ধর্মের বিষ আর কুমারীর বাস/ অগস্ট (২০১৬) মাসের বই
The Poisonwood Bible/ Barbara Kingsolver
উৎসঃ গুগল ইমেজেস
উনিশশো ঊনষাট সালে চার মেয়ে র্যাচেল, লিয়া, আডা, রুথ মে এবং এক বউ অরলিয়ানাকে সঙ্গে করে এভ্যানজেলিক্যাল ব্যাপ্টিস্ট নাথান প্রাইস কঙ্গো পৌঁছন মিশনারি দায়িত্ব সারতে। গন্তব্য কিলাংগা নামের একটি ছোট গ্রাম। প্রাইস পরিবারের সংক্ষিপ্ত কিলাংগাবাসের অভিজ্ঞতা এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জীবনে অভিজ্ঞতার দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ ছায়াপাত নিয়ে বারবারা কিংসলভারের লেখা পয়জনউড বাইবেল, প্রায় সাড়ে পাঁচশো পাতার বই, হার্পার প্রকাশনী থেকে ছাপা হয়েছিল উনিশশো আটানব্বই সালে। উনিশশো নিরানব্বই সালের ফিকশন বিভাগে পয়জনউড ফাইন্যালিস্ট ছিল। ( জিতেছিল মাইকেল ক্যানিংহ্যামের দ্য আওয়ারস।)
গল্পটা আমাদের বলে অরলিয়ানা এবং তার চার মেয়ে। নাথানের কোনও বক্তব্য আমরা শুনতে পাই না। তার কারণ আডার মন্তব্যে স্পষ্ট। “Our father speaks for all of us”। মা আর চার মেয়ে পাঁচরকম ভাবে আমাদের কিলাংগা, কিলাংগার মানুষ, মাঠ, নদী, নদীর কুমীর, খরা, বন্যা, শিকার, পুরুষতন্ত্র, ওঝাতন্ত্র, খুনি পিঁপড়ে, আপাতভাবে কিলাংগার নাগালের বাইরে কিন্তু কিলাংগাকে নিরন্তর ছুঁয়ে যাওয়া কঙ্গো এবং বিশ্ব রাজনীতির* গল্প বলে। আর সে গল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে কী ভাবে পালটে যাচ্ছে এই পাঁচটি মানুষের দর্শন, পারস্পরিক সম্পর্ক। কারও চোখ ফোটে, কেউ অন্ধ হয়ে যায়। কঙ্গো, কিলাংগা, আফ্রিকা কীভাবে প্রাইস পরিবারকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে তারই গল্প হচ্ছে পয়জনউড বাইবেল।
* প্রাইসরা পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই কঙ্গোর রাজনীতিতে পালাবদল শুরু হয়। বেলজিয়াম শাসন শেষ হয়ে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিক লুমুম্বা। তারপর অ্যামেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বেলজিয়াম, ইউ এন এবং কঙ্গোর ক্ষমতালোভী লোকজন মিলে এক অভূতপূর্ব গোলযোগের সৃষ্টি করে। উনিশশো একষট্টি সালে প্যাট্রিক লুমুম্বা অকথ্য অত্যাচার সয়ে খুন হন এবং জোসেফ মোবুটু নামের এক বাঁধিয়ে রাখার মতো মানুষের হাতে পড়ে (এবং সাদা বড়লোক দেশদের সম্পূর্ণ সহযোগিতায়) পরবর্তী তিরিশ বছর ধরে কঙ্গো লুণ্ঠিত হতে থাকে। এসবই বারবারা কিংসলভার ছুঁয়ে গেছেন তাঁর বইয়ে।
পয়জনউড বাইবেলের সবথেকে ভালো জিনিস হচ্ছে কিলাংগা। আর তারপরই কিংসলভারের ভাষা। পাঁচ বয়সের পাঁচ মহিলার ভাষা একেবারে পাঁচরকম। খানিকটা পড়ার পর আপনি নিজে থেকেই বুঝতে পারবেন কোন গলাটা কার। আর কিংসলভারের রসবোধ। ওই গোলমালের মধ্যেও মাঝে মাঝে সশব্দ হাসি বেরিয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে পয়জনউড বাইবেল জমজমাট, একবার শুরু করলে থামতে না পারা বই।
তবু কেন আমি পয়জনউডকে পাঁচে তিন দিলাম সে কথায় আসি। পয়জনউড বাইবেলের প্রধান অসুবিধে আমার মতে ভালোখারাপের ভাগাভাগি। নাথান প্রাইস একটি ধর্মান্ধ, অত্যাচারী, নারীবিদ্বেষী অমানুষ। কাজেই তার নিন্দে করার জন্য খুব বেশি মগজ খরচ না করলেও চলে। আর লোকটা এই রকম বলেই তার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ নীরব করে দিয়ে কিংসলভার পাঠকের কাজটা অত্যন্ত বেশি সোজা করে দিয়েছেন। পাঁচ ভিকটিমের মধ্যেও কিংসলভারের পক্ষপাতিত্ব প্রকট। বোনেদের মধ্যে একজন আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছে, একজন বিদ্যাবুদ্ধির জন্য, আরেকজন বিষয়সুখের জন্য। এই বিষয়সুখলোভী বোনটিকেও প্রায় ক্যারিকেচারের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন লেখক। এবং শুধু তাতেই ক্ষান্ত দেননি, সকলের মধ্যে সে বেচারাকেই অসুখী করে রেখেছেন। কোনও কোনও সন্ধ্যেবেলা দামি ওয়াইন নিয়ে প্রাসাদের বারান্দায় বসে একা তারই মনে হয় সব থেকেও কী যেন নেই। যারা আদর্শবাদী কিংবা বুদ্ধিজীবী, তাদের মনে কখনও এরকম কিছু আক্ষেপ জাগে না। বড়লোক বোনের প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে কখনও তাদের ঈর্ষা হয় না। কখনও, কোনও দুর্বল মুহূর্তেই আদর্শ/+ ডিগ্রির মুখে লাথি মেরে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ইচ্ছে তাদের বুকে কখনও মাথা তোলে না।
*****
Parfume: The Story of a Murderar/Patrick Süskind
অনুবাদকঃ John E. Woods
উৎসঃ গুগল ইমেজেস
পারফিউমঃ দ্য স্টোরি অফ আ মার্ডারার-এর আসল নাম Das Parfum। জার্মান ভাষায় বইটা লিখেছিলেন Patrick Süskind। উনিশশো পঁচাশি সালে বইটি ছাপা হওয়ার পর এ যাবৎ আটচল্লিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে কুড়ি মিলিয়ন কপির বেশি।
গল্পের মার্ডারার হচ্ছেন সতেরোশো আটত্রিশ সালে প্যারিসের জন্মানো Jean-Baptiste Grenouille। ফরাসিতে Grenouille শব্দের মানে ব্যাং, কাজেই Jean-Baptiste-এর চেহারা সম্পর্কে একটা ধারণা সেখান থেকে করে নেওয়া যায়। Jean-Baptiste-এর মা ছিলেন এক মাছব্যবসায়ী। Jean-Baptiste-এর আগেও তাঁর বেশ ক’টি সন্তান হয়েছিল। তিনি প্রতিটি সন্তান প্রসব করেছিলেন ওই মাছের বাজারে কাজ করতে করতে। এবং প্রসবান্তে তাদের ওই বাজারেরই নোংরা গাদায় ফেলে রেখেছিলেন যাতে তারা পত্রপাঠ মারা যায়। মায়ের কপাল খারাপই বলতে হবে, তাঁর গর্ভে Jean-Baptiste জন্মালো। মা জন্ম দিলেন এবং অভ্যেসমতো নোংরা গাদায় ফেলে দিলেন।
একটু বাদে সেই নোংরা গাদা থেকে উঠে এল এক গগনবিদারী আর্তনাদ। বাজারশুদ্ধু লোক ছুটে এল। আস্তাকুঁড় থেকে বেরোলো নবজাতক। মায়ের অপরাধও বেরোলো। জানা গেল এ-ই প্রথম নয়, এর আগেও সে এই কাণ্ড করেছে। নিজের সন্তানদের খুনের অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড হল। Jean-Baptiste বেঁচে রইল। বেঁচে রইল কেবল Jean-Baptiste বলেই। অন্য কেউ হলে বাঁচত না। কেউ Jean-Baptiste কে ভালোবাসত না। সকলেই তাকে ভয় পেত। কেউ কেউ মুখে বলতও, Jean-Baptiste মানুষ নয়। সাক্ষাৎ শয়তান।
Whoever has survived his own birth in a garbage can is not so easily shoved back out of this world again. He could eat water soup for days on end, he managed on the thinnest milk, digested the rottenest vegetables and spoiled meat. In the course of his childhood he survived the measles, dysentery, chicken pox, cholera, a twenty foot fall into a well, and a scalding with boiling water poured over his chest. এর পর ট্যানারিতে কাজ করতে করতে Jean-Baptiste-এর অ্যানথ্রক্স হয় এবং সে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকেও Jean-Baptiste বেঁচে ফেরে।
ধ্বংসের অতীত হওয়াই অবশ্য Jean-Baptiste-এর একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়। Jean-Baptiste-এর সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার ঘ্রাণশক্তি। মানবসভ্যতার ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘ্রাণশক্তির সদ্ব্যবহার করে Jean-Baptiste একজন পারফিউমার হয়ে ওঠে। গন্ধ তার কাছে শুধু পেশা ছিল না, ছিল অস্তিত্বের মূল কথা।
কিন্তু মার্ডার কোথায়? সেটা আমারও প্রশ্ন। নিজের গন্ধের নেশা চরিতার্থ করতে Jean-Baptiste একাধিক খুন করে ঠিকই, কিন্তু গল্পটা পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন সে সব খুন গল্পের অত্যন্ত অকিঞ্চিৎকর জায়গা দখল করে আছে। যারা খুন হয়েছে তাদের নামধাম কিছুই আমরা জানতে পারি না। তারা গল্পে ছিল Jean-Baptiste নামের একটি অতি অদ্ভুত মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে।
Patrick Süskind-এর ভাষা খুবই শক্তিশালী। বর্ণনামূলক লেখা আমার মতে এমনিই শক্ত, আর এ বর্ণনার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে ঘ্রাণশক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান। পাতার পর পাতা জুড়ে গন্ধের বর্ণনা দিয়ে গেছেন লেখক অথচ তা কখনও একঘেয়ে হয়ে ওঠেনি।
পারফিউম-এর প্রতি আমার একটিই নালিশ। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে পারফিউম-এর সব বড় গুণ ছাপিয়ে সেই নালিশটাই ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে। যখনই মনে পড়ছে পৃথিবীর সেরা গন্ধের উৎস হিসেবে লেখক সুন্দরী সদ্যযৌবনোদ্গমা কুমারী (কুমারীর অংশটা জরুরি। চুলের রং একটু ফ্যাকাশে, নাকচোখমুখ একটু কম কাটাকাটা হলেও চলবে, কিন্তু অনাঘ্রাতা না হলে চলবে না) ছাড়া আর কিছু পেলেন না, তখনই নাকখানা কুঁচকে যাচ্ছে। ওই খবরটা যেন এককুচি মরা ইঁদুরছানা, গোটা দুশো তেষট্টি পাতার প্রস্ফুটিত মুঘল গার্ডেনকে মাটি করার জন্য একাই একশো।
Perfume গল্প টা নিয়ে সিনেমাটা দেখোনি বোধহয়.. কেমন ভয়াবহ আর নোংরা মতন... ২০০৬ টা ২০১৬ হবে তো?
ReplyDeleteঊর্মি, আসলে দশ বছর ল্যাগে চলছি কি না, সেটাই ফ্রয়েডিয়ান স্লিপে বেরিয়ে পড়েছে। থ্যাংক ইউ, ঠিক করে দিলাম।
Deleteসিনেমাটার কথা আমাকে আরেকজন বলল এবং তোর মতোই বলল। নোংরাতে অসুবিধে নেই, যে সময়ের যে প্রেক্ষাপটে গল্প সেই জায়গাগুলো নোংরা বটে। দেখেশুনে সিনেমাটা দেখার ইচ্ছে হচ্ছে একটু একটু।
Perfume ta porini, pore dekhbo tobe poison wood bible somporke amar o exactly same one hoyechilo jar jonya besh koshto kore boita sesh korte hoyechhilo
ReplyDeleteহ্যাঁ, একটু মোটা দাগের বইটা, চুপকথা। তাছাড়া কিলাংগা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বোরিংও।
Delete(কুমারীর অংশটা জরুরি। চুলের রং একটু ফ্যাকাশে, নাকচোখমুখ একটু কম কাটাকাটা হলেও চলবে, কিন্তু অনাঘ্রাতা না হলে চলবে না)
ReplyDeletekhoche jachcho keno,oituku filmy material chara boi bikri hobe...
are perfume cinemata dekhecho...mando noy try korte paro..ami biota porini,cinema ta dekhechi..
prosenjit
কেমন ভয়াবহ আর নোংরা মতন
ReplyDeletemane bojho kato sundor cinematography...je keu bolte badhyo hochche je kemon jeno ekta lagche..khub purono period dekhano hochche to..ar kichu bolboona,cinema ta dekho..
prosenjit