নেশা আর পেশা
উৎসঃ Lapham's Quarterly
প্রযুক্তিসংক্রান্ত
ব্যাপারে আমার অসীম অপদার্থতার জন্য ওপরের ছবিটা স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছেনা, ভালো করে
দেখার ইচ্ছে বা সময় থাকলে লিঙ্কটায় ক্লিক করুন প্লিজ।
ছবিটায় লেখা আছে
আমাদের অতি চেনা তাবড় তাবড় লেখকেরা লেখা ছাড়াও আর কী কী কাজ করতেন। অবশ্য কথাটা
ঘুরিয়ে বলাই উচিত, বলা উচিত জীবিকানির্বাহের জন্য আর কী কী কাজ করে তারপর তাঁরা লেখার
জন্য দুদণ্ড সময় বার করতে পারতেন।
হেনরি ফিল্ডিং ছিলেন
ওয়েস্টমিনস্টার আর মিডলসেক্সের ম্যাজিস্ট্রেট। চোরডাকাত খুনিদের ধরে ধরে জেলে
পুরতেন। মিস শার্লট ব্রন্টি ছিলেন গভর্নেস। বাঁদুরে বাচ্চাদের দেখভাল করা ছাড়াও
তাঁকে সেলাইফোঁড়াই কাচাধোয়া করতে হত। বদলে থাকাখাওয়া মিলত। আমাদের কাফকা সারাদিন
বসে বসে আইনি দলিল দস্তাবেজ ঘাঁটতেন, রিপোর্ট লিখতেন। সেসব রিপোর্টের আবার নাম হত “Measures for
Preventing Accidents from Wood-Planning Machines”। নাম শুনলেই হাই উঠে যায়
বাপরে। ফকনার ছিলেন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পোস্টমাস্টার। সারাদিন ধরে
ছাত্রছাত্রীদের ভুল বানান ভর্তি প্রেমপত্র ঝেড়েবেছে দিকদিগন্তরে পাঠানোর
গুরুদায়িত্ব পালন করতেন। এখানে একজনের কথা লেখা নেই, হার্পার লি। কোথায় একটা
পড়েছিলাম To Kill A Mockingbird লেখার সময় তিনি একটি এয়ারলাইন্সের অফিসে চাকরি করতেন
নাকি।
আমাদের বাংলাসাহিত্যেও এরকম উদাহরণ আছে ভূরিভূরি। তাঁদের নিয়ে কেউ এত সুন্দর
করে চার্ট ছাপেনি এই যা। রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন, তাও আবার পড়তি জমিদার। চারদিকে
ছুটে ছুটে তাঁকে সে জমিদারির শতছিদ্রে তাপ্পি মেরে বেড়াতে হত। বনফুল ডাক্তারি
করতেন। জরাসন্ধ ছিলেন জেলর। আশাপূর্ণা দেবী ফুলটাইম গৃহিণী। রাজশেখর বসু দিনভর
বেঙ্গল কেমিক্যালসের সবদিক সামলাতেন আর বাড়ি ফিরে হয় 'ভুশণ্ডীর মাঠে' নয়ত 'চলন্তিকা' লিখতেন। আরও কত বলব।
এটা মোটামুটি বাজি রেখে বলে দেওয়া যায় এঁদের সবারই নিজেদের ডে জবের থেকে
লেখালিখি করতেই বেশি ভালো লাগত। দায়সারা করে আর যাই হোক, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ লেখা
যায়না। সারাদিন রান্নাঘরে, কলতলায় ব্যস্তপায়ে ঘোরাঘুরি করতে করতে, স্বামীর জামা
ইস্তিরি করতে করতে, ছেলেপুলের টিফিন বানাতে বানাতে মন পড়ে থাকে সত্যবতী নামের সেই অসাধারণ
মেয়েটির পায়ের কাছে। কখন কাগজ পেন নিয়ে একটু নিরিবিলি বসার ফুরসত হবে, কখন মনের
মধ্যে ক্রমশ জ্যান্ত হয়ে ওঠা চরিত্রটাকে পাতার ওপর কালিকলমে মূর্ত করে তোলা
যাবে, কখন তৈরি হবে ইতিহাস।
হয়ত ডে জবগুলো এঁদের সৃষ্টির কাজেই লেগেছে। সংসারের সঙ্কীর্ণ সীমার ভেতর-বাইরের
দৈনন্দিনতায় মানুষকে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। কতরকমের মানুষ, চারপাশের
প্রকৃতি পরিবেশের সাথে তাদের কতরকমের আদানপ্রদান, কতরকমের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া,
কতরকমের বাঁচামরা। সে দেখা তো আর পাঁচটা লোকের মত ওপরওপর চোখ মেলে দেখা নয়, শল্যচিকিৎসকের
মত ছুরিকাঁচি স্ক্যালপেল নিয়ে একেবারে বুকের ভেতর সেঁধিয়ে গিয়ে সত্যটুকু চিরে বার
করে আনা।
কিন্তু তারপর? যতক্ষণ না সে সত্যকে নিজের অভিজ্ঞতা আর কল্পনার সাজ পরিয়ে কালির
অক্ষরে বন্দী করা যাচ্ছে ততক্ষণের যন্ত্রণাটা ভাবতে পারছেন? মাথার ভেতর লেখা তৈরি
হয়ে আঙুলের ডগায় এসে থমকে আছে, আর আপনাকে সে আঙুলের মুখে লাগাম পরিয়ে Measures for
Preventing Whatever টাইপ করে যেতে হচ্ছে, কিংবা রোগীকে ইনজেকশন দিতে হচ্ছে, নয়ত বসে বসে মেয়ের
জামার ছেঁড়া বোতাম সেলাই করতে হচ্ছে?
ভয়াবহ।
কিংবা ওই যন্ত্রণাটাও হয়ত সাহায্যই করে, কে জানে। অপেক্ষা করতে করতেই হয়ত মাথার
ভেতরের শব্দগুলো আরও ধারালো, আরও মায়াবী, আরও সত্যি হয়ে ওঠে। সেই পুড়ে পুড়ে
সোনা খাঁটি হয় বলে না, সেইরকম। কাফকাকে জিজ্ঞাসা করার সাহস হত না---ভয়ানক রাগী
রাগী দেখতে, কিন্তু আশাপূর্ণা দেবীকে হাতের কাছে পেলে জিজ্ঞাসা করে দেখা যেত।
lekhak ba lekhika hoya ta tow agey ekta pesha chilo na, tai lekhar sange sange sadharanto ekta "day job" thakto.
ReplyDeleteaajkal jader boi bhalo katchey tara pesha chere (a la chetan bhagat) boi lekhe!
tai ager lekhok gon der CV dekhle praye sabar e day job pabe. jemon premchand sub inspector of schools chilen....united provinces er literacy report toiri korten.
someone as recent as rushdie, ad agency te cream cracker aar cream cake er ad likhten.
emonki kautilya je arthashastra likhchilen, tanr o tow rajdarbar e ekta day job chilo :))
ওহ, এতদিনে বুঝলাম ক্রিমক্র্যাকার খেতে আমার এত ভালো লাগে কেন।
Deleteতুমি ঠিকই বলেছ শম্পা। আগে তো আর লাখ লাখ টাকার বুক-ডিল হতনা। কাজেই চাকরি ছাড়া গতি থাকত না। তবে সেটা একদিক থেকে ভালোই হত বোধহয়। চাকরিটা যেমনতেমন করে সেরে ভালো করে লিখতে পারতেন। এখন তো বই লেখাই চাকরি, কাজেই যেমনতেমন করে লিখে দিচ্ছে সবাই। (এটা একটু 'আমাদের সময়ে সব ভালো ছিল' গোছের মন্তব্য হয়ে গেল, কিন্তু তুনি নিশ্চয় বুঝেছ আমি কী বলতে চাইছি।')
ageo kichu jonogon chakri na kore paar peye jeten. jemon bouddhya bhikkuni mutta.
Deleteuni sadharon ghorer chilen, sangsar er haar bhangano khatni aar swami'r atyachar theke paliye bouddhya dharma niye, sanghe chole jaan.
pali te ei kobita ta lekhen:
So free am I, so gloriously free, ding dong ding
Free from three petty things,
From mortar,
from pestle,
and from my twisted lord,
ding dong ding
আহ, কবিতাটা শুনলেই মনে হচ্ছে না স্বাধীনতার আনন্দ ঝরে ঝরে পড়ছে? বাঁচতে হলে পালিয়েই বাঁচতে হয় বোধহয়। খুব সুন্দর একটা সত্যি গল্প বললে শম্পা। থাঙ্ক ইউ।
Deletekobita ta around 500 BC te lekha...acc. to buddhist sangha literature, mutta was contemporary of gautam buddha.
Deleteওরে বাবা, অনেককালের কথা তো।
Deleteভাবনাটা ভালো লাগলো-:)
ReplyDeleteওহ, থ্যাঙ্ক ইউ সংহিতা।
DeleteJaak tahole amaro "rochonaboli" lekhbar ekta chance ache :)
ReplyDeleteরীতিমত আছে রিয়া।
Deleteকোনান ডয়েল ডাক্তার ছিলেন, আর লুই ক্যারল অঙ্কের প্রফেসর | তাই ভাবি, ইন্টারনেটটা না থাকলে আমিও কত কিছু করে ফেলতে পারতাম... কিন্তু এখন আর উপায় নেই| ইউটিউবের পাল্লায় পড়ে গেছি!
ReplyDeleteযা বলেছেন। ওই হতচ্ছাড়া ইউটিউব-ই যত নষ্টের গোড়া।
Delete