পরাপরি বিষয়ে
স আমাদের নিচের তলার সহভাড়াটে। চাকরিসুবাদে কাশ্মীরের গুলিগোলার মধ্যে স-এর নিত্য যাতায়াত। আমি, বলা বাহুল্য, ইমপ্রেসড। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বেলাতে আমাদের বন্ধু না পড়লেও শত্রু কমন পড়েছে, কাজেই ভাব হতে দেরি হয়নি।
মোদ্দা কথা, স-এর সামনে পড়লে আমি নিজের বেস্ট ফুট ফরওয়ার্ডের চেষ্টায় থাকি। হাসি না পেলেও হাসি, খবর নেওয়ার দরকার না থাকলেও নিই, বাথরুম চেপে দাঁড়িয়ে দেশের-দশের আলোচনা শুনতে শুনতে ঠিক ঠিক জায়গায় মাথা নাড়ি। অন্ততঃ নাড়ার চেষ্টা করি। ভুলভ্রান্তি হয় না বলব না, তবে চেষ্টার অভাবে নয়।
সেই স-এর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। অথচ দেখা হওয়ার কথা ছিল না। সাড়ে ন’টা বাজতে যাচ্ছিল, কী খাব কী খাব গবেষণায় সন্ধে থেকে যত সময় বইয়েছিলাম তাতে বিরিয়ানি রেঁধে খেয়ে ফেলা যেত। কিন্তু জেদ চেপে গেছিল, অর্ডার করেই খাব। বিশ্বশুদ্ধু কুইজিন পার হয়ে কাঠি রোলে এসে ডুবে মরলাম। আমি খাব মাশরুম রোল, অর্চিষ্মান চিকেন না কীসের রোল অর্ডার করেছে। বাড়িওয়ালার সঙ্গে সারা বিকেল বসে ইলেকট্রিক বিলের হিসেব কষে এসেছে, লজ্জার মাথা খেয়ে ওকে আবার খাবার আনতে বলা যায় না। অগত্যা আমিই গেছি। ডেলিভারি ভাইসাবের দেখা নেই, আমার নার্ভাসনেস ক্রমশ চড়ছে। যদিও ম্যাপে ওঁর বাইক তিন মিনিট দূরে দেখাতেই গেটে এসে দাঁড়িয়ে আছি, তবু হয়তো মিস হয়ে গেছে। ফিরে এসে বকবেন। ভুল করে অন্য গলিতে ঢুকে পড়েছেন তাও হতে পারে, ঘুরেঘারে ঠিক গলিতে এসে, এ রকম ভুল হয়ে যাওয়া গলিতে ডেলিভারি দেওয়া হেবি ঝামেলার, আপনারা তো অর্ডার দিয়েই খালাস, বলেও বকতে পারেন।
অল্প অল্প ঘামছি আর গলা বাড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছি এমন সময় পেছন থেকে স বলে উঠল, ডিনারের অপেক্ষায় বুঝি?
চমকে উঠেছিলাম। সামনে মেলা গ্রাউন্ডের অশ্বত্থ, কাপাস, ডাইনে বাঁয়ে বাড়িওয়ালার আম আর প্রতিবেশীর ঘোড়ানিমের ছায়ায় গেটের কাছটা ঝুপসি হয়ে থাকে। তার মধ্যে বেড়ালটা এমন নিঃশব্দে হাঁটাচলা করে যে ভয় লাগে কোনদিন না অজান্তে গায়ে পা দিয়ে ফেলে নিজের আর বেড়ালের - দু’পক্ষেরই হার্টফেল ঘটাই। স্কুলে অবশ্য পড়েছিলাম বেড়ালরা অন্ধকারে দেখতে পায়, কাজেই আমি না দেখতে পেলেও ও আমাকে দেখতে পাবে এবং দুজনেরই প্রাণ বাঁচাবে, সেই ভরসায় থাকি।
প্রতিবেশী বারান্দার সাদা আলো গাছের পাতার ফাঁকটাক দিয়ে যেটুকু এসে পড়েছিল, বাঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কারণ হচ্ছে সেই মুহূর্তে আমি রাস্তায় বেরোনোর উপযোগী পোশাক পরে ছিলাম না। নিম্নাঙ্গে নীল পাজামা সেটের নীল প্যান্ট, ঊর্ধ্বাঙ্গে হলুদ পাজামা সেটের হলুদ শার্ট পরে, হলদে-সবুজ ওরাং ওটাং হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোলের অপেক্ষা করছিলাম।
এমন সময় স-এর উৎসাহব্যঞ্জক কুশলপ্রশ্ন।
প্রশ্নের ল্যাজা থেকে উৎসাহ উবে যাচ্ছে টের পেয়েছিলাম পেছন ফিরতে ফিরতেই, পেছন ফিরে আবছা আলোয় ঘটনাটা দেখলাম স-এর মুখেচোখেও। উৎসাহ থেকে ক্রমে আতংকে অবতরণ। শেষটা হেঁ হেঁ ভঙ্গিতে চোখে চোখ ফেলা প্রাণপণ এড়িয়ে গেটের বাইরে পার্ক করা বাইকে চড়ে স অন্তর্হিত হল।
হলটা কী? একটা ঘোরতর সন্দেহ উঁকি মারল। এই যে হলুদ শার্টটা, এটার বয়স মান্ধাতার কাছাকাছি। বছরের পর বছর পরতে পরতে, ধুতে ধুতে, ন্যাতাতে ন্যাতাতে, জায়গায় জায়গায় অল্প অল্প ফাঁসতে ফাঁসতে অবশেষে কাল রাতে স্রেফ পাশ ফিরতে গিয়ে শরীরের চাপে ফ্যাঁআআআস আওয়াজ করে একটি প্রকাণ্ড ছ্যাঁদার জন্ম হয়েছে। একটু আধটু নয়, রীতিমত লম্বাচওড়া। সকালে উঠে জামা ছেড়ে রেখেছি, সন্ধে নামতে আবার সেই জামাই পরে ফেলেছি। পিঠের প্রকাণ্ড গর্তের কথা ভুলে মেরে দিয়ে।
কল্পনা করলাম, আমার জামায় বিঘৎখানেক ফোঁকর; ফোঁকর দিয়ে আমার বিঘৎখানেক পিঠ, অন্তর্বাসের ফিতেটিতেশুদ্ধু নির্লজ্জের মতো ড্যাবডেবিয়ে আছে।
ঠাকুমা বারান্দায় বসে মশা মারতে মারতে রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের পোশাক নিয়ে কমেন্ট পাস করতেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ মানুষকে নিয়েই ঠাকুমা কমেন্ট পাস করতেন অবশ্য। কে যাচ্ছে, তার দেশ কোথায়, তার বংশে চোদ্দপুরুষে কারও বরিশালের সঙ্গে কোনও মেলামেশা ছিল কি না, তার বাড়িতে বছর দশেক আগে কী যেন একটা স্ক্যান্ডাল ঘটেছিল। বাকিদের ক্ষেত্রে যদি বা ক্বচিৎকদাচিৎ গাফিলতি ঘটত, মশা মারতে মনোযোগ টলে যাওয়া ইত্যাদি, কোনও মেয়ে অসুবিধেজনক পোশাক পরে বাড়ির সামনে দিয়ে পাস করলে ঠাকুমা উইদাউট ফেল লক্ষ করতেন এবং মতামত প্রকাশ করতেন। (বলা বাহুল্য, মেয়েটির কান বাঁচিয়ে। ঠাকুমা আর যাই হোন বোকা ছিলেন না। তাঁর সেলফ-প্রিজার্ভেশন বোধ আজীবন টনটনে ছিল।) ঠাকুমা সবথেকে কুপিত হতেন জিনসপরা মেয়ে দেখলে। আমি জিনস পরা শুরু করার পরও কোপ কমেনি। শুধু কারণটা বদলে গেছিল। আমাগো সোনা জিনস পরে বলে কি বিশ্বশুদ্ধু মেয়ে জিনস পরে ঘুরবে? এটা কি মগের মুলুক?
একটা কথা এ বেলা পরিষ্কার করে রাখি। আমার ঠাকুমা ও রকম ছিলেন বলে আমি দাবি করছি না সবার ঠাকুমাই এ রকম হবেন। এই অবান্তরেই অনেক বছর আগে ঠাকুমার বৈধব্যপালনের গল্প ফেঁদে আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে আমার ঠাকুমা যখন প্রাণপণ বৈধব্য পালন করছিলেন তখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ সমসাময়িক বিধবাই প্রেমসে মুরগির ঠ্যাং চিবোচ্ছিলেন। যাঁরা লজ্জা পাচ্ছিলেন তাঁদের বাড়ির লোকেরা, “এসব বাজে নিয়ম মানলে আমার মরা মুখ দেখবে,” অনুযোগ সহযোগে কোর্মাকালিয়ার বাটি মুখের কাছে ধরছিলেন। কাজেই আমার ঠাকুমা অকথ্য সেকেলে ছিলেন, আমাদের বাড়ি চরম ব্যাকওয়ার্ড ছিল, আর আমাদের পাড়া আর সোশ্যাল সার্কেলটা ছিল আস্ত একটা ডিসটোপিয়া। সে ডিসটোপিয়ায় কে কী পরবে-র থেকেও জরুরি ছিল কে কতখানি পরবে-র প্রশ্নটা।
উইদাউট ফেল, বেশি পোশাক পরা কম পোশাক পরার থেকে বেটার মনে করা হত।
আমি কিন্তু বেশি আব্রুর কথা বলছি না, বেশি কাপড়ওয়ালা পোশাক বলছি। না হলে ভদ্র পোশাকের বাজারে শাড়ির দর অত তেজী হওয়ার কোনও কারণ নেই। বারো হাত কাপড়ের একটা পোশাক সাড়ে তিন হাত একটা শরীর আগাপাশতলা ঢাকা দিতে ওইরকম ব্যর্থ হয় কেন সেটা পৃথিবীর টপ তিনটে রহস্যের মধ্যে পড়বে। আব্রুর কম্পিটিশনে সালওয়ার কামিজ কোলবালিশের খোলকে ফেল ফেলবে যে কোনও দিন, অথচ শাড়ির তুলনায় সালওয়ার কামিজকে স্ক্যান্ডালাস ধরা হত। ম্যাক্সি, নাইটি, কাফতান - গ্লোরিফায়েড কোলবালিশের খোল ছাড়া আমি যাদের আর কিছু ভাবতে নারাজ, সেগুলোর কথা তো ছেড়েই দিলাম।
আমাদের বাড়ির মহিলারা যে শাড়ি ছাড়া কিছু পরেন না, এটা বেশ জাঁকের ব্যাপার ছিল। অসুখের খবর পেয়ে ভদ্রতা-ভিজিটে এসে কেউ যদি পরামর্শ দিতেন, শায়া ব্লাউজ শাড়ির ঝঞ্ঝাট আর কেন মাসিমা, এবার নাইটি ধরুন, ঠাকুমা জ্বলজ্বলে মুখে বলতেন, আমার ছেলেরা ও সব পছন্দ করে না।
বলা বাহুল্য, ঠাকুমার ছেলেদের আমি কখনও ‘এটা কেন পরেছ, ওটা কেন পরোনি’ বলে বেড়াতে শুনিনি। হতে পারে ঠাকুমা মিথ্যেই তাঁদের নিন্দে করছিলেন। আবার এও হতে পারে ঠাকুমা জানতেন, পরছেন না বলেই শুনতে হচ্ছে না। কিছু বাচ্চা থাকে শুনেছি, যারা নিজে নিজেই প্রতি সন্ধেয় বই খুলে বসে যায়, পড়তে বস বলে চোখ রাঙাতে হয় না - অনেকটা সেইরকম আরকি। না বসলে কী হত সেটা ভেবে দেখার। বাবা একবার অফিস থেকে টেবিলটেনিস টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে লাল কলার দেওয়া একটা সাদা টি শার্ট উপহার পেয়েছিলেন। লাল-সাদা তখন থেকেই আমার প্রিয় কম্বিনেশন; ফস করে বলে উঠেছিলাম, আমি একদিন পরব জামাটা?
বাবা সত্যিই অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু এটা তো ছেলেদের জামা।
আরেকটা ব্যাপার খোলসা করে নিই। নিজের জামাকাপড় নিয়েও বাবার অগুনতি বাধানিষেধ। বাবা জিনস পরেন না, কলারহীন টি-শার্ট পরেন না, হাতকাটা স্যান্ডো পরেন না। ঘোরতম দুঃস্বপ্নেও কোনওদিন নিজেকে হাফপ্যান্ট-পরা অবস্থায় আবিষ্কার করেননি, গ্যারান্টি। তবে কেন করেননি জিজ্ঞাসা করলে, 'আমার মা/বউ/মেয়ে/দিদিমা/পিসিমা/কাকু/জেঠামশাই/পিসেমশাই পছন্দ করেন না বলে,' এই উত্তরটাও যে বাবা দেবেন না সেটাও গ্যারান্টি। ডবল গ্যারান্টি।
আমাদের ডিসটোপিয়ান পাড়ায় জিনস তখনও দূরঅস্ত কিন্তু সালওয়ার কামিজ জোরকদমে চালু হয়ে গেছে। ঝিণ্টি মিন্টি মৌটুসি মামণিরা সকাল বিকেল সালওয়ারকামিজ পরে হেঁটে, সাইকেল চড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পাড়ায় ওইরকম একজন জেঠি থাকা সত্ত্বেও সেটা কী করে সম্ভব হল ভাববার বিষয়।
জেঠির অনেক গুণ ছিল। তাঁর একা হাতে বারোজনের রান্নাবান্না সামলানো, দুর্গতকে সেবা, পড়শির বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া দেখে সকলেই টুপি খুলত। তার ওপর জেঠি ট্রেকিং করতেন। একটু ভুল হল, ট্রেক করতেন জেঠু। করতেন মানে নেশার মতো করতেন। বছরে দু’বার তো মিনিমাম। গোটা এলাকায় তখন একমাত্র ওই বাড়িতে ট্র্যাভেল ম্যাগাজিন আসত। একমাত্র ওই বাড়িতেই হট শট ছাড়া অন্য কোনও ব্র্যান্ডের ক্যামেরা ছিল। জটিল, গামবাট ক্যামেরা। সে ক্যামেরায় তুলে আনা নীল আকাশের গায়ে বরফটুপি পর্বত, সবুজ প্রান্তর আর টলটলে দিঘির ছবি আমরা দল বেঁধে দেখতে যেতাম। ছোটো ছোট সাদা বর্ডারওয়ালা নেগেটিভেরা লাইন দিয়ে প্রোজেক্টর মেশিনের আলোর সামনে এসে থামত আর খাটের ছত্রীর ফাঁকে নীলরং দেওয়ালের চৌখুপিতে সে সব ছবির প্রমাণসাইজ সংস্করণ ফুটে উঠত।
জেঠির নিশ্চয় ট্রেকিং ভালো লাগত, না হলে আর প্রত্যেকবার সঙ্গে যেতেন কেন। আর সে তো শুধু যাওয়া নয়। অভিযান। সুটকেসে চারটে জামা পুরলাম আর রাত পেরোলেই পুরী কিংবা সিমলা নয়তো রাজস্থান পৌঁছে গেলাম -এ বেড়ানো সে বেড়ানো নয়। মানুষপ্রমাণ রুকস্যাকের ভেতর আস্ত তাঁবু, বালিশ তোশক, লেপকম্বল। আমাদের বেড়াতে যাওয়ার বেডিং বলতে তখন ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাসের কেঠো বার্থে পাতার চাদর আর ডাকব্যাকের হাওয়াভরা বালিশ, যাতে রাখামাত্র মুণ্ডু পিংপং বল। ট্রেনে শোওয়ার সময় হলে, “আমি বালিশ ফোলাবোওওও” বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাড়িশুদ্ধু লোকের বালিশ ফুলিয়ে দিতাম আর জুলজুল চোখে প্রতিবেশী ভ্রমণার্থীদের বালিশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। যদি কেউ নিজের বালিশটা ফুলিয়ে দেওয়ার অফার দেয়। কী ভাগ্যিস, কেউ দেয়নি কোনওদিন। এখন অবাক লাগে, একবারও মাথায় আসেনি এমন চমৎকার কাজটা করার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ মাথা কুটে মরছে না কেন। যে আমাকে আমার ইচ্ছে মতো প্রায় কিছুই করতে অ্যালাউ করা হয় না, সেই আমার বালিশ ফুলিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে সকলেই “হ্যাঁ হ্যাঁ, সোনা চাইছে যখন ওকেই দেওয়া হোক,” একবাক্যে রাজি হয়ে উঠছে কেন। ফুলিয়ে ফুলিয়ে বালিশের ভেতর পোরা পাউডার গলায় গিয়ে খকখক কাশি, ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ, আর আমি বিশ্বের সুখীতম মানুষ হতে পারার আনন্দে জানালার বাইরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পা দোলাচ্ছি। মা বলছেন, সোনা ঠাণ্ডা লাগবে, টুপি পরে নাও শিগগিরি।
জেঠুদের ট্রেকিং অভিযানের আরও সঙ্গী ছিল, যাঁদের সঙ্গেও আমার বিভিন্ন সময় ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে মোলাকাত হয়েছে। সকলেই জেঠির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তখনই জেনেছিলাম রুকস্যাকের ভেতর বিছানাকম্বলের সঙ্গে একটা ছোট মতো স্টোভ, একটা মাঝারি মাপের প্রেশার কুকার, অল্প চাল, অল্প ডাল, গোটা কতক আলু, পেঁয়াজও থাকত। দীঘা থেকে দ্বারভাঙ্গা থেকে মণিমহেশ, যেখানেই ওঁরা যান না কেন, বাইরের বিশ্রী খাবার মুখে তুলতে হত না, জেঠি টুক করে ভাতেভাত নামিয়ে নিতেন। চারদিকে শোঁশোঁ হাওয়া বইছে আর হিমালয়ের নাম-না-জানা প্রান্তরে তাঁবুর ভেতর বাড়ির ওম জাগানো জেঠির হাতের ভাতেভাত, সকলে উচ্ছ্বসিত হয়ে গলা মেলাত, এ অভিজ্ঞতা যার না হয়েছে সে ঠকেছে।
এই সমস্ত গুণপনা ছাপিয়ে জেঠির যে অতুল কীর্তিখানা পাড়ায় পাড়ায় রাষ্ট্র হয়েছিল সেটা হচ্ছে এই যে, ওই সব দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ জেঠি শাড়ি পরে জয় করেছিলেন। শাড়ি পরে উঠেছিলেন, নেমেছিলেন, তাঁবু খাটিয়েছিলেন, ভাতেভাত রেঁধেছিলেন। আর হাতেনাতে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন চলাফেরা, সাইকেল চালানো, ট্রেনেবাসে যাতায়াতে অসুবিধের ছুতো দিয়ে যারা শাড়ি পরতে চায় না, তারা মিথ্যুক দি গ্রেট।
বুদ্ধিমানরা অবশ্য অসুবিধেটসুবিধের ঘোলাজল এড়িয়ে যেতেন। বলতেন, আহা ও সব কিছু না, আসলে শাড়ির মতো ভালো বাঙালি মেয়েদের আর কিছুতেই দেখায় না বলেই পরার কথা তোলা আরকি। সাহেবরা জানো শাড়িপরা মহিলা দেখে কত খুশি হয়? আমরাই দেশের পোশাক বলে হেলাছেদ্দা করি। তাছাড়া কী এলিগ্যান্ট পোশাক, ইন্দিরা গান্ধীকে দেখোনি? তাছাড়া এতদিনের একটা ট্র্যাডিশন। ছেড়ে দেওয়া কি ভালো দেখায়?
এই রকম একটা কথোপকথনের এইরকম একটা পয়েন্টে এসে আমি একবার, একবারই, একটা কেলেংকারি ঘটিয়েছিলাম। তখন সবে মাসছয়েক হল বাড়িছাড়া। বাঁধা গরু ছাড়া পেলে যা হয়, ওই ছ'মাসেই আমার শিক্ষাদীক্ষা লাটে উঠেছিল। কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় ভুলে মেরেছিলাম।
বলে বসেছিলাম (ভার্বাটিম নয়, প্যারাফ্রেজ), কিন্তু ছেলেরা তো কবে থেকেই ধুতিপাঞ্জাবী গঙ্গায় ভাসিয়ে প্যান্টশার্ট পরছে। সেও তো চমৎকার পোশাক। আর ট্র্যাডিশনালও বটে। কই তখন তো কেউ উচ্চবাচ্য করেনি?
সেদিন একটা দামি শিক্ষা হয়েছিল আমার। প্রতিবাদ করার জায়গা নিজের বাড়িটা নয়। ওটার জন্য রাস্তা আছে। প্রতিবাদ করতে হলে ওখানে নেমে মিছিল দাও গে। প্যান্ডেলের পুরুতমশাইয়ের বাড়িয়ে ধরা চরণামৃতর বাটির মুখে পড়ে মুচকি হেসে “আমি এ সবে বিশ্বাস করি না” ঘোষণা করে যত নাস্তিকতা ফলাতে চাও ফলাও, বাড়ির সত্যনারায়ণের সিন্নি আর ভোগের খিচুড়ির প্রতি মাখোমাখো নস্ট্যালজিয়া তুলে রাখো। তাছাড়া প্রতিবাদ করবেই বা কেন ? আমাদের বাড়িগুলো তো সব একেকখানা রেনেসাঁসের আখড়া। আমাদের বাড়িতে মেয়েদের নিক্তি মেপে ছেলেদের সমান করে বড় করা হয়েছে। মায়ের ওপর যত জুলুম ভালোবেসে করা হয়েছে (আমাকে একজন এও বুঝিয়ে ছেড়েছিল, মাকে যে বাড়ির সবার থেকে বেশি কাজ করতে দেওয়া হয় সেটা আসলে মায়েদেরই মুখ চেয়ে। খেটে মরার স্বাধীনতাটুকু না দিলেই নাকি মায়েরা অফেন্ডেড হবেন।) আমাদের জাত মিলিয়ে বিয়ে খোঁজার সঙ্গে জাতিবিদ্বেষের কোনও সম্পর্ক নেই, ওটা স্রেফ কমপ্যাটিবিলিটি ইত্যাদি ভালো ভালো বিজ্ঞানসম্মত যুক্তির মুখ চেয়ে। আমাদের বাড়িতে পাঁচ আঙুলে দশটা আংটি পরার সঙ্গে কুসংস্কারের সম্পর্ক আছে রটায় কোন দুর্জনে? আমরা কি জানি না সি টি ভি এন-এ যে সব শ্রীগুরু শ্রীমাতারা ল্যাপটপ খুলে কুষ্ঠি বিচার করতে বসেছেন সব টপ টু বটম বুজরুক? আমরা পরি নিতান্তই ব্যক্তিগত কারণে।
আমাদের সেই সব ব্যক্তিগত বাড়িগুলোতে ছেলে আই আই টি-তে চান্স পেল কি না, বাবার প্রোমোশন হল কি না, বাড়ির বাচ্চা রসুনজয়ন্তীতে ন্যাড়া মাথায় মালা পেঁচিয়ে অংশগ্রহণ করল কি না ইত্যাদির পাশাপাশি ফ্যামিলির মানইজ্জতের একটা বিরাট কমপোনেন্ট ছিল ফ্যামিলির মহিলাদের পোশাকআশাক। আমার এক খুড়তুতো দিদির জিনস পরার আবদার শুনে কাকুর মুখ রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল। সেকেন্ড তিরিশ পর সামলে নিয়ে কাকু হাতজোড় করেছিলেন। আর তো বেশিদিন বাঁচব না, যতদিন বাঁচছি, সমাজের কাছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দে। ফস করে জাজ করে বসবেন না, কাকু আজীবন সংস্কৃতিমনস্ক ছিলেন, পাড়ায়, জেলায়, মায় মহকুমা লেভেলেও নাটকথিয়েটার করে এসেছেন, সেই থেকেই সম্ভবতঃ তাঁর কথাবার্তার ধরণটা সামান্য নাটুকে হয়ে গিয়েছিল।
অনেকদিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আড়ি পাততে গিয়ে দেখি জয়সলমিরের বালির ওপর উটের গলার দড়ি ধরে ভীষণ হাসিমুখে দিদি দাঁড়িয়ে। “ও মা, উটটা কী কিউট,” কমেন্ট করতে গিয়েও জোর সামলে নিয়েছিলাম। মনে পড়ে গিয়েছিল, আমি এখানে নেই।
প্রতিক্রিয়া প্রকাশের লোভ সংবরণ করে ছবিটা দেখেছিলাম। দিদির হাস্যোজ্বল মুখ। দিদির পাশে দাঁড়ানো কাকুর মুখেও অনাবিল হাসি। মানহানির গ্লানিমাত্র নেই।
জানতাম এটাই হবে। সংস্কৃতিমনস্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাকু ভীষণ নরম মনেরও ছিলেন। (নরম-মন আর সংস্কৃতিমনস্কতার হাই কোরিলেশন অবশ্য প্রত্যাশিত।) কাজেই, জিনস পরার নিষেধে অনড় থাকতে পারেননি। নিজেই দোকানে গিয়ে কিনে দিয়েছেন। এবং হাওড়া স্টেশন পার হয়ে গেলে সে জিনস পরার ঢালাও অনুমতি দিয়েছেন। তারপর মরুভূমিতে জিনসের ফুলপ্যান্ট, বরফচুড়ো পাহাড়ের পাদদেশে ফুরফুরে ম্যাক্সিড্রেস, নানাবিধ শখমেটানো পোশাকে দিদি এবং দিদির পাশে কাকুর বহু হাসিমুখ ছবি দেখেছি।
যাই হোক, স প্রাণ হাতে করে হাওয়া হয়ে গেল, আমি আমার ব্লান্ডার উপলব্ধি করে আধমরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ম্যাপের ডিরেকশনের সম্পূর্ণ উল্টোদিক থেকে বাইক গুমগুমিয়ে জোম্যাটো ভাইসাব উপস্থিত হলেন। রোলের প্যাকেট হস্তান্তর হল। থ্যাংক ইউ ভাইসাব, ওয়েলকাম ম্যাম বলাকওয়া হল। ভাইসাব লাল ব্যাগের জিপ বন্ধ করতে লাগলেন। রোলের বাক্স হাতে গেটের এপারে ছায়ার ভেতর আমি স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম। জোম্যাটো ভাইসাব দুয়েকবার আড়চোখে আমার স্থাণুমূর্তির দিকে তাকালেন। ভয় পেলেন কি না কে জানে। পেলেও আমি নিরুপায়। পেছন ফিরছি না প্রাণ থাকতে।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই মায়ের কথা মনে পড়ল।
অনেক বলেকয়ে একদিন রিষড়ার বাড়িতে জোম্যাটো থেকে খাবার অর্ডার করতে রাজি করিয়েছিলাম। অ্যাপট্যাপ ডাউনলোড করতে করতে পাছে শুভ কাজে দেরি হয়, আমার ফোন থেকেই দোসা আর মেদু বড়া বাড়ির ঠিকানায় অর্ডার করেছিলাম। এইবার অর্ডার অ্যাকসেপ্টেড হয়েছে, এইবার ডেলিভারি পার্সন দোকানের দিকে এগোচ্ছে, এইবার দোকানে পৌঁছেছে - ফোনে ফোনে রুদ্ধশ্বাস ধারাবিবরণী চলছিল। মারাত্মক উত্তেজনা।
"ডেলিভারড" মেসেজ পাওয়ার একটা ভদ্রস্থ সময় গ্যাপ দিয়ে বাড়িতে ফোন করেছিলাম। কেমন খেলে বাবা, জীবনের প্রথম জোম্যাটো? বাবা বললেন, দারুণ, দারুণ সোনা। রোজ না হলেও, দু’চারমাসে একবার করে অর্ডার করা যেতেই পারে, বল? ফোন করার আগে ভেবে রেখেছিলাম বলব যে ভালো লাগলে মাসে দু’চারবার করে অর্ডার করে খেতেই পারো, চেপে গেলাম। বললাম, মাকে দাও দেখি, কেমন লাগল শুনি।
বাবা জানালেন, মা শাড়ি ছাড়তে গেছেন, ধরতে হবে একটু।
মনটা খচ করে উঠল। দোসা খেয়ে শাড়ি ছাড়তে যাওয়ার ব্যাপারটা তো সুবিধের শোনাচ্ছে না। ছোঁয়াছুয়ি ছাড়াপরার খেলাটা মাকে খেলতে দেখিনি তো আগে। আগে দেখিনি বলেই যে পরে দেখব না তেমন না অবশ্য। রিটায়ারমেন্টের পরের বয়সটা গোলমেলে, এ সময় মাবাবাদের চোখে চোখে রাখতে হয়। সহসা কর্মহীনতাজনিত মানসিক বিচলনের সম্ভাবনা তো থাকেই, তাছাড়া বদসঙ্গের আতংক এ সময় তুঙ্গে থাকে। মা একবার শ্রীরামপুর প্ল্যাটফর্মে কোন এক সৎসঙ্গ আশ্রমের আশ্রমিকের সঙ্গে ‘কী গরম, ট্রেন কী লেট’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গল্প করেছিলেন। গল্পে গল্পে আশ্রমিক মায়ের ফোন নম্বর নিয়ে, ডেইলি একবার করে ফোন করে মাকে আশ্রমে ঢোকার উস্কানি দিতেন। একদিন দেখে যান, দিদি, দেখবেন কী ভালো লাগবে। সুস্থরুচির মানুষেরা জড়ো হয়ে একটু ধার্মিক বইটই পড়ি, জীবনের মানেটানে নিয়ে আলোচনাটালোচনা হয়।
মা প্রথম দিন গল্পটা ফোনে বলে খুব হেসেছিলেন। বলেছিলেন, সোনা, তুই কি পাগল হলি? এখন আমি গুরু বাগাতে বেরোব? সাতদিনের দিন বললেন, আরে রোজ ফোন করছে, কী বলি বলত? ভাবছি একদিন ভদ্রতা করে ঘুরে আসি। চোদ্দদিনের মাথায় আশ্রমিক বাড়িতে হাজির।
একবর্ণ বাড়িয়ে বলছি না, ওই ক’দিন আমি ভালো করে ঘুমোতে পারিনি। হয়তো আমারই ভুল। আমার স্বাধীন মা সৎসঙ্গ করতে চাইলে আমার কিচ্ছু বলার থাকতে পারে না। আশ্রমের কীর্তনপার্টির চাঁদা, গুরুপূর্ণিমায় গুরু/গুরুমাকে তসরের ধুতিশাড়ি, আশ্রমের রান্নাঘরে ফ্রিজ মাইক্রোওয়েভ - এ সবও মা নিজের পেনশন থেকে আরামসে সামলে দিতে পারবেন, আমার মুখাপেক্ষী হবেন না। কাজেই সেসব দিক থেকেও মায়ের স্বাধীন সিদ্ধান্তে বাগড়া দেওয়ার কোনও অধিকারই আমার নেই।
অন্য কারও মায়ের আশ্রম জয়েন করা নিয়ে আমার মত একশোবার চাইলে আমি একশোএক বার এই মত দিতাম। কিন্তু এটা অন্য কারও মা নয়, আমার মা। আমার মা যেমন অন্যের মেয়ে চিত্রহার দেখলে কিছুই বলতেন না, আমি দেখতে বসলে কান ধরে তুলে আনতেন, অবিকল সেই লজিকে আমি আমার মাকে সৎসঙ্গ করতে অ্যালাউ করতাম না। দরকার হলে ভরা সেশনের মাঝখানে দুপদাপিয়ে ঢুকে মাকে তুলে আনতাম।
মাথায় তখন আর দোসাটোসা কাজ করছিল না, কিন্তু মনে পড়ল অফিসের লিডারশিপ না কী একটা ট্রেনিং-এ শিখিয়েছিল, তেতো কথা বলতে হলে সর্বদা দুটো মিষ্টি কথার মাঝে পুরে বলতে।
দোসা কেমন খেলে মা? ভালো ছিল? ঠাণ্ডা হয়ে গেছিল কি আসতে আসতে?
মা বললেন, একটুও না। বাইকে করে সাঁ করে এসে গেছে তো। কী ভালো সার্ভিস রে সোনা। দোসাটা ন্যাতায় পর্যন্ত নি। তোরা আজ ডিনারে দোসা অর্ডার করবি নাকি? বেশি করে বড়া অর্ডার করিস কিন্তু। যদি অ্যালাউ করিস আজকের অর্ডারটা না হয় আমরা…
মা, প্লিজ থামো। তুমি দোসা খেয়ে উঠে শাড়ি ছাড়ছ নাকি আজকাল?
মা বললেন, আরে ও রকম খড়মড়ে ইস্তিরি করা তাঁতের শাড়ি পরে কতক্ষণ থাকব? তাই ছেড়ে ফেললাম। যা গরম…
আমি বললাম, খড়মড়ে শাড়ি? খড়মড়ে শাড়ি পরে ছিলেই বা কেন এই গরমে? ন্যাতা শাড়িগুলো গেল কই?
কোথায় আবার যাবে? ন্যাতা একখানা শাড়িই পরে বসেছিলাম তো। যা গরম…
তাহলে ছাড়লে কেন?
বাঃ, লোকটা ডেলিভারি দিতে এল না? তাও তো লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত বসে ছিলাম। তুই যখন বললি যে বাইক সুভাষনগরের মোড়ে তখন দৌড়ে শাড়ি ছাড়তে গেলাম। ডেলিভারি দিয়ে চলে যাওয়ার পর আবার ন্যাতা শাড়ি পরে নেব ভেবেছিলাম কিন্তু তোর বাবা বলল, দোসা গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নাও, তাই খেয়ে উঠে ছাড়তে গেছিলাম। যা গরম রে সোনা, কাল নির্ঘাত বৃষ্টি হবে, ঘেমে জল হয়ে গেছি…
ভাইসাব চলে গেলেন। আমি অবশেষে পেছন ফিরে হাঁটা লাগালাম। গেট থেকে দোতলার সিঁড়ি বেশি দূর নয়, একশো মিটার। কিন্তু তার মধ্যেই একশোটা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। হওয়ার কোনও কারণ নেই, আমি যে দেখা হওয়া এড়াতে চাইছি সেটা মাটি করার জন্যই হবে। তিনতলা থেকে প্রসেনজিতরা হুড়মুড়িয়ে নামবে, একতলা থেকে কেউ দুমদুমিয়ে উঠবে। কাকিমার ওষুধের ডেলিভারি, স’দের মুদির ডেলিভারি — এরাই বা বাদ থাকবে কেন, এরাও সবাই আসবে এখনই। এসে দেখবে আমি পিঠফাটা জামা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
দরজায় পৌঁছে গেলাম। কেউ এলো না। নিজের কপাল দেখে নিজেই মুগ্ধ। কুষ্ঠিতে লিখেছিল বটে চল্লিশ নাগাদ শনির দশা কাটার একটা চান্স আছে। ফুরফুরে মনে দরজা ঠেলে ঢুকতে যাব, এমন সময় খড়মড় খচখচ। চমকে পেছন ফিরতেই সবুজ চোখে চোখ। কুচকুচে হুমদো বেড়ালটা। এমনি সময় সর্বদা চোরের মতো ধাবমান থাকে, এখন থাবা গুছিয়ে স্থির বসে আছে। শিরদাঁড়া টানটান। বসে বসে কোথায় কী ঘটছে, কে কী করছে, বলছে, পরছে —নজর রাখছে সব।
বেড়ালটা নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল আমার দিকে। মুখমণ্ডল জুড়ে হতাশা, ভর্ৎসনা লেপালেপি। অবশেষে দুদিকে ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ল্যাজ দুলিয়ে পাঁচিল পেরিয়ে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল বেড়াল। গম্ভীর গলায় শুধু বলে গেল, ম্যাও।
Betal der chokhe mukhe ei judgemental expression ta amaake prayei face korte hoy... Tai byapaar ta puropuri visualise korte parchhi
ReplyDeleteবেড়ালদের থেকে জাজমেন্টাল প্রাণী কম আছে বিশ্বসংসারে।
Delete"প্রতিবাদ করার জায়গা নিজের বাড়িটা নয়। ওটার জন্য রাস্তা আছে। প্রতিবাদ করতে হলে ওখানে নেমে মিছিল দাও গে।" এই গোটা প্যারাগ্রাফটা জাস্ট পিওর সোনা ।
ReplyDeleteএটা হাড়ে হাড়ে বোঝা সত্যি, অন্বেষা।
Deleteআমার দিদাও আমায় বলে দিয়েছিল, যেন ওই "প্যান্ট পরা মেয়ে" বিয়ে না করি। দিদাকে অবশ্য প্যান্ট পরা নাতবৌ দেখে যেতে হয়নি।
ReplyDeleteআপনার অবস্থাটা খুব হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। এদেশে এমনিতে লোকজন কেউ কি পরল, বা আদৌ কিছু পরল কিনা সেসব নিয়ে জাজমেন্টাল হয়না, কিন্তু স্লীপওয়্যার বা পাজামা পরে বেরোলে ভয়ানক জাজ করে। বলাই বাহুল্য, আমি মাঝেমধ্যেই ওই পাজামা পরে বেরিয়ে গার্বেজ ফেলতে যাই, আর তখন আমার প্রতিবেশীদের (যারা সকলেই আমার সহকর্মী বা তাদের পরিবারের সদস্য) ওই বেড়ালের মতন মুখ দেখি। চুপিচুপি বলে রাখি, জুমে ক্লাস পড়ানোর সময়ও আমি ওপরে সুন্দর কলার ওলা জামা পরে চুলটুল আঁচড়ে বসলেও, নিচে ওই পাজামাই থাকে। কোনওদিন কলের মাঝখানে দাঁড়াতে হলেই কেলো হবে।
আপনিও বেড়াতে যাওয়ার সময়ে সবার বালিশ ফোলাতে ভালোবাসতেন? হাই ফাইভ।
জুমে যে লোকে কী মূর্তিতে বসে ভগবানই জানে। আমিও শুধু ওপরের জামা বদলে বসি, নিচে রং চটা পাজামা। বালিশ-ফোলানো ওই সময়ের অনেক ছোটরই একটা কমন নস্ট্যালজিয়া, হায়েস্ট ফাইভ।
Deleteকেউ ওরকম করে তাকালেই আমি আজকাল ভয়ানক মুখ কুঁচকে বলি, "আপনার নাকে মুখে কী লেগে আছে এইগুলো?" মুহূর্তের মধ্যেই এক্সপ্রেশন বদলে যায়। কয়েকবার করে বেশ লাভ হয়েছে। সেই বিশেষ লোক পরে জাজ- মেন্টাল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেনি
ReplyDeleteহাহা, এটা ভালো।
DeleteKhub bhalo kintu ei topic ta .. tobe baki gulo milleo eita to meleni.. ami abar kichuta kakimar dol e.. ami niche khabar ante jawa kimba dustbin felte jawa esob kaje pajama ba barir t shirt change kore jai.. jeans ba seta na holeo at least kichuta notun pajama.. ar amader sobar e dida ba thakuma der dekhi khub e mil..��
ReplyDeleteওই জামা ছেড়ে খাবার আনতে বা ময়লা ফেলতে যাওয়াটা তোর পরিশ্রমী প্রকৃতির উদাহরণ, ঊর্মি। আর অমিল হওয়ার স্কোপই ভীষণ কম বলে আমার মনে হয়। এক গোয়ালে জন্মালে, বাড়লে, সবাই একই গোত্রের গরু হতে বাধ্য, যদি না মির্যাকল কিছু ঘটে।
DeleteAmi ghore onek diner purono (college fest er somoy paoa) t-shirt pore thaki. Jokhon Amazon/Swiggy delivery boy ase, ami ota porei beroi, onek somoy ora khub abak chokhe amake dekhe. Ami besi patta diy na. Trash felar somoy ba gachhe jol debar somoy age bhalo kore dekeh niye beroi.. :) Keo ghore perfectly bhalo T-shirt pore bose thake eta bhabtei amar khub obak lage..
ReplyDeleteAmi obosso balloon/pneumatic baalish akebarei folate parina..
হ্যাঁ রণদীপ, ঘরে ইস্তিরি করা টিশার্ট পরে বসে থাকাটা রীতিমত সন্দেহজনক। বেলুন আমিও ফোলাতে পারি না, হাই ফাইভ, কিন্তু বালিশটা ম্যানেজ করতে পারতাম সামহাউ। ওই বালিশগুলোর যে একটা নাম আছে সেটা এই চল্লিশ বছর বয়সে জানলাম। থ্যাংক ইউ :D...
DeleteBaah besh somoyochito bishoy niye lekha....Ekhon to puroi online jibon cholchhe...Jaaihok kapor chhere amar o jete khub ekta ichche kore na kintu COVID-kaale jama-kapor chhere jachchi aar ese abar sab chhere abar nyata jamai dhuke porchhi. Seshe Beral er golpota bhari mojar laglo.
ReplyDeleteবাড়ির নিচের তলায় যাওয়ার জন্য জামা ছাড়াপরা মাসখানেক বন্ধ করেছি, সুস্মিতা। কিছু হলে হবে। গ্লাভসটাও ছাড়ব ছাড়ব ভাবছি। মাস্কটা থাকুক, জনমত যতদিন থাকে।
DeleteApnader Delhi r situation Mumbai er theke anektai bhalo. AAr aamra bohutol e thaki tate eto lokjon anabidho karone lift diye aar common space e jatayat kore je ektu bhoi bhoye thaki.
ReplyDeleteহ্যাঁ, বহুতলটা একটা মাথাব্যথা বটে।
Deleteএই লেখাটা যে কি মনের মতো হয়েছে সে আর কি বলবো ! "আমরা পরি নিতান্তই ব্যক্তিগত কারণে।"- এই পুরো প্যারাটাই দুর্দান্ত| আর ওই যে বাঙালি মেয়েদের কি ভারতীয় মেয়েদের শাড়িতেই সব থেকে মানায় এই সব কথা ছেলেরাই বলে থাকে সব সময়, হ্যাঁ শার্ট প্যান্ট পরা ছেলেরাই| ওরা যে ধুতি পাঞ্জাবি পরেনা সে কথা মুখের ওপর অনেকবার শুনিয়ে দিয়েছি| আর বিদেশিরা কেমন শাড়ীকে কত admire করে, আমরা কেন যে ওদের পোশাক পরতে যাই- এটা মনে হয়না যে বিদেশিরা যদি আমাদের পোশাকের কদর করে, একই উদারতায় আমাদের ওদের পোশাকেরই কদর করা উচিত|
ReplyDeleteইশ পেছনে বড় ফুটো জামা পরে খাবার আনতে গেলে- হাহাহা| ওই জামাটা এবারে ফেলো| আমিও একই গোত্রের| একদম জামাকাপড় ছাড়তে ভালোবাসিনা| পাজামা পরে সব সময় mail আনতে যাচ্ছি, গার্বেজ ফেলা, গার্বেজ এর ড্রাম তোলা, এসব তো তুচ্ছ, বাগানের কাজ পর্যন্ত পাজামা পরে করে ফেলি অনেক সময়| একমাত্র খাবার অর্ডার কখনো দিইনি তাই ওটাই বাকি আছে| হ্যাঁ আমি Uber Eats ভার্জিন| বা যে কোনো রকম carryout বা হোম ডেলিভারি করা হয়ে ওঠেনি এখনো| প্রায় তোমার মায়ের জেনারেশন এর লোক তো| তবে মা যে jomator খাবার ডেলিভারি নেবার জন্য ভালো শাড়ী পড়েছেন সেটা কিন্তু দারুন হয়েছে|
আরে এটা একদম ঠিক বলেছেন, অমিতা। ছিঁড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ জামা ফেলে দেওয়া উচিত, না হলে এই রকম হবে। পুরোটা যে কিপটেমো তা নয়, প্রোক্র্যাস্টিনেশনও একটা কারণ, যে কারণে এ জন্মে কিছু হবে না আমার। এ জন্মটা আরাম করে নিই, যা করার পরের জন্মে করব।
Delete"আর বিদেশিরা কেমন শাড়ীকে কত admire করে, আমরা কেন যে ওদের পোশাক পরতে যাই- এটা মনে হয়না যে বিদেশিরা যদি আমাদের পোশাকের কদর করে, একই উদারতায় আমাদের ওদের পোশাকেরই কদর করা উচিত|" এর থেকে যুক্তিপূর্ণ কথা আমি কমই শুনেছি। হায়েস্ট ফাইভ।
Oshadharon lekha (as usual) - ami porar jonyo mukhiye thaki protyek shoptahe!
ReplyDeleteOi hawadar halka iti-uti chhera khora myarmare "comfort wear" er mojai alada- ekhon shoshurbari te khub bhodro hoye thakte hoye (amar borer thakuma parle majhe shajhe du ekta kanjivaram pore thaken baritey!!) - tao rong chota pajama koyekta prane dhore rekhe diyechhi! :-)
Achha beral der mone hoye oi judgmental drishti ta default mode. Ekhaner gate er baire lalu-bhulu kukur ba pasher apartment er uber cute shih tzu, shobai ki ahladi aar accomodating! Kintu beral gulo kirokom disdainfully cheye thake. Majhe nokh diye dudher packet noshto korchhilo khub, leftover dudh ditey giye emon chailo jeno ki oshombhob kono paap korechhi!
হাহা, বেড়ালদের মারাত্মক পার্সোন্যালিটি, কেয়া। ওর অর্ধেক পেলে আমার জীবন অন্যরকম হতে পারত।
Deleteসত্যি, এক প্রজন্ম আগে লোকে বাড়িতে শাড়ি পরে থাকত, খেত, শুতো, ঘুমোতো। ব্যাপারটা সিরিয়াসলি আমার কল্পনার বাইরে।
Hee hee Keya aamar bon :-)
DeleteAmader ei jonmer prochondo dukkher karon gulor onnotomo ekta holo je baba ma theke school er teacher ba bondhu ra shobai amader naam guliye phele! :-D
এটা কমপ্লিট টাইপো, কেকা। কান ধরছি।
Deleteএই লেখাটা তথাকথিত বাঙালি উন্নাসিকতার গর্ব খর্ব করবে আশা করি। ছাইচাপা আগুনের মত পুরুষতন্ত্রের তেজ এইরকম জল ঢেলে ঢেলে নেবার হবে। দারুণ লাগলো।
ReplyDelete