চেনা বাড়ি চেনা পাড়া
আমরাও হয়েছি। রবির সকাল, শনির বিকেল, বৃহস্পতির রাত। যেদিন বসের বকা, যেদিন ফ্রিজে পেঁপে, যেদিন মেলা গ্রাউন্ডের অমলতাসে প্রথম কুঁড়ি। বটল গ্রিন মেনু নাড়াচাড়ার ভঙ্গি সেরে অর্চিষ্মানের মাইসোর মসালা দোসা, আমার প্লেন দোসা, অন্তে দুজনের ফিল্টার কফি অর্ডার করেছি। অর্ডার নিয়ে যেই না পেছন ঘুরেছেন সাদা ফতুয়া, সাদা ধুতি, সাদা উড়নি কাঁধে ভদ্রলোক, পিছু ডেকেছে অর্চিষ্মান। সরি সরি ভাইসাব, এক মাইসোর পাক ভি লানা প্লিজ, কফি কে সাথ।
আর আমি রেডি হয়েছি। সেই ঘটনার প্রত্যাশায়, যা এগারো বছর ধরে ঘটে চলেছে। মাইসোর পাক আসবে আর অর্চিষ্মান, ট্রাই করে দেখো, ভালো না লাগলে খেতে হবে না, বলে অনুমতির অপেক্ষা না করে মাইসোর পাকের দুইয়ের পাঁচ ভেঙে, হাতে গুঁজে দেবে।
মা যেমন দিতেন ঊনচল্লিশ বছর ধরে। প্লেটে করে পাকা পেঁপে নিয়ে এসে 'একপিস, আচ্ছা আধপিসই না হয় মুখে দিয়ে দেখ, ভালো না লাগলে খেতে হবে না' আশ্বাস সহকারে।
প্রথম প্রথম প্রতিবাদ করতাম, তারপর মাইসোর পাক গিলে নিয়ে, 'করলাম টেস্ট এবং আগের বারের মতোই ঘি জবজবে আর মিষ্টি কুটকুটে লাগল'-র প্যাসিভ অ্যাগ্রেশন দেখাতাম। এখন উদাস মুখে খেয়ে নিই।
কালই টুইটারে একটা থ্রেড রিডিং পড়ে শোনাল অর্চিষ্মান। একদল বাচ্চার সঙ্গে এক প্রাপ্তবয়স্কর কথোপকথন। ভীষণ নাকি মজার (দাবিটা সত্যি)। দলের একটি বাচ্চাকে সেই প্রাপ্তবয়স্ক জিজ্ঞাসা করেছেন, লেন্টে সে এ বছর কী ত্যাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাত বছর বয়স্ক বাচ্চাটি জানিয়েছে, 'ট্রাইং।'
মাইসোর পাক আর পাকা পেঁপের প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধের চেষ্টা ত্যাগ দিয়েছি। মরার আগে, যত বেশি আগে সম্ভব, জীবনের বাকি হাঁকপাকগুলোও ত্যাগ দিতে পারব, এ প্রার্থনা একান্ত।
নৈবেদ্যম-এ আমরা এতবার গেছি যে যাওয়ার পথের ক্রসিংগুলো চোখ বুজে পেরোতে পারি, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সিঁড়ি বেয়ে বেসমেন্টে নামতে পারি, নেমে পছন্দের টেবিলটিতে বসে পড়তে পারি। অর্চিষ্মান দেওয়ালে ঠেসান দেওয়া সোফায়, আমি হাওয়ায় হেলান দেওয়া চেয়ারে।
কনফিডেন্স গোঁত্তা খেল বেসমেন্টে নামতে নামতেই। চেয়ারসোফা সব যেমন কে তেমন, কিন্তু ঘর অন্ধকার। আত্মপ্রসাদে ছিলাম আমরা নৈবেদ্যমকে এড়িয়ে যাচ্ছি, আসলে সে-ই মুভ অন করে গেছে। দোতলায়।
নতুন করে দোকানের ভূগোল চিনতে হল। টেবিল বাছতে হল। সব দোকানেই আমাদের পছন্দের টেবিল আছে। মা তারা-য় টিভির ভিউওয়ালা টেবিল, টিভিহীন ফ্লেমিং ওয়ক-এ মানুষের ভিউওয়ালা টেবিল, খান মার্কেটের বিগ চিল-এর দোতলায় ওয়ান্ডার ওম্যান-এর পোস্টারঘেঁষা টেবিল। নৈবেদ্যম-এর বেসমেন্টের উত্তরপশ্চিম কোণের টেবিলটা আমাদের ছিল। ও টেবিল না পেলে খাওয়া অর্ধেক মাটি। পেলে পাশের টেবিলের শিশুরা আগ্রহ প্রকাশ করত। একদিন দুই যমজ বোন এসে আমাদের প্লেটের পোপ্পাডাম অধিকার করেছিল। বাচ্চাদের বাবামা আতংকিত এবং আমরা আপ্লুত হয়েছিলাম। বাচ্চাদুটি কিছুই হয়নি। নির্বিকার মুখে পাঁপড় খেয়ে, তার থেকেও বেশি টেবিলে ছড়িয়ে, ফেরত চলে গিয়েছিল।
দোতলায় নতুন টেবিলে বসে, মেনু উল্টেপাল্টে, 'একটা মাইসোর মসালা' বলে নিজের দিক থেকে তর্জনী আমার দিকে ঘুরিয়ে 'আর একটা প্লেন দোসা' বলতে যাবে অর্চিষ্মান, থামালাম। দোকানের মানচিত্র বদলের চমকটা আমার মধ্যে অ্যাডভেঞ্চারের বীজ পুঁতেছিল। বললাম, আজ আমি দোসা খাব না। আজ আমি মালাবার পরোটা আর নিরামিষ কোর্মা খাব। অর্চিষ্মান ভুরু কোঁচকাল। এ সব অকারণ নিরীক্ষার কোনও দরকার আছে? শেষে তো আফসোস করবে।
(করিনি। ওর উইশফুল থিংকিং-কে কাঁচকলা দেখিয়ে তরিজুত করে পরোটাকোর্মা খেয়েছি।)
চেনা দোকানের অচেনা হয়ে যাওয়াটা আমাদের দুজনের একটা কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর দিকে মনোযোগী করল। পরিচয়ের আরাম। অভ্যাসের আশ্বাস। গত কয়েকদিন, অনেকটা বিরতি পেরিয়ে আমরা আবার সানডে সাসপেন্স শুনতে শুনতে ঘুমোচ্ছি, পাশাপাশি শুয়ে হইচই-য়ে টিকটিকি দেখছি, বিকেলবেলা দু'নম্বরের বেঞ্চে বসে লেবু চা আর আলুর চপ সাঁটাচ্ছি। এবং দুজনের চরিত্রের সব থেকে বড় মিল ঝালিয়ে নিচ্ছি। অনেক মহার্ঘ পাটভাঙা বিলাস দুজনেই পায়ে ঠেলতে পারি, তুচ্ছ কিন্তু চেনা আরামের লোভে। সুন্দর দেখানোর লোভ চুলোয় দিয়ে চকচকে জামা খুলে রেখে ন্যাতাকানি পরে ঘুরে বেড়াতে পারি, স্রেফ আরাম লাগছে বলেই।
দুজনের কেউই এমন কোথাও শিকড় গজাতে পারিনি যেখানে আমাদের আরাম লাগেনি। লাগেনি বলেই এখনও পর্যন্ত যেখানে যেখানে আমরা থেকেছি, কোনও জায়গাকেই বাড়ি বলে ভেবে নিতে পারিনি। বাড়ির একটা সংজ্ঞা আমি মানি। সে সংজ্ঞা অবান্তরে লিখেওছিলাম, সম্ভবত কোনও এক বছরের এগারোই মে-র পোস্টে। যেখানে অর্চিষ্মান, সেখানেই আমার আরাম, সেখানেই আমার বাড়ি। সেটা এখনও সত্যি। কিন্তু এটাও সত্যি, একসঙ্গে থাকার আরামের বেসলাইন পেরিয়ে দুজনের চোখেই আরেকটা আরামের এবং আরেকটা বাড়ির ছবি আছে। সে বাড়ির এবং সে আরামের একটা নির্দিষ্ট ভাষা আছে, একটা নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক-সামাজিক ওম আছে, যে ওম আমাদের শৈশবের, কৈশোরের, প্রাকযৌবনের। আমাদের বড় হওয়ার। আমাদের নস্ট্যালজিয়ার।
আমার অ্যাডভেঞ্চারের ছোঁয়াচ ততক্ষণে লেগেছে অর্চিষ্মানের। বলল, আজ আমি খাব ফ্রেঞ্চ লাইম সোডা, সুইট। পাল্লা দিয়ে বললাম, সল্টেড লস্যি। অর্ডার লিখে নিলেন ভদ্রলোক, মাস্ক পরে থাকা সত্ত্বেও আমি যাকে চিনেছি। নৈবেদ্যমে আমার প্রিয়তম পরিবেশক। যতবার দেখেছি, এমন সহজ আত্মবিশ্বাস ও হাসিখুশি ব্যক্তিত্ব কেন আমার নেই ভেবে আফসোস করেছি।
ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে রইলেন। মাস্কের ভেতরেই হেসে ও ঘাড় নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমাদের অর্ডার শেষ। ভদ্রলোক ডটপেন টিপে বন্ধ করতে গিয়েও করলেন না।
কফি আনব না? মাইসোর পাক?
আগের দিন দু'নম্বর মার্কেটে চা খাচ্ছিলাম। ভদ্রলোক ভিড় সামলাতে হিমশিম। দুধ চায়ের কাস্টমার বেশি। এর মধ্যে লেবু চায়ের বায়না করতে বাধোবাধো ঠেকছিল। তবু করলাম। করে সরে আসছি, ভদ্রলোক বললেন, একটা চিনি ছাড়া তো?
চায়ের আগে ফুচকায় লাইন দিয়েছিলাম। ছেলেটা এত দিন পরেও আমাকে দেখে একখাবলা আলু আলাদা করে এক্সট্রা লংকাবাটা দিয়ে মাখল।
আমি আর অর্চিষ্মান যখন আমাদের স্বপ্নের বাড়ির দিকে মুখ ফিরিয়ে আছি, আমাদের চারপাশে একটা বাড়ি তৈরি হতে শুরু করেছে কি?
দোসা, কোর্মা, লস্যি, কফি এবং মাইসোর পাক খেয়ে ফাটোফাটো হয়ে ফিরছি, 'অ্যাই অ্যাই' চিৎকার। এক ভদ্রমহিলা, যাকে আমি এবং আমি শিওর অর্চিষ্মানও, জীবনে প্রথমবার দেখছি, হাসিমুখ হাত নাড়তে নাড়তে আমাদের দিকে দৌড়ে আসছেন। দেখতে দেখতে এসে পড়লেন।
তোমরা এখানে থাক না আর?
তাই তো। দাঁড়িয়ে আছি পুরোনো ভাড়াবাড়ির নিচের গলির মুখটায়। অর্থাৎ আমরা মহিলাকে চিনতে না পারলেও মহিলা আমাদের ঠিক চিনেছেন।
বললাম, না। প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেল, কি তারও বেশি, চলে গেছি তো অমুক ব্লকে।
উঠে যেতে বলেছিল বুঝি?
আতংকিত সমস্বরে বললাম, না না, আমরাই বোর হয়ে গেছিলাম তাই।
এখনও বাচ্চা হয়নি?
একসময় এ অমোঘ প্রশ্নের জবাব দিতাম সম্পূর্ণ সততা এবং ফুর্তিসহকারে। কখনওই হবে না। ভার্বাটিম এটা না বললেও এই ফিলিংটাই প্রকাশ করতাম। ঠেকে শিখেছি। নিজেদের বদ্ধোন্মাদ প্রমাণ করে আতংক বিস্তার করার থেকে ভাগ্যহতর অভিনয় করে সিমপ্যাথি অর্জন এককোটি গুণ নিরাপদ।
নাহ। সিনক্রোনাইজড ঘাড় নেড়ে, মহিলার মুখের কারুণ্যকে দশ গোল খাওয়ানোর সমান দুঃখী মুখ করলাম দুজনেই।
কাজ দেবে জানতাম। আরে ঘাবড়িও না, যা হয় ভালোর জন্যই হয়। কী ঘোড়ার ডিম হত বাচ্চা হয়ে? বড় হয়ে তো বাবামাকে দেখত না। মেয়েরা দেখার ভড়ং করে ক্ষান্ত দিত, ছেলেরা সেটুকুরও পরিশ্রম করত না।
কাষ্ঠহাসি নীরবতা ছাড়া এর কোনও উত্তর হয় না। ভদ্রমহিলা নিজেই হেসে অকওয়ার্ডনেস তাড়ালেন। কিছু মনে কোরো না। স্পষ্ট কথা বলার স্বভাব আমার। বললাম, না না মনে করার প্রশ্নই নেই। উল্টে, সত্যিটা স্বীকার করলাম। উনি যে আমাদের চিনতে পেরেছেন তাতে আমরা মারাত্মক অবাক ও খুশি।
মহিলাও নাকি খুশি হয়েছেন আমাদের এতদিন পর দেখে। কনুই অল্প ছুঁয়ে বলে গেলেন, ভালো থেকো। আবার দেখা হবে।
আমরা যখন সমাজ ও শিকড়হীনতার সেলফ পিটিতে ভাজাভাজা হচ্ছি, একে একে কি ঘিরে দাঁড়াচ্ছেন প্রতিবেশীরা, যারা আমাদের জীবন সম্পর্কে জেনুইন আগ্রহ ও কৌতূহল পোষণ করেন?
কৌতূহল প্রসঙ্গে একটা ভয়ানক মজার গল্প আছে। অবান্তরের সব গল্পের মতো এটাও আগে বলেছি নিশ্চয়। গল্পটায় আমি নেই। মানে সশরীরে নেই। আছে অর্চিষ্মান আর রাহেজা কেমিস্টের লোকজন। সি আর পার্কের সমস্ত দোকানের ওষুধ খেয়ে আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি যে রাহেজার দোকানের ওষুধে আমাদের অসুখ সবথেকে দ্রুত সারে। দোকান দেখাশোনা করেন দুই ভাই। তিনজন কর্মচারীর একজনের বাড়ি হুগলী জেলায়, দিদির বিয়ে হয়েছে শ্রীরামপুরে। সকলেই মারাত্মক ভদ্র ও ক্ষান্তিবাদী। একদিন নিজের কী একটা পচা রসিকতায় নিজেই হাসতে গিয়ে ঠোঙা ফাটিয়ে সারা দোকান ঝালমুড়ি ছড়িয়েছিলাম, তারপরেও ওঁরা আমার দোকানে ঢোকা ব্যান করেননি। এবং পরের রসিকতাগুলোয় হাসার উদারতা দেখিয়েছেন।
একদিন অর্চিষ্মান খুব দাঁত বার করে বাড়ি ফিরল। যা একটা মজা হল না।
রাহেজায় ঢুকেছিল। দোকানে আর একজন মাত্র খদ্দের ছিল এবং তার থেকেও ইম্পরট্যান্ট, আমি ছিলাম না। বাকি সব যেমন থাকার তেমন ছিল। একজন ওষুধ পাড়তে মইয়ে চড়েছিলেন, একজন উবু হয়ে ড্রয়ার ঘাঁটছিলেন, একজন কম্পিউটারের কি-বোর্ডে আঙুল রেখে বিল বানাচ্ছিলেন। এমন সময় অন্য খদ্দেরটি কেনাকাটা সেরে বেরিয়ে গেলেন। সুইং ডোর যথাস্থানে ফিরে এল।
অর্চিষ্মান বলল, নিমেষে দোকানের এনার্জি যে কী পরিমাণ বদলে গেল, যদি দেখতে। সবার কাজ থেমে গেল। চোখে চোখে ইশারা। অবশেষে বড় ভাই কাশলেন। বললেন, অর্চিষ্মান যদি কিছু না মনে করে তাহলে একটা প্রশ্ন আছে ওঁদের।
হৃদপিণ্ডের গতি সংযত করে অর্চিষ্মান বলল, নিশ্চয়।
আপনার সঙ্গে যে ভদ্রমহিলা আসেন দোকানে, তিনি আপনার কে হন?
আশেপাশের নীরব দর্শকদের একজন হেল্পফুল হয়ে হিন্ট দিলেন। সিস্টার?
বিবি হ্যায় মেরা। হতভম্বতা কাটিয়ে অর্চিষ্মান কোনওমতে বলেছিল।
বড় রাহেজা নাকি জিভ কেটে কান ধরেছিলেন। বারংবার বলেছিলেন প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। আসলে আমরা ঠিক . . .
মাইন্ড করার প্রশ্নই নেই। উল্টে, মনে আছে? বলে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়া যায় সারাজীবনের মতো এমন একটা গল্পের সাপ্লাই দেওয়ার জন্য রাহেজা টিমের কাছে আমরা চিরঋণী।
হো হো করে হাসতে ইচ্ছে করছে।
ReplyDeleteআপনাদের সাথে আমাদের একটা মিল পাওয়া গেলো।
জানিনা কেনো আমাদেরও লোকে বর-বউ বুঝতে পারেনা
বেনারসে অটোদাদা তো ঝুলোঝুলি, "আপনাদের হোটেলের নাম শুনিনি, আমার চেনা হোটেলে চলুন। ওখানে আইডি চাইবেনা, বিবাহিত না হলে ঝামেলা করবে না।"
হোমস্টে দাদা খোশগল্প করতে করতে মদ অফার করে আমার বরকে বলেছে "আসুন বসুন, আপনার গার্লফ্রেন্ডকেও ডাকুন, আমরা কিছু মাইন্ড করিনা।"
বাড়ির কাছের মাংস দোকানের দাদা আপনাদের মত প্রশ্ন করেছিলো "উনি আপনার কে হন"
এখন মেয়ে হবার পর এসব গুলো বন্ধ হয়েছে।
আর বাড়ি মানে নস্টালজিয়ার ওম এবং না চেয়ে পাওয়া লোকজনের সাথে কুড়িয়ে পাওয়া সম্পর্কের ওম দুটো ব্যাপারেই হায়েস্ট ফাইভ।
যাক, সমব্যাথী পাওয়া গেল। বেড়াতে গিয়ে এ জিনিস আমাদেরও ফেস করতে হয়েছে, বৈজয়ন্তী। ঠিক এই ফর্মে নয়, বরং ওই রাহেজা কাটিং ভদ্রতায়, "আপনারা কি ভাই-বোন/দিদি-ভাই?" আমরা অবশ্য এ সব অ্যানটিসিপেট করে সবার আগে বিয়ের সার্টিফিকেটের ফোটোকপি ব্যাগে পুরি, বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে।
Deleteসার্টিফিকেট এর কথায় মনে পড়লো। আমি দত্ত, বউ সাহা। কোনোদিন surname বদলানোর কথা ভাবিনি।
Deleteএকবার এক হোটেলে তো তুমুল বাওয়াল। বেড়াতে গেলে সাধারনত পাসপোর্ট-টর্ট থাকে। কিন্তু কাটোয়ার মত একটা ছোট শহরে গোলমালের আশঙ্কা করিনি।
আমাদের সঙ্গে তিন বছরের মেয়ে। তাও ঢুকতে দেবে না। মেয়ে বলছে এটা আমার মা বাবা। তাও দেবে না। "ওরকম আজকাল অনেক বাচ্চা সাজিয়ে নিয়ে আসে...আইডি কার্ডে বর বউ লেখা থাকতে হবে।" ইত্যাদি।
শেষে মেয়ের আধার কার্ডে আমাদের দুজনের একসাথে নাম বেরোল। তারপর ভদ্রলোক একেবারে তুলসী চক্রবর্তীর মত "আসুন আসুন দিদি। বেস্ট রুমটা আপনাকে দেবো... "
পৃথিবীতে যে সব লোকের কানের গোড়ায় দেওয়া উচিত, এই হোটেল মালিক তাদের লাইনের প্রথমেই দাঁড়িয়ে আছেন। যত্তসব। ওর কী, দুটো অ্যাডাল্ট লোক বর বউ কি না? অদ্ভুত।
Deleteলেখাটা এবং কমেন্টগুলো দুটোই বেশ উপভোগ্য !!
ReplyDeleteবেচারা হোটেলের মালিক হয়ত সরলভাবে শুধু ওনার 'সামাজিক কর্ত্বব্য' টুকুই পালন করতে চাইছেন !
হ্যাঁ, সেটাও হতে পারে, রাজর্ষি। এই নীতিপুলিশগিরি না করলে হয়তো আসল পুলিশ এসে হোটেলে হুজ্জুত করবে।
Deleteকিন্তু যাঁদের সঙ্গে ঘটছে ঘটনাটা, এক্ষেত্রে চন্দ্রচূড় অ্যান্ড পরিবার, বা যদি আমরাও থাকতাম, তাদের পক্ষে অত দিক ভাবা শক্ত। এ তো কিছুই না। হাউসিং সোসাইটির লোকেরাও সম্ভাব্য ভাড়াটেদের ভয়াবহ সব প্রশ্ন করে শুনেছি। আমার এক চেনা দম্পতির পাসপোর্ট দেখে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বউ বরের থেকে এক বছরের বড়, কী ব্যাপার?
অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্যি।
আরে, না না, আসলে একেবারেই হোটেল মালিকের পক্ষে নই আমি। সিরিয়াসলি বলতে গেলে তো অভিজ্ঞতা হিসেবে খুবই বিরক্তিকর। আর ঠিকই, এটাও খুবই সত্যি যে এই ধরণের অদ্ভুত বিপত্তি নানান ক্ষেত্রেই হয়।
Deleteগুড। জেনে ভালো লাগল।
Delete