#ফেলুদাব্যোমকেশেরপাশথেকেসরেদাঁড়ান




সিরিজখানা খুন হয়ে গেছে কাস্টিং টেবিলে। পরমব্রতকে দেখে মনে হচ্ছে খোকাকে বুড়ো সাজতে বলা হয়েছে। ঋতব্রতকে দেখে মনে হচ্ছে বুড়োকে খোকা সাজতে বলা হয়েছে। রুদ্রনীলকে কী সাজতে বলা হয়েছে আমি শিওর নই।

বুড়িয়ে গেলাম বুড়িয়ে গেলাম কঁকিয়ে মরি, চেহারায় বয়সের ছাপ না পড়লে কী ভয়ানক কাণ্ড হয় তার কশনারি টেল পরমব্রত। উনি যে চরিত্রেই অভিনয় করুন না কেন আসলে যাদবপুর ইংলিশ-এর চরিত্রে অভিনয় করেন বলে এতদিন বেঁকা হাসতাম, সাবাস ফেলুদা-র পর থেকে হাসছি না। সত্যি, স্বধর্ম ত্যাগ ইজ নেভার আ গুড আইডিয়া। এই সিরিজে উনি যাদবপুর ইংরিজির বদলে ফেলুদা সাজতে গেছেন। এমন একজন মানুষ যার ছাত্রদশা ঘুচে প্রাপ্তবয়স শুরু হয়েছে। সেটা করতে গিয়ে মুখের যাবতীয় পেশিকে জমিয়ে ফেলতে হয়েছে, যাতে ভুলক্রমেও তারা কোনওরকম অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচালতা প্রকাশ না করে ফেলে। গলার আওয়াজ মন্দ্রসপ্তকে বেঁধে ফেলতে হয়েছে, পাছে তা শিশুসুলভ উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। চোখে কষে সুর্মা মাখাতে হয়েছে, সম্ভবতঃ দৃষ্টিকে অন্তর্ভেদী করে তোলার দুরাশায়।

ঋতব্রতর চুলে অত জেল মাখিয়ে প্রায় সুনামির ঢেউয়ের হাইটের টেরি বাগানোটাও কৌতূহলোদ্দীপক। আমি মান্ধাতার আমলের হতে পারি, কিন্তু এই আমলের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাড়ির হাসিখুশি, চটপটে বালকেরা সবাই ফেডেড জিনস আর জেলমাখা টেরি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে না, সে বাবদে এক মাসের মাইনে বাজি রাখতে পারি।

বিত্তের কথাই যখন উঠল, ফেলুদারা বেড়াতে গিয়ে আজকাল যে ধরণের হোটেলে ওঠে ভাবা যায় না। সরকারি বাংলোটাংলোগুলোতে কি বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না ? ফেলুদার জুতো, জামাপ্যান্ট, জ্যাকেট, স্কার্ফ দেখলে মনে হয়্‌ যে মাইনেটা বাজি রাখলাম, সেটার পুরোটা খরচ হয়েছে। জিন্স আর হাতা গোটানো পাঞ্জাবীর থেকে বেটার দেখতে লাগলে তবু খরচটা জাস্টিফাই করা যেত।

অর্চিষ্মান বলল, বইতে কিন্তু লেখা আছে ফেলুদা শৌখিন ছিল। মকাইবাড়িফাড়ি ছাড়া খেত না, মনে নেই?

খুব আছে। মকাইবাড়ি খেয়ে বাকি যা পয়সা থাকত, বই কিনে উড়িয়ে দিত। আধুনিক ফেলুদাদের দেখে মনে হয় কেসের ফি পেলেই দৌড়ে আইফোন চোদ্দ প্রো আপগ্রেড করে আইফোন সাড়ে চোদ্দ প্রো বাড়ি আনবে। বুদ্ধির ছাপ যত কমছে , বিলাসের ছাপ তত বাড়ছে।

গ্যাংটকে গণ্ডগোল-এর গল্পটাকে সমসাময়িক করে তোলার আইডিয়াটা ভালো। তিপ্পান্ন বছর আগের লেখা একটা গল্পের প্রতি সাষ্টাঙ্গ না থাকতে চাওয়ার মধ্যে অপরাধ কিছু নেই। বম্বের ড্রাগ কার্টেলের ব্যাপারটা ঢুকিয়ে  রহস্যটাকে জটিলতর করার চেষ্টাই বা খারাপ কী? অনেকে বলছেন ক্যামেরা নাকি ভালো হয়েছে। হয়তো হয়েছে। আমি আসলে দর্শনের দিকে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না, ননস্টপ নেপথ্য মিউজিক যাবতীয় এনার্জি শ্রবণে টেনে নিচ্ছিল।

বম্বের পুলিস অফিসার গায়তোণ্ডের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন অনেকে। আমারও খারাপ লাগেনি। গোটা সিরিজের পুরুষ নটদের মধ্যে ওঁর দেহপটই ফেলুদা সাজার পক্ষে সবথেকে মানানসই।

নিশিকান্তর কথা আর কী বলব। ট্যাক্সির ভেতর পর্যন্ত সোজা হয়ে বসতে পারেন না। মুখ দিয়ে অনর্গল অ্যাঁ অ্যাঁ আওয়াজ। হিন্দি যে বলতে পারেন না সেটা প্রমাণ করার (দর্শকদের হাসানোর প্রাণান্ত মরিয়াপনাতেই বরং বেশি) জন্য প্রতি এপিসোডে তিনমিনিটের হিন্দি মোনোলগে মগ্ন হন। চশমার পাওয়ারও অনেকদিন চেক করাননি মনে হয়। তোমার দাদার গায়ে বুঝি খুব জোর...ইত্যাদি সংলাপগুলোর শেষে যখন তোপসে বলল ফেলুদা যোগব্যায়াম করে, বইয়ের টুকে বলে বসলেন,  ঠিক ধরেছি। বাঙালিদের মধ্যে ও রকম ছিপছিপে হিলহিলে চেহারা দেখা যায় না।

আমি কনফিউজড। ও রকম কাকে দেখলেন নিশিকান্ত? যদি না এক সৌরসেনীকে দেখে থাকেন। যিনি পুলিস এবং সকালবেলা অফিসে গিয়ে ফাইল না ঠেলে, ফেলুদা এবং তোপসের পেছন পেছন একা একা ঘুরে তদন্ত চালান। ফেলুদা এমনই ইয়ে, ফাঁকা রাস্তায় পুলিশ গাড়ি নিয়ে পেছন পেছন ঘুরে বেড়ালেও টের পায় না। পুলিশ অবশ্য আরও বড় ইয়ে। ফেলুদা তোপসে ফাঁকা মাঠে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, পুলিস কে জানে কোন ঝোপের আড়ালে, তাও শুধু হাঁটু পর্যন্তই আড়াল হয়েছে, একবার ডানদিকে বেঁকছে, একবার বাঁদিকে। সম্ভবতঃ গোপনীয়তা মেন্টেন করে সন্দেহভাজনদের কথোপকথন শুনে নেওয়ার উচ্চাশায়। কথোপকথন ছাড়ুন, ওই ডিসট্যান্স থেকে লিপ রিডিং-ও অসম্ভব।

সত্যজিৎ রায় দুটো সর্বনাশ করে গেছেন বাংলা সিনেমার। এক, শতরঞ্চি পেতে গোল হয়ে বসে ইন্ডোর গেম। দুই, কাশীর আবছায়া গলিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গলায় ওই যে বাদুড় বলে ওরে ও ভাই সজারু আবৃত্তি করিয়ে দিলেন, সেই থেকে আধুনিক ফেলুদারা প্রতি এপিসোডে গলা কাঁপিয়ে একপাতা আবোলতাবোল না গেয়ে থামছে না। বাবাকে এই রকম কোল্যাটারাল ড্যামেজ হতে দিয়ে সত্যজিৎ ভালো করেননি।

কে যেন জানতে গিয়েছিল, এত ফেলুদা কেন? অরিন্দম শীল বলেছেন, ফেলুদার বদলে অন্য গোয়েন্দা করতে চাইলে প্রোডিউসার ব্যাটারা হাত উপুড় করতে চায় না। আর ফিল্মমেকিংকে ওঁরা যতই আর্টটার্ট বলে চালান না কেন, এটা ওঁদের দশটা-পাঁচটা চাকরি। কাজেই যে আর্টে মাইনে বেশি তার সাধনাই ওঁরা করবেন। কাজেই এই সবে শুরু। ফেলুদার পিণ্ডি চটকানো এখন আরও অনেকদিন চলবে।

আমি থামছি। কারণ আমি আর সইতে পারছি না।

সাবাস ফেলুদা প্রথমবার চালিয়ে দুটো এপিসোড দেখে দুজন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন আরেকবার অ্যাটেম্পট নেওয়া হল। খেয়েদেয়ে জি ফাইভ খুলে বসা হল। সকালে উঠে একে অপরকে জিজ্ঞাসা করলাম, শেষ হয়েছিল? হয়নি। সাড়ে পাঁচ এপিসোড পর্যন্ত পৌঁছতে না পৌঁছতে ছাদের সমান হাই চাপতে চাপতে ঘুমিয়ে পড়েছি। পরদিন চোখে ফিগারেটিভ সর্ষের তেল ডলে বাকিটুকু শেষ করলাম। তাও মাঝখানে জল খাওয়া বাথরুমে যাওয়া সবই চলছিল। একজন রিমোটের দিকে হাত বাড়ালে অন্যজন বলছিল, আরে পজ করার দরকার নেই। মিস হলে হবে।

ভাবতে পারছেন? দশ হাত দূরে, হলই বা টিভির পর্দায়, জীবনের প্রথম তায় আনরিকোয়াইটেড প্রেম, হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে আর চল্লিশ মিনিটের বেশি তার প্রতি মনোযোগ মেন্টেন করতে পারছি না? হাই তুলছি? ঘুমিয়ে পড়ছি? ভাবছি, বারান্দার দরজাটা দেওয়া তো, না হলে হনুমান হুলোটা আবার ঢুকে পড়বে।

সাবাস ফেলুদা-র নিন্দেমন্দর প্রতিক্রিয়াতে অরিন্দম শীল আরও বলেছেন, উনি সব সইতে পারেন, এক অশিক্ষা ছাড়া।

অশিক্ষাটশিক্ষায় আমার অসুবিধে নেই। তাহলে নিজেকে সহ্য করাও অসহ্য হবে। সুর্মাই ফেলুদা, জেলজেলে তোপসে-ও সয়ে নেব। সইব না শুধু বোর করলে। পত্রপাঠ পিঠটান দেব। যে ইন্ডাস্ট্রির শিক্ষিত আর্টিস্টদের হাতে পড়ে প্রদোষ মিত্র পর্যন্ত একজন হদ্দবোরিং-এ পর্যবসিত হন, সে ইন্ডাস্ট্রি জয়যুক্ত হোক কিংবা গোল্লায় যাক, ফেলুদাব্যোমকেশের পাশ থেকে এই আমি সরে দাঁড়ালাম।

Comments

  1. আমি ফেলুদার ব‌ই আর সৌমিত্রর দুটো সিনেমা ছাড়া আর কিছু পড়িনি বা দেখিনি।

    ReplyDelete
  2. Srijit er duto Feludar por ar kono notun Feluda dyakhar sahos korini. Byomkesh o Pinjrapol naki bhalo hoyeche shunlam. Nijeke onek pep talk dichchi dekhar jonyo.
    Parambrata Topshe hoyeche, Feluda hoyeche, ebar Byomkesh hoye sheshe Mitin mashi te giye thambe dekhe nio.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্যোমকেশ তো হয়েছে! দেখোনি? ওই যে মগ্ন মৈনাক গল্পটায়। পরম ব্যোমকেশ, রুদ্রনীল অজিত। প্লিজ দেখো, বিম্ববতী। একা আমি কেন দেখে মরি সব।

      আসলে আমার আনুগত্যের সেন্সটা ঝামেলার। চন্দ্রিল যেখানে যতবার বাঙালির পতন নিয়ে যত বক্তৃতা দেবেন সব শুনব, কবীর সুমনকে যে ছাড়ুক আমি ছাড়ব না, ম্যাগি ছাড়া কোনও ইন্সট্যান্ট নুডলসকে ভালোবাসব না, ব্রিটানিয়া ছাড়া বিস্কুট খাব না, বাটা ছাড়া হাঁটব না, তেমনি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, ফেলুদাকে নিয়ে যে যা সাপব্যাংবিচ্ছু বানাবে সব দেখব। অবান্তরেও লিখেছিলাম বোধহয়। যতই পিণ্ডি চটকাও, আমি পালাচ্ছি না। মৈনাক ভৌমিক বানালেও দেখব। কিন্তু আর পারা যাচ্ছে না। নিজের আনুগত্যে অটল থাকার দর্পে ফেলুদাকে অসম্মান করে ফেলছি।

      পিঁজরাপোল দেখেছি। যা হয় ব্যোমকেশ তার তুলনায় ভালো, ঠিকই শুনেছ। মানে আমার মতে আরকি। কিন্তু ব্যোমকেশও বাদ। ফেলুদা দেখব না আর ব্যোমকেশকে দেখা চালিয়ে যাব এ তো হতে দেওয়া যায় না, কাজেই ব্যোমকেশকেও ফেলুদার সঙ্গে সঙ্গেই বিসর্জন যেতে হবে।

      তোমার ভবিষ্যৎবাণী সফল করে পরমব্রত যদি সত্যি মিতিনমাসি রূপে আবির্ভূত হয়, যার সম্ভাবনা হাই, ঠিকই বলেছ, তাহলে সেটা একটা দেখার মতো জিনিস হবে। কিন্তু শপথ ইজ শপথ। আমি আর বাংলা গোয়েন্দা সিনেমায় নেই।

      Delete
  3. Amio thik charte instalment e konomote shesh korechi ... praaye kende felar jogar. Tobe Arindam Sil er je kono kaaj dekhlei tai hobe ... ami ekdom dekhi na. Protiti muhurte Soumitro ke miss korchilam. Ar oto boro Topse, abar girlfriend o ahce .... hojom holo na.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোপসের প্রেমিকা বিষয়ে তোমার মন্তব্যের যে উত্তরটা দিতে যাচ্ছিলাম, শর্মিলা, সেই মর্মে অর্পণ নিচে কমেন্ট লিখে দিয়েছে। প্রেমপিরিত (আমি এদের উদ্দেশে আর ভদ্রতর ভাষা ব্যবহার করতে পারছি না, প্লিজ কিছু মনে কোর না) না দেখিয়ে কোনও জিনিসকে কীভাবে রোমহর্ষক করা যায় সেটা এরা জানে না। মগনলাল মেঘরাজ , কোনও এক অদ্ভুত কারণে কী একটা অন্য ম-ওয়ালা নামপদবী সেঁটে কমলেশ্বরকে টুপি পরিয়ে নামিয়ে দিয়েছে. . . এই বিষয়টা নিয়ে নিন্দে করার ছিল, পোস্টে লিখতে ভুলে গেছি, এখানেই লিখে দিই, ওই চরিত্রটার মানে কী? যদি মগনলাল মেঘরাজকেই রিক্রিয়েট করার ইচ্ছে থাকে তাহলে তাকে ঠিক করে কর, আফটার অল বাঙালির মরিয়ার্টি, ও রকম ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে দেখিয়ে লাস্টে 'রাবণ ব্যাটা এক্কেবারে মরে গেছে' স্টাইলে ফেলুদাকে দিয়ে "ও তো গ্রেপ্তার হয়ে গেছে"-র একলাইন সামারি দেওয়ার মানে কী? মগনলাল মেঘরাজকে দেখাবে অথচ তাকে ক্লাইম্যাক্সে রাখবে না? অদ্ভুত। যাকগে মরুকগে, যেটা বলছিলাম, রোমহর্ষকের মুখ চেয়ে মেঘরাজের হলঘরে যে আইটেম ডান্সের আসর বসেনি সেই রক্ষে। তবে খুব একটা রক্ষেও না, পরের সিনেমাটায় শিওর বসবে।

      Delete
    2. "'রাবণ ব্যাটা এক্কেবারে মরে গেছে' " :P

      Delete
  4. arebbas, first attempt-e 2to episode? ami first episode-ei ghumiye porechhilam.
    shei attempt-er opor base kora ektai kotha mone hoyechhilo. Feluda ki etoi boring je taake spice up korte shurute oi ekta "madraji film marka" action sequence laage, othoba topshe-r bandhobi-r proyojon hoy.

    ei shob dekhe shune Sandip Ray-er proti bhokti bere gelo

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি সেই কবে থেকে বলে আসছি সন্দীপ রায়ের প্রতি অবিচার হচ্ছে। আরও ক'বছর যাক, তবে লোকের চক্ষুরুন্মীলন ঘটবে। সন্দীপ রায়কে যারা ক্রমাগত "বাবু" ডেকে সেন্স অফ হিউমারের হদ্দমুদ্দ প্রমাণ রাখল তাদেরও বিচার হবে। রোদ্দুর রায়কে যারা বাঙালির পুনর্জাগরণের হোতা বলে চালাতে চাইল তারাও বাদ পড়বে না। অ্যাকচুয়ালি, শেষের দুটো সেটের মধ্যে ওভারল্যাপ হাই আমি
      শিওর।

      যাই হোক। মোদ্দা কথা হচ্ছে, সাবাস ফেলুদা যে বসে দেখা যায় না, শুয়ে একেবারে ঘুমিয়ে পড়তে হয় সে বাবদে আমি তোমার সঙ্গে হাই ফাইভ।

      Delete
  5. Bhebechhilam series ta dekhar ekta chance nebo. intu apnar lekha pore bhorsa lagchhe na. Feluda tatha Satyajit Ray er ei matratirikto byabohar bondho hoya uchit. Ke jaane amar mone hoi Feluda ekta somoyer pratik----ekta somoyer koishor er pratik. Ekhon ei sabai mile setake niye aar katachhera na korai bhalo. Ki jaani keno amar mone hoi Satyajit Ray Saumitra ke dekhe hoyoto oi charitro ta mone mone srishti korechhilen. Kichhuta Sabyasachi perechhen. Kintu ei Tota --- Parambroto sabai mile Feluda sajle boroi benojol dhuke pore.

    ReplyDelete
    Replies
    1. না না, সুস্মিতা, দেখতে পারেন। সব সময় যে ভালো জিনিস দেখেই সময় কাজে লাগাতে হবে তেমন তো নয়। সময় জিনিসটা নষ্ট করার জন্যই পৃথিবীতে দেওয়া হয়েছে বলে আমার সন্দেহ। আপনার যদি অল্প হলেও সেরকম সন্দেহ হয়, সাবাস ফেলুদা দেখে ফেলুন।

      আপনি একটা ইন্টারেস্টিং দিক পয়েন্ট আউট করলেন যে ফেলুদা একটা সময়ের প্রতীক। খানিকটা একমত। আমিও বিশ্বাস করি ফেলুদা একটা জিনিসের প্রতীক, এবং হয়তো সে জিনিসটার সঙ্গে আপনার চিহ্নিত করা সময়টার একটা যোগ আছে। সেটা হচ্ছে একটা সেন্সিবিলিটির। একটা রুচি, শিক্ষা, সংস্কৃতির। খুবই এলিটিস্ট কথা, কিন্তু আমি পিছু হটছি না। এই নতুন যুগের ফেলুদাদের চলাফেরা, হাঁটা, দাঁড়ানো, তাকানো, কথা বলা কিচ্ছুতে, আই রিপিট, কিচ্ছুতে সেই ছাপ নেই। না থাকাটা শুধু অভিনেতাদের দোষ নয় বলা বাহুল্য। গোটা ব্যাপারটা থেকে অর্ডিনারিত্ব ভকভক করছে। অর্ডিনারি গোয়েন্দায় আমার আপত্তি নেই। দীপকাকু। কিকিরা। একেনবাবু। সফল গোয়েন্দা এবং অর্ডিনারি মানুষ। ফেলুদা নন। ফেলুদা টপ টু বটম "এক্সট্রাআর্ডিনারি"। সেই এক্সট্রাঅরডিনারিত্বের অভাব শত কায়দার সংলাপ, স্ট্রিটফাইট, জ্যাকেট, বান্ধবী দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে না।

      মুশকিল হচ্ছে সে সময়ও গেছে আর সেই রুচিসংস্কৃতি ইত্যাদি জাতি হিসেবে আমরা সম্পূর্ণ হারিয়েছি। কিন্তু সিনেমা তো বানাতেই হবে। সংস্কৃতিসৃষ্টির গরু যাকে একবার ঢুঁসিয়েছে, তার আর চুপটি করে বসার জো নেই। আর ফেলুদার প্রতি প্রোডিউসারদের নেকনজর, আমার মতো দর্শকদের কারণেই। কাজেই ফেলুদাকে নিজেদের মাপে কেটেছেঁটে দীপকাকু ২.০ বানিয়ে মার্কেটে ছাড়া। এই পাপের অংশ হতে চাই না আর। কাজেই হাত তুললাম।

      Delete
    2. Amar Dipkaku ba Mitinmasi dekhte/porte apotti nei. Porio. Series ta kaal dekha shuru kore der episode er beshi dekhe uthte parini. Khub slow legechhe. Aar Parambrata ke Dipkaku hisabe bgolpe dekhleo Rudranil er character ta aami nite parini. Aami original Gangtoke Gondogol baad dilam. Kintu oirokom sanglaap rudranil er mukhe.

      Amar ekta bishoy mone holo series ta dekhe Arindam Sil cinema banate anek sofol. Anek tantan. Series/serial ekta alaada mode of entertainment. tarjonyo bodhhoi uni tairi non.

      Delete
    3. সুস্মিতা, ট্রাই নিয়েছেন দেখে খুশি হলাম। সিনেমা আর সিরিজের একটা তফাৎ হতে পারে, এগুলোতে বোধহয় না চাইতেও টানতে হয়, নির্দিষ্ট এপিসোড সংখ্যা পূরণ করার জন্য। আমি জানি না। এবং সেটা ইজ নো এক্সকিউজ। সাবাস ফেলুদা-র সমস্যা শুধু টানায় নয়।

      সেই। এখন আমাদের দীপকাকু মিতিনমাসিতেই কনসেন্ট্রেট করা উচিত। একেনবাবু যে হিট - একেনের লাস্ট সিনেমাটা নয়ডার হলে দেখতে গিয়েছিলাম, দিল্লিতে এই প্রথম কোনও বাংলা সিনেমা হাউসফুল অভিজ্ঞতা হল, সব সিট ভর্তি - সেটা এই জন্য যে একেনবাবু নতুন। ফেলুদাকে নিস্তার দেওয়ার সময় এসেছে।

      Delete
    4. 'ফেলুদা একটা জিনিসের প্রতীক, এবং হয়তো সে জিনিসটার সঙ্গে আপনার চিহ্নিত করা সময়টার একটা যোগ আছে। সেটা হচ্ছে একটা সেন্সিবিলিটির। একটা রুচি, শিক্ষা, সংস্কৃতির। ....এই নতুন যুগের ফেলুদাদের চলাফেরা, হাঁটা, দাঁড়ানো, তাকানো, কথা বলা কিচ্ছুতে, আই রিপিট, কিচ্ছুতে সেই ছাপ নেই। ' agreed !!!!

      Delete
    5. @অন্বেষাঃ ❤️

      Delete
  6. by the way, barandar dorja diye je dhukte paare, shey ke? honuman? na hulo? naki honuman hoye jawa hulo?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে হনুলুলু! সে হচ্ছে একটা আগুন রঙের হুলো। যে খাটুশ্যামের ঠেলাগাড়ির কচুরি খায় আর মেলা গ্রাউন্ডের রাস্তায়, যেখানে কোটি কোটি লোক ভোরে আর সন্ধেয় উল্কার বেগে হাঁটে আর দৌড়োয়, বেছে বেছে এমন জায়গায় শুয়ে থাকে যে ওর গায়ে পা লেগে যাওয়া এড়াতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এক কথায় বজ্জাত টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। তাকে নিয়ে একটা যা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা হয়েছে, এই বারান্দা গলে ঘরে ঢুকে পড়া নিয়ে, কখনও লিখব।

      Delete
  7. আমি শাবাশ ফেলুদা চালিয়ে (লোকজনের বারণ থাকা সত্ত্বেও) মিনিট পাঁচেক দেখেছিলাম। দেখলাম ফেলুদা ভুবনেশ্বরের যক্ষীর মাথা নিয়ে কলকাতার রাস্তায় আমেরিকান ফুটবল খেললো, তার মধ্যেই বাঁ হাতে একটা টায়ার তুলে কাকে পেটালো। তারপর সেই পাথরের মূর্তিটা ছুঁড়ে পুলিশের হাতে দিয়ে "আর্কিওলজিকাল সার্ভেতে পৌঁছে দেবেন" গোছের কি একটা বলল, পুলিশও সেটা দিব্যি লুফে নিলো। তারপর ভুল হ য ব র ল কোট করল। এইসব মারপিটের মধ্যেই কোত্থেকে একটা বাচ্চা এসে ফেলুদা বলল, আর ফেলুদা কষ্ট করে একটু হেসে একনলেজ করল। তারপর যখন বাড়ি ফিরল আর দেখা গেলো তোপসে জেল মাখা চুল নিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ভিডিও কল করছে, আর নেওয়া গেলনা। সেই যে বন্ধ করেছি আর খুলিনি। "Continue watching" এ পড়ে রয়েছে, রোজ চোখের সামনে এসে লোভ দেখায়, কিন্তু আপনার রিভিউ এর পর তো আর দেখবোই না। অরিন্দম শীল আবার বলছিলেন "লোকে বলছে সত্যজিতের পর বেস্ট ফেলুদা।" এসব লোক যে উনি কোথায় পান কে জানে। সত্যজিতের পর বলেছে এই ঢের।

    পিঁজরাপোল দেখেছি। ফেলুদার থেকে ভাল এটুকু বলতে পারি, কিন্তু সে বারটা এতটাই লো হয়ে গেছে যে তাতে কিছুই বলা হয়না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি বললেন বলে মনে পড়ল, ওপেনিং সিনের ওই যক্ষীর মাথা নিয়ে লোফালুফি খেলাটায় আমারও হৃদপিণ্ড মুখের কাছে চলে এসেছিল। তখন মনে হয়েছিল এটা কেউ করে নাকি। হাইন্ডসাইটে দেখছি ওই একটা মুহূর্তই থ্রিলিং, গোটা সিরিজে। কাজেই খুব একটা নিন্দে করতে পারছি না। বাচ্চাটাই বা সাইকেল নিয়ে ঢুকে পড়ল কী করে ওই প্রলয়ের মধ্যে? পাড়ার গলির মধ্যে খুনোখুনি হচ্ছে আর বাচ্চারা সাইকেল নিয়ে মাঝরাতে বেড়াচ্ছে? শুধু ওই "ফেলুদা?" ইন্ট্রোটার জন্য? যত্তসব।

      অরিন্দম শীলের ঘটনাটা শুনে একটু সমবেদনাই বোধ করছি। আমিও বেশ বড় বয়স পর্যন্ত ইয়ার্কি বুঝতাম না।

      পিঁজরাপোল এবং লো বার বিষয়ে হাই ফাইভ।

      Delete
    2. সরি, একটা পয়েন্ট মিস করে গেছিলাম। ওই বাঁ হাতে টায়ার ছোঁড়াটাও সামথিং এলস। ফেলুদা অ্যাকচুয়ালি প্রখর রুদ্র হয়ে উঠছে দিন কে দিন। খালি ট্র্যাপিজটাই যা শিখতে বাকি।

      Delete
  8. উপরের মন্তব্যের সাথে সহমত একেবারে, ওই যক্ষীর মাথা(?) নিয়ে ছোঁড়াছুড়ি ফেলুদা করতে পারেনা এই বোধটাই এদ্রর কারোর নেই। ওইটুকু দেখেই আমি আর দেখিনি। ফেলুদা আমি দুদিন হল আবার পড়ছিলাম, আবার পড়তে গিয়ে আর এদের এই ছ্যাবলামো গুলো দেখে যেটা মনে হয়েছে বারাবার সেটা উপরে বলেছ। ফেলুদার একটা ক্লাস আছে, তার একটা রুচি, একটা সুক্ষ্ম রসবোধ আছে। হয়তো ওই সময়টা ওই মধ্যবিত্ত রুচি মনন সবই হারিয়ে গেছে বলেই সিনেমাতেও সেই পিরিমিতি বোধটাও আসেনা।
    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. সবক'টি শব্দের সঙ্গেই একমত, প্রদীপ্ত। আমরা বদলে গেছি।

      Delete

Post a Comment