পর্যন্তই। তাহলে মাঝে মাঝে বসা
যাবে, নাকি?
অখিল সাহা ত্রস্ত হয়ে মুখ
খোলার আগেই সুধাংশু সান্যাল যোগ করলেন, “আপনার বাড়িতে বসাই ভালো, চাই কি বাগানে
বসেও খেলা যেতে পারে। আমি আসব তাহলে কাল সন্ধ্যেবেলা। ফ্রি আছেন তো?”
অখিল সাহা মাথা নাড়লেন।
“ঠিক হ্যায়, তাহলে কাল দেখা
হচ্ছে। এই পাঁচটা নাগাদ।”
হাত আকাশে তুলে নাড়তে নাড়তে
চলে গেলেন সুধাংশু সান্যাল। তাঁর মন ফুরফুরে হয়ে গেছে। ইস, একটু জমি যদি
থাকত, কেমন খেলিয়ে বাগান করতে পারতেন তিনি। এই যে দেড়কাঠা জমিতে টায়েটায়ে বাড়ি
বানিয়েছেন তিনি, ইচ্ছে করলেই আরেকটু বেশি জমিতে বাড়ি বানাতে পারতেন তিনি। কী ক্ষতি
হত? ঠিক এর উল্টো প্রশ্নটা এসেছিল উল্টোদিক থেকে। কী লাভ হবে? খেলিয়ে বাড়ি করে?
ছেলেপুলে তো আর এই ধ্যাদ্ধেড়ে গোবিন্দপুরে এসে থাকবে না। দু’জনের জন্য এত বড় বাড়ি লাগবে
কীসে? আর বড় বাড়িই যদি না লাগবে তাহলে বড় জমিই বা কেন? তার থেকে টাকা ব্যাংকে রেখে
দিলেই হয়। নিজের মনে একটা বীতশ্রদ্ধ “হুঃ” বললেন সুধাংশু সান্যাল। ব্যাংক। নিজের রক্ত জল করে
রোজগার করা টাকা নিজে ভোগ না করে বারো ভূতের জন্য জমিয়ে রেখে দিয়ে যাও।
নাঃ, এই সব কথা ভেবে একটু
আগের ফুর্তিটা মাটি করবেন না সুধাংশু। এই পাড়ায় এতদিন এসেছেন, এই প্রথম একজনের
সঙ্গে আলাপ করে তাঁর এত ভালো লাগল। দাবার কথাটা তোলার করার জন্য নিজেই নিজের পিঠ
চাপড়ে দিলেন সুধাংশু সান্যাল। অবশ্য এটা হতেই হত। সিরিয়াসলি বাগান করে অথচ দাবার ঘুঁটি
চেনে না, এ জিনিস জীবনে দেখেননি তিনি। দুটো কাজের মধ্যেই বাইরের জগতটার থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিজের মধ্যে ডুব দেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে বলেই বোধহয়।
অখিল সাহাও খুরপি তুলে নিয়ে
বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন। তবে সুধাংশু সান্যালের মতো খুশি হয়ে নয়, অখিল সাহা
হাঁটছিলেন ধীরে ধীরে, শঙ্কিত পায়ে। সেটা স্বভাবের দোষ হতে পারে। অখিল সাহার মুখেরম
মাংসপেশিতে যে কিছু একটা সমস্যা আছে, সেগুলোতে যে আনন্দ, হাসি ইত্যাদি ফোটে না,
পাড়াপ্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সে সন্দেহটা অনেকদিনই ছিল। অখিল সাহা হাঁটছিলেন
আর ভাবছিলেন, এ কী গেরো হল। এখন তিনি কী করে প্রমাণ করবেন যে তিনি কোনওরকম উৎসাহ দেখানো না
সত্ত্বেও লোকটা যেচে তাঁর সঙ্গে আলাপ জমিয়েছে এবং কাল বিকেলে দাবা খেলতে আসার
বায়নাও করে রেখেছে? ভেবে ভেবে তাঁর মাথা ক্রমে গরম হয়ে উঠল। প্রায় চল্লিশ বছর পর দাবার
বোর্ডের ধুলো ঝেড়ে নামানোর সম্ভাবনাও তাঁর দুশ্চিন্তার মেঘ কাটাতে পারল না।
সূর্যাস্তের আলোয় ভদ্রেশ্বরের
আকাশ রাঙা হয়ে উঠল, বছরদশেকের মধ্যে যারা কাটা পড়তে চলা মহীরুহের শাখাপ্রশাখারা
ঘরে ফিরে আসা পাখিদের কাকলিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠল, আর সুধাংশু সান্যাল আর অখিল সাহা হেঁটে
চললেন তাঁদের তিন নম্বর মিলের দিকে।
*****
বাড়ির পেছনের অব্যবহৃত
গোয়ালঘরটায়, শাবল, খুরপি, জলের ঝাঁঝরি রেখে, কুয়োতলায় পায়ের কাদা ধুয়ে পেছনের দরজা
দিয়ে পা টিপে টিপে বাড়ি ঢোকা মাত্র খ্যানখেনে গলায় প্রশ্নটা ভেসে এল।
“অতক্ষণ ধরে কী আড্ডা
হচ্ছিল?”
সামনে পাহাড়ের মতো পথ আটকে
দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা। হাতে ধূপকাঠি, ভুরুতে ভাঁজ।
অখিল সাহা যুগপৎ আতংক ও স্বস্তি অনুভব করলেন। আতংক যে ঘটনাটা নীলিমার কাছে লুকোনো
যায়নি, স্বস্তি যে নীলিমা ঘটনাটা অলরেডি দেখে ফেলেছে, তাঁকে আর বলতে হবে না। অখিল
সাহা যতটুকু জানেন বললেন। নতুন পড়শি, পাঁচিলের ধারের সাদা বাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি।
নীলিমা নাক দিয়ে ঘোঁত করে
একটা শব্দ করে বলল, “জানি জানি। মাসখানেক হল এসেছে, আর এসে থেকে দরজায় দরজায় ঘুরে জানান
দিচ্ছেন যে ওঁরা এসেছেন। যেন বরণডালা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। যত্তসব শহুরে ন্যাকামো।”
অখিল সাহা গলা যথাসম্ভব
নিচে নামিয়ে জানালেন, যে ভদ্রলোক কাল বিকেলে আসবেন বলেছেন। বলে একটা বিস্ফোরণের
অপেক্ষায় কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন অখিল সাহা, কিন্তু বিস্ফোরণটা হল না।
নীলিমা এত অবাক হয়েছে যে
রাগতে ভুলে গেছে।
“আসবে? এ বাড়িতে? কেন?”
“দাবা খেলতে।”
নীলিমা এবার সত্যি সত্যি
হাঁ করল। নীলিমার চর্বি জমা মুখটা এখন ঠিক হাঁ করা কাতলা মাছের মতো দেখাচ্ছে। অন্য
কোনও লোক হলে হেসে ফেলত, কিন্তু অখিল সাহার মুখের মাংসপেশি কি না ডিফেক্টিভ, তাই
তিনি হাসলেন না। তাঁর হৃদপিণ্ড ভীষণ জোরে ধুকপুক করতে লাগল, তিনি কোনদিকে তাকাবেন
বুঝতে পারলেন না। নীলিমার ভাঁটার মতো গনগনে লাল চোখের দিকে তাকানোর প্রশ্নই নেই।
উপায় না দেখে অখিল সাহা নীলিমার হাঁ করা মুখের ভেতর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। কালো গহ্বরের
মধ্যে খয়েরের পুরু আস্তর দেওয়া মোটা জিভ সাপের মতো দুলে উঠল।
“খেলতে? বুড়োবয়সে মাথাটাথা
নতুন করে খারাপ হল নাকি?
নীলিমা ধুপধুপিয়ে অন্যদিকে
চলে গেল।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে সান্ধ্যভ্রমণ
সাঙ্গ করে সুধাংশু সান্যাল নিজের বাড়ির দরজায় পৌঁছলেন। চিলতে বারান্দার কোণের টবে লাগানো
ফুলগাছটায় কুঁড়ি ধরেছে কি না ঝুঁকে দেখে, গাছটার গায়ে একবার হাত বুলিয়ে কলিং বেলে
হাত রাখতে যাবেন, এমন সময় দরজা খুলে গেল।
“এত দেরি হল যে?”
একটা মৃদু দীর্ঘশ্বাস চেপে
সুধাংশু সান্যাল দরজার ওপারে দাঁড়ানো মীনাক্ষীর মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন।
কৌতূহল মাখামাখি হয়ে আছে। অনেকদিন থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল, এখন তিনি নিশ্চিত।
মীনাক্ষীকে দিনকে দিন ছুঁচোর মতো দেখতে হয়ে যাচ্ছে। হাবড়ার রিফিউজি কলোনির নর্দমার পাশে একটা ছুঁচোর গর্ত ছিল।
সেটার পাশে উবু হয়ে বসে সুধাংশু সান্যালের ছোটবেলার অনেক সময় কেটেছে। মীনাক্ষীকে
আজকাল অবিকল ওই ছুঁচোটার মতো লাগে। ছুঁচোটার মতো গোঁফ নাড়িয়ে শুঁকছে, এদিকওদিক
খুঁড়ছে, কোথাও কোনও গসিপ, কোনও কেচ্ছা পাওয়া যায় কি না। একসময় সুধাংশু সান্যাল
অফিস থেকে ফিরলে তাঁর ছেড়ে রাখা শার্ট তুলে নিয়ে শুঁকত, কোনও কাল্পনিক প্রেমিকার
গন্ধ পাওয়া যায় কি না, ছেলেমেয়ের কলেজের ব্যাগ, খাতাবই ঝেড়ে ঝেড়ে দেখত কেউ কোনও
গোপন কথা লুকিয়ে রেখেছে কি না মীনাক্ষীর কাছ থেকে। ছেলেমেয়ে পালিয়ে বেঁচেছে। এখন
পুরো চোটটা এসে পড়েছে সুধাংশু সান্যালের ঘাড়ে।
*****
গাছপালার প্রতি টানের জন্যই
হোক, দাবাপ্রীতির জন্যই হোক বা তিননম্বর মিলটার জন্যই হোক, অখিল সাহা আর সুধাংশু সান্যালের
বন্ধুত্বটা টিকে গেল। খেলতে খেলতে নানা বিষয় নিয়ে কথা হত। আবহাওয়া, রাজনীতি,
বাঙালির অবক্ষয়। সুধাংশু সান্যাল বেশি বলতেন, অখিল সাহা বেশি শুনতেন। মাঝেসাঝে নতুন
কোনও চারার খোঁজ পেলে অখিল সাহা সে খবর সুধাংশু সান্যালকে দিতেন, সুধাংশু সান্যাল
সে চারা টবে গজাবে কি না সে সম্পর্কে হাহুতাশ করতেন। সুধাংশু সান্যালের বাড়িতে চারপাঁচ রকম খবর আসত, তিনি মাঝে
মাঝে বলতেন খবরের কাগজের কত নম্বর পাতার কোন কোণে যেন খবর বেরিয়েছে, কলকাতার এক
পাড়ায় রক্তদান শিবিরের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের দাবা খেলার
প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রস্তাব দিতেন নাম দেওয়ার, অখিল সাহা চুপ করে থাকতেন।
আশ্চর্যজনক ভাবে, তিননম্বর
মিলটা নিয়ে দুজনের মধ্যে কোনওদিন কোনও কথা হত না। যদিও সেই প্রথম আলাপ হওয়া
বিকেলের পর তখন প্রায় ছ’মাস কেটে গেছে। প্রায় প্রতি বিকেলেই
অখিল সাহা আর সুধাংশু সান্যাল দাবা খেলতে জড়ো হচ্ছেন। কোনও কোনওদিন অখিল সাহার বাড়িতে,
কোনওদিন সুধাংশু সান্যালের বাড়িতে, কোনওদিন অখিল সাহার বাগানে, কোনওদিন পাড়ার
পুকুরের নির্জন ঘাটে। সেদিন খেলা হচ্ছিল পুকুরঘাটে। খেলা জমে উঠেছিল। সমানে সমানে
টক্কর। শেষটা অখিল সাহা একটা মোক্ষম প্যাঁচে সুধাংশু সান্যালের রানীকে কুপোকাৎ করে দিতেই খেলাটা
শেষ হয়ে গেল আর অমনি সুধাংশু সান্যাল বলে উঠলেন, “কাল বৌদি আপনাকে কিছু নিড়েন
দিলেন কিন্তু।” নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠলেন সুধাংশু সান্যাল। তাঁর ভুঁড়ি দুলে
উঠল।
অখিল সাহা কাঠ হয়ে গেলেন।
“কী যেন, ও হ্যাঁ, কেন আপনি
রেশনের ব্যাগ মাছের ঠিক্ হুকে ঝোলাননি, সেই নিয়ে। বাপরে বাপরে বাপ।
আপনার মুখটা যদি তখন দেখতেন।” সুধাংশু সান্যালের ভুঁড়ি কাঁপতে লাগল। অখিল সাহার
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল। গলাখাঁকারি দিয়ে তিনি বললেন “না, মানে, সে রকম
কিছু না . . .”
“আরে ভায়া, এতে লজ্জা
পাওয়ার কিছু নেই। আমার বাড়িতেও সর্বক্ষণ এই চলছে। এই ব্যাগ সেই হুকে কেন, সেই হুকে
এই ব্যাগ কেন, লাইফটা হেল হয়ে গেল, মাইরি।”
অখিল সাহা কিছু বললেন না।
পুকুরের কোণে একজায়গায় কচুরিপানার ঝোপে একটা একলা শাপলা ফুল ফুটেছে। তার রানী রঙের
পাপড়ির ওপর একটা পোকা বোঁ বোঁ আওয়াজ করে একটানা ঘুরে যাচ্ছে, সে দিকে তাকিয়ে চুপ
করে বসে থাকলেন। তাঁর মুখ দেখে মনে তিনি যেন দম বন্ধ করে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সাধনায়
বসেছেন। অপেক্ষা করছেন কখন এই প্রসঙ্গটা শেষ হবে, তখন তিনি আবার দৃশ্যমান হবেন।
কিন্তু সুধাংশু সান্যাল
প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার কোনও লক্ষণ দেখালেন না।
“এ রকম হবে জানলে, সত্যি
বলছি আপনাকে, সারাজীবন হিমালয়ে গিয়ে ধ্যান করে কাটিয়ে দিতাম, তবু বিয়ে করতাম না।
বুঝতেই পারিনি। নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। সাব ইন্সপেক্টর। কদমতলা থানা। আমার সঙ্গে
সঙ্গেই ঢুকেছিল। টাইপিস্ট। আমারই মতো, রিফিউজি ফ্যামিলির বড় সন্তান। অনেক দায়দায়িত্ব।
তাছাড়া তখন দেখতেশুনতেও বেশ ছিল, শান্তশিষ্ট, কথা কম বলে। বিয়ে করে ফেললাম। ব্যস।
বিশ্বাস করবেন না মশাই, রাতারাতি ট্রান্সফর্মেশন। যতদিন চাকরিটা ছিল তবু একরকম,
যেই আমি ইন্সপেক্টর হয়ে শ্যামনগরে বদলি হলাম, অমনি পটাং করে চাকরিটা ছেড়ে দিল। কী
না, ফুলটাইম ছেলেমেয়ে মানুষ করবে। ব্যস, সেই থেকে চলছে। পাড়াপ্রতিবেশীর ওপর
নজরদারি, ছেলেমেয়ের ওপর নজরদারি, আমার কথা তো ছেড়েই দিলাম। কিছু বললেই কান্নার
স্রোত। তিনতিনবার হাত
কাটতে গিয়েছিল, ভাবতে পারেন? নাঃ, ঝগড়াটগড়া কিচ্ছু হয়নি। সবাই বলল, ‘এ ডিপ্রেশন
ছাড়া কিছু নয়, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও।’ গেলাম। ভবানীপুরের কোন গলিতে ডাক্তারের চেম্বার,
পার ঘণ্টা পাঁচশো টাকা ভিজিট। চেম্বারে ঢুকিয়ে কি ঘুসুরফুসুর করে কথা বলবে তাতেই
সব পাগলামি হাওয়া হয়ে যাবে। গেলাম। গিয়ে দেখি পালে পালে স্বামীরা তাদের বউদের নিয়ে
লাইন দিয়ে বসে আছে, সবাই নাকি ডিপ্রেসড। তিনমাস সপ্তাহে একদিন করে সিটিং চলল। তিন
চারে বারো, বারো ইনটু পাঁচশো। কত হয়? তার ওপর মহার্ঘ সব ওষুধ। ডাক্তার বলল, ‘একটা
ইনভলভমেন্ট থাকলে এ রকম হত না। চাকরিটা ছাড়িয়ে দেওয়া উচিত হয়নি।’ যাশ্শালা। চাকরি
নাকি আমি ছাড়িয়েছি। বুঝুন ঠেলা।”
একটানা এত কথা বলেই হোক, বা
রাগ চাপার চেষ্টা করতে গিয়েই হোক, হাঁপিয়ে গিয়েছিলেন সুধাংশু সান্যাল। অখিল সাহা তখনও কাঠ হয়ে বসেছিলেন। যেন কিছু দেখতে পাচ্ছেন
না, শুনতে পাচ্ছেন না। তিনি যেন আর এ জগতে নেই। সুধাংশু সান্যালের পাগল বউয়ের কথা
শুনতে অখিল সাহা হয়তো ভাবছিলেন, “এত সহজ পাগল হওয়া? তা হলে আমি হলাম না কেন?
সারাজীবন ধরে এই লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অত্যাচার সইবার শক্তি কেন দিলে আমাকে ঠাকুর, কেন
পাগল করে দিলে না?”
মুখে বললেন, “আমরা, মানে
আমিও তো নীলিমাকে কোনওদিন কিছু দিতে পারিনি। ওর কত কলকাতায় থাকবার শখ ছিল খুব। এই
ভাঙা বাড়িতে সারাজীবন . . .”
সুধাংশু সান্যাল ঝটিতি ঘাড়
ঘুরিয়ে তাকালেন বন্ধুর দিকে।
“আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন এ
কথা? যে আপনি বৌদিকে শাড়ি গয়না সিনেমা থিয়েটারে ভরিয়ে রাখলে আপনার জীবনটা অন্যরকম
হত? আপনার কি ধারণা সুখী সংসারের স্বামীরা সব আম্বানি আর টাটা? সংসারে শান্তি পেতে
গেলে কি খালি খাঁই মেটাতে লাগে? আর কিছু নয়?”
অখিল সাহা গলা খাঁকারি দিয়ে
বললেন, “এখন আর ভেবে কী হবে? কপালে যা ছিল হয়ে গেছে।”
ঊরুর ওপর একটা হতাশ ঘুষি
মেরে বলে উঠলেন সুধাংশু সান্যাল, “কপাল কপাল কপাল! এই শালা কপালের কথা ভেবে ভেবে
গত চল্লিশ বছর কাটিয়ে দিলাম। আর ইচ্ছে করে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, দিই শালা লাথি মেরে সব
উড়িয়ে। নিকুচি করেছে সংসারের। লোকে কত কঠিন কাজ করে ফেলছে, ইংলিশ চ্যানেল পার করে
ফেলছে, এভারেস্টে উঠে পড়ছে, আর আমি সুস্থসবল একটা লোক, কলুর বলদের মতো এই ভার গত
চল্লিশ বছর ধরে বয়ে চলেছি? এই জাঁতাকল থেকে নিজের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারছি
না?”
অখিল সাহা যেমন ছিলেন তেমনই
নিশ্চল হয়ে বসে রইলেন। পোকাটা এখনও শাপলাটার আধফোটা মুখের কাছে ঘুরে চলেছে। তার
ভোঁ ভোঁ আওয়াজটা উঠে এসেছে অখিল সাহার মাথার ভেতর। গোঁত্তা খেয়ে ফিরছে অখিল সাহার
মগজের দেওয়ালে দেওয়ালে, ছড়িয়ে পড়ছে তন্তুতে তন্তুতে, শিরায় শিরায়, ধমনীতে ধমনীতে,
মিশে যাচ্ছে রক্তে, ছুটে চলেছে অখিল সাহার পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির শীর্ণ দেহের কোণায়
কোণায়। কিন্তু আর বোঁ বোঁ নয়, আওয়াজটা এখন বলে চলেছে, “মুক্তি! মুক্তি!
মুক্তি!”
*****
যে কোনও ভালো জাতের সুস্থসবল
ছুঁচোর মতোই মীনাক্ষী সান্যালেরও ঘুম পাতলা ছিল। তাঁর স্বামী পুত্রকন্যারা সন্দেহ
করতেন যে তিনি আসলে ঘুমোন না, ঘুমের ভান করে ঘাপটি মেরে থাকেন। যাতে তাঁর চোখ
এড়িয়ে বাড়ির কেউ কিছু করে না ফেলতে পারে। অবশ্য তারা নিন্দুক, নিন্দুকে সবসময়ই
বাড়িয়ে বলে। মীনাক্ষী ঘুমোতেন ঠিকই, তবে আর পাঁচজনের থেকে কম। শেষরাতের আগে
কোনওদিন দু’চোখের পাতা এক করতে পারতেন না। সেদিন রাত তিনটে নাগাদ যাও বা সামান্য
তন্দ্রা মতো এসেছিল হঠাৎ শব্দটায় ঘুম ভেঙে গেল। ধপ ধপ করে একটা ভোঁতা শব্দ হচ্ছে
কোথাও। ঢিমে লয়ে। মীনাক্ষীর বুক ভয়ে জমে গেল। ভয়ের সঙ্গে সঙ্গেই হল রাগ। তখনই তিনি
বলেছিলেন এই অজ পাড়াগাঁয়ে না আসতে। পাটুলির দিকে দু’কামরার ফ্ল্যাট ঢেলে বিক্রি হচ্ছিল, তার
একটা কিনে থেকে গেলেই হত, তা না জমি কিনে নিজে বাড়ি করতে হবে। তাও যদি স্টেশনের
কাছে জমি কেনার মুরোদ থাকত। এই শ্মশানের মতো নির্জন জায়গায়, যেখানে পড়শি বলতে ওই ভূতের
বাড়ি, কেউ এসে যদি গলা টিপে মেরে রেখে যায় কেউ টেরও পাবে না।
মীনাক্ষীর চিন্তাস্রোতে
বাধা পড়ল। তন্দ্রাটা এতক্ষণে পুরোটা ছুটেছে। তিনি হঠাৎ হৃদয়ঙ্গম করলেন যে আওয়াজটা
তাঁর বাড়ির ভেতর থেকে আসছে না। আসছে ওই ভূতের বাড়ির দিকটা থেকেই। বিছানা ছেড়ে উঠে
জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন মীনাক্ষী। মেঘহীন আকাশে ঝকঝকে চাঁদ উঠেছে। পূর্ণিমা
কাছাকাছি এসে গেছে বোধহয়, সকাল থেকে মীনাক্ষীর হাঁটু টনটন করছে। কিন্তু চাঁদের আলো
মীনাক্ষীর মনোযোগ টানতে পারল না। তাঁর চোখ গিয়ে পড়ল পড়শির বাগানে।
মীনাক্ষী দেখলেন তাঁর
স্বামীর বন্ধু, অখিল সাহার পিঠ চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে। পিঠটা একবার উঠছে একবার
নামছে। লোকটার হাতে একটা কোদাল। লোকটা মাটি কোপাচ্ছে। লোকটা কি পাগল? এই রাতদুপুরে
গাছ পুঁততে নেমেছে? কিন্তু গাছ পুঁততে গেলে কি অত মাটি খুঁড়তে লাগে? গর্তের পাশে সদ্য
খোঁড়া মাটির ঢিবি উঁচু হয়ে উঠেছে।
তার পরের আধঘণ্টা ধরে
মীনাক্ষী সান্যাল যা দেখলেন তাতে তাঁর ঘাড়ের রোঁয়া খাড়া হয়ে উঠল। তিনি একবার
ভাবলেন বিছানায় শোয়া তাঁর অঘোরে ঘুমন্ত স্বামীকে ডেকে তোলেন, কিন্তু ডাকতে গিয়ে
মীনাক্ষী দেখলেন তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ, পা দুটো যেন কেউ পেরেক দিয়ে মেঝের সঙ্গে
পুঁতে দিয়েছে।
পরের আটচল্লিশ ঘণ্টা সকাল
দুপুর বিকেল সন্ধ্যে সাহাদের বাড়ির দিয়ে ঠায় নজর রেখেও যখন নীলিমা সাহার
চিহ্নমাত্র চোখে পড়ল না, পুলিশে ফোন করলেন মীনাক্ষী সান্যাল।
*****
“আমি আপনাকে বলছি ইনসপেকটর,
নীলিমা কোথায় আমি জানি না।”
গত একঘণ্টায় অন্তত একশোতম
বার কথাটা বললেন অখিল সাহা। কিন্তু ইনসপেকটর টিকাদারের ওপর তার কোনও প্রভাব পড়েছে
বলে মনে হল না। পশ্চিমবঙ্গের মফস্বল থানার ইনসপেকটরের কথা মনে পড়লে যে চেহারাটা
কল্পনায় ভেসে ওঠে তার সঙ্গে ইনসপেকটর টিকাদারের চেহারার আশ্চর্য মিল। নিড়বিড়ে,
থলথলে। গোঁফ রেখে থুতনিহীন মুখে ব্যক্তিত্ব আনার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আজ
সকালে তাঁর চালচলনে অন্যরকম একটা ভারিক্কি চাল ফুটে বেরোচ্ছে। তাঁর থানায় বেশি কেস আসে না। যে’কটা আসে তার বেশিরভাগই তিনি
সমাধান করতে পারেন না। আজকের কেসটা সে রকমের নয়। ওপেন অ্যান্ড শাট। তিনি গম্ভীর
মুখে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের তল্লাশির নির্দেশ দিতে লাগলেন।
“আপনি কেন বিশ্বাস করছেন
না, আমি সত্যিই জানি না নীলিমা কোথায়।”
“এটা কি বিশ্বাস করার মতো
একটা কথা হল যে আপনার অ্যাদ্দিনের বিয়ে করা বউ হঠাৎ রাতারাতি উধাও হয়ে গেল আর
কোথায় গেল কখন গেল আপনি কিচ্ছু জানতে পেলেন না? তাছাড়া পাশের বাড়ির সান্যালরা যে
রাতে আপনাকে মাটি খুঁড়ে কিছু একটা পুঁততে দেখেছে সেটা তো সত্যি?”
“আপনার কি ধারণা আমি আমার
স্ত্রীকে মেরে বাগানে পুঁতে রেখেছি?”
ইনসপেকটর টিকাদার জবাব দেওয়ার
প্রয়োজন বোধ করলেন না।
“মিসেস সান্যাল স্পষ্ট
বলেছেন যে উনি আপনাকে দেখেছেন শেষরাত্তিরে বাগানের মাটি খুঁড়তে। গাছ পোঁতার গর্ত
নয়, বেশ বড় গর্ত। তারপর আপনি আপনার ওই গোয়ালঘরের দিকে যান এবং সেদিক থেকে একটা ছোট
ঠেলাগাড়ি - ইন ফ্যাক্ট, আপনার গোয়ালঘরের সামনে বর্ণনার সঙ্গে হুবহু মিলে যাওয়া
একটা ঠেলাগাড়ি আমরা পেয়েছি - সেটাতে চাপিয়ে একটা বস্তা নিয়ে এসে গর্তের মধ্যে
ফেলেন। বস্তাটা বেশ ভারি ছিল এবং মিসেস সান্যাল বলেছেন যে সেটাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে
গর্তে ফেলতে গিয়ে আপনি বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তারপর আপনি আবার
গর্ত মাটি দিয়ে বুজিয়ে দেন।
অখিল সাহা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“মিসেস সান্যাল ভুল দেখেছেন।”
“আজ্ঞে না। সেদিন ত্রয়োদশী
ছিল (ইনসপেকটরের স্পষ্ট মনে আছে সে রাতে হাঁটুটা বিষম ভুগিয়েছিল) আর ফটফটে জোছনায়
চারদিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। মিসেস সান্যালের চোখে কোনও সমস্যা নেই। উনি ভুল দেখেননি। তাছাড়া আপনার শোবার ঘরের দরজায় যে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে
সেটা কীসের?”
অখিল সাহার মাথা ঘুরতে
লাগল। নীলিমা থেকে তাঁকে সারাজীবন শান্তি দেয়নি, চলে গিয়ে এ কী সংকটে ফেলে গেল!
“আমি আপনাকে হাজারবার বলেছি
ওটা আমার রক্ত। আয়না ভেঙে গিয়েছিল, সেটা কুড়োতে গিয়ে গিয়ে আঙুল কেটে গিয়েছিল।”
ইনসপেকটর টিকাদার চোখ বুজে,
হাঁ করে অখিল সাহার যুক্তি নস্যাৎ করতে যাচ্ছিলেন এমন সময় এক ছোকরা হাবিলদার এসে
তাঁকে থামাল।
“স্যার, বাগানের গর্তটা
আবার খোঁড়া হয়েছে স্যার।”
“হয়েছে?” উত্তেজনায়
টিকাদারের অপ্রতুল গোঁফ কাঁপতে লাগল।
“একটা বস্তাও বেরিয়েছে।”
টিকাদারকে দেখে মনে হচ্ছিল
তিনি উত্তেজনায় ফেটে পড়বেন।
“আর বস্তা থেকে?”
ছোকরা কনস্টেবল মুখ
কাঁচুমাচু করে বলল, “একটা মরা বেড়াল বেরিয়েছে স্যার।”
“বেড়াল?” টিকাদার মুখ হাঁ
করলেন।
“কিন্তু স্যার, বেড়ালটার
মাথা এক্কেবারে থেঁতলানো স্যার।” ছোকরা কনস্টেবল যেন সান্ত্বনা দিতে চাইল ইনসপেকটর
টিকাদারকে।
কিন্তু টিকাদার বুঝে
গিয়েছিলেন, কেসটা তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। বেড়ালকে মাথা থেঁতলে খুন করার জন্য
কাউকে কোনও শাস্তি দেওয়া যায় না। শেষ চেষ্টা হিসেবে একবার কড়া চোখে অখিল সাহার দিকে তাকালেন
ইনসপেকটর টিকাদার। অখিল সাহা মাথা নিচু করলেন। বউ হারানোর খবর পেয়ে এতক্ষণেও তাঁর
মুখে যার ছায়ামাত্র দেখা যায়নি, বেড়ালের বডি আবিষ্কার হওয়ার পর তাই হল। অখিল সাহার
চোখেমুখে ফুটে উঠল শোক। সামান্য অনুতাপও।
“আসলে মাথাটা এমন গরম হয়ে
গেল। সবে পাতে নিয়ে বসেছি, অমনি মুখে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। এই এত বড় একটা গাদার
পিস।” ইনসপেকটর টিকাদারের মুখের সামনে পাঁচ আঙুল তুলে ধরে মাছের আয়তন বোঝালেন অখিল
সাহা।
এমন সময় কয়েকটা গলার শব্দ
শোনা গেল। অচিরেই গলার মালিকেরা দৃশ্যগোচর হলেন। দরজায় পাহারায় থাকা হাফপ্যান্ট
সঙ্গে করে পাশের বাড়ির সুধাংশু সান্যালকে নিয়ে এসেছে। সুধাংশু সান্যাল ইনসপেকটরের দিকে
এগিয়ে এলেন। অখিল সাহার চোখে চোখ না ফেলে গলাখাঁকারি দিয়ে বললেন, “ইয়ে, আপনার যদি তদন্তে
কোনও সুবিধে হয়, তাই একটা কথা বলতে এলাম। আপনি বোধহয় জানেন না, পাড়ার কেউই জানে
না, শেওড়াফুলিতে অখিলবাবুর একটা বাগান আছে। বছরকয়েক আগে কেনা।”
এই নতুন তথ্যে টিকাদারের
চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। অখিল সাহার দিকে উল্লসিত দৃষ্টি হেনে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন,
“অ্যাই, এখানকার খোঁড়াখুঁড়ি শেষ হলে শাবলকোদাল সব গাড়িতে তুলে নে, শেওড়াফুলি যেতে
হবে। আজ তবে চলি, অখিলবাবু? খুব শিগগিরি আবার দেখা হবে।”
গটগটিয়ে চলে গেলেন ইনসপেকটর
টিকাদার। সুধাংশু সান্যাল মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। খানিকক্ষণ চুপ করে
দাঁড়িয়ে থেকে ঘরের ভেতর চলে যাওয়ার আগে অখিল সাহা শুধু একবার বললেন, “আমি আর কোনওদিন
আপনার সঙ্গে দাবা খেলব না।”
*****
ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করতে করতে
সাদা রঙের বাড়িটার পেছন থেকে একটা ঠেলাগাড়ি বেরিয়ে এল। গাড়িটা দু’জন ঠেলছে। একজন চিমসে ধরণের, অন্যজন গাঁট্টাগোঁট্টা। গাড়ির ওপর একটা প্লাস্টিকে
জড়ানো একটা বস্তা। বেশ ভারি। দুজনে মিলে ঠেলতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে।
বস্তাটা গত আটচল্লিশ ঘণ্টা বস্তাটা সাদা বাড়িটার একতলার পেছনের স্টোররুমে রাখা
ছিল। সাহাদের ওপর নজর রাখতে গিয়ে নিজের বাড়ির ওপর নজরদারিতে ঢিলে দিয়েছিলেন মীনাক্ষী
সান্যাল।
অখিল সাহার বেশ ভয় হচ্ছিল
আওয়াজে মীনাক্ষী সান্যালের ঘুম না ভেঙে যায়, কিন্তু সুধাংশু সান্যাল নিশ্চিত ছিলেন
ভাঙবে না। যতখানি নিশ্চিত ছিলেন যে গত পরশু রাতে মাটি খোঁড়ার শব্দে ছুঁচোর ঘুম
ভাঙবে, ততখানিই। প্রায় একপাতা অ্যালজোলাম গুঁড়ো করে মিশিয়ে রেখেছিলেন তিনি জলের
জাগে। অখিল সাহার তাতেও ভয়। যদি ওভারডোজ হয়ে যায়?
“হলে হবে। ফোর্থ অ্যাটেম্পট
বলে চালিয়ে দেব। ডিপ্রেশনের ওই একটাই সুবিধে। একবার ধরলে সারাজীবনের মতো
নিশ্চিন্তি।”
দুই বন্ধু গাড়ি ঠেলে ঠেলে বাগানের
প্রান্তে এলেন। যেখানে তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল। দুজনেরই সামান্য নস্ট্যালজিক
লাগছিল। সেটা কাটাতেই হয়তো সুধাংশু সান্যাল বলে উঠলেন, “ব্যাটারা বেশ করে খুঁড়ে দিয়ে
গেছে। আমাদের খাটুনি হবে না।”
হলও না। প্লাস্টিকটাকে
ঠেলাগাড়ি থেকে নামিয়ে গর্তের মধ্যে ফেলে মাটি চাপা দিতে আধঘণ্টাখানেকের বেশি লাগল না।
তারপর দুই বন্ধু হাতপা ছড়িয়ে বসে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। খানিকক্ষণ পর সুধাংশু
সান্যাল বললেন,
“শেওড়াফুলির জমির কথাটা
পুলিশকে বলে দিলাম বলে রাগ করেননি তো?”
“প্রথমটা একটু . . .”
“জানেন তো, কোনও জিনিস
লুকোনোর সবথেকে ভালো জায়গা কী?”
অখিল সাহা বন্ধুর দিকে
তাকালেন।
“এক, যেখানে কেউ খুঁজবে না,
দুই, যেখানে লোকে অলরেডি খুঁজে গেছে। শেওড়াফুলির জমিটার ফাঁড়া কাটিয়ে রাখলাম। আর
বছরখানেক পর তো লাগবে।” আনমনা চোখে নিজের বাড়ির দোতলার দিকে তাকালেন সুধাংশু
সান্যাল। জানালার পাল্লা হাট করে খোলা। কেউ পাহারায় নেই।
“তাছাড়া আপনার জমি খুঁড়ে
দিয়ে তো উপকারই করে গেল, মশাই। এবার আপনি গিয়ে শুধু গাছ পুঁতবেন, ব্যস।”
অখিল সাহা বুকভরে শ্বাস
নিলেন। গোলাপি চাঁপার ওপড়ানো গাছটার দিকে তাকিয়ে বুকটা হু হু করে উঠল। প্রথমেই
একটা গোলাপি চাঁপার গাছ পুঁতবেন। খুব মৃদু একটা হাওয়া দিচ্ছিল। চাঁদের আলোয় ভেসে
যাচ্ছিল চরাচর। একটা রাতজাগা পাখি ডাকছিল কোথাও। অখিল সাহা বসে বসে গাছেদের কথা
ভাবতে লাগলেন। কী শান্তি, কী শান্তি।
হঠাৎ চমক ভাঙল। সুধাংশু সান্যাল
তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। একটা কিছু বলেছেন, যেটা অখিল সাহা শুনতে পাননি।
সুধাংশু সান্যাল আবার করলেন
প্রশ্নটা।
“বলছি, আপনি যে সকালবেলা বললেন,
আর কোনওদিন আমার সঙ্গে দাবা খেলবেন না, সেটা আশা করি সত্যি নয়?”
একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল।
অখিল সাহার দু’চোখ সরু হয়ে গেল, চোখের নিচের চামড়ায় অসংখ্য সরু সরু বলিরেখা দেখা
দিল, ঠোঁটজোড়া ছেতরে গিয়ে এবড়োখেবড়ো, পোকাধরা দু’পাটি নড়বড়ে দাঁতের সারি বেরিয়ে
পড়ল। তার পর একটা অদ্ভুত শব্দ শোনা গেল অখিল সাহার গলা থেকে।
জীবনভরের সমস্ত ভয় চুলোয়
দিয়ে, কেঁপে কেঁপে, দুলে দুলে হাসতে লাগলেন অখিল সাহা। যেন এত হাসির কথা তিনি
জীবনে আর শোনেননি।
গপ্পের প্রথম লাইনে। সাহা , সান্যাল হয়ে গেছেন।
ReplyDeleteঠিক করে দিচ্ছি, থ্যাংক ইউ।
Deletedarun hoeche onubad..tobe ektu predictable..ta to r tomar dosh noi..
ReplyDeleteধন্যবাদ, সঙ্গীতা। হ্যাঁ, গল্পটার শেষটা আন্দাজ করা শক্ত নয়, কিন্তু তাও আমার গল্পটা ভালো লেগেছিল খুব। তাই ভাবলাম বাংলায় লিখে ফেলি।
DeleteSanghatik !!! Durdanto laglo. khub bhalo hoechhe , ei galpo gulo ki je bhalo lekho, obosso gota
ReplyDelete'Abantor' tai darun. se chhobi ,lekha, galpo, adda... sobkichhui :-)
অবান্তরের বেস্ট পার্ট অবশ্য আপনি যেগুলো বললেন সেগুলোর একটাও নয়, সেটা হচ্ছে আপনার মতো পাঠকরা, ইচ্ছাডানা। আমার কপাল অত্যন্ত ভালো, এ কথা আমি জানি। গল্পটা আপনার ভালো লেগেছে এটা উপরি পাওনা। অনেক ধন্যবাদ।
DeleteTor ei onubad er obhyes ta anekdiner... Tai na? Bes mone ache amar, school a break a tui Jules verne er golpo bolti... Amar golpo gulo akhono mone ache..
ReplyDeleteতোর স্মৃতিশক্তির তারিফ না করে পারছি না, ভট্টা। তবে ওই গল্পগুলো আমি বাংলাতেই পড়েছিলাম। তখন অত ইঞ্জিরি পড়তে গেলে দাঁত ভেঙে যেত।
DeleteThis comment has been removed by the author.
DeleteAmar keno erakam bandhu chilo na je amake school er break e..Jules Verne er galpo bolbe!!:(:(
Deleteকি আশ্চর্য্য! আপনিও স্কুলে থাকতে জুলে ভার্নের বাংলা অনুবাদ পড়তেন নাকি, আর সেগুলো বন্ধুদের গিয়ে শোনাতেন? আমিও সেটাই করতাম। আমার দাদু এক ছাত্রের কাছ থেকে চেয়ে দিত বইগুলো, পুরনো বাঁধানো বই, কার অনুবাদ জানিনা।
Deleteহাই ফাইভ।
DeleteKhub bhalo lagle pore..
ReplyDeleteধন্যবাদ, তিন্নি।
Deletetomar anubad ta osadharon tobe golpotar quality ager anubad kora golpoguo r tulonay ektu niresh.. tumi ki adrish bardhan er translate kora jules verne gulo porte?
ReplyDeleteকোনও ধারণা নেই, চুপকথা। আমি লাইব্রেরি থেকে এনে পড়তাম, আদ্যিকালের বাঁধানো বই, ব্যবহারে ব্যবহারে মলিন হয়ে গেছে। অনুবাদকের নাম লেখা পাতাটা থাকত কি না সে নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। অবশ্য থাকলেও, আমি খেয়াল করিনি কখনও।
Deleteami portam mayer ek bondhur theke niye.. Asombhob boi pagol bari. Bohu purono boi kintu notuner moton jhok jhok korto. Jakge ei link ta nao. Chhotobelar smriti mone koriye dite pare.
Deletehttps://pdfbangla.wordpress.com/category/jules-verne/
আরে থ্যাংক ইউ, চুপকথা। কী ভালো লিংক।
Deleteঅ দিদিমণি, আপনি তো বড় সামান্য লোক নন।
ReplyDeleteঅবান্তরের পাতায় যতগুলো গল্প লিখেছেন, একবার পড়ে দেখুন দিকি। কি ভয়ানক সব গল্প। ঠান্ডা মাথায় খুন হল অধিকাংশ গল্পের প্রধান উপকরণ।
মশকরা করছি, গল্পটা খুবই ভালো হয়েছে। লিখতে থাকুন।
থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, দেবাশিস। আমি তো খুনের গল্পেই স্পেশালাইজ করব ভাবছি।
Deleteখুবই ভালো হয়েছে অনুবাদটা, বিশেষ করে যেভাবে কনটেক্সট টাকে এক্কেবারে বাংলা করেছেন সেটা নিখুঁত হয়েছে। গল্পটা একটু প্রেডিক্টেবল ঠিকই, কিন্তু সেটা তো আপনার হাতে নেই। চালিয়ে যান।
ReplyDeleteধন্যবাদ, সুগত।
Deletebro-mance erei kay...:D
ReplyDeleteযা বলেছেন, অনিরুদ্ধ। তাও আবার বুড়ো বয়সের কি না, তাই প্রভাবটা এত মারাত্মক হয়েছে।
Deletekhub bhalo laglo pore...tumi ei anubad guloi to book form e korte paro, anek beshi reader pore anondito habe :) Bratati.
ReplyDeleteদেখা যাক, কী হয়, ব্রততী। অনেকের কথা বাদ দাও, তোমার যে পড়ে ভালো লেগেছে, সেটাই যথেষ্ট। অনেক ধন্যবাদ।
Deletetomar lekha khub e bhalo laglo.. kintu asol golpo ta thik amar jomlona ebar... :( tumi to thriller specialist dekhchi...
ReplyDeleteধন্যবাদ, ঊর্মি। আশা করি পরের গল্পটা তোর ভালো লাগবে।
Delete"বছরদশেকের মধ্যে যারা কাটা পড়তে চলা মহীরুহের শাখাপ্রশাখারা ঘরে ফিরে আসা" - যারা extra hoye geche. Aar apnaar gappo extra daarun. khub bhalo legeche.
ReplyDeleteMajhe Majhe comment successful hoy na kyano bolun to?
থ্যাংক ইউ, চন্দ্রচূড়। কমেন্ট নিয়ে অসুবিধের কথা কিছুদিন ধরে কানে আসছে। কিন্তু আমার কোনও আইডিয়া নেই এ বিষয়ে। সাহায্য করতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
Deleteআপনার অনুবাদ সবসময়ই খুব ভালো হয়; এবারেও তাই হয়েছে। আপনার অনুবাদ পড়লে মনে হয় গল্পটা বাংলাতেই originally লেখা।
ReplyDeleteএকটা ছোট correction করতে চাই। দাবা খেলার queen এর অনুবাদ রানী নয়, মন্ত্রী হলেই ভালো; কারণ যে ঘুটিকে ইংরাজীতে queen বলে, বাংলায় সেটাকেই মন্ত্রী বলা হয়। ভালো জিনিষ নিখুঁত হওয়াই ভালো। আবার বলি গল্পটা খুব ভালো লেগেছে। Gautam Banerji
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, গৌতম। দেখেছেন, আমি যে বাগান আর দাবা দুটো বিষয়েই ক অক্ষর গোমাংস সেটা প্রমাণ হয়ে গেল। আমি ঠিক করে দিচ্ছি। আবারও অনেক ধন্যবাদ।
Deletedarun darun, sotti apni thanda mathar khuner golper specialist dekhchi...anubad jhuub bhalo hoyeche
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, প্রদীপ্তা।
Deletekodin ektu byasto hoye porechilam, aj somoy peye ek nishwase pore fellam.. tomar best genre, anubad golpo.. anek dhyanobad!
ReplyDeleteআরে আমাকে আবার ধন্যবাদ কেন কাকলি। ধন্যবাদ তো আমার দেওয়ার কথা। থ্যাংক ইউ।
Deletekhub valo onubad.. Satyajit Ray er vashar apni khub vokto seta bojha jay.
ReplyDeleteভক্ত বলে ভক্ত, হীরক? একেবারে অন্ধ ভক্ত। অনুবাদটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।
Delete