পুরী ৬ (শেষ): স্নানযাত্রা ও সূর্যমন্দির


রাস্তায় বিগ বাজার গোছের একটা দোকানে দাঁড় করালেন পূর্ণচন্দ্র। কাল সকালে স্নানের উপযুক্ত চটি জামাকাপড় কিনতে হবে। জুতো খুলে ঢুকতে হল। এদিকে দোকানের মেঝেজোড়া কাঁটা কাঁটা কার্পেট। কিছু আনকমফর্টেবল। ঢোকার মুখে আরেক ড্রামা। এক বালতি জল রাখা ছিল; একটা ফুল সাইজ গরু এসে সে জলে মুখ দিতে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড় করানো খানসাতেক সাইকেল ফেলে দিয়েছে।

অর্চিষ্মানের সাইজের ফুল ট্র্যাকপ্যান্টস পাওয়া গেল না। হাফপ্যান্ট ওর আছে। আমার পোশাকগুলোর সবক'টার বুকেই চুমকির প্রজাপতি কিংবা হেলো কিটি। এক ভদ্রলোক, দোকানেরই কর্মচারী, এমন কিছু শিশু নন, আমার সমবয়সী বা বছর পাঁচেক বড়ও হতে পারেন, কাউন্টারে কনুই রেখে কোমর বেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনিই। দুটো বাচ্চা ছেলেমেয়ে আমাদের জিনিসপত্র দেখানোর দায়িত্ব দিব্যি পালন করছিল। উনি অধিকন্তু ন দোষায়। আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুব ক্রিটিক্যালি দৃষ্টি ওঠাচ্ছিলেন নামাচ্ছিলেন এবং মতামত প্রকাশ করছিলেন কোন সাইজ ম্যাডামের "আ যায়েগা।" ফ্রাস্ট্রেটিং হচ্ছে এঁরা বদ নন, জাস্ট সোশ্যাল সেনসিটিভিটি নেগেটিভে।

জামার আশা ছেড়ে চটির সন্ধানে নামলাম। অর্চিষ্মানকে দিব্যি সুন্দর একজোড়া হালকা ধূসর চপ্পল বার করে দিল। আমার কপালে কুটকুটে লালের ওপর গোলাপি স্ট্রবেরির সারি। ছেলেমেয়েদুটো এত কিছু বার করে, ভাঁজ খুলে দেখিয়েছে এবং একটাও কিনিনি যে শপথ করেছিলাম এবার যা-ই দেখাবে কিনে নেব। অর্চিষ্মান বলল, একটা ভালো ভাবো। চুরি যাবে না।

পুরী ঢোকার পর বাজারের রাস্তা ধরতে বলেছিলাম। এপাশের জানালা দিয়ে আমি, ও পাশেরটা দিয়ে অর্চিষ্মান পাহারায় ছিলাম। প্রথম ফুচকার গাড়িটা অর্চিষ্মানের দিকেই পড়ল। পূর্ণচন্দ্র আমাদের নামিয়ে নমস্কার করে চলে গেলেন। প্রথম ফুচকাটা খেয়ে একবার, দ্বিতীয় ফুচকাটা খেয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে আরেকবার "অর থোড়া মিরচি দে না প্লিজ" অনুরোধ করলাম। দু'বারই অনুরোধ রক্ষিত হওয়ার পরেও ব্যাপারটা ফিকা রয়ে গেল। ভদ্রলোক আমার ওপর ভরসা করতে পারলেন না বোধহয়। আগের বার মটর কা পানি খেয়ে অজ্ঞান হওয়ার মতো ভালো লেগেছিল। খুঁজলাম, পেলাম না।

ভুবনেশ্বরে গেলে ওডিয়া খাবার খেতে সবাই ওডিশা হোটেলে যায়, আমরাও গেছি। এবার কনফারেন্স চলাকালীন একটা নতুন দোকানের সন্ধান পেয়েছে অর্চিষ্মান। ওটিডিসি-র রেস্টোর‍্যান্ট, নিমন্ত্রণ। এত ভালো লেগেছে যে অন্ততঃ পাঁচ বার ফোনে বলেছে পুরীতে যদি থাকে খাব, না হলে প্লেন ধরার আগে ভুবনেশ্বরেই খাব। ওডিশা গিয়ে নিমন্ত্রণ-এ না খেলে জীবনের ষোল আনা বৃথা।

পান্থনিবাসে সকালে ঘর খুঁজতে গিয়ে দেখেছি ওঁদের আছে নিমন্ত্রণ রেস্টোর‍্যান্ট। ডিনার খেতে ওখানেই গেলাম। ফাঁকা। এত কষ্ট হয়, সরকারি জায়গা ফাঁকা দেখলে। আপনারা পুরী গেলে দলে দলে পান্থনিবাসের রেস্টোর‍্যান্ট নিমন্ত্রণ-এ খেতে যাবেন। চমৎকার রান্না। পরিবেশক জানালেন, স্ট্রিক্টলি শিলে বাটা মশলা দিয়ে রান্না কি না, তাই এত ভালো। এঁদের রান্নাঘরে গুঁড়ো মশলার প্রবেশ নিষিদ্ধ। ঠাকুমা শুনলে আশ্বস্ত হতেন। দোতলার ভেতরে বাইরে দু'জায়গাতেই বসার ব্যবস্থা। বারান্দাতেই বসলাম। বাঁদিকে বাগান পেরিয়ে সেই পার্ক সকালে যেখানে ভদ্রলোক কপালভাতি করছিলেন। দিনের আলোয় সমুদ্র দেখা যায়। এখন শুধু শোনা যাচ্ছে। মেনু দেখে অর্চিষ্মান বলল, ভুবনেশ্বরের মেনুর থেকে অল্প আলাদা। বৈচিত্র্যও নাকি অল্প কম। সমস্যা নেই, আমাদের চাওয়াও বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। আমি ভেজ থালি নিলাম, অর্চিষ্মান মাটন থালি। বৈচিত্র্যের খাতিরে শুরুতে দুটো ব্লু লেগুন আর একটা আলুভাজা না কী যেন নেওয়া হল।

খাওয়া শেষ হল। ফুরফুরে হাওয়া ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। আরও দু’গ্লাস ককটেল নিয়ে দুজনে বসে রইলাম। অন্ধকারে সমুদ্র গর্জন করতে লাগল।

*****

আর আধদিন বাকি। পুরী যাওয়ার আমার সবথেকে বড় কারণটাও। সমুদ্রস্নান।

শৈশবের আনন্দ আজকাল দুটো মাত্র বিশুদ্ধ ফর্মে আমার কাছে ফিরে আসে। এক, জায়ান্ট হুইল। দুই, সমুদ্রস্নান। নভেম্বরে বাড়ি গিয়েছিলাম। বাবা বললেন, অনেকদিন জগদ্ধাত্রী পুজোয় আসিসনি। রিষড়া অনেকদিন ধরেই জগদ্ধাত্রী পুজোয় সেকেন্ড চন্দননগর হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। প্রতি বছরই ব্রহ্মানন্দ স্কুলের মাঠে পুজোর মেলায় জায়ান্ট হুইল আসে। শুধু জগদ্ধাত্রী পুজো না, সব পরবেই আসে। বাবা আর বিজলীদি নিচে দাঁড়িয়ে রইল; আমি চড়লাম। যত আনন্দ হবে কল্পনা করেছিলাম প্রতিবারের মতো তার থেকে এক কোটিগুণ বেশি হল। আমার বসার খোপে সহযাত্রী ছিল ক্লাস নাইনের অস্মিতা মোদক আর ক্লাস সিক্সের দীপা দাস।

দ্বিতীয় ফর্ম হচ্ছে সমুদ্রস্নান। স্পেসিফিক্যালি, পুরীর সমুদ্রে। জলে পা দিলেই দেখি ওই তো ওইখানে ঠাকুমা ঢেউয়ের ধাক্কায় গড়িয়ে যাচ্ছেন, ওইখানে পিসি নোনাজল গিলে মুখ ছ্যাতরাচ্ছে, বাবা ভাসতে ভাসতে চলে গেছেন কতওওওদূঊঊঊর, মা গত তিন ঘণ্টা ধরে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, সোনা এই ঢেউটা কিন্তু লাস্ট, এদিকে নিজে ওঠার নাম করছেন না।

আমার প্রিয়জনদের, যাঁদের অধিকাংশই মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে দেওয়ালে ঝুলেছেন, রিষড়ার বাড়ির ঘরদোর বারান্দায় ছাদে যেমন পারি পুরীর সমুদ্রতটেও সমান তীব্রতায় মনে করতে পারি। পৃথিবীর আর কোথাও পারি না। আমার ধারণা সেই টানেই আমার এতবার পুরীর সমুদ্রের কাছে যেতে ইচ্ছে করে।

নিজের আনন্দ তো আছেই। একেবারে ছোটবেলার মতো আনন্দ। সে আনন্দ বর্ণনা করার মতো টাইপিং-এর জোর আমার নেই। অর্চিষ্মান সমুদ্রস্নান নিয়ে অত ইমপ্রেসড ছিল না গোড়াতে। নাকতলার মা যদিও শুনেছি সমুদ্রস্নানে খুবই আগ্রহী, অর্চিষ্মানের ধাত বাবার মতো। তটে দাঁড়িয়ে চটি চশমা পাহারা দিতে দিতে স্মিতহাস্যে বাকিদের বালখিল্যপনার আমোদ নেওয়া।

অর্চিষ্মানের ধাত বদলানোর চেষ্টা করিনি আমি। নিজের যে চরিত্রটা টপ টু বটম পছন্দ করি, এত পছন্দ করি যে নিজের মুখে সে কথা বলতে লজ্জা পাই না, সেটা হচ্ছে যে আমি আমার শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে জানি ও মানি, পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের নিজস্ব মাইন্ড আছে এবং সে মাইন্ড যখনতখন যত্রতত্র চেঞ্জ করার সম্পূর্ণ ও সার্বভৌম অধিকার আছে। জীবনে নিজের ছাড়া কোনও প্রাপ্তবয়স্কের মাইন্ড বদলাতে এনার্জি ব্যয় করিনি আমি। অর্চিষ্মানকে সমুদ্রস্নানে টেনে নামানোরও না। অসীম আত্মবলিদানে অর্চিষ্মান নিজেই সমুদ্রে নেমেছে। গোয়াভ্রমণে গিয়ে। সে গল্প আগে করেছি।

পরপর সাত জন্মে একই লোকের সঙ্গে বিয়ে হলে শুনেছি দম্পতি একে অপরের মতো দেখতে হয়ে যায়। দশ বছরে অতটা না হলেও কিছু তো হয় বটেই। আমার ধারণা, গোড়াতে আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সমুদ্রে নামলেও অর্চিষ্মান ব্যাপারটা ক্রমশঃ উপভোগ করতে শুরু করেছে। ঠিক যেমন আজকাল আলুসয়াবিনের তরকারি খেয়ে মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বাহ্‌ বলে উঠছে।

টাইপিং থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা গত বারো বছরে কোন কোন জায়গায় আমি তোমার মতো হয়ে উঠেছি? অর্চিষ্মান বলল, তুমি বল। তোমার কি মনে হয়, কোনখানটায় তুমি আমার মতো হয়ে উঠেছ? বললাম, আরে আমার মাথায় আসছে না বলেই তো জিজ্ঞাসা করছি। উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে টুইটারে ফেরত গেল। অর্থাৎ কোনখানটাতেই ওর মতো হয়ে উঠতে পারিনি আমি। হয়ে ওঠা আমার কম্ম নয়।

এ বারের স্নানে অর্চিষ্মানের এক নতুন গুণের সন্ধান পেলাম। স্নান দিয়ে মানুষ বিচার। অর্চিষ্মানের দাবি জীবনসমুদ্র কে কী ভাবে সাঁতরাবে তার একটা নির্ভুল আন্দাজ পাওয়া যায় রিয়েল সমুদ্র কে কী ভাবে সাঁতরাচ্ছে তা থেকে।

যেমন ধরা যাক ওর নিজের সমুদ্রস্নান। তীরের কাছে দাঁড়িয়ে বা ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে বসেই তেজ কমে আসা ঢেউয়ে গা ভেজানো। উত্তেজনা কম; ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় নিল। আমার স্নানপ্রক্রিয়া, বলা বাহুল্য, ঠিক তার উল্টো। যেখানে ঢেউ বড় বড় এবং ভরাডুবি গ্যারান্টি। এবং এই ভরাডুবির দিকে বীরবিক্রমে এগিয়ে যেতে যেতে নাকি আমি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হই অর্চিষ্মান বেঁচেছে না মরেছে, হোটেলে চলে গেছে না ঢেউয়ে ভেসে গেছে।

এ অভিযোগ আগাগোড়া মিথ্যে। আমি এগোচ্ছিলাম এবং ক্রমাগত পেছন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম। মানছি, সেটা অর্চিষ্মানের সেফটির ওপর নজর রাখতে নয় কারণ ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সুনামি না এলে সেখানে সেফটির সমস্যা হওয়ার কথা না। আমি তাকাচ্ছিলাম অর্চিষ্মানের অ্যাপ্রুভালের আশায়। অর্চিষ্মানের মুখ গম্ভীর হতে শুরু করছে দেখলেই স্ট্যাচু হচ্ছিলাম। ভেসে যাচ্ছি না দেখে সাহস পেয়ে অর্চিষ্মান মাঝে মাঝে এসে যোগ দিচ্ছিল। যেটা আমি ওকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে তীরের কাছে নাকানিচোবানি অনেক বেশি। পায়ের তলার বালি যত সরবে, আকচাআকচি, হাঁকপাঁক তত কমবে। শান্তি বাড়বে।

তাছাড়া আজকাল একা একা খুব বেশি দূরে যাওয়া সম্ভবও নয়। বাবা যে রকম যেতেন। গত চল্লিশ বছরে মানুষের জীবনের দাম বেড়েছে। হুইসলওয়ালা প্রহরীরা দশ গজ দূরে দূরে পাহারায় আছেন। কেউ বাহাদুরি দেখানোর চেষ্টা করা মাত্র তীব্র সিটিতে গোটা বিচের ঘাড় কালপ্রিটের দিকে ঘুরিয়ে হিউমিলিয়েশনের হদ্দমুদ্দ করছেন। অর্চিষ্মানকে বললাম, আর যাই করি, সিটি খাব না, প্রমিস।

অর্চিষ্মানের অসুবিধেটা অবশ্য আমার বোকা সাহস দেখিয়ে দূরে গিয়ে স্নান করাতে নয়। আশেপাশের স্নানার্থীদের "হারিয়ে" তাদের থেকে দূরতর বিন্দুতে গিয়ে স্নান করার বাহাদুরি দেখানোয়। ঠিক যে মোটিভেশন থেকে আমি সি আর পার্কের চেনা ফুচকাওয়ালার ফুচকায় ঝাল বাড়াতে বাড়াতে এমন একটা অমানুষিক পর্যায়ে নিয়ে গেছি যে আমাকে দূর থেকে আসতে দেখলে ছেলেগুলো কাঁচালংকা কুচোতে বসে।

এটার ব্যাখ্যাও অনেকবার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা জীবনের বড় বড় যুদ্ধে জেতে তাদের এই সব ছোটখাটো জেতায় কিছু এসে যায় না। সে সব যুদ্ধে গোহারা হেরেছি বলেই ফুচকার ঝালে আর সমুদ্রে কে কত দূরে যেতে পারে-র যুদ্ধে অবিসংবাদিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য হেদিয়ে মরছি। কিছুতে তো একটা জিততে হবে।

তারপর ধরা যাক, আশেপাশের সব কাপলই জাপটাজাপটি করে, অন্ততঃ হাত ধরে স্নান করছিলেন। আমরা যে সেটা করি না, সেটাও অর্চিষ্মানের মতে সিগনিফিক্যান্ট। এমন নয় যে বিয়ের দশ বছর পর বলে করছি না, ছ'মাস পরেও করতাম না। না করার আমার দিক থেকে বৈজ্ঞানিক কারণটা বলেছি। যে ঢেউ অর্চিষ্মানের কোমর অবধি পৌঁছয়, আমার সেটা মাথার ওপর দিয়ে যায়। ওকে জাপটে স্নানে নামলে আমার ঘোল (বা জল) খাওয়া অবশ্যম্ভাবী। অর্চিষ্মানের মতে ব্যাপারটা শুধু লজিস্টিক্যাল নয়। আমাদের স্নানের ধরণ আমাদের সম্পর্কের চরিত্রের একটি সত্য উদ্ঘাটন করে। সেটা হচ্ছে পার্টনার হলেও দুজনেই নিজের নিজের জীবন নিজে সামলাতে পছন্দ করি। কোন এক কয়েন টসে দু'জনের জীবনের মাঝখানের ট্র্যাকদুটো জড়িয়েমড়িয়ে গেছে ঠিকই, তাতে দু'জনেরই দিনরাতগুলো মসৃণতর হয়েছে সেও ঠিক, তবু দু'জনেই মনের ভেতর থেকে জানি, একা এসেছি,একা যাব। কেমন যেনটেন নয়, আদতেই আলাদা আলাদা সব।

অনেক নারীপুরুষই নুলিয়া এবং টায়ার নিয়ে স্নানে নামছিলেন। এক্সপার্ট সঙ্গে থাকার প্রত্যাশিত সুবিধেগুলোও তাঁরা পাচ্ছিলেন। ঢেউটেউ পেরিয়ে, একেবারে শান্ত জায়গায় গিয়ে টায়ারে দুই হাত লটকে ভাসতে পারছিলেন। কিন্তু এক্সপার্ট সঙ্গে থাকার অসুবিধেও কম না। সম্পূর্ণ কনট্রোল এক্সপার্টের হাতে। দশ না পনেরো মিনিটের স্লট হয় বোধহয়, তার পর 'আমার শখ মেটেনি, আর পাঁচ মিনিট প্লিইইইইইজ' বলাটলা চলবে না। কান ধরে এক্সপার্ট তীরে তুলে আনবেন।

গোল্ডেন বিচে স্নানের সুবিধে হচ্ছে সমুদ্রস্নান পরবর্তী কলের জলের স্নানের এবং জামাকাপড় বদলানোর জায়গা। অর্চিষ্মান গেল। আমারও টিকিট ছিল, কিন্তু আমি যে যাব না গোড়া থেকেই জানতাম, অর্চিষ্মানকে আগে বলিনি। লাস্ট মোমেন্টে গিয়ে বললাম, তুমি যাও, আমি হাওয়ায় শুকিয়ে নেব। ওই খোপ খোপ বাথরুমে প্রতি পাঁচ মিনিটে একজন করে স্নান করতে ঢুকছে, আমি ওর মধ্যে নেই। 

যে সদাশিব ভুবনেশ্বর থেকে আমাকে নিয়ে এসেছিলেন, তিনিই আমাদের ভুবনেশ্বর পৌঁছে দেবেন। প্লেন রাত আটটায়, কিন্তু কোনার্ক হয়ে যাব বলে এগারোটাতেই বেরিয়ে পড়ব। অর্থাৎ এখনও ঘণ্টা দেড়েক বাকি। অর্চিষ্মান বলল, শোন, আমি ভাবছি একবার মন্দিরের দিকটা ঘুরে আসব। তুমি হোটেলে রেস্ট নিতে চাইলে নাও। কিংবা কফিশপটপেও বসতে পার। পাশেই একটা সিসিডি মতো দেখলাম না?

তিরিশ সেকেন্ড থতমত হয়ে রইলাম। মন্দিরে যাওয়াটা যে পুরীভ্রমণের একটা অংশ সেটা এতদিনে আমার সিস্টেম থেকে বেরিয়ে গেছে। আমার কাছে পুরী মানে সমুদ্র আর সমুদ্রের ধারে বসে চমচম খাওয়া। মন্দিরে আমি শেষবার ঢুকেছি বোধহয় স্কুলের শেষ দিকে। তারপর লায়েক হয়ে ঠিক করেছি ওটা আমার কাছে জরুরি ব্যাপার না। উদাস মুখে বলেছি, তোমাদের ইচ্ছে হলে যাও, আমি হোটেলে শুয়ে থাকছি বা সমুদ্রের ধারে বসে থাকছি। বাবামা মুচকি হেসে চলে গেছেন। বিপ্লবের ঠেলা জাগলে সেটাকে বেরিয়ে যেতে দেওয়াই ভালো। দমন করতে গেলে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি।

ভেবে দেখলাম। অনিবার্য ও আসন্ন মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে ভেজ না ননভেজ, ফেলুদা না ব্যোমকেশ, আস্তিক না নাস্তিক এ সব ইমমেটেরিয়াল। মন্দিরে যাওয়ার কস্ট নোংরা আর ভিড়। বেনিফিট, বেড়ানোর শেষ দেড়ঘণ্টা অর্চিষ্মানের সঙ্গলাভ এবং যুগলে পাণ্ডার লাঠির বাড়িভক্ষণ। বললাম, চল, আমিও যাই।

গেলাম আর ভগবানের সঙ্গে আমার একটা মিল বেরিয়ে গেল। ভগবান আমার মতোই হিংসুটে। বিশ্বশুদ্ধু মজা নিংড়ে তারপর তাঁর জন্য শেষের একঘণ্টা, ও সব উনি অ্যালাউ করেন না। রবিবার ছিল বলে কি না জানি না, স্পেশাল তিথিটিথিও থাকতে পারে, এক অসামান্য লম্বা লাইনের সম্মুখীন হলাম। কিলবিল করছে ভিড়। ফোনে দেখাচ্ছে দশটা তিন, একঘণ্টায় এই লাইন পেরিয়ে, মন্দিরে ঢুকে ঠাকুর দেখে বেরিয়ে এসে হোটেলে পৌঁছনো অসম্ভব। ফিরতি পথে হাঁটা শুরু করলাম। অর্চিষ্মান পেছন ফিরে ফিরে মন্দিরের চুড়োর ছবি তুলছিল। বেচারা। পরেরবার আগে জগন্নাথের সঙ্গে দেখা করে তারপর অন্য কথা, মনে মনে স্থির করেছি।

পুরী যাওয়ার আগে ফুডকা চ্যানেলে কয়েকটা ক্যাফের নাম শুনেছিলাম, যাওয়ার সময় হয়নি। ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী মুন্নাভাই মাটন পয়েন্টেরও সুখ্যাতি করেছিলেন। প্ল্যান ছিল ফেরার পথে অর্চিষ্মান ওখানে লাঞ্চ করে নেবে। আমার জন্যও নিশ্চয় কিছু থাকবে, না থাকলে পরে অন্য কোথাও খেয়ে নেব। মুন্নাভাই মাটন-এ পৌঁছে দেখি কর্তৃপক্ষ তখনও টেবিলের ওপর পেঁয়াজ টমেটোর পাহাড় বানিয়ে কাটাকুটি খেলছেন। অর্চিষ্মানের দিনটাই খারাপ। জগন্নাথদর্শনও হল না, মাটনভক্ষণও মিস। কে জানে কার মুখ দেখে উঠেছে।

ফেরার রুট চন্দ্রভাগা বিচ হয়ে কোনার্ক ঘুরে ভুবনেশ্বর। চন্দ্রভাগা বিচটা সুন্দর বেশ। আগে গেছি কিনা মনে করতে পারলাম না। বেশ ভিড়। স্নান জমে উঠেছে। বিচে উট ঘুরছে। দূরে লাল নীল হলুদ নৌকোদের পার্কিং লট।

অর্চিষ্মান লম্বা লম্বা পা ফেলে নৌকোর জটলার দিকে যাত্রা করল। আমার কায়দার জুতো (আমার পক্ষে যতখানি কায়দা সম্ভব) বালিতে হাঁটার পক্ষে উপযুক্ত না। রাগ রাগ হচ্ছিল, কী দরকার এত এক্সপ্লোরেশনের। পরিষ্কার ফাঁকা জায়গা ওর পোষাবে না। যেখানে কাঁইমাঁই সেখানে ঢুকতে হবে। এই যে মন্দির দর্শনের ইচ্ছে এটা জগন্নাথের টানে যত না তার থেকে বেশি ভিড়ের টানে। রিয়েল ইন্ডিয়া। মুখে বলে না, কিন্তু আমি শিওর। কোনদিন বলবে, চল কুন্তলা, কুম্ভমেলা ঘুরে আসি।

হঠাৎ থামল। আরেকটু হলে ওর পিঠে গোঁত্তা খেয়ে আমার থ্যাবড়া নাক আরও থেবড়ে যেত। পেছন ফিরে কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, আর গিয়ে দরকার নেই। আমার আরেকটা গুণ হচ্ছে অদরকারি প্রশ্ন না করা, কাজেই ওক্কে বস্‌ বলে পেছন ফিরলাম। তখন নিজে থেকেই বলল অনতিদূরেই নাকি একজন বালির ওপর বসে বড়বাইরে সারছিলেন। সমুদ্র, মানুষ, উট কাউকে লজ্জা পাচ্ছিলেন না। বললাম, বেশ হয়েছে। একটা কথা গুরুজনের মনে রেখো। ইন্ডিয়া ভালো। রিয়েল ইন্ডিয়া দূর থেকে ভালো।

কোনার্ক সবাই গেছে তাই বর্ণনা করছি না। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে আকাশের গায়ে ওই তিনকোণা মন্দিরটি প্রথম দেখার মুহূর্ত আমার প্রায় সমুদ্র দেখার প্রথম মুহূর্তের সমান মুগ্ধতার। শিশুকালে অভূতপূর্ব ম্যানেজ করতে পারতাম না, বলতাম অতপূর্ব। সেই লেগ্যাসি মেন্টেন করে আমার মা আজীবন অভূতপূর্বকে অতপূর্ব বলে এসেছেন। অফ কোর্স, প্রকাশ্যে না; যেখানে আমি আর মা শুধু সেখানে। সঙ্গে থাকলে কোনার্কের মন্দির প্রথম দেখার মুহূর্তে মা নিশ্চয় বলে উঠতেন, অতপূর্ব, না রে সোনা?

কোনার্কের মন্দির দূর থেকে অতপূর্ব। কাছ থেকেও অতপূর্ব। কিন্তু সবথেকে অতপূর্ব আমার লাগে চাকাগুলো। সামনে দাঁড়ালে অদ্ভুত ফিলিং হয়। দিল্লির জাদুঘরে গেলেও এ জিনিস হয়। হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর থানোসের মতো দাড়িওয়ালা লোকটার মুখ, কিংবা সেই ষাঁড়ের মূর্তি; বেসিক্যালি ইতিহাস বইয়ের পাতায় দেখা ছবি রক্তমাংসে দেখলে জিনিসগুলোর প্রাচীনত্ব বা সৌন্দর্য ছাপিয়ে বাড়তি সম্ভ্রম জাগে। সম্ভবতঃ আমার মনের খুব গভীরে একটা সন্দেহ আছে যে বইতে লেখা জিনিসপত্র বইতেই থাকে, রিয়েল লাইফে নয়। তার মানে এই নয় কিন্তু বইতে পৃথিবী গোল লেখা আছে বলে আমি মনে মনে বিশ্বাস করি আসলে পৃথিবী ফ্ল্যাট। আশা করি বোঝাতে পেরেছি। দা ভিঞ্চি রিয়েল, মোনালিসা রিয়েল জানার পরেও মোনালিসার ছবির সামনে সত্যি সত্যি দাঁড়ালে বিশ্বাসঅবিশ্বাস মিলিয়ে যেমনটা হয়, কোনার্কের চাকাগুলোর, চাকাগুলোর স্পোকে আমগাছের পাতা গলা রোদ্দুরের ঝিলিমিলির সামনে দাঁড়ালে তেমনটা হয় আমার।

প্রচুর দর্শনার্থী গাইড নিয়ে চলেছেন। একদল, গাইড যা বলছে মুখ বুজে শুনছেন। আরেকদল ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করতে করতে চলেছেন, কেমন ধরেছি-র স্বর্গীয় আনন্দ সর্বাঙ্গ চুঁইয়ে পড়ছে। ছায়াদেবীর ছোট্ট মন্দিরটা মেন মন্দিরের তুলনায় কিছুই না। তবু ওই মন্দিরটায় দাঁড়িয়ে তাকালে মেন মন্দিরের মহিমা যেন সহস্রগুণ বৃদ্ধি পায়। অনেকটা ছায়ায় বসে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকার মতোই। মেন মন্দিরের গোটা গায়ে খাঁচার ঠ্যাকনা পরানো। কয়েকটা মূর্তি নতুন তৈরি করে সাঁটা হয়েছে মনে হল। মন্দিরের পেছনে একটা গাছের ছায়ায় বসলাম। একটা কুকুর, আয়ুর শেষ প্রান্তে। একসঙ্গে দশ পা হাঁটার ক্ষমতা নেই। হাঁটছে আর থামছে। হাঁপাচ্ছে। যেন আর বেশি কষ্ট না পেতে হয় সূর্যঠাকুর। শেষটা শান্তির হোক।

ফোন পেয়ে সদাশিব গাড়ি নিয়ে এলেন। এবার সোজা ভুবনেশ্বর। মাঝে একবার খেতে থামা। সকালে দু'ঘণ্টা ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ তারপর রোদে হাঁটাহুটি; ক্লান্ত ছিলাম। খেয়ে গাড়িতে ওঠার পাঁচ মিনিটের মধ্যে যে যার জানালার কাচে মাথা ঠেকিয়ে কাদা।

জেগে দেখি বাইরেটা সপসপে ভেজা। কখন বৃষ্টি নেমেছে। আমার একটা তুক আছে। আমার ভালোলাগার, বা আমার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কোনও জায়গায় পৌঁছনো বা ছেড়ে আসার সময় বৃষ্টি হয়। বারবার এর প্রমাণ পেয়েছি। এবারের পুরী বেড়ানোটাও সেই যুক্তিতে আমার জীবনে অনেকদিন পর্যন্ত একটা ভালোলাগার চিহ্ন হয়ে থাকবে।

বৃষ্টিতে প্ল্যান চেঞ্জ করতে হল। সময়ের অনেক আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছব। অর্চিষ্মানের ইচ্ছে ছিল ভুবনেশ্বরে ঘোরার। ওটিডিসি-র নিমন্ত্রণ রেস্টোর‍্যান্টে যাওয়া যেত। খিদে নেই, টাইমপাসের খাওয়া। এই বৃষ্টিতে সে সব ঘোরাঘুরির মানে হয় না। সোজা এয়ারপোর্টে ঢুকলাম। অর্চিষ্মানের সুটকেস ড্রপ করতে হবে, সে বাবদে সিকিউরিটি চেক তখনও খোলেনি। চার্জিং স্টেশন খুঁজে কফি, ইডলিমিডলি নিয়ে বসলাম। ফোন চার্জ ভি হল, লোক দেখা ভি হল। একটা গর্বিত পায়রা ঘুরে ঘুরে খাবার পাওয়া যায় কি না দেখছিল।

বয়নিকা-র চিলতে শোরুমে ঢুকলাম। বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটির অভ্যেস নেই। নিজের বাড়িতে রাখার জায়গা নেই। অন্যদের জন্যও কিনি না কারণ তাঁরা না জানলেও আমি জানি তাঁদের বাড়িতেও রাখার জায়গা নেই। তবু সময় কাটাতে ঢুকলাম। কী সুন্দর সুন্দর শাড়ি, পাঞ্জাবী। আমি অর্চিষ্মানকে পাঞ্জাবী গছানোর, অর্চিষ্মান আমাকে শাড়ি নিদেনপক্ষে কুর্তা গছানোর ব্যর্থ চেষ্টা করল। অর্চিষ্মানের ফোনে নোটিফিকেশন এল, বোর্ডিং স্টার্টিং। বেরোচ্ছি, দরজার কোণে কোমরছোঁয়া কাপড়ের থাকে পা ঠেকল। নরম সুতির সাদা জমির ওপর কলাপাতা সবুজ, বাসন্তী হলুদ, গোলাপি লাল। অর্চিষ্মানের জন্য একটা কচি কলাপাতা, আমার জন্য একটা গোলাপি লাল প্রিন্টের গামছা কিনে ব্যাগে পুরে গেটের দিকে রওনা দিলাম।

                                                                                                                                                       (শেষ)




Comments

  1. আপনার পুরী ভ্রমণ, আর তার বিবরণও এমন সুন্দর হয়েছে, যে খুব করে পুরী পেয়ে যাচ্ছে।
    আমি পুরী গিয়েছি জীবনে মাত্র একবার, তাও অতি ধেড়ে বয়সে, বন্ধুদের সঙ্গে। তার আগে বিভিন্ন জায়গার নানা রকম সমুদ্র দেখা থাকলেও অটো থেকে বীচের ধারের রাস্তায় নেমেই তেজ দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেছিলো।
    চানের পর আরোই বুঝে গেছিলাম, এ বঙ্গোপসাগর সে বঙ্গোপসাগর নয়। ন্যাতার মত আমায় আছড়ে, উল্টে পাল্টে, ডিগবাজি খাইয়ে, হাতে পায়ে বালির আঁচড় বসিয়ে পরপর ঢেউগুলো আমার সাথে যা ওয়াশিং মেশিন সুলভ ব্যাবহার করেছে, তারপর থেকে সমুদ্রস্নান জিনিসটাতেই আমার কিছুটা ভয় ধরে গেছে।

    গামছার খবরটা নতুন পেলাম, আগে তো খালি থান কাটা কাপড় আর শাড়ি ছাড়া কিছু কেনার চেষ্টা করিনি। কচি কলাপাতা শুনেই দারুণ ইন্টারেস্টিং লাগছে।
    নেক্সট টাইম..।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ওডিশা আর আসামের গামছা দারুণ, বৈজয়ন্তী। হাতের সামনে পেলে ছাড়বেন না। আসামে গামছাকে গামোছা বলে, সেটাও আমার দারুণ লাগে। আমার গামছা জিনিসটা তোয়ালের থেকে কার্যকরীও বেশি লাগে।

      আপনার পুরীর সমুদ্রের বর্ণনা এত অ্যাপ্ট। বঙ্গোপসাগর ছাড়ুন, প্রশান্ত অতলান্তিক ভারতীয় যাবতীয় সমুদ্রের যত বিচ, সব পুরীর তুলনায় দুধভাত। আপনি আরও অনেকবার পুরী যান, অনেক মজা করে স্নান করুন, এই কামনা করি।

      Delete
    2. অসমীয়া গল্পটা জানতাম। সেই গামোছা নিয়ে মহা মুশকিলেও পড়েছিলাম। সে এত শৈল্পিক ব্যাপার, যে আমার গা মোছার মত তুচ্ছ কাজে তাকে কিছুতেই নামাতে পারছিলাম না। তারপর একদিন মাথা থেকে তুলকালাম আইডিয়া বেরোলো, আর বোধ হয় সাত আট বছর পর আলমারির পেছন থেকে বের করে সেটা দিয়ে ব্লাউজ বানিয়ে ফেললাম।
      উড়িষ্যার গামছাও এরকম ব্যাপার হবে নাকি?


      আর তোয়ালের ব্যাপারে আপনার সাথে এক্কেবারে একমত..
      দেশ হোক বা বিদেশ, আমার ঘরে চেক চেক কটন গামছাই ঝোলে

      Delete
    3. গামছা এবার থেকে রিইনট্রোডিউস করব। এই ওডিশার গামছা দিয়ে। এখানে শীতে রোদ ওঠে না, স্যাঁতসেঁতে ঠাণ্ডা তোয়ালে, অসহ্য। তার থেকে গামছা অনেক ভালো।

      মায়া হলে ওডিশার গামছাও গায়ে ঠেকাতে পারবেন না, বৈজয়ন্তী। আপনার বলার পর মনে হচ্ছে সত্যি, ব্যাপারটাকে জামার পিস বলে চালিয়ে দেওয়া খুব শক্ত না। বিশেষ করে বিবি রাসেল গামছা ছাপকে বিশ্বের দরবারে আসীন করার পর। আমার অনেক বন্ধু তো স্ট্রেট লাল গামছা প্রিন্ট শাড়ি ব্লাউজ পরে। আমাকেও উদ্বুদ্ধ করেছিল। কিন্তু আমি ততদিনে গামছা পরে ঘোরাঘুরি নিয়ে এত চুটকি বলে ফেলেছি যে সেই একই কাজ নিজে করতে পারলাম না।

      Delete
  2. আমিও মন্দির-টন্দির একেবারেই ঢুকি না। বাইরে ঘুরে নি, বা অপেক্ষা করি। যদি না একদম ফাঁকা আর পরিষ্কার হয়, আর সাথে দারুন কিছু শিল্প সৌন্দর্য এক্সপেরিয়েন্স করার চান্স থাকে।

    সমুদ্রে স্নানের এমন কিছু তো ম্যাজিক আছে, যার ফলে প্রত্যেকবারই মনে হয় যেন প্রথমবার, আর প্রত্যেকবারই, একবার নামলে আর উঠতে ইচ্ছে করে না।

    আর সমুদ্র দেখতে পাবার আগে, রাস্তায় যেতে যেতে যে আকাশটা পাল্টে যায়, মনে হতে থাকে যেন ওই শেষ গাছের সারির ওপারে কিছুটা একটা আছে - কোনো বৃহৎ রহস্যময় প্রাচুর্য্য - তারপর হঠাৎ কোনো এক ফাক দিয়ে প্রথম দেখতে পাওয়া অসীম সমুদ্র - সেই দেখাটা সবসময় মনে হয় যেন প্রথমবার দেখছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মন্দির ঢোকার সিদ্ধান্ত হাই ফাইভ, সমুদ্রস্নানের অভিজ্ঞতা হায়ার ফাইভ, প্রথম সমুদ্র দেখার অভিজ্ঞতা হায়েস্ট ফাইভ, রাজর্ষি।

      Delete
  3. "ইন্ডিয়া ভালো। রিয়েল ইন্ডিয়া দূর থেকে ভালো।"
    Agreed!

    ReplyDelete
  4. কুন্তলার এই সব ধারাবাহিক লেখার শেষে কুন্তলার নিজেরই বর্ণিত দশমীর বিসর্জনের প্রতিমার দুলতে দুলতে যাওয়া হাসিমুখ মনে পড়ে। অথবা সিনেমা হল ফেরৎ মানুষের মত - পর্দা নেমে গেলে, আলো জ্বলে উঠলে মানুষকে যেমন দেখায়- দিশাহারা আর বিষণ্ণ- যেন অলীক আর বাস্তবের সীমারেখা বুঝে নিতে অসুবিধে হচ্ছে তারপর তা পেরিয়ে যেতে যেটুকু যা বেদনা-

    ReplyDelete
    Replies
    1. এমন প্রশংসার জন্য অনেএএএক লেখা যায়। থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। ভালোবাসা নেবেন বরাবরের মতো।

      Delete
  5. আমারও এখন পুরীর গামছা চলছে,😊 বলছি আগে যে বেড়ানোর পোস্ট গুলোতে নীচে সব পর্বের লিঙ্ক দিতে, এখন দিচ্ছ না কেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দিয়ে দিচ্ছি, দাঁড়া।

      Delete
    2. হ্যাঁ ভাল হল, পরে সুবিধা হয় 😊

      Delete

Post a Comment