হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ ২.০
বেশ কয়েকসপ্তাহ (নাকি মাস?) আগেই হবে, হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ নামে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। পোস্ট এই বলে শেষ করেছিলাম যে পোস্টটা যদিও দাঁড়ালো শেষমেশ রে-র রিভিউর, কিন্তু আমি গানটার কথা লিখব বলেই লিখতে বসেছিলাম। পরে কোনওদিন রাস্তা বদলে আবার ঠিক বিষয়ে ফিরে আসব কথা দিয়েছিলাম।
যথারীতি রাখিনি।
গানটা নিয়ে লিখব মানে ঠিক গানটা নিয়েও লিখব ভাবিনি। গানটার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু আত্মকেন্দ্রিক চর্বিতচর্বণের ফন্দিই ছিল। না হলে একটা গান সম্পর্কে কীই বা লেখার থাকতে পারে। একটা বইয়ের যেমন রিভিউ লেখা যায়, গানের সে রকম লেখা যায় না বোধহয়। কথা অর্থপূর্ণ, সুর লাগসই, গাইয়ের প্রস্তুতি নিখুঁত এবং পরিবেশনা স্বর্গীয়। হয়ে গেল।
আবার নাও হতে পারে। অনেকে এই জিনিসটাই অনেক খেলিয়ে লিখবেন। চেনা বইয়ের রিভিউ দেদার পড়ে থাকি যেগুলো পড়ে উঠে শিরোনাম চেক করতে যেতে হয়, যে বইটা ভাবছি রিভিউটা সেই বইয়েরই তো? অবিশ্বাসটা মতের অমিলজনিত হতে পারে। যেমন ধরুন কেউ যদি হ য ব র ল-র সমালোচনা লিখতে বসে কেন বইটা পাতে দেওয়ার অযোগ্য মর্মে যুক্তি সাজান, তাহলে সে সব যুক্তি যতই ক্ষুরধার এবং অকাট্য হোক না কেন আমার বিশ্বাস করতে মারাত্মক কষ্ট হবে যে ওই বইটার কথাই হচ্ছে, যার লাল মলাটে শাদা রঙের বেড়ালটা বসে আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাচফেচিয়ে হাসছে। বা পথের পাঁচালী কেন ওভাররেটেড কেউ গুছিয়ে লিখলে আমার প্রথম (দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম) প্রতিক্রিয়া হবে যে ওই নামে অন্য কোনও বই লিখেছেন কেউ, সমালোচক সেটার কথা বলছেন। আমার বুককেসের জরাজীর্ণ বইটা, যেটা অক্ষরজ্ঞানহীন কন্যার জন্য উপহার হিসেবে কিনে এনেছিলেন মা এবং বাড়িশুদ্ধু লোকের ঠাট্টার উত্তরে একটুও না দমে বলেছিলেন, "যখন পড়তে শিখবে পড়বে," যার খুলে আসা মলাটে আকাশ আর মাঠ আর মাঠের মধ্যে খালি গায়ে দাঁড়ানো বালক, যে বই ধার নিয়ে গিয়ে চেনা অভদ্রলোক প্রথম পাতায় নিজের নাম লিখে রেখেছিল, সম্পর্ক ভোগে যাওয়ার ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে সে বই উদ্ধার করে এনে সে নাম হোয়াইটনারে ঢেকে দিয়েছি কিন্তু এ জীবনের মতো ক্ষমা দিইনি, সেই বইটার কথা হচ্ছে না।
এইরকম সেন্টিমেন্টাল ফারাকের কথা বলছি না। আমি বলছি জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে যে তফাৎ হয় সেই রকম তফাতের কথা। ধরুন, ক’দিন আগেই যে দুটো ঐতিহাসিক উপন্যাসের রিভিউ লিখলাম, আমার জায়গায় যদি এমন কেউ লিখতেন যার ওই সমসাময়িক দেশকাল নিয়ে পড়াশোনা আছে, তিনি এইরকম করে লিখতেন থোড়াই। ইতিহাসচর্চার কথা ছেড়েই দিলাম, সাহিত্যচর্চাও যদি কেউ মন দিয়ে করে থাকেন, আমার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়ার ভোল মিলত না।
আমার যাবতীয় প্রতিক্রিয়াই "আমার" কেমন লাগল তার ওপর ভিত্তি করে। বইটির নিজস্ব উপস্থিতি বা সাহিত্যেসংস্কৃতিতে অবদানের প্রতি মনোযোগের অবকাশ নেই সেখানে। কারণ নিজের অনুভূতির সীমানার বাইরে বেরিয়ে দেখার অভ্যেস আমার নেই। সে চর্চার পরিশ্রম আমি করিনি কখনও।
বারংবার ঘটেছে এ রকম। নয়ের দশক আঁকড়ে লেখা বই পড়ে, চিত্রহার ও চন্দ্রবিন্দুর মিলটুকুতে উদ্বেলিত হয়ে হাই ফাইভ দিতে ছুটেছি, বাকিরা সে বইকে ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক পটপরিবর্তনের দলিল হিসেবে তুল্যমূল্য বিচার করেছেন। দৃষ্টির গভীরতা এবং চর্চার শান - রিভিউতে, আড্ডায়, জীবনে এদের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ছাপ পড়বেই। লুকোনো অসম্ভব।
আমি নিজে অবশ্য ভালো লাগল না মন্দ লাগল জাতীয় রিভিউকে গুরুত্ব দিই। বেড়াতে যাওয়া ঠিক করার আগে ব্লগটল্গ পড়ি। অনেক ব্লগে প্রচুর কাজের কথা লেখা থাকে। ইতিহাস, ভূগোল, সমসাময়িক রাজনীতিতে স্থানটির গুরুত্ব। কী ভাবে যেতে হবে, কখন ট্রেন ছাড়বে, সরকারি ওয়েবসাইটে যাই দাবি করা থাকুক না কেন জঙ্গলে ঢোকার পারমিট নিতে গেলে আসলে কোন অফিসের কোন টেবিলে হত্যে দিতে হবে - এ সবই অতি কাজের কথা। কিন্তু আমি জায়গাটায় যাব কি না সেটা এগুলোর কোনওটার ওপরেই নির্ভর করবে না। আমি স্ক্রোল করে করে খুঁজব সেই প্যারাগ্রাফটা যেখানে লেখক লিখছেন "তাঁর" জায়গাটা "কেমন লেগেছে"। যুক্তি নয়, তর্ক নয়, কস্ট বেনিফিট অ্যানালিসিস নয়, স্রেফ কেমন লেগেছে। পাহাড়ের মাথায় বরফের মুকুটের চকমকানি দেখার, সমুদ্রের লোনা হাওয়া চাখার, মাঝরাত্তিরে বাংলোর জানালা দিয়ে জঙ্গলের ছায়া মাখার অনুভূতি যদি কেউ কনভিন্সিংলি লিখতে পারেন, আমি জায়গাটায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব । পারমিট, টাইমটেবিল আসবে তার অনেক পর।
এটার একটা কারণ হতে পারে, আমি এমন জায়গাতেই যাই যেগুলোর ওর থেকে বেশি গুরুতর রিভিউ দরকার পড়ে না। চাঁদে গেলে কেমন ফিলিং হবে জেনে কেউ চাঁদে যাওয়ার জন্য কোমর বাঁধে না, তার আগে ফিজিক্স কেমিস্ট্রির তালিম লাগে। মিডসমার মার্ডারসের সিজনের পর সিজন বিঞ্জ ওয়াচ করতে গেলে বিশ্ব রহস্য সিরিজের হেজেমনিক পাওয়ার স্ট্রাকচারে তার অবস্থান না জানলেও দিব্যি চলে যায়।
আমার বিনোদনের সম্ভারে এই রকম তুচ্ছ (কড়াভাষায় বললে, খাজা) জিনিস ঠাসাঠাসি। এই সেদিন ইউটিউবে পরপর কয়েকটা আধুনিক বাংলা সিনেমার গান শোনার পর একটা এমন গানের সাজেশন এল যে আমার দিনটা আলো আলো হয়ে গেল। (লিংক) ***গানের লিংকে ক্লিক এবং ক্লিকপরবর্তী আমার রুচির লেভেলজনিত হতাশা এবং চোটের দায়িত্ব একান্তই আপনার, আমার নয়।*** এইবার, এই গানটার রিভিউ যদি আমাকে লিখতে বলা হয়, আমার পক্ষে কী লেখা সম্ভব বলে আপনার মনে হয়? কথা চরম জেন্ডারইনসেন্সিটিভ, তাললয় - ওয়েল, তাললয় নিয়ে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটা অ্যাস্টিউট অবজার্ভেশন আমি ভুলতে পারি না, সেটা হচ্ছে যে আধুনিক ভারতীয় গান গাইতে বাজাতে গেলে স্রেফ কাহারবা তাল জানলেই যথেষ্ট। অর্থাৎ যাবতীয় গান ধাগেনাকে নাকেধিনা-য় আঁটিয়ে দেওয়া যাবে, তার বেশি জটিলতা লাগবে না। এ গানও কাহারবাআশ্রিত। আলোর ঝকমকানির চোটে নাচটাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না যে নাচিয়েরা ভালো নাচছেন না খারাপ নাচছেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত দেব। তবে অঙ্কুশ মনে হয় ভালোই নাচবেন। সংগীত বাংলায় নাচগানের ফাঁকে ফাঁকে তারকাদের ইন্টারভিউও দেখানো হয়, সে রকম কোনও একটাতে নুসরতকে সার্টিফিকেট দিতে শুনেছিলাম, "অঙ্কুশ পাগলা ডান্সার।" তাছাড়া, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নায়ক খারাপ নাচলে কমপেনসেট করতে ক্যামেরাম্যানকে বেশি নাচতে হয়, যাতে চনমনে ভাব বজায় থাকে। অঙ্কুশের নাচ চলাকালীন ক্যামেরা মোটামুটি স্টেডি থাকে কাজেই ধরে নেওয়া যায় অঙ্কুশ খারাপ নাচছেন না।
গানটার রিভিউ যদি তাও লিখতে বলে কেউ, বা প্রতিক্রিয়া জানতে চায়, আমি কী দেব বলে আপনার ধারণা?
অবান্তরের পুরোন বন্ধুরা ঠিকই ধরেছেন, আমি এককথায় লিখে দেব, একঘর।
কারণ গানটা আমাকে একটা সময়ের কথা মনে করায়। শুধু আমার নয়, আমাদের।
অর্চিষ্মানেরও কি ভালো লাগে গানটা? জানি না। নাও লাগতে পারে কারণ গানটার সঙ্গে অর্চিষ্মানের একটা মহৎ কম্প্রোমাইজ জড়িয়ে আছে। এক ছাদের তলায় বসবাস করতে হলে কম্প্রোমাইজ করতে হয়। সবাই জানে। সবাই করে। কম বা বেশি। কেউ মনে রাখে, কেউ ভুলতে দেয় না।
অর্চিষ্মান, অনেক করেছে কম্প্রোমাইজ। আমি সে তুলনায় অনেক কম। আমার নিজের প্রতি প্রেমের বাড়াবাড়িটা কম্প্রোমাইজের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সন্তানের স্বার্থপরতা। আমাকে ঘিরে ঘুরবে সংসার। আমি চিঁড়ের পোলাওয়ে মিষ্টি অ্যালাউ করিনি, খবরের চ্যানেল চলতে দিইনি বাড়িতে। নাকি আমার তলতলে হৃদয়ে চাপ পড়বে। নিয়মিত কার্ডিও করে হৃদয় শক্তপোক্ত করার থেকে অর্চিষ্মানের খবর শোনায় কাঁচি চালিয়েছি। চালিয়েই নিরস্ত হইনি, আমার পছন্দের জিনিস দেখতে বাধ্য করেছি। নাপতোল, গোপাল ভাঁড়, সংগীত বাংলা।
নাপতোল যেমন সন্ধেবেলায় চলত, সানডে সাসপেন্স যেমন রাতে চলে, সংগীত বাংলা চলত সকালবেলা। অফিসের জন্য তৈরি হতে হতে। গান শুনতে শুনতে রেডি হওয়ার ব্যাপারটা কোথা থেকে এল তাও জানি। অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্কের যাবতীয় বেচালের উৎসস্থল যা বলে মনোবিদরা দাবি করেন, সেই শৈশব থেকে। এই যে নিজেকে বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রবিন্দু বলে গণ্য করছ, এর উৎস শৈশব। এই যে মাৎসর্যে জ্বলেপুড়ে মরছ, কারও ভালো সহ্য করতে পারছ না, এও শৈশব। এই যে জীবনটাকে স্রেফ রেস বলে চিনছ আর সে রেসে গোহারা হারার গ্লানিতে ভাজাভাজা হচ্ছ, এও শৈশব।
এই বাক্যগুলো লেখার সময় একটা সিনেমার সংলাপগুচ্ছ মাথায় ঘুরছিল। আমার মাথার ভেতর ঢুকে তাদের যদি চিনে নিতে পারেন, আপনার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেব।
কলকাতা ক-তে সাড়ে আটটা থেকে ন’টা ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক হত, ন’টা টু ন'টা পনেরো গানে গানে - কোনও একটি বাংলা সিনেমার তিনটে গান, তিন নম্বর গানের পর খবর, পঁচিশে জেলা পরিক্রমা গোছের কিছু একটা। সাড়ে ন’টায় কী শুরু হত ভুলে গেছি, খালি মনে আছে সেটা শুনতে পাওয়া মানে কেলেংকারি। সবার লেট হয়ে গেছে।
সংগীত বাংলায় বাজত খালি এস ভি এফ-এর ছবির গান। দেদার রিপিট হত। তাতে অসুবিধে নেই। পুনরাবৃত্তি অ্যাকচুয়ালি হেল্প করে। মনোযোগ দিতে হয় না। গানে গানে-তেও একই গান বাজত। সত্যি বলছি, রোজ যদি একই খারাপ খবর লুপে চলত তাহলে আমি খবর চলতে দিতে আপত্তি করতাম না, কারণ সয়ে আসত, কিন্তু রোজ নতুন নতুন ধর্ষণ, নতুন নতুন কুপিয়ে খুন, নতুন নতুন উচ্ছেদ - হ্যান্ডেল করা শক্ত। কানের কাছে গুঞ্জনের মতো করে চালিয়ে রাখা যায় না, নতুন করে শিহরিত, আতংকিত হতে হয়। সপ্তাহে সপ্তাহে মিরচি বাংলার ইউটিউবে সানডে সাসপেন্সের নতুন নতুন এপিসোড আপলোড হয়, রোজ ঘুমোতে যাওয়ার সময় আমরা চালাই সেই গ্যাংটকে গণ্ডগোল নয়তো হত্যাপুরী। গল্পের গুণগত মান তার একটা কারণ হলেও গল্পগুলো যে আমাদের মুখস্থ সেটাও একটা ব্যাপার। গল্পে মনোযোগ দিতে হয় না। ঘুমে কনসেন্ট্রেট করা যায়।
পুনরাবৃত্তিতে বিরক্ত হয়ে অর্চিষ্মান মাঝে মাঝে এদিকওদিকের চ্যানেলে যেত, সেগুলো এস ভি এফ এর রাইভ্যাল চ্যানেল, এস ভি এফ ছাড়া অন্য সিনেমার গান চালানোর জন্য বানানো হয়েছে। বিপদ হচ্ছে তাদের বাজেট কম; সংগীত বাংলার গান শুনলে ফ্রিতে পাটায়া নিউজিল্যান্ড দেখে ফেলা যায়, আর এ সব চ্যানেলে বড়জোর আরাকু ভ্যালি। কেউ কেউ তো নলবন ছেড়েও বেরোতে পারেনি। তাছাড়া গানগুলো আমাদের টিভিটাও মনে হয় পছন্দ করত না। এস ভি এফ এর গানগুলো এইচ ডি-তে চলত, এদিকে অন্য চ্যানেল এলেই ম্যাড়ম্যাড়ে স্ক্রিন নিয়ে ব্যাজার মুখ করত।
এই সব গানগুলো আমাকে জীবনের একটা দামি শিক্ষা দিয়েছে। প্রিয় হতে হলে সবসময় পছন্দসই হতে হয় না। সেই যেবার পুজোয় অঞ্জন এলেন নবপল্লী/পকেট ফর্টির প্যান্ডেলে গান শোনাতে, এই সত্যিটা প্রথম টের পেয়েছিলাম। দেড় ঘণ্টা আগে গিয়েও আধখানা চেয়ার খালি পেলাম না, ত্রিপলে বসে গান শুনলাম, পরদিন অফিস থাকা সত্ত্বেও, এই যাচ্ছি এই যাচ্ছি করে রাত দেড়টা অবধি প্যান্ডেলের প্রান্তে ঝুলে রইলাম - সেই রাতে উপলব্ধি করেছিলাম, পুনরাবৃত্তির কী মহিমা। যে গানগুলো শুনে নাক কোঁচকাতাম, আবাআআআর দার্জিলিং?? বলে চোখ ঘোরাতাম, সেগুলোর প্রতিটি আমার ঠোঁটস্থ। কানের কাছে বেজে বেজে গানগুলো আমার অভ্যেসের অংশ হয়ে গেছে, আর অভ্যেস হয়ে গেলে অনেক কিছুই ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগে না, নেই হয়ে গেলে ফাঁকা লাগে। মনে হয় কী নেই, কেন নেই। না থাকলে বাঁচব তো?
এই পোস্টটা অভ্যেস নিয়ে হল, কম্প্রোমাইজ নিয়ে হল, রিভিউ নিয়ে হল, কিন্তু হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ (লিংক) নিয়ে আবারও হল না। না, পরে কোনওদিন লিখব সে আশ্বাস দিচ্ছি না। বেচারার কপালে একটা আস্ত পোস্টের গরিমা নেই, বোঝা যাচ্ছে। অপ্রাসঙ্গিক ব্লগে অবান্তর পোস্টের গরিমার জন্য ও গান হেদিয়ে মরছে না, সেও জানি। এ পোস্টের প্রসঙ্গের সঙ্গে একটা দূরদূরান্তের ছোঁয়া অবশ্য আছে গানটার। এই যে অভ্যেস আর পুনরাবৃত্তির কথা হচ্ছিল, হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ একসময় খুব পুনরাবৃত্ত হতে আমাদের বাড়িতে। শনিরবির সকাল দুপুর গোটা বাড়ি মুখরিত হয়ে থাকত গানে। আমির খান থেকে কিশোর কুমার থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গুলাম আলিও তখনই শুনি। ওঁর বেস্ট গান আমার লাগত, 'চুপকে চুপকে রাত দিন, আসুঁ বহানা ইয়াদ হ্যায়' (লিংক)। হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ-র ফ্যান ছিলেন বাবা, শুরু হলেই 'আহা', 'কেয়া বাত'-এ ফেটে পড়তেন। আমার অত পোষাত না, কারণ উর্দুর আধিক্য, অর্ধেক বুঝতে পারতাম না। সে তুলনায় চুপকে চুপকে অনেক অ্যাকসেসেবল। বাবা উচ্ছ্বাসে মাথা নাড়তেন, মাকে বলতেন, শুনলে, শুনলে এই জায়গাটা! আর আমি চুপকে চুপকে-র অপেক্ষায় চুপ করে বসে থাকতাম।
গানটা এখন যখন শুনি ওই অপেক্ষাটা মনে পড়ে না। এখন এই গানটার জন্যও ভেতরে একটা অপেক্ষা তৈরি হয়েছে। কারণ গানটা আমার অতীতের অংশ হয়ে গেছে। আমার অভ্যেসের, আরামের, আর হয়তো অস্তিত্বেরও।
Bohudin pore apnar blog-e comment korchi, jodio shooob niyom kore pori. Majher besh kichu post-e korbo korbo koreo ar comment kora hoyni, bishesh kore Kabir Suman-er gaan niye apni je post gulo likhechilen :(
ReplyDeleteEi sur-taal niye post-ta te ektu beshuro gaichi, asha kori nijo gune khoma kore deben. :)
Ghulam Ali, Chandrabindoo, antotopokhhe Anjan Dutta-r sathe same post-e "Bholey Baba" ke apnar priyo gaan bollen, kenooo ;( ;(
Kintu eta likhte bhule gechilam, post ta dibbi hoyeche, ar bishesh kore jekhane apni Ho Jo Bo Ro Lo ar Pather Panchali-r smriti niye likhechen, seta durdanto!!
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, শমীক। না না বেসুরো গাওয়ার কিছু নেই। আমি সেইটাই পয়েন্ট আউট করার চেষ্টায় ছিলাম। যে আর কারও না হলেও, আমার অন্তত খুব খাপছাড়া জিনিসপত্র একই সঙ্গে ভালো লাগে। অর্থাৎ আমার রুচির কোনও আগামাথা নেই। এ রকম কেন আমি জানি না, বা এ রকম হওয়া ভালো তাও বলছি না, কিন্তু এটা বদলানো এই বয়সে সম্ভব না প্রব্যাব্লি।
Deleteআপনার সঙ্গে এতদিন পর কথা হয়ে ভালো লাগল। ভালো থাকবেন।
Tomaar matha-r bhetore dhuke thik chinte parchhi na....tobe oi ekta word (শৈশব) repeat hoya theke Nayok er dialogue er kotha mone porlo...oi director er haathe putul ityadi..
ReplyDeleteGuess ta na milleo Satyajit ray-er cinema ki?
কিছু কিছু ছাত্র যদি পরীক্ষায় ফেল করে তার মানে দাঁড়ায় আসলে ছাত্র না, পরীক্ষক ফেল। এখানেও তাই ঘটেছে, অর্পণ। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা তো বটেই। আর কারও কিছু আমার মুখস্থ নেই। অন্য ফর্মে প্রশ্নটা করছি, দেখো তো।
Deleteএই যে ____ নাচাচ্ছি, এও ____; এই যে _____ করছি, এও _____ এই যে ____ চিবোচ্ছি, এও ____।
এইবার নির্ঘাত পারবে। এইটা না পারলে ছাত্রই ফেল। 😉
Aah....Felunath thaakte Fail korbo na...
DeleteTobe hya...Satyajit Ray ta guess kora emon kichhu shokto na..jaader priyo oi lal molat deya boita, tader mathay usually same loker cinemar dialogue ghore..
হাহা, ট্রু।
Deleteআপনি আর সংগীত বাংলা শুনে প্রথমে রাবড়িতে কাঁচালঙ্কা মনে হলেও আমিও এখন গুলাম আলী আর তারপরেই হেভি মেটাল শুনি, মিষ্টি কোনো তরকারিতে পছন্দ না করলেও দোকানের মিষ্টি সিঙ্গারা খুবই আকর্ষণ করে যাকে বলে চলমান বৈপরীত্য।
ReplyDeleteএই দেখুন, রাবড়ি আমার প্রাণ, আর কাঁচালংকা ছাড়া জীবন বাঁচার যোগ্য বলেও মনে করি না। বৈপরীত্য তো ভালো ব্যাপার। না হলে ভাবুন তো একটা লোকের দিকে তাকিয়ে যদি তার পুরোটা গেস করে ফেলতে পারেন, কী ভয়ানক।
Deleteমিষ্টি শিঙাড়া মানে কি ক্ষীরের শিঙাড়া বলছেন? লখনৌয়ে খেয়েছিলাম, ভালো লেগেছিল। ভেবে দেখলাম, আমাদের চেনা মিষ্টির দোকান থেকে ওই জিনিসটা আমি কোনওদিন কিনে খাইনি। একটা কারণ হতে পারে, খুব বেশি দোকানে পাওয়া যায় না, কিন্তু তার থেকে বড় কারণটা হচ্ছে, ওই সব দোকানে নোনতা শিঙাড়াও পাওয়া যায়। আমি শেষমেশ কাঁচাগোল্লা আর নোনতা শিঙাড়ায় সেটল করি।
আপনি হেভি মেটাল শোনেন? এইটা অভ্যেস করলেন কী করে? প্লিজ বলবেন না প্রথম শুনেই ভালো লেগেছিল। মানে বলতেই পারেন, কিন্তু ওই আরকি।
ক্ষীরের শিঙারার কথাই বলছি, যদিও বড়রা দাবি করতেন যে এগুলো যাবতীয় অবিক্রীত পচা মিষ্টি দিয়ে তৈরি হয় তাতে এর আকর্ষণ দ্বিগুণ হয়ে যেত।
Deleteআর হেভি মেটাল প্রসঙ্গে কি যে বলি? আসলে ইংরেজি গান প্রথম শোনা শুরু করেছিলাম জন ডেনভার দিয়ে তারপর আর কাউকেই ভালো লাগে না, এমনকি বব ডিলানকেও অতটা নয়, তখন খুঁজতে খুঁজতে আর বিভিন্ন সিনেমার ব্যাকগ্ৰাউণ্ড মিউজিকের উৎস সন্ধান করতে করতে হেভি মেটাল শুনতে শুরু করি। তবে হ্যাঁ হোটেল ক্যালিফোর্নিয়াও ভালো লাগে, হয়তো বা দুটোর মধ্যেই মিস্টিক ব্যাপার জড়িয়ে আছে বলে।
বুঝলাম। বিস্তারে বলার জন্য থ্যাংক ইউ। বড়দের দাবির কথা আর বলবেন না, ফুচকার জলের উৎস নিয়ে কত দাবি যে করেছে, সে সব মনে বা মেনে নিলে আমার জীবনের ৭০ শতাংশ আনন্দ নেই হয়ে যেত।
Deletehungama kyun hai barpa - aamaaro khub favourite gaan.. aar ekta favorite - humko kiske gham ne maara, yeh kahani phir sahi.. ei dutoi bhai bajato bole aamaar pochondo hoye geche.. aamaar aabaar chupke chupke oto bhalo lage.. maane bhaloi laage.. kintu aami gaanta shunechi nikaah er cassette theke.. somehow aamaar onyo gaan gulo beshi bhalo laage.. mostly because aamaar school er ek bondhu fazaa bhi jawan jawan khuuuub bhalo gaito..
ReplyDeletelekhata daarun hoyeche.. as usual :)
bhalo thakben khub.. kothao berate jacchen naki?
Indrani
নাহ, বেড়াতে আর এ জীবনে যাওয়া হবে বোধ হচ্ছে না। নানা বাধাবিপত্তি। নিকাহ্র গানগুলো এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ, তাই না? আপনার বন্ধুর গাওয়া গানটা আমারও ভীষণ প্রিয়, কিন্তু ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়ান, শুনি আরেকবার।
Deleteচুপকে চুপকে হয়তো এ সব গানের থেকে খারাপই, কিন্তু ছোটবেলা ফ্যাক্টরটাকে ধরতে হবে আমার ভালোলাগার গুনতিতে। আপনিও ভালো থাকবেন, ইন্দ্রাণী।