রিপুদমন


সোজা কাজ নয়। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ব্যর্থ হলে বলবেন না আগে থেকে সাবধান করা হয়নি। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মাইকেল মধুসূদন থেকে টাইগার উডস পর্যন্ত যা পারেননি, আমি আপনি ফস্‌ করে সেটা পেরে গেলেই চিন্তার বিষয়।

আমার প্রবলতম রিপু, ক্রোধ। দোষ আমার নয়, আমার জিনের। মাথাঠান্ডা রাখতে আমার দিদিমা স্বর্ণসিন্দুর মাখতেন রোজ রাতে। ঠাকুমার রাগের চিহ্ন আমার বাবা নাকে করে বয়ে বেড়াচ্ছেন আজীবন।
কাজেই পালাবার পথ নেই আমার। কেট মসোচিত ফ্ল্যাট অ্যাবস চাইতে পারি কিংবা সি এল ক্লাস মার্সিডিস, কিন্তু নতুন বছরে আর মাথা গরম করব না, এ ধরণের কপোলকল্পনার ঠাঁই নেই আমার শপথের তালিকায়।

আমি শুধু চাই ব্যাপারটা যথাসম্ভব কমের ওপর রাখতে। অন্যায্য চাওয়া বলুন?

ভুক্তভোগীরা জানেন মাথায় রক্ত উঠে যাওয়ার সেরা ওষুধ হচ্ছে রাগটা তৎক্ষণাৎ দেখিয়ে ফেলা। গলার শিরা ফুলিয়ে চেঁচাতে পারলে ভালো, আরও ভালো হাতের কাছে কিছু পেলে সেটা ছুঁড়ে ফেললে। কিন্তু এসব ভালোভালো ব্যবস্থায় ক্রমাগত জল ঢেলে চলেছে সায়েন্স এবং তার ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি।

আমার মত অভাগাদের, যাদের হাতের কাছে লোক নেই, রাগ দেখাতে হলে ফোন একমাত্র সম্বল, তাদের পক্ষে মোবাইল ফোনের থেকে অপদার্থ জিনিস আর দুটি হয় না। ঘরে ঘরে সেই প্রিয়দর্শিনী মডেলের ফোনের কথা মনে করে দেখুন, খটাং করে রিসিভার ক্রেডলের ওপর নামিয়ে রাখলেই অর্ধেক রাগ জল। তার পরের কর্ডলেস ফোনের জমানাও মোটের ওপর মন্দ না। রাগ করে দেওয়ালে ছুঁড়ে মারলেও অ্যান্টেনাটুকুই খুলে আসত শুধু। সেটাকে আবার সেলোটেপ দিয়ে জুড়ে নিলেই ফোন আবার যে কে সেই।

সে জায়গায় মোবাইল ফোন দুম করে নামিয়ে রাখা যায় না, ছুঁড়ে ফেললে সে টসকায় পর্যন্ত না। বড়জোর ঢাকনা খুলে ব্যাটারি ছিটকে পড়ে। হোস্টেলে থাকতে এক জুনিয়র মেয়ের বিপদের বহর দেখেছিলাম। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তুমুল ঝগড়ার পর কংক্রিটের রাস্তায় আছড়ে ফেলার পরেও যখন নোকিয়ার গায়ে আঁচড়টি লাগেনি তখন তার ওপর দাঁড়িয়ে, চার ইঞ্চি হিল দিয়ে ঠুকে ঠুকে সে ফোন ভাঙতে হয়েছিল।  

সায়েন্স, সে আপনি মানুন আর না মানুন, সুবিধের থেকে অসুবিধে পাকিয়েছে বেশি। খটাং করে নামিয়ে রাখার মত ফোন নেই, দড়াম করে বন্ধ করার মত দরজা নেই। দুমদাম পা ফেলে হাঁটলে কার্পেট সমস্ত শব্দ শুষে নেয়, আমার রাগ নামার বদলে আরও চড়তে থাকে। মায়ের মত ঝনাৎ করে চায়ের কাপ নামিয়ে রাখা অথবা রান্নাঘরে স্টিলের বাসনপত্র যথাসম্ভব বেশি আওয়াজ করে নাড়াচাড়া করার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। রাগ দেখিয়ে খুন্তিপেটা করলে নন-স্টিক কড়াই দুদিনে দেহ রাখবে।

রাগ দেখানোর সুযোগের অভাবেই রাগ করা ছাড়তে হবে মনে হচ্ছে। এই ছুতোয় যদি রিপুদমন হয়ে যায় তাহলে মন্দ নয় অবশ্য। তখন না হয় বলা যাবে সায়েন্স একটা ভালো কাজে লেগেছে।
  

Comments

  1. hashte hashte pete khil dhore gelo :D

    ReplyDelete
  2. eta jaa taa :D kintu apnake dekhe eto ragi mone hoy na!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. চেহারা দেখে ভুলবেন না অরিজিৎ, আমার থেকে রাগী মানুষ পৃথিবীতে আর জন্মেছে কিনা সন্দেহ।

      Delete

Post a Comment