রেসলিউশন্স্ ২০১৪
আমার ২০১৩-র
রেসলিউশনের রেজাল্ট দেখে বান্টি বলল, “কিচ্ছু হয়নি।”
আমি চোখেমুখে আহত
ভাব ফুটিয়ে বললাম, “কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই, শেখায়নি তোদের স্কুলে?”
“না বললেই কি কানা
কানা থাকবে না, নাকি খোঁড়া হঠাৎ টগবগিয়ে ছুটতে শুরু করবে? তাছাড়া কানাখোঁড়া
শব্দদুটোয় নেগেটিভ কনোটেশন জুড়ছ তুমি, আমি না। যাই হোক, আমি তোমার পারফরমেন্স্
নিয়ে কিছু বলিনি, আমি বলেছি যে তোমার রেসলিউশন সেট করাতেই সিরিয়াস গোলমাল রয়ে
গেছে।”
“কী রকম?”
“তোমার রেসলিউশন সব
প্রোসেস-ভিত্তিক, কাজেই তাদের ইভ্যালুয়েট করা অলমোস্ট ইমপসিব্ল্। ‘আমি কাল থেকে
আর ফাঁকি দেব না’ বলা, ‘কাল সকাল থেকে আমি জীবে প্রেম প্র্যাকটিস করব’ বলার মতোই
ভেগ। তার বদলে যদি তুমি বলতে এ বছরে আমি তিনটে পাবলিকেশন নামাব বা চারটে বাঁদরছানা
অ্যাডপ্ট করব তাহলে প্রতিজ্ঞাটা আউটকাম-ভিত্তিক হত, এবং একই সঙ্গে অনেক জোরালোও
হত।”
বান্টির কথায় যুক্তি
আছে। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে আমি লোকটা একেবারেই আউটকাম-ভিত্তিক নই। আদ্যোপান্ত প্রোসেস-ভিত্তিক।
‘কী হল’-র থেকেও ‘কীভাবে হল’---সেই প্রশ্নের উত্তর জানতেই আমার যত কৌতূহল। তিনটে
পেপার নামানো খুবই ভালো কথা, কিন্তু সেগুলো কীভাবে নামানো হল সেটা আমার মতে জানা
বেশি জরুরি। প্রথম ছ’মাস কোনও কাজ না করে, শেষ ছ’মাস পাগলের
মতো নাওয়াখাওয়া ভুলে, আটের বদলে আঠেরো ঘণ্টা অফিসে থেকে, শরীরের প্রত্যেকটি শিরাউপশিরাকে
হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নার্ভাস ব্রেকডাউনের কিনারায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে যদি হয়, তাহলে
সত্যি বলছি ওই রকম নামানোয় আমার কাজ নেই।
এর মানে কিন্তু এই
নয় যে আমি ওই ভাবে করা কাজের গুণগত মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলছি। আমার চেনা অনেক
বুদ্ধিমান লোক এই পদ্ধতি ছাড়া কাজ করতে পারেন না বা নীতিগতভাবে এই পদ্ধতি ছাড়া
অন্য কোনও পদ্ধতিতে কাজ করেন না। বান্টি এই দ্বিতীয় দলের পার্মানেন্ট মেম্বার।
“কাজ করার জন্য মাইনে পাই, কাজটা কখন করলাম---সারা মাস ধরে নাকি ডেডলাইনের আগের
রাত্তিরে---সে জন্য তো পাই না।”
অকাট্য যুক্তি।
কিন্তু অকাট্য হলেই যে পছন্দের হবে তেমন কোনও কথা নেই। আমার পছন্দ হচ্ছে তেমন
জীবন, যে জীবনের তিনশো পঁয়ষট্টি দিন বারো মাস চব্বিশ ঘণ্টা একই ছন্দে কাটে। একই
তালে, একই লয়ে। আর আমি বিশ্বাস করি অমন জীবন আউটকামের মুখ চেয়ে তৈরি হয় না, ওর
জন্য লাগে প্রোসেস। দীর্ঘ, অবিরাম, অক্লান্ত প্রোসেস।
২০১৪-র রেসলিউশনের
ফাইনাল তালিকা ছাপানোর আগে আমার স্বীকারোক্তি এটাই। আমি কোনও বিশেষ আউটকামের জন্য
হন্যে হয়ে এই কাজগুলো করতে চাইছি না। আমি চাইছি সামনের তিনশো পঁয়ষট্টিটা দিনে আমার
রোজকার অভ্যেস, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বদলাতে। এই সব বদলের ঘাড়ে চেপে যদি আউটকামের মোক্ষে
পৌঁছনো যায় যাবে, না গেলেও ক্ষতি নেই। তখন এই ভেবে সান্ত্বনা পাব যে নিজের চোখে
নিজে আরেকটু আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পেরেছি।
আর অফ কোর্স সবাই
জানে, আমিও জানি, এই বদলের প্রক্রিয়াটা শুরু করার জন্য একত্রিশে ডিসেম্বরের মাঝরাত
পর্যন্ত জেগে বসে থাকার কোনও দরকার নেই। ভালো হওয়ার জন্য পয়লা জানুয়ারির থেকে সাতই
জুলাই কোনও অংশে কম পয়া নয়। তবু হাজার হোক, নতুন বছর বলে কথা। আর পাঁচটা লোকের মতো
এই সিজনেই আমার ভালো হওয়ার ইচ্ছে লকলকিয়ে ওঠে। কেন ওঠে সে প্রশ্নের জবাব আমি দিতে
পারব না।
গৌরচন্দ্রিকা শেষ,
এইবার ২০১৪-র শপথ লিপিবদ্ধ করার পালা।
১। আমার প্রথম
রেসলিউশনটা এক সপ্তাহ আগে লিস্টের প্রথমে তো দূর অস্ত, ত্রিসীমানাতেই ছিল না। কবে
এটা ত্রিসীমানায় এল এবং বাকি সব রেসলিউশনকে ল্যাং মেরে চিৎপাত করে একেবারে লিস্টের
টঙে চড়ে বসল, সেই দিনটা, ইন ফ্যাক্ট সেই মুহূর্তটাও আমার স্পষ্ট মনে আছে।
গত বুধবার ঠিক
পাঁচটার সময় অ্যালার্ম বাজল, আর আমি বন্দুকের গুলির মতো ছিটকে বিছানায় উঠে বসলাম।
মা সামনে থাকলে নির্ঘাত আঁতকে উঠতেন। “সোনা! কতবার বলেছি ওভাবে উঠতে নেই, কখন
হ্যাঁচকা লেগে যাবে . . .” সে হ্যাঁচকা লাগলে লাগবে, আমার এভাবে না উঠে ছাড়া গতি
নেই। নিজেকে যদি আরাম করতে অ্যালাউ করি, ভাব দেখাই যে ঘুম ভাঙার পর দশ মিনিট লেপের
ভেতর এপাশওপাশ করার মধ্যে দোষের কিছু নেই, তাহলে আর রক্ষে নেই। মন সাপের পাঁচ পা
দেখবে। দশ মিনিট বেড়ে পনেরো মিনিট হবে, পনেরো বেড়ে আধঘণ্টা, আধঘণ্টা বেড়ে
পঁয়তাল্লিশ মিনিট। খাল কেটে পঁয়তাল্লিশটা কুমীর যদি না ডাকতে চাই তাহলে অ্যালার্ম
শোনা মাত্র ছিটকে উঠে পড়তে হবে। তাতে হ্যাঁচকাই লাগুক কি প্রাণই বেরোক।
খাট থেকে দু’পা
মাটিতে নামিয়ে, কোনওমতে ডান পায়ের চটি বাঁ পায়ে আর বাঁ পায়ের চটি ডান পায়ে গলিয়ে
বেডসাইড টেবিলের দিকে হাত বাড়িয়ে চশমাটা নিতে যাব, নিয়েও ফেলেছি প্রায় . . . এমন সময়
হঠাৎ হাতের ধাক্কা লেগে চশমা ভূপতিত হল। অ্যালার্ম বাজিয়ে
ঘুম থেকে ওঠার এই একটা মুশকিল। সারাশরীরের ঘুম একসঙ্গে ভাঙে না। ইনস্টলমেন্টে
প্রথমে মগজের ঘুম ভাঙে, তারপর চটি পরতে গিয়ে পায়ের পাতার, চশমা নিতে গিয়ে হাতের
পাঞ্জার। সেদিন হাত তখনও ঘুমোচ্ছিল নিশ্চয়, ঘুমচোখে চশমার বদলে চশমার পাশের বাতাসে
খাবলা মেরেছে।
পিত্তিটা জাস্ট
জ্বলে গেল। জ্বলুনিতে একটা উপকার হল অবশ্য, সারাশরীরের ঘুম ঝটকা দিয়ে একবারে ছেড়ে গেল। চশমার চোদ্দপুরুষের পিণ্ডি চটকাতে চটকাতে
আমি মেঝের ওপর নতজানু হলাম। “কোথায় আছিস, হাতের কাছে আয় মা”। হাত বুলোতে বুলোতে খাটের
তলায় ভেসে বেড়ানো চুলের গোল্লা, বিস্কুটের গুঁড়ো, আরও না জানি কী সব ইন্টারেস্টিং
জিনিসপত্র হাতে ঠেকল, কেবল চশমার পাত্তা নেই। খানিক বাদে চশমার আমার ওপর করুণা হল
বোধহয়, তিনি আমার আঙুলের খাঁচায় ধরা দিলেন।
‘ইউরেকা!” বলে চশমা
বাজেয়াপ্ত করে উঠে বসতে যাব অমনি ঘটনাটা ঘটল। আমার থার্টি টু-সামথিং কোমর ফ্রিজ
করে গেল। খাটের পাশে অন্ধকারে আমি মেঝের ওপর গড় হয়ে শুয়ে রইলাম, মাথা তুলতে গেলেই
কোমরের কাছে যেখানটায় শিরদাঁড়া শেষ হয়েছে, সেখান থেকে কড়কড় মচ্মচ্ নানারকম ভয়ানক
শব্দ বের হতে লাগল। ওইখানটাতেই কুলকুণ্ডলিনী থাকে শুনেছি, এই ব্রাহ্মমুহূর্তে
তিনিই জাগ্রত হলেন কি না কে জানে। নোংরা মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে শুয়ে আমি এইসব
ভাবতে লাগলাম। আরও মনে হল, ভাগ্যিস অর্চিষ্মান নেই, হঠাৎ ঘুম ভেঙে আমাকে এই
অবস্থায় আবিষ্কার করলে বেচারার হার্ট অ্যাটাক হত নির্ঘাত।
কতক্ষণ পর জানি না,
(অ্যাকচুয়ালি জানি। অ্যাট লিস্ট এক ঘণ্টা। কিন্তু ঘড়িকে জিজ্ঞাসা করলেই সে অম্লানবদনে
বলবে, এই তো মোটে পাঁচ সেকেন্ড হল। তাই আমি আজকাল ঘড়ি দেখা ছেড়ে দিয়েছি।) কোমরের
খিল অবশেষে খুলে গেল, আমি চশমাসহ নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ালাম। অবশ্য ওঠা ব্যাপারটা
এতটাও অবলীলায় হল না, শুনতে যতটা লাগছে। এক হাত দিয়ে বিছানার চাদর খিমচে
টাইট্যানিকের মতো টলমল করতে করতে কোনওরকমে উঠে দাঁড়ালাম, তারই মধ্যে ডান হাঁটু
একবার ব্রেক কষল, দাঁড়ানোর পর বাঁ গোড়ালি একবার মট্ করল।
এরপরেও যদি আমার
রেসলিউশনের লিস্টে “দৈনিক আধঘণ্টা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ” না জায়গা পায়, তাহলে
আর কীসে পাবে আমি জানি না।
২। আমার ২০১৪-র
দ্বিতীয় রেসলিউশনটিও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত। স্বাস্থ্যের ওপর এত মনোযোগ দেখে নিজেরই
ভয় লাগছে, হেলদি হয়ে শেষটায় না ২০১৫-র দিল্লি ম্যারাথনে নাম দিয়ে বসি। যাই হোক,
ম্যারাথনের কথা এখন থাক, রেসলিউশনের কথা হোক। আমার সামনের বছরের দ্বিতীয় রেসলিউশন
হল,
“খাওয়ার সময় খাব,
বাকি সময় খাব না।”
এই প্রসঙ্গে চিবোনো
আখের মতো হয়ে যাওয়া সেই গল্পটা আরেকবার আপনাদের মনে করিয়ে দিই। ভগবান যখন আমাদের
নাইয়েখাইয়ে, ভালো জামা পরিয়ে, গাল টিপে ধরে চুল আঁচড়ে পৃথিবীর দিকে রওনা
করাচ্ছিলেন তখন তাড়াহুড়োয় একটা ভীষণ জরুরি উপদেশের কথা তাঁর মাথা থেকে বেরিয়ে
গিয়েছিল। টা টা করে পেছন
ফিরতেই উপদেশটা তাঁর মনে এসে গেল, আর ভগবান দৌড়ে গেটের কাছে এসে চেঁচিয়ে বললেন,
“মনে রেখ, দিনে একবার খাবে আর তিনবার স্নান করবেএএএ...”
স্বর্গের
নিরবিচ্ছিন্ন সুখের জেলখানা থেকে ছুটি পেয়ে মানুষ তখন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট লাগিয়েছে,
তার কানে উপদেশের অর্ধেক ঢুকল অর্ধেক ঢুকল না। সে ছুটতে ছুটতেই
চেঁচিয়ে “ঠিক আছেএএএএ...” বলে একবারে মর্ত্যে পৌঁছে তবে দম নিল।
তারপর তো কী হল আমরা
সবাই জানি। নরক গুলজার। কিন্তু অত্যাশ্চর্যভাবে ভগবানের বাকি একটাও উপদেশ মানুষের
মনে না থাকলেও, শেষ উপদেশটা মনে থেকে গেল। মানুষ এখনও ভালো ছাত্রের মতো রোজ
তিনবেলা খায় আর একবেলা স্নান করে।
সত্যি বলছি দৈনিক
তিনবার খেলে আমার কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমি দিনে তিরিশবার খাই। ছ’টার সময়
চা, সাড়ে ছ’টার সময় বিস্কুট, আটটার সময় টোস্ট, প’নে দশটার সময় চা, এগারোটার সময়
চা, বারোটার সময় কিটক্যাট, দুটোর সময় স্যান্ডউইচ, তিনটের সময় চা, চারটের সময় চিপস্,
সাড়ে চারটের সময় চা, সাতটার সময় স্যান্ডউইচ, সাড়ে আটটার সময় বিস্কুট . . . আশা করি
আর বলার দরকার নেই, চিত্রটা আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
ফলে যেটা ঘটেছে, আমি
দিনকে-দিন অম্লজীন চুর্ণের সচল বিজ্ঞাপনে পরিণত হয়েছি। অম্বল গলাজ্বালা
চোঁয়াঢেঁকুর ইত্যাদি ব্যাপার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এ রথের
গতি রোধ করতে না পারলে বিপদ আছে। সামনের বছর সেটা করব। খাওয়ার জন্য নির্ধারিত
নির্ঘণ্টে পেট পুরে তৃপ্তি করে খাব, সারাদিন খুচুরমুচুর করে মুখ চালিয়ে বেড়াব না।
৩। তিন এবং শেষ
প্রতিজ্ঞাটির জন্ম প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছে থেকে। জানি প্রতিশোধ খুব খারাপ ইমোশন,
কিন্তু খারাপ ইমোশন থেকে অনেক সময় ভালো জিনিসের সৃষ্টি হতে পারে। মায়ের বকুনি শুনে
আমি ছোটবেলায় অনেকসময় রাগ করে বেশি পড়াশুনো করে ফেলতাম। তখন মা মাথায় হাত বুলিয়ে
হেসে বলতেন রাগ নাকি লক্ষ্মী।
অবশ্য প্রতিশোধের
স্পৃহা লক্ষ্মী এমন কথা শুনিনি কখনও, কিন্তু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাই যাক না।
আমাদের আড্ডায় একজন
আছেন, যাঁকে বাইরে থেকে দেখতে আমার আপনার মতোই স্বাভাবিক, কিন্তু অন্তরে তিনি
সাক্ষাৎ দেবশিশু। আপনাদের আড্ডাতেও এই রকম দেবশিশু আছেন আমি নিশ্চিত, সব আড্ডাতেই
থাকে। এঁদের বিশেষত্বটা হচ্ছে, এঁরা কখনও কাউকে খারাপ দেখতে বা বলতে পারেন না।
এঁদের কাছে মন খুলে কারও নিন্দে করার উপায় নেই। ইরিটেটিংস্য ইরিটেটিং লোকজনের
নামেও কিছু বললে এঁরা বলবেন, “এই যাঃ, ও ভীষণ সুইট।” সকলেই এঁদের কাছে সুইট,
হার্মলেস, ‘মনটা-ভালো’। চেনা লোকজনের কথা তো ছেড়েই দিলাম,
সেলিব্রিটিরা, যাঁদের নিয়ে পিএনপিসি করা সংবিধানেই অ্যালাউ করা আছে, তাঁরাও এঁদের
কাছে আউট অফ বাউন্ডস্। শোভা দে? “ইস্, মহিলার কী সুন্দর শাড়ির কালেকশন”,
নরেন্দ্র মোদী? “কাগজে তো দেখলাম লিখেছে খুব নাকি ভালো ফ্যামিলি ম্যান”, দেভ?
“বাঙালিদের মধ্যে ও’রকম হাইট দেখা যায়, তুইই বল?”
বাকিদের কী হয় জানি
না, আমার ব্লাডপ্রেশার চড়চড় করে বাড়তে থাকে। মুখ দেখে সেটা বোঝা যায় নিশ্চয়, কারণ
সঙ্গে সঙ্গে উল্টোদিকের লোকটার মুখেও একটা হালকা হাসি ফুটে ওঠে। হাসিটা এতই
সূক্ষ্ম যে বাকিরা দেখতে পায় কি না জানি না, আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। আমি কী মহৎ, কত
পজিটিভ, আর তুই কী ছোটমন, কেবল লোকের খুঁত ধরে বেড়াস---মহত্বের কমপিটিশনে আমাকে
গোহারান হারিয়ে তাঁর মুখচোখ বিদীর্ণ করে যে অনির্বচনীয় গ্লো বিচ্ছুরিত হয়, ল্যাকমে
লো’রিয়লের মডেলের এয়ারব্রাশ করা মুখেও সে ছটার দেখা মেলা ভার।
হারতে হারতে আমার
এবার জেদ চেপে গেছে। আমি ঠিক করেছি এবার থেকে প্রকাশ্যে কারও নামে খারাপ কথা বলব
না। মাথার ভেতর জাজমেন্টের জলপ্রপাত চালাতে পারি, কিন্তু মুখে সকলের প্রতি প্রশংসা
আর ভালো কথার বান ডাকাব। যে সব ক্ষেত্রে প্রশংসা করা শারীরিকভাবে অসম্ভব হয়ে উঠবে,
জিভে প্যারালিসিস দেখা দেবে, সেখানেও অ্যাট লিস্ট নিন্দের রাস্তা ধরব না। ধরি মাছ
না ছুঁই পানি করে বেরিয়ে আসব। নরেন্দ্র মোদী ভালো ফ্যামিলি ম্যান শুনে চোখ কপালে
তুলে বলব, “তাই নাকি? সত্যি, একটা মানুষকে বাইরে থেকে দেখে আমরা কত ভুল
বুঝি।”
বিশেষ করে আমার সেই
বন্ধুটির সামনে এই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করব আমি ২০১৪-য়। গরমকাল আসছে, দিল্লিতে
মশার সিজ্ন্-ও এসে পড়ল বলে। সবার প্রশংসা করতে করতে দেবশিশু যখন দুই হাতে চটাপট
মশা মারবেন, আমি বলব, “আহা রে মেরো না, বেচারারা কি টাইনি আর সুইট তো . . .”
দৃশ্যটা
ভাবতেই আমার এত ভালো লাগছে যে অ্যাট লিস্ট এই প্রতিজ্ঞাটা আমাকে রাখতেই হবে।
লিস্ট টা সত্যিই দারুন। ইচ্ছা হচ্ছে যে আমিও একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলি আর তোমার লিস্ট থেকে প্রথম দুটি কে copy paste করে দি :-) . All the Best !!!
ReplyDeleteথ্যাঙ্ক ইউ ইচ্ছাডানা। আপনিও লিস্ট বানিয়ে ফেলুন। লিস্ট বানানোতেই আসল মজা, মানেন কি না মানেন সেটা পরে দেখা যাবে।
DeleteLast resolution ta jodi rakhte paro, tahole tomar proti shroddha amar hurmuriye stratosphere chhariye jabe.
ReplyDeleteআমার নিজেরও তাই হবে বিম্ববতী।
Deleteদেখেছেন, বড়দের কথা না শুনলে কি হয়? ওই হ্যাঁচকাই লেগে গেছিল বোধহয়। আমি তো এই ভয়ে ৩-৪টে অ্যালার্ম লাগিয়ে শুই, প্রথম দিকের গুলো মোলায়েম, তারপর আস্তে আস্তে কড়া হতে হতে শেষটা এমন যে সেটা বাজার আগেই না থামাতে পারলে প্রতিবেশীরা তেড়ে আসতে পারে। তাহলেই আর শরীরের ওপর চাপ পড়েনা। তবে ব্যায়াম করাটা ভাল। আমি মাঝে মধ্যে জিম যাওয়া আর তা নাহলে হাঁটা, এই দুটোর একটা অন্তত করার চেষ্টা করি। তবে ওই সময় থাকতে কাজ করা আর শেষ মুহুর্তে করা প্রসঙ্গে বলি, আমি নিরুপায়, আমার মাথাটা এইভাবে কাজ করে, তো আমি কি করতে পারি?
ReplyDeleteঅসময়ে না খাওয়ার রেসলিউশনটা খুবই ভাল। আমি ঠিক ওটা সব সময়ে মানতে পারিনা, কিন্তু আমি আরেকটু অন্য একটা মেনে চলার চেষ্টা করি - সেটা হল ক্ষিদে না পেলে না খাওয়া। মানে খাবার সময় হয়েছে বলেই আমায় ডাল ভাত কি রুটি তরকারী নিয়ে বসতে হবে তা নয়। একটু লেট করে মুড়ি মাখা খেয়েছি, তাই পেট ভরা? ঠিক আছে, আজকে সেইটাই ডিনার থাক। এটা অবশ্য মায়ের সঙ্গে থাকলে মানা শক্ত, একা থাকলে তবেই সম্ভব।
এবার শেষ রেসলিউশন টার কথায় আসি। দেখুন, আমি ঠিক স্পষ্টবাদী না হলেও, এক্ষেত্রে একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বোধ করছি। আপনি দেবশিশুর সামনে যা করবেন করুন, আমার চ্যাটবাক্সে যদি পি এন পি সি করবেন না বলে ঠিক করেন তাহলে আমি চ্যাট করাই ছেড়ে দেব আপনার সঙ্গে। আপনি হয়ত বলতে পারেন বন্ধুর কর্তব্য ঠিক পথে চালিত করা ইত্যাদি প্রভৃতি, কিন্তু আমি বলব যে আপনি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজের এবং আমার বন্ধুমহলে আরেকটি দেবশিশুতে পরিনত হন সেটা আমি মোটেই চাইনা। তাই যা করবার ভেবেচিন্তে করবেন।
হাহাহা নানা আমার দেবশিশুতে পরিণত হওয়ার কোনও সাধ নেই সুগত বিশ্বাস করুন। আমি পি এন পি সি বন্ধ করতে চাইছি এক, স্ট্র্যাটেজিক কারণে, দুই, বড় বেশি যে নিন্দেমন্দ করি সেটাও অস্বীকার করতে পারি না, সেইটা শুধরোবার জন্য।
Deleteক্ষিদে না পেলে খাওয়াটা খুবই ভালো স্ট্র্যাটেজি। আমার মতে সবথেকে কার্যকরী "ডায়েট"-ও। কিন্তু আমার খাওয়া ব্যাপারটার সঙ্গে ক্ষিদের সম্পর্ক চুকেছে বহুদিন হল। সেটাই এবার ঠিক করতে হবে। আর তো সে বয়স নেই যে লোহা খেয়ে হজম করে ফেলব, বলুন?
Kuntala di, free hand ta sotyi koro. Ota seriously joruri. Maa ja bhuglo ei bochor frozen shoulder niye, aage bhage ei sob korle hoto na.
ReplyDeleteOirokom "sweet" lokjon amio chini. Ga jwole jaaye. ami go haran harbo, tai cheshta korbo na, kintu tumi korte parle Bimboboti chaRa amio tomake aro ektu beshi shroddha korbo :)
নাহ, তোমরা এত উৎসাহ দিচ্ছ যখন, লাস্ট শপথটা আমাকে রাখতেই হবে। থ্যাংক ইউ সুমনা
Deletedurdanto sab resolution :-)
ReplyDeleteরেসলিউশন তো ভালোই তিন্নি, রাখার ব্যাপারটাই যা খারাপ।
Deletesesher ta kete dao kuntaladi, on public demand ;)
ReplyDeleteএই রে স্বাগতা, তোমরা দুজন বলছ তিন নম্বর রেসলিউশনটা কেটে দিতে, এদিকে আরও দুজন বলছে রাখতে। ধর্মসংকট আর কাকে বলে।
DeleteKuntala, tor last resolution ta just osadharon. tobe jaara toke emon resolution nite moriya korlo taader dik ta vebechis kokhono...nijer kache mohot howar chaap e ki ki kotha aar ki ki sob manush der monokleshe hojom kore nite hoy..! anyway tor resolution er chaap e dekhbi tarao ekta resolution niye felbe.. " Mon aar mukh sorboda ek rekhe kotha bolbo" :)
ReplyDeleteলোকজন এই মনে-মুখে এক হওয়ার রেসলিউশন নিতে শুরু করলে অবশ্য আরও কেলেংকারি হবে সাহানা, কাজেই যেন সে রকমটা না হয়। তুই একেবারে ঠিক বলেছিস, নিজের কাছে মহৎ হওয়ার চাপ বড় সাংঘাতিক। আমি কিছুদিন ধরে এই চাপের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি (চাপ নিচ্ছি)...নিজেকে চাপে রাখতে কি ভালো লাগে আমাদের? না হলে তো আমাদের যাবতীয় আচরণের কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল...
Delete