Trash Talk




ছবি গুগল ইমেজেস থেকে


উটকো ঝামেলা কাকে বলে জানেন? যখন হঠাৎ না বলে কয়ে কর্তৃপক্ষ আপনার জঞ্জাল-সংগ্রাহক বদলে ফেলেন। আগে যিনি আসতেন তাঁর সাথে বেশ মুখচেনা হয়ে গিয়েছিল। ঘটঘটে গাড়ির শব্দ পেলে আমরা জানালা ফাঁক করে হাতটাত-ও নাড়তাম। দিব্যি হাসিখুশি মোটাসোটা ভদ্রলোক। দিন তিনেক হল তিনি আসছেন না। তাঁর জায়গায় যিনি নতুন আসছেন তাঁকে এখনও আমরা কেউ চোখে দেখিনি। তিনি কখন আসেন, কখন যান ভগবানই জানেন। একদিন সকালবেলা ট্র্যাশ বার করে দিলাম, বিকেলে ফিরে দেখি সে যেখানে থাকার সেইখানে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে। প্রতিবেশী বললেন সকালে গাড়ি নাকি অলরেডি চলে গেছিল। পরের দিন সাতসকালে ট্র্যাশ বার করে দিলাম। বিকেলে শুনলাম সেদিন গাড়ি আসেইনি। মানে আমাদের জঞ্জাল-রুটিনের একেবারে দফাগয়া যাকে বলে।

এইধরণের ঝামেলাগুলো হচ্ছে বিশুদ্ধ উটকো ঝামেলা। জীবনমরণ নয় একেবারেই, কিন্তু আবার হাত নেড়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়। সারাদিন মাথার এককোণে বসে কুটুস কুটুস কামড় মারার মতো। মোড় ঘুরে ডাস্টবিনটা চোখে পড়া মাত্র অফিস থেকে পালিয়ে আসার আনন্দ, গোটা না হলেও, হাফ মাটি। মুখ তেতো। ভুরু পার্মানেন্ট সেকেন্ড ব্র্যাকেট। “লোকটাকে একবার হাতের কাছে পাই তো ঝেড়ে কাপড় পরাই” গোছের প্রতিশোধ কল্পনায় সারাদিন কাবার।

তিনদিন ট্র্যাশ কোলে নিয়ে বসে থাকার পর অবশেষে সবার দরজায় নোটিস ঝুলল। পরদিন সকালে পাহারায় থাকা হবে। লোকটাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে যে কাদের ল্যাজে পা দিয়েছে ও। সব বাড়ি থেকে একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে হবে। তাতে প্রতিনিধির অফিস লেট হয় হোক।

অগত্যা সকালবেলা জামাজুতো পরে একেবারে রেডি হয়ে পাহারায় গেলাম। যাতে লোকটাকে ঝেড়ে কাপড় পরানো হয়ে গেলেই ছুটে ঘরে ফিরে এসে ব্যাগ নিয়ে অফিসে বেরোতে পারি।

বেরিয়ে আমার চক্ষুস্থির। প্রায় মেলা বসে গেছে। বেশির ভাগ বাড়ি থেকেই একের বদলে দুজন প্রতিনিধি এসেছেন। কোন কোন প্রতিনিধি স্ট্রোলার চড়ে প্যাসিফায়ার মুখে নিয়ে এসেছে, তাদের থেকে লম্বায় একটু বড়রা ক্যাবেজপ্যাচ আর স্টাফড স্টেগোসর‍্যাস বগলদাবা করে বেরিয়েছে। স্কুলবাস আসারও এটাই সময়। সবমিলিয়ে পাড়া সরগরম।

সব প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিনিধিরা ঘুরে ঘুরে একে অপরের সাথে আলাপ করছেন। আমার দূরে দাঁড়িয়ে থাকাটা ভালো দেখায় না। কাজেই নার্ভাস হাসি মুখে সেঁটে ভিড়ের দিকে এগোলাম। কুশল বিনিময় হল, জঞ্জাল পরিস্থিতি নিয়ে মাপমতো হাহুতাশ-ও হল। অবশেষে প্রবল ঘটঘট শব্দ সহযোগে মোড়ের মাথায় দুষ্কৃতীর আবির্ভাব ঘটল। আমরা সবাই সুসংবদ্ধ সৈন্যদলের মতো ধীরেধীরে তার দিকে এগোতে লাগলাম।

আর তক্ষুনি আমাকে স্ট্রাইক করল ব্যাপারটা। আমি অবশেষে বড় হয়ে গেছি। বাবাকে দেখেছি এরকম পাড়ার জেঠুকাকুদের সাথে দল বেঁধে সমস্যার সমাধান করতে যেতে। পাড়ার সমস্যা, মিউনিসিপ্যালিটির সমস্যা। জল আসছেনা, কারেন্ট থাকছেনা, ফোন ডেড, রোজ রাতে কারা এসে সবার ছাদের অ্যান্টেনা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে---সমস্যার আর শেষ নেই। বাবার কথা মনে পড়তেই আমার কাঁধদুটো সোজা হয়ে গেল, বুকটা টানটান হয়ে গেল, গোড়ালি আত্মবিশ্বাসের সাথে ফুটপাথে খটাখট আওয়াজ তুলতে লাগল। নিমেষে আমি নিড়বিড়ে কুন্তলা থেকে সমাজের একজন হোমরাচোমরা ব্যক্তিতে পরিণত হলাম।

অবশ্য দুষ্কৃতীকে দেখে আমাদের প্রতিশোধস্পৃহায় বরফজল পড়ল। এ ভদ্রলোক আগের ভদ্রলোকের চেয়ে আরও বেশি মোটা, আরও বেশি হাসিখুশি। আমরা কিছু বলার আগেই তিনি গাড়ি থেকে নেমে এসে ক্ষমা-টমা চেয়ে একাকার করলেন। বললেন কী সব নাকি অফিসিয়াল ঝামেলা চলছিল শিফট-টিফট নিয়ে, সেই গোলমালেই এ’কদিন পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটেছে। আজ থেকে আবার সব অবিকল আগের মতো চলবে।

প্রচুর সরি, থ্যাঙ্ক ইউ, নেভার মাইন্ড, করমর্দন, পিঠচাপড়ানির পর সৈন্যদল ছত্রাকার হতে শুরু করল। আমি আমার নবলব্ধ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। মা দরজার কাছে উৎকণ্ঠিত মুখে অপেক্ষা করছিলেন। আশ্বাস দিয়ে বললাম, আরে সরকারি ব্যাপার বোঝোই তো। যে যার খুশিমতো চলছে আরকি।

বাবা ঠিক যেমন করে বলেন।

*****

পুনশ্চঃ কাল বাড়ি ফিরে আবিষ্কার করলাম নেট কানেকশন নেই। লাখখানেক ফোন করে পরিস্থিতি কোনমতে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তবে যে কোন মুহূর্তে আবার যেতে পারে।

ভাবছি বাবাকে ফোন করে বলি ক’দিন ঘুরে যেতে।

Comments

  1. lekhata daruun sweet hoechhe... end ta aro sweet... amadero parar ghono ghono load shedding er por CESC r gari elei parar jethu kakura [including amader barir 3 sample] jhapiye pore tader nana rokom upodesh dito... kon khan ta khure kar line kar gaye pechiye dilei je somosya ta jolobot-torol somadhan hobe tar i nana suggestion arki !! ar kakima der ektai utkonthito proshno är kotokhhon?"

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্ক ইউ সোহিনী। আরে আমাদের সব বাবা কাকাদেরই এক রা। আর পরামর্শ দেওয়ায় পি এইচ ডি।

      Delete
  2. Ha ar mati kothay kothay koto ta katlo setaro hisheb neya hoy. Abar kothay katle, electric er line bachate jol er line kata porbe, sesob o chilo. Telephone er line niyeo moha jhamela sob!

    Amader trash niye jaye bhor raat e, tai take dekhbar kono sujog hoyni. Recycle je nite ashe take amra dekhechi. Boro ekta truck theke robotic arm beriye eshe gobda gobda recycle bin gulo ke puro ulte fele dhele naye! Arnab ar amader pasher barir kaku'r (actually dada bola uchit, je Kedo namok moha-Hulo'r baba) joto golpo-alapcharita to trash ber korbar somoyei hoy :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. যা বলেছ রিয়া, ট্র্যাশ হল গিয়ে গ্রেট কনভারসেশন স্টার্টার।

      Delete
  3. আমি তো এপার্টমেন্টএ থাকি, তাই ঐভাবে ময়লা ফেলার ব্যাপার নেই| একটা আস্তাকুঁড় আছে, সেইখানে ময়লা ফেলে দিয়ে এলেই মিউনিসিপালিটির গাড়ি এসে নিয়ে যায়| আর মাঝে মাঝে আমি সেখান থেকে লোকের ফেলে দেওয়া টেবিল, সেল্ফ, কম্পিউটার মনিটর, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি তুলে আনি| আমি আগে যে বাড়িতে থাকতাম সেখানে অবশ্য দিন-ক্ষণ দেখে ময়লা ফেলার ব্যাপার ছিল| সেখানে একবার আমাদের গার্বেজ বিনে কারা একটা মরা বেড়াল ফেলে দিয়ে গেছিল, কিন্তু সে গল্প আরেকদিন বলা যাবে নাহয়|

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য আস্তাকুড় = সোনার খনি।

      Delete
  4. Ami ekbar ekta graduate student ke astakur theke jhere jhere cushion tulte dekhechilam. Rather, cushion tule jharte dekhechilam...dekhe khub hashi peyechilo :D :D

    Amader dorm er meye der modhye ekta khub bhalo protha chhilo. Dhoro ekta jeans, noshto hoyar kichu nei, bochhorer por bocchor chole, ba microwave oven, moshla-pati, bicycle, eshob amra je kono ekjon ke diye jetam. Shey abar dorm chharar agey arekjon ke diye jeto. Shampoo/cream etc gulo use korar moto na holey amra chhele der diye ditam (!). Tai amader second hand jinish holeo ekebare astakur theke tulte hoto na.

    Tachara amra meyera clothes exchange party kortam, tarpor ekjon goyna banato...eisob diyei chole jeto. :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাদের ডর্মেও লাউঞ্জে একটা ফ্রি টেবিল ছিল। সেখানে সবাই উত্তরাধিকার রেখে যেত, আমি একবার ওখান থেকে একটা ফোন সেট নিয়ে এসেছিলাম। অনেকদিন চলেছিল সেটটা।

      Delete
  5. arre eta sudhu Graduate Student der trend noy, on-site kaj korte jawa public o erom unused jinis pass-on kore... amar bor [Saugata] to ferar somoy non-stick cookware er set, jabotiyo moshla pati, basmati chaal, dal theke suru kore istiri ta porjonto diye elo..
    amar ki afshosh hoechilo for Pepper-Cheese ar kitchen towel er roll tar jonyo [edeshe oto bhalo quality ar thick tissue paper ami dekhini]...
    and this is justified i think, pound khorcha kore kena jinis dustbin e felte jawar aage poitrik pran ta beriyeo jete pare aamar...tar theke eii bhalo..

    ReplyDelete
    Replies
    1. নানা পৈতৃক প্রাণ বেরোনোর থেকে সবই ভালো সোহিনী।

      Delete

Post a Comment