পুরী ৫ঃ চিলিকা ঘোরা ও ফেরা


বাবা শিখিয়েছিলেন বাইরে গিয়ে গাড়ি, বাস, অটো যা-ই চড়বি, নম্বরটা সবার আগে মুখস্থ করবি। আমাদের বোটের নম্বরও মুখস্থ করেছিলাম, এখন মনে নেই। এখন শুধু মনে আছে নৌকোর মুখে বাঁধা লাল চেলি, ঝিরি ঝিরি সোনালি পাড়। নৌকোয় নেমে ছাউনির তলায় বসলাম। অর্চিষ্মান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জেটির ওপর ডাঁই করা লাইফজ্যাকেটের দিকে থটফুল দৃষ্টিপাত করতে লাগল। জ্যাকেটগুলো যা ধুলোধূসরিত, ডুবে গেলেও আমি ও জিনিস গায়ে ঠেকাব না। পূর্ণচন্দ্র বললেন, এ হাঁটুজল, পড়লেও ডুববেন না। কিন্তু এ সাঁতার না জানা শহরের ছেলে। বলল, এমারজেন্সি পারপাসে থাক। পূর্ণচন্দ্র উবু হয়ে পাহাড় ঘেঁটে দুটো জ্যাকেট, যাদের কমলা রং তখনও বোঝা যাচ্ছে, বেছে দিলেন। পরার দরকার নেই, সঙ্গে রেখে দেন। মাঝি ছেলেটা একটা লম্বা বাঁশ দিয়ে নৌকো জলে ঠেলে, লাফ দিয়ে নৌকোয় উঠে আমাদের মাঝখান দিয়ে স্প্রিন্ট টেনে অপর প্রান্তে পৌঁছে গেল। সে প্রান্তে একটা লম্বা ডাণ্ডা, মাথায় সুদর্শন চক্র সাঁটা। এঞ্জিন চালু করতে চক্র বনবন ঘুরতে শুরু করল। আস্তে করে চক্রটাকে জলের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে হাল ধরল ছেলেটা। পূর্ণচন্দ্র চেঁচিয়ে বললেন, সব ভালো করে দেখিয়ে দিবি, নো কমপ্লেন।


প্রথম দ্রষ্টব্য ক্র্যাব আইল্যান্ড। আমাদের লাল চেলি বাঁধা নৌকো পারে ঠেকতেই একজন দৌড়ে এলেন, দুই হাতে দুটো ছোট গামলা। একটা গামলার ভেতর বালি, ওপরে জাল। বালির ওপর পাঁচটা কাঁকড়া তুরতুর বাইছে। জোয়ারভাঁটার কী একটা ব্যাপার আছে, কোনও একটা ঘটলে কাঁকড়ারা দলে দলে তটে উঠে আসে। আমরা ঠিক উল্টো সময়টায় গেছি যখন কাঁকড়ারা দলে দলে তটে উঠে আসে না, কাজেই গামলা।

ভদ্রলোক কাঁকড়া দেখিয়ে বর্ণনা শুরু করলেন।

ঘাবড়ে গেলে আমি চুপ করে যাই আর অর্চিষ্মান প্রশ্ন শুরু করে। এটা কী ব্যাপার? ভদ্রলোক বললেন, কেন? ক্র্যাব আইল্যান্ডে এসেছেন, ক্র্যাব দেখছেন? অর্চিষ্মান ওর আলট্রা শান্ত গলাটায় বলল, এভাবে দেখতে হবে? ন্যাচারাল কাঁকড়া দেখানোর কথা তো।

এইবার ভদ্রলোক একটা ফিলজফি এইট হান্ড্রেড লেভেলের প্রশ্ন ছুঁড়লেন। কাঁকড়া গামলার বাইরে থাকলে ন্যাচারাল আর গামলায় থাকলে ন্যাচারাল নয়? চিড়িয়াখানায় যে বাঘ দেখতে যান সেগুলো কি সব আনন্যাচারাল?

কথোপকথনটা বেশিক্ষণ চললে আমাকে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই চিলিকায় ঝাঁপাতে হত, থ্যাংকফুলি ভদ্রলোক কাঁকড়া ছেড়ে ঝিনুকের গামলায় মন দিলেন। ব্যাপারটা মারাত্মক অ্যাবরাপ্টলি ঘটল। একটা ঝিনুক তুলে নিয়ে লুঙ্গির গিঁটে গুঁজে রাখা একটা ছোট ডাণ্ডা বার করে ঠাঁই করে ঝিনুকটা ফাটিয়ে দেখাতে লাগলেন ভেতরে কেমন করে মুক্তো পাওয়া যায়।

আমরা চমকে উঠতে উঠতেই ভদ্রলোক আরেকটা ঝিনুক তুলে নিয়েছেন এবং আবার ঠাঁই শব্দে ফাটিয়ে ফেলেছেন। অর্চিষ্মান এই শো এনজয় করার অবস্থায় ছিল কি না জানি না কিন্তু আমি আধমরা হয়েছি বুঝতে পেরেই ও হয়তো 'থামুন থামুন' বলে উঠল। আমিও সামলে নিয়ে প্রতিবাদে যোগ দিলাম। ঝিনুকগুলো হয়তো মৃতই ছিল, কিন্তু সেক্ষেত্রেও সেগুলোকে ফাটিয়ে ফাটিয়ে মুক্তো উৎপাদনের প্রণালী প্রত্যক্ষ করার কৌতূহল আমার নেই। ভদ্রলোক ঠাণ্ডা চোখে পাঁচ সেকেন্ড তাকিয়ে কাঁকড়া আর ঝিনুকের গামলা নিয়ে হাঁটা দিলেন। 


পরের দ্রষ্টব্য শুশুক। শুশুক আগে স্বচক্ষে দেখিনি কিন্তু শুশুকের বুদ্ধির দৌড় নিয়ে নানা অলৌকিক গল্প শুনেছি। বুদ্ধিমান প্রাণীদের গল্প আমাকে সর্বদাই আকৃষ্ট করে। সবাইকেই করে আই গেস। সেই হাতির গল্প তো সবাই জানে। মাহুত হাতির মাথায় নারকেল ফাটিয়েছিল বলে অনেক বছর পর যখন সবাই, বিশেষ করে সেই মাহুত, গোটা ঘটনাটা ভুলে গেছে, সেই হাতি সেই মাহুতকে খুঁজে বার করে মাহুতের মাথায় নারকেল ফাটিয়েছিল। হাতির বুদ্ধির কিউট গল্পও পড়েছি লীলার বইতে। ছানা হাতি জঙ্গলের ধারে শেড বা দোকান বা বড় ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করত। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে সাইকেলে চড়ে লোক গেলেই বেরিয়ে গুঁতো মেরে সাইকেলশুদ্ধু আরোহীকে ধরাশায়ী করে ছোট ল্যাজ তুলে দৌড়ে আবার লুকিয়ে পড়ত।

এ রকম আরেকটা বুদ্ধিমান প্রাণীর গল্প পড়েছিলাম, অক্টোপাস। বিশ্বকাপে ভবিষ্যদ্বাণী করা বুদ্ধিমান অক্টোপাস পল না, আরেকজন। এ নাকি ঘুমোনোর সময় কেউ ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে একটা শুঁড় বাড়িয়ে খটাস করে সুইচ নিভিয়ে আবার নিদ্রা যেত।

ডলফিন নাকি বুদ্ধিতে প্রায় মানুষের সমান। তার প্রমাণ ইউটিউবের রিলে প্রায়ই পায়। একটা রিলে দেখেছিলাম একটা পুলে অনেকগুলো ডলফিন থাকে। ডলফিনদের দেখাশোনার জন্য স্টাফ আছে। একটি বিশেষ নারী ডলফিন, অন্য স্টাফেরা খাবার দিতে ঢুকলে ঘাপটি মেরে থাকে। একটি সুপুরুষ তরুণ অ্যাটেন্ডেন্ট ঢুকলেই টপ স্পিডে দৌড়ে, সাঁতরে আই গেস, পুলের ধারে এসে সারা শরীর আঁকিয়েবাঁকিয়ে আকুলতা প্রকাশ করে। প্রায় জল থেকে উঠে পড়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে। ক্যাচ হচ্ছে, সুপুরুষের গার্লফ্রেন্ডও ওই অফিসেই কাজ করে। সেই মেয়েটি খাবার দিতে এলে এই নারী ডলফিনটি জল ছিটিয়ে মেয়েটিকে গোবরভেজা ভেজায়।

এইরকম হিংসুটে, পজেসিভ ডলফিনের পাশাপাশি অ্যাকোয়ারিয়ামে কাচের এপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বালকবালিকাদের হাইফাইভ দেওয়া ভালো ডলফিনও দেখেছি। সবরকম দেখা কাটাকুটি হয়ে ডলফিন সম্পর্কে একটা ভারসাম্যে পৌঁছেছিলাম, যেটা মারাত্মক টলে গেছে একটি তথ্যে। ডলফিনদের মধ্যে গ্যাংরেপ নাকি একটি প্রচলিত যৌনাচার। একটি মহিলা ডলফিনকে কোণঠাসা করে একদল পুরুষ ডলফিন তাঁদের যৌনচাহিদা চরিতার্থ করে। কনসেন্ট ফনসেন্টের কোনও গল্পই নেই।

এইবার, ব্যাপারটার অনেক রকম বিশ্লেষণ হতে পারে। ডলফিনদের অ্যাকশনটার না, ডলফিনদের অ্যাকশন শুনে আমার রিঅ্যাকশনটার। ডলফিনদের অ্যাকশনটা আমি আমার সেই ডিকশনারি দিয়ে জাজ করছি যাতে গ্যাং, রেপ, কনসেন্ট এই প্রতিটি শব্দ তাদের নিজস্ব দ্যোতনা নিয়ে বিরাজ করছে। আমার লিঙ্গপরিচয়ও সে রিঅ্যাকশনে কনট্রিবিউট করেনি এটা হতে পারে না।

সেটা করার কথা না। আমার ক্লাস নাইন নাগাদ, যে শর্টকাট গলি দিয়ে বিদ্যালয়ের ফরটি পারসেন্ট বালিকা যাতায়াত করত, সেই গলিসংলগ্ন মাঠে একটা "পাগল" কিছু না পরে দাঁড়িয়ে থাকত। সেই একই মাঠে অন্ততঃ সাতটা গরু কিছু না পরে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেত। কিন্তু "পাগল" এবং গরুর প্রতি আমাদের, দিদিভাইদের, পাড়ার লোকদের রিঅ্যাকশনে একশো আশি ডিগ্রি তফাৎ হয়েছিল। কারণ আমরা সবাই জানতাম আমাদের সেন্সিবিলিটি এবং সামাজিক নিয়মকানুন গরুদের নিয়মকানুনের থেকে আলাদা এবং একপক্ষের অন্যপক্ষের নিয়ম মানার কোনও দায় নেই।

একই যুক্তিতে ডলফিনদের যৌনাচারকেও আমার সেন্সিবিলিটি দিয়ে বিচার করা অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক হতে পারে। কিন্তু যদি বলি যে ডলফিনদের গ্যাংরেপের ব্যাপারটা কানে আসার পর থেকে ডলফিনদের প্রতি আমার মনোভাবে বদল ঘটেনি ডাহা মিথ্যাচার হবে। যে চোখে মানুষকে দেখি (নিজেকেও বাদ দিই না), সেই চোখে ডলফিনকে দেখতে শুরু করেছি। স্বচক্ষে ওই সিচুয়েশনের সামনে পড়তে হবে না মোটামুটি সেই কনফিডেন্স নিয়েই শুশুক পয়েন্টের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।



আদিগন্ত ধূসর জলের ভেতর লম্বাগলা সারস। জেগে আছে না ঘুমোচ্ছে বোঝা মুশকিল। সারসের ঠ্যাঙের এতখানিই জেগে আছে, পূর্ণচন্দ্রের দাবির সত্যতা প্রমাণ হচ্ছে। এ জলে পড়লে ডুবব না। বেশিরভাগ বোটই ফিরছে। ঝাঁকে ঝাঁকে বোটের ইঞ্জিনের আওয়াজে প্রাণপাখি ওড়ার উপক্রম। আকাশেও অনেক রকম পাখি উড়ছে। পাখিটাখি একেবারে চিনি না, কাক চড়াই শালিখ শকুন লেভেলের ছাড়া। কাজেই এই সব রঙিন ঠোঁট, রঙিন পালকওয়ালা পাখিদের নাম ধরে ডাকার সাহস করছি না। কয়েকটা বোট থেকে দয়ালু দর্শনার্থীরা খাবার ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছেন আর অমনি হল্লা করে সব পাখি বোটনিকটস্থ জলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে দৃশ্যে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছিলাম। চিপস কেনার দূরদর্শিতাটা দেখানো উচিত ছিল। অর্চিষ্মান ছবি তুলে মনোরঞ্জনের চেষ্টা করছিল। এই পোস্টের সব ছবিই ওর তোলা। এমন সময় দূরে জলের ভেতর কতগুলো ডাণ্ডা পোঁতা দেখা গেল। ডাণ্ডা ঘিরে ঘুরঘুর করছে কয়েকটা বোট। আমাদের কর্ণধার এইদিকে, ওইদিকে, চিৎকার শুরু করলেন। এবং বুঝলাম আমি আবার সেই চেনা বিপদটায় পড়েছি।

চশমার পাওয়ার হাই বলেই হোক বা ট্যালা বলে, ঘাড়ের একেবারে ওপর, খুব প্রকট, খুব সশব্দ কিছু না ঘটলে আমি মিস করে যাই। তেতাল্লিশ বছরে একটাও উল্কাপাত দেখেছি মনে পড়ে না, কারণ আমার রেজিস্টার করার পক্ষে ব্যাপারটা টু মাচ দ্রুততায় ঘটে। টিভিতে যেমন দেখায়, দুধসাদা ডলফিনরা নীল জল থেকে লাফিয়ে উঠে আমাকে হাই ফাইভ না দিলে যে আমার দ্বারা ডলফিন দেখা না হয়ে উঠতে পারে সে সংশয় ছিলই। আবার ওই ইনফরমেশনটা পাওয়ার পর ডলফিনের হাইফাইভ পাওয়া আদৌ সৌভাগ্যজনক হবে কি না সে নিয়েও সংশয় ছিল।

যেটা নিয়ে সংশয় ছিল না সেটা হচ্ছে আমার থেকে অর্চিষ্মান ডলফিন আগে দেখতে পাবে। পেলও। মাঝি ছেলেটি ততক্ষণে চুপ করে গেছে। কেনই বা খামোকা গলায় রক্ত তুলবে। আমাকে ডলফিন দেখানোর ওর তো কোনও পারসোন্যাল ইন্টারেস্ট নেই। বাকি যাত্রীরা ডলফিন দেখতে না পেলেও ওর যতখানি যাবে আসবে, আমি দেখতে না পেলেও এক্স্যাক্টলি ততখানিই যাবে আসবে।

থ্যাংকফুলি, এত কিছুর পরেও অর্চিষ্মান এখনও আমার প্রতি অতখানি বিগতস্পৃহঃ হয়ে ওঠেনি। জলের বোতল নামিয়ে রেখে, টলমল বোটে দাঁড়িয়ে উঠে, বাঁ হাতে আমার ঘেঁটি শক্ত করে ধরে ডান হাতের তর্জনী বাড়িয়ে বলল, সোজা তাকিয়ে থাক। এইবার ছেলেটা যেমন হাল ধরে নৌকো ঘোরাচ্ছিল, অর্চিষ্মান আমার ঘেঁটি ধরে তেমন ঘোরাতে লাগল আর আমি স্পষ্ট দেখতে লাগলাম, চকচকে কালো পিঠের শুশুকরা ঘোলা জলের মধ্য থেকে ঘাই দিয়ে উঠছে। উঠেই ডুব দিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। একবার তো একসঙ্গে দুটো শুশুককেও একসঙ্গে দেখলাম। শুশুকদের মসৃণ, পিচ্ছিল পিঠে চিকচিকে রোদটোদ দেখে মনটা কেমন নরম হয়ে এল। ভগবানের জীব। দোষে গুণে মানুষ। দোষে গুণে শুশুক। যদি নিজেকে দেখে ভয় না পাই, তাহলে শুশুকদের দেখে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

অ্যানথ্রোপোমরফিজমের অ্যাটাকে মানসচক্ষে দেখলাম জলের নিচে ডলফিনদের আস্ত পাড়া। পাড়ার সবাই চিৎপাত হয়ে দুপুরের ভাতঘুম পোহাচ্ছে আর একেকজনকে ঠেলা মেরে ওপরে পাঠাচ্ছে, যে এবার তোর পালা। তখন সে ধুত্তেরি বলে উঠে এসে দুবার অতিকষ্টে ডিগবাজি খেয়েই আবার নিচে চলে যাচ্ছে। পাশের শুশুককে লাথি মেরে উঠিয়ে বলছে, যা যা, ডিগবাজি খেয়ে আয়। ছাগলগুলো এখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে আর হাততালি দিচ্ছে।

শুশুকদর্শনের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফিরতি যাত্রা শুরু হল। নেক্সট একঘণ্টা ধূসর জলের মরু পেরোনোর জন্য তৈরি হলাম। বাঁশে মাথা ঠেকিয়ে হাল ছেড়ে বসেছি, টুপিটা সেটাও কমফর্টেবলি করতে দিচ্ছে না।

কিন্তু সবাই জানে যখন ওয়ার্স্ট-এর জন্য প্রিপারেশন থাকে তখনই বেস্ট জিনিসপত্রগুলো ঘটতে থাকে। এই বেস্ট জিনিসটাও, বিরক্তিকর রকম পতিব্রতা শোনালেও, অর্চিষ্মান-প্রণোদিত। ছাউনির বাইরে, নৌকোর মুখের কাছাকাছি, সম্ভবতঃ আমাদের মতো আনফিট যাত্রীদের ওঠানামার সুবিধের জন্যই, দুটো তক্তা পাতা ছিল। অর্চিষ্মান গিয়ে একটা তক্তার প্রান্ত থেকে হাঁটু ঝুলিয়ে শুয়ে পড়ল। একটু পরেই চোখ ঝলসে গিয়ে উঠে আসবে ভেবে অপেক্ষা করলাম। অর্চিষ্মান উঠে আসার নামগন্ধ করল না। উল্টে  মিনিট দশ পরে ঘাড় উঁচু করে আমাকে বলল, এখানে এসে শোও।

পাশের পাটাতনটায় বডি ফেললাম। আমার পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চি শরীরের পা, ঝুলিয়ে শোওয়ার উপযুক্ত নয়, কাজেই পাটাতনের ওপর বাবু হয়ে বসে, তারপর শুলাম। শোয়ামাত্র মাত্র নীল আকাশ চোখের সামনে উন্মোচিত হল।

জীবনে এমন অনেক জিনিস থাকে যেগুলো সর্বক্ষণ মিস করি। বুকের মধ্যে একেকটা মানুষের শেপের গর্ত হয়ে গেছে চিরদিনের মতো, সর্বক্ষণ তারা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আবার এমন অনেক জিনিস আছে, যাদের অনুপস্থিতি টের পেতে গেলে তার কাছে এসে দাঁড়াতে হয়।

প্রকৃতি যেমন। বড় গাছের ছায়ায় যতবার বসি, প্রতিবার, প্রতিবার টের পাই, যে ঠিক এই কাজটা করারই দরকার ছিল আমার। অনেকদিন আগে। রোজ করার দরকার ছিল।

যে মুহূর্তে নৌকোয় অর্চিষ্মানের পাশে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুলাম, নীল আকাশ নয়নপথে উন্মুক্ত হল, মনে পড়ল এই আকাশ, টোয়েন্টি ফোর সেভেন, ঘুমিয়ে ও জেগে ঘুমিয়ে থাকার প্রতিটি মুহূর্তে আমার দৃষ্টির ঠিক কয়েক ইঞ্চি ওপরে অপেক্ষা করে। চোখ তুলে দেখি না। দেখিনি কতদিন।

অথচ দেখার দরকার থাকে।

অর্চিষ্মানের চোখ কেন ধাঁধাচ্ছে না বুঝলাম। রোদের তেজ কমে এসেছে। নীল আকাশে সাদা সাদা ছেঁড়া মেঘের গুচ্ছ। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হচ্ছে নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। যেই না ডানদিকে, বাঁদিকে মাথা ঘোরাচ্ছি, সাঁই সাঁই করে গাছপালা সরে সরে যাচ্ছে। আবার ঘাড় সোজা করলেই অচঞ্চল আকাশ। নিথর নৌকো। জীবনের পারস্পেকটিভ নিয়ে গভীর উপলব্ধি খুঁজে বার করার ধান্দায় ছিলাম, তারপর নিজেকে ধমকে আকাশ দেখায় কনসেনট্রেট করলাম। 


একজায়গায় অনেকগুলো বোট গজল্লা করছিল। হয়তো কোনও পয়েন্ট। খুব সম্ভব কোনও পয়েন্ট। কারণ যদিও প্যাকেজ ছিল চারটে দ্রষ্টব্যের, ফাইন্যালি আমাদের তিনটে দ্রষ্টব্য দেখানো হয়েছিল। ঘাঁটালাম না। অর্চিষ্মানও ঘাঁটালো না। বোঝাই যাচ্ছে গুঁতোগুঁতি করে দ্রষ্টব্য দেখার থেকে আকাশের তলায় শুয়ে থাকাটাই ওর কাছেও বেশি পছন্দের।

শেষমেশ একটা তীরে এসে বোট ভিড়ল। ততক্ষণে আমার ভেতর স্থিতিজাড্য সেট ইন করেছে, ভাবলাম অর্চিষ্মানকে বলি তুমি গিয়ে দেখে আসো কী দেখার। মাইন্ড চেঞ্জ করলাম। নামলাম। এখানে কী দেখার তখনও শিওর নই। কয়েকটা ঝুপড়িতে চেয়ার পাতা। দড়িতে টাঙানো লালনীল পেটমোটা চিপসের ব্যাগ। লালহলুদ ম্যাগি। অনেকক্ষণ কিছু খাইনি। চোখ সরিয়ে হেঁটে চললাম। হাঁটতে হাঁটতে ঢেউয়ের শব্দ কানে এল। তারপর চোখের সামনে সমুদ্র উন্মুক্ত হল। 



ঢালু তট, সোনালি বালি, নীল সাদা ঢেউ। গর্জন। হাওয়ায় নোনা গন্ধ। কী যে সুন্দর। কী যে শান্তির। এখানে একটাই ঝুপড়ি। দোকানের লাল রঙের নীলকমল চেয়ারে বসে কফির অর্ডার দিলাম। কয়েকজন টুরিস্ট সমুদ্রের কাছে নেমে খুব হল্লা করছেন। জোয়ান স্বামী, ফাটোফাটো যুবতী স্ত্রীকে পাঁজাকোলা করে ছবি তুলছেন। দুটো কুকুর ঘুরঘুর করছিল। সবাই মিলে পার্লে জি খেলাম। তরুণ বাবা (জোয়ান স্বামীর থেকে আলাদা একজন) কোলে গেঁড়ি শিশু নিয়ে চড়াই তট ভেঙে উঠে এলেন। লোকে কত ফ্রেন্ডলি হয়, গেঁড়ির কিউটনেসে মুগ্ধতা প্রকাশ করতেই আমার কোলে তাকে ট্রান্সফার করে দিলেন। আহ্লাদিত হলাম। কারণ ওই সাইজের বাচ্চা কোলে নিলে বাচ্চার থেকে যে কোলে নিচ্ছে তার আরাম বেশি হয়। সতেরো সেকেন্ড পর গেঁড়ি ঠোঁট ফুলিয়ে, চোখ খুব জোরসে টিপে (যাতে জল বের হয়) বাবার দিকে দু’হাত প্রসারিত করল। সরি সরি বলে তাকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিলাম। এঁরা রাঁচি থেকে এসেছেন। কলকাতায় প্রচুর চেনা লোক। জিজ্ঞাসা করলেন স্নান করেছ কি না, বললাম কাল করার ইচ্ছে। করলে গোল্ডেন বিচে করব। হোপফুলি, স্বর্গদ্বারের থেকে ফাঁকা থাকবে। তরুণ বাবা বললেন, ওঁরাও নাকি একই যুক্তিতে কাল সকালে গোল্ডেন বিচে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। দেখা হবে, বাচ্চা ফেরত নিতে নিতে বলল তরুণ বাবা। আমরাও বললাম, দেখা হবে। জানা সত্ত্বেও যে সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু এ তো দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি নয়, দেখা হলে ভালো লাগার স্বীকারোক্তি। আর কোনওদিন দেখা হবে না। আরও একটা নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড কথোপকথন।

জেটিতে পূর্ণচন্দ্র অপেক্ষা করছিলেন। চারটে বেজে গেছে, পাঁচটার কাছাকাছিও হতে পারে। পূর্ণচন্দ্র বললেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন, না হলে আবার।

খিদে পেয়েছিল। রান্নাও তৈরি ছিল। রান্না খুবই ভালো। অর্চিষ্মানের চিংড়ি ভালো, আমার ডাল তরকারি ভালো। ঢ্যাঁড়সের তরকারিটা অনেকদিন মনে থাকার মতো ভালো। পূর্ণচন্দ্র আনচান করছিলেন, বেরোনোর জন্য। যদিও তখনও আলো আছে বেশ। 

যাত্রা শুরু করেই দাঁড়াতে হল অবশ্য। কয়েকটা মেয়ে। স্কুলের ওপর দিক। দুয়েকজন কলেজ হলেও হতে পারে, পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। পূর্ণচন্দ্র অনুবাদ করে দিলেন, চাঁদা চাই। গ্রামে পুজো হবে। গাড়ি আটকে চাঁদা চাওয়ার ব্যাপারটা আগে ফেস করিনি। টাকা বার করতে শুরু করলাম। আমি যত দিতে রাজি, মেয়েগুলোর তার থেকে বেশি চাই। মেয়েগুলো মুখেচোখে একটা রুক্ষভাব ফুটিয়ে রেখেছে কিন্তু আমার সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট করতে পারছে না। দূরে কয়েকটা ছেলে গোল হয়ে বসে এদিকে তাকিয়ে আছে। মেন্টর হতে পারে, নাও পারে। বললাম, এর থেকে বেশি আমি দেব না। পূর্ণচন্দ্রকে বললাম, গাড়ি চালান। মেয়েগুলো রাস্তা ছেড়ে দিল। আমার চোখে তখনও চোখ রাখতে পারেনি। যেদিন পেরে যাবে সেদিন যা চাইবে তা-ই যে বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দেব তাও জানি।

সন্ধে নামছে। রাস্তায় প্যান্ডেল। আলো। স্পিকারে গান। একেকটা প্যান্ডেলে বেশ বড় মূর্তি। হাতির পিঠে দেবী। পূর্ণচন্দ্র বললেন, গজলক্ষ্মী। দুপাশের খালি মাঠে পোঁতা বোর্ডে লেখা ‘ক্যাটল রেস্টিং প্লেস’। আবার সেই জলাজমির মাঝেমাঝে হেলে পড়া বিদ্যুতের খাম্বা। ওপারে সূর্য নামছে।

পূর্ণচন্দ্র গান চালিয়ে দিয়েছিলেন। অধিকাংশ বেড়ানোর গাড়িতে গান চালাতে বললে এমন কিছু অদ্ভুত গান চালাতে থাকে যে গানগুলো চোদ্দপুরুষে শুনিনি। সে সব আশ্চর্য ম্যাদামারা প্রেমের (বা বিরহের) গান। শুনলেই মনে হয় গায়ককে (বা যার হয়ে গায়ক গাইছেন) তাঁকে ঝাঁকিয়ে বলি এত লো এনার্জিতে প্রেম হয় না, আরেকটু সতেজ হোন। না হলে সারাজীবন এই কান্নাই কেঁদে যেতে হবে। পূর্ণচন্দ্রর গানগুলো সে রকম না। ফুলব্লাডেড প্রেমের এবং ফুলব্লাডেড বিরহের গান। যে রকম গান এক সময় বলিউডে লেখা হত। দিলবর মেরে কবতক মুঝে অ্যায়সা হি তড়পাওগে, ম্যায় আগ দিল মে লাগা দুংগা যো পল মে পিঘল যাওগে, কী কনফিডেন্স ভাবুন। কিংবা ল্যাং খেয়ে সোজা অভিশাপ। জ্বলে মন তেরা ভি কিসি কো মিলন কো অনামিকা তু ভি তরসে। যত বুড়ো হচ্ছি এই ধরণের শক্তপোক্ত, সলিড প্রেমে বিশ্বাস বাড়ছে। কাঁদোকাঁদো, নিড়বিড়ে প্রেম অসহ্য।

গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পূর্ণচন্দ্রের গাড়ির স্পিড বেড়েছে । শুধু পূর্ণচন্দ্র না, দুপুরে আসার পথে গাড়িগুলোর চালে যে দুলকি ছিল, ঝেড়ে ফেলে সকলেই সাঁইসাঁই ছুটেছে। চুপচাপই ছিলাম, কিন্তু সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টোদিক থেকে আসা ফুলস্পিড লরির পাশ গলে যখন পূর্ণচন্দ্র লুইস হ্যামিলটনের স্মুদনেসে বেরিয়ে এলেন, গলা দিয়ে অনৈচ্ছিক ‘বাবাগো’ বেরিয়ে গেল। পূর্ণচন্দ্র বললেন, এই রাস্তাটুকু একটু র‍্যাশ ড্রাইভিং করতেই হবে ম্যাডাম। আমাদের আরেকটু আগে বেরোনো উচিত ছিল। জায়গাটা ভালো না।

ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে সাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা কেসটেস নাকি? অর্চিষ্মান টুইটার থেকে মুখ তুলে কান খাড়া করল। টুইটার থেকে ব্রেক নিতে হলে ও ট্রু হরর স্টোরির পডকাস্ট শোনে। সে সব পডকাস্টে ফাঁকা হাইওয়েতে সাদা শাড়ি পরা পেত্নীর বাজার মারাত্মক তেজী। আমরা ছাড়া পৃথিবীর সবাই নাকি দেখেছে। কারও কারও বাইকের পেছনে নাকি পেত্নী পিলিয়ন রাইডিং -ও করেছেন। বাইক একটুও স্লো না করা সত্ত্বেও, ফুলস্পিডে রানিং বাইকের পেছনে উঠে, ঘাড়ে ঠাণ্ডা ফুঁ দিতে দিতে অনেকটা রাস্তা গেছেন। অর্চিষ্মান মাঝরাত পর্যন্ত এগুলো শোনে তারপর ঘরের সবক'টা লাইট জ্বালিয়ে, চিলচিৎকার করে সানডে সাসপেন্সে ড্যাং ক্যাং গ্যাং চালিয়ে ঘুমোতে যায়।

জানালার বাইরে উল্কার স্পিডে ছুটে যাচ্ছে একটাদুটো গাড়ি। দিগন্তের কাছে আকাশ গেরুয়ার থেকে ধূসরের দিকে যাচ্ছে। মেঠো পথ ধরে রাস্তায় উঠে আসছে উদাসী গরুর দল।

ওই লাস্টের আইটেমটাই নাকি ডেঞ্জারাস। আর মিনিটদশেকের মধ্যে নাকি কোটি কোটি ক্যাটল দু’পাশের মাঠ থেকে উঠে এসে হাইওয়ে ছেয়ে ফেলবে। পূর্ণচন্দ্র বললেন, রাস্তায় দাগ দেখছেন না? কাচে নাক ঠেকিয়ে দেখলাম, সত্যি কালো পিচে পোলকা ডটের প্যাটার্ন। সব নাকি গব্য গোবরের। প্রতিদিন সন্ধে ছ’টা বাজলেই গরুদের শিফট শেষ হয়, শুরু হয় চিলিকা টু পুরীর রাস্তার জ্যাম। সে জ্যামের মতো জ্যাম। আধঘণ্টার রাস্তা আড়াইঘণ্টায় পার হয়েছেন, পূর্ণচন্দ্র নিজে। গাড়ি থামিয়ে কতবার নেমে ঠেলে ঠেলে গরু সরিয়েছেন। সব ড্রাইভারই সরান। সেই বুমলা যাওয়ার সময় যেমন বরফের রাস্তায় পাঁচ মিনিট পর পর থেমে গাড়ি ঠেলার ট্র্যাডিশন, এখানে গরু ঠেলার। পূর্ণচন্দ্র বললেন, আপনারা এখানকার লোক নন তাই জানেন না। ন্যাশনাল নিউজ না হলেও, চিলিকা টু পুরীর হাইওয়ের এই গরুঘটিত জ্যাম নাকি লোক্যাল প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, সোশ্যাল মিডিয়ার রেগুলার ব্রেকিং নিউজ।

সূর্য অস্ত গেল। সন্ধের ছায়া আকাশের কমলার শেষটুকু টপ করে গিলে নিল। আর আমরা স্পষ্ট দেখলাম, দু’পাশের মাঠ থেকে উঠে আসছে ছায়া ছায়া অশরীরীরা। তাদের দুটো শিং, চারটে পা, একটা ল্যাজ।





Comments

  1. darun laglo ! -Tinni

    ReplyDelete
  2. দারুণ হচ্ছে, এটাও গোল্ড।

    আমাদের চিলকা ভ্রমণের গল্পগাছা মনে পড়ছে সব। রাজহংস দ্বীপে রাত কাটিয়েছিলাম, জঙ্গলের মধ্যে এক অদ্ভুত রাত, আর ততোধিক সুন্দর ঝলমলে সকাল।
    আর রাস্তায় গরুর ব্যাপারটার অভিজ্ঞতাও অনেকবার হয়েছে।
    আমরা বানতলার অফিস থেকে ফেরার সময়, সন্ধের ঠিক আগে একটা বিশেষ সময়ে বেরোলে তারা আকছার গাড়ি আর বাইকের সামনে এসে মিছিল করতো। এবং আমাদের ধারণা ছিল আমাদের দেখলেই তারা বেশি বেশি করে রাস্তায় চলে আসতো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, বৈজয়ন্তী। হংসরাজ দ্বীপের নাম শুনিনি তো আগে। পরের বার গেলে খোঁজ নেব নিশ্চিত। গরুর ব্যাপারটা আমাদেরও আছে তাহলে। অবশ্য না থাকার কোনও কারণ নেই। পড়শি রাজ্যের সঙ্গে কতই বা আলাদা হব।

      Delete
  3. Daruuuuun lekha Kuntala. Mon bhore gelo.

    "অ্যানথ্রোপোমরফিজমের অ্যাটাকে মানসচক্ষে দেখলাম জলের নিচে ডলফিনদের আস্ত পাড়া। পাড়ার সবাই চিৎপাত হয়ে দুপুরের ভাতঘুম পোহাচ্ছে আর একেকজনকে ঠেলা মেরে ওপরে পাঠাচ্ছে, যে এবার তোর পালা। তখন সে ধুত্তেরি বলে উঠে এসে দুবার অতিকষ্টে ডিগবাজি খেয়েই আবার নিচে চলে যাচ্ছে। পাশের শুশুককে লাথি মেরে উঠিয়ে বলছে, যা যা, ডিগবাজি খেয়ে আয়। ছাগলগুলো এখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে আর হাততালি দিচ্ছে।" - eta pore sodar botoler moto vosvosiye hasi ese gelo, office e na thakle attohasyo kortum!!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সায়ন। আপনার প্রশংসা সবসময়েই কনফিডেন্স দেয়।

      Delete
  4. শেষ প্যারাটা, দুর্দান্ত!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।

      Delete
  5. কাঁকড়ার ন্যাচারালনেসের প্রশ্নটা সত্যিই তুমুল !

    আপনার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার বর্ণনা শুনতে শুনতে Anne Frank এর ডায়েরিতে পড়া একটা লাইন মনে এলো: "As long as you can look fearlessly at the sky, you'll know that you're pure within and will find happiness once more."
    (কোটেশন এতই ভালো লাগে, যে মাঝেমধ্যে দিয়ে ফেলবো, কিছু করার নেই। কিছু কিছু কোটেশন তো কনসেনট্রেটেড কবিতা!)

    আগের লেখায় আপনি হিংসের কথা লিখেছিলেন, আপনার লেখা পড়েও মাঝে মাঝে একটু হিংসে হয় আমার, সুন্দর এক্সপ্রেশন রপ্ত করে উঠতে পারিনি বলে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাত খুলে, মন খুলে কোটেশন দেওয়ার পারমিশন দিলাম, রাজর্ষি। কোটেশনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গতজন্মের। আমার মায়ের একটা আস্ত ডায়রি ছিল কোটেশনের। অধিকাংশই ইংরিজি, মানেও বুঝতে পারতাম না যখন থেকে সে ডায়রির পাতা উল্টেছি। কাজেই আপনি কোটেশন দিলে আমার শুধুই ভালো লাগবে। ভালো ভালো কোটেশন পড়তে পাওয়ার উপযোগিতা যদি ছেড়েও দিই।

      Delete

Post a Comment