চিকেন কারি পাতা
একজন বুদ্ধিমান
মানুষ বলেছিলেন, কোনও একটা ভুল করে, “যাঃ, এই ভুলটা তো আগেও করেছিলাম” উপলব্ধি
করাটাই হল অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা আমার যে বিস্তর হয়েছে সেটার প্রমাণ হাতেনাতে
পাওয়া গেল যখন আমি বিশে জানুয়ারি দিল্লি শহরের বুকে বসে কারি পাতার গাছ অর্ডার
দিলাম।
“কেন, বিশে জানুয়ারি
কী যে অর্ডার করা যাবে না?” প্রশ্নের দু’রকম উত্তর হয়। প্রশ্নকর্তা যদি দিল্লির
বাইরের বাসিন্দা হন তবে স্বীকার করতে হবে যে বিশে জানুয়ারি কিছুই নয়, আর পাঁচটা
মঙ্গলবারের মতো একটা হেঁজিপেঁজি মঙ্গলবারই বটে। কিন্তু প্রশ্নকর্তা যদি দিল্লির লোক হন, ওয়েল, তবে তিনি প্রশ্নটাই
করবেন না, কারণ তিনি বিশে জানুয়ারির মর্ম হাড়ে হাড়ে জানবেন। তিনি জানবেন যে
সেদিন থেকে আর ছ’দিনের মাথায় শহরে একটা প্যারেড হবে। প্যারেড মোটে আড়াই কিলোমিটার
লম্বা কিন্তু সে জন্য গোটা শহরটা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে সাতদিন আগে থেকেই। মেট্রোর
মেটাল ডিটেক্টরের নিচে পরীক্ষার তেজ বাড়বে। সারা বছর যে চাবি পকেটে পুরে
অম্লানবদনে বেরিয়ে যাই, এই একসপ্তাহ সেটাকে প্যান্টের পকেট থেকে টেনেহিঁচড়ে বার
করে দেখাতে হবে। “এই দেখুন, বোমা নয়, আমার দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে ঢোকার কল। হল? শান্তি?” এই
ক’দিন পাড়ার রাস্তা দিয়ে মিলিটারিরা ভারি বুট পরে হাঁটবে। রোদে পোড়া জলে ভেজা শরীর,
শক্ত চোয়াল, স্থির চোখ, কাঁধে মারণাস্ত্র, ট্রিগারে আঙুল। সামনে সামনে হাঁটবে ষণ্ডা, গম্ভীর কুকুর। তারও চাল
মিলিটারি। ফুটপাথের যেখান দিয়ে এরা হাঁটবে সেখানটা ফাঁকা হয়ে যাবে। হয় লোকে স্পিড
বাড়িয়ে এগিয়ে যাবে, নয় স্পিড কমিয়ে পিছিয়ে। তেমন ভীতু হলে
সঙ্গীর কনুই ধরে টেনে বলবে, “ওই ফুটে যাই চল।” শহরের বুকে সিভিল আর মিলিটারি জল আর
তেলের মতো একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে থাকবে। মিশ খাবে না।
এর ওপর যদি ওবামা
আসেন তাহলে তো আর রক্ষা নেই।
এত কথা জানা
সত্ত্বেও আমি কি না কারি পাতা গাছের অর্ডার দিলাম বিশে জানুয়ারি, মঙ্গলবার। বাড়িতে
ডেলিভারি নেওয়ার কেউ থাকে না বলে আমরা বিশ্বশুদ্ধু সব জিনিস অফিসের ঠিকানায় অর্ডার
করি। গাছটাও তাই করলাম। তাছাড়া এ গাছ তো পুঁচকে গাছ। কোলে নিয়ে অটো চেপে বাড়ি চলে
যাওয়া যাবে। কথা হল, গাছ আমার হাতে আসবে তেইশে জানুয়ারি শনিবার। এদিকে শনি রবি সোম
অফিস ছুটি। তড়িঘড়ি চিঠি লিখলাম, শুক্রবার বিকেলের মধ্যে গাছ পাওয়া যায় না? চিঠি সেন্ড
করার দশ মিনিটের মধ্যে ফোন এল। সুশীল, পরিশীলিত গলা। কাস্টমার কেয়ারের স্বভাবসিদ্ধ
‘থোড়াই কেয়ার’ উদাসীনতা নেই, বরং বেশ উৎসাহ আর আগ্রহ আছে। যেন গলার মালিক সত্যি
সত্যি চান আমার বারান্দায় একটা কারি পাতার গাছ থাকুক, দুপুরবেলার ঝিলমিল রোদে মাথা
দুলিয়ে খেলা করুক, শনিরবিবার ব্রেকফাস্টের চিঁড়ের পোলাওয়ের স্বাদ বর্ধন করুক।
“নো প্রবলেম
ম্যাডাম, ফ্রাইডে শাম তক আপকা ট্রি মিল যায়েগা।”
আপকা ট্রি! কথাটা
আমার কানে যে কী মধু ঢালল সে আমি আপনাদের বুঝিয়ে বলতে পারব না। এতদিন নার্সারির
ভিড়ে, আরও অন্য সব কারি পাতার জঙ্গলে যে গাছটা মিশে ছিল, নিমেষে যেন সে আমার চোখে
বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে গেল। হয়তো বাকি কারি পাতার গাছেদের থেকে তার গায়ে জোর
খানিকটা কম, হয়তো অন্যন্য ড্যাশিংপুশিং কারি পাতা গাছেদের ভিড়ে সে কাঁচুমাচু হয়ে থাকে।
তারা যতটুকু জায়গা দেয়, ততটুকু ফাঁকফোকর দিয়ে মাথা গলায়। বলে, “হ্যাঁ ভাই, নাও
নাও, আমার বরাদ্দ জায়গাটা তুমি নাও, তোমার বড়সড় শরীরে তো আলোবাতাস বেশি লাগবেই”
বলে সে বুঝদার, সংকুচিত গাছ আরও খানিকটা নুয়ে পড়ে। হয়তো মালি তাকে করুণার চোখে
দেখে। হয়তো ভাবে এটার পেছনে সারজল ঢেলে লাভ কী। এমনিও মরবে, অমনিও।
অথচ যেই না শুনলাম “আপকা
ট্রি”, আমার মন সেই নিমেষে সেই অদেখা, অচেনা কারিপাতার গাছটিকে ভালোবেসে ফেলল। তার
হাজার দোষের ভেতর খুঁজে খুঁজে গুণ বার করতে লাগল। দেখতে রোগাসোগা হলে কী হবে, মনটা
ভালো ইত্যাদি। বারান্দায় পৌঁছনোর আগেই সে গাছ আমার মনের ভেতর একেবারে ডালপালা
ছড়িয়ে বসল।
শুক্রবার এল। আমি ঘন
ঘন বাথরুমে যেতে লাগলাম, ওইদিকেই আমাদের অফিসের দরজা, গাছ আসলে ওইদিক থেকেই আসবে।
যাতায়াতের পথে থেমে রিসেপশনিস্টের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আলাপ করতে লাগলাম। সে বেচারা
ভালোমানুষ, কিচ্ছু সন্দেহ করল না। ঘড়ির কাঁটা ঘুরে যেতে লাগল, লাঞ্চটাইম এসে চলে
গেল, আমার চোখের সামনে পশ্চিমের জানালা দিয়ে সূর্য উঁকি মারল, আমার গাছ এল না। গাছের
বদলে ফোন এল। শহরে কমার্শিয়াল ভেহিকলস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার গাছশুদ্ধু
টেম্পো আই টি ও-র বেশি আর এগোতে পারেনি। আজ এগোনোর আর আশাও নেই। এখন আমার মর্জি,
আমি চাইলে ওঁরা শনিবার আর একবার চেষ্টা করতে পারেন, নয় তো সেই মঙ্গলবার।
আর কী, মঙ্গলবারই
সই। ছুটির তিনদিন আমি বাড়ি গোছালাম, নাটক দেখলাম, ত্রিবেণীতে বসে চা খেলাম আর এই
গোটা সময়টা জুড়ে আমার গাছ আমার মনমাথা জুড়ে রইল।
মঙ্গলবার গাছ এল বেশ
বেলা করে। তিনটে নাগাদ একটা কাজের ঝড় এসে আমার মাথা থেকে গাছটাছ সব বার করে
দিয়েছিল, আমি শিরদাঁড়া সোজা করে ভুরু কুঁচকে মনিটরের ওপর আমার সমস্ত আত্মা ঢেলে
দিয়ে বসেছিলাম এমন সময় লক্ষ্মণ এসে বলল, “ম্যাডাম, কুছ আয়া হ্যায়।”
এক সেকেন্ডের জন্য
আমি ভাবছি এই সময় আবার কে জ্বালাতে এল, হঠাৎ মনে পড়ে গেল, গাছ! আমার গাছ! কাজটাজ
ফেলে দৌড়ে বাইরে গিয়ে চক্ষুস্থির। এটা কী? একটা প্রকাণ্ড টবের ভেতর থেকে হিলহিলিয়ে
উঠেছে . . . উঠেছে . . . এবং উঠে আমার মাথাটাথা ছাড়িয়ে, লিফটের মাথা ছাড়িয়ে প্রায়
ছাদ ছুঁয়ে ফেলেছে। এ কি কারি পাতা না বট?
সেই মহীরুহর পেছন
থেকে এতক্ষণে একটি হাসিমুখ বেরিয়ে এল। “হ্যালো ম্যাম, হাউ আর ইউ?”
আমি আর বললাম না, যে
আপনার গাছ (‘আপনার’ গাছ, খেয়াল করে দেখুন) দেখার আগে তো ভালোই ছিলাম, এখন কিঞ্চিৎ
পেট খালিখালি লাগছে।
বললাম, “ছবিতে যে
দেখলাম এক হাত লম্বা গাছ . . .”
হাসিমুখ জবাব দিল, “আচ্ছা
হ্যায় না ম্যাম, নেহি মরেগা।” এই না বলে মুখের হাসিটি অক্ষত রেখে হ্যান্ডশেক
ইত্যাদি করে সে চম্পট দিল।
ততক্ষণে আমার
চারপাশে ভিড় জমে গেছে। “ইয়ে গামলা ঘর ক্যায়সে লে যাওগি কুন্তলা?”, “ইয়ে হ্যায়
কেয়া?” “আরে, কারি পাত্তা পাতা নেহি?” আমার মতো অনেকেরই দেখলাম ধারণা ছিল না যে
কারি পাতার গাছ এত লম্বা হতে পারে। তারা হাফ করুণা আর হাফ সন্দেহ মিলিয়ে বলল, “আর
ইউ শিওর দিজ আর কারি লিভস্?” বলে চটাস্ করে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে শুঁকতে লাগল। “ওয়াও!
সো স্ট্রং! সি সি!” বলে অন্যদেরও পাতা ছিঁড়তে উদ্বুদ্ধ করতে লাগল।
আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’হাত
দিয়ে গাছ জাপটে ধরলাম। ইয়া ইয়া শিওর শিওর। আমার অবন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার দেখে ভিড়
পাতলা হয়ে গেল, আমি পকেট থেকে ফোন বার করে বললাম, “শিগগিরি এস। কেলেংকারি হয়ে গেছে।”
অর্চিষ্মান পরিমিত
প্রতিক্রিয়ার মানুষ, লিফট থেকে বেরিয়ে গাছটা দেখে ভুরুদুটো মিলিমিটার খানেক
উঠিয়ে বলল, “এটা কী?”
আমি বললাম, “কারি
পাতার গাছ যে তাতে কোনও সন্দেহ নেই, অফিসশুদ্ধু লোক শুঁকে দেখেছে।”
কোনওমতে হ্যাঁচড়াতে
হ্যাঁচড়াতে সেটাকে লিফটে করে নিচে নামিয়ে আনলাম। এবার সিরিয়াসলি ভাবতে হবে বাড়ি
নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। একটা কথা মনে পড়ে গেল। যিনি গাছ দিতে এসেছিলেন তিনি আমাকে
সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন। অর্ধেকটা গাছ কেটে মাটিতে পুঁতে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে
সেটাও বাঁচবে।
তাহলে এখনই সেটা করে
ফেলা যাক। না হলে তো নিয়ে যাওয়া যাবে না।
অর্চিষ্মান আমার
দিকে তাকাতেই আমি পাঁচ পা পিছিয়ে গেলাম। সম্মতি দিতে রাজি আছি, কিন্তু কাজটা তুমি
করবে। ডিরেক্ট প্রাণীহত্যার পাপে আমি নেই। অর্চিষ্মান মট্ করে গাছটার মাঝখান থেকে
ভেঙে ফেলল। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। এরপর দুজনে মিলে ভাঙা কাণ্ডটা টবের মাটিতেই
পুঁতে দিলাম। বাড়ি গিয়ে দেদার জল ঢালব। যদি বাঁচে।
সকলেই জানত, আপনারাও
নিশ্চয় জানেন, সে ভাঙা গাছ বাঁচেনি। পরদিন সকালে উঠে আমি দেখলাম মূল গাছটি আগের
মতোই শক্তপোক্ত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার পাতাগুলো কালকে যেমন ছিল আজও তেমন
চকচকে, আঁটোসাঁটো। কিন্তু ভাঙা অর্ধেকটা যেন কেমন নেতিয়ে পড়েছে, পাতাগুলো কেমন যেন
শুকনো, নিস্তেজ।
ভাঙা অর্ধেকটা মরে
গেল। আর মরে যাওয়ার আগে আমাকে দিয়ে গেল এক গোছা কারি পাতা। আমি মনের দুঃখ মনে চেপে
মরা ডালগুলো থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে ধুয়ে, বারান্দার রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার শিশিতে
ভরে রাখলাম। মনে মনে শপথ করলাম, এদের বলিদান আমি বৃথা হতে দেব না কিছুতেই।
চিকেন কারি পাতা
রান্না করতে আপনার লাগবে দশ প্লাস কুড়ি = তিরিশ মিনিট। প্রত্যক্ষ কাজ হচ্ছে প্রথম
দশ মিনিট, যখন আপনি দুমদাম জিনিসপত্র একখানা বড় বাসনে ফেলে মাখবেন, ফ্রিজ খুলবেন,
বাসন ঢোকাবেন, ফ্রিজের দরজা বন্ধ করে হাতে হাতে ঝাড়বেন। আসল রান্নাটা, অর্থাৎ কি
না, তেল গরম করা, মাংস ছাড়া, খুন্তি দিয়ে মাংস উল্টোনো, চাখা ইত্যাদির জন্য কুড়ি
মিনিট।
রান্না অতি সহজ।
মাংসটাকে নুনহলুদ, লংকাগুঁড়ো, আদারসুনবাটা, কর্নফ্লাওয়ার আর কারিপাতা দিয়ে মেখে
রাখতে হবে। কর্নফ্লাওয়ার মাংসের গায়ে একটা আস্তরের সৃষ্টি করে, তাই রান্না হওয়ার
সময় বাইরেটা ভাজা ভাজা হয় কিন্তু ভেতরটা শুকিয়ে ছিবড়ে হয়ে যায় না। চাইনিজ মাংস
রান্নার একটি আবশ্যক উপকরণ এই কর্নফ্লাওয়ার। অরেঞ্জ চিকেন, জেনারেল শো’স চিকেন
ইত্যাদি খাবারের কথা মনে করে দেখুন। বাইরেটা ভাজা, কিন্তু ভেতরটা রসালো। সব কৃতিত্ব
ওই কর্নফ্লাওয়ারের।
কারিপাতাটা মেশানোর
আগে আমি শুকনো তাওয়ায় সেঁকে নিয়েছিলাম। তাতে পাতাগুলো কড়কড়ে হয়ে গিয়ে গুঁড়ো করতে
সুবিধে হয়েছিল। তাছাড়া কোথায় যেন শুনেছিলাম গরম করলে মশলাপাতি থেকে এসেনশিয়াল
অয়েলটয়েল বেশি নিঃসৃত হয়। অয়েলের কথা জানি না, খোশবাইয়ের কথা জানি। রান্নাঘরের
হাওয়াটা বেশ কারিপাতা কারিপাতা গন্ধের হয়ে গিয়েছিল।
মাংস মেখে কিছুক্ষণ রেখে দিলে নাকি স্বাদ বাড়ে। আমি সারারাত রেখে দিয়েছিলাম। রান্নাটা হবে শুকনোশুকনো,
ভাজাভাজা, তাই এমন একটা পাত্র হলে ভালো যেটাতে মাংসগুলো সব পাত্রের গায়ে লাগবে।
সেদিক থেকে দেখলে এ রান্নার জন্য ফ্রাইং প্যান আদর্শ। ননস্টিক পাত্রে যদি রাঁধেন
তাহলে তেল লাগবে অতি সামান্যই। তেল ভালো গরম হলে মাংসগুলো দিয়ে দিতে হবে। বেশ
ছ্যাঁক করে আওয়াজ করবে। আঁচ মাঝারি দিকে রেখে দু’ থেকে তিন মিনিট ঠায় ওই ভাবে
মাংসগুলোকে রেখে দিন, যাতে নিচটা বেশ লাললাল, ভাজাভাজা হয়। এইবার উল্টে দিয়ে
অন্যদিকটাও সেই রকম ভাজা ভাজা করে নিতে হবে।
এইবার আধকাপ মতো গরম
জল দিয়ে দিন। এই জল দেওয়ার সময় আমার ভেতরের হিসেবি লোকটা বেরিয়ে আসে, আমি গরম জলটা
যে পাত্রটায় মাংসটা মেখে রাখা হয়েছিল, সেটাতে প্রথমে ঢেলে তারপর সেই পাত্র থেকে
রান্নার পাত্রে জলটা ঢালি। তাতে বাসনের গায়ে লেগে থাকা মশলাপাতিগুলোর সদ্ব্যবহার
হয়ে যায়। আপনারা আমার মতো কিপটে হলে সে রকম করতে পারেন, দিলখোলা হলে সোজা ফ্রাইংপ্যানে
জল ঢেলে দিয়ে খেল খতম করতে পারেন। এবার আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে সাত থেকে দশ মিনিট
ফোটালেই টেকনিক্যালি আপনার রান্না শেষ।
কিন্তু টেকনিকের পর
যেটা থাকে সেটাই হচ্ছে আর্ট। আর আর্ট ফরাসিদের থেকে ভালো কে জানে? ফরাসি শেফরা যে
কোনও রান্নাই শেষ করার আগে তাতে এক খাবলা মাখন দিয়ে নামান। তাতে পাতে দেওয়ার মতো
রান্না ভালো রান্নায় পরিণত হয় আর ভালো রান্না নিমেষে উমদা রান্নার মর্যাদা লাভ
করে।
আমরা যেহেতু ফরাসি
নই তাই আমরা এক খাবলার বদলে এক চামচ মাখন দেব। (ফ্যাট ইত্যাদির কথা চিন্তা করব না।
মনে রাখব, কারিপাতায় ফ্যাট প্রায় নেই বললেই চলে, একশো গ্রামে মোটে একশো মিলিগ্রাম
ফ্যাট।) এবার সত্যি সত্যি রান্না শেষ। এবার শুধু খাওয়া। রুটি
দিয়ে, ভাত দিয়ে, শুধুশুধু – যেভাবে আপনার প্রাণ চায়। শুধু একটা কথা আমার রাখবেন,
খাওয়ার সময় পাতের পাশে এক ফালি পাতিলেবুর টুকরো নিয়ে বসবেন। মাংস থালায় তুলে নিয়ে তার
ওপর লেবুর রস চিপে নেবেন। মাংসের গায়ে লেগে থাকা মাখনের মতো মোলায়েম ঝোলের সঙ্গে
মিশে সে যে কেমন একটা মূর্ছনা সৃষ্টি করবে, তার সঙ্গে আমি অনেক খুঁজেও কারও উপমা
খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি মাংসে কামড় বসাবেন। বাইরের মশলাদার পরত ভেদ করে নরম মাংসে
আপনার দাঁত বসে যাবে। এত নরম! হবেই তো। কর্নফ্লাওয়ার দিয়েছিলেন, মনে নেই?
আর কারিপাতা? ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, মিনারেল, ভিটামিন এ, বি, সি, ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড, গ্লাইকোসাইডস আর ফ্ল্যাভোনয়েডস গিজগিজ করা কারিপাতা? চুল
চোখ ত্বক লিভার ভালো করা কারিপাতা? ডায়াবেটিস কোলেস্টেরল মায় ক্যান্সারের সঙ্গে
লড়াই করা কারিপাতা? স্রেফ লজিস্টিকসের সুবিধে করার জন্য আমার হাতে (মানে ঠিক আমার
হাতে নয়, কিন্তু নিজের মনকে চোখ ঠারিয়ে লাভ নেই, ও পাপ যতখানি অর্চিষ্মানের তার
থেকে এক ইঞ্চি কম নয় আমার।) খুন হওয়া কারিপাতা?
সে পাপের এর থেকে
ভালো প্রায়শ্চিত্ত আমি এর থেকে ভালো করে করতে পারতাম না। নির্লজ্জের মতোই বলছি,
বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি, কিন্তু মরণের পর কারিপাতাদের যোগ্য সম্মান দিয়েছি আমি। আমি
নিশ্চিত এই রান্নাটার অংশ হতে পেরে তারা আমার মতোই গর্ব বোধ করেছে।
আপনারা আমার মতো
পাপীতাপী নন, তবু রান্নাটা করবেন। মাখন পাতিলেবু বাদ দেবেন না। খেয়ে আমাকে অবশ্য
করে জানাবেন কেমন লাগল।
চিকেন কারি পাতা
কী কী লাগবে
মুরগির মাংসঃ পাঁচশো গ্রাম
নুনঃ এক চা চামচ
হলুদঃ এক চা চামচ
শুকনোলংকা গুঁড়োঃ এক চা চামচ
আদারসুন বাটাঃ এক বড় চা চামচ
কর্নফ্লাওয়ারঃ এক বড় চা চামচ
কারি পাতা গুঁড়োঃ এক বড় চা চামচ
তেল (সাদা বা সর্ষে) এক বড় চামচ
গরম জলঃ আধ কাপ বা দরকার মতো
মাখনঃ এক চা চামচ (না দিলে ভালো দিলে আরও ভালো)
পাতিলেবুর রসঃ স্বাদমতো (না দিলে ভালো দিলে আরও ভালো)
কী করে করবেন
নুন হলুদ,
লংকাগুঁড়ো, আদারসুন বাটা, কর্নফ্লাওয়ার, কারি পাতা গুঁড়ো দিয়ে মাংসটা মেখে ফ্রিজে
রেখে দিন। এক ঘণ্টা কিংবা সারারাত।
ফ্রাইং প্যানে তেল ঢালুন। তেল বেশ গরম হলে
মাংসগুলো সাজিয়ে দিন। গ্যাসের আঁচ মাঝারি রাখুন। মাংসের নিচের দিকটা বেশ লাল হওয়া
পর্যন্ত (আমার হিসেবে মিনিট তিনেক) অপেক্ষা করুন। তারপর মাংসগুলো উল্টে দিয়ে
অন্যদিকটা লাল হতে দিন। হয়ে গেলে গরম জল ঢেলে ঢাকা দিয়ে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে দিন।
দশমিনিট মতো রান্না হতে দিন। ঢাকনা তুলে দেখুন। যদি মনে হয় ঝোল কম লাগছে আর একটু
গরম জল দিন। নুনঝাল চাখুন।
মাখন দিন। গ্যাস
নিভিয়ে দিন।
খাওয়ার আগে
পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন।
Kuntala, darun lekha songey fau recipe! Ar kipte ke bollo, jara thik thik ranna jane tara manghso mekhe rakha patra ta dhuyei jol ta dey! Sutorang tumi bhalo ra(n)dhuni!
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, রুণা। রান্নার কায়দার যে প্রশংসা করলে তাতে আমি ভীষণ খুশি হলাম। রান্নাটা কেমন হয়েছে সেটার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে।
Deleteissh ki bhalo ranna hoechhe.. chhobi dekhei bujhte parchhi. ar darun sahoj recipe.. banatei hobe eita
ReplyDeleteএটা সিরিয়াসলি বানাবেন, ইচ্ছাডানা। কারিপাতা হাতের কাছে থাকলে এই রান্নাটা না করা একটা ক্রাইম। (আপনার গন্ধরাজ চিকেন এখনও হয়নি। গন্ধরাজ লেবুর দাম শুনে প্রত্যেকবার দৌড়ে পালাচ্ছি। একদিন বুক বেঁধে কিনে ফেলব।)
Deletevintage abantor!
ReplyDeleteধন্যবাদ, কাকলি।
Deleteঅবান্তর মিট অরগানাইজ করো একটা। সেখানে এ চিজটিকে রাখো।
ReplyDeleteএটা ভালো আইডিয়া, তন্ময়।
Deleteআইডিয়াটাকে আমি সেকেন্ড করলাম।
DeleteDarun darun... Ei sunday tei radhbo...
ReplyDeleteকেমন হল জানাস কিন্তু, ভট্টা।
DeleteEta kore dekhtei hobe ... ja darun dekhacche.
ReplyDeleteকরে দেখো, শর্মিলা্, তারপর জানিও কেমন হল।
DeletePara 2, line 5 bishe january hobe na instead of feb :)
ReplyDeleteধন্যবাদ শম্পা। ঠিক করে দিলাম।
Deleteeto mon diye neka pora korle class e first hotam :)
ReplyDeleteহাহা, সেটা না হয়ে কিছু ক্ষতি হয়নি, শম্পা।
Deleteআমি অনেকদিন আগেই বলেছিলুম, একটা লীলা মজুমদার লীলা মজুমদার লক্ষণ আছে!
ReplyDeleteআস্তে বলুন, শীর্ষ, লীলাপিসি শুনলে রেগে চতুর্ভুজ হবেন। বাই দ্য ওয়ে, আপনাকে কথাটা বলা হয়নি। এ বারের পুজোসংখ্যায় আপনার লেখা নয়ন বলে মেয়েটির গল্পটি আমার খুব খুব ভালো লেগেছে।
Deleteআচ্ছা দেখা যাবে, লীলুপিসি রেগে যান, না মাথায় আশীর্বাদী হাত রাখেন! আর, ধন্যবাদ৷
DeleteChhobi te darun dekhachchhe . .. Asole ki ar Oto bhalo hoy? Tin kal giye ek kaale theklo.. Ei boyese ar Na khele protyoy hoy na baapu.
ReplyDeleteUnrelated..but ekta jinis mone porlo. Chakri sutre tokhon onyo Sahara a. Ekdin Ofc a ekta bishal packet delivery elo....Sara ofc er koutuhol tunge ; khola holo....dekha gelo Maa ekta kombol pathiyechhe....seetkaal bole..ar tar modhye abar rodogollar tin ar ekta batabi lebu. Lokjon erokom combo dekhe bhari obaak holo, amod pelo, hasahasi korlo, karakari korlo......
বাঃ, দারুণ কেয়ার প্যাকেজ তো। আমার সব ফেভারিট জিনিস, রসগোল্লা, বাতাবিলেবু। চমৎকার। আপনি খুব ভাগ্যবান।
Deletejak currypatar atmodan britha jayni.. chhobita dekhe mone hochhey khete besh bhalo hoyechhilo.. baki ardhekta gach bechechhey?
ReplyDeleteবেঁচেছে, চুপকথা।
Deleteইইইইইইইইইইস্, এতদিন জানতাম উপমা কালিদাসস্য। আজ বলতেই হচ্ছে, স্বাদে, গন্ধে পরিবেশ সৃষ্টিতে, রসনাকে সিক্ত করতে বর্ণনা কালিদাসস্য উত্তরপুরুষস্য কুলরক্ষয়িত্রীমাতায়াঃ কুন্তলায়াঃ। এতগুলো স্য আর বিসর্গর ভীড়ে কিছু উদ্ধার করা যাবে কি?
ReplyDeleteআপনি যে আমার প্রশংসা করছেন সেটুকু উদ্ধার করতে পেরেছি, মালবিকা। আর কী চাই? থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।
Deleteপ্যাটেল ব্রাদার্স-এ এক না দু ডলারে একটা প্যাকেটে করে অল্প কয়েকটা কারিপাতা বিক্রি হয় দেখেছি, কিন্তু কোনওদিন কেনার মোটিভেশন পাইনি। এর পরেরবার ভাবছি কিনে আনলে হয়। এই রান্নাটা করা যাবে। বাই দ্য ওয়ে, আপনার ওই "ট্রি" শুনেই আমার খটকা লেগেছিল। তবে ওই আধখানাও হয়ত বাঁচত, সময় দিলে। পাতাগুলো নেতিয়ে ঝরে যাওয়ারই কথা, গাছটা তাও বেঁচে যেতে পারে। তবে আপনি সেটাকে পুঁতে রেখে এখনও জল দিচ্ছেন কিনা সন্দেহ।
ReplyDeleteরান্নাটা করে দেখবেন, সুগত। করে জানাবেন কেমন হল। আরে আমি তো ভাঙা ডালটা এখনও পুঁতে রেখে জল দিচ্ছি! পাপবোধে সেটাকে তুলে ফেলতে পারিনি। আশা আছে বলছেন? দেখা যাক, শীত কাটলে কী হয়। কী আনন্দ, কী আনন্দ!
Deleteবম্বেতে কয়েকমাস থাক্, ইহজীবনে আর কারিপাতা মুখে তুলবি না।
ReplyDeleteএ বাবা, তাহলে তো বাজে ব্যাপার।
Deletehehe.. amio ager comment er moto tai bolchilam.. keralay kichudin thakle ar karipata kichutei khete icche korbe na.. kintu ei ranna ta interesting laglo.. dekhi korbo ekdin..
ReplyDeleteকরে দেখিস, ঊর্মি। ইন্টারেস্টিং কি না জানি না, সোজা এবং ভালো খেতে।
DeleteAj rnedhe phelechhi. Barir began e ekta asto karipata gachh achhe... Puro sodbyabohar. Barite sobaikar besh bhalo legechhe ar sobcheye boro kotha holo somoi khub kom legechhe :-)
ReplyDeleteআরে কেয়া বাত, কেয়া বাত্ ইচ্ছাডানা। যাক, আপনাদের যে ভালো লেগেছে এইটা ভালো। খেতে ভালো হয়েছের থেকেও আমি ওই রাঁধতে সোজা-র ফিডব্যাকটা শুনে বেশি খুশি হয়েছি। খাবার ভালো খেতে হয়ে লাভ কী, যদি রাঁধতে গিয়েই প্রাণ বেরিয়ে যায়?
DeleteMekhe rekhechi... Sondhebela korbo.... :)
ReplyDeleteKuntala di, eita khub bhalo hoyechilo. Easy ranna Kheteo darun..
Deleteবাঃ, চমৎকার, চমৎকার। খুব খুশি হলাম জেনে, ঊর্মি।
DeleteRannata anekdin holo korechhi, Maa aar Bou Angul chete chete roga kore felechhe. Daarun recipe. karipata shukiye jhuro kore newar ideata ASADHARAN!! :) :)
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, চন্দ্রচূড়। রান্নার ফিডব্যাক তাও আবার পজিটিভ! সত্যি সত্যি খুশি হলাম।
DeleteTomake kokhono bola hoyni, eta 2015 tei dubar try korechhilam, dui barei 10-12 jon moto kheyechhilo. Jara jara kheyechhilo tara ekhono dekha hole bole arekdin kore khaoate :)
ReplyDeleteএই কমেন্টটা যে কী আশ্চর্য আনন্দ দিল, অপরাজিতা। বহু বছর পর আবার রান্না করতে ইচ্ছে করছে।
Delete