বিয়ের মজা
আমার বিয়ের খবরটা বলার পর
একেকজনের কাছ থেকে একেকরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। বেশিরভাগ চেনা লোকজনই, “বাঃ খুব
ভালো খবর, অভিনন্দন” ইত্যাদি বললেন; স্কুলজীবনের বেস্টফ্রেন্ড স্বাতী ফোঁস করে
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে “ফাইন্যালি” বলল; আমার বাবার পিসি ডুকরে উঠে “আহা, দাদা দেখতে পেল
না গো...” বলে কান্না জুড়লেন; আর বড়মাসি ফোনের ওপার থেকে চিৎকার করে বলতে লাগলেন,
“বলেছিলাম কি না? অ্যাঁ? আমি বলেছিলাম কি না? তোমরা তো কিছুই মানোটানো না, এখন
বিশ্বাস হল তো?”
আমার বড়মাসি ভয়ানক
ধর্মপ্রাণ মানুষ। তাঁর গুরুভক্তি দেখার মতো। পূর্ণিমা, অমাবস্যা, একাদশী, সাড়ে
পঞ্চমী, পনে চতুর্থী এইসব নানারকম তিথি, পাঁজি থেকে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে বার করে,
মাসি গুরুসেবা করেন। বেহালার বেস্ট দোকানের বেস্ট মিষ্টির জাম্বো প্যাকেট নিয়ে
গুরুদর্শন করতে যান। গুরুপূর্ণিমাটুর্নিমা পড়লে মিষ্টির প্যাকেটের সাইজ বাড়ে,
সঙ্গে তসরের ধুতি পাঞ্জাবি ইত্যাদিও যোগ হয়। গুরুও মাসিকে খুবই স্নেহ করেন।
মাঝেমাঝেই অন্য শিষ্যশিষ্যাদের লুকিয়ে মাসিকে এক্সট্রা আশীর্বাদ পাঠিয়ে দেন।
ন’মাসে ছ’মাসে সশরীরে মাসির বাড়িতে পদধূলিও দেন এবং গাওয়া ঘিয়ে ভাজা লুচি পরোটা
পায়েস মিষ্টি খেয়ে মাসিকে ধন্য করেন।
গত তিনচার বছর ধরে বড়মাসি
মাকে ক্রমাগত তাড়া দিচ্ছিলেন। বাড়িতে একটা স্বস্ত্যয়ন গোছের কিছু করানোর জন্য।
মাসির গুরুর নিজের হাতে করা যজ্ঞে নাকি কুষ্ঠরোগীর নিরাময় হয়, বন্ধ্যার সন্তান হয়,
ছেলের টিসিএস-এ চাকরি হয়।
“আর তোমার মেয়ের বিয়ে হবে
না?”
মা কীভাবে এই অসাধ্যসাধন
করলেন জানি না, কিন্তু “হ্যাঁ হ্যাঁ দিদি, এই তো করছি করব” বলে লাঠিসোটা ও গুরুদেব
সহযোগে বাড়িতে চড়াও হয়ে যজ্ঞ বাধিয়ে বসা থেকে মাসিকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। শেষের দিকে
বড়মাসিও রেগে গিয়ে আর কিছু বলতেন না। পরের ভালো যে করা যায় না, অবশেষে এ বোধোদয়
মাসির হয়েছিল। হঠাৎ অনেকদিন পর, এই ক’মাস আগে মাকে ফোন করে মাসি নাকি জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমার মেয়ের ‘অ’ দিয়ে নাম শুরু হয় এমন কোনও বন্ধু আছে?”
খেয়াল করে দেখেছি, আমাদের
বাড়িতে একটা গোটা প্রজন্মের লোক ‘প্রেম’ এবং ‘প্রেম’সংক্রান্ত সমস্ত বাংলা শব্দ
অতি সতর্কতায় এড়িয়ে চলে। প্রেমকে “ভাব” এবং প্রেমিক/প্রেমিকাকে “বন্ধু” বলে চালায়।
অর্থাৎ কি না, “কিরে শিবু, তোর ছেলের কোনও ক্লাসমেটের সঙ্গে
ভাব-টাব হল নাকি?” এই রকম ভাবে কথাবার্তা চালাতে থাকে। আপনাদের বাড়িতেও হয় এরকম?
মা ততদিনে অর্চিষ্মানের খবর
জেনে ফেলেছেন। ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, “আমি তো জানি না দিদি, কেন গো?”
মাসি বললেন, “গুরুদেব আমাকে
স্বপ্ন দিয়েছেন, তোমার মেয়ের অ আদ্যক্ষরের নামের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হবে দেখো।”
গুরুদেবের ধক আছে, মানতে
হবে কিন্তু।
যাই হোক, বড়মাসি বিয়ের খবর যত
না খুশি হলেন, তাঁর গুরুদেবের ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছে শুনে তার তিনডবল বেশি খুশি
হলেন।
আর কিছু লোক, এই যেমন
সুমন-দোলন-টুনা-মনা-বকুদি-ছোটনদি-পার্থদাদা-সুজাতাবৌদি-মনুদাদা-মামণি-তাতা-তোতন-টুবাই-বোটন
শুরুতে কিছু বলল না। চুপ করে রইল। তারপর ভীষণ স্লো মোশনে তাদের মুখে একটা সরু হাসি
ফুটে উঠল। সে হাসি, এই এতদিন বাদে মনে পড়লেও আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
তারপর তারা আমার তিন ইঞ্চি কাঁধে বিরাশি সিক্কার একটা থাপ্পড় মেরে বলল, “ফাটিয়ে
মজা হবে কিন্তু, বল্ সোনা?”
বিয়েবাড়ির মজা নিয়ে আপনার
অভিজ্ঞতা কী আমি জানি না। আমার যাকে বলে মর্মান্তিক। বলাই বাহুল্য, আমার সব
অভিজ্ঞতাই দর্শকাসন থেকে দেখা। কিন্তু যেটুকু দেখেছি তাতে এটুকু বেশ বুঝেছি,
অন্যদের মজার সঙ্গে বরবউ বেচারির বিপদের সম্পর্ক ইনভার্সলি ডিরেক্টলি প্রোপোরশনাল। হোস্টেলে
থাকতে ক্যাম্পাসের পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিয়ে হতে দেখেছি। বিয়ে মানে বিয়ের মিছিল।
যাদের নেমন্তন্ন করা যেত না তাদের সুবিধের জন্যই বোধহয়, রিং রোড জুড়ে কাড়ানাকাড়া
আর সিন্থেসাইজার বাজিয়ে বিরাট মিছিল বেরোত। আমরা ধাবার সিংহাসন ছেড়ে এসে রাস্তার
পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে দেখতাম। একদল লোক উদ্দাম নৃত্য করতে করতে চলেছে, চারদিকে
লালগোলাপি আবির উড়ছে, মাঝেমাঝে আতসবাজি হুস্ করে আকাশে উড়ে গিয়ে রংবেরঙের ফুলের
বাগান হয়ে যাচ্ছে, আর এই সবের মধ্যে বরবাবাজী একটা ধপধপে সাদা উঁচু ঘোড়ার পিঠে
চেপে, তিনটে রোগা রজনীগন্ধার মালার আড়ালে প্রাণপণে মুখ লুকোনোর চেষ্টা করতে করতে,
হেলতেদুলতে চলেছেন।
অত শব্দ, অত আলো, অত
চেঁচামেচির মধ্যেও, সবার চোখ সবার আগে বরের ওপরেই গিয়ে পড়ত। নিষ্ঠুররা হ্যা হ্যা
করে হেসে বলত, “মালটাকে দেখ্...”, দয়ালুরা বলত, “আহারে, বেচারার কী অবস্থা।” আর
আমার মতো যারা নিড়বিড়ে ভিতু, সেকেন্ড হ্যান্ড এমব্যারাসমেন্টে তাদেরই প্রাণ
বেরোনোর জো হত।
কী ভাগ্যিস্ বাঙালিরা
বাকিদের দেখাদেখি ঘোড়া ব্যাপারটা বিয়েতে আমদানি করে বসেনি। বর বা বউকে বাড়িতে
প্রথমবার অভ্যর্থনা করার সময় অবশ্য ব্যান্ডপার্টির চলটা ইদানীং বাড়ছে। আমার
লতাপাতা ফ্যামিলিতেই দু’বার এ ঘটনা ঘটেছে। দু’বারই ব্যান্ডের সঙ্গে নাচার জন্য
আমাদের হোল ফ্যামিলির নেমন্তন্ন ছিল, কিন্তু আমরা দু’বারই ডাক্তারখানার দোহাই দিয়ে
ব্যান্ডপার্টির সময় পেরিয়ে তারপর বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম।
তবে ব্যান্ডের সামনে নাচা
ছাড়াও আরও অনেক অদ্ভুত বিষয়ে লোকে মজা পায়। যেমন ধরুন শয্যাতুলুনি। একজন সম্পূর্ণ
অচেনা বা আধচেনা লোকের থেকে পাঁচশো টাকা বেশি আদায় করার জন্য কিছু লোক এমন করতে
থাকেন, যে বাজার করতে গিয়ে তাঁরা দোকানির সঙ্গে কী করেন, ভেবে আমি হাঁ হয়ে থাকি। এবং লোকে মুখ যতই
হাসিহাসি করে রাখুক না কেন, আসলে হাসির আড়ালে পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর হয়ে থাকে।
দু’পক্ষের ইগোর লড়াই বেধে যায়। বান্টির কোন মামাতো ভাইয়ের পিসতুতো দাদার জামাইবাবুর
মেসোমশাইয়ের নাতনির বিয়েতে নাকি শয্যাতুলুনি নিয়ে মারামারি লেগেছিল। বান্টির আবার এবিষয়ে বেশ
জ্ঞানগম্যি আছে দেখলাম। বলল,
-টাকা চাওয়ার একটা কায়দা আছে। আনাড়ির মতো দাও দাও
করলে হবে না। ধর তুমি দশ হাজার টাকা হাতাতে চাও...
-দশ হাজাআআআআর?!
বান্টি আমার অজ্ঞানতা দেখে
বেঁকা হাসে। বলে আমি নাকি এখনও প্রস্তরযুগে পড়ে আছি। লোকে নাকি পঞ্চাশ ষাট হাজারও
শয্যাতুলুনি নেয় এবং দেয়।
আমি হাঁ করে আছি দেখে
বান্টি নিজেই নিজের গল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। বলে, ট্রিকটা হচ্ছে গিয়ে তোমার যত
টাকা চাই, তার অনেক বেশি থেকে দর হাঁকা শুরু করা। দশ হাজারে যদি মন ভরে, তাহলে
প্রথমেই বলতে হবে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাই। আবার যদি পঞ্চাশ হাজারের কমে না পোষায়,
তাহলে হাঁকাহাঁকি মিনিমাম লাখখানেক থেকে শুরু করতে হবে।
যাই হোক, বান্টির সেই
মামাতো ভাইয়ের পিসতুতো দাদার জামাইবাবুর মেসোমশাইয়ের নাতনির বিয়েতে তো নতুন
জামাইকে বিয়ের পরদিন সব শ্যালকশ্যালিকারা গিয়ে ছেঁকে ধরেছে। তাদের মা বাবা পিসি
কাকিমারা দরজার বাইরে থেকে তাদের গাইড করছেন, কতখানি মোচড় দিতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে
টিপ্স্ দিচ্ছেন। বর বেচারা এদিকে বাথরুম যেতে পারছেনা, চশমা জুতো সব লুকিয়ে
রেখেছে...সে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। বরের বন্ধুরা বরের হয়ে দরাদরি করছে।
এই করতে করতে পরিস্থিতি
ক্রমে যে কখন গরম হতে শুরু করেছে কেউ টের পায়নি। এদেরও ক্লান্তি নেই, ওদেরও না।
কেন টাকা দেবে না, কেন দেব, কত দেবে, এত কেন দেব, এইসব হতে হতে বেলা গড়িয়ে সূর্য
প্রায় মাথার ওপর উঠে গেছে। তারপর হঠাৎ এপক্ষের কেউ বরের বংশশুদ্ধু লোককে “কিপটের
ঝাড়” না কী একটা বলে গালি দিয়েছে, আর অমনি বরের এক আধপাগলা খুড়তুতো ভাই ধুতিটুতির
পরোয়া না করে, “তবে রে” বলে দিয়েছে ঝাঁপ।
তারপর কী হয়েছিল সেসব নাকি
বান্টির স্পষ্ট মনে নেই, ও নাকি তখন খুব ছোট ছিল, কিন্তু এটুকু মনে আছে ভয়ানক
হল্লা হয়েছিল, ভাড়াবাড়ির বালিশতোষক সব ফেটে সারাঘর তুলোয় তুলোময় হয়ে গিয়েছিল,
শ্যালিকারা ত্রাহি চিৎকার করে কেঁদেছিল আর শ্যালক, বরের বন্ধুরা মায় বরও নাকি
বৌভাতের দিন নাকে লিউকোপ্লাস্টার সেঁটে ঘুরছিল।
অথচ, ওই বিয়েটা নাকি
বান্টিদের ফ্যামিলির ইতিহাসে, সব থেকে আনন্দের বিয়ে বলে স্থান পেয়েছে।
লেখাটা ভীষণ বড় হয়ে যাচ্ছে,
কিন্তু আরেকটা মজার কথা না বললে আমার নিজের মজা অর্ধেক মাটি হয়ে যাবে। কাজেই না
বলে ছাড়তে পারছি না।
মালাবদল আর শুভদৃষ্টির সময়
মেয়েকে যে পিঁড়িতে চাপিয়ে বরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়, আমার চেনা অনেকেই বলেছে,
ওইটাই নাকি বিয়ের বেস্টেস্ট মজা। ওর কাছে নাকি শয্যাতুলুনির উত্তেজনাও পানসে। নিজের বিয়ে কাছে
এসে গেছে বলেই কি না জানি না, টুনার বিয়ের সময় আমি ভালো করে দেখলাম ব্যাপারটা।
মজাটা কোথায় সেটা ধরার চেষ্টা করলাম।
একটা বড় হলে মালাবদল,
শুভদৃষ্টি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতক্ষণ সবাই এদিকওদিক কফি আর চিকেন
টিক্কা খেয়ে বেড়াচ্ছিল কিন্তু মালাবদলের খবর শুনে সবাই ওই হলে এসে ভিড় করল।
গিজগিজে ভিড়। আমি বুদ্ধি খাটিয়ে অনেক আগে থেকেই গিয়ে একটা চেয়ার দখল করে বসেছিলাম,
কিন্তু বুঝলাম বসে বসে ও জিনিস দেখার আশা করাই অন্যায়। কিন্তু ততক্ষণে বন্যার মতো
লোক ঢুকে পড়েছে ঘরে। ভিডিওগ্র্যাফার তার আলো-ধরা স্যাঙাতকে সঙ্গে নিয়ে প্রবল
বিক্রমে ঘরের মধ্যে বাঘের মতো পায়চারি করছেন, নিমন্ত্রিতদের রীতিমতো কনুইয়ের গুঁতো
আর ধমকানি দিয়ে সরিয়ে জায়গা করছেন। আমি বেগতিক দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে এগোনোর চেষ্টা
করলাম, কিন্তু বৃথা চেষ্টা। আমার আগে সবাই গোল করে দাঁড়িয়ে গেছে, আর হাত যতটা
উঁচুতে যায় ততটা উঁচুতে নিয়ে গিয়ে মোবাইল ধরে রেখেছে। টুনা যে এত পপুলার, টুনার
মালাবদলের দৃশ্য যে এত লোকে নিজেদের মোবাইলে সেভ করে রাখতে চায়, সেটা দেখে আমি
ভয়ানক ইমপ্রেসড্ হয়ে গেলাম।
কিন্তু আমি মোটে পাঁচ দুই,
কাজেই বেশিক্ষণ পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারার ধৈর্য আমার থাকল না।
দূরছাই বলে ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে দেখি, একগাদা ফাঁকা চেয়ারে হাত পা খেলিয়ে বসে মা
আর ছোটকাকিমা সুখদুঃখের গল্প জুড়েছেন। আমি স্যাডফেস করে যেই না বলেছি “ধুর কিছুই
দেখা যাচ্ছে না”, অমনি কাকিমা ধমক দিয়ে বললেন, “দেখবার আছেটা কী? এখানে চুপটি করে
বস্, যাতে নেক্সট ব্যাচ বসা মাত্র আমরা সবার আগে চেয়ার দখল করতে পারি।”
বয়স হলে লোকে যে এত
বুদ্ধিমান হয় কে জানত।
যাই হোক আমি তো মা কাকিমার
পাশে ব্যাজার মুখ করে বসে রইলাম। ভিড়ের ভেতর থেকে একটা প্রবল হোহো ধ্বনি ওঠাতে
বুঝলাম টুনা আর টুনার বরের প্রবেশ ঘটেছে। তারপর কিছুক্ষণ কী সব গোলমাল হল কিছু
বোঝা গেল না। তারপর হঠাৎ একটা হেঁইও বলে চিৎকারের সঙ্গেই দেখি সব ভিড়টিড়ের মাথা
ছাড়িয়ে টুনার মুকুটপরা মাথা দেখা যাচ্ছে।
তারপর শুরু হল পাক দেওয়া। দুই
বাড়ির দুই পুরোহিত গলা ফাটিয়ে এক, দুই গুনতে লাগলেন, বরের বাড়ির ছেলেরা গুনতি
কমানোর চেষ্টা করল, মেয়ের বাড়ির লোকেরা গুনতি বাড়ানোর চেষ্টা করল, টুনা মাঝে মাঝে
“পড়ে যাচ্ছি পড়ে যাচ্ছি” বলে হিহি করে হাসতে লাগল। অবশেষে পাক ঘোরা থামল।
ততক্ষণে আমার কৌতূহল আবার
মাত্রা ছাড়িয়েছে। কাকিমার ধমকের ঝুঁকি নিয়েই আমি আবার গুটিগুটি ভিড়ের দিকে হাঁটা
দিলাম। গিয়ে অতিকষ্টে এর কাঁধের ওপর, ওর বগলের তলা দিয়ে চিলতে ফাঁক বার করে দেখি
টুনাকে একটুএকটু দেখা যাচ্ছে। পুরোহিতমশাই দুজনের হাতে একটাএকটা করে গোবদা মালা
ধরিয়ে দিয়ে কীসব পাখিপড়া পড়াচ্ছেন। এর মালা ওর গলায় ঝপাং করে পরিয়ে দিলেই নাকি হয়
না, তারও আবার নিয়মকানুন প্যাঁচপয়জার আছে। টুনার বর আবার ভালো ছাত্র, পড়া যতক্ষণ
পুরো মাথায় না ঢুকছে ততক্ষণ হাল ছাড়ে না। সে বারবার বলতে লাগল, “তারপর কী করতে
হবে, ওহ আর ওই জায়গাটা কী যেন বললেন?” তারপর টুনাকে এতক্ষণ যাঁরা পিঁড়িতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের একজন খুনের হুমকি দেওয়াতে সে তাড়াতাড়ি জেরা থামিয়ে টুনার গলায়
মালা দেওয়ার উপক্রম করল।
যেই না করা, অমনি এরা
পিঁড়িশুদ্ধু টুনাকে প্রায় সিলিং-এর কাছে তুলে ফেলল। ভিড় একেবারে ইডেনগার্ডেনে সৌরভ
গাঙ্গুলি ছক্কা মেরেছেন ভাব করে চেঁচিয়ে উঠল। টুনার “মাগোওও” আর্তনাদ তাদের
উল্লাসে কোথায় চাপা পড়ে গেল আর খুঁজেই পাওয়া গেল না।
কিন্তু বরের বাড়ির ততক্ষণে
জেদ চেপে গেছে। তারাও জয় হনুমান বলে বরকে চাগিয়ে তুলল। তারপর কতক্ষণ ধরে যে এই
লোফালুফি চলল আমার মনে নেই। কারণ তুলিয়েদের গর্জনে, টুনার আর্তনাদে, টুনার বরের
মিনমিনে কাকুতিতে আর ভিড়ের উল্লাসে ততক্ষণে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে।
অজ্ঞান হয়ে পড়েই যাব প্রায়, শুনতে পেলার পাশ থেকে কারা যেন উত্তেজনায় মাখামাখি
গলায় বলছে, “উফ কীইইই মজা হচ্ছেএএএ”।
আমার বাবামা আমাকে যখন প্রথম
জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বিয়েটা আমি কীভাবে করতে চাই, আমি শুধু একটা কথাই বলেছিলাম।
“খেয়াল রেখো যাতে লোকের বেশি মজা
না হয়।”
তাঁরা চোখ ঘুরিয়েছিলেন মুখ
বেঁকিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ঝামেলা করেননি।
Just o..s..a..d..h..a..r..o..n.Ami hasi thamate parchina...Tobe tumi jotoi ojor apotti koro na keno..oi moja gulo chara biyebari hoya akebarei uchit noi.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ কুহেলি।
Deletesanghatik hashchhi eta pore... khub bhalo likhechho... oi inversely proportional fundata ekebare 500% sothik. tobe biye to ekbari hobe, kono ta bad diyo na.. mojata sotti y hoy kina chirokal ojana i theke jabe.
ReplyDeleteহাহা সোহিনী, দিল্লির লাড্ডু খেয়ে পস্তাতে বলছ?
Deletedurdanto!!!!bhishon maja peyechi eta pore :-).... baropishir gurur galpota toh puro birinchibabar moto
ReplyDeleteo hya,bhab shabdota amader bariteo chole...ar ami nijei ota bole thaki :p :p
Deleteপিসি নয়, মাসি। তবে মাসির সামনে গুরুদেব নিয়ে কথা বলিস না কিন্তু, কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। ভাব শব্দটা ভালোই তো।
Deleteআমরা অবান্তরের পাতায় বিয়ের ছবি দেখে virtual নেমন্তন্ন খেতে পেলেই মজা পাব। সেটা থেকে বঞ্চিত করবেন না আশা করি। - গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়।
ReplyDeleteনা না, গৌতমবাবু। সে রকম বদ মতলব আমার একেবারেই নেই।
Deleteহক্ কথা। আমার একটা অভিজ্ঞতা বলি।
ReplyDeleteআমার এক বান্ধবী ঋতুপর্ণার বিয়ে। তো, সে বেচারির বাড়িতে পিঁড়ে ধরার লোক পাওয়া যায়নি, মোটে দু'জন। আমার বন্ধু সৌগত আর আমার বেশ হৃষ্টপুষ্ট চেহারা ছিল, তাই আমাদের ধরাধরি করে রাজি করানো হল।
ব্যাপারটা নির্বিঘ্নে কাটল। তারপর পিঁড়ে নামিয়ে দিয়ে আমি সৌগতর সঙ্গে কব্জির ব্যথা নিয়ে আলোচনা করছি, এমন সময় মনে হল কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে কোথাও। পাশে ঘুরে দেখি সৌগত আদৌ নেই, সে ভূমিশয্যা নিয়েছে। আর চারপাশ থেকে লোকে ছুটে আসছে, 'স্মেলিংসল্ট' ইত্যাদি বলে চিৎকার করছে। রীতিমত জলটল ছিটিয়ে তোবে জ্ঞান ফিরল।
কেউ হাসল, কেউ সহানুভূতি দেখাল, কিন্তু একটা বিষয়ে সবাই একমত ছিল - ভীষণ মজা হয়েছে।
সিরিয়াসলি। যাদের এত মজা হয়, তারা কিন্তু কক্ষনও এইসব ধরাধরির কাজে এগোয় না, দেখবে।
DeleteKhub haschhi, darun likhechho.
ReplyDeletetobe amar nijoswo motamot holo oi inversely proportional mojaro ekta moja achhe. ota theke nijeke bonchito korona. Tobe hna oi agekar diner 12, 13 bachhorer meyeder bier somoi pniri chapie ghorano ar ekhonkar modhye onek tafat achhe. Ajkal onekei bhebe chinte oisob kichhu kichhu niom kanun palte nichhe tate nikhad moja kichhu baad jaina abar keu kasto-o paina :-).
সেটাই তো। এককালে যখন গৌরীদান মৌরিদান হত, তখন বাচ্চা মেয়ে হাত বুড়ো বরের গলার কাছে পৌঁছবে না বলে কোলে করে ঘোরাত।
Deleteachha! e-pniri te chepe e-mala porano jayna??
Deleteই-পিঁড়িতে চেপে ই-মালা পরানোর কথা বলছ শম্পা? পরালেই হয়।
Deleteha ha ha, eta besh mojar, erakom holei hoi :-)
Deleteঅসাধারণ! আমাদের বাড়িতেও ওই 'নিজেরা ভাব করে বিয়ে করেছে' - এই ভাষাতেই কথাবার্তা হয় গুরুজনদের মধ্যে। তবে - "অন্যদের মজার সঙ্গে বরবউ বেচারির বিপদের সম্পর্ক ইনভার্সলি প্রোপোরশনাল।" -- এটা টেকনিক্যালি কি ঠিক হলো?
ReplyDelete-- সব্যসাচী
ঠিক এইটাই ভাবতে ভাবতে লিখতে যাচ্ছি, এই কমেন্টটা চোখে পড়লো... :)
Deleteভুল ঠিক করে দিয়েছি। আমিও বুঝি না, প্রেম বলতে এত লজ্জা কীসের।
Deleteআমার বিয়েটা সেই সত্যযুগের ব্যাপার, তাই বিশেষ মনে নেই, তদুপরি বিয়ের প্রধান পাওনাটুকু নিয়েই এখনও হিমশিম খাচ্ছি। তবে এটুকু মনে আছে, যে বিয়ের দিন নিজেকে ঠিক চিড়িয়াখানার জন্তু বলেই মনে হয়। আচমকা দেখবেন, দুজন পিসিমাসি গোছের মহিলা আপনার ঠিক চারহাত দূরে দাঁড়িয়ে আপনার দিকে কি একটা ইশারা করছেন, আর ফিসফিস করে কিছু একটা বলাবলি করছেন। তাঁরা আবার আপনার সঙ্গে কোন কথাই বলবেন না। আর বিয়ের পর আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি খেতে ডাকবে, তাঁরা আবার ভেবে নেবেন যে আপনি গত তিন বছর ধরে শুধু দই খেয়ে আছেন, তাই মোটামুটি দেড় কিলো চালের ভাত আপনাকে একাই সাবাড় করতে হবে। আর তা যদি না পারেন, তাহলে হয় তাঁরা বলবেন যে নতুন বৌয়ের নাকি রান্না পছন্দ হয় নি, তাই খেল না। কি গেরো, কি গেরো।
ReplyDeleteহাহাহা, আর আমার বন্ধুদের বিয়েতে দেখেছি, অচেনা মহিলারা এসে গায়ে পরে থাকা প্রতিটি গয়না ধরে ধরে তার গুণাগুণ বিচার করেন। হ্যাঁ, বাঙালি বাড়িতে এই জর করে খাওয়ানোর ব্যাপারটা জঘন্য।
Deleteযে কোন বিয়েতে গিয়েই আমার প্রথম এবং শেষ কাজ হয় খাওয়া। তাই কোনদিনই ঠিক কি যে হয়, সেটা খেয়াল করিনি। বেকায়দায় পড়লাম আমার এক বয়সে বড় বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে। টুকটাক দায়িত্ব পালন করছি, মাঝেমধ্যে চূড়ান্ত সেক্সিস্ট কথা বলছে বলে মনে মনে পুরুতটাকে বেজায় খিস্তি করছি, অসুবিধে ছিলো না। হঠাৎ বর আমায় বললেন তাঁর জুতোজোড়া সামলে রাখতে, বলে একবার চোখও নাচালেন। আমি ভাবলাম- অনেক লোক, হয়তো যাতে হারিয়ে না যায় তাই বলছেন। নির্ভয় দিয়ে গম্ভীর মুখে জুতোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম। পুরুত তখন বোঝাচ্ছে, "ঘোমটা আরো নিচে নামাতে হবে, মনে রেখো মা- লজ্জা নারীর ভূষণ..."।
ReplyDeleteবুঝতেই পারছেন, সামান্য অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। এক কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি, কিন্তু বেরিয়ে আসার জো নেই, বরযাত্রী হয়ে গেছি- সারা রাত থাকতে হবে। পুরুতটাকে আলাদা পেলে কড়কানি দেবো কি না ভাবছি, হঠাৎ দেখি, একটা বাচ্চামতো মেয়ে- যে আবার বেশ কিছুক্ষণ থেকে আমার দিকে কটাক্ষ নিক্ষেপ করছিল (আর যা দেখে মনে মনে ভাবছিলাম, 'দেখেছো, মোটা হলে কি হবে, চার্মটা ধরে রেখেছি')- তীরের মতো এসে জুতোজোড়া তুলে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। আমায় হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বরের চ্যাংড়া শ্যালক ক্যামেরা-কাঁধে এসে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করলো, 'কি রাজাদা, পছন্দ হলো নাকি?'
অবস্থা বুঝিয়ে বলতে সে এমন করলো, যেন মমতা প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। বরযাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেল, সক্কলে আমার দিকে এমন করে তাকাতে শুরু করলো, যে আমি কোনক্রমে পালাতে পারলে বাঁচি। জানতে পারলাম, বরপক্ষের বিশেষ হারের কারণ হয়েছি। শুধু তা-ই নয়, ওই জুতো ফিরে পেতে নাকি অনেক টাকা খসবে।
তার পরের দুঃখের ঘটনা অন্য কোনদিন বলবো, শুধু এইটুকু বলে রাখি, এই গল্প শুনে নির্মাল্য বলেছিল, "এই জন্যেই বলি, বরজাতিয়ার সিনেমা দেখ- কতকিছু শিখে যেতিস..."
যদিও অভিমান করে বরজাতিয়া কেন, বর-জাতীয় কোন 'পরিচালক'-এর সিনেমাই দেখবো না পণ করেছি।
পুরোহিতগুলোর কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো সুনন্দ। বরজাতিয়া বর-জাতীয় লাইনটা দারুণ লিখেছ। জুতোচুরির গল্পটাও নাতিনাতনিকে বলার মতো।
Deleteদি, বেহালার জনতা কমবেশি ওরকম হয়, এটা আমিও দেখেছি। তাদের সামনে বলি না, কিন্তু মজাটা নিতে থাকি কনস্ট্যান্টলি। গুরুদেবের ব্যাপারটা কিরকম ফিশি (এবং সাথে সাথে নাটকীয়) ঠেকছে। দেখো গিয়ে আমাদের জামাই-দাদার পিসতুতো ভাইয়ের মাসির জামাইয়ের খুড়শ্বাশুড়ীর বড়-বেয়াইএর বোন হয়তো গুরুদেবের এক শাঁসালো মক্কেল। সেখান থেকেই হাঁড়ির খবর বের হয়ে গেছে আরকি। আর উনি সেটা উপস্থাপন করেছেন নাটকীয় ভঙ্গীতে, এই যা। আমাদের গ্রামের দিকেও 'ভাব' কথাটা বেশ চলে, তার সাথে আরো একটা কথা চলে - পীড়িত। যেমন - আরে, ওদের তো পীড়িতের বিয়ে। আর সত্যি, চেয়ার দখল ব্যাপারটা যে কি দৃষ্টিকটু দেখায় কি বলব! খাওয়ার সময় ঘাড়ের কাছে যাতে কোনো উটকো মাসীমা গোছের কেউ দাঁড়িয়ে না থাকে, বা আমাকেও যাতে কোনো গুঁফো জেঠুর সুড়ুপ-সাড়ুপ শব্দ করে দই টানা ঠিক তার পিছনটি থেকে সহ্য করতে না হয় সে জন্য আমি তো প্রাইম টাইমে ভোজ খাওয়াটাই ছেড়ে দিয়েছি। হয় আগে খাই, নাহলে পরে।
ReplyDeleteবিয়েবাড়ির খাওয়াটা আমারও দুঃস্বপ্নের মতো লাগে আবির। ছোটবেলায় আনন্দ হত নেমন্তন্ন খেতে পেয়ে, এখন কান্না পায়। আমি ভাবছি, ওই ঠাকুমারা যেমন করেন তেমন করা ধরব। সকালে গিয়ে গিফট দিয়ে প্লেটে করে চারটে রসগোল্লা খেয়ে আসব।
Deleteei ota pirit. mane baw-ey shunyo raw. preeti theke eseche bodhoy.
DeleteKuntala di, ekhon theke mishti khaoa bondho kore dao. biye onwards koek maash eto mishti khabe j tar por koek bochhor mishti dekhle ultodike dourobe.
টিনা, বলছ? আমার আবার এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব ঝামেলা, জানো তো। মানে খান খান, খাও খাও তো বেশিরভাগ বাড়িতেই কমবেশি করে, আমার মাও এ বিষয়ে কিছু কম যান না। আমি অবশ্য মাকে বলি, যে বস্, যে যার ইচ্ছেমতো খাবে, তুমি চাপসৃষ্টি করছ কেন? মা তখনকার মতো চুপ করে যান, কিন্তু পরে আমাকে বলেছেন যে ওটা করাই নাকি ভদ্রতা। খাওয়া নিয়ে জোর না করলেই অতিথিরা বেশি মাইন্ড করতে পারেন।
Deleteযাই হোক, এবার আমার সমস্যাটায় আসি। আমার সমস্যা দুটো। এক, আমার ভয়ানক চট করে রাগ হয়ে যায়, আর দুই, আমার মুখে মনের প্রতিটি ভাব, অনুভূতি, ভালোলাগা, গা-জ্বলুনি সব একেবারে সিনেমার মতো ফুটে ওঠে। কাজেই তিনবার খাব না বলার পর চার বারের বার খাও খাও বললে আমার অসম্ভব রাগ হয়, আর আমি বাকি সময়টা গোমড়ামুখে বসে থাকি। সে আবার আরেক অস্বস্তিজনক পরিস্থিতি।
আমার ধারণা বিয়ের পরেই আমার অনেক আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে মুখদেখাদেখি বন্ধ হয়ে যাবে। কী খারাপ হবে বল দেখি।
তাও ভাগ্যিস আপনি এলাহাবাদের বিয়ে দেখেননি। এলাহাবাদের বিয়েতে ব্যান্ড পার্টির সঙ্গে মাথায় আলো নেওয়া দু সারি মানুষ রাস্তার দুদিক দিয়ে হাঁটে, আর তাদের সবার আলো ছুঁয়ে দুটো ইলেকট্রিক তার রাস্তার দুদিকে দুটো দড়ির রেলিঙের মতন তৈরী করে, যার ফলে এদিক-ওদিকে দিয়ে যে লোক চলাচল করবে তার যো থাকেনা। সে তার দুটো আবার গোটা মিছিলের পিছনে একটা ঠেলাগাড়িতে বসানো বিকট শব্দ করা জেনারেটার এর সঙ্গে লাগানো। এ তো গেল আলোর আর শব্দের কথা। বর থাকে ঘোড়ার ওপর, হাতিতে চড়া বর ও দেখেছি, কিন্তু সেটা খুব কম। মিছিলের সামনে যারা নাচছে তারা আবির আর হাউই দিয়ে অনেকসময়ে তাদের আনন্দ পুরোপুরি প্রকাশ করে উঠতে পারেনা, তাই বন্দুক বের করে শুন্যে ফায়ার করে। তারা প্রচুরমাত্রায় পান করে এসেছে, কাজেই শুন্য টা যে কোনো দিকেই হতে পারে। ইতিমধ্যে নাচতে নাচতে কিছু লোক পকেট থেকে গোছা গোছা নোট বের করে হাওয়ায় ছুঁড়ছে, আর ওই আলো-বাহকেরা সেগুলো কুড়োবার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেছে। যেগুলো খুব মজার বিয়ে সেগুলোতে দুয়েকজন লোক এদিক-ওদিকে গুলি খেয়ে যায়। একবার আমাদের বাড়ির উঠোনে একটা বুলেট কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।
ReplyDeleteঅ্যাঁ! বন্দুক ফায়ার করে মানে কী? বাবারে, এলাহাবাদে কারও বিয়েতে নেমন্তন্ন পেলে তো যাওয়ার আগে দু'বার ভাবতে হবে।
Deleteও, এই নেমন্তন্ন পাওয়া নিয়ে আরেকটা গল্প মনে পড়ে গেল। আমার বাবার এক কলিগের বিয়েতে গিয়ে দেখি আমার বোনের ইস্কুলের হেডমিস্ট্রেস। আমাদের দেখে জানতে চাইলেন আপনারা ছেলেপক্ষ না মেয়েপক্ষ? আমরা ছেলেপক্ষ জানিয়ে ওনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো উনি কোন পক্ষের। উনি গলা নামিয়ে বললেন, "আমি ঠিক জানিনা, আমার বোনের নেমন্তন্ন ছিল, আমায় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।" এটাও এলাহাবাদের একটা প্রচলিত রীতি।
Deleteআপনার এলাহাবাদের ক্ষুরে ক্ষুরে প্রণাম। আমি অবশ্য আরেকরকম হিন্দুস্তানি বিয়ের কথা শুনেছি--- হিন্দুস্তানি কথাটা ভুল হল আবার হলও না, কারণ আমি যে ব্যাপারটা বোঝাতে চাইছি সেটার জন্য ওঁর থেকে ভালো কোনও শব্দ নেই---যেখানে খেতে বসার আগে নিমন্ত্রিতদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছিল। কাকাজ্যাঠা গোছের কেউ একজন চেয়ারটেবিল ক্যাশবাক্স নিয়ে বসে ছিলেন, কোনও গেস্টের সেই কাকার প্রহরা এড়িয়ে খাওয়ার জায়গায় পৌঁছনোর জো ছিল না।
DeleteAllahabad er golaguli chola biebari ar ei হিন্দুস্তানি biebari dutoi sanghatik :-D
Deleteসিরিয়াসলি।
Deleteসবার মোবাইল বের করে ছবি তোলা আরেকটা বিরক্তিকর ব্যাপার ... আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়তে একবার লিখেছিল এই নিয়ে ... "এমন দিন দূরে নাই, যখন শুভদৃষ্টির সময় বর নিজে না তাকাইয়া মোবাইল তাক করিবে, এবং স্তম্ভিত হইয়া দেখিবে পর্দায় ভাসিতেছে আর এক মোবাইলের নিতম্ব (কারণ কনেও তো সমক্ষিপ্রতায় মোবাইল বাহির করিয়া প্রস্তুত!) ওই ছবিই তাহারা তৎক্ষণাৎ সোৎসাহে ছশো ছাব্বিশটি বন্ধুকে পাঠাইবে।"
ReplyDeleteঠিকই লিখেছিল, পিয়াস। আমি শুধু ভাবি, এত ছবি দেখে কে।
DeleteSeta already hochchhe to... ei je proman (aboshyo mobile na, ritimoto DSLR): http://saptashawphotography.yolasite.com/first-hand.php
Deleteএটা আগে দেখেছি। আর আমি নববধূটির জায়গায় থাকলে বিয়েবাড়িতে কীরকম গোলযোগের সৃষ্টি হত সেই ভেবে শিউরে উঠেছি।
Deletesotti dekhei bhoy korche !!! photographerer sange bie haoa to besh marmantik mone hocche ;-)
Deleteভাব একবার।
DeleteAha re boubhaat e meyetir mukh dekhei mone hochche "wrong decision, wrong decision...arrrgh"
Deletehahah..eita darun bolechen
Deleteআমি মনেপ্রাণে কামনা করছি যে বউটির এতে সম্মতি ছিল। ফোটোগ্র্যাফারও অবশ্য সেরকমই লিখেছেন। না হলে বড়ই দুঃখের ব্যাপার হবে।
Delete:-D , ei link dekhe khub haschhi.
Deleteকেন? ওই ছশো ছাব্বিশ জন দেখবে আর 'লাইক'-ও করবে ... সেই যারা প্যারিস ঘুরে কয়েক মিলিয়ন ছবি আপলোড করেছিল তাদের ছবিতেও তো দুজন মত 'লাইক' দিয়েছিল ...
ReplyDeleteওই ছবিগুলো দেখতে দেখতে এটা ভেবেই শিউরে উঠেছি যে একজন বিয়ে করতে করতে নিজেই ক্যামেরা বাগিয়ে অত্তগুলো ছবি তুলেছে ... আমি তো নিজের বিয়েতে নিমন্ত্রিতদের ক্যামেরা নিয়ে ঢোকাই ব্যান করে দেব ... :-)
ইস্, ওরকম মনে হয়। আমিও ভেবেছিলাম নিজের বিয়েতে এই ব্যান করব, সেই ব্যান করব। তারপর দেখছি, কিছু জায়গায় মাথা না মুড়িয়ে চলে না। মানে গুরুতর যুদ্ধগুলো জিততে হলে, ছোটখাট যুদ্ধে হার মানতেই হয়। তোমারও হবে, দেখে নিয়ো।
Deleteসর্বনাশ ... :-(
DeleteKuntala,
ReplyDeleteajke saradin tor lekha porce..purono diner sob kotha mone pore jache..vsoooon nostalgic hoe porce!!
biye korces?? congratulations!! :) bhalo thakish.
আমারও আমারও। কলেজলাইফটা কতদিন আগের কথা মনে পড়ে চমকে যাচ্ছি। শুভেচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ অর্চিতা।
Delete