Thanksgiving
১. আমি থ্যাংকফুল যে
আমি অ্যামেরিকান নই বা অ্যামেরিকায় থাকি না বা আমার কোনও অ্যামেরিকান বন্ধু নেই।
থাকলে আজকের দিনে বছরের মোস্ট ওয়ান্ডারফুল ডিনারের নামে আলুনি টার্কি, বিনের
মশলাহীন তরকারি, দুধে গোলা আলুসেদ্ধর লেই আর কুমড়োর পিঠে খেতে হতে পারত।
২. আমি থ্যাংকফুল যে
আমার ঠাকুমা আমার নাম কুন্তলা রেখেছিলেন। মৌমিতা বা সুদেষ্ণা রাখেননি। মৌমিতা বা
সুদেষ্ণাদের বিরুদ্ধে আমার কিছুই বলার নেই, আমি যে ক’কোটি মৌমিতা এবং সুদেষ্ণাকে
চিনি তারা প্রত্যেকেই ভীষণ ভালো, ভীষণ বুদ্ধিমান আর ভীষণ ভালো দেখতে। কিন্তু তাদের
মধ্যে সবথেকে বড় মিল হচ্ছে যে তাদের কেউই নাম ধরে ডাকে না। ডাকা সম্ভবও নয়। আমাদের
ছত্রিশটি মেয়েওয়ালা পুঁচকে সেকশনেই মৌমিতা বলে হাঁক পাড়লে চারজন সাড়া দিত,
সুদেষ্ণা বলে হাঁকলে দু’জন। কাজেই হাঁকতে হলে সবাই হাঁকত, “অ্যাই লম্বু, অ্যাই
চাটুজ্জে, অ্যাই ব্যাটাচ্ছেলে গাঙ্গুরাম”। এই গাঙ্গুরামের সঙ্গে মণ্ডামিঠাইয়ের
কোনও সম্পর্ক নেই বলাই বাহুল্য, এই গাঙ্গুরাম হচ্ছে গিয়ে গাঙ্গুলির অপভ্রংশ।
আমাদের ক্লাসে একজন (মৌমিতা) ব্যানার্জিও ছিল। কাজেই আমিও যদি মৌমিতা হতাম তাহলে
নেহাত বাধ্য হয়েই লোককে আমাকে “হাই-পাওয়ার মৌমিতা” কিংবা “গালে-ব্রণ মৌমিতা” বলের
রেফার করতে হত। কী বাঁচানটাই না বাঁচিয়েছেন ঠাকুমা ভাবুন একবার। থ্যাংক ইউ ঠাকুমা।
তাই বলে কি স্কুলে
আমার কোনও ডাকনাম ছিল না? এমন হতভাগ্য যদি কেউ কোথাও থেকে থাকে পৃথিবীতে, স্কুলে
যাকে কেউ কোনও ডাকনাম দেয়নি কখনও, তবে সে বেচারার প্রতি আমার অন্তরের সমবেদনা রইল।
আমার ডাকনামটা আন্দাজ করা খুবই সোজাঃ “কুন্তী”। ভালোবাসা উথলে উঠলে
কেউ কেউ “ওরে কুন্তু রে” বলেও গলা জড়াত মনে পড়ে।
৩. আমি থ্যাংকফুল
আমার জীবনের সবক’টি সেকেন্ড চান্সের জন্য। সেকেন্ড, থার্ড, ফোর্থ চান্সগুলোর
জন্যও। আমার ভুলেরও শেষ নেই, আমার ভুলের প্রতি জীবনের ক্ষমারও না। যতবার মনে হয়েছে
আর বুঝি হল না, ততবার আবার নতুন নতুন সম্ভাবনারা এসে হাজির হয়েছে। কে জানে কোথা
থেকে। ব্যক্তিগত জীবনে, কাজের ক্ষেত্রে, সর্বত্র। দেখেশুনে আমার কনফিডেন্স বেড়ে
গেছে। এখন আমি নিশ্চিত, সব শেষ বলে আসলে কিছু হয় না। একটা না হলে অন্যটা হবে। যেটা
হবে সেটাও ভালোই হবে, যেটা হল না, সেটা হলেও হাতিঘোড়া কিছু হত না।
৪. আমি থ্যাংকফুল
কবীর সুমনের জন্য। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে তাঁর গানে আমাকে ডুবিয়ে
রাখার জন্য। আমি থ্যাংকফুল গল্পের বইয়ের জন্য। ভালো, চলনসই, অখাদ্য---দুই মলাটের
মাঝখানে পাতায় সারি সারি কালো পিঁপড়ের মতো শব্দের সারির জন্য আমি থ্যাংকফুল। আমি
থ্যাংকফুল বর্ষার বিকেল, সন্ধ্যে, রাত্তির, ভোরের জন্য। দিনের প্রথম আর্ল
গ্রে-র জন্য। সন্ধ্যের ভিড়ে ঠাসা মেট্রোয় একপায়ে দাঁড়িয়ে
থাকার মতো জায়গা পাওয়ার জন্য। লংডিসট্যানস্ ফোনকলের দাম দিনদিন এই রেটে কমার
জন্য। শনিরবিছুটি, সপ্তাহের মাঝখানে পড়ে পাওয়া ছুটি,
জাতীয় ছুটি, জ্বর হলে ছুটি, জাস্ট-ইচ্ছে-করছে-না-বলে ছুটি---ছুটির জন্য আমি
থ্যাংকফুল।
৫. আর অফ কোর্স, আমি
থ্যাংকফুল অবান্তরের পড়ুয়াদের জন্য। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, পরেও বলব---আপনারা আমার
কী উপকার করেছেন সেটা যদি জানতেন। দিনের পর দিন ধৈর্য ধরে না পড়লে, কমেন্ট না
করলে, সত্যিসত্যি বা মিছিমিছি পিঠ চাপড়ে “বাঃ বেশ হচ্ছে, চালিয়ে যাও” না বললে
অবান্তর চলত না। আর অবান্তর না চললে আমিও কি চলতাম? হেঁটেচলেঅটোচড়ে বেড়াতাম ঠিকই,
প্রাণের দায়ে প্রতিদিন সাড়ে আটটা টু সাড়ে ছ’টা হন্যে হয়ে দৌড়েও যেতাম, প্রাণ
বেঁচেও যেত। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোই কি সব? মনের কী হল সে খবর কে নিত? যেটুকু না
হলেও দিন চলে যায়, সেইটুকু কোথায় পেতাম? গত সোয়া চার বছরে আপনারা আমার জীবনের
সেইটুকু হয়ে উঠেছেন। আপনারা আমার আসলের সুদ, আমার সিনেমাহলের পপকর্ন, আমার মহার্ঘ
কোটের তলায় মায়ের হাতে বোনা হাফ সোয়েটার, আপনারা আমার বিয়েবাড়ির পুঁচকে মেনুকার্ড।
কার্ডের মলাটে লালরঙের হৃদয়ের ওপর ভুল বানানে বরবউয়ের নাম লেখা। নেমন্তন্ন হজম হয়ে
গেছে কবেই, কার্ডটা এখনও যত্ন করে গোঁজা আছে বুককেসের শেলফ-ঢাকা খবরের কাগজের
নিচে। সারাজীবন থাকবে।
থ্যাংক ইউ।
ম্যাডাম, অবান্তরের পাঠকপাঠিকা দের তরফ থেকে আমিও আপনাকে থ্যাঙ্ক ইউ জানাচ্ছি। আপনার দৌলতে অনেক কিছু জেনেছি, অনেকবার ফিক করে হেসেছি, অনেকবার নিজের জীবনের পুরনো স্মৃতিগুলো নিয়ে জাবর কেটেছি। গত দু'সপ্তাহের মধ্যে এই দ্বিতীয়বার কাউকে বলছি "থ্যাঙ্কস ফর এভরিথিং"।
ReplyDeleteআর ডাকনাম নিয়ে যা বলেছেন। আমাকে বিশ্বসুদ্ধু লোক দেবু বলে ডাকে, আমার বিদেশি বস অবধি। এমনকি ইমেল গুলো শুরু হয় "Hi Debu" বলে। কি আপদ
দেবাশিস, আপনার কমেন্টে খেয়াল করেছি, একটা রহস্য গল্প জাতীয় ব্যাপার থাকে। মানে পড়লেই একটা প্রশ্ন মাথায় ঘাই মেরে ওঠে, আর সেটা যতক্ষণ না করে ফেলা হচ্ছে ততক্ষণ মহা অশান্তি হয়। এই কমেন্টেও এক্স্যাক্টলি ওই ব্যাপারটা আছে। প্রথমবার কাকে "থ্যাংকস ফর এভরিথিং" বলেছিলেন। (অফ কোর্স, উত্তর দিতে হবে না, আমি এমনি জিজ্ঞাসা করলাম আরকি।)
Deleteএই ভীষণ মন ভালো করা কমেন্টটার জন্য আমার তরফ থেকে অনেক কৃতজ্ঞতা আর ভালোলাগা রইল।
এই রে, এই প্রশ্নটা না করলেই ভালো করতেন। প্রথম "থ্যাঙ্কস ফর এভরিথিং" যাকে বলেছিলাম, তাকে আপনি পছন্দ করেন না। ওই চব্বিশ বছর নিয়ে কিছু একটা ব্যাপার আরকি।
Deleteএমা! তাঁকে আমি অপছন্দ করি না মোটেই, কী অন্যায় অভিযোগ! বাকি সব প্রতিভাবান লোকজন যাঁরা অবিশ্বাস্য পরিশ্রমে নিজেদের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেছেন, তাঁদের মতোই আমি এঁকেও ভয়ানক শ্রদ্ধা করি। আমি যেটা অপছন্দ করেছি সেটা হচ্ছে লেবু কচলানোর ব্যাপারটা, যেটা আই গেস ওই লেভেলের মানুষদের ঘিরে হবেই।
Deleteকিন্তু আপনি যে আমার অন্যায় কৌতূহলটা মেটালেন সেটার জন্য থ্যাংকস দেবাশিস।
তবেই ভেবে দেখুন! First there is God, then there is Kuntala Bandyopadhyay.
Deleteকী সাংঘাতিক!
Deleteজিয়োঃ!
ReplyDeleteজিলাম। থ্যাংক ইউ।
Delete
ReplyDelete'অবান্তরের' জন্যে আমিও তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম কুন্তলা। :-)
আরেকটা খবর ও দিয়ে যাই আমার নামটা আমার মা ও এমন রেখেছেন যে ও নামে এতদিন এ সামনাসামনি আমি মাত্র একজনকে পেয়েছি।গুগল করলে জনা চার , তোমার লেখা পড়ে মা কেও একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম।
নিশ্চয় নিশ্চয়, ধন্যবাদ দেবেন বৈকি ইচ্ছাডানা। নাম রাখা কি চাট্টিখানি কথা? নিজের নাম হলে তাও একরকম, অন্য লোকের ঘাড়ে সারাজীবনের মতো একটা নাম চাপাচ্ছি, যারা চাপায় তারাই জানে কী টেনশনের ব্যাপার। আমার ঠাকুমা, আপনার মা, যেচে এ টেনশন ঘাড়ে নিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদটুকু তো দিতেই হবে।
DeleteIye...Ichchhedana, tao toh samnasamni kauke peyechhen. Ami kaukke paini. Ekebare shunyo. Ar amar naam tar sobcheye common short form er abar ingreji te onyo ekta maney achhe. Tai bambi theke shuru kore bingo...somosto dhoroner daaknaamei sara ditey hoy. :/
Deletep.s. Abantorer jonyo tomakeo osonkhyo dhonyobaad Kuntala di! :)
তোমার নামটা সত্যি ইউনিক বিম্ববতী। এমন নাম হলে ডাকনাম নিয়ে গোলমাল অনায়াসে অস্বীকার করা চলে।
DeleteAmi thankful je ami sojaag jiboner beshirbhaag time Kolkata r baire thekechi, na hole amake bNete Sumana sunte hoto!
ReplyDeleteAar hyan, Abantar er jonno bishesh thanks! aajkal somoymoto poRa hoyna, comment kora hoyna....kintu khub kom post ache ja miss korechi. beshi din na poRa hole, ekdhare sob pending post poRe felechi. Specially jokhon barir baire theki, tomar lekha poRle baRi ta nimeshe hather muthoy chole ashe! Thanks Kuntala di!
ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম সুমনা। মাই প্লেজার।
Deleteযাহ্ আমি শিওর তোমাকে কেউ বেঁটে সুমনা বলত না। লম্বাদের লম্বু বলা হয় সাধারণত, উল্টোটা আমি কখনও শুনিনি।
Lekhata khub bhalo hoyeche...choto choto tulona gulo osadharan rokomer sundor..
ReplyDeleteKaktalio bhabe Abantor er page e asachilam ekdin r sai theke apnar lekha pora obhhes hoye geche..ekhun somoy kore sob lekha pora na hole o beshirbhag e pore nai..
R roilo pore Thankfulness er kotha, ami amar life er proti second er kache thankful..kichu na kichu sekhachhe...stor-e stor-e obhiggota sonchoy korachhe..
অনেক ধন্যবাদ সৌমেশ। জীবনের ব্যাপারটা ঠিকই বলেছেন, শিখতে চাইলে প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু শেখার আছে। আশা করি জীবনের শিক্ষা আপনার কাজে লাগুক।
Deleteবইয়ের তাকে গুঁজে রাখা মেনুকার্ড! আমি শিওর আমার বিষয়ে এর থেকে ভাল কথা কেউ কোনওদিন বলেনি। আমি অনেকের কাছেই কৃতজ্ঞ, সবার কথা বলতে গেলে সচিনের মতন লিস্ট হাতে করে বসতে হয়, তাই সেসব বলছিনা। বিশেষ ভাবে এখানে লিখব দুজনকার কথা - দুজনকার নামই কুন্তলা। একজন অসাধারণ প্রতিভাবান লেখিকা, তাঁর লেখা পড়তে পড়তে নিজের বাড়ি, বাবা, মা সবাইকে যেন দেখতে পাই। যেসব জায়গা, ঘটনা, বা অনুভূতি আমার অত্যন্ত পরিচিত, অথচ তা নিয়ে লেখার মতন ক্ষমতা নেই, এই কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার মধ্যে দিয়ে সেই জিনিসগুলোর বর্ণনা পড়ি আর মনে হয় - বাঃ, এই তো আমার ভালো/ খারাপ লাগাগুলো, আমার ছোটবেলার জায়গাগুলো সবাই জানল, নাই বা হলো আমার লেখা। এনাকে দেখে নিজেকে মোটিভেট করবার চেষ্টা করি, আরো সকালে উঠতে হবে, আরও বেশি ব্লগ লিখতে হবে, আরো ভালো ভালো রান্নার ছবি তুলতে হবে ইত্যাদি। আবার এও জানি, এনাকে দেখে নিজেকে মোটিভেট করা, আর সৌরভকে দেখে "ওই তো বাঙালিরা ক্রিকেট খেলতে পারে, আমি কেন পারবনা?" বলা একই ব্যাপার।
ReplyDeleteঅপরজন - তিনিও বন্দ্যোপাধ্যায় - তিনি কিন্তু ঐরকম ধরাছোঁয়ার বাইরের লেখিকা নন। তিনি চ্যাটবাক্সে আমার সঙ্গে আড্ডা মারেন কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়া দিদির মতন, যেন ছোটবেলা থেকেই আমায় চেনেন। তিনি আমার রাগ-দুঃখের সময়ে যাদের ওপর রাগ-দুঃখ তাদের না চিনলেও আমার সঙ্গে সমান তালে তাদের নিন্দে করে আমায় খুশি করেন, আবার আমার আনন্দের সময়ে আমার থেকেও বেশি খুশি হয়ে পড়েন। যাঁর সঙ্গে আমি লোকের পি এন পি সি করার স্বভাব নিয়েও পি এন পি সি করতে পারি। যিনি আমায় মাঝরাত্রে নাম-না-জানা ই-বই খুঁজে দিতে বলতে এতটুকু দ্বিধা করেননা, তেমনই দ্বিধা করেননা আমায় ভাল বই, সিনেমার সন্ধান দিতে। এই কুন্তলার সঙ্গে আমার হাসি-ঠাট্টা মান-অভিমান সবই চলে। ইনি নিছক একজন লেখিকা নন, ইনি আমার খুব কাছের মানুষ, একজন সত্যিকারের ভালো বন্ধু।
আমি এই দুজনকার সঙ্গে যে আমার আলাপ হয়েছে সেইজন্যই থ্যাঙ্কফুল।
ওরে বাবা, কত প্রশংসা করেছেন সুগত। আমি শিওর আমি এর এক পার সেন্টেরও যোগ্য নই। তবু আপনি যে আমার সম্পর্কে এত ভালো কথা বিশ্বাস করেন, সে জন্য অনেক থ্যাংক ইউ। আপনাকে বন্ধু হিসেবে পাওয়াটা আমারও সৌভাগ্যের ব্য্যাপার। আশা করি আমাদের বন্ধুত্ব সারাজীবন স্থায়ী হবে।
Deletelekha ta khub i bhalo, kintu kemon jeno tomar je lok tar sommondhe allergy tnar boktritar moton shunte hoye gelo je ;)
ReplyDeleteএই রে, আমার কার প্রতি অ্যালার্জি বল তো স্বাগতা? (এত লোকের প্রতি অ্যালার্জি আসলে, চিহ্নিত করতে পারছি না)
DeleteOi chobbish bochor er post ta theke bollam ar ki. tini o jata rokomer akta bidayee bhashon e lomba listi kore lokjon ke thank you diyechilen kina.
Deleteঅ।
Delete