দিনে দশহাজার


দৈর্ঘ্য লম্বার দিকে, প্রস্থ সরুর দিকে। চুলের ছাঁট, চিবুকের কাটও মনে আছে। বায়োলজির ছাত্র যে সেটাও। খালি নামটা পিনপয়েন্ট করতে পারছি না। সম্ভবতঃ অ দিয়ে শুরু। তবে অ দিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চান্ন পার সেন্ট পুরুষের নাম শুরু কাজেই ওটা মনে থাকার মধ্যে গণ্য হবে না।

মোদ্দা কথা, নাম ছাড়া বাকি লোকটাকে একেবারে চোখের সামনে কল্পনা করে ফেলতে পারব। এমনকী সেই মুহূর্তটাও যখন লোকটা মুখচোখ নেড়ে সমবেত জনতাকে বলছে, ভোরে ল্যাব থেকে ফিরছি, কুন্তলা হাঁটছে। ডিনারের পর ল্যাবে যাচ্ছি, কুন্তলা হাঁটছে। ঘুম থেকে উঠে শিঙাড়া খেতে যাচ্ছি সবরমতীর দিকে, কুন্তলা হাঁটছে। তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে, পরের বার রাজধানীর টিকিট কেটে পয়সা নষ্ট না করে হাঁটতে শুরু করিস, ইজিলি বাড়ি পৌঁছে যাবি।

বাইশ বছর বয়সে সাধারণত লোকে নিয়ম করে সকালসন্ধে ব্রিস্ক ওয়াকে বেরোয় না, কিন্তু আমার হাঁটার পেছনে হিস্ট্রি ছিল। মাস ছয়েক আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল জীবনে। না, প্রথম প্রেম নয়, যদিও সেটাও ওই ঘটনার ক'দিন আগেই ঘটেছিল কিন্তু আমার হাঁটাহুটিতে সে প্রেমের অবদান ছিল না। সেটা একেবারে অন্য বিষয়।

বিষয়টার সূত্রপাত হয়েছিল আবার অনেক আগে। ক্লাস নাইনটাইন নাগাদ পেটের ডানদিকে একটা ব্যথা শুরু হয়েছিল। সোজা দাঁড়াতে না দেওয়া, শ্বাস বন্ধ করা ব্যথা। কিছু লোক বলেছিল অ্যাপেনডিক্স। তার থেকে বেশি লোক বলেছিল গ্যাস। চেষ্টার ত্রুটি রাখা মায়ের ধাতে ছিল না, দৌড়োদৌড়ি করে এক্সরেমেক্সরে করিয়েছিলেন, ডাক্তারমাক্তার দেখিয়েছিলেন, কিছু পাওয়া যায়নি। এক ডাক্তারবাবু পরামর্শ দিয়েছিলেন, দেখুন অ্যাপেন্ডিক্স তো তেমন কাজে লাগে না, যদি মানসিক সান্ত্বনা মেলে ওটা বাদ দিয়ে দিতে পারি। 'মানসিক' শব্দটা উচ্চারণ করার সময় মাবাবার দিকে খুব অর্থপূর্ণ দৃষ্টিপাত করেছিলেন।

কয়েকবছর পর মা আসামে চলে গেলেন, আমি দিল্লি চলে গেলাম। সেকেন্ড সেমেস্টারে ম্যাক্রোর প্রেজেন্টেশনের দিন সকালবেলা ব্যথা উঠল। মনের কাছে হারব না পণ করে চান করলাম, পাউরুটি চিবোলাম, তারপর শাহরুখ খানের স্টিকারওয়ালা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে টের পেলাম যে এবার বসা দরকার। খাটের কিনারে তশরিফ ঠেকিয়ে বার দুয়েক চুলে চিরুনি চালিয়ে, চিরুনি ফেলে, শুলাম। রুমমেট তখন ল্যাবে বেরোবে বেরোবে করছে, আমার দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বসা থেকে শোয়ার সিকোয়েন্স দেখে তার সন্দেহ হল। সে, কুন্তলা, আর ইউ ওকে? বলতে বলতে খাটের ওপাশ থেকে ওপাশে এসে দেখে আমার সাড়া নেই।

লোপা! লোপা!" আর্তনাদ সহকারে রুমমেটের নিষ্ক্রমণ (গোলযোগ বাধলে শুধু আমাদের নয়, হোস্টেলের যাবতীয় করিডরের মেয়ে ওয়ার্ডেনের কাছে যাওয়ার আগে লোপার কাছে আসত। জুনিয়র বাঙালি মেয়েরা লোপাদিকে লোপা সম্বোধনের স্পর্ধা দেখাত না কিন্তু আমার রুমমেট কি না শ্রীলংকান, তাই তার লোপা সম্বোধন অ্যালাউড ছিল), ডাক্তারবাবুর আগমন, অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে লোপাদি এবং ক্লাসমেট কাম প্রাণের বন্ধু সঞ্চারী সহকারে সফদরজং হাসপাতাল গমন - সবই আমার ধোঁয়া ধোঁয়া মনে আছে।

সারাদিন বিবিধ পরীক্ষানিরীক্ষার পর সন্ধে নাগাদ সর্বশেষ রিপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে এসে ডক্টর অঞ্জলি, সারাদিনে একটা করে ক্যাডবেরি খেয়ে বসে থাকা লোপাদি আর সঞ্চারীকে বলেছিলেন, যা সন্দেহ করেছিলাম তাই। হয় এ মেয়ে থাকবে, নয় এর ডানদিকের ওভারি। এবার তোমাদের ডিসিশন। ঝটপট নিতে হবে।

কত ঝটপট?

এই ধর ঘণ্টা দুয়েক?

লোপাদি মাথা চুলকে বলেছিল, আমার তো ডিসিশন অলরেডি নেওয়া হয়ে গেছে কিন্তু যা দিনকাল পড়েছে কিছু বলা যায় না, দাঁড়ান, দুটো ফোন করি।

বাবা পৌঁছেছিলেন গভীর রাতে আমাকে ওটি-তে ঢোকানোর আগেই। ধুবড়ি থেকে ফ্লাইট ধরে গুয়াহাটি হয়ে মায়ের আসতে হয়ে গিয়েছিল পরের দিন বেলা। ততক্ষণে আমি পেটে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে, কবজিতে স্যালাইন বিঁধিয়ে বেডে শুয়ে আছি। মা কোন শাড়িটা পরে ছিলেন এখনও মনে আছে। এও মনে আছে যে তার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত গোটা ব্যাপারটা কেমন স্বপ্নের মতো ছিল, যেই না মা এসে পাশে বসলেন আর একটি শব্দও উচ্চারণ না করে আমার হাতে হাত রাখলেন, গত চব্বিশঘণ্টাটা প্রকাণ্ড খাঁড়ার মতো ঘাড়ে এসে পড়ল, আর আমি "এত দেরি কেন করলে?" ভ্যাঁ জুড়ে অপরাধবোধে অলরেডি আধমরা মাকে আবার মারলাম।

ওটিতে জ্ঞান হারানোর আগের দুটো ঘটনা মনে আছে। প্রথম ঘটনাটার সঙ্গে একটা উপলব্ধি জড়ানো (যেটা ওটিতে শুয়ে হয়নি, বলা বাহুল্য, পরে হয়েছিল)  সেটা হচ্ছে যে শরীর ব্যাপারটা আমার মতো নন-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে ছুঁৎমার্গের লীলাভূমি আর স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে হল বিগড়োনো একটা খ্যাঁচাকল, যেটাকে সারিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারলে ওঁদের মুক্তি। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কী সব সাঁটার সময় আমি খালি সরানো চাদর টেনে টেনে আব্রুর অবশিষ্টাংশ বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। শেষমেশ "স্টপ ইট, কুন্তলা" ধমকে উঠেছিল কে যেন। উই আর ডক্টরস!

দ্বিতীয় মনে আছে একটা কথোপকথন। একেই কি বন্ধুরা নিয়ে এসেছে? ইয়েস, একেই। মাই গড কুন্তলা, ইউ হ্যাভ সো মেনি ফ্রেন্ডস!

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কয়েকদিন বি এস এন এল-এর গেস্ট হাউসে ছিলাম। যতদিন না রিষড়া ফেরার মতো শক্তপোক্ত হচ্ছি ততদিনের স্টপগ্যাপ। বন্ধুরা দেখা করতে আসত। আর গল্প বলত আমার যখন পেট কাটা হচ্ছিল, তখন সফদরজং-এর দালানে সবাই রাত জেগে কেমন হাসিঠাট্টা করেছিল। দিনভর খেপে খেপে লোক এসেছিল আমার জন্য পার্লে জি আর ক্যাডবেরি নিয়ে। সন্ধেবেলা একদল হাসপাতালে পৌঁছে অবশেষে লোপাদি আর সঞ্চারীকে ছুটি দিয়ে হোস্টেল পাঠিয়েছিল।  রুমে পৌঁছে, স্নান করে, একটামাত্র ক্যাডবেরি খেয়ে থাকা সঞ্চারী সবে কেসি থেকে আনানো সুপ চামচে করে মুখে তুলেছে, এমন সময় "রুম নাম্বার টোয়েন্টি ফোওওওওর, ভিজটর!" বলে জগদীশ ভাইয়ার হাঁক। গেটের সামনে দাঁড় করানো অটোর ভেতর থেকে গলা বাড়িয়ে ভিজিটরেরা সঞ্চারীকে বলেছে, অপারেশন হচ্ছে, আমরা যাচ্ছি, তুই কি যাবি? গল্প করে বলার সময় চোখ ঘুরিয়ে সঞ্চারী বলেছিল, জাস্ট ভাব, প্রশ্নের ছিরিটা। ঘরে ফিরে সুপের বাটি মুখে উপুড় করে দৌড়ে বেরিয়েছিল। অপারেশন থেকে বেরোনোর পর খাটের পাশে বসে "থোড়াসা পি লে" বলে জুস খাইয়েছিল ডে-স্কলার মেয়ে।

সেদিনই অর্চিষ্মান চোখ কপালে তুলছিল। ইউটিউবে নাকি দেখেছে, আঠেরো বছরের বিহারি ছেলের সাইবেরিয়ান ট্রেনে অ্যাডভেঞ্চার, উনিশ বছরের হরিয়ানভি মেয়ের অ্যাফ্রিকান আকাশের নিচে ট্রাকের ছাদে শুয়ে বিশ্বভ্রমণ। আমরা উনিশ বছর বয়সে কী ছিলাম মনে আছে? অচেনা লোকের সামনে পরপর দুটো বাক্য টানা বলতে গেলে জিভ জড়িয়ে যেত। ওই টুকুটুকু ডেয়ারডেভিল বাচ্চার কাছে আমরা, এই বুড়ো বয়সেও, স্রেফ শিশু।

এই পোস্টটা লিখতে লিখতে মনে হল, নিজেদের প্রজন্মের প্রতি হয়তো অবিচারই করলাম। সাইবেরিয়া আর কিলিমাঞ্জারোর দরকার কী? আমার বাইশ বছরের পুঁচকে ক্লাসমেটদের কথাই ভাবুন। ওইটুকু বয়সেই কী মায়াদয়া, কী দায়িত্ববোধ, কী যত্ন নেওয়ার ক্ষমতা!

আমার ডান ওভারি সফদরজং-এর ল্যাবে পড়ে রইল, আমি গেস্ট হাউসে ফিরে এলাম। নড়তে পারি না, চড়তে পারি না, পেটে পাহাড়সমান গজ ব্যান্ডেজের ঢিবি। জানাজানি হলে পর চেনাশোনার মধ্যে গুনগুন উঠেছিল, কী অবিবেচক ডাক্তার সব, ফস করে কেটে দিল পেটটা?! দাগ যদি না যায়? তাদের মুখে ফুলচন্দন দিয়ে সে দাগ যায়ওনি, টানটান শুয়ে আছে পেটের মাঝবরাবর। আমিও যে কোনওদিন বাইশ বছরেরটি ছিলাম, হাসপাতালের দালানে মার্চের শিরশিরানিতে রাতভর জড়সড় হয়ে বসে থাকার মতো বন্ধুর দল যে আমারও ছিল ইত্যাদি যতবার নিজের কাছে শোনা কথা ঠেকে, দাগটা সাক্ষ্যপ্রমাণ যোগায়।

ফেরার আগে আরেক দফা টেস্টের জন্য আমাকে পাঠানো হল ডক্টর উপ্পল'স নার্সিংহোমে। ডক্টর অঞ্জলিই পাঠালেন। (ডক্টর অঞ্জলির পদবী মনে করার চেষ্টা করছি, কাপুর? নাকি শর্মা? কুছ কুছ হোতা হ্যায় থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছি নাকি কে জানে) আমি যে অর্চিষ্মানকে স্ট্যান্ডিং নির্দেশ দিয়ে রেখেছি, গোলমাল দেখলে ম্যাক্স-মিনির দিকে না গিয়ে সোজা সরকারি হাসপাতালের এমারজেন্সিতে নিয়ে গিয়ে ফেলবে, তার জন্য ডক্টর অঞ্জলি, ডক্টর অঞ্জলির পেছন পেছন বোর্ডে সাঁটা কাগজের ওপর পেন বাগিয়ে ঘোরা ছাত্রছাত্রীর দল আর ওই ক'দিনের সরকারি হাসপাতালে কাটানোর স্মৃতি দায়ী। জীবনের দায়িত্ব যদি কারও হাতে নিঃশর্তে তুলে দিতেই হয়, আমি ডক্টর অঞ্জলির মতো স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে তুলে দিতে অন্তত একশো কোটি গুণ স্বচ্ছন্দ বোধ করব যাঁরা এসিহীন ঘরে একসঙ্গে ঢুকে পড়া পঞ্চাশজন রোগীকে ঘামতে ঘামতে অ্যাটেন্ড করেন, শারীরবৃত্তীয় যাবতীয় প্রক্রিয়াকে বুর্জোয়া কানের উপযোগী গিফট র‍্যাপে মোড়ার দায় কিংবা সময় কোনওটাই যাদের নেই। অন্ততঃ সেই সব স্বাস্থ্যকর্মীদের তুলনায়, যাঁরা স্পটলেস, স্যানিটাইজড প্রেক্ষাপটে মাপা ডেসিবেলে আগে ম্যাম পিছে ম্যাম-এর মধ্যে মসৃণ কোপে গলা কেটে মুণ্ডু হাতে ধরিয়ে দেন। বা দিতে পারেন। অন্ততঃ রকমসকম দেখলে সে রকমটাই সন্দেহ হয়।

অর্চিষ্মান বলে, প্রেজুডিস। হতে পারে। একই স্বাস্থ্যকর্মী ভিন্ন সেটিং-এ ভিন্ন ব্যবহার করবেন, সেটাও অস্বাভাবিক নয়। তবু।

যাই হোক, ডক্টর অঞ্জলি আর ডক্টর উপ্পলের সেটিং-এ আকাশপাতাল ফারাক। কোথায় সফদরজং-এর জেনারেল ওয়ার্ড, কোথায় সাউথ দিল্লির গেটেড পাড়ায় দেবদারুছাওয়া নার্সিংহোম। সে নার্সিংহোমের ততোধিক আবছায়া একটা ঘরে পরীক্ষানিরীক্ষা পেরিয়ে শুয়ে আছি, ওষুধের ঘোর নাকি শারীরিক শ্রান্তি নাকি পারিপার্শ্বিকের পিনড্রপ সাইলেন্স, হঠাৎ চটকা ভেঙে দেখি একটা লোক খাটের পাশে বসে খসখস করে আমার প্রেসক্রিপশনের তাড়া উলটোচ্ছে পাল্টাচ্ছে।

ডক্টর অঞ্জলি ঘরে ঢোকার অন্তত তিরিশ সেকেন্ড আগে থেকে করিডরে তাঁর হাঁকডাক শোনা যেত। ডক্টর অঞ্জলি মোটা না হলেও স্বাস্থ্যবান, এঁর কাঠামোর সঙ্গে বাঁশপাতার মিল। ডক্টর অঞ্জলির গালের আভা আপেলবাগান মনে পড়ায়, এঁকে দেখলে রক্তাল্পতার আশংকা জাগে।

প্রেসক্রিপশন থেকে মুখ তুলে ডক্টর উপ্পল জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কী হয়েছে তুমি জান?

অমনি দুজনের মধ্যে সবথেকে বড় তফাৎটা আত্মপ্রকাশ করল। ডক্টর অঞ্জলিকে যেটুকু দেখেছি, গলা টিপে ধরলেও পাশে বসে আমাকে আমার রোগ বোঝানোর সময় বার করতে পারবেন কি না সন্দেহ। যাদের সময় আছে তারাও নিজেদের মধ্যে কথা বলতে, ব্রেন্সটরমিং করতে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতে এত ব্যস্ত ছিল যে আমাকে ঝট করে দু'কথায় ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় হয়নি।

ডাক্তারবাবু অভিজ্ঞ লোক, এ রকমটা ঘটার যে একটা চান্স আছে জানতেন। স্বল্প কথায় গোটা ব্যাপারটা খোলসা করে, অদূর এবং সুদূর ভবিষ্যতে ব্যাপারটার আমার জীবনে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে জানতে চাইলেন, তোমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে?

যে ভাবনাটা গত কয়েকদিন ধরে ভালো করে ঘুমোতে দিচ্ছিল না, অবশেষে প্রকাশ্যে আনা গেল। দৌড়ে ট্রেন ধরাটরা যদি ছেড়েও দিই, আমি কি আবার আগের মতো জোরে হাঁটতেটাটতে পারব? ভারি জিনিস তুলতেটুলতে?

অঞ্জলি হলে হয়তো অট্টহাসি হাসতেন, উপ্পল বিষণ্ণ হেসে বললেন, আগের থেকে জোরে দৌড়োতে পারবে আর বেশি ভারি জিনিস তুলতে পারবে। যদি কয়েকটা...ওয়েল, দুটো জিনিস মেনে চল।

কী কী?

এক, দিনে একঘণ্টা করে হাঁটবে। দুই, মনে রাখবে, তোমার, শুধু তোমার না, তোমার আমার আমাদের সবার, জীবনভরের ডায়েটের সিংহভাগ হওয়া উচিত সুখা রোটি অর সাগ। দো ওয়ক্ত। নট মোর।

পুঁই, পালং-এর বড়ি দিয়ে বা না দিয়ে ঘণ্ট; বেতো, হিঞ্চের রসুনের গন্ধওয়ালা শুকনো ঝরঝরে ভাজা - রুটি দিয়ে সবরকমের শাকের সবরকম পদ যে আমি এত তৃপ্তি করে খেতে পারি; কলমি হলে তো কথাই নেই; সঙ্গের রুটিটা যদি তেমন নরম আর গরম হয়, এক সিটিং-এ চার-পাঁচটা মেরে দেওয়া যে আমার বাঁ হাতের খেল, সেটার পেছনে উপ্পলের ওই মুহূর্তের ওই ক'টা কথার একেবারে অবদান কি নেই? 

তবু, খেতে এত ভালোলাগা সত্ত্বেও শাকরুটিকে আমি আমার ডায়েটের সিংহভাগ করে তুলতে পারিনি। অপারগতার একটাই কারণ ভেবে বার করে উঠতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে আমার আর্থিক অবস্থার। শাকরুটির থেকে দামি খাবার যে আমি অ্যাফর্ড করতে পারি, সেই বাস্তবটা এর জন্য দায়ী।

কে কী খাবে, কতটা খাবের সঙ্গে খিদের সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ। সত্তর বছর আগে আমাদের বাড়িতে যেদিন ডিম হত মাথাপিছু আধখানা করে খাওয়া হত। তারপর মাথাপিছু একটা করে খাওয়ার যুগ শুরু হল। ডবল ডিমের মামলেট পাত্রপক্ষ টাইপের অতিথি ছাড়া কাউকে অফার করার কল্পনাও ঠাঁই পেত না। পাড়ায় দোলে গণভোজনের আয়োজন হত - খিচুড়ি ডিমভাজা মেনু -  খাওয়ার মাঝে লোডশেডিং হলে চিৎকার করে সাবধান করা হত, ডিম সামলে! সতর্কীকরণের মুখ্য উদ্দেশ্যটা হাসাহাসি হলেও, ডিম যে চুরি করে খাওয়ার মতো মহার্ঘ ব্যাপার সেই সত্যিটাও ফ্যালনা নয়। সেদিন শুনলাম কে একজন বলছেন, আজকাল তো কেউই দুটোর কম ডিম খাই না। টিভিতে রেসিপি দেখি, কোনওটাই মিনিমাম তিনটের কম ডিম না ফাটিয়ে শুরু হয় না। মিল প্ল্যানিংওয়ালারা একসঙ্গে চব্বিশটা ডিমের অমলেট ভেজে ডিপ ফ্রিজারে তুলে রাখছেন, এও দেখেছি। তারপর ধরা যাক জোয়ার বাজরা ইত্যাদি। একসময় ও সবের কথা উঠলে বাবুবিবিরা শাড়ি পাজামা হাঁটুর কাছে তুলে নাক টিপে অকুস্থল ত্যাগ করতেন। এখন যেই না তারা অরগ্যানিকের মুকুট পরে, প্লাস্টিকে অঙ্গ মুড়ে, সুপারমার্কেটের সিংহাসনে চড়েছে, হোয়াইট রাইসের থালায় লাথি মেরে সবাই পড়িমরি ছুটেছে  তাদের ঘরে তুলতে। 

পাতে ওঠার জন্য আগে জাতে ওঠা দরকার। শাকরুটি, যত ভালোই খেতে হোক না কেন, অসুবিধেজনক রকম সস্তা। স্বাস্থ্য ভালো রাখাই যদি উদ্দেশ্য হয়, ইমপোর্টেড কিনুয়া কিনে খাব, শাকরুটি খাব কেন মরতে?

উপ্পলের আশ্বাস সত্যি করে আর আমার আশংকা মিথ্যে করে ভালো হয়ে উঠলাম। সাঁ সাঁ করে ক্ষত শুকিয়ে গেল, তিনমাস পর দিল্লি ফিরে ম্যাক্রো প্রেজেন্টেশন দিলাম, ঠাসাঠাসি কনফারেন্স রুমে প্রফেসর বললেন 'গারবেজ'। আমি ভাবলাম, জীবন এখানেই শেষ।

হাঁটা শুরু করলাম। তখন আমি যে জায়গাটায় থাকতাম, হাঁটাহাঁটির পক্ষে ওর থেকে ভালো জায়গা পৃথিবীতে পাওয়া শক্ত। নির্জন, নিরাপদ, খানাখন্দহীন পিচরাস্তার দুপাশে জঙ্গল। সময় বুঝে জঙ্গনের ভেতর থেকে ময়ূরের কানের পোকা নড়ানো চিৎকার আর ডানা ঝাপ্টানি শোনা যায়। আমি বেরোতাম ভোরে। সাড়ে পাঁচটা লেটেস্ট। নিশাচরের দল সবে গিটার গুটিয়ে যে যার রুমে অবশেষে ঘুমোতে গেছে, ক্লাসে যাওয়ার ভিড় শুরু হয়নি।

গ্যাঞ্জাম কম, আমি আগাপাশতলা মর্নিং পার্সন, এগুলো ছাড়া ভোরে হাঁটতে বেরোনোর তিন নম্বর একটা কারণও ছিল। কোনও কাজ, বিশেষ করে যে সমস্ত কাজের "করতে হবে" ছাড়া আর কোনও ইনসেন্টিভ থাকে না, সেগুলো সকাল সকাল সেরে ফেলাই ভালো। মা শিখিয়েছিলেন, পরে নিজেও পরীক্ষা করে দেখেছি। কেন ভালো তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতাম না। কিছুদিন হল জেনেছি, কতটা বৈজ্ঞানিক সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও ব্যাখ্যাটা আমার মনে ধরেছে।

আমাদের ইচ্ছাশক্তির একটা নির্দিষ্ট, পূর্বনির্ধারিত দৈনিক স্টক আছে। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে স্টক কমে এবং দিনের শেষে তলানিতে ঠেকে। (দিনের সংজ্ঞা, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ লোকভেদে ভিন্ন হতে পারে। আমি এক মাস্টারমশাইকে চিনতাম যাঁর দিন শুরু হত বেলা তিনটেয়, শেষ হত ভোর ছ'টায়। থিওরি অনুযায়ী ওঁর ক্ষেত্রে বেলা তিনটেয় উইল পাওয়ার টইটম্বুর থাকবে আর ভোর পাঁচটায় টিমটিম) এই স্টকটা শুধু দিনের ক্ষেত্রেই যে থাকতে হবে তেমন নয়, সপ্তাহ, মাস, বছরেরও থাকতে পারে। সোমবারে মন খারাপ থাকলেও বৃহস্পতিবারের 'এই বেলা তুলে নাও' মরিয়াপনাটা যে থাকে না, আমার সন্দেহ এই কারণেই। জানুয়ারি মাসে রেজলিউশনের জন্য জান লড়াই, এপ্রিলে গিয়ে ঢিলে দিই আর অক্টোবরে অবশেষে হাল ছেড়ে যে পরের বছরের রেজলিউশন ভাঁজতে বসি, তাও এই ইচ্ছেশক্তির স্টক-থিওরির প্রমাণ বলেই ধারণা। আমার তো বিশ্বাস গোটা জীবনেরও ইচ্ছেশক্তির স্টক আছে। শক্ত কাজও ছোটবেলায় অনেক অনায়াসে করে ফেলা যায়। আমাকে যদি এখন উচ্চমাধ্যমিক আবার দিতে বলা হয়, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফেল করে যাব। বসার সময়টুকুও পাব না।

জুতো বেঁধে, কানে ইয়ারফোন গুঁজে, নোকিয়া তেত্রিশ দশ-এর এফ এম অন করে, রুমের চাবি আঙুলে গলিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বেরোতাম। ঢাল বেয়ে রিং রোডে পড়ে, কেভি পর্যন্ত সোজা গিয়ে বাঁয়ে বেঁকে বাঁ হাতে জড়ামড়ি কাণ্ডের গাছটা, যে গাছটায় সাদা বেগুনী কাগজফুল একই সঙ্গে ফোটে, পেরিয়ে আবার বাঁয়ে মোড়। পরদিন ডানে। পরশু বাঁয়ে। তরশু ডানে। যাতে পক্ষপাতিত্ব জন্মানোর সুযোগ না হয় আর বৈচিত্র্য বজায় থাকে। গোটা রিং রোড জুড়ে আরাবল্লী, লাইব্রেরি, পি এস আর বিবিধ ডিটুর ছিল, কিন্তু আমি নিতাম ইস্ট গেটের ডিটুরখানা। ফেরার পথে কোনওদিন ডিনের বাংলোর দরজায়, কোনওদিন দরজা ছেড়ে সামান্য এগিয়ে এসে কানে গান থেমে রিং বেজে উঠত। স্ক্রিনের দিকে তাকানোর দরকার হত না। ছ'টা বেজেছে। মা ফোন করেছেন।

শীতগ্রীষ্মনির্বিশেষে আমার হাঁটতে বেরোনোর খবর চাউর হওয়ার পর সপ্তাহে মিনিমাম তিন জন মেসে পাকড়াও করত। ইস কী ভালো। আমাকেও ডাকিস না রে, একা একা হয়ে ওঠে না, একসঙ্গে হাঁটব। যতদিন না বুঝেছিলাম যে ওগুলো স্রেফ বলার জন্য বলা, কেউ ভূতের কিল খায়নি যে সাড়ে পাঁচটায় ঘুম মাটি করে আমার সঙ্গে হাঁটবে, মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলেও বুক শুকিয়ে উঠত। কারণ হাঁটার প্রতি "কোনওমতে সারা"র মনোভাব তখন ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। টের পেয়েছি দিনের সম্ভবতঃ ওই একটামাত্র সময়, কানে গান গুঁজে হাঁটার সময়টা, আমি সম্পূর্ণ একা। সম্পূর্ণ নিজের সঙ্গে, নিজের মধ্যে নিমগ্ন।

এবং সম্পূর্ণ সুখী।

জীবনের তিনটে নন-নেগোশিয়েবল দাবির মধ্যে দিনের শুরুর ঘণ্টাকয়েক মনুষ্যসংগ বিবর্জিত হয়ে কাটানোর দাবিটার শুরু হয়েছিল ওই বাইশ বছর বয়েসে, ভোরে হাঁটা দিয়েই। যে ভয়ে আমি ছুটির দিনেও বেশি ঘুমোই না, পাছে অন্য লোকে আমার আগে উঠে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে যদি কলকাকলির মধ্যে পড়তে হয়, আমার কল্পনার রসাতলের সঙ্গে তার খুব একটা তফাৎ নেই। যতদিন অফিস যাওয়ার পালা ছিল ততদিন যে প্রায় দাঁত মেজেই অফিসে ছুটতাম, তার পেছনেও একই কারণ। হাট বসার আগে কয়েকঘণ্টার নীরবতা আর শান্তি।

হাঁটা শুরু করেছিলাম বিশুদ্ধ শারীরিক কারণে। হাঁটা ছাড়তে পারিনি বিশুদ্ধ মানসিক কারণে। অন্যান্য ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটতে দেখেছি। যোগব্যায়াম করে কত লোকের ক্যান্সার সেরে গেল, সিস্টেম থেকে সব টক্সিন হুড়হুড় করে বেরিয়ে গেল, আমার কেবল মন ভালো হওয়া ছাড়া আর কিছু হল না।

হাঁটার সময় যে আমি নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী লোকের মেডেল দিই, মাথায় গল্পের আইডিয়ার ঠেলাঠেলি লেগে যায়, জীবনের যত গেরো তুড়ি মেরে খুলে ফেলতে পারার কনফিডেন্স পাই -  সবটা আমার কল্পনা নাও হতে পারে। কেউ কেউ বলে হাঁটা (বা অন্যান্য এক্সারসাইজও) কর্টিসল বলে আমাদের শরীরের অন্যতম "স্ট্রেস" হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। আর আপনার কথা জানি না, আমার ক্ষেত্রে "স্ট্রেসড"টাই যেহেতু ডিফল্ট অবস্থান, হাঁটা এবং না-হাঁটার পার্থক্য আমার কাছে আকাশপাতাল।

শুরু করার পর থেকে কখনও দীর্ঘসময় না হেঁটে থাকিনি। রিষড়ায়, দিল্লিতে এবং আরও নানাবিধ শহরে হেঁটেছি। এবং শুধু হেঁটেইছি। দৌড়নোর চেষ্টা করিনি কখনও। একাধিকবার অভ্যেসের সুতো ছেড়ে গেছে যেমন ঠিক, প্রতিবারই যে তা ফের তুলে নিয়েছি সেটাও সত্যি।

গত কয়েকমাস ধরে যেমন। এবারের তফাৎটা হচ্ছে, হাঁটার জায়গা কঠোরভাবে ঘরের মধ্যে সীমিত। এতে অসুবিধের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সুবিধেও হয়েছে। ধরাচুড়ো পরার ব্যাপার নেই। স্রেফ এলানো অবস্থা থেকে উঠে বাঘের মতো খাঁচা জুড়ে পায়চারি শুরু করলেই হল। দরকার ছিল না, তবু নিজেকে চাঙ্গা রাখতে একটা গাজর ঝুলিয়েছি নাকের সামনে। দৈনিক দশহাজারি পদক্ষেপের গাজর। ঘরের ভেতর বেশি স্পিড তোলা যায় না, তাছাড়া কানের ভেতর ঝালা চলছে না বিস্তার, রূপম ইসলাম গান ধরেছেন নাকি সাহানা বাজপেয়ী সেই বুঝে স্পিডের তারতম্য ঘটে। মোটের ওপর দশহাজারের কোটা পূর্ণ করতে আমার লাগে দেড় ঘণ্টা থেকে প'নে দু'ঘণ্টা মতো।

আঁতকে উঠেছিলাম নিজেই। একেই সময়ের টানাটানি, তার মধ্যে দেড়-দেড়টি ঘণ্টা হেঁটে জলাঞ্জলি? সানডে সাসপেন্স শুনতে শুনতে তবু অফিসের কাজ করা যায়, হাঁটতে হাঁটতে সানডে সাসপেন্স শোনা ছাড়া আর কোনও কাজের কাজ করা যায় না। তারপর ভাবলাম দেড়ঘণ্টা মানে কী? তিনটে আধঘণ্টা। আর দিনে অন্ততঃ তিনবার আমি আধঘণ্টা করে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলি না, এ দাবি করলে ভগবান আমার সব লাইফ খেলা শুরু করার আগেই ফুরিয়ে দেবেন।

আমি অবশ্য তিনবার হাঁটি না। দু'বারে কোটা পূর্ণ করি। একবারেও সেরে দেওয়া যায়, তবে চেষ্টা করি না। এক কামড় চকোলেট রাতে খেয়ে উঠে খাব বলে রেখে দেওয়ার মতো সকালবেলা সাড়ে ছ'হাজার পা ফেলে বাকিটা বিকেলের জন্য তুলে রাখি।

দু'মাস হল ফের হাঁটছি। গুগল ফিট-এর ক্যালেন্ডারে দেখাচ্ছে গত দেড়মাসে একদিনও হাঁটা মিস তো হয়ইনি, এক দিনও দশহাজারের টার্গেট মিস হয়নি। বিশ্বজয়ের কনফিডেন্স পাচ্ছি। রাতে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছি। মায়ের স্বপ্ন পর্যন্ত দেখছি না।

তা বলে কি আর মা আসছেন না? ঠিক যেমন আঠেরো বছর আগে আসতেন, কাঁটায় কাঁটায় ছ'টায়, ইস্ট গেট থেকে ফেরার পথে, এখনও হাঁটতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই আসেন। এখন অবশ্য বাঁধা সময় নেই। তাছাড়া গত সোয়া বছরে টেকনোলজি অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে, ফোন, এস এম এস, কিছুই লাগে না। বুকের ভেতর ভুস করে ভেসে উঠলেই হল।


Comments

  1. বৈজয়ন্তীDecember 27, 2020 at 12:47 PM

    শুরু করার পাঁচ ছয়দিন পরের চার পাঁচটা দিন এড়ানো গেলেই চলবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একবারও করে উঠতে পারিনি।

    আপনার গল্পটা দারুণ। এরম একটা হাঁটার রাস্তা পাওয়া গেলেও হয়তো অভ্যাসটা করে ফেলতে পারতাম।

    আরেকবার চেষ্টা করে দেখবো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একেবারে মোক্ষম ধরেছেন, বৈজয়ন্তী। ওই শুরুর পাঁচ-ছ দিন পরের চার-পাঁচটা দিন। আমার কত সদিচ্ছের যে কবরখানা...

      রাস্তাটা ডেফিনিটলি অভ্যেসটা গড়তে সাহায্য করেছিল। তার পর আর কোনও রাস্তা/ট্রেডমিল ওর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনি। তবে যা পাওয়া যায় তাই নিয়ে চালিয়ে নিতে হয়...

      চেষ্টার জন্য অল দ্য বেস্ট রইল। দুহাজার একুশে হয়ে যাবে, দেখবেন...

      Delete
  2. One of your best...mon chuye gelo..shesh duto line

    ReplyDelete
  3. এটা আদ্যন্ত আপনার signature style এ লেখা। দশহাজারি target প্রতিদিন পূরণ হোক।

    ReplyDelete
  4. khub khub khub bhalo laglo.. hnatte thakun.. bhalo thakun.. boRo bhalo laglo lekha ta..

    jokhon office jetam, kokkhono jawar ashar pothe karor sathe jete chaitam na.. oi somoy ta kaane gaan gnuje chup kore thakar somoy.. kotha bolar kotha bhaba jay na..

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। সত্যি, দিনের মধ্যে অন্ততঃ আধঘণ্টা চুপ করে না থাকতে পারলে বিপদ। ওই সময়গুলো প্রাণ দিয়ে আগলাতে হয়।

      Delete
  5. 2020 eta diyeche - lomba lomba hnata (baire) , sathe apurbo sob pocast er nesha!
    Keep walking Kuntala!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাদের অবশ্য বাইরে বেরোনো বেশি বিপদ, কাকলি। ভিড় বেশি কি না। তবু বাইরে হোক, ঘরে হোক, হাঁটা ইজ হাঁটা।

      Delete
  6. Khub Bhalo laglo lekhata. Aar apnar theke udbuddho hour aaj sakal theke aamiyo haanta shuru korlam.. Dekhi login dhore rakhte pari. Bhalo thakben.
    Susmita.

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাহ বাহ, সুস্মিতা। নিশ্চয় পারবেন ধরে রাখতে। খুব করে হাঁটুন, দেখবেন কী মন ভালো লাগবে।

      Delete
  7. Tomar hantar golpo pore inspired hoye hente fellam ajke. Dekhi jodi ebar inspiration dhore rakha jay.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, দেখা যাক, চুপকথা।

      Delete
  8. Replies
    1. থ্যাংক ইউ, অন্বেষা।

      Delete
  9. আপনি ‌হেঁটে চলুন আর এগিয়ে চলুন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এটা দারুণ শুভেচ্ছা, নালক। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  10. দশ হাজার পা হাঁটা টা খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো.. আমি রোজ এত না হাঁটলেও মাঝে মাঝে চেক করি হাঁটার ক্ষমতা... �� মন ভরানো লেখা ... শাক রুটি আমি জানিনা কোনদিন খেতে হবে কিনা কারণ আমার শাক এর পছন্দ অদ্ভুত, আমার favourite ছোলা শাক আর খেসারি শাক.. বেশিরভাগ লোক খায় নি বা নাম শোনেনি .. যেগুলো ভাত দিয়ে খেলেই ভালো হয়..��

    ReplyDelete
    Replies
    1. ডক্টর উপ্পল শাকভাতেও আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না, ঊর্মি। নন-ফ্যান্সি খাবার হওয়া নিয়ে কথা। খেসারি খেয়েছি, তবে এতই কম যে কেমন খেতে মনে নেই। ছোলাশাক দেখেছি কিন্তু খাইনি।

      Delete
  11. সাবাশ কুন্তলা এত বছর ধরে নিয়মিত হাঁটা বজায় রাখার জন্য| বাড়ির মধ্যেই হেঁটে রোজ দশহাজার স্টেপসের কোটা পূর্ণ করা অসাধারণ কাজ! এই জন্যেই বেড়াতে গিয়ে তুমি এত হাঁটতে পারো | হাঁটা আমারো অবশ্য একাই পছন্দ, কানে কিছু ছাড়া|
    বহু বছর আগে তোমার এত বড় সার্জারি হয়েছিল শুনে খারাপ লাগছে| যদিও আরো কিছু খারাপ হবার আগে এত দুর্দান্ত বন্ধুরা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিল আর খুব হৃদয়বান ডাক্তার পেয়েছিলে সেসব ভাবলে নিশ্চই মন ভালো হয়ে যায়| ভালো থেকো আর সবাইকে হাঁটায় উদ্বুদ্ধ করো!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, হাঁটায় যদি উদ্বুদ্ধ করতে পারি সেটা একটা কাজের মতো কাজ হবে, অমিতা, বলুন? তবে আপনিও আমাকে কানে কিছু না গুঁজে হাঁটায় উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। কানে কিছু না গুঁজে হাঁটতে পারা আমার বহুদিনের স্বপ্ন, কিন্তু ভয় হয় পাছে নিজের চারপাশে যথেষ্ট "বর্ম" খাড়া না করতে পারি। তবে চেষ্টা করে দেখব।

      আমার বন্ধুদের বন্ধুভাগ্য যেমন খারাপ, আমার বন্ধুভাগ্য যে তেমন ভালো সে নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। এটা আমারও অদ্ভুত লাগে জানেন, আমি যাকে বলে একেবারে মাবাবা পরিবেষ্টিত লালুভুলু একসন্তান, কিন্তু আমার জীবনের একমাত্র মেডিক্যাল এমারজেন্সিটার সময় মাবাবা কেউই কাছে ছিলেন না। যারা ছিল তারা সে অভাবটা একবিন্দু বুঝতে দেয়নি।

      Delete
  12. হাঁটতে আমি খুব ভালোবাসি, আমি ইচ্ছে করে সিঁড়ি দিয়ে ছতলা উঠতাম যাতে লোকসঙ্গ বঞ্চিত কিছুসময় থাকা যায়, হেঁটে হেঁঁটে অফিস গেছি একবার ইচ্ছে করে। কিন্তু সাত মাস হলো আমার হাঁটা হয়না। কি জানি অভ্যেস্টাই চলে গেল কিনা। বড় ভালো লিখেছো, শেষটুকু বড় ভালো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাঁটাতে হাই ফাইভ, প্রদীপ্ত। ছাদও একা থাকার পক্ষে মচৎকার। চিন্তা কোর না, হাঁটা, সাঁতার আর সাইকেলের মতো, একবার ধরলে ছাড়ে না।

      Delete
  13. শেষটায় চোখে জল আটকায় কার সাধ্যি?

    নতুন বছর ভালো কাটুক। শীতের ছুটিতে কলকাতায় ছিলাম, ব্লগ পড়া বাকি ছিল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ। ছুটি ভালো কেটেছে আশা করি।

      Delete

Post a Comment