রিসাইকেল্, রিসাইকেল্
আমাদের পাড়ায় বিয়ের সিজন
শুরু হয়েছে। আমাদের পাড়ায় বলাটা অবশ্য ভুল, সারা বাংলাদেশেই বিয়ের সিজন শুরু
হয়েছে। পৌষের মলমাস কেটে মাঘ পড়তে না পড়তেই ডেকোরেটরা বাঁশ নিয়ে ছোটাছুটি
লাগিয়েছে, কেটারারের দল বাক্স থেকে দৈত্যাকৃতি হাতাখুন্তি হাঁড়িকড়াই বার করে ফুঁ
দিয়ে ধুলো ওড়াতে লেগেছে, পাত্রপাত্রীর বাবামায়েরা ব্যাগে হলুদের ফোঁটা দেওয়া কার্ড
পুরে ভয়ানক বিনীত মুখে দিগবিদিক নেমন্তন্ন করতে বেরিয়ে পড়েছেন।
কিন্তু আমাদের পাড়ার
বিশেষত্বটা হছে, সেখানে বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা রিসাইকেলেরও সিজন। লোকে যে কেন
রিসাইকল করাটাকে সচেতন, প্রগতিশীল, পরিবেশদরদী নাগরিকদের একচেটিয়া অধিকার বলে ধরে
নেয় কে জানে। আমাদের এঁদো রিষড়ার ছেঁদো গলিতে আমরাও রীতিমত রিসাইক্লিং প্র্যাকটিস
করে থাকি। আবহমান কাল ধরে করে আসছি।
আমাকে বিশ্বাস না করতে
চাইলে আপত্তি নেই। প্রমাণ চাইলে স্টেশন রোডের তনুশ্রী শাড়ি সেন্টারের মালিককে
জিজ্ঞাসা করলেও হবে। বিয়ের মরশুমে শহরের ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি আর মোহিনীমোহন
কাঞ্জিলালে যখন ভিড়ের চোটে মাছি গলতে পারে না, আমাদের তনুশ্রীর মালিক তখন ধুতির
খোঁটা নেড়ে নেড়ে সেই মাছিই তাড়ান, বিরসবদনে।
কারণ আমাদের পাড়ার কেউ
গিফটের শাড়ি আলাদা করে কেনেন না। প্রত্যেকের আলমারিতেই গুচ্ছ গুচ্ছ ক্যাটকেটে
গোলাপি রঙের শাড়ি, ডোনাল্ড ডাক আঁকা বেডকভার আলাদা করে যত্নে জমিয়ে রাখা আছে। সবার
বুককেসেই জন্মে একপাতাও উলটে না দেখা ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ বসে বসে ডিম পাড়ছে। সেসব
রিসাইকেল করার জন্য বিয়ের সিজনের থেকে সোনার সময় আর হয় না। আর সুযোগের সদ্ব্যবহার
না করার মত বোকাপাঁঠা আর যেখানেই থাকুক, আমাদের পাড়ায় নেই।
মুশকিলটা
হচ্ছে, কারও বাড়িতেই তো আর একগাদা ক্যাটকেটে গোলাপি শাড়ি কিংবা না পড়া বই থাকে না।
না পড়লেও সকলেই বই হাতে পেলেই প্রথম পাতায় নিজের নাম লিখে হাতের লেখা প্র্যাকটিস
করে নেয়। তাই বহুবছর ধরে রিসাইকেল্ড্ হতে হতে আমাদের পাড়ায় একটা রিসাইক্লেব্ল্
উপহারের ‘পুল’ তৈরি হয়েছে। সেই পুল থেকেই জিনিসপত্র ক্রমাগত হাত ঘুরতে থাকে যতক্ষণ
না সেগুলো একেবারে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।
এই
যেমন সেই ক্যাটকেটে গোলাপি শাড়িটার কথাই ধরা যাক। ভন্টুদার মা একবছর পুজোয় শাড়িটা
তাঁর কাঁচড়াপাড়ার ছোটননদের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলেন। পাঁচ ননদের মধ্যে ছোটজনকেই
ভন্টুদার মা সবথেকে কম দেখতে পারেন সেটা যেমন সত্যি, এটাও সত্যি যে শাড়িটা অত বদখৎ
দেখতে বলেই তিনি সেটাকে পত্রপাঠ পাশের বাড়ির টুকলির বিয়েতে চালান করে দিলেন। টুকলি
শাড়ি দেখে মুখ বেঁকিয়ে “ম্যাগো” বলে সেটা ফেলে রেখে বরের সাথে গটমটিয়ে
নিউজিল্যান্ড চলে গেল। এদিকে বিয়ের গিফট জমে জমে টুকলির মা’র আলমারি ফুটিফাটা
হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, কাজেই তিনি মামণির
আইবুড়োভাতে হাসিমুখে শাড়িটা দিয়ে এলেন। মামণি মা সেটা বুবাইয়ের নতুন বউকে
দিলেন। একমাস বাদে বুবাইয়ের বউ ভীষণ সেজেগুজে টুকাইদার বিয়েতে গেল, আর আরও একমাস
বাদে আমার ঠাকুরদার বার্ষিকী কাজে প্যাকেটে মোড়া সেই শাড়ি হাতে করে এসে সস্ত্রীক
নেমন্তন্ন খেয়ে গেল।
সত্যি
কথা, আমাদের আপনভোলা বাবাকাকারা এ সব রিসাইক্লিং-টিং নিয়ে মাথা ঘামান না। কাজেই
বাড়ির গৃহিণীদেরই এই চালাচালির দায়িত্বটা নিতে হয়। যাঁরা যত সুগৃহিণী, তাঁরা তত
দক্ষতার সঙ্গে রিসাইক্লিং করতে পারেন। শাড়ি বেডকভার তো দুরছাই, আমার পাড়ার এক
জেঠিকে মিষ্টির প্যাকেটও অহরহ রিসাইকেল করতে দেখেছি। জেঠুর ডায়াবেটিস, তাই ফ্রিজে
পারতপক্ষে মিষ্টি রাখেন না জেঠি। অতিথিরা মিষ্টি নিয়ে আসার পরদিনই কারও বাড়িতে
গিয়ে সে বাক্স গছিয়ে আসেন।
একদিক
থেকে ভালোই হয় অবশ্য। মিষ্টি রিসাইকেল করার ছুতোয় নিয়মিত দূরদূরান্তের
আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়ে যায়।
যাই
হোক। আসল কথাটা হচ্ছে আমাদের পাড়ায় বিয়ের আর রিসাইক্লিং-এর সিজন হইহই করে শুরু হয়ে
গেছে। সেদিন মা ফোন করে বললেন ভয়ানক বিপদ। দু’খানা বিয়ের নেমন্তন্ন এসেছে, এদিকে
মা’র কাছে রিসাইকেল করার জন্য আইটেমও আছে দু’খানা। ডোনাল্ড ডাক বেডকভার আর সেই
ক্যাটকেটে গোলাপি শাড়ি। কোনটা কোন বিয়েতে চালাবেন মনস্থির করতে পারছেন না মা। আমার
পরামর্শ চান।
আমি
শুনেটুনে পার্স থেকে একটা পয়সা বার করে টস করলাম। টসে বেডকভারটা তুলতুলির ভাগে আর
ক্যাটকেটে গোলাপি শাড়িটা ভন্টুদার নতুন বৌয়ের ভাগে পড়ল।
তারপর
ওদিকে মা ক্যাটকেটে গোলাপি শাড়ির প্যাকেট হাতে ঝুলিয়ে ভন্টুর বিয়েতে আনন্দ করে
কোর্মাকালিয়া সাঁটাতে গেলেন আর এদিকে আমি ফোন রেখে ডিনারের জন্য ম্যাগি বানাতে
উঠলাম।
কপালের
ফের আর কাকে বলে।
prithibi ta jodi gol hoy tahole Bhontu dar maa oi golapi sari ta onar kanchrapara'r nonod er meye'r aaiburobhaate deben.
ReplyDeleteHahahaha... jekhankar shaRi abar seikhanei firey gelo. Amader baRiteo gato sheete amar boner biyer subade besh kichhu wall hanging ar kyatkyate shaRi-bedcover jomechhe. Maake phone korle majhe majhei biyebaRite segulo recycle korbar galpo shunte paai. Khub moja pelam lekhata poRe.
ReplyDeleteShampa, seta debar moto koljer jor jodi jethimar (Bhuntu-dar maa) thake, tahole ami dubar na bhebe onar shishyotyo grohoN korbo.
ReplyDeleteSugata, hNya lokjon khub adbhut adbhut upohar dey. aboshyo loker dosh dewa jayna, edero nishchoy keu na keu ei jinisgulo diyechhilo, tai na?
haah haah hhaaah.. daruun likhecho :D. moja lege gelo pore :). r hyan, tomar maggi khawar dukhe amio ekmot! :(
ReplyDeleteAtreyee, chhotobelay ei Maggi khete pelei borte jetam. bhaba jay?
ReplyDeleteguruu... fatafati...
ReplyDeleteei recycling tomader rishrar goli keno, sorbotro hoy bujhle... amar biyer porer duto gota bochhor amar shashuri k kono biyebarite jawar gift kinte hoyni. ekhono sunlam oi stock er du-charkhana pore achhe..heh heh... ei kyat kyate saree, boka boka bhari bedcover, baje dekhte flowervase etc. bodhhoy dokangulo ei purpose ei toiri kore. oi fuldani keu kine nijer barite sajay bole mone hoyna ba kine nijer khate pate bole.. moja pelam tomar lekhata pore.