যেটা বলার
জীবনে
দুটো জিনিসের না থাকা নিয়ে আমার গর্ব ছিল।
এক, দাঁতে পোকা।
দুই, সময়ের অভাব।
যবে থেকে
স্মৃতি তৈরি হয়েছে, সময়ের অভাব আমার কখনও হয়েছে বলে মনে
পড়েনি। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের আগে যখন সবার সময় বাড়ন্ত তখনও আমি বিকেলবেলা ছাদে
উঠে পেয়ারাগাছের ছায়ায় ছায়ায় ঘুরে গুনগুনাচ্ছি। প্রতিবেশীরা পর্যন্ত আতংকিত হতেন।
সোনা তো খুব একটা বেশি পড়ছে না মনে হচ্ছে!
দাঁতে
পোকা না থাকাটা ভালো হয়েছে, কিন্তু সময়ের অভাব একটু থাকলেই ভালো
হত মনে হচ্ছিল ক'দিন ধরে। গয়ংগচ্ছ চালটা আরেকটু শুধরোতো।
কারণ আজ হাতে সময় অনন্ত বলে লং রানে তো নয়, আরেকটু তাড়াহুড়ো
করলে হয়তো কাজ বেশি হত। অন্যের কাছে আমার সময় বাহুল্য ব্যাখ্যা করা চিরকালই শক্ত
ছিল, নিজের কাছেও শক্ত ঠেকছিল ইদানিং। ইউটিউব দেখছি কখন, ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছি কখন, সময় তো সেই চব্বিশ
ঘণ্টা, আখেরের কাজের সময় কেড়ে কি? এমনকি
গল্পের বই পড়ারও সময় পাচ্ছি না?
অবশেষে
আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ পেয়েছি। দু'হাজার আঠেরোর দ্বিতীয়ার্ধ আমাকে সুযোগ
করে দিয়েছে। অফিসে আগে যাওয়া, পরে ফেরা, শনিরবিবারে কাজ করা - কর্মবীর হতে গেলে যে যে খোপে টিক মারতে হয় সবেতে
মেরে ফেলেছি। এমনকি একদিন দুঃস্বপ্নে আবক্ষ বস পর্যন্ত ভেসে ভেসে এসেছিলেন।
হাসিমুখে শুধু ঠোঁটদুটো নড়ে নড়ে বলছিল, আজকের মধ্যে হয়ে যাবে
তো? আজকের মধ্যে হয়ে যাবে তো?
শুধু
বসের দোষ দেওয়া যাবে না অবশ্য। যেচে কিছু জাঁতাকলে পা গলিয়েছি, পেশা এবং
নেশা দুই ক্ষেত্রেই। সময়ভিক্ষার বাটি নিয়ে দরজায় দরজায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে এমন অবস্থা
হয়েছে মাঝরাতে ঘুম থেকে ঠেলে তুললেও গড়গড় করে ডেডলাইন বাড়ানোর আবেদন বলতে শুরু
করব। বাংলা এবং ইংরিজি দুই ভাষাতেই।
খারাপ
সময়ের মধ্যে আনন্দও আছে। নাকতলার বাবামা এসেছিলেন। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম
এখানেসেখানে যাব, কিছুই হয়নি, বাড়িতেই থেকেছি। তিলকমামার বাড়ি গিয়ে
গল্প করেছি, সুমিতামামির হাতের অবিশ্বাস্য ভালো খবর
অবিশ্বাস্য পরিমাণে খেয়েছি। ফুর্তিতে থাকলে পাকস্থলীর আয়তন বৃদ্ধি পায় সম্ভবত।
কারণ ওই রকম খেয়ে এসে পরদিন আমরা গিয়েছিলাম রাজস্থালীতে। লংকার আচার থেকে মুগ
ডালের হালুয়া পর্যন্ত কিচ্ছু বাদ দিইনি। ও জিনিস বাদ দেওয়া যায় না।
সময়ের
অভাবের সমস্যাটা হচ্ছে অভাব নিয়েও কিছু কিছু কাজ করেই যেতে হয়। দাঁত মাজতেই হয়, রোজ সকালে
স্নানে যেতেও। ঘণ্টায় ঘণ্টায় চা খেতেও উঠতেই হয়। সেখানেও সময় বাঁচানো যায় না। এ সব
নিত্য আপদের মধ্যে আবার হইহই করে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য সেকেন্ড ইনিংসে নেমেছেন, যা ডিবেট করছেন তাই ভাইরাল। সময়ের অভাবে বাকিদের বক্তব্যগুলো শুনছি
না, খালি চন্দ্রিলেরটুকু শুনে ট্যাব বন্ধ করছি। চন্দ্রিল
বলবেন, আমি শুনব না, এ তো হতে পারে না।
কাজেই শুনতে হচ্ছে।
সময়
কাড়তে হয়েছে যাদের থেকে তাদের মধ্যে পড়েছে বেচারা অবান্তর। সপ্তাহে তিনটে পোস্ট
লেখার আমার বছরের শুরুর অ্যাম্বিশন দশদিনে একটায় এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমনও নয়
যে ব্যাপারটা এক-দু'সপ্তাহের, ঘাপটি
মেরে চালিয়ে দেওয়া যাবে। সামনের ক'মাস, অন্তত দু'হাজার আঠেরোর শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির
উন্নতি হওয়ার কোনও আশা নেই। হতে পারে দু'হাজার উনিশে পৌঁছে
আমি আবার ছন্দ ফিরে পাব কিংবা এই ছন্দে অভ্যস্ত হয়ে যাব।
আপনারা
আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি টাইম ম্যানেজমেন্টে আরেকটু ভালো হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছি। সফল হব কি না জানি না। হতে পারে এই পোস্টটা পাবলিশ করামাত্র আমার কোলে টপ
করে এক্সট্রা তিনটে ঘণ্টা এসে পড়ল, আর আমি সেই তিনটে ঘন্টার সার্থক
সদ্ব্যবহার করে নিয়মিত অবান্তরে পোস্ট লিখতে শুরু করলাম।
তাহলে এই এত কৈফিয়তের কোনও মানেই থাকবে না, তবু আমি দিয়ে
রাখলাম।
আপনি স্বচ্ছন্দে সময় নিন। আমরা অপেক্ষা করব। অবান্তর আমাদের বন্ধু। তার অদর্শনে কিঞ্চিৎ কষ্ট হয়তো হবে। কিন্তু দেখা হলে আনন্দটাও বেশি হবে।
ReplyDeleteফুটনোট: আরও নানা ডেডলাইনের মধ্যে বিছেও আছে নিশ্চয়।
বিছে তো আছেই, ঋজু। একেবারে মধ্যমণি হয়েই আছে। অবান্তরের অপারগতার কথাটা বোঝার জন্য অপরিমেয় কৃতজ্ঞতা।
Deleteমাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের আগে যখন সবার সময় বাড়ন্ত তখনও আমি বিকেলবেলা ছাদে উঠে পেয়ারাগাছের ছায়ায় ছায়ায় ঘুরে গুনগুনাচ্ছি। প্রতিবেশীরা পর্যন্ত আতংকিত হতেন। সোনা তো খুব একটা বেশি পড়ছে না মনে হচ্ছে!
ReplyDelete-- আরে, এটা তো এক্কেবারে আমার গল্প। পরীক্ষার আগে আমাকে দেখেও দুনিয়াশুদ্ধু লোকে আতঙ্কিত হত। নেহাত ঠ্যাঁটা ছিলাম বলে ফিজিক্সে পঞ্চান্ন পেয়েও আমি ঘাবড়াইনি, আজকালকার দুর্বলচিত্ত ছেলেমেয়েরা এর চেয়ে অনেক বেশি নম্বর পেয়েও পাখা থেকে...
এ সব নিত্য আপদের মধ্যে আবার হইহই করে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য সেকেন্ড ইনিংসে নেমেছেন, যা ডিবেট করছেন তাই ভাইরাল।
-- ওই বাংলাভাষার পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে কি না, সেই ডিবেটটা? ও আমিও দেখেছি, কেন কি এটা আমার খুব ফেভারিট টপিক
আপনি ঘাবড়াবেন না, চালিয়ে যান। এসব টেম্পোরারি ক্রাইসিসে অবান্তরকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
থ্যাংক ইউ, দেবাশিস।
Deleteআরে সময় নিন, সময় নিন। আমরাও গত দু সপ্তাহ যাবৎ দিল্লি তে আত্মীয়ের বাড়ি তে ছিলাম এবং সময় নষ্ট করে করে বদহজম করে ফেলার অবস্থা। আপনি তো আর সট্যাটাস আপডেট দেন না আপনি লেখেন, কাজেই লেখার পরিমাণ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
ReplyDeleteআজকের এই পাবলিশ অর পেরিশ-এর যুগে দাঁড়িয়ে বেশ ভরসা দেওয়ার মতো একটা কথা বললেন, নালক। থ্যাংক ইউ।
DeleteSomoy nao, kono osubidhe nei. majhe sajhe lekha pelei khusi. bichhe byaparta ki? notun kono lekha?
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, চুপকথা। বৃশ্চিক নামের একটি বই বেরোবে, গতবছরও বেরিয়েছিল, রহস্যরোমাঞ্চ, গায়ে কাঁটা দেওয়া গল্পের সংকলন। সেখানে আমার একটা লেখার কথা আছে সেই ব্যাপারেই ওপরের মন্তব্য।
Deletedekhi jodi jogar korte pari. edeshe bose osob boi jogar korao mushkil.
Deletearea relax karo.btw abantor boi ta elo.tomar cartoon gulo onobadyo.darun.
ReplyDeleteprosenjit
ধন্যবাদ, প্রসেনজিৎ।
DeleteMajhe majhe samay newa bhalo, kono osubidhe nei Kuntala. :)
ReplyDeleteBrishchik 2 berochhe? Aha, darun byapar to....gotobar er sonkolon ta amar khubi bhalo legechhilo. Tar opor ebarer tay apnar lekha jodi thake, tahole to ekebare marhabba byaparsyapar :) :)
Jomiye din.
বৃশ্চিক এক পড়ে আমারও খুব ভালো লেগেছিল, তাই বৃশ্চিক দুইতে গল্প লেখার নেমন্তন্ন পেয়ে আমি মারাত্মক আপ্লুত হয়েছিলাম। এইবার লেখা কেমন হবে সেটাই চিন্তার। ঠেসে আশীর্বাদ করুন, যেন উতরোয়।
DeleteUtronor cheye beshi kichui hobe, kono chinta nei :)
Deleteবাঁচালেন, অরিজিত। থ্যাংক ইউ।
DeleteAmi abar kichudin lekha na dekhlei bhabi je berat gecho.. ashay ashay thaki.. setao kharap na..
ReplyDeleteআর আমাদের বেড়াতে যাওয়ায় যা খরা লেগেছে, ঊর্মি, নিজেরই মনমেজাজ ভালো নেই।
DeleteInteresting lekha. Original ta poda nei. Tobe apnar version ta sundor. Sref kota touch. Hmm. Bhalo hoyechhe. Obhinondon roilo!
ReplyDeleteiti
Shuteertho
Sorry. Ei opor er comment ta apnar Bichar lekhar poriprekkhite. Eikhane ki bhabe post holo amar kono idea nei!
ReplyDeleteiti
Shuteertho
হাহা, নো প্রবলেম, সুতীর্থ।
Delete