প্রাইড প্রসঙ্গে


গ্র্যান্টের অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়েছি কি না-র উত্তরে না-সূচক মাথা নাড়াতে তিনি তাকিয়ে রইলেন।

কৈফিয়ত চাননি, তবু দিলাম। আমি নার্ভাস তাই নীরবতা সর্বদা আমিই ভঙ্গ করি।

গত বছর রিজেক্ট করেছিল।

বারদুয়েক মুখ হাঁ বন্ধের ফলস স্টার্ট পেরিয়ে তিনি সমর্থ হলেন।

কুন্তলা, ইফ ইউ হ্যাভ প্রাইড দিস কেরিয়ার ইজ নট ফর ইউ।

শুধু দিস কেরিয়ারের ক্ষেত্রেই নয়, দ্যাট হবির ক্ষেত্রেও অনেকে এই নিদান দিয়েছ আগেও। প্রাইডই নাকি আমার উন্নতির পথের একমাত্র কাঁটা। যে কথাটা বুঝিয়ে পারি না, যেটাকে তারা আমার প্রাইড বলে ভুল করছে সেটা আসলে উদ্যোগহীনতা। রবার্ট ব্রুসের মাকড়সা একবারের চেষ্টায় না হলে একশোবার চেষ্টা করে জাল বোনে, দশরথ মাঝির প্রিয়জনের পথে পাহাড় এসে দাঁড়ালে তিনি পাহাড় খুঁড়ে রাস্তা বার করেন, আমাকে রিজেক্ট করলে আমি ও পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। আর এ পাশ ফিরি না।

লোকে ভাবে প্রাউড বুঝি।

প্রাউড হলেও অসুবিধে হত না। যারা রিপুর লিস্টি বানিয়েছিলেন তাঁরা নেহাত ভুলবশতঃ দর্পকে জায়গা দেননি এবং পরে সারাজীবন হাত কামড়েছিলেন তেমন তো মনে হয় না। খেয়াল করে দেখেছি, কোনও লোক কোনও একটা কাজে ভালো হলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই কাজটার প্রতি লোকটার একটা গর্ব, অহং থাকে। কাজটায় সে যে ভালো সেটা সে জানে এবং জানে বলেই ভালোত্বটা বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। ভালো রাঁধুনিকে আধাখ্যাঁচড়া, হাবিজাবি উপকরণ দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দিন, তিনি রান্না করে দিলেও এবং সে রান্না খেয়ে আপনি অন্তর থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানালেও তাঁর ম্রিয়মাণতা কাটবে না। কাজে যোগ দেওয়ার পর প্রথমবার মাংস রান্নার দিন ফ্রিজে টমেটো ছিল না সেটা তিন বছর পরেও গীতাদি আমাকে রেগুলার মনে করাতেন। যত সান্ত্বনা দিতাম, টমেটো ছাড়াই দুর্দান্ত হয়েছিল মাংস, তিনি তত সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বলতেন, তবেই ভাবো টমেটো থাকলে কত ভালো হত। অফিসেও দেখেছি, রিগ্রেশন রান করায় যার যত খ্যাতি, সে তত মন দিয়ে রিগ্রেশন রান করে। কারণ ওই কাজটার সঙ্গে সে তার 'আমি'কে এক করে দেখে এবং সেই 'আমি'র মুখ রাখতে সে প্রাণপণ খেটে যায়। অপেক্ষাকৃত খারাপ বা ততটা ভালো অ্যাপ্রাইজাল না পাওয়া কর্মীদের অনেকের ক্ষেত্রে একটা কমন ইস্যু দেখেছি, কাজের সঙ্গে তাঁদের কোনও 'প্রাইড' জুড়ে থাকে না। আমি যে আমার কাজটা নই, আর আমার কাজটা যে আমি নয়, এই জ্ঞান তাঁদের অনেকেরই টনটনে থাকে। কাজেই কাজ ভালো বা খারাপ হলে তাঁদের কিছু এসে যায় না।

এ রকম প্রাইড থাকার ক্ষতিকারক দিকটা স্বচক্ষে ঘটতে দেখেছি মায়ের ক্ষেত্রে। মায়ের প্রভূত প্রাইড ছিল। ছিল বলে মা ব্লাউজের হুক সেলাই থেকে অফিসের মিটিং, প্রতিটি কাজে নিজের একশো শতাংশ দিতেন এবং হাড়মাস কালি করতেন। কী ভাগ্যিস আমি মায়ের মতো নই। যখন চাকরিবাকরির বয়স হল, মা ইচ্ছে প্রকাশ করলেন যেন আমি একটা "নিরাপদ" চাকরিতে ঢুকি, যেমন ব্যাংক। এ প্রস্তাবে ঘাড় পাতার প্রশ্নই ওঠে না কারণ ততদিনে মায়ের সঙ্গে বিবিধ ব্যাংক ঘুরে দেখে ফেলেছি - রিষড়ার এস বি আইয়ের এঁদো ব্রাঞ্চ থেকে টি বোর্ডের উল্টো দিকে ইউকো ব্যাংকের হেড অফিস যেখানে মায়ের লকার ছিল। সর্বত্র সমান মাছের বাজার। দমবন্ধ,  গিজগিজ ভিড়। লিফটে, বারান্দায়, টেবিলের সামনে, কেবিনের ভেতর লোক আর লোক আর লোক আর লোক। ততদিনে একটা উপলব্ধি আমার ঘটেছে যে,  যে চাকরিতে অত লোকের সঙ্গে অত কথা বলতে হয় সে চাকরি আমার জন্য নয়। যে এক কোণে বসে ডেস্ক রিসার্চ করতে দেবে তারই কেনা হয়ে থাকব, মাইন্ড মেক আপ করে ফেলেছি।

(বোনাস কুইজঃ "আরে মশাই, সে-রকম বলতে গেলে তো অনেক কিছুই বলতে হয়। নর্থ ক্যালকাটায় ক্যারাম চ্যাম্পিয়ন ছিলুম। ফিফটি নাইনে—এ খবর জানতেন? এনডিওরেন্স সাইক্লিং-এ আমার কত কীর্তি আছে, সে সব আপনি জানেন? আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় মেডেল পেয়েছি—একবার নয়, থ্রি টাইমস্! দেবতার গ্রাস পুরো মুখস্থ ছিল। ফিল্মে অফার বিশ বছর আগেও পেয়েছি—তখন আমার মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল-ভাবতে পারেন? কিন্তু সে অফার নিইনি। তখন থেকেই মাইন্ড মেক আপ করেছি যে লেখক হব। শখের লেখক নয়, পেশাদারি লেখক। স্রেফ লিখে পয়সা করা যায়। কিনা দেখব। তার পরের ইতিহাস অবিশ্যি খুব সহজ। খগেন জ্যোতিষী বলেছিল–তোমার কলমে জাদু আছে, তুমি লেখো। তবে এতটা যে সাকসেস হবে, তা অবিশ্যি ভাবতে পারিনি।" কোন গল্প?)

মা বললেন, আহা, চাকরি পেলেই যে করতে হবে এমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। ভালো করে প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষায় বস, তারপর পেয়ে ছেড়ে দে।

ক'দিন আগে সংসদ মার্গের এস বি আই-তে গিয়ে চোখ টেরিয়ে গেল। একে কাস্টমার কম, বেশি হলেও যে রকম ঢাকের মতো অফিস, ভিড় বোধ হবে না। এসি এমন চড়া যে টেবিলের এপার ওপার কোনওপক্ষেরই মাথা গরম হবে না। মায়ের কথা শুনে ব্যাংকের পরীক্ষাগুলোতে না বসার জন্য একনিমেষ আফসোস হল, তারপর নিজেকে আশ্বাস দিলাম, বাই চান্স যদি ব্যাংকের চাকরি পেতামও ওই অফিসে পৌঁছনোর চান্স প্রায় শূন্যই থেকে যেত।

তাছাড়া প্রাইডের প্রমাণ ওই পাশ করাটুকুতে থাকত না, থাকত "ছেড়ে দেওয়া"টুকু তে, যেটা বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমার জায়গা নিয়ে নিল, আমি আর বসবই না। আমাকে আমার প্রাপ্য দিল না, আমি চাইবই না। একবারও না সেধে মাংসের লাস্ট পিসটা অম্লানবদনে খেয়ে নিল, আজ থেকে আর মাংসই খাব না - মায়ের মন চলত এই লজিকে। মুশকিল হচ্ছে পৃথিবীতে স্মার্ট লোক যত আছে, সংবেদনশীল লোক তার এক পার সেন্টও নেই। লোকে টেরই পাবে না যে উল্টোদিকের লোকটা খাচ্ছে না। কেন খাচ্ছে না তলিয়ে দেখা তো দূর অস্ত। যতক্ষণ না হাত চেপে ধরে কেউ অন্যের না খাওয়াটা পয়েন্ট আউট করবে। তখন তারা জিভ কেটে বলবে, এহেহে খেয়ালই ছিল না, তা একটু মুখ ফুটে বললেই পারতে। এরা কেউ খারাপ লোক না। এরা নর্ম্যাল লোক। যে রকম নর্ম্যাল লোকে পৃথিবীটা ভর্তি।

আমি যে মায়ের মতো প্রাউড নই সে জন্য আজকাল একটু একটু আফসোসই হয়। মায়ের মতো না হওয়ায় উপরুল্লিখিত বিপদগুলোতে যেমন অনেক কম পড়েছি, তেমন আবার এমনও জটিলতা একাধিকবার এসেছে, দূরে এসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, যে জটিলতাগুলোতে নিজের মাথাটা আরেকটু উঁচু রাখলেই বরং ভালো হত। 

তবু লোকে আমাকে প্রাউড বলে ভুল করে। লোকের দোষ নেই। প্রাইডের আরেকটা গোলমেলে দিক হচ্ছে ব্যাপারটাকে অনেক সময় ঝট করে চেনা যায় না। এটা অবশ্য অনেক আবেগঅনুভূতির ক্ষেত্রেই ঘটে। নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে ইনফিরিয়রিটিকে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সের মতো দেখতে লাগে, ঔদ্ধত্যের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকে হাতপা পেটের মধ্যে সেঁধোনো ভয়, মাঝগঙ্গায় টায়ারের সঙ্গে সাঁতার না-জানা লোকের গলাগলি দেখে মনে হয়, ওঃ কী প্রেম। আমাদের অনেকেরই মগজে প্রাইডের যে চেহারাটা আছে সেটা হয় শিরদাঁড়া টান করে সিঁড়ির মাথায় কমল মিত্র হয়ে পাইপ কামড়ে জুন মাসের দুপুরে সিল্কের গাউন পরে দুই হাত পেছনে জড়ো করে দাঁড়িয়ে থাকবে, নয় বুকের কাছে বিবেকানন্দ মুড়ে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে থাকবে। খোলা তলোয়ারের সামনেও নোয়াবে না।

ছবিটা ভুল। আমি এমন লোককে চিনি যে স্রেফ টান হয়ে দাঁড়ানোর পরিশ্রম এড়াতে সর্বক্ষণ কুঁজো হয়ে থাকে, কিন্তু তার মতো অনমনীয় শিরদাঁড়া খুঁজলে ভূভারতে দুটো মিলবে না।

শুধু দেখাশোনা নয়, কার্যকারণ দিয়েও প্রাইড চিনতে বেরোলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা। কেউ হয়তো প্রাইডের চোটে নিজের মতপ্রতিষ্ঠা করতে লড়ে যাচ্ছে, কেউ হয়তো সেই প্রাইডের চোটেই জেতা তর্কটা গোহারা হেরে সরে আসছে। কে সি পাল ভদ্রলোকের কথা মনে করে দেখুন। পিচবোর্ডে আলকাতরা দিয়ে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে পোস্টার লিখে যত্রতত্র ধুলোমাঠে বসে পড়ছেন, সে কী প্রাইডের প নেই বলে? নাকি প্রাইড তিষ্ঠোতে দিচ্ছে না বলে?

প্রাইড অতি প্যাঁচালো ব্যাপার। প্রথমবার যেবার জীবনে তার প্রমাণ পেয়েছিলাম তখন আমি টেনেটুনে তেইশ। বাকি সব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই আমার সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কম্পিউটার ল্যাব বলে একটা ঘর ছিল। টিউবের মরা আলো, এসি, তিন দেওয়াল জুড়ে পনেরোটা ডেস্কটপ যার পাঁচটা আর কোনওদিন চলবে না, পাঁচটা অচিরেই বন্ধ হবে, বাকি পাঁচটায় আপনি কোনওদিন বসার চান্স পাবেন না, কারণ আপনার আগে পঞ্চান্নজন লাইন দিয়ে আছে।

সে রকম একটা লাইনের অন্তে বসে ছিলাম। আমাদের একজন দাদা, খুব রাজাউজির মারছিলেন একটা সচল কম্পিউটারে বসে। দাদা মারাত্মক বুদ্ধিমান ছিলেন, শক্ত শক্ত অংকে তাঁর আশ্চর্যরকম মাথা খুলত। অংকের বুদ্ধি দাদার মগজে গজগজ করত, কিন্তু তাঁর পর যে লাইনে লোক আছে এব্ং সে সব লোক যে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চুটকি শোনার থেকে নিজের কাজ করে হোস্টেলে যেত পারলে বেশি খুশি হবে সেটা বোঝার বুদ্ধিটা বাড়ন্ত ছিল। এদিকে চরম বুদ্ধিমান লোকের ওদিকে বোকার হদ্দ হওয়ার অবিশ্বাস্য কম্বিনেশনটা বারংবার দেখেছি।

এমন সময় ঘরে আরেকজন ঢুকল। ঢুকে বুদ্ধিমান দাদার কাছে একটা সিগারেট চাইল। দাদা বললেন, নেই ।

মিথ্যে কথা বলার অসুবিধেটা হচ্ছে যিনি বলছেন তিনি অভিনয়ে বিকাশ রায় না হলে এবং যাঁদের বলছেন তারা দুগ্ধপোষ্য না হলে মিথ্যে বলে চেনা যায়। ওই পরিস্থিতিতে দুটি শর্তের একটিও পূর্ণ হচ্ছিল না। সকলেই বুঝল দাদার কাছে সিগারেট আছে কিন্তু তিনি দেবেন না বলেই দিচ্ছেন না। তাছাড়া দাদা জবাবটা দিয়েছিলেন দরকারের অতিরিক্ত ঝাঁজের সঙ্গে। 

কয়েকমুহূর্তের জন্য অস্বস্তিকর নীরবতা সৃষ্টি হল।

কয়েকদিন পর, ওই নীরবতার স্মৃতি মুছে যাওয়ার আগেই ফের ঘটল ঘটনাটা। আমাদের পরিচিতের বৃত্ত খুব বড় ছিল না, ল্যাবের ঘটনাটার সাক্ষী অনেকেই বিকেলবেলা ধাবায় বিকট রোদ্দুরে বসে উৎকট গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছিল। এমন সময় আগের দিনের অপমানের ভিকটিম এসে বলল, 'সিগারেট আছে নাকি গো, অমুকদা?'

দাদা আবার না বললেন। আগেরদিনের থেকে ঝাঁজ কম, কিন্তু একেবারে নিশ্চিহ্ন নয়। দাদার মিথ্যে এবারও প্রচ্ছন্ন রইল না।

তিন নম্বর পুনরাবৃত্তির লোকেশন মনে নেই কিন্তু দিবালোক যে প্রকাশ্য ছিল এবং চেনা লোক যে গিজগিজ করছিল (আগের দুটো ঘটনার বেশ কিছু কমন সাক্ষী সহকারে) সেটা মনে আছে।

কৌতূহল আর বাগ মানল না। ভিকটিমের সঙ্গে সম্পর্ক মোটের ওপর বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল তাই একদিন ফাঁকা পেয়ে প্রশ্নটা করে ফেললাম। কেন? আমার মতো মানঅপমান জ্ঞানহীন মানুষও তো এটা করবে না, তাহলে তার মতো নামকরা দেমাকি লোক এই কাণ্ডটা বারংবার কেন ঘটাচ্ছে?

সে হাসল। বলল, অপমানের শোধ নেওয়ার জন্য। এই যে সকলের সামনে মিথ্যাচারের হীনতার মধ্যে দিয়ে বারংবার যেতে হচ্ছে দাদাকে, ওইভাবেই ভিকটিমের প্রাইডে আঘাত করার মূল্য চোকাচ্ছেন তিনি।

নেক্সট পাঁচ মিনিট বান্টার গ্লাসে চুমুক দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এমন প্যাঁচালো প্রতিশোধ আমার মাথায় আসত না।

প্রাইডসংক্রান্ত শেষ গল্পটা একজন শাশুড়ির। ভদ্রমহিলার আরও মচৎকার মচৎকার সত্তা ছিল যেগুলো নিয়েও শয়ে শয়ে পোস্ট লেখা যায়, কিন্তু প্রাইডসংক্রান্ত পোস্টে তাঁর শাশুড়িসত্তাটাই কাজে আসবে বেশি।

তিনি তাঁর পুত্রবধূর সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এমন সম্পর্ক, যে দেখতে সেই চোখ কপালে তুলত। বলত, এ রকম আবার হয় নাকি? ঝগড়া নেই, ঝাঁটি নেই, ঠেস দেওয়াদেওয়ি নেই, ছড়া কাটাকাটি নেই, বিদ্বেষ নেই, ঘৃণা নেই, মাইক্রোঅ্যাগ্রেশন নেই - আছে শুধু শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আর ভালোচাওয়া?

মনে রাখতে হবে, আজকের যুগের কথা হচ্ছে না। আজকাল সংসারের ভোল পাল্টে গেছে, শাশুড়িবউয়ের সম্পর্কের মডেলও। অনেক বাড়িতেই এখন শাশুড়িবউকে দেখলে মামেয়ে ভুল হবে।

এ সেই জমানার কথা যখনকার শাশুড়িবউয়ের সম্পর্কের চেহারা মিলত এখনকার সিরিয়ালের শাশুড়িবউয়ের সম্পর্কের চেহারার সঙ্গে। একটি পুরুষকে মাঝখানে রেখে দুই নারীর দড়ি টানাটানি। প্রাউড শাশুড়ি সংসার এবং ছেলের লাগাম ছাড়বেন না, বউমাও নিয়েই ছাড়বেন।

সেই আমলে আমাদের শাশুড়িবউয়ের বাস্তব যেই দেখতে সেই হাঁ হয়ে যেত। ফিসফিস করত, তুকতাকটা কী?

তুকতাক হয়তো কিছুই নয়। হয়তো মনের মিল হয়েছিল। ছিপি বোতলে খাপ খেয়েছিল। দুটো ভালো লোক কাছাকাছি এসেছিল। এ রকম হয়তো আরও ঘটত এদিকসেদিক। বাজে ব্রেকিং নিউজের ঠেলায় যেমন ভালো খবর কানে পৌঁছয় না, তেমনি যা হয়ে থাকে-র দাপটে হয়তো যা হওয়া উচিত এবং নিয়মিত হয়েও থাকে-রা মাথা তোলার সুযোগ পায় না।

আমি নিশ্চিত বেশিরভাগটাই তেমনই হয়েছিল। কিন্তু সামান্য হলেও অন্য একটা কিছুও যে ঘটে থাকতে পারে তার আঁচ পেয়েছিলাম একটা ঘটনা শুনে।

অন্য এক শাশুড়িকে বউয়ের প্রতি অমর্যাদা প্রকাশ করতে দেখে বাড়ি ফিরে আমাদের গল্পের শাশুড়ি প্রিয়জনের কাছে অপার বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। মৃদুস্বরে বলেছিলেন, ছেলের বউয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে ছেলের কাছে মাথা হেঁট হয়ে যায় না?

আমাদের বিয়ের সময় তোলা নাকতলার ডাইনিং টেবিলে বসা দিদার ছবিটা, যেটা ওই ডাইনিং টেবিলেরই ওপরের দেওয়ালে ঝুলে আছে, দেখলে আপনি দিদার সম্পর্কে অনেক কিছু যেমন গেস করতে পারবেন না, কারণ ছবি দেখে আর কতটুকু বোঝা যায়, অনেক কিছু পারবেনও। হয়তো ভাববেন কী হাসিখুশি মহিলা, কী নিরীহ, চোখেমুখে কী ভালোমানুষি মাখামাখি। কিন্তু তাঁর অন্দরের প্রাইডটুকুর আঁচ? কেটে ফেললেও পাবেন না এ আমি হলফ করে বলতে পারি।

Comments

  1. Bonus quizer uttar -
    Dajeeling Jomjomat
    "Ki moshai amader addiner alap, ar e baparta bemalum chepe gechhen Bhushundir Mathe-te Nadu Mallik?..."

    ReplyDelete
    Replies
    1. একশোয় একশো। আপনি যে ধরতাইয়ের অংশটুকু তুলে দিলেন সেটা কুইজের প্রশ্নটাকে যাকে বলে কন্টেক্সটে ফেলল। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  2. khub khub bhalo laglo lekhata.. aami onek kaaj e bhalo kore kori na.. kintu tarpor dukkho pai ektu.. oboshyo dukkho bhulte somoy laage na.. aar ranna baje hole bejaay mejaj bigRoy aamaaro.. :)

    Naktala r dida r golpo daaaaarun laglo.. sotti ei kothata kyano je bhebe dekhini.. aami sasuri noi.. kintu kom jhagRa kori sudhumatro porishrom eRate.. kintu eto sundor jukti shune ki je bhalo laglo..

    aapnar aager post e comment publish korte parchilam e na.. onekgulo bhalo boi bole dewar jonne onek dhonyobad

    bhalo thakben

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার হাতের রান্না খাওয়ার সাধ রইল, ইন্দ্রাণী। আমি তো ক্যান্ডি ক্রাশ খেলা (আর অবান্তর লেখা) ছাড়া সব কাজই 'ধর ছাগলা পাতা খা' ভঙ্গিতে করি। পরিণতি যা হওয়ার হয়।

      ঝগড়াসংক্রান্ত পরিশ্রমের ক্ষেত্রে হায়েস্ট ফাইভ। স্রেফ পরিশ্রমের ভয়ে কত হকের ঝগড়া যে না করে লেজ গুটিয়ে ফিরে আসি। আমি আর অর্চিষ্মান দুজনেই যে কুঁড়ের হদ্দ, আমার বিশ্বাস সেটাই আমাদের শান্তিপূর্ণ সংসারের গোড়ার কথা।

      এই কমেন্ট পাবলিশের ব্যাপারটা ব্লগারের এত খারাপ, যে কী বলব। আপনি যদি কিছু ভালো বই পড়ে থাকেন, আমাকেও জানাবেন।

      Delete
  3. লাইনটা পড়া ইস্তক লাফালাফি করছি "আমি আগে উত্তর দেব, আমি আগে উত্তর দেব" করে, কিন্তু কমেন্টে এসে দেখি অলরেডি একজন বলে দিয়েছেন।
    সেম উপলব্ধি আমারও ঘটেছে, বছর দুয়েক আগেই; তাই আমিও মাইন্ড মেক আপ করে নিয়েছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, লাফালাফির বর্ণনাটা এফেক্টিভ, আধিরা। থ্যাংক ইউ এবং একশোয় একশো। একাবোকা কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হায়েস্ট ফাইভ। তোমার স্বপ্ন পূর্ণ হোক, প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলাম।

      Delete
  4. "যারা রিপুর লিস্টি বানিয়েছিলেন তাঁরা নেহাত ভুলবশতঃ দর্পকে জায়গা দেননি এবং পরে সারাজীবন হাত কামড়েছিলেন তেমন তো মনে হয় না।" - রিপুর মধ্যে মদ মানে অহংকার। তখনকার দিনে পান করার মদ নিয়ে কোন ভেদভাব ছিল না।

    আপনার দিদি শাশুড়ির গল্পটা দারুণ লাগলো।

    "বলল, অপমানের শোধ নেওয়ার জন্য।" - কোন অপমান, কি হয়েছিল সেটা না লেখায় আপনার লেখার কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বিশ্বাস করুন জানার জন্য মনটা হাঁকপাঁক করছে। এমন কি হতে পারে যার জন্য এত ঘুরিয়ে নাক ধরতে হল খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

    দারুণ লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, মদ মানে মদমত্ত সেন্সে ধরতে হবে? বুঝলাম।

      অপমান ওই যে সবার সামনে ঝাঁজসহকারে সিগারেট না থাকার ঘোষণা যখন বোঝাই যাচ্ছে যে আছে এবং জাস্ট দেওয়ার ইচ্ছে নেই।

      Delete
    2. একদম।

      ও বুঝলাম। মানে প্রথমবারটাই অপমান। এবার সমস্যা মিটেছে।

      Delete
  5. "ছেলের বউয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে ছেলের কাছে মাথা হেঁট হয়ে যায় না?" bah !

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও এই প্রতিক্রিয়াই হয়েছিল, অন্বেষা।

      Delete
  6. আমারও ওই উদ্যমটাই নেই। কেউ কেউ সেটা প্রাইড বলে ভুল করে বটে।
    চমৎকার লেখাটা যথারীতি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  7. Ei Pride kotha tai, student time e sunechhilam, supervisor er kachhe, serious noi , r ekhon mone hoi Ada-jol kheye laga bole bangla te. Khub mochotkar lekha. Bhalo theko. : Papiya

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এই ইস্যুতে এই উপদেশ দেওয়া গাইড \ সুপারভাইজারদের একচেটিয়া, পাপিয়া। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  8. hi five kuntaladi, tomar khetre shobdoti jodi pride hoy amay shunte hoy killer instinct nei..MIT jaoar matha chilo keno deshe kobor khurte gelo? eto bhalo lekhar hat tahole paper likhte uddyom nei keno..eto bhalo bolte pare tahole hotat kore job change o korar motoa sthir chitto keno shunte shunte abhyosto hoye gechi..somosyata holo oi je aamar aami tuku shob tuku dhele kora ei manushguli jdi anubhutiprobon hoy ( sidhe bashay sensitive) to chap ache..mane efficient hobe boss r gali , ajogyo loker pash katiye upore otha dekheo adbhut nirlipti niye kaj kore jete hobe..eguloi nodhoy ajker juge kamyo seta na pelei bistor kharap laga moneer modhye jome thake seta to tomar ekar..setake guchiye bolte na para ( to say NO is an art) tao ekta somosya...ei sob niyei AAmi tai lekhata khub monchuye gelo..
    ekta khotka che..amar ar tomar bere othar school ta jehetu ek bistor sodeho golmal ta okhanei..amder je bola hoyechilo pother pashe jwolonto prodeep hobe nissheshe pran je koribek dan type hote hobe..karur leje konodin agun lagabe na ityadi..oi tyager mohimatei lyaje gonbore hochchi nodhoy..
    ar seshe ..oi je kakima r bola..sob jeneo chup thaka sob pereo kichur pichone na chota etao ki ekta pride..hoyto tai amra serokom e....lekhata quote korbo bhobishyote emontoro proshner mukhomukhi hole....
    Paramita

    ReplyDelete
    Replies
    1. পারমিতা, সেনসিটিভ শব্দটা প্রথম যখন গালাগালি হিসেবে ব্যবহার হতে দেখেছিলাম খুবই অবাক হয়েছিলাম। এখন আর হই না। তবে সংবেদনশীলতা অসুবিধেজনক বা হাস্যকর হলেও থাকা ভালো বলেই এখনও বিশ্বাস করি, যেমন করি নিজের কাজ নিয়ে একটা ভদ্রস্থ মাত্রার অহং থাকাতেও।

      ভালো লাগল তোর কথা জেনে। দেখা হলে গল্প হবে আরও।

      Delete
  9. Keno comment korte parchina onek post e majhe majhe bujhte parchina..
    এরা কেউ খারাপ লোক না। এরা নর্ম্যাল লোক। যে রকম নর্ম্যাল লোকে পৃথিবীটা ভর্তি। ekdom thik.. jani kintu ei hisabe ami abnormal .. haha.. last golpo ta darun...

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ঊর্মি।

      Delete
  10. কুইজটা বড্ড সোজা। লেখাটা যথারীতি মচৎকার😀

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, সুদীপ।

      Delete

Post a Comment