আমার দু'হাজার উনিশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ




অবশেষে সেই ক্ষণ উপস্থিত। দুহাজার আঠেরো, যা কি না কল্পবিজ্ঞানের কোনও বছর, তার ফুরিয়ে যাওয়ার। এই সব মুহূর্তে বিশ্বাস করতেই হয়, দু’হাজার বাইশ, দু’হাজার তেইশ ইত্যাদি সাল, আর্থার সি ক্লার্ক কিংবা অদ্রীশ বর্ধনের বইয়ের পাতা ছাড়া যারা কোথাও নেই, থাকা উচিত নয়, সেগুলোরও এই রকম স্মরণসভা লেখার সময় আসবে। যে রেটে চলছে, আমিই লিখব। পাকা চুল হয়তো আরও কয়েকটা বাড়বে, সম্ভবতঃ অনুতাপও, কিন্তু এ ঘটনা ঘটবে।

বছরের এই সময়টা আমার প্রিয়। গরম লাগছে না, ঘাম হচ্ছে না। চারদিকে গত বারো মাসের বারোটি বেস্ট বই, তেরোটি বেস্ট সিনেমা, সতেরোটি বেস্ট ছবির লিস্ট। উৎসব-উৎসব ফিলিং, গিভ অ্যান্ড টেক-বিহীন। সবথেকে ভালো খোলস ছাড়ানোর, শুকনো আমি খসে যাওয়ার অনুভূতিটা। একটাই খারাপ, সামনের বছরের রেজলিউশনসংক্রান্ত স্বপ্নের পোলাওয়ে ঘি ঢালার স্বপ্ন শেষ, কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে সত্যি সত্যি সেগুলো রক্ষার্থে নামতে হবে। বিচক্ষণরা এই জন্য রেজলিউশন নেওয়ার বোকামো করেন না এবং প্রত্যাশা পূর্ণ না করার ফেলিওর থেকে নিজেকে মুক্তি দেন। তাছাড়া রেজলিউশন নেওয়া সহজ, শক্ত হচ্ছে নিজেকে বদলানো। আর যদি সেটা না পারা যায় তাহলে নতুন কিছু হওয়ার চান্স নেই। যা এতদিন হয়ে এসেছে তারই পুনরাবৃত্তি হবে। আর নিজেকে আদৌ বদলান যায় কি না সে নিয়ে তো সংশয়ের বিরাট স্কোপ রয়েছেই। যদি পুরনো কুন্তলার টাইপ হয় রেজলিউশন নেওয়ার জন্য নেওয়া এবং সেগুলো রক্ষা করতে না পারা, আর পুরনো কুন্তলা যদি পুরনো কুন্তলাই থাকে, তাহলে নতুন বছরের নতুন রেজলিউশনের পরিণতিই পুরনোই হবে।

কিন্তু যদি আমরা আমাদের টাইপের দাসই হয়ে থাকি, তাহলে রেজলিউশন নেওয়া থেকেও আমার মুক্তি নেই। কারণ আমার টাইপ রেজলিউশন নেওয়া। নেশা, পেশা এবং স্বাস্থ্য, এই তিন ক্ষেত্র জুড়ে আমার দু’হাজার উনিশের রেজলিউশন নেওয়া শেষ। অনেকে রেজলিউশনে অবিশ্বাসীরা ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার প্রেফার করেন। এমন একটা শব্দ যা তাঁদের সামনের বছরের কম্পাস হবে।  আমার আরেকটা টাইপ হচ্ছে যেটাতে বিশ্বাস করা সেটাতে খুব জোরদার বিশ্বাস করা। যাতে যাতে কাজ দেওয়া সম্ভব বা কাজ দিলেও দিতে পারে বা কারও কাজ দিয়েছে শোনা গেছে, রেজলিউশনসংক্রান্ত এমন সমস্ত টোটকা তাগা তাবিজ মাদুলি, ঝাড়ফুঁক, জাদুটোনা, বাটি-চালানোতে আমি বিশ্বাস করি। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আমার দু’হাজার উনিশের শব্দ ‘শেষ’। এ বছর আমি বই পড়া শুরু করলে শেষ করব। লেখা শুরু করলে শেষ করব। আগের কিংবা তারও আগের বছর শুরু হয়ে যা যা আধখানা হয়ে পড়ে আছে সেগুলো শেষ করব। যা যা শুরু করিনি, যদি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই, শেষ করব।

আপনারা যাঁরা যা টাইপই ( ‘টাইপই’ লিখতে গিয়ে ‘টাইপো’ লিখে ফেলেছিলাম, অসুবিধে নেই, আপনি টাইপো হলেও এ বার্তা আপনার জন্য প্রযোজ্য) হোন না কেন, রেজলিউশন-নেওয়া, না-নেওয়া, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, হঠকারী, বিচক্ষণ  - আপনাদের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। দু’হাজার উনিশ খুব ভালো আর খুব আনন্দে কাটুক। যা চান তাই যেন পান। 

হ্যাপি নিউ ইয়ার। 


Comments

  1. Shesh ei jaeno notun shuru hok, tomar jonyo ei chailam ... Happy New Year 2019

    ReplyDelete
    Replies
    1. নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আমার তরফ থেকেও।

      Delete
  2. Happy New Year! This is the best season for NCR folks :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হায়েস্ট ফাইভ, রণদীপ। নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা জেনো।

      Delete
  3. অনেক শুভেচ্ছা রইলো নতুন বছরের জন্য কুন্তলা | তোমার ইদানিং লেখাগুলো পরে একেবারে টেলিপ্যাথির মতো লাগলো. পুরী গিয়েছিলে, আমি আর আমার মেয়েও এই প্রথম পুরী গেলাম ডিসেম্বরের ১২ই | একটা ডেস্টিনেশন বিয়ে ছিল | তার আগে দিল্লীতে দুদিন ছিলাম | মঙ্গলাজড়ির গল্প খুব ভালো লাগলো সেখানে না গেলেও ভরতপুর বার্ড sanctuary গিয়েছিলাম আগ্রা থেকে | খুব হলো লেগেছিলো সেটাও, বিশেষত রাজস্থানের সব ফোর্ট আর প্যালেসের পর আরো ভালো লাগলো | উদয়পুরে গিয়ে বসে বসে তোমার লেখা পড়েছি আর বাগোর কি হাভেলিতে ধৰোহৰ নাচ দেখেছি | প্রথমদিন টিকেট না পেয়ে পরদিনের টিকেট কেটে হোটেল ফিরে এসে দেখি হোটেল থেকে ওই নাচেরই আয়োজন করেছে হোটেলের লনে christmas eve এর এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে | যারা নাচলো পরদিন ওরাই নেচেছিল হাভেলিতে | হোটেল ambraiতেও খেতে গিয়েছিলাম কিন্তু তখন চা ছাড়া আর কিছু ছিলোনা | রোপওয়ে দিয়ে কর্নিমাতার টেম্পলে গিয়েছিলাম | সেখান থেকে view সব থেকে ভালো ছিল | আর গিয়েছিলাম জয়পুর আর যোধপুবে | সেখান থেকে আগ্রা আর আবার দিল্লী, এবার ফেরার পথে | আমাদের সীমিত সময়ে এর বেশি কিছু হয়নি | ছেলে মেয়ের খুব ভালো লেগেছে সব জায়গায় | উদয়পুর আর ভরতপুর বেশি favorite . খুব ঠান্ডা লাগেনি কোথাও | দিনের বেলা তো খুব কমফোর্টেবল ছিল | এবার পুরি গেলে মটর কে পানি খাবো আর মঙ্গলাজড়ি যাবো | তোমার লেখা যে এত ভালো সে আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা|

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে অমিতা, দারুণ ঘুরেছেন তো। খুব ভালো। আমাদের ভরতপুর পক্ষীপার্কে যাওয়া হয়নি, ইচ্ছে খুব, আপনার ভালো লেগেছে শুনে উৎসাহ বোধ করছি। এবার গিয়ে ফেলতে হবে। উদয়পুরের ধরোহর নাচটা কী ভালো না?

      আপনাকে আর আপনার পরিবারের সবাইকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দু'হাজার উনিশ খুব ভালো কাটুক।

      Delete
  4. নাচটা খুব ভালো কিন্তু আরো ভালো সেটা বাগোর কি হাভেলিতে দেখা | হাভেলি আর গণ গৌর কি ঘাট খুব ভালো লেগেছে | সাহেলিও কি বাড়িও গেলাম তোমার লেখা পরেই | দিল্লিতে জামা মসজিদের করিমসে খেতে গেলাম প্রথম রাতে | কিন্তু তোমার লেখাটা পড়ে যাওয়াটা উচিত ছিল | কাল সেই লেখাটা পড়লাম রুটির ছবি দেখেই মনে পড়লো আমাদের রুটির কথা | কি অসাধারণ রুটি আর একদম ঠিক বর্ণণা, বালিশের মতো নরম | যাবার সময় উবের করে গেলাম আর অনেকটা হাঁটতে হলো গলির মধ্যে | খুব ভালো লাগলো সেই গলির নানারকম দোকানের পাশ দিয়ে যেতে | কত জায়গায় শিক কাবাব আর ফ্রাইড চিকেন বানাচ্ছিল | দাড়িওয়ালা দর্জি ম্যাপ নিচ্ছিলো | কিন্তু ফেরার সময় বেশ খানিকটা হেঁটে একটু বড় রাস্তায় এসেও কোনো উবার আসছিলোনা | শেষ অব্দি একটা অটো রাজি হলো আমাদের আড়াইশো টাকায় গোল মার্কেটের কাছে হোটেলে নিয়ে যেতে | মেট্রো করাটাই উচিত ছিল | পরদিন এক জায়গা থেকে মেট্রো করে রাজীব চৌকে নামলাম | কিন্তু কোনো অটো নিয়ে যেতে রাজি হলোনা হোটেলে | হেঁটে গেলাম তাই, সময় কম ছিল | তার আগে Wengers থেকে শামি কাবাব কিনে খেলাম | অপূর্ব স্বাদ তার |

    ReplyDelete
    Replies
    1. গন গৌর ঘাটটা সিরিয়াসলি ভালো দেখতে, তাই না অমিতা? আমরা দ্বিতীয় দিন গিয়ে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। দিল্লির যে কোনও অঞ্চলেই, বিশেষ করে ওই চাঁদনি চক এরিয়ায় ঘোরাঘুরির জন্য মেট্রো সবথেকে সুবিধেজনক। সস্তা, দ্রুত, আরামদায়ক। আপনার বেড়ানোর গল্প শুনে আমারই পালাই পালাই মন হচ্ছে।

      Delete

Post a Comment