Posts

Showing posts from November, 2017

দ্য অয়েন্টমেন্ট

২০শে নভেম্বর, ২০১৭ র সকাল সাতটা তিন মিনিটে ঠাকুমা মারা গেলেন। আমি ঠাকুমার কাছে ছিলাম না। এমন দূরত্বেও ছিলাম না যে চট করে চলে আসতে পারি। কাজেই আমাকে বাবামা খবরটা তৎক্ষণাৎ জানাননি। পাছে আমার বিপদ হয়। পাছে আমি অতদূরে একলা ভেঙে পড়ি। আমি খবর পেয়েছি বাড়ি ঢুকে, অর্চিষ্মানের মুখে, সব চুকেবুকে যাওয়ার পর।   মৃত্যুর সময় ঠাকুমার কাছে আমার বাবা ছিলেন, মা ছিলেন, আর বিজলিদি ছিল। গত কয়েকবছরে আমার ঠাকুমার সবথেকে কাছের তিনজন মানুষ। ঠাকুমা বিছানাবন্দী ছিলেন অনেক বছর। শেষদিকে সাড়া কমে এসেছিল, ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ‘মাল্টিঅর্গ্যান ফেলিওর’ শুরু হয়েছে। অতিকষ্টে দুয়েকটা কথা বলতেন, কিন্তু চেতনা টনটনে ছিল, যেটুকু বলতেন নিখুঁত বলতেন। ছোটদাদু দিদা দেখতে এসেছিলেন, প্রথমটা চিনতে পারেননি। দৃষ্টিশক্তি ধীর হয়ে এসেছিল। ঠাকুমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়াতে পেরেছিলেন। স্মৃতি অদ্ভুতভাবে কাজ করে। জ্যান্ত লোককে চিনতে পারছেন না, অথচ কবে মরে যাওয়া তাঁর ছোটমাসির নাম জিজ্ঞাসা করাতে মুহূর্তের মধ্যে বলে উঠেছিলেন, ‘কুট্টিমাসি’। ছোটদাদু কম মৃত্যু দেখেননি তাঁর জীবনে। বলে গিয়েছিলেন বাবাকে, এখন আর বেড়াতে যেয়ো না কোথাও।   ...

পথে

ইস্তানবুল থেকে বোর্ডিং প্রায় শেষ, সবাই বসে পড়েছে, ওভারহেড বিনগুলো ধপাধপ বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কমে এসেছে, আমি একবার মিডিয়া লাইব্রেরি পরীক্ষা করে নিয়েছি, দিল্লি থেকে ইস্তানবুল আসার পথে বার্ডম্যান আর হিডেন ফিগারস দেখা হয়ে গেছে, আমি ভাবছি এবার ‘মার্ডার, শি বেকড’ দেখব না ‘লেগো ব্যাটম্যান’, ভেবে ভেবে লেগো ব্যাটম্যানের দিকেই যখন মন ঝুঁকেছে এমন সময় একটা অস্বস্তি হল। শারীরিক অস্বস্তি নয়, গরম বা ঠাণ্ডা লাগছে না। মানসিকও যে নয় বোঝাই যাচ্ছে, লেগো ব্যাটম্যান দেখার জন্য তৈরি হচ্ছি যখন। একবার দ্রুত চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। না, কেউ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে নেই, যে যার নিজের সামনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। অস্বস্তিটা গেল না। উল্টে একটু একটু তাকে চিনতে পারলাম। একটা কিছু যা আমার সঙ্গে থাকার কথা, কিন্তু না থাকার অস্বস্তি। ছাতা আনিনি (যদিও বনে বৃষ্টি হবে লিখেছে), রুমাল ব্যাগের ভেতর, টিফিনবাক্সে লুচিআলুভাজা পুরে প্লেনে ওঠার জমানা গেছে, আই কার্ডও ব্যাগ থেকে বার করার প্রয়োজন হয়নি। এসব ছাড়া আর যে জিনিসটা আমার কাছে থাকার কথা, ছিলও এই কিছুক্ষণ আগে, আমার পাঁচ আঙুলে তার ছোঁয়া আমি তখনও স্পষ্ট কল্পনা ...

কয়েকটা লিংক

Image
উৎস “For me there are only two kinds of women: goddesses and doormats.”                                                                          — Pablo Picasso   ( উৎস )      আজকের জেওপার্ডি কুইজঃ জর্জ অরওয়েলের মতে হোয়াট ইজ “ the lunatic modern habit of identifying oneself with large power units and seeing everything in terms of competitive prestige.” ? "It introduces Miss Marple who I love much more than the irritating Poirot because her reasoning is always rooted in human nature."   এতে ই কাজ দিত, কিন্তু আরও আছে।  "Christie doesn’t often get credit for the sly humour that runs through much of her work,"   আমি ভ্যাল ম্যাকডারমিডের কোনও বই পড়িনি, এবার পড়ে দেখতে হবে। আমার ফেভারিট প্ল্যান? প্ল্যান ক্যানসেল করা।   নাউ আই নো সামথ...

হ্যাপি বার্থডে, রোহিত!

Image
রোহিতের বয়স পাঁচ হল। রোহিত আন্টিজির নাতি। জন্মদিনে রোহিত নতুন জামা পরে চকোলেটের প্যাকেট নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। রোহিতের সব বন্ধুরা চকোলেট পেয়েছে। আমিও বাদ পড়িনি।

কচুরি জিলিপি কুলফি চাট বান্টা

Image
রোশনারা বাগ থেকে উবারে আধঘণ্টা মতো গেলেই এদিকে চাওরি বাজার আর ওদিকে চাঁদনি চক মেট্রো ষ্টেশন। এই দুই মেট্রো স্টেশনের আশেপাশের চত্বরটাই হচ্ছে, বড়লোক দেশের টুরিস্টদের মতে ‘রিয়েল’ দিল্লি বা ‘রিয়েল’ ইন্ডিয়া। এই জায়গাটা ‘রিয়েল’ ফুডিদের মক্কাও বটে। ইতিহাসচর্চা শেষ হতে হতে আমাদের ক্ষিদে পেয়ে যাবে জানতাম। ঠিক করেই রেখেছিলাম সে ক্ষিদে এখানে গিয়ে মেটাব। কচুরি, জিলিপি, পরোটা, রাবড়ি যা প্রাণে চায় খাব।   ব্যাপারটা শুনতে যতটা সোজা মনে হচ্ছে, আসলে অতটা সোজা নয়। সোজা হতে পারত, যদি না কোটি কোটি রিয়েল ফুডি এই চত্বরে গিয়ে নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করতেন এবং কোটি কোটি টুইট, ফেসবুক স্টেটাস, ব্লগপোস্ট, ইউ টিউব ভিডিও এমনকি বই পর্যন্ত লিখে সে সব আবিষ্কারের কথা চারদিকে ফলাও করতেন। কারও আবিষ্কারের সঙ্গে কারও আবিষ্কারের মিল নেই। কেউ বলে রামের কুলফি অথেনটিক, কেউ বলে শ্যামের, কেউ বলে যদুরটা না খেলে জীবনের সব কুলফি খাওয়া বৃথা। রিসার্চ করতে করতে মাথা ভোঁ ভোঁ, চোখে সর্ষে ফুল। ক্ষান্ত দিলাম। ঠিক করলাম, যে কোনও একজন এক্সপার্টের কথা মেনে চলব। তিনি ঠিক হোন, ভুল হোন, আমরা বিচার করব না, তাঁর পছন্দই আমাদে...

খাতায় কলমে

বয়স হলে কোমর যায়, হাঁটু যায়, চোখ যায়, সবথেকে বেশি যায় মনঃসংযোগ। কতরকম টেকনিক ফলো করলাম, প্রাণায়াম, পোমোদোরো। পঁচিশ মিনিট কাজ, পাঁচ মিনিট ব্রেক। পঁচিশ মিনিট কাজ, পাঁচ মিনিট ব্রেক। প্রথম কয়েকদিন বেশ কাজও দিয়েছিল, তারপর আবার যে কে সেই।   আফসোস আরও বেশি হয় যখন মনে পড়ে এককালে মনঃসংযোগের ক্ষমতা কত বেশি ছিল। মা বলেন, ঝুঁকে পড়ে গল্পের বই পড়তাম আর কেউ ‘সোনা’ বলে ডাকলে চমকে উঠে হাতপা ছুঁড়ে হার্টফেল হওয়ার জোগাড় হত। ভয়ে লোকে ডাকত না। আপনারা বলতে পারেন, গল্পের বই মন দিয়ে পড়া দিয়ে মনঃসংযোগের বেশিকম প্রমাণ হয় না। সিঁড়িভাঙা সরল কিংবা ভারতের ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদক রাজ্যের লিস্ট মুখস্থ করার সময় মন লাগাতে পার তো বুঝি। মন তাতেই বসে যা করতে ভালো লাগে। যা ভালো লাগে না, তাতে মন বসে না। অফিসের কাজ, বাড়ি পরিষ্কার। কত রকমের যে ঠ্যাকনা লাগে। কানে হয় গান গোঁজো, নয় সানডে সাসপেন্স। পাঁচশো বার জল খাও। চুল আঁচড়াও। মাকে ফোন কর। অর্চিষ্মানকে পিং। ভাবো দু’ঘণ্টার মধ্যে যদি আবার ফোন করে জিজ্ঞাসা করি, ‘কী চলছে?’ তিন্নি পাগল ভাববে কি না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যা করতে আমার ভালো লাগে তাতেও আমার ইদানীং মন বসে ...

এ মাসের বই/ অক্টোবর ২০১৭

Image
আমার প্রিয় বুকব্লগাররা সকলেই অক্টোবর মাসজুড়ে হইহই করে হ্যালোউইন উদযাপন করলেন। এত আনন্দ করে সবাইকে ভূতের বই পড়তে দেখে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। বহু বছর পর পরপর দুখানা হরর নভেল পড়ে ফেললাম।   উৎস গুগল ইমেজেস সেই দু’হাজার পনেরোতে বেরোনোর সময়েই জশ ম্যালেরম্যান-এর বার্ড বক্স-এর নাম শুনেছিলাম, কিন্তু তারপর যা হয়, বোকার মতো রিভিউ পড়তে গেছি।   রিভিউর ব্যাপারে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছি, লক্ষ লক্ষ প্রশংসাসূচক রিভিউর মধ্যে যদি একখানা নেগেটিভ রিভিউ থাকে, মন সবসময় সেইটাকেই আঁকড়ে ধরে।   যারা প্রশংসা করছে তাঁরা পা চাটা স্তাবক, ঝাঁকের কই, যে গালি দিয়েছে সে-ই সততার প্রতিমূর্তি। এই ফাঁদে পড়ে আমার বার্ড বক্স পড়া পিছিয়ে গেল দু’বছর। তারপর মাসের শুরুতে একজন বুকব্লগারের হ্যালোউইন রেকোমেন্ডেশনে বার্ড বক্স-এর নাম শুনে কী মনে হল, কিছু না ভেবে কিনে ফেললাম। তার পরের তিনঘণ্টায় দু’শো চুরানব্বই পাতার বইটা পড়েও ফেললাম।   বার্ড বক্স-এর গল্প চলে দুটো সুতো ধরে। প্রথম সুতো চার বছর আগের, যখন এক অদ্ভুত ঘটনার কথা প্রথম লোকের কানে আসছে। নিতান্ত স্বাভাবিক অবস্থা থেকে লোকজ...

দুই বোন

Image
আমি এই কালকেই ভাবছিলাম, দিল্লির হিন্দির সঙ্গে আমি কীভাবে সড়গড় হয়ে যাচ্ছি, এমনকি এই ভাষাটা কীভাবে আমার মুখের কথাতেও সময়েঅসময়ে ঢুকে পড়ছে সে নিয়ে একটা পোস্ট লিখব। এই যেমন আজকাল গল্প ‘করা’র জায়গায় মাঝেমাঝে গল্প ‘মারা’ বেরিয়ে যায়। কাল অর্চিষ্মান ফোন করে বলল, ‘শোন, একটা লিংক পাঠিয়েছি, একটু দেখো তো,” আমি বললাম, ‘দাঁড়াও, হাতের কাজটা নিপটে নিয়েই দেখছি।’   আবার কিছু কিছু জায়গায় এখনও হোঁচট খাই, যেমন ‘আগে’ শব্দটায়।   ওলা ভাইসাবকে রুকতে বললে তিনি বলেন, ‘পেড় কি আগে?’ আমি বলি, ‘নেহি, পেড় কি বাদ।’ উনি বলেন, ‘ওহি তো বোলা ম্যায়নে, পেড় কি আগে…’ এইরকম খানিকক্ষণ চলার পরে আমার মনে পড়ে যে ভাইসাবের ‘আগে’ যা, আমার ‘বাদ’ ও তাই। কাল আমার হাতে চা ধরিয়ে দিয়ে ভাইসাব যখন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পেপার দেনে আয়ে হো?’ আমি একমুহূর্তের জন্য কনফিউজড হলাম। সঙ্গে সাইকেল নেই, সাইকেলের হ্যান্ডেলে থলি বোঝাই খবরের কাগজ নেই, থাকলেও আমার টিপ যা খারাপ, সে পেপার পাকিয়ে তিনতলা কেন, তিন হাত দূরের বারান্দায় ফেলতে পারব কি না সন্দেহ। তা সত্ত্বেও আমি ‘পেপার দিতে’ এসেছি, এ রকম মনে হওয়ার কারণ কী? তারপর মাথা খুলল। কাছাকা...

শ্রীমান কানাই

Image
সাকি, যাঁর আসল নাম হেক্টর হিউ মুনরো, তাঁর ছোটবেলাটা অন্য পাঁচটা ছোটবেলার থেকে আলাদা ছিল। ছোটবেলায় মা মারা গিয়েছিলেন। ভাইবোনের সঙ্গে ঠাকুমা এবং মাসিপিসির সংসারে বড় হয়েছিলেন সাকি। তাঁর ছোটবেলা আনন্দের ছিল না।   সেই জন্যই বোধহয় সাকির গল্পের ছোটরাও আমাদের চেনা আর পাঁচটা ছোটদের মতো নয়। তারা ছোট, কিন্তু সরল নয়। হাসি, কান্না, ক্ষিদে, ব্যথা ইত্যাদি ওপরতলার অনুভূতিগুলোর নিচে মানুষের মনে যে অনুভূতিগুলো চাপা পড়ে থাকে (আমি বড়দের অনুভূতি ইচ্ছে করেই বলছি না, কারণ সব বড়দের ওসব হ্যাপা থাকে না), মেশামেশা, ধোঁয়াধোঁয়া, সেসব সাকির ছোটরা দিব্যি অনুভব করতে পারে।   Sredni Vashtar সাকির ভীষণ চেনা আর বিখ্যাত গল্পগুলোর মধ্যে একটা। উনিশশো দশ থেকে এগারোর মধ্যে লেখা গল্পটি The Chronicles of Clovis সংকলনের অন্তর্গত। Sredni Vashtar -এর হিরো করনারডিন-এর বয়স দশ, করনারডিন অনাথ এবং মিসেস ডি রুপ বলে একজন আত্মীয়ার ভরণপোষণে বড় হচ্ছে। করনারডিন এবং মিসেস ডি রুপ-এর মধ্যে কোনওরকম ভালোবাসাবাসি নেই। এই সময় জানা গেল করনারডিন এক অজানা অসুখে ভুগছে, যার ফলে আর বছর পাঁচেকের মধ্যে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। ...