তিন্নির জন্য


ইয়ে দুখ কাহে খতম নহি হোতা বে-র মতো আমারও এখন ভাবখানা হচ্ছে ইয়ে পুরী ভ্রমণবৃত্তান্ত কাহে খতম নহি হোতা বে। আড়াই দিনে এত কিছু করেছি ভেবে নিজেই অবাক। যখন অ্যাকচুয়ালি ঘুরছিলাম তখন তো সময়টা ফস করে ফুরিয়ে গিয়েছিল। লিখতে গিয়ে এত স্মৃতি ঝাঁকানি খাওয়া বোতলের লিমকার মতো বেরোচ্ছে কেন, কোথা থেকেই বা বেরোচ্ছে জগন্নাথই জানেন। হয়তো আমিও জানি। বুড়ো হয়েছি তার আর একটা প্রমাণ। এক কণা কথা ফেনিয়ে ফেনিয়ে এক পাহাড় করে তোলার রাইট অফ প্যাসেজটাটা পেরিয়ে গেছি।

তিন্নি খুবই ভদ্র ননদ, সেটা মুখের ওপর সোজা বলতে পারছে না। ঘুরিয়ে তা দিচ্ছে, নতুন বছরের নতুন রেজলিউশনের পোস্টের জন্য। জিজ্ঞাসা করলাম তুই কি রেজলিউশন নিলি বল, তাতে দুঃখী গলায় বলল, সেটাই তো ঝামেলা হয়ে গেছে, তোরা কে কী রেজলিউশন নিলি জানালে তাদের মধ্যে থেকে একটাদুটো পছন্দ করে নিজের জন্য রাখতে পারি।

রেজলিউশন নিয়ে আমার এ বছর একটা স্ট্র্যাটেজি ছিল। রিভার্স সাইকোলজি। বছরের পর বছর আমাকে রেজলিউশনরা ঘোল খাওয়ায়, এ বছর রেজলিউশনদের আমি ঘোল খাওয়াব। প্রেমকে যেমন ঘৃণা দিয়ে ঘোল খাওয়ানো যায় না, উদাসীনতা লাগে, রেজলিউশনকে ঘোল খাওয়ানোর উপায় হচ্ছে আস্তে করে তাকে কাটিয়ে দেওয়া। তোমার যদি আমাকে ছাড়া চলে যায়, আমারও চলে যাবে। অত হাঁকপাকের কিছু নেই।

তবু একমাত্র ননদের মুখ চেয়ে রেজলিউশনের ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে দেখতে হল। এক তারিখ সকালে। এত শর্ট নোটিসে নিজের মাথা থেকে রেজলিউশন ভেবে বার করা শক্ত। দিল্লির এই ঠাণ্ডায় ভোর পাঁচটার সময় অন্ধকার ঘরে, পয়েন্ট ফাইভ ওয়াটের নীল আলোর মধ্যে শুয়ে কঠিন কাজ করা আমার রেজলিউশন নয়। হাতের কাছে সেকেন্ড বেস্ট অপশনটা কাজে লাগাতে হল।

তিন্নির ভাই। ঠেলা মেরে জিজ্ঞাসা করলাম, দু'হাজার চব্বিশে তোমার রেজলিউশন কী? পাঁচবার ঠেলার পর লেপের ভেতর থেকে ক্ষীণস্বরে শোনা গেল, সারভাইভ্যাল। নতুন বছর যে নতুন নতুন হরর উন্মোচন করবে, কোনওমতে সেগুলোকে ডজ করে দু'হাজার পঁচিশের এক তারিখের সকালবেলায় তোমার এই অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রাণটুকু কোনওমতে জিইয়ে রাখা।

বললাম, হ্যাঃ। এই তোমার নতুন বছরে চাওয়া? কিচ্ছু বদলাতে ইচ্ছে করে না? নিজেকে খুঁড়ে ভেতর থেকে নিজের বেটার সংস্করণ বার করে আনতে ইচ্ছে করে না? মনের গোপনে কোনও স্বপ্ন বুড়বুড়ি কাটে না? আমাকে বলতে হবে না, তবু বল।

উত্তর স্পষ্ট শোনার জন্য অর্চিষ্মানের মাথা থেকে লেপ টেনে সরালাম। অর্চিষ্মান এক চোখ খুলল। অন গড ফাদার মাদার, কুন্তলা, নো বুড়বুড়ি, নো গুড়গুড়ি। নাথিং। কারণ আমি জানি কিছু বদলাবে না। কারণ আমার অপারেটিং সিস্টেমটা সেম থাকবে। যে সিস্টেমটা নিয়ে আমি গত বছর, তার আগের বছর, তার আগের বছর, এমনকি কাল পর্যন্ত ফাংশান করেছি সেই ধুধধুড়ে অপারেটিং সিস্টেমে আজ সকাল থেকে সম্পূর্ণ একটা নতুন প্রোগ্রাম রান করানোটা পাগলের কল্পনা ছাড়া আর কিছু না। কাল পর্যন্ত টুইটারে ডুমস্ক্রোলিং আজ সকালে মেডিটেশন, এ হয় না। হয়নি কোনওদিন। যারা ভাবে হওয়া সম্ভব, তাদের চিকিৎসা দরকার।

বলে চোখ বুজে ফেলল। লেপ দিয়ে মাথাটা ঢেকে ফেলল। অল্প নাকও ডাকতে শুরু করল।

সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলাম। রেজলিউশন সরে গিয়ে মগজে আর একটা ভাবনা ঘুরতে শুরু করল। অপারেটিং সিস্টেমের অ্যালেগরিটা মচৎকার। আমি নিজে উপমাটুপমায় জঘন্য। অথচ আমি ঘটা করে কাড়ানাকাড়া বাজিয়ে লেখক হব বলে বুক বাজাচ্ছি আর ভালো ভালো অ্যালেগরি, মেটাফর, সিমিলি মাথায় আসছে তার যার যে সাচ্চা বাঙালির বাচ্চা হয়েও যে জীবনে এক লাইন ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর অ্যাটেম্পট নেয়নি। ফেসবুকে না, টুইটারে না, ওয়েবজিন, স্কুলের ওয়াল ম্যাগাজিনে না। গদ্য না, পদ্য না, হাইকু না, লিমেরিক না। এমনকি এক লাইন প্রেমপত্রও না।

কয়েক জন্ম আগের একটা ঘটনা মনে পড়ল। অবান্তরের প্রথম ব্লগ সংকলন বেরিয়েছিল সৃষ্টিসুখ থেকে। বইমেলায় বুক রিডিং না কীসের আয়োজন হয়েছিল। আমাকে আমার বই থেকে দুটো পিস রিডিং পড়ার স্লট দেওয়া হয়েছিল। আমি প্লেনে চড়ে সেই অসপিশাস ইভেন্ট অ্যাটেন্ড করতে গিয়েছিলাম। ভরদুপুরে কুটকুটে সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি পরে মেলায় ঘুরেছিলাম। একা না। বন্দ্যোপাধ্যায়কে মর‍্যাল সাপোর্ট দিতে করতে মিত্র ও সেনগুপ্তরাও সেজেগুজে গিয়েছিলেন।

গোটা অনুষ্ঠান চেয়ারে না বসে দোকানের সবথেকে পেছনের দরজার কোণা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল অর্চিষ্মান। যাতে ওর দিকে তাকিয়ে কেউ হাসলেই ও এক দৌড়ে সোজা নাকতলা গিয়ে থামতে পারে। ওর কাছাকাছি আরও এক ভদ্রলোক ঘুরঘুর করছিলেন। তিনিও বাংলা সাহিত্যের উপস্থিত সেবায়েতদের মধ্যে পড়েন না। নিতান্ত কাজের লোক। তামাশা চুকলে গেট বন্ধ করবেন জাতীয়। পাঠ বেশ খানিকক্ষণ চলার পর, ব্যাপারটা আর কতক্ষণ বাকি আছে সেটা মাপতেই বোধহয় অর্চিষ্মানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার পড়া হয়ে গেছে?

অর্চিষ্মান উত্তর দিয়েছিল, আমি কিছু লিখিনি।

ভদ্রলোক নাকি তিন মিনিট হাঁ বন্ধ করতে পারেননি। হাঁ-এর অংশটুকু অর্চিষ্মান রং চড়িয়েছে হতে পারে আমাকে খোঁচানোর জন্য, কিন্তু মুখে হাঁ না হলেও মনে মনে যে হাঁ হয়েছিলেন ভদ্রলোক সে নিয়ে আমার তখনও কোনও সন্দেহ ছিল না, এখন তো আরওই নেই। গল্প না লিখলে কেউ গল্পপাঠের আসরে যায় না।

যাই হোক, অর্চিষ্মান লেপ চাপা দিয়ে নাক ডাকতে শুরু করার পর লাগসই উপমা অ্যাপ্লিকেশনে আমার আর অর্চিষ্মানের ক্ষমতার ফারাক নিয়ে ভাবলাম। ভাবতে ভাবতে মন খারাপ হল, সেলফ পিটিতে মগজ ছেয়ে গেল, মনে হল বেঁচে থেকে লাভ নেই। অর্চিষ্মানের লেপ সরিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করলাম। অর্চিষ্মান এ বার দু'চোখ পুরো খুলে, আমার দিকে সোজা তাকিয়ে, স্পষ্ট কেটে কেটে বলল, কুন্তলা, আমি রেজলিউশন নিই না নিই, নতুন বছরে তোমার একটা রেজলিউশন নেওয়া আশু দরকার। হিংসুটেপনা কমানোর।

বলে এমন ভঙ্গিতে উল্টোদিক ফিরে শুল যে বুঝলাম নেক্সট পনেরো মিনিট ঠেলাঠেলি রিস্কি হতে পারে।

অর্চিষ্মানের উপদেশটা একেবারে আজাইরা না। আমার হিংসুটেপনা সত্যিই কমানো দরকার। একত্রিশে নতুন বছরের ইভ পালন করতে ফোর এস-এ গিয়েছিলাম। ডেফ কল-এর চেনা ঠেক। ভেবেছিলাম নির্ঘাত জায়গা পাব না। পৌঁছে বুঝলাম, আমাদের কাছে যেটা রাত, অর্থাৎ সাড়ে আটটা, পার্টি ক্রাউডের কাছে সেটা দুপুর, কাজেই তখনও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে। দোতলার কোণায় নিজেদের গুঁজে দিলাম। গুছিয়ে ঠাণ্ডা পড়েছিল। মোলায়েম হিট চলছিল। পরিবেশকরা ঝলমলে টুপি পরে পরিবেশন করছিলেন। নিচে একদল বিদেশী প্রবাসে বসে নতুন বছর আপ্যায়নের দুঃখ ভুলতে প্যাঁ প্যাঁ ভেঁপু বাজাচ্ছিলেন। আমরা আলুভাজায় ঠোকর মারতে মারতে লোক দেখছিলাম আর গপ্প মারছিলাম। আচমকা অর্চিষ্মান জিজ্ঞাসা করল, জীবনের কোন সময়টার কথা মনে পড়লে তোমার নস্ট্যালজিক লাগে?

ভেবে ভেবে বললাম গোটা দুই ফেজের কথা। অর্চিষ্মানও বলল। তার মধ্যে একটা আমাদের বিয়ের পরের কয়েক বছরের দিল্লিবাস। অর্চিষ্মানের মতে, ওটা ওর জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ নির্মল আনন্দের, স্ট্রেস ফ্রি ফেজ। দুজনে বসে বসে সেই সময়টার সকালবিকেল দুপুরসন্ধের কথা মনে করতে লাগলাম। আর আমি ক্রমশঃই বুঝতে পারলাম সময়টার প্রতি আমিও কী পরিমাণ নস্ট্যালজিক। প্রিয় নস্ট্যালজিয়ার অংশ হিসেবে অর্চিষ্মানের সঙ্গে কাটানো একটা সময়ের কথা আমিও বলেছি, কিন্তু সে সময় অন্য শহরের। যত আলোচনা এগোতে থাকল, দিল্লির ওই সময়টা যত আমার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। ঘুরছি, ফিরছি, অটো চড়ছি, জে এল এন স্টেশনে মেট্রো ঢুকছে। গলা উঁচিয়ে ঘাড় আঁকিয়েবাঁকিয়ে দেখার চেষ্টা করছি কামরার ভিড়ে অর্চিষ্মান আছে কি না। ট্রেন থেমেছে, ভিড় নেমেছে, ভিড় উঠেছে, দরজা বন্ধ হওয়ার টিং বেজেছে, এমন সময় দেখতে পেয়েছি কুড়ি হাত দূরে অর্চিষ্মানও প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। প্রাণপণে হাত নেড়ে দুজনে দুজনকে ট্রেনে উঠে পড়ার ইশারা করে দৌড়ে যে যার সামনের কামরায় উঠে পড়ছি, কানের চামড়ায় বন্ধ হওয়া দরজার ঝাপটা লাগছে। মুচকি হাসতে হাসতে ওদিক থেকে ভেস্টিবিউল পেরোতে পেরোতে অর্চিষ্মান আসছে, বত্রিশ পাটি বার করে এদিক থেকে ভেস্টিবিউল পেরোতে পেরোতে আমি এগোচ্ছি। 

ফোর এস-এর হট্টগোল, ভেঁপু, পেছনের টেবিলে ক্রমশঃ লাউড থেকে লাউডতর হতে থাকা মেয়েগুলোর হাসির ভেতর বসে আমি টের পেলাম ওই দাঁত বার করা তেত্রিশ, চৌত্রিশ, পঁয়ত্রিশের কুন্তলার প্রতি হিংসেয় আমার শরীরের ভেতরটা ভরে উঠছে। যে অর্চিষ্মানের নস্ট্যালজিয়ার অংশ হয়ে উঠতে পেরেছে। আমি পারিনি। অন্ততঃ এখনও জানি না পারব কি না কোনওদিনও।

অন্যকে হিংসে অনেকেই করে, নিজেকেই নিজে হিংসে করতে অর্ডার দিয়ে বানানো হিংসুটে লাগে। নতুন বছরে হিংসে কমানোর রেজলিউশন নেওয়া যার পক্ষে একটুও অযৌক্তিক নয়।

একটা রেজলিউশন জোগাড় হল। হিংসুটেপনা কমানোর। খুবই শক্ত রেজলিউশন। এক, হিংসুটেপনা মাপা যায় না। পয়লা জানুয়ারি দু'হাজার চব্বিশে হিংসের স্কেলে আমি কোথায় না জানলে একত্রিশে ডিসেম্বর দু'হাজার চব্বিশে হিংসের স্কেলে উঠলাম না নামলাম মাপব কী করে? তাছাড়া চাইলেই কি হিংসের স্কেলে ওঠানামা করা যায়? শিশুদের শুনেছি প্রেমভালোবাসা অ্যাটাচমেন্ট ইত্যাদি ভালোভালো ইমোশন জন্মানোর আগে হিংসে জন্মায়। বয়সের গুণতি মাস পেরিয়ে বছরে পৌঁছনোরও বেশ আগে। কাজেই হিংসে আমার ব্যক্তিত্বের শাঁস। অর্চিষ্মানের ভাষায় অপারেটিং সিস্টেমের অংশ। সেটাকে কি এত সহজে বদলানো যায়? আদৌ? অফ কোর্স, আই ক্যান অলওয়েজ ফেক ইট, টিল আই মেক ইট। একই কথা বাংলায় অনেক সুন্দর করে বলেছিলেন চোখের বালি-র অন্নপূর্ণা। "যেন ভুলিয়াছিস এই ভাবটা বাহিরে প্রাণপণ রক্ষা করিতে হইবে - আগে বাহিরে ভুলিতে আরম্ভ করিস, তাহলে ভিতরেও ভুলিবি।"

দু'হাজার চব্বিশে বুকের ভেতর টের পেলেও হিংসুটেপনার কথা মুখে আনব না। দু'হাজার পঁচিশে না হলেও তিরিশে পৌঁছে হয়তো বুকের ভেতরেও একটু হিংসুটেপনা কমবে।

নিচ্ছিই যখন, আর একটাও নিই। মিষ্টি ছাড়ার। চা কফিতে চিনি খাই না কুড়ি বছর হয়ে গেল কিন্তু রসগোল্লা, সন্দেশ, রাবড়ি, কেক, সেগুলো এবার বিসর্জন দেওয়ার সময় এসেছে। ডাক টের পাচ্ছি বুকের ভেতর।

কাজেই তিন্নি, আমার তরফ থেকে দুটো রেজলিউশনের  আইডিয়া দিতে পারি তোকে।

এক, মিষ্টি ছাড়ব।

দুই, হিংসুটেপনা ছাড়ব। ওয়েল, কমাব। অন্ততঃ ভান করব যে কমিয়েছি।

একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমার সঙ্গে এক প্রফেশনাল কমেডিয়ান, তাও আবার সাহেব কমেডিয়ানের কথোপকথন হয়েছিল। তিনি আমাকে প্রথম তিনের মহিমার ব্যাপারটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। চুটকিতে যে একটা বারে প্রত্যেকবারই একজন বাঙালি, একজন উড়িয়া আর একজন পাঞ্জাবি ঢোকেন (ওঁর ক্ষেত্রে একজন ইংরেজ, একজন ফ্রেঞ্চ, একজন জার্মান), কমেডিয়ানের মতে ব্যাপারটা ফ্লুক না।

জোকস অলওয়েজ সাউন্ড বেটার ইন থ্রিজ। পরে ইউটিউবের হোম ডেকরেশনের টিপসেও দেখেছি, ডেকোরেটররা সর্বদা তিনের ওপর জোর দিচ্ছেন। দেওয়ালে তিনটে ছবি বা গ্যালারি ওয়ালে তিনের গুণিতকে, কফিটেবিলে তিন রকম হাইটের তিনটে শো পিস, বুকশেলফে তিনটে বই। তারও পরে রাইটিং-এর টিপস অ্যান্ড ট্রিকসেও তিনের মর্ম বোঝানো হয়েছে। যার প্রয়োগ আগের বাক্যে এবং এই প্যারাগ্রাফেও করার চেষ্টা করেছি।

কাজেই দুটো রেজলিউশন নেওয়ার বদলে তিনটে নেব। দুটো ছাড়ার রেজলিউশন ব্যালান্স করতে তিন নম্বরটা, ঠিক ধরার নয়, বাড়ানোর নেব।

দু'হাজার তেইশে, অনেক বছর পর, বইয়ের থেকে আমি মানুষের সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছি। যতটা কল্পনা করেছিলাম বিষয়টা তার থেকেও বেশি অসুবিধের। দু'হাজার চব্বিশের আমার স্লোগান, মানুষ কমাও বই বাড়াও।

নেব না নেব না করেও তিনটে রেজলিউশন নেওয়াই হয়ে গেল। দেখা যাক বছর শেষে কী দাঁড়ায়। আপনারা আমার মতো রেজলিউশন নিয়ে বা অর্চিষ্মানের মতো না নিয়ে, যার যার নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম মেনে, দু'হাজার চব্বিশের যাবতীয় হর্ষ ও হরর জাপটে  আপনাদের বেস্ট জীবনটা বাঁচুন। আমি আপনি অর্চিষ্মান তিন্নি, আমরা সবাই এমন বাঁচি যেন অনেকদিন, অনেকবছর পর দু’হাজার চব্বিশের আমিটার দিকে ফিরে তাকালে আমাদের সবার অল্প অল্প হিংসে হয়।

হ্যাপি নিউ ইয়ার।



Comments

  1. আমি চা কফি তে চিনি ছেড়েছি বছর তিনেক, কাজেই রাবড়ি রসগোল্লা কেক ছাড়ার সময় দেরী আছে মনে হয় , অন্ততঃ নিজের ইচ্ছেয় , হাহা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ছাড়বি কেন, ঊর্মি। আমি ছাড়ছি কিছু একটা ছাড়তে ইচ্ছে করছে তাই। মিষ্টিটাকেই সবথেকে দুর্বল প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে তাই ওকেই ল্যাং মারছি। আর কোনও কারণ নেই।

      Delete
  2. মানে, বলছি ... মিষ্টি পুরোটাই ছেড়ে দেবে? হপ্তায় একটা আইস্ক্রিম, রোববার সকালে একটা জিলিপি, শীতের সন্ধ্যায় হট চকোলেট -- সব বাদ?!
    এই অসাধ্য সাধন রেজোলিউশনের জন্য কুর্ণিশ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসাধ্য সাধন করি না, বিম্ববতী। যেগুলো সাধ্যের মধ্যে সেগুলোর ওপর যত তড়পানি। আর তুমি যে রকম বললে, ও রকম করে আমি ছাড়তে পারি না। আমাকে টোটাল স্টপ করতে হয়। সিগারেট ছাড়ার মতো।

      কিন্তু তোমার মিষ্টির নমুনা দেওয়া বাক্যটা বাঁধিয়ে রাখার মতো। যদি কোনওদিন মিষ্টির জন্য মন খারাপ করে, ফিরে এসে এই লাইনটা পড়ব।

      ছোট্ট ইরাকে নতুন বছরের অনেক আদর।

      Delete
  3. হ্যাপি নিউ ইয়ার আপনাকেও...!

    আপনার এক আর তিন নম্বর রেজোলিউশন জিন্দাবাদ, আমিও মনে মনে ধার নিলাম। আর তিন নম্বর যদি নিতেই হয়, তাহলে রেজোলিউশন ধরে রাখার রেজোলিউশন নিতে হবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, রেজলিউশন ধরে রাখার রেজলিউশনটা ভালো বলেছেন। আমি একটা টিপস দিতে পারি। ব্যাপারটা হোমওয়ার্কের মতো করে নিন। সপ্তাহে একটা বই। সহজ কিন্তু স্ট্রিক্ট। তাহলে শুরু করে ফেলে রাখার অসুবিধেটা হবে না।

      সরি, নতুন বছরেই জ্ঞান দিয়ে দিলাম। কিছু মনে করবেন না। আপনাকে আর আপনার পরিবারকে নতুন বছরের অনেক ভালোবাসা, ভালোচাওয়া।

      Delete
  4. 3 te resolution besh bhaalo.
    mishti niye bishesh kichhu bolar nei. Non Veg chharte parle shob kichhu chaarte parbe,
    aar manush-er theke boi (ba onno je kono living/non living )kichhur shonge time katano emnitei better lagaar kotha...
    baki roilo hingshute pona.... ota nahoy oi ja bolle ektu bhaan kore katiye diyo...tarpor hoye jaabe..
    ami nije koek bochhor ageyr ami ke hingshe kortam....oi thik je rokom tumi bolle...kintu ghute ki aar beshi khon gobor ke hinsgshe korte pare? jaane to koek bochhor por oi ami tar ki dosha hobe..

    jai hok...Happy 2024...bishesh kichhu bhalo hok ki na hok, bhabte khoti ki

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখেছ, তোমরা সকলেই কেমন ভালো ভালো উপমা দাও। এই ঘুঁটে গোবরের উপমাটা, জানা সত্ত্বেও আমার হাত থেকে বেরোত না।

      হিংসের ব্যাপারটা বলি, ভান করেও যদি জীবন কাটে তাতেও অসুবিধে নেই। আমার মনে হয়। অনেক কিছু নিয়ে ভান করি, সভ্য সমাজে থাকার জন্য। তার জন্য নিজেকে বেশি নম্বরও দিই না, কারণ আমার মতে সমাজের সুবিধে নিতে গেলে ভান করাই ভার্চু। কাজেই ভেতর থেকে হিংসুটেপনা না গেলেও, ওপর থেকে যদি যায় দ্যাটস গুড এনাফ ফর মি।

      তোমাকেও নতুন বছরের অনেক অনেক ভালোচাওয়া। সব ভালো হবে।

      Delete
  5. আমার আজ পর্যন্ত কোনো অকেশনেই কোনো রেজলিউশন নেওয়া হয়নি, এতটাই আলসে আমি। নেবো হয়তো কোনোদিন, পসিবিলিটি অলওয়েজ খোলা রাখতে হয়।

    "সারভাইভ্যাল" রেজলিউশনের প্যারাগ্রাফটা পড়ে প্রায় শব্দ করেই হেসে ফেলেছি।

    অনেকটা বিলেটেড হ্যাপি নিউ ইয়ার!

    ReplyDelete
    Replies
    1. নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা, রাজর্ষি। আপনার আর আপনার ভালোবাসার মানুষদের জন্য। খুব ভালো থাকবেন।

      Delete
  6. মিষ্টি ছাড়া খুব সোজা- আমি অনেকবার ছেড়েছি| আমার মেয়ে টোটাল স্টপ করেছে কয়েক বছর আগে, মাত্র একবারই| ওকে নমস্কার! তোমার resolution এর জন্য শুভেচ্ছা রইলো|
    তোমার নানারকম হাউসে খাওয়ার গল্পগুলো মনে পড়লো কদিন আগে কলকাতায় সিকিম হাউস আর মেঘালয় হাউস দেখে| ওগুলোও নস্টালজিক তাই না?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এটা ভালো বলেছেন, অমিতা। আমি যেমন ফোনে গেম খেলা রোজ রাতে একবার করে ছাড়ি 🥺

      আপনার মেয়ের সঙ্গে আমার মিল পাচ্ছি অল্প অল্প। দুজনেই ছাড়াছাড়িতে ওস্তাদ।

      স্টেট ভবন ক্যান্টিনের নস্ট্যালজিয়াটা একেবারে অব্যর্থ মনে করিয়েছেন। আপনার কমেন্টটা পড়ে থেকে ছবিগুলো ভাবছি। লাঞ্চে বেরিয়ে এই হাউস সেই হাউস। দূর থেকে অর্চিষ্মান হেঁটে হেঁটে আসছে রোদের মধ্যে দিয়ে। চন্দ্রিলের লাইনটা ক্রমাগত বাজে আজকাল মাথার ভেতর, জানেন। "সে রোদ্দুরের স্মরণসভাও লিখতে হল"।

      Delete

Post a Comment