হ্যাপিনেস ও শাহরুখ খান


বাইরের ঘরে কক্স অ্যান্ড কিংস-এর ব্যাগ রাখা থাকে। বাদামী গায়ে খুদি খুদি সাদা লেখা। কখনও কখনও স্যামসোনাইটের একটা মেরুন ট্রলি। দুটোর একটা, কখনও কখনও দুটোই নিয়ে অর্চিষ্মান কোথায় যেন চলে যায়, ফেরে, দেড়দিন মতো থাকে, আবার চলে যায়। সে যাক। ওর যাওয়া আসা স্রোতে ভাসা সয়ে গেছে আমার। শুধু রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বিছানার ওদিকটায় গড়িয়ে গেলেই উন্মুক্ত বেডশিটের ঠাণ্ডা ছ্যাঁকায় ঘুম ছুটে যায়। হিটারটা দেহ রাখল নাকি? বারান্দার গ্রিলের ওপারে ঝমঝম বৃষ্টি। ঘুমের বদলে দুঃখরা দল বেঁধে আসে। ঠেকাতে ফোন তুলে শর্টস দেখি। শাহরুখ খান বলেন, ওয়েল কী বলেন সে আর ভেঙে বলছি না, যা বলেন তাতে স্পষ্ট হয় কেন আমার জীবনে কিছু হল না।

এত রেস্ট নিলে কারও জীবনে কিছু হওয়া সম্ভব না। ইউ হ্যাভ টু বি রেস্টলেস টু বি সাকসেসফুল।

ফোন নামিয়ে রেখে বৃষ্টির ঝমঝম শুনি। কারিদা-র কথা ভাবি। এই ঠাণ্ডায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁপছে। ফাইট, কারিদা, ফাইট। বসন্ত এল বলে। আর ক'টা মাস। হলুদ, শুকনো পাতার বোঝা ঝরে যাবে। তারপর তুমি ঝাড়াপাড়া দিয়ে উঠবে। তুমি আর অর্চিষ্মান।

সব গল্প যে গুল নাও হতে পারে, কারিদাকে দেখে টের পাই। দা লাস্ট লিফ। টেন-এ ছিল? না টুয়েলভ-এ? জানালার কাচে মৃতপ্রায় লতার শেষ জীবন্ত পাতার দিকে তাকিয়ে রোগী ভাবত, পাতা যতদিন আছে ততদিন সেও আছে। 'প্রগামিনী' পত্রিকায় প্রকাশিত হত বটেশ্বরের ধারাবাহিক উপন্যাস। ‘কে থাকে কে যায়’। বাস্তবের অলকার বিশ্বাস জন্মেছিল উপন্যাসের রুগ্ন অলকাকে বাঁচিয়ে তুললেই বেঁচে উঠবে সেও। আমারও ভেতরে কারিদার প্রতি সে রকমই একটা ভরসা জন্মেছে কোথাও। এক বেগতিক সময়ে বাড়ি ফিরে দেখেছিলাম কারিদা মরে কাঠ। খটখটে ডালপালায় সবুজের ছায়া পর্যন্ত নেই। নিজেকে মার্ডারার মনে হয়েছিল। জল ঢালা শুরু হল। কীসের গোড়ায় জানি না। কীসের আশায় তাও না। কে-ই বা ঢালল? আমি? অর্চিষ্মান? নাকি দু'জনেই?

ক'মাস পর, এক না পাঁচ ভুলে গেছি, এক সকালে শুকনো ডালে সবুজ ফুটকি। দেখতে দেখতে কারিদার সারা গা নতুন পাতায় ঢাকা পড়ল। আপাতত গোড়া থেকে তিনটে চারা বেরিয়েছে। মাথা সিলিং ছোঁয় ছোঁয়। একদিন বারান্দা থেকে ঝাঁটা বগলে ফিরল প্রসেনজিৎ। এ হাত দিয়ে ও হাতের কনুই ছুঁয়ে বলল, বেশি না, এই এতখানি মুড়িয়ে দিলে বেশ ষণ্ডা হবে। শিউরে উঠলাম। ষণ্ডা চাই না, মাগো। আমার লিকলিকে হিলহিলেই পছন্দ। প্রসেনজিৎ দমে গেল। অন্ততঃ বেঁধে দেওয়া যাক। সবেতেই না করলে কেমন দেখায়, তাই ঘাড় নেড়ে দিলাম। প্রসেনজিৎ চলে যাওয়ার পর দৌড়ে গিয়ে দেখি যা ভেবেছি তাই, এমন টাইট করে বেঁধেছে যে কারিদা দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে গেছে। বাঁধন খুলে আবার বাঁধার ভঙ্গি করলাম। প্রায় না বাঁধার মতোই। তারপর, বাড়ি ফাঁকা থাকলে রোজই যা করি - কারিদার নতুন পুরোনো পাতায় হাত বুলিয়ে বললাম, তুমি যে ফিরে এলে সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। থ্যাংক ইউ।

আর ইয়ে, আই লাভ ইউ।

এ জীবনে যা ঘটে সব র‍্যান্ডম, আমার পরিস্থিতির সঙ্গে কারিদার আধখানা পাতার এদিক থেকে ওদিক হওয়ার সম্পর্ক নেই, থাকতে পারে না জেনেও, বেঁচে থাকা নিয়ে যেটুকু রোম্যান্স এখনও বেডশিটে পুরোনো রক্তের ছাপ রেখে গেছে - কারিদার বেঁচে ওঠাতে নিহিত তাৎপর্যের মুকুট পরানোর বিলাসিতা অ্যালাউ করি।

অনেক ভেবে দুটো তাৎপর্য বার করেছি। অঞ্জন দত্ত আমার আগেই বার করে ফেলেছেন। শেষ বলে কিছু নেই। রবীন্দ্রনাথ অঞ্জন দত্তেরও আগে। রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে। প্রেম বলি বা প্রাণ, অনেক গভীর পর্যন্ত চারিয়ে যায়। টান মারলেই উপড়ে ফেলা যায় না। শেষ অত সস্তা না। হারিয়ে ফেলাও না। সেই যে প্লেনে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছিলাম আর পাশের সিটের দয়ালু অপরিচিতা নেমে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ইট'স নট লস্ট। রিমেমবার, নাথিং ইজ এভার লস্ট। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে সেটাই সত্যি।

মাঝরাতে শূন্য শয্যার ছ্যাঁকা খাওয়ার থেকেও শক্ত একা একা ঘুম থেকে ওঠা। মনখারাপের রোগীরা জানেন, ঘুম ভাঙার পর কত দ্রুততায় বিছানা থেকে নিজেকে ছিঁড়ে তুলতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করবে আজকে দিনটা আপনি কনট্রোল করবেন নাকি আপনার ব্রেন। মনখারাপের রোগীরা এও জানেন, আপনার ব্রেন আপনার বন্ধু নয়। চোখ খোলারও আগে সে কাজ শুরু করে। অ্যামিগডালা থেকে ভালো ভালো সব ইমোশন - ভয় শোক হতাশা - ফোঁটা ফোঁটা চোখ, ঘাড়, কাঁধ, বেয়ে আঙুলের ডগা আবার ওদিকে গলা বুক বেয়ে সোজা নেমে মালাইচাকি হয়ে গোড়ালি। ওহ্‌, সে যা সুস্বাদু স্টুপার। অনির্বচনীয় অসাড়ত্ব। ওই কোমল কোমার কম্বল জড়িয়ে গোটা দিন শুয়ে থাকা যায়।

কিন্তু থাকলে চলবে না। দা ওয়ে উই স্পেন্ড আওয়ার ডেজ ইজ দা ওয়ে উই স্পেন্ড আওয়ার লাইভস। ব্রেনকে হারাতে যে পারে সে হচ্ছে বডি। মনের মোকাবিলায় শরীর। হাত পা কনুই হাঁটুর গেরিলা বাহিনী গোপনে প্রস্তুত করতে হয়। ব্রেন যখন বিশ্রী ইমোশনের সাপ্লাই দিতে ব্যস্ত যারা লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে বাথরুমে চলে যাবে। কল খুলে কনকনে ঠাণ্ডা জলের ঝাপট দেবে চোখেমুখে।

সেখানেও অর্চিষ্মান কাজে লাগে। অন্য কাউকে০ "কী গো আর কত ঘুমোবে?" বলে ঠেলতে পারা নিজের ঘুম ভাঙাতে কী পরিমাণ হেল্প করে - ও না থাকলে টের পাই। একদিন অন্যরকম ঘটল। গল্পের বই পড়ে, কানে গান গুঁজে হাঁটতে হাঁটতে যা কোনওদিন ঘটবে না কল্পনায় ঘটিয়ে, সোয়া পাঁচটা নাগাদ রান্নাঘরে যাচ্ছি দ্বিতীয় কাপ চা নিতে - দেখি বিছানায় আধোঅন্ধকারে একটা ভীষণ লম্বা আর ভীষণ রোগা লোক টানটান বসে আছে।

ভুরু কুঁচকে চোখ সরু করলাম। অর্চিষ্মান।

জুনিয়র সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় পড়েছিলাম। এক ভদ্রলোক অফিস যাবেন বলে বেরিয়ে দেখেন ট্রেন বাস সব অবরোধ। স্ত্রী খালি খালি বলেন একদিন ছুটি নাও। সময় দাও না মর্মে নালিশ জানান। আজ পড়ে পাওয়া সময় দিয়ে স্ত্রীকে খুশি করে দেবেন ভেবে শিস দিতে দিতে বাড়ি এলেন। দরজা খুলে স্ত্রী হাঁ করলেন। এ কী?! এখন বাড়ি এসেছ কেন? অফিস নেই?

আমি সাড়ে সাতটা থেকে অর্চিষ্মানকে ঠেলতে শুরু করি কারণ ততক্ষণে আমার তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা একলা কাটানো হয়ে যায়। নিজেকে নিজে আর সহ্য করা যায় না। ঠেলতে ঠেলতে সোয়া আটটা হয়ে যায়। দৌড়ে রেডি হতে হতে, ওরই মধ্যে কফি, ইউটিউব গুঁজতে গিয়ে রোজ মনে হয়, ধুস্‌, কথাই বলা হল না।

অর্চিষ্মানের মতে দুটো লোকের একে অপরের সঙ্গে মানুষিকভাবে যত কথা বলা সম্ভব আমরা তার আপার লিমিট হিট করে ফেলেছি, এর থেকে বেশি বলতে গেলে অমানুষিক কিছু একটা করতে হবে। অর্চিষ্মানের ধারণা আমার কথা বলা বা গল্প করার ইচ্ছেটা স্বার্থপর। নিজে যতক্ষণ কানে গান লাগিয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলি, গল্পটল্প ছাড়া দিব্য চালিয়ে দিই। যখন আমার লাইফ শেষ কিন্তু অর্চিষ্মান ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে, তখনই আমার যত গল্পের বেগ চাপে। অর্চিষ্মান ঠিকই বলে। কারণ এক্স্যাক্টলি এই ব্যবহার করে ও নিজেও।

ও ঘর থেকে এ ঘরে এসে যখন দেখলাম পাঁচটা ঊনত্রিশেই অর্চিষ্মান সোজা উঠে বসে আছে, বললাম, এ কী, এখন উঠেছ কেন, শুয়ে পড়, শুয়ে পড়। কারণ ওটা আমার মিটাইম আর মিটাইমে আমি অর্চিষ্মানের সঙ্গে গল্প করতে চাই না।

অর্চিষ্মানের ঘুম এল না। কফি বসিয়ে ইউটিউব চালানো হল। এমন কিছু যাতে প্রচুর নিন্দের অবকাশ আছে। নিন্দেটিন্দে করেও সময় ফুরোল না।

এ রকম হলে আমরা বেরিয়ে পড়ি। সাউথ ইন্ডিয়ান দোকানগুলো ভোর ভোর খোলে। কৈলাস কলোনিতে তিন চারটে আছে, পাশাপাশি। জাগারনাট, শ্রী নমেশ্বরম, পদ্মনাভম। ইডলি দোসা খাওয়া যায়, পুরী সবজিও মচৎকার। দোকানের উল্টোদিকে দিল্লির নিয়ম মেনে পাড়ার ছোট্ট পার্ক। গেটে স্বাস্থ্যোদ্ধারকারীদের জটলা। কাগজের চায়ের কাপ হাতে পার্ক করা স্কুটারের ওপর বসে হাসিখুশি গল্প। কী বলেন কী শোনেন চা-টা কেমন হয়েছে কিছুই জানা যায় না, কিন্তু কাচের দরজার ওপারের সাইলেন্ট সিনেমা থেকে এমন ফুর্তি ফুটে বেরোয়। ফুর্তিটা কোথা থেকে উৎসারিত হচ্ছে? চা থেকে? সকাল সকাল আড্ডা মারা থেকে? স্কুটারের ওপর বসা থেকেও হতে পারে। একদিন একটা স্কুটার জোগাড় করে বসে দেখতে হবে। ওঁরা চলে গেলে আমরা দোকান থেকে বেরোই। তেমাথায় যে যার উবারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। মোড়ের নড়বড়ে টেবিলে স্টোভে কালো হয়ে যাওয়া সসপ্যানের কিনারায় চা গবগব ফোটে। তেলতেলে নিউজপেপারে ব্রেড পকোড়ার পাহাড় হয়।

*****

কোনও কোনও দিন শিকারে বেরোতে হয় না, মজা এসে আপসে ধরা দেয়। সেদিন নেহরু প্লেসে ‘চালচিত্র’ দেখতে গিয়ে যা হল। সিনেমা শুরু হওয়ার দশ মিনিট পর দুই ছায়ামূর্তি সিঁড়ি বেয়ে লাস্ট রো-তে উঠে এসে আমাদের সামনে দাঁড়াল। একটা ছায়া চেঁচিয়ে বলল, এ কী!

না হয় ভুল করে ওদের সিটে বসেই পড়েছি, তবু প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা, ফ্র্যাংকলি, বাড়াবাড়ি মনে হল। মনে হতে হতেই চিনতে পারলাম। ছায়াটা তিলকমামার। পাশের ছায়াটা সুমিতামামির।

অর্চিষ্মান মাঝে মাঝেই বলে, দিল্লিতে এত বছর ধরে আছি, কোনও চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় না, যা নাকি কলকাতায় হামেশাই হয়। মামামামির সঙ্গে সিনেমাহলে দেখাটা উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে থাকল। এক তো দেখা হওয়াটাই মজা। তার ওপর টমেটো সুপের রেসিপির জন্য মামিকে ফোন করব করব করছিলাম, সাক্ষাতেই জেনে নেওয়া গেল। মামি, মামিসুলভ পটুত্ব ও উদারতায় দুটো রেসিপি দিয়ে দিলেন। একটায় দুটো স্টেপ বেশি, অন্যটা তাড়াহুড়ো থাকলে। দুটোই শুনলাম। যদিও একটার দরকার ছিল না। কারণ আমার কোনও তাড়া নেই। প্রচুর সময়।

ইউটিউব শর্ট নিখিল কামথ-এর ইন্টারভিউর দু'লাইন এল। আটত্রিশ বছর বয়সী ভারতের ইয়ংগেস্ট বিলিয়নেয়ার। ক্লাস টেন ড্রপ আউট। বলছিলেন, সৎভাবে গুনলে সারা দিনে আমি নব্বই মিনিট কাজ করি। দ্যাটস অলসো পুশিং ইট। বাকিটা, প্রিটেন্ডিং টু ওয়ার্ক। ওঁর চেনা ডুডদের সঙ্গেও কথা বলেছেন নিখিল, সকলেই প্রিটেন্ডিং টু ওয়ার্ক। উইথ ফুল নলেজ যে উল্টোদিকে বসে থাকা ডুডটিও অলসো প্রিটেন্ডিং টু ওয়ার্ক।

ওয়েল। নিখিল কামথ আদৌ নব্বই মিনিট কাজ করেন কি না উনিই জানেন। মাইক পেলে লোকে কী বলে, কেন বলে, তার ল্যাজামুড়ো নেই। আমার সমসময়ে পশ্চিমবঙ্গে বড় হওয়া একজন সেলিব্রিটি শৈশবের স্ট্রাগল বর্ণনা করতে গিয়ে পডকাস্টে বললেন, সপ্তাহে একদিন মাংস হত কাজেই বোঝাই যাচ্ছে আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত ছিলাম। মানুষের একটা কমন বাসনা যা বুঝেছি - নিজের জীবনটাকে মনমোহন দেসাইয়ের সিনেমা বানিয়ে তোলা। ক্লাস টেনে ফেল করেছিলাম, বাবা যা জোরে বেল্টের বাড়ি মেরেছিলেন, সপ্তাহে ছ'দিন মাংস খেতে পেতাম না, চাটাইয়ে গাঁথা দেওয়ালপত্রিকায় 'শীতের সকাল' রচনা পড়ে পাড়ার কাকু বলেছিল এ মেয়ের হবে - সবই প্লট পয়েন্ট হিসেবে কাজে লাগে।

তাছাড়া কেউ তো ভ্যাকুয়ামে কথা বলে না। নারায়ণমূর্তি সপ্তাহে সত্তর ঘণ্টা কাজ করতে বলেছেন, সেই শুনে কে যেন শিউরে উঠে বলেছেন সত্তর ঘণ্টা কাজ করলেই হয়েছে, মিনিমাম নব্বই ঘণ্টা কাজ না করলে কেঁদে কূল পাবেন না - এই সব নেপথ্যসংগীত নিখিলকে নব্বই মিনিটের ন্যারেটিভ নামাতে কতটা উদ্বুদ্ধ করেছে তাও তো ছেনে বার করা অসম্ভব।

তবু কামথের কথাটা কানে লাগে। কারণ প্রশ্নটা স্বাধীনভাবেও আমার মাথায় এসেছে। নব্বই ঘণ্টা ওয়ার্ক উইকের কত ঘণ্টা প্রিটেন্ড? কত ঘণ্টা ওয়ার্ক? এসেছে অবশ্য আমার নিজের জীবনে কনটেক্সটেই। আমার গোটা জীবনটাই আজকাল প্রিটেন্ড হয়ে গেছে। প্রিটেন্ডিং টু ওয়ার্ক। প্রিটেন্ডিং টু রিমেমবার। প্রিটেন্ডিং টু ফরগেট।

সামনের ঘরে ব্যাগ আবার রেডি। বেরোনোর আগের সন্ধেয় অনেক কাজ। ইস্তিরি ফেরত নাও, ব্যান্ডেড কেনো। আগের বার যে ছোট কোলগেট কেনা হল? আমার ধারণা অর্চিষ্মান হোটেলে ফেলে এসেছে, অর্চিষ্মানের ধারণা কেনাই হয়নি। রুপোলি রেখার দিকে তাকাই। পেস্ট খুঁজে না পেলে আবার কিনতে হবে, কিনতে হলে খেয়েদেয়ে বেরোতে হবে। আর বেরোলে তো কাজ সেরেই বাড়িতে ঢুকে পড়ব না। হাঁটব। থানার আমবাগানের ঝুপসি পার হয়ে টিমটিম চায়ের ঝুপড়ি। ভদ্রলোক ভালো চা বানান। যদিও অযোধ্যায় রামলালার প্রত্যাবর্তনের উদযাপনে পতাকা গুঁজেছিলেন দেখে আমার প্রেজুডিসড মন মুষড়ে পড়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, নাহ্‌, এঁর থেকে আর চা খাব না। তারপর মনে পড়ল তাহলে ডাক্তারবাবুকেও বয়কট করতে হয়। এই ভদ্রলোক তো তবু পাঁচ টাকার পতাকা টাঙিয়েছেন, ডাক্তারবাবু তাঁর আলিশান চারতলা বাড়ির সিংদরজার দু'দিকে প্রায় মানুষপ্রমাণ পদ্মপতাকা লহরিয়েছিলেন।

অর্চিষ্মানকে বলেছিলাম। তোমার ডাক্তারবাবুর বাড়িতে এই কাণ্ড।

ডাক্তারবাবু আমারও, কিন্তু এক, আমার শরীর খারাপ হয় না, দুই, সঙ্গে থাকার একটা সুবিধে হচ্ছে অপছন্দের জিনিসপত্রকে “তোমার” ট্যাগ দিতে পারা। তোমার ডাক্তারবাবু। তোমার বিউলির ডাল । তোমার শাহরুখ খান। তোমার ডাক্তারবাবু গেটের দু’দিকে দুটো প্রকাণ্ড রামলালা পতাকা পুঁতেছেন। শুনে মাথা নেড়ে, ঠোঁট দিয়ে ছিক ছিক শব্দ করে, ফোনের দিকে তাকিয়ে 'ওরে বাবা কত গল্প করা হয়ে গেল কুন্তলা আর টাইম নেই,' শিউরে উঠে অর্চিষ্মান হাসি হাসি মুখে টুইটার চষতে লেগেছিল।

ডাক্তারবাবু, চাওয়ালা কাউকেই বাতিল করিনি। স্বার্থ আছে। তাছাড়া রামলালাটালা পোশাকের তফাৎ, ভেতরে ভেতরে আমরা সবাই একই মহৎ বাঁদরের বংশধর।

বাঁদিকে কালীবাড়ি, ডানদিকে চার নম্বর মার্কেট। পাঁচশো মিটার এগোলে বাঁদিকে ঝালমুড়িদাদা বসেন, তিরিশটাকায় পাঁচশো গ্রাম ঝালমুড়ি দেন। কী করে দেন রামলালাই জানেন। ডানদিকে কল্যাণ ব্যানার্জির ক্লিনিক। পৃথিবীর যত কল্যাণ সবাই কি ব্যানার্জি? নাকি যত ব্যানার্জি সবাই কল্যাণ? এক নম্বর মার্কেট এসে যায়। মার্কেটের পেছনে চালু চায়ের দোকান - রাজুদার ‘সিংগিং ট্রি’ মনে পড়ায়। এ দোকান সে দোকান নয়, তবু ঝেঁটিয়ে লোক আসে। অর্চিষ্মান চা বলল, আমি লেবু চা বললাম। অর্চিষ্মান অমনি "আমিও আমিও" বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমরা থাকাকালীন যত খদ্দের এল আমার টুকে লেবু চা অর্ডার করল। লেবু চা-টা সত্যি ভালো বানায় এখানে। লেবুর টেস্টটা আসে প্লাস্টিকের বোতলের সিন্থেটিক নির্যাস থেকে, কিন্তু চা রেডি হয়ে গেলে কাপে রিয়েল গন্ধরাজ লেবুর স্লাইস ভাসিয়ে দেওয়া হয়। অর্চিষ্মান বলল, রোজ রাতে আসবে খাওয়ার পর? আমি জানি ওর ইচ্ছের অনুঘটক শুধু লেবু চা নয়। দু’চারটে পুরুষ্টু কুকুরও, যারা বন্ধুত্বপূর্ণতার আঁচ পেলে পা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।

প্রেমের শুরুতে, যখন বুদ্ধদেব বসু থেকে গুজরাতি স্যান্ডউইচ সবেতেই মিল বেরোচ্ছে আর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে - এও কি সম্ভব? এক্স্যাক্টলি আমার জন্য অর্ডার দিয়ে কুমোরটুলিতে একজনকে বানানো হয়েছে? তখন আমাদের সেই অনন্ত মিলের মিছিলে ওপরের দিকের একটা মিল ছিল যে দুজনেই ওয়াইল্ড লাইফের সঙ্গে সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করি। বাঘসিংহগণ্ডার তো বটেই, যে সব ওয়াইল্ড লাইফ পাড়ার রাস্তায় রাস্তায় ভৌ ভৌ করে দৌড়োদৌড়ি করে বেড়ায়, তাদের দেখেও গলা জড়াতে যাই না।

ভাগ্যিস দু’জনেই একসঙ্গে বদলেছি। এখন তিনটে বদের ধাড়ি কুকুর আমাকে এম ব্লকের মার্কেটের মোড় থেকে কফি শপ পর্যন্ত গার্ড দিয়ে নিয়ে যায়। সব গাঢ় রঙের জামাকাপড় লোমে ভর্তি হয়ে গেছে। এক এক শনিরবি "কী গো আর কত ঘুমোবে" বলতে বলতে রেগে গিয়ে একাই কফি শপে চলে আসি। দু’ঘণ্টা পর মুখ তুলে দেখি দরজার বাইরে একটা লম্বা লোক ঝুঁকে পড়ে শান্ত, সিনসিয়ার মুখে কুকুরের গায়ে হাত বোলাচ্ছে। লোকটাকে আমি চিনি।

এক জীবনে আমরা আসলে কতগুলো মানুষের সঙ্গে থাকি, ভাবা যায়? একই নদী কতবার পারাপার করি?

সকালে ব্যাংকের পাশ দিয়ে অর্চিষ্মানের উবার অদৃশ্য হয়। অর্চিষ্মান ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে হাত নাড়ি। একা থাকার প্রথম রাতে, এত প্র্যাকটিসের পরেও, ছুটির ফিলিং। লুসি ফোলি-র দা মিডনাইট ফিস্ট-এর বাকি দেড়শো পাতা একটানে শেষ করি। অনেকটা গোয়েন্দা গল্প একসঙ্গে পড়া, অনেকটা বিরিয়ানি (ভেজ) খেয়ে ঘুমোতে যাওয়ার মতো আরামের। বা এক শিশি চানাচুর একা একবারে শেষ করার মতো। বা ফ্যামিলি প্যাক পটেটো চিপস গোটাটা একা। বই শেষ হতে আড়াইটে। রুটি তরকারি ডিনার বাদ পড়েছে। পরোয়া নেই। এক কোটিগুণ বেটার কমপেনসেশন - শুকনো শুকনো করে ম্যাগি, রুপোলি প্যাকেটের টেস্টমেকারের সঙ্গে এক্সট্রা দু'চামচ চিলি ফ্লেক্স।

ফোনে অর্চিষ্মানের পৌঁছসংবাদ অপেক্ষা করছে। এখন বেটার, কুন্তলা? হ্যাপি?

দিল্লির শীতে হিটারজ্বলা রাতে, ছাদের নিচে লেপের তলায় শুয়ে গোয়েন্দাগল্প শেষ করে ম্যাগি খাচ্ছি - উত্তরটা সে থেকেই স্পষ্ট। তবু সময় নিই। ইউটিউব শর্টস স্ক্রোল করি। করণ জোহর প্রশ্নপত্রের কার্ডে চোখ বুলিয়ে জানতে চান, আর ইউ হ্যাপি?

উনিশশো ছেচল্লিশে হেমিংওয়ে গার্ডেন অফ ইডেন উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। পনেরো বছর ধরে লেখালিখি কাটাকুটি চলে। এই পনেরো বছরে হেমিংওয়ে ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দা সি লেখেন। দা মুভেবল ফিস্ট। উনিশশো একষট্টিতে হেমিংওয়ের মৃত্যুর পর গার্ডেন অফ ইডেন-এর তিনটে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা, অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়। দীর্ঘতমটি সারিয়েসুরিয়ে প্রকাশিত হয় উনিশশো ছিয়াশিতে। হেমিংওয়ের মৃত্যুর পঁচিশ বছর পর।

সেই গার্ডেন অফ ইডেন-এ হেমিংওয়ে লিখছেন - হ্যাপিনেস ইন ইন্টেলিজেন্ট পিপল ইজ দা রেয়ারেস্ট থিং আই নো।

করণ জোহর অপেক্ষা করেন। আর ইউ হ্যাপি?

স্ক্রিনে ভেসে ওঠেন অর্চিষ্মানের শাহরুখ খান। আই অ্যাম নট স্টুপিড এনাফ টু বি হ্যাপি।

বাইরে বৃষ্টি পড়ে। কুকুর চেঁচায়। আর ক'টা দিন। তারপরেই কারিদার যন্ত্রণার শেষ। কারিদা যতদিন আছে, সব থাকবে। কারিদার কামব্যাকের মির‍্যাকল - মগজে নাড়াচাড়া করি।

মাসকয়েক আগে, অর্চিষ্মানের অনুপস্থিতির আগের এপিসোডে একদিন বারান্দা থেকে ঝাঁটা বগলে ফিরল প্রসেনজিৎ। নীরবতা কী দিয়ে ভরাব ভাবতে ভাবতে শেষমেশ কারিদার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কমেন্ট করেছিলাম। কারিগাছটা (ফাঁকা বাড়িতে বেডকাভার, থার্মোমিটার, সেনর পেপিতো লেখা চিপসের প্যাকেটের সঙ্গে যতই সম্পর্ক পাতিয়ে বাড়ি ভরাই না কেন, লোকের সামনে সেগুলো প্রকাশ করে না কোনও পাগলে) কেমন ঝাড়াপাড়া দিয়ে উঠল? কী অবস্থা হয়েছিল মনে আছে?

প্রসেনজিৎ বলল, আমার মনে থাকবে না তো কার থাকবে? রোজ গোড়ায় জল ঢেলে গেছি, একটি দিনও বাদ দিইনি। ঠিক করে নিয়েছিলাম, একে না জ্যান্ত করে আমি ছাড়ব না।

যাক। একটা প্রশ্নের উত্তর মিলল। নিরানন্দের মেডেলও জুটল। অর্চিষ্মানকে "একদম" লিখে লেপ গলা পর্যন্ত টেনে চোখ বুজলাম।

Comments

  1. রোগা পিটুনিয়া গাছে জল দিয়ে দিন সাতেকের জন্য বাইরে আসতে হয়েছে, কি জানি কি হবে। Harari সায়েব বলেছেন যে আমরা গম গাছের চাষ করছি এরকম নয়, ব্যাপারটা উল্টো।কে জানে? Hemingway, Shaaharukh সবাই ঠিক বলেছেন তবে আমার ‌মনে হয় আমিই ভুল লোক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নালক, অনেকদিন পর। ভালো লাগল। পিটুনিয়া ভালো থাকবে। কারিদা যদি আমার মাথায় টুপি পরিয়ে আমাকে দিয়ে নিজেকে ঝাড়েবংশে বাড়িয়ে নেয়, আমি পৃথিবীর হ্যাপিয়েস্টতম (অন্য গর্বটা ছাড়তেও দ্বিধা করব না) মানুষ হব।

      Delete
  2. পাড়ার পার্ক বললেই হয়, কিন্তু মাঝে ছোট্ট শব্দটা চলেই আসে। পার্কে ঘাস থাক কী ধুলো।
    হ্যাপিনেস নিয়ে একমত, তবে আমার হ্যাপি আর বুদ্ধিমান কোনোটাই হয়ে ওঠা হোলো না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার ধারণা এখন 'ছোট্ট' স্কিপ করে 'পাড়ার' আর 'পার্ক' - এই দুটো শব্দ পাশাপাশি বলতে গেলে আমার জিভটিভ জড়িয়ে যাওয়া, খিঁচুনি লাগা, জ্বর আসা জাতীয় শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

      আমিও দুঃখী এবং বোকা। এতই বোকা যে হাতে কলমে প্রমাণ নিয়ে বসে থেকেও এখনও ইউটিউব শর্টস থেকে আশ্বাস খুঁজে চলেছি।

      Delete
  3. আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম রবিবারটা একদন কিছু না করে কাটাবো। কোনও কাজ করবো না। বাড়ি থেকে এক পাও বেরোব না। ব্যাগটা মুছে পরিষ্কার করে লফটে তুলবো না, আমার ঘরের খারাপ হয়ে যাওয়া ছোট বাল্বটা বদলাবো না, ওয়াশিং মেশিনের ভেঙে ছুড়ে যাওয়া ফাটা এক্সহস্টটা বদলাবো না (ওটার জন্যে অর্ধেক বারান্দা প্রত্যেকবার সাবান জলে ধোয়া হয়ে যাচ্ছে - বারান্দাটা একদম ঝকঝকে হয়ে যাবে - সেটাও দেখার), টেবিলের ওপরটা এক মাস আগেই গুছিয়ে পরিকল্পিত শহরের স্কাইলাইন করেছিলাম, ওটা আবার প্রবতশ্রেণীর স্কাইলাইন হয়ে গেছে এবং যেকোনো দিন ধস নামতে পারে, ওটাকেও ঠিক করবো না। এরম অনেক কিছুই করবো না।

    তবে এই "কিছু করবো না"তেও একটু ভেজাল আছে - এই কিছু করবো নার মধ্যে আমার যাবতীয় নিরর্থক জিনিসের অনুশীলন এসে ভিড় করে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে ব্লগ পড়া বা লেখা।

    অতএব, আমার "রবিবারের ভোর"এর সময়ে উঠে (অফিসের দিন ৭টায় ভোর হয়, রবিবার কটায় হয়, সেটা আপনার ভোর এর সময়টা জানার পর আর লেখার প্রশ্নই ওঠে না!), চা খেয়ে, খবরের কাগজ পড়ে, তার পরের "কিচ্ছু না করা"র জিনিস খোঁজ করতে করতে, একবার বইটার (যেটা এখন পড়ছি) দিকে আর একবার কালো স্ক্রিনের দিকে তাকাতে তাকাতে, স্থির করলাম আগে দেখে নিই যে অবান্তরে নতুন কিছু এলো কিনা।

    আর খুলেই এই লেখাটা পেয়ে গেলাম। এবং প্রথম কয়েক লাইন পড়েই বুঝলাম যে আমার আজকের মনোভাবের জন্যে একদম মানানসই। অতএব, পেয়ে গেলাম ছোট্ট একটু হ্যাপিনেস।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাদের বাড়িতে দুটো ট্রিপের দুটো ব্যাগ, আনপ্যাক করা হয়নি। শোওয়ার ঘরের হলুদ ল্যাম্প জ্বলার আগে ঝাড়া দেড়মিনিট দপদপায়, ওয়াশিং মেশিনের পাইপ, কলের মুখে ফিট করছে না দেড়মাস হল। টেবিলের ওপরের স্কাইলাইনের লাইনটা দারুণ লিখেছেন। ওটায় অবশ্য আমার এখনও সমস্যা দেখা দেয়নি, তবে যে রকম চলছে অচিরেই দেখা দেবে।

      Delete
    2. হাহা - বেশ আশ্বস্ত হাওয়া গেলো শুনে।

      আর কি কান্ড হলো, ওই জ্বলজ্বল করা "প্রবতশ্রেণী" টাকে "পর্বতশ্রেণী" করার বেপারটা চোখেই পড়লো না! জানি বুঝে নেওয়া যাচ্ছে, তাও!

      Delete
    3. অর্চিষ্মানের সঙ্গে আমার যে দুটো মত কোনওদিন মিলবে না তা হল বাংলা ভাষা বাঁচাতে বাংলা মিডিয়ামের অপরিহার্যতা এবং মানুষ জাজ করায় ইন্টেনশনের গুরুত্ব। অর্চিষ্মানের দাবি (আমার চেনা অনেকেরই) যে অ্যাকচুয়াল কথাটা বা কাজটা যেমনই শোনাক বা দেখাক না কেন, সে সবের পেছনের ইন্টেনশনই আসল বিবেচ্য।

      আমার মাথায় ঢোকে না। একটা লোক আলফাল বকছে, হাবিজাবি করে বেড়াচ্ছে কিন্তু মনটা ভালো - ও দিয়ে আমার চিঁড়ে কোনওদিন ভেজেনি, এই বয়সে আর ভেজার চান্স নেই।

      এত কথা বললাম কারণ আপনার 'প্রবতশ্রেণী'-র পেছনের ইন্টেনশন সত্যিই প্রকট, কাজেই একেবারে চিন্তা করবেন না, রাজর্ষি।

      Delete
    4. থ্যাংক ইউ! এটা দেখে একবার ভাবলাম বদমাইশি করে এরম লিখবো নাকি: আপনি তো নিজেই বললেন ওই "ইন্টেনশনই আসল" তে আপনি বিশ্বাসী নন - তাহলে আস্বস্ত হবো কিকরে। কিন্তু না, লিখলাম না, কেটে দিলাম ধরে নিন । :-)
      আর, ওই দুটো অমিলের প্রসঙ্গ বেশ সুন্দর বিস্তারিত আলোচনার বিষয় হতে পারে।

      Delete
    5. খেপেছেন? বাংলা মিডিয়ামের ক্রুশ বওয়ার কাঁধ আমার নেই। বাড়ির ভেতর বরের সঙ্গে তর্ক করতে পারি, ব্যস। মানুষ জাজ করায় ইনটেনশনের গুরুত্বও কাউকে বলে বোঝানো মুশকিল। ওটা যে বুঝবে, ঠেকে বুঝবে। অ্যাকশন স্পিকস্‌ লাউডেস্ট।

      Delete
  4. "এক জীবনে আমরা আসলে কতগুলো মানুষের সঙ্গে থাকি, ভাবা যায়? একই নদী কতবার পারাপার করি?"

    কী অসামান্য লাইন কুন্তলা!! অনেকবার পড়লাম, ভাবলাম। সত্যি-ই কত সহজ ভাবেই না বলেছেন। এই লেখাটার অপেক্ষায় ছিলাম। ছোট ছোট হ্যাপিনেস খুঁজে পাওয়ার আনন্দ আলাদা। অবান্তরের লেখাগুলো তো তেমন-ই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে, থ্যাংক ইউ, সায়ন। আপনি না বললে এটা ছাপতে আরও দু'দিন লাগত।

      Delete
  5. প্রদীপ্তJanuary 30, 2025 at 12:08 PM

    পরিবর্তনের কথাটা ভালো করে দেখলে অবাক লাগার মতোই বোধ হয় বটে! মানে এই আমিই ১০ বছর ১৫ বছর ৫ বছর আগের আমি? নদীও মনে হয় আর এক থাকে না পারাপারের পর। অন্য জল, অন্য নুড়ি...

    দু:খজনক ভাবে আমি বুদ্ধিমানও নই, আবার হ্যাপিও নই। কিংবা হয়তো যারা বুদ্ধিমান তারাই সুখ দু:খ ছুঁয়ে হ্যাপি থাকতে পারে?! দিনের পর দিন কাজ না করে জমিয়ে রেখে, রিলস দেখে, অন্যের জীবন দেখে এই আনহ্যাপিনেস হয়তো নিজেই বয়ে আনি!

    তোমার কারিদা বেঁচে থাক। মরা গাছে পাতা জন্মে বেঁচে গেলে তার আনন্দটা সাংঘাতিক হয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সবারই এক গল্প, প্রদীপ্ত।

      Delete
  6. khub khub bhalo laglo eta poRe..

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ , ইন্দ্রাণী। ভালো লাগল শুনে।

      Delete

Post a Comment