মিরর, মিরর


গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটিতে বেড়িয়ে ফেরা হচ্ছিল। একটা ফ্যামিলি মাঝরাস্তা থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। বাবা মা, ছেলে মেয়ে। যতদূর মনে পড়ে একাধিকই ছিল। আমাদের কুপে পৌঁছে শার্টের পকেট থেকে টিকিট বার করে বাবা এদিকওদিক তাকাতে লাগলেন। সব বার্থ অকুপায়েড। লোকটি ভদ্র, চেঁচামেচি না করে টিটিইকে ডাকলেন। টিটিই এবং সহৃদয় সহকর্মীরা টিকিট পরীক্ষা করে বললেন, এ কী, এ তো কাল গভীর রাতের ট্রেনের টিকিট। আপনি এ এম পি এম গুলিয়ে পরের দিনের ট্রেনে উঠে পড়েছেন।

স্টেশনটা বড় গোছেরই ছিল। এত কাণ্ড হতে হতেও ট্রেন ছেড়ে দেয়নি। নাকি দিয়েছিল? মনে নেই। দিলেও পরের স্টেশন আসতে বেশিক্ষণ লাগেনি। মোদ্দা কথা, ভদ্রলোক অচিরেই লটবহর লোকলস্কর নিয়ে নেমে গিয়েছিলেন। সামনে তো পেটভরে উপদেশ দিয়েইছিল, ভদ্রলোক সপরিবার নেমে যাওয়ার পরেও উত্তেজনার যেটুকু ঢেউ বাকি ছিল তাতে দুলতে দুলতে কামরাশুদ্ধু লোক বলাবলি করছিল, কী অবস্থা, অ্যাঁ? একটু খেয়াল করবে তো। কতগুলো টাকা নষ্ট। কেউ কেউ, কী আর করা, কিছু পাবলিক এ রকম বেখেয়াল, ইত্যাদি মতামত দিচ্ছিল।

আমি দিইনি। মতামতের অভাবের জন্য নয়। আমাকে যে কারিকুলামে বড় করা হচ্ছিল তাতে আমার থেকে ভিন্ন (বেসিক্যালি, বড়) এজ গ্রুপের কথাবার্তায় ঢুকে পড়ে নিজের মত প্রকাশ আউট অফ সিলেবাস। কাজেই চুপ করে দেখছিলাম। ভদ্রলোকের মুখ। ভদ্রলোকের স্ত্রী, পুত্রকন্যার মুখচোখ। পুত্রকন্যারা আমারই এজ গ্রুপের। আমার সেম ট্রেনিং-এই বড় হচ্ছিল মনে হয়। বাবার দায়িত্বে ভুল ট্রেনে উঠে পড়ে বেড়াতে যাওয়া মাটি হওয়ার ডিস্যাপয়েন্টমেন্ট স্রেফ চুপ করে গিলে ফেলছিল।

ইন্টারেস্টিং লেগেছিল মহিলার চুপ করে থাকাটা। লাফিয়ে পড়ে দোষারোপ করতে হবে বলছি না, কিন্তু এই সব পরিস্থিতিতে যা স্বাভাবিক রিঅ্যাকশন, ইস্‌ কী ভুল হয়ে গেল, ইস্‌ কত টাকা নষ্ট হল, ইস্‌ বড়মাসি কী মনে করবে, এই সব হাহুতাশও তিনি করছিলেন না। ছেলেমেয়েদের মতো স্পিকটি নট হয়ে ছিলেন গোটা এপিসোড। এবং সেটা ঠিক স্টোইসিজমে বিশ্বাস করেন বা মহাকালের নিরিখে এ সব সমস্যা তুশ্চু টাইপের জ্ঞানার্জনের ফলে বলে মনে হয়নি আমার। উনি চুপ ছিলেন কারণ বেড়াতে যাওয়া, টিকিট কাটা ইত্যাদি গোটা প্রক্রিয়াটায় ওঁর উপস্থিতি এতই কম যে প্রক্রিয়াটার কোথাও গোলমাল ঘটলে সেটায় রিঅ্যাক্ট করার অধিকারী উনি নিজেকে মনে করেননি।

একটিমাত্র পরিস্থিতিতে পাত্রপাত্রীদের দেখে তাদের যাবতীয় ইতিহাসভূগোল নিয়ে এতগুলো নিঃসংশয় সিদ্ধান্তে পৌঁছনো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ভবিষ্যতে কী লেভেলের জাজমেন্টাল হতে চলেছি।। আমার কঠোরতম জাজমেন্টটি তোলা ছিল ভদ্রলোকের প্রতি। ভদ্রলোকের বিচলিত এবং সামান্য লজ্জিত মুখের দিকে তাকিয়ে আমি দুটো সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। এটা ওয়ান-অফ ঘটনা না। ভদ্রলোক এ জিনিস আগেও ঘটিয়েছেন, পরেও ঘটাবেন। এ এম পি এম গোলাবেন, সময়ের হিসেব না রাখতে পেরে ট্রেন মিস করবেন। এটা যত না ভুল তার থেকে বেশি টাইপ। (অধিকাংশ ভুলই তাই, যে কারণে কেউ একটা ভুল জীবনে মাত্র একবার করে না।) দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটা হচ্ছে, এই টাইপের লোকের স্বামী এবং পিতা হওয়ার কোনও যোগ্যতা নেই। আমি আর যাকেই করি, এই টাইপের লোককে বিয়ে করব না।

লোককে একটা কি দেড়টা পরিস্থিতিতে দেখে টাইপ ধরে ফেলার খেলাটা এখনও আমার ভেতরে চলতে থাকে। বদলানোর তাগিদ টের পাই না, কারণ, এক, ওটা আমার টাইপ আর টাইপ অত টপ করে বদলানো যায় না। দুই, বহুদিন ধরে লোককে টাইপকাস্ট করতে করতে প্র্যাকটিসটায় বেশ পারফেক্ট হয়ে উঠেছি। চট করে ভুল হয় না। আর সবথেকে জরুরি উপকারটা হচ্ছে তিন নম্বর। লোককে টাইপকাস্ট করে ফেললে তার প্রতি প্রত্যাশা ও প্রতিক্রিয়া কাটছাঁট করে নেওয়া যায়। এনার্জি বাঁচে।

একমাত্র যে বদলটা ঘটেছে সেটা হল, কীসে ভালো স্বামী হয় কীসে ভালো বাবা, সেটা অত ঝপাং করে বুঝে ফেলা যায় না এই চেতনার উন্মেষ। বাজারে যে রকম রোমহর্ষক বর আর বাবাদের নমুনা দেখি, সে তুলনায় টিকিটের টাইম গুলিয়ে ফেলে বেড়াতে যাওয়া মাটি করার অপরাধ তুশ্চু। ভদ্রলোক হয়তো দয়ালু। ক্ষমাশীল। ভদ্র। বউবাচ্চাকে মন থেকে ভালোবাসেন। স্বার্থপর নন। এই গুণগুলো থাকলেই তিনি চমৎকার বাবা ও বর।

কিন্তু চন্দ্রিল ঠিকই বলেন, তত্ত্ব আর সত্য অনেকসময়েই আলাদা হয়। তত্ত্ব দিয়ে জানি একসঙ্গে থাকার জন্য শেষের গুণগুলোই বিবেচ্য হওয়ার কথা, কিন্তু এ সত্যও জানি, এই টাইপের লোকের সঙ্গে থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হত। এ এম পি এম গুলিয়ে ভুল ট্রেনে উঠে পড়ছে, সাড়ে দশটায় বলে একবারও সাড়ে এগারোটার আগে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না, প্রাণপণ দৌড়ে ছেড়ে দেওয়া ট্রেনে উঠছে, প্লেনে ওভাবে ওঠা যায় না বলে মিস করছে, লোকের এই সব কিউট দোষের গল্প যত হাসি হাসি মুখে শুনি, বুকের ভেতর ঢেঁকির পাড় পড়তে থাকে। জোর বাঁচা বেঁচেছি। এ সব পাবলিক যতই রূপে কার্তিক গুণে গণেশ হোন না কেন, সঙ্গে থাকতে গেলে আমি ছবি হয়ে যেতাম।

ভদ্রলোকের কথা, ট্রেনের ওই ঘটনাটার কথা মনে পড়ল পরশু। যেদিন জয়পুরের বদলে চণ্ডীগড়ের ট্রেনে চড়ে বসে ছিলাম সেদিনও মনে পড়তে পারত। পড়েনি। পরশু আমরা স্থির করলাম দীর্ঘ রোগভোগের পর এবার আবার শরীরমনকে রোদহাওয়া খাওয়ানোর সময় এসেছে। পুজোর মুখে একগাদা বাংলা সিনেমা আসবে, অন্ততঃ সেই রকমই আমাদের আশা, যেগুলো দেখে হুলিয়ে নিন্দে করব। আপাততঃ দেখার মতো একটাই সিনেমা চলছে, আ হন্টিং ইন ভেনিস। হ্যালোউইন পার্টি-র ওপর লুজলি বেসড পোয়্যারো মিস্ট্রি। চলছে পি ভি আর প্রমেনাড-এ, বাড়ি থেকে প্রচুর দূর। খুশিই হলাম। বেড়ানো হবে। নেহরু প্লেস পর্যন্ত গেলে অসুখের অন্ত যথাযথ সেলিব্রেট করা হবে না।

সকাল দশটা পঞ্চান্নর শো। খুশি বাড়ল। ফাঁকা হলে সিনেমা দেখার সুবিধে আছে। লোকে চিৎকার করে ফোনে কথা বলে না, আমার সিটের পেছনে ক্রমাগত লাথি মারে না। অর্চিষ্মান অনেকদিন পর্যন্ত আমার এই দাবি ফাইট করছিল। এটা কি সম্ভব? সব শোতে সবাই তোমার সিটের পেছনে লাথি মারছে? আমি বলেছি, আরে মারছে তো দেখাই যাচ্ছে, আমি কি মিথ্যে কথা বলছি? চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে হার মেনে আজকাল হলের সবথেকে পেছনের রোয়ের সিট কিনতে শুরু করেছে অর্চিষ্মান। কিন্তু এ শোয়ের যা দামের বিন্যাস, শেষ রোয়ের টিকিট কাটা বাড়াবাড়ি। আশায় বুক বাঁধলাম, সকালের শোতে এই সিনেমা দেখতে কেউ আসবে না। হল ফাঁকা থাকবে। আমি মাঝের রোতে বসেও লাথি-ফ্রি সিনেমা দেখার আনন্দ উপভোগ করব।

পাঞ্জাবী মলের সজ্জা আমার এত খারাপ লাগে। অবশ্য কলকাতার কিছু শপিং মলের সাজও মারাত্মক। পাঞ্জাবী বাঙালি নির্বিশেষে তার মানে শপিং মলের সজ্জা বিকট হওয়াটাই দস্তুর। মেঝে এত চকচকে, ভয় হয় পিছলে পড়ে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ না করি। চারপাশে ঘুমন্ত ফুড কোর্ট জাগছে। কর্মচারীরা কেউ কাঁধ আর কানের মধ্যে ফোন চেপে টাইয়ে ফাঁস লাগাচ্ছেন, কেউ ঝাঁট দিচ্ছেন, কেউ শাটার তুলছেন। আমরা সিনেমা হলের সোনালি আলপনা দেওয়া বিরাট বিরাট কাচের গেটের দিক এগোলাম। আজকাল খুব ঘটা করে নমস্কার করার চল হয়েছে এই সব জায়গায়। একটা অল্পবয়সী ছেলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, হেসে নমস্কার করল। আমরাও হেসে নমস্কার করে ফোন বাড়িয়ে ধরেছি, সে টিকিটটা দেখে কনফিউজড মুখে বলল, লেকিন সার, ইয়ে তো পি এম হ্যায়, এ এম নেহি।

ছেলেটার প্রাণে দয়ামায়া আছে। আমাদের মুখ দেখে বলেছিল, আপনারা হরর দেখতে চান, আমি খোঁজ নিচ্ছি এই শোতে হরর চলছে কি না ইত্যাদি, আমরা না না বলে অকুস্থল ত্যাগ করলাম। তারপর ফাঁকা মলেই এদিকসেদিক ঘোরা হল। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দুজনেই ডিসওরিয়েন্টেড হয়ে গিয়েছিলাম। শান্ত হওয়ার জন্য একটা আশু মজার দরকার ছিল। সিনেমা দেখা ছাড়া মজা বলতে খাওয়া। প্রসেনজিৎ হওয়ার রেজলিউশন একবেলার জন্য স্থগিত রাখতে হবে। এদিকে খাওয়ার দোকান খুলবে সেই বারোটায়। একটা খোলা পাওয়া গেল, বিশেষ সুবিধের না। মানে আমার পক্ষে সুবিধের না। নিরামিষ বলতে খালি একগাদা কিনুয়া স্যালাড, কিনুয়া টিক্কি, কিনুয়া প্যানকেক। ওখানেই ঢুকলাম।

দোকানে গেলে সাধারণতঃ এমন খাবারই নেওয়া হয় যা দুজনে খেতে পারি, অর্থাৎ ভেজ। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে অর্চিষ্মানকে চেপে ধরে কিনুয়া প্যাটি খাওয়ানোর মতো পাষণ্ড আমি নই। বললাম, যা অর্চিষ্মান, খা লে আপনি ননভেজ। অর্চিষ্মান উত্তেজনা আর খুশি যথাসম্ভব চেপে রেখে পেপেরোনি পিৎজা অর্ডার করল। একা একবারে পারবে না, প্যাক করিয়ে নিতে হবে।

আমার কিন্তু তার কেটে গিয়েছিল। কিনুয়া প্যাটি চিবোতে চিবোতে আড়চোখে অর্চিষ্মানের দিকে তাকাতে থাকলাম। যুগযুগান্ত আগের ট্রেনের ভদ্রলোকের মুখের সঙ্গে অর্চিষ্মানের মুখ মেলাতে লাগলাম। আমার সমস্ত ইনটুইশন কি ব্যর্থ হয়েছে? এতবার ট্রায়াল অ্যান্ড এরর করে কি শেষমেশ আমি এমন লোককেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছেছি যে এ এম পি এম গুলিয়ে সিনেমার শো মিস করে? নিজের মুখের কল্পনায় বার বার ভদ্রমহিলার মুখ ভেসে উঠতে লাগল।

কিন্তু আমার সঙ্গে ভদ্রমহিলার একটা বেসিক তফাৎ আছে। ভদ্রমহিলার মুখ দেখে যে আমি ধরতে পেরেছিলাম যে এই টিকিটের ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন, তাঁকে যেদিন য'টার সময় রেডি হয়ে থাকতে বলা হয়েছে তিনি যে সেদিন ত'টার সময় সংসারের কাজ সেরে ছেলেমেয়েদের রেডি করে নিজে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন, আমার সঙ্গে তো সে রকমটা ঘটেনি। অর্চিষ্মান আর আমার দেড়খানা মিলের আধখানা মিল হচ্ছে কনফিডেন্স দুজনেরই তলানিতে। যে কোনও টিকিট ইত্যাদি কাটার ব্যাপার থাকলেই আমরা একশোবার করে দেখো দেখো করে অপরকে জ্বালিয়ে খাই। জ্বালাতনের রেসিপিয়েন্ট প্রত্যেকবারই যারপরনাই বিরক্তি প্রকাশ করে। এত দেখেশুনে শেষে কি না এমন একজনের পাল্লায় পড়লাম যে একটা সিনেমার/ট্রেনের/প্লেনের/একজিবিশনের টিকিট একা কাটতে পারে না?

এই পার্টিকুলার দোকানটার একটা মজা আছে, সেটা হচ্ছে প্রচুর আয়না। সিলিং-এ, দেওয়ালে, পামগাছের পেছনে, সিটের কোণে। যতবারই যাই, কোনও একটাতে চোখ পড়ে গিয়ে আঁতকে উঠি। কোনও একটা অপ্রত্যাশিত দেওয়াল বা কোণাঘুঁজি থেকে এক পাকাচুল বুড়ি চশমাভর্তি জাজমেন্ট নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। চেনা চেনা মুখ কিন্তু ঠিক প্লেস করতে না পারার সোয়া সেকেন্ডে হৃদপিণ্ড বিট মিস করে।

অনেকদিন পর পর যাওয়া হয় বলে এবং আমার ধারণা রেগুলারলি আয়নাদের লোকেশন চেঞ্জ করা হয় বলে, এ আঁতকে ওঠা প্রস্তুতি নেওয়া অসম্ভব। এবারও পারলাম না। কিনুয়া গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে প্লেটে ছত্রাকার হয়েছিল। ছুরিকাঁটা দিয়ে তোলা যায় না, এদিকে খাবার নষ্ট করা কিংবা ছড়িয়েছিটিয়ে খাওয়ার পারমিশন নেই নিজের। কাজেই সেই সব গুঁড়ো তুলে খাওয়ার জন্য চামচ চাই। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাত তুলেছি এমন সময় আবার আয়নার অ্যাম্বুশ। পাকাচুল, জাজমেন্টাল বুড়ির আচমকা আত্মপ্রকাশ।

সোয়া সেকেন্ডের শক সামলে অর্চিষ্মানের দিকে চোরা চাহনি দিলাম। হাসি হাসি মুখে পেপেরোনি পিৎজা খাচ্ছে। হাসির আড়ালের অমোঘ কারুণ্য আমার দৃষ্টি এড়ালো না। কারণ আজ ওই সোয়া সেকেন্ডের পিলেচমকানোর মধ্যেই বুড়ির টাইপটা ধরে ফেলেছি। আমি কার পাল্লায় পড়েছি জানি না, অর্চিষ্মান ডেফিনিটলি এমন একজনের পাল্লায় পড়েছে যে এ এম পি এম গুলিয়ে একটা সিনেমা পর্যন্ত ঠিক করে দেখে উঠতে পারে না।

পুনশ্চঃ রাতের শোতে সিনেমাটা আবার দেখতে গিয়েছিলাম। এবার ভালো করে টিকিট পরীক্ষা করে গিয়েছিলাম, ভুল হয়নি। সকালের শো হলে কী হত জানি না, রাতের শোতে ভিড় হয়েছিল। আমার পেছনে লোক বসেছিল এবং লাথিও মেরেছিল। বেশ জোরে। অ্যাকচুয়ালি, লাথির থেকেও খারাপ। পা এত ছড়িয়ে বসেছিল যে তার উজালায় কাচা ধপধপে সাড়ে তিন কেজির স্নিকার্স আর আমার সিটের পিঠের মাঝখান থেকে আমার ঝুঁটি টেনে বার করতে হয়েছিল। ঘটনাটা মনে পড়ল দিনদুয়েক পর। অর্চিষ্মান হাতের কাছে ছিল না, হোয়াটসঅ্যাপেই জানাতে হল। নীল টিক দেখে বুঝলাম মেসেজটা তক্ষুনি পড়া হয়েছে। যদিও উত্তর এল দশ মিনিট পর। একটা কোটেশন। If you run into an asshole in the morning, you ran into an asshole. If you run into assholes all day, you're the asshole.

উত্তর দেওয়ার, বলা বাহুল্য, প্রয়োজন বোধ করিনি।

Comments

  1. বাহ, আপনারা সুস্থ হয়ে সিনেমা দেখতে গেছেন শুনে ভালো লাগলো।
    আর ইয়ে মানে হেল্প হবে কিনা জানিনা কিন্তু আমার মনে হয় ট্রেনের এ এম পি এম গুলিয়ে ফেলার চেয়ে মুভির এ এম পি এম গুলিয়ে ফেলা ঢের কম ঝক্কির। মুভির রিভিউর অপেক্ষায় রইলাম।

    পুনশ্চ - আপনার সেই পিঁয়াজি (নাকি বেগুনি? ) আর চাবি হারানোর লেখাটার কথা মনে পরে গেল এটা পড়তে পড়তে, ওখানে বলেছিলেন না যে ভুলটা নিজেরও হতে পারতো মনে করে মেনে নেওয়াটাও যথার্থ পার্টনারের একটা গুন

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ হ্যাঁ, আধিরা, বেগুনির পলিথিনে চাবি পড়ে গিয়ে মিনিট কুড়ির একটা প্যানিক হয়েছিল বটে। কিছু অদ্ভুত সিচুয়েশন। ওই গুণটা সত্যিই গুণ, সেই জন্যই বিরল।

      সে তো বটেই। সিনেমা তো আবার গিয়ে দেখে ফেলা যায়। ট্রেন তো আবার চড়ে ফেলা যায় না।

      Delete
  2. ছোটবেলার ট্রেনের ঘটনাটা শোনার মতোই বটে।
    আর ছোটবেলায় একটু বেশি জাজমেন্টাল থাকে সবাই। ওটা স্বাভাবিক।

    সত্যি, ওই পেছন থেকে সিটে ধাক্কা খাওয়াটা সিনেমার মজাটাই অর্ধেক কমিয়ে দেয়। আমি ফাঁকা হল না পেলে যাওয়া এভয়েড করতেই বেশি ইচ্ছুক। দু-সপ্তাহ পর দেখলেও সিনেমাটা তো একই থাকবে, পাল্টে তো যাবে না !

    আচ্ছা, শেষে ওই "ঘটনাটা মনে পড়ল দিনদুয়েক পর" যেটা বললেন, ওখানে একটু কনফিউশন হয়ে গেলো - কোন ঘটনাটা বলা হচ্ছে এখানে ? সিনেমার এ এম / পি এম বেপারটা তো পুরোটাই এক দিনেই, এবং আপনারা একসাথেই ছিলেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঘটনাটা ট্রেনের, রাজর্ষি। অন্তত আড়াইযুগ আগের।

      বাকিদের কথা জানি না, জাজমেন্টালের স্কেলে আমি যত দিন যাচ্ছে খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছি। ছোটবেলায় তবু, যাকগে ছেড়ে দাও, বলার উদারতা ছিল, এখন সে সব লোপ পেয়েছে।

      সিটে লাথি খাওয়ার সমব্যথী পেয়ে ধন্য হলাম। ঝামেলা হচ্ছে আমরা এখানে বেশিরভাগ যে সিনেমাগুলো দেখতে যাই সেগুলো তিনদিন থাকে।

      Delete

Post a Comment