হরোউইটজ, হরোউইটজ


Foyle's war

Creator and Director: Anthony Horowitz



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইংল্যান্ডের সমুদ্রতটবর্তী হেস্টিংস শহরের খুনখারাপি সমাধান করার একেকটা গল্প নিয়ে ফয়েল'স ওয়র-এর একেকটা পর্ব। ফয়েল হচ্ছেন হেস্টিংসের পুলিসবাহিনীর ডিটেকটিভ চিফ সুপারিন্টেডেন্ট। সিরিজের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় উনিশশো চল্লিশে, শেষ উনিশশো ছেচল্লিশে। আটটি সিজনের প্রথম ছ'টিতে যুদ্ধ চলছে, শেষ দুটি সিজনে যুদ্ধ থেমেছে কিন্তু অন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যার নাম কোল্ড ওয়র। ফয়েল সে দুটি সিজনে এম আই ফাইভ-এর হয়ে কাজ করছেন।

প্রথমেই যেটা নজরে পড়তে বাধ্য তা হচ্ছে ফয়েল'স ওয়র-এর চেহারা। সময় বোঝাতে শুধু রং বদলে কাজ সারা হয়নি, লোকজনের পোশাকআশাক, ভাষা, চলাফেরা, রাস্তাঘাট, লন্ডনের এবং শহরতলির চেহারার খুঁটিনাটি খেয়াল রাখা হয়েছে, এমনকি যুদ্ধে ব্যবহৃত প্লেনটলেন হাজির করা হয়েছে। ওদের বাজেট বেশি তাই ওরা পারে বললে বলবে কেউ, কী আর করা যাবে।

বলা বাহুল্য, বাজেট ছাড়াও ফয়েল'স ওয়র জনপ্রিয় হওয়ার আরও কিছু কারণ আছে। এক, প্রেক্ষাপটের যুদ্ধকে অসামান্য ভাবে গল্পে গেঁথে দেওয়া। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্লান্তি, মানুষের ভয়, অনিশ্চয়তা এবং তার মধ্যেও খুদকুঁড়োর মতো ফুর্তি কুড়িয়ে নেওয়া। যুদ্ধ শেষ হচ্ছে, সৈনিকরা ফিরছে, আহত, অনাহত। যারা ফিরল না, কিংবা কফিনবন্দী হয়ে ফিরল তাদের পরিণতি তো জানাই হল, কিন্তু যারা বেঁচে ফিরল সমাজের মূলস্রোতে ফেরার তাঁদের অনলস প্রক্রিয়া ফয়েল'স ওয়র যত্ন করে তুলে ধরে। যুদ্ধকালীন দুর্নীতি, দেশের যুদ্ধনীতির পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠনের অবস্থান ইত্যাদিও ফয়েল'স ওয়র-এর দুরবিনে ধরা দেয়। সিরিজের কিছু কিছু রহস্য সরাসরি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেমন সামরিক বেসে রসদের জোগান নিয়ে এধারওধার, ফলত খুনখারাপি। তাছাড়াও আছে। যুদ্ধ লেগেছে বলেই তো মানুষ মানুষ হওয়া বন্ধ করে দেয় না, ষড়রিপুর খেলা হইহই চলতেই থাকে। টাকার লোভ, ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, যৌনঈর্ষার মতো ভালো ভালো অনুভূতিরা তখনও দাপট দেখিয়ে যায়।

ফয়েল'স ওয়র-এর সবথেকে জরুরি জয়ের জায়গাটা আমার মতে, অধিকাংশ জিতে যাওয়া গল্পের মতোই, ফয়েল'স ওয়র-এর চরিত্ররা। একটা গল্পে ঘটনা কীসের পর কী ঘটল জানার আগ্রহের থেকে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকগুলোর কী হল তার কৌতূহলে আমরা অনেক বেশি ভাজাভাজা হই, ইদানীং মনে হয়। ডি সি এস ফয়েল নীতিনিষ্ঠ, দয়ালু, বিপত্নীক। একমাত্র সন্তান অ্যান্ড্রু সামরিক বিমানচালক, নিয়মিত আকাশপথে যুদ্ধে যায়। ছেলের জন্য ফয়েল দুশ্চিন্তায় কাঁটা হয়ে থাকেন কিন্তু যে কোনও সার্থক ইংরেজের মতো নিজের মনের ভাব মনেই রাখেন। ফয়েলের চরিত্রের সবথেকে আকর্ষণীয় দিকটা প্রথম পর্বেই প্রকট হয়। যে পর্বে কান্ট্রিসাইডের এক অভিজাত ইংরেজের স্ত্রী খুন হন। আর পাঁচটা খুনের থেকে এ খুন আলাদা কারণ মহিলা জার্মান। ভাবুন একবার। গনগন করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, খাবার নেই, টাকা নেই, গ্রামশুদ্ধু পুরুষ - আঠেরো থেকে আটচল্লিশ - যুদ্ধে গিয়ে মরছে, এমন সময় গ্রামের সবথেকে বড়লোক ও ঐতিহ্যশালী অধিবাসী এক জার্মান মহিলাকে বিয়ে করে আনলেন। প্রতিক্রিয়া আঁচ করা কঠিন নয়। গ্রামের অধিকাংশ লোকই জার্মান মহিলাকে সহ্য করতে পারেন না, কেবল বড়লোকের বউ বলে চুপচাপ থাকেন। বাড়িতেও স্বামীর আগের পক্ষের কন্যার উঠতে বসতে বদ ব্যবহার। স্বামী ছাড়া সকলেই মহিলার প্রতি মারমুখো। খুনের খবর পেয়ে সবার মনের ভাব, বাঁচা গেছে আপদ গেছে, কেউ একটা আমাদের মনের কথা বুঝে কাজ সেরে দিয়ে গেছে। কিন্তু ফয়েল মন দিয়ে রহস্য উন্মোচনে নামেন। ঊর্ধ্বতন অফিসাররাও অবাক, এই হাবিজাবি লোকের হাবিজাবি মার্ডারের পেছনে এত পরিশ্রম দেখে। কিন্তু ফয়েল অটল। তিনি বলেন, মহিলা জার্মান কি না "that doesn't make any difference at all. She's a human being, and she was murdered. Murder is murder. You stop believing that, and we might as well not be fighting the war... because you end up like the Nazis."

ফয়েলের টিমে আছেন সার্জেন্ট মিলনার, যুদ্ধফেরত আহত সৈনিক। কিন্তু ফয়েল-এর টিমের সবথেকে রোমহর্ষক মেম্বার হলেন স্যাম স্টুয়ার্ট। স্যাম, স্যামান্থার শর্টকাট। ভিকারের মেয়ে, যুদ্ধে গ্যারেজ মেকানিকের ট্রেনিং নিয়ে, গোলমালে ফয়েল-এর ড্রাইভারের দায়িত্বপ্রাপ্ত। বুদ্ধিমান, চটপটে। ফয়েল যেমন চাপা, স্যাম তেমনি খলবলে। দুজনের কেমিস্ট্রি ফয়েল'স ওয়র-এর বিরাট সম্পদ। স্ট্রিক্টলি নন-রোম্যান্টিক কেমিস্ট্রি, অফ কোর্স। ফয়েল ডার্টি ওল্ড ম্যান নন। ফ্যানবিশ্বে স্যামকে ফয়েলের মেয়েটেয়ে ইত্যাদি বলে ওয়ার্ম ফাজি ফিলিং ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। ইউটিউবে ফ্যানেদের বানানো স্যাম ও ফয়েলের কেমিস্ট্রির প্রতি হোমাজ দিতে কত গানের সঙ্গে যে ভিডিও আছে, একটা গোটা বেলা গেছে সে সব খুঁজে দেখতে দেখতে। আমার অবশ্য দুজনকে চেনা কোনও সম্পর্কে বেঁধে ফেলার তাগিদ বোধ হয়নি। বরং দুটো লোক যে স্রেফ কাজের সূত্রে একে অপরের সহযাত্রী হয়ে উঠতে পারে এবং সে সাহচর্যের মূল্য যে রক্তমাংস বা রোম্যান্সের সম্পর্ক থেকে এককণাও কম দামি হয় না ফয়েল আর স্যামের সম্পর্ক সেটাই প্রমাণ করে বলে আমার ধারণা।

না দেখে থাকলে ফয়েল'স ওয়র দেখতে পারেন। ইউটিউবে সবক'টা সিজনের সবক'টা পর্ব আছে। কবে উড়ে যাবে কে জানে। আমার এমন ভালো লেগেছে যে শেষ দুটো সিজন দেখতে পারছি না, শেষ হয়ে যাবে এই ভয়ে।

*****

Moonflower Murders

Anthony Horowitz



বইটার খুব নিন্দে করেছিলাম আগের একটা পোস্টে। হরোউইটজ-এর সুস্যান রাইল্যান্ড সিরিজের প্রথম বই ম্যাগপাই মার্ডারস, জগতে জনপ্রিয় হয়েছিল, আমিও উদবাহু প্রশংসা করেছিলাম, যদিও বছরের গোড়ায় পুনর্পাঠ করতে গিয়ে কিছু খটকা লেগেছে।

সিরিজের দ্বিতীয় বই মুনফ্লাওয়ার মার্ডারস-এ খটকা আকাশচুম্বী। সুসান রাইল্যান্ড আপাতত গ্রীসে থাকেন, প্রেমিকের সঙ্গে পার্টনারশিপে হোটেল চালান। সুসান রাইল্যান্ড আর তাঁর গ্রীক প্রেমিকের সম্পর্কটা আমার ম্যাগপাই থেকেই কৌতূহলোদ্দীপক লাগে। ম্যাগপাই মার্ডারস গোটাটা জুড়ে ভুদ্রলোক সুসানকে কেরিয়ারটেরিয়ার ছেড়ে গ্রীসে গিয়ে হোটেল ব্যবসায় নামার জন্য জোরাজুরি করতে লাগলেন, সুসান প্রথমে না না করেও শেষমেশ বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে চলে গেলেন। এই বইতে হোটেলব্যবসা ডুবুডুবু, তার থেকেও বড় কথা সুসানের গোটা ব্যাপারটা জঘন্য লাগছে, দেশের জন্য সর্বদা মনকেমন, কিন্তু তিনি নিজের সমস্ত সঞ্চয় হোটেলে ঢেলে বসে আছেন। হরোউইটজ কি জমি তৈরি করছেন? পরের কোনও বইতে সুসানের উপলব্ধি হবে যে এটা আসলে একটা খুবই গোলমেলে সম্পর্ক, প্রেমের মতোই দেখতে হলেও প্রেম নয় এবং তিনি সব ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে আসবেন? নাকি এই রকমই চলবে? জানতে আমি উদগ্রীব।

যাই হোক, একদিন মনমরা সুসানকে ইংল্যান্ডের এক হোটেলিয়র দম্পতি এসে তাঁদের নিখোঁজ মেয়ে সেসিলিকে খুঁজে দেওয়ার বরাত দিতে চান। বছরখানেক আগে তাঁদের হোটেলে একটি খুন হয়। হোটেলের একটি কর্মচারী দোষী সাব্যস্ত হয় এবং জেলেও যায়। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে ওই হোটেল মালিকের ছোট কন্যা সেসিলির মধ্যে একটা সন্দেহ জন্মায় যে আসল খুনী এখনও বাইরে ঘুরছে। এই সন্দেহ প্রকাশ্যে আনার পরই সেসিলি নিখোঁজ হয়।

সুসানের দ্বারস্থ হওয়ার কারণ সুসানের প্রাক্তন পাবলিকেশন হাউসের 'অ্যাটিকাস পুন্ড' সিরিজের বিখ্যাত গোয়েন্দাগল্প লেখক অ্যালান কনওয়ে, খুনের রাতে হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। ম্যাগপাই মার্ডারস-এর মনোযোগী পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে সত্যিকারের লোকদের নাম অল্পস্বল্প পাল্টে বইতে চালিয়ে দেওয়ার বদভ্যেস ছিলল কনওয়ের। অ্যাটিকাস পুন্ড-এর তৃতীয় উপন্যাসে, এই হোটেলের খুনের ঘটনাটা এদিকওদিক করেই কনওয়ে চালিয়ে দেয়। নিখোঁজ হওয়ার আগে সেসিলি কনওয়ের বইটা পড়ছিল, কাজেই ধরে নেওয়া যায় যে বইতে আসল খুনীর খোঁজ দেওয়া আছে। যেহেতু পূর্বাশ্রমে সুসান, অ্যালান কনওয়ের এডিটর ছিলেন, তাই সকলে ধরে নিয়েছে যে বইটা পড়ে নিশ্চয় সুসান আসল খুনীর পরিচয় বার করে ফেলতে পারবে এবং সেটা বার করে ফেললেই সেসিলিকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

হরোউইটজ-এর নিন্দুকেরা বলেন ভদ্রলোকের সমস্যা হচ্ছে ভদ্রলোক ভয়ানক ফর্মুলেইক। মিডসমার মার্ডারস-এর এপিসোডে এপিসোডে নাকি তার প্রমাণ। খুন হওয়ার আগেই ভিক্টিমের বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কারণে অপ্রিয় হওয়ার কারণ প্রতিষ্ঠা। তারপর একে একে সন্দেহভাজনদের বাতিল করা, আগের মুহূর্ত পর্যন্ত এও হতে পারে সেও হতে পারে চলতে চলতে দড়াম করে একজনকে খুনী সাব্যস্ত করা, কিন্তু অন্য যে কোনও সন্দেহভাজনেরই হওয়ার সম্ভাবনা সমান জোরালো থাকা সত্ত্বেও।

মুনফ্লাওয়ার মার্ডারস পড়ে ফর্মুলার অভিযোগ অস্বীকার করা শক্ত হবে আমার পক্ষেও। বাকি সব চেনা ছক যদি অগ্রাহ্যও করি, মুনফ্লাওয়ার প্রায় ম্যাগপাই মার্ডারস-এর ছায়া অবলম্বনে লেখা। ম্যাগপাই-তে দুটো সময়ের দুটো রহস্যের জাগলারি ছিল যা মুনফ্লাওয়ারে অনুপস্থিত, তাছাড়া আরও কিছু মিল নির্ভুল। অ্যাটিকাস পুন্ড এখানেও এসেছেন রাইল্যান্ডকে সাহায্য করতে। ম্যাগপাইতে তো ছিলেনই। সবথেকে বড় মিল ম্যাগপাইতেও রাইল্যান্ডের মূল কাজটা ছিল অ্যালান কনওয়ের বই পড়ে কাল্পনিক চরিত্রগুলো আসলে বাস্তবের কোন চরিত্রদের সঙ্গে মিলছে সেটা ধরা। এই বইতেও সুসান রাইল্যান্ডের আসল কাজ সেটাই।

*****

A line to Kill

Anthony Horowitz



প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গোয়েন্দাগল্পের আরেকটি সিরিজ লিখেছেন হরোউইটজ, যার মুখ্য চরিত্ররা হচ্ছেন প্রাক্তন ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ড্যানিয়েল হথর্ন এবং গোয়েন্দাগল্প লেখক এবং টিভি প্রযোজক ও নির্দেশক অ্যান্থনি হরোউইটজ। সহকারী, বা অনেক সময় মুখ্য গোয়েন্দা চরিত্রেও সেলফ-ইনসার্টের চল গোয়েন্দাগল্পে যত, তত বোধহয় অন্য কোনও ধারার সাহিত্যে না। অজিতের সঙ্গে শরদিন্দুর অমিল অতি সামান্যই, ফেলুদা তো নির্ঘাত সত্যজিতের এদিকওদিক, আমাদের ক্রিস্টিও পোয়্যারো সিরিজে নিজেকে গুঁজেছেন। আরিয়াদনি অলিভার হিসেবে। যদিও সিরিজের বেশ পরের দিকে। একদম প্রথম উপন্যাস 'দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার অ্যাট স্টাইলস'-এও সেলফ-ইনসার্ট আছে, সিন্থিয়া মার্ডক, যিনি লোক্যাল ডিস্পেন্সারিতে কাজ করেন এবং ক্যাভেন্ডিশ পরিবারের আশ্রিত। ক্রিস্টি নিজে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ডিস্পেন্সারিতে কাজ করেছেন এবং বিষ বিষয়ে ওইখানেই তাঁর প্রথম আগ্রহ জন্মায়।

কিন্তু একেবারে রক্তমাংসের নিজেকে গল্পের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া এর আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। অ্যান্থনি হরোউইটজ এই হথর্ন সিরিজে যেমনটি করেছেন। এখানে তিনি একজন মিস্ট্রি লেখক, টিভি প্রযোজক ও নির্দেশক, লন্ডনে স্ত্রীয়ের সঙ্গে বসবাস। যাকে বলে নিয়মনিষ্ঠ, নোঙরফেলা জীবন।

উল্টোদিকে ড্যানিয়েল হথর্ন হচ্ছেন একেবারেই কাটা ঘুড়ি। একজন অভিযুক্তের সঙ্গে আনলফুল ব্যবহারের অভিযোগে চাকরি গেছে। বিবাহবিচ্ছিন্ন। এক সন্তান, যার শারীরিক সমস্যা আছে। এ সব জানতে অবশ্য হরোউইটজ-এর অনেক সময় লেগেছে কারণ হথর্ন অস্বাভাবিক চাপা।

হথর্ন আরও অনেক কিছু। লোকের ঘাড় ভেঙে খায়। স্বার্থপরের ঝাড়। হরোউইটজের সৃষ্ট মিডসমার মার্ডারস, ফয়েল'স ওয়র এবং রাইল্যান্ড সিরিজ পড়ার পর একটা জিনিস বলাই যায়, যে ভদ্রলোক অন্তত মূল চরিত্রদের অপ্রীতিকর বানান না। যতই রক্তগঙ্গা বয়ে যাক, সংশ্লিষ্ট লোকজনের মধ্যে একটা ফুর্তি এবং ভালোমানুষি জাগরূক থাকে। হথর্ন সে বাবদেও উজ্জ্বল উদ্ধার। গল্পের হরোউইটজের সঙ্গে তার ব্যবহার দেখলে মাঝে মাঝে বইয়ের ভেতর ঢুকে গাঁট্টা মেরে আসতে ইচ্ছে করে।

A Line To Kill হথর্ন হরোউইটজ সিরিজের তৃতীয় বই। গোয়েন্দাগল্পের পরীক্ষিত ফরমুলা মেনে রহস্য ঘনায় একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। যেখানে হেলিকপ্টার চড়ে হরোউইটজ এবং হথর্ন যায় একটি সাহিত্য সম্মেলন গোছের অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক এবং দ্বীপের সবথেকে বড়লোক খুন হন।  দ্বীপের বিভিন্ন অধিবাসীর নিজস্ব নিজস্ব মোটিভেশন থাকা, প্রত্যেকের মিথ্যে কথা বলার  নিজস্ব কারণ, রহস্য সমাধানের এই সব চেনা ছক মেনে রহস্য উন্মোচন হয়।

হথর্ন হরোউইটজ সিরিজ অসামান্য কিছু নয়। চমকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। কিন্তু আমি মনে করি, সবসময় যে শিল্পসৃষ্টি চমকে দেওয়ার মতোই হতে হবে তার কোনও মানে নেই। তাছাড়া আমার সন্দেহ ব্যাপারটা চমকে দেওয়ার মতো হবে কি  না সেটা আগে থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা, বা নিশ্চিত করা, স্রষ্টা কেন, শিবের বাবার পক্ষেও অসাধ্য। তার বদলে পরিশ্রম এবং নিষ্ঠাসহকারে একটা টানটান গোয়েন্দাগল্প  বলার ক্ষমতাকে নাক সিঁটকানোর কিছু নেই এবং সেই ক্ষমতাটা অ্যান্থনি হরোউইটজের দরকারের থেকে এবং অনেকের থেকে বেশিই আছে।

Comments

  1. হরোউটজ এত মোটা মোটা বই লেখেন, আর সাহস হয় না! নামগুলো প্রায় এক বলে সাব-কনশাসে কী একটা বাধো বাধো ঠেকে আবার। ম্যাগপ্যাই মার্ডারস পড়েছি, সেই শেষ।

    ReplyDelete

Post a Comment