পৌষমেলা ২০১৯



অপেক্ষাকৃত বড় বাড়িতে শিফট করার পর আর আরও খানিকটা অলস হয়ে যাওয়ার পর আমরা আমাদের বাড়ি পরিষ্কার করার দায়িত্ব আউটসোর্স করেছি এবং সে দায়িত্ব নিয়েছে রীতা। রীতা দরকারের বেশি কথা বলে না, না বলে কামাই করে না, চটপট কাজ করে, আমার দ্বারা হচ্ছে না দেখলে নিজেই মোড়ায় চড়ে ঝাঁটার হ্যান্ডেল দিয়ে খুঁচিয়ে একজস্ট ফ্যান চালু করে দেয়। 

সেই রীতা চা খেতে খেতে বলল, মেলায় যাচ্ছ তো?

বড় বড় বাঁশ ফেলে চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজ আয়োজিত পৌষমেলার প্যান্ডেল হচ্ছে বাড়ির উল্টোদিকের মেলা গ্রাউন্ডে, লগ্নজিতা আর অনুপম রায় গান গাইতে আসছেন, যাচ্ছি বইকি। রীতা বলল, ফাংশান তো সন্ধেবেলায়, দুপুরে ফুড ফেস্টিভ্যালে যাবে না? আমি শনিরবি দু’দিনই দোকান দিচ্ছি। শনিবার পাটিসাপটা, পুলিপিঠে আর রবিবার মাংসভাত।

স্বীকার করতে লজ্জাই হচ্ছে কিন্তু খবর শুনে লাফিয়ে পড়ে, ‘আহা চমৎকার কেয়া বাত’ বলার বদলে চোখ কপালে তুলেছিলাম। বলেছিলাম, সর্বনাশ, তোমার তো এমনিই পরিশ্রমের অন্ত নেই, আবার এত খাটবে? রীতা বলল, কেন মজা হবে তো। সংযত হলাম। বোঝাই যাচ্ছে ও আমার মতো যতটুকু না করলে নয় কোনওমতে সেরে তারপর চিতপাত হয়ে শুয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলার নীতি নিয়ে চলে না। কায়িক পরিশ্রম করে আনন্দ পায়। আর নিরুৎসাহ করলাম না। বললাম, নিশ্চয় যাব। 

যাচ্ছি যাব করে শনিবার দুপুর একটা নাগাদ গিয়ে যখন মাঠে পৌঁছলাম তখন খাওয়াদাওয়া তুঙ্গে। অনেক খুঁজে রীতাকে আবিষ্কার করা গেল; ঝকমকে লাল শাড়ি পরে মহা ব্যস্ত হয়ে দোকান সামলাচ্ছে। দু’খানা পাটিসাপটা চাইলাম, তিনখানা দিল, হাফ দামে। হাফ দামেটা প্রথমে বুঝিনি। ভাবছি দশ টাকায় এতখানি নারকেলের পুর দেওয়া, এত বড়, এমন সুস্বাদু পাটিসাপটা? এর অর্ধেক সাইজের শুঁটকোমতো পাটিসাপটা সি আর পার্কের মিষ্টির দোকানগুলো চব্বিশ টাকা পিস নেয়। তারপর লোক সরে যেতেই দেখি টেবিলে ঝোলানো হাতে লেখা মেনুতে পাটিসাপটার পাশে দশ নয়, কুড়ি টাকা লেখা আছে। তাড়াতাড়ি বাকি টাকা দিতে গেলাম, রীতা আমার হাত ধরে টেনে দোকানের সীমা পার করে দিয়ে বলল, এখান থেকে যাও দেখি, ঝামেলা কোর না, কাস্টমার আসছে দেখছ না?

খাবারের দোকান, শাড়ির দোকান, ছবির দোকানের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছি, রিসেপশান থেকে মাইকে লাকি ড্রয়ের ঘোষণা হচ্ছে। ষষ্ঠ প্রাইজ এয়ার পিউরিফায়ার শুনে তাকাতাকি করলাম। ওটা আমাদের কেনার প্ল্যান, লাকি ড্রয়ে পেলে বেশ হয়। অবশ্য এই গোছের লটারির খেলায় আমাদের আমাদের দুজনেরই লাক অতি খারাপ। অফিসের দিওয়ালি পার্টির তাম্বোলা থেকে ডি ডি এ ফ্ল্যাটের লটারি, কোনওটাতেই আমরা কিস্যু জিতি না কোনওদিন। কাজেই নাম দিলাম না। বার বার যেচে নিজেদের আনলাকি প্রমাণ করতে কার ভালো লাগে? 

কিন্তু তারপরই এমন একটা দোকান আবিষ্কার হয়ে পড়ল যে নিজেদের আর অত ভাগ্যহত মনে করা গেল না। কোণার দিকে দোকানটা। দোকানের ভেতর ধূলিধূসরিত, ছেঁড়াখোঁড়া, লাইব্রেরিমার্কা মলাটবাঁধাই সারি সারি বই।


বঙ্গীয় সমাজের লাইব্রেরিতে জায়গা আঁটছে না বলে কর্তৃপক্ষ বইপত্র বিদায় করছেন। রোগা বই তিরিশ টাকা, মোটা বই পঞ্চাশ। আমরা পাঁচটা মোটা বই আর আটটা রোগা বই কিনলাম। কয়েকটা বই আগে পড়া, কিন্তু পুরনো ছাপাতে এত সুন্দর লাগছে দেখতে যে লোভ সামলান গেল না। 



এখন অর্চিষ্মান শ্রেষ্ঠ কিশোর অমনিবাসটা পড়ছে আর ক্রমাগত খুকখুক আর মাঝে মাঝে হোহো করে হাসছে। আমাকে কাজ থামিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই হচ্ছে কী পড়ছ শুনি। ল্যাজে গরম চা ফেলে সিংহকে কাবু করা ইত্যাদি মচৎকার প্লটের গল্প। ওর শেষ হলেই আমি ধরব।

রাত আটটায় লগ্নজিতার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা, সিট পাওয়া সুনিশ্চিত করতে সোয়া সাতটায় পৌঁছনোই যথেষ্ট মনে হয়েছিল। সাতটা কুড়িতে মেলা গ্রাউন্ডে ঢুকে দেখি আমাদের দুজনের তো ছেড়েই দিলাম, একটা মাছি বসারও জায়গা নেই। লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করার সুবাদে আমি যে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ লাইফ স্কিলের অধিকারী হয়েছি তার মধ্যে একটা হচ্ছে ফাঁকা সিট খুঁজে বার করা। শপিং মলের ফুড কোর্টে, ট্রেনে বাসে, পৌষমেলার ভিড়ে - আমার পাঁচশো মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ফাঁকা সিট থাকলে আমি গন্ধ পাই। এ মেলাতেও অন্যথা হল না। নাকের ডগায় একখানা সিট পেলাম এবং বসে পড়লাম। অর্চিষ্মানকে তারপরের দেড় ঘণ্টায় অন্তত আরও সাতটা সিট খুঁজে দিয়েছিলাম, ও বসতে রিফিউজ করল, কারণ লোক পেরিয়ে যেতে হবে। বললাম, তাহলে আমার সিটেই বস না হয়, একটু চেপে বসছি, দুজনে হেসেখেলে এঁটে যাব, তাতেও রাজি হল না। তারপর বললাম, ঠিক আছে আঁটাতে হবে না, আমি উঠছি, তুমি গোটা সিট নিয়েই বস না হয়। তাতেও রাজি নয়। রাত সোয়া এগারোটায় ফাংশান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঝাড়া চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল। আমি দেড় ঘণ্টা পর উঠে পড়ে বাকি আড়াই ঘণ্টা ওকে সঙ্গ দিলাম।


লগ্নজিতা বললেন মাস্টার্সের শেষ বছর নাকি উনি দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে করেছেন, নর্থ ক্যাম্পাসে থাকতেন, উইকএন্ডে দু’নম্বর মার্কেটে বাজার করতে আসতেন। মেলা গ্রাউন্ডে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাটেলাও করেছেন। সেই গ্রাউন্ডেই গানের অনুষ্ঠান করতে এসে রোমাঞ্চিত লাগাই স্বাভাবিক। লগ্নজিতা স্টেজে আসার সময় এবং গান চলাকালীনও দর্শকশ্রোতারা উত্তেজিত হয়ে হাততালি এবং আরও নানারকম উৎসাহব্যঞ্জক শব্দ করছিলেন কিন্তু তিনি মিনিট পঁয়তাল্লিশ গেয়ে নেমে যাওয়ার পর অনুপম রায় যখন দৌড়তে দৌড়তে, শূন্যে ঘুঁষি ছুঁড়তে ছুঁড়তে স্টেজে আবির্ভূত হলেন, জনতা এমন উদ্বেলিত হয়ে উঠল যে কহতব্য নয়।


স্বাভাবিক। গত আট বছরে হিট গান বলতে যা বোঝায়, যা লোকের মুখে মুখে ঘোরে, যার কথা সবার মুখস্থ হয়ে যায়, তেমন গানের অধিকাংশের মালিক অনুপম রায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে খানদুয়েক হিন্দি, একখানা লোকগীতি আর একখানা পুরনো দিনের বাংলা গান বাদ দিয়ে সব নিজের গান গাইলেন অনুপম, সবই হিট এবং সবই জনতা সঙ্গে সঙ্গে মুখস্থ গাইতে পারে। 

গত পুজোয় পকেট ফরটির মাঠে অঞ্জন দত্তের লাইভ শো দেখেছিলাম। অঞ্জন দত্তর ক্যারিশমা, স্টেজের ওপর দখল অনেক বেশি। সেটা স্বাভাবিকও হয়তো। কিন্তু অনুপম রায় অত্যন্ত পরিশ্রমী পারফর্মার, দর্শকদের মনোরঞ্জনে ফাঁকি দেন না। ক্রমাগত ইন্টারঅ্যাকট করেন, বোরড হওয়ার সুযোগই দেন না। গান শুরু করার আগে গানের সম্পর্কে নানারকম ক্লু দেন। যেমন ধরুন বললেন, এখন যে গানটা হবে, সবাইকে মোবাইলের আলো জ্বেলে মাথার ওপর তুলে নাড়তে হবে কারণ আমরা এখন একটা অন্ধকার……বলে হাসি হাসি মুখ করলেন আর জনতা ‘বোওওবাআআ টাআআনেএএল’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। হাত তুলুন, চিৎকার করুন, ফোন জ্বেলে মাথার ওপর তুলে ধরে নাড়ান, দর্শকশ্রোতাদের প্রতি অনুপম রায়ের দাবি অগুনতি। তবে উনি নিজেও পরিশ্রম করেন কাজেই অন্যায্য লাগে না। জোড়া পায়ে লাফান, শূন্যে ঘুঁষি ছোড়েন, ঝুঁকে পড়ে এয়ার গিটার বাজান। ওঁর সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের দায়িত্বে যাঁরা স্টেজে ছিলেন তাঁরাও জমজমাটি। নবারুণ বলে যিনি কি-বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর কথা না বললে অন্যায় হবে। এমন একেকটা মুহূর্ত আসছিল যে নবারুণের দুই হাত কি বোর্ডে এবং দুই পা শূন্যে ছিল। অন গড ফাদার মাদার। স্টেজ জুড়ে ধোঁয়া, লাফালাফির মধ্যে আসর খুবই জমে উঠেছিল। মাঝে মাঝেই শ্রী রায়, 'কাম অন, সি আর পাআআআর্ক!' হুংকার ছাড়ছিলেন। অনুপম বুদ্ধিমান, বোঝেন যে দর্শকের কোন বোতাম টিপলে কাজে দেবে। বলছিলেন, দুই কানে সি আর পার্কের চিৎকার নিয়ে কলকাতা ফিরে যেতে চাই, পাব কি? শুনে মেলা গ্রাউন্ড একেবারে পাগল হয়ে উঠছিল। লোকে স্কার্ফ খুলে মাথার ওপর নাড়িয়ে, লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে একাকার। অনুপম 'আমি আমি' বলে মাইক ঘোরাচ্ছিলেন, মেলা গ্রাউন্ড ‘জানি জানি’ গর্জে উঠছিল। সে এক দেখাশোনার মতো ব্যাপার।


অনুপম গেয়েওছেন ভালো। আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম উনি এখন গান শেখেন এবং চর্চা করেন। বোঝা যায়। না হলে আড়াই ঘণ্টা ধরে অত পরিশ্রম করে গাওয়া যায় না।

গান এতই জমে উঠেছিল যে আমরা সাড়ে ন’টা থেকে চল যাই, যাবে নাকি, উঠি নাকি, আর পাঁচ মিনিট করতে করতে শেষ পর্যন্ত রয়ে গেলাম। মাঝে একবার খাবারের খোঁজে যাওয়া হয়েছিল। অনেকরকম খাবারই ছিল, চাইনিজ, কাবাব হ্যানাত্যানা; দেখেশুনে বঙ্গীয় সমাজ ক্যান্টিনের স্টল থেকে গরম গরম কড়াইশুঁটির কচুরি আর ছোলার ডাল খেলাম। মচৎকার। অর্চিষ্মান ফিশ ফ্রাই নিয়েছিল দু’খানা, ফার্স্ট ক্লাস নাকি। ডেজার্টে আমরা কালা খাট্টা চুসকি খেলাম। আশেপাশে যাঁরা চুসকি খাচ্ছিলেন, তাঁরাও সবাই কালা খাট্টা চুসকিই খাচ্ছিলেন। যতবারই খাই, সর্বদা সহ-চুসকি খাইয়েদেরই কালা খাট্টা চুসকিই খেতে দেখি। আমার চুসকি খাওয়ার ইতিহাসে আমি এ যাবত একজনের দেখা পেয়েছি যিনি স্ট্রবেরি না কী একটা ওইরকম ফ্লেভারের চুসকি অর্ডার করেছিলেন। বাকি সবাই কালা খাট্টা। কালা খাট্টা ছাড়া আর যে সারি সারি লাল নীল হলুদ সবুজ সিরাপের বোতলগুলো সাজান থাকে দোকানে ওগুলোর কী হয় সেটা আমার জানার ইচ্ছে খুব। আমি আজীবন কালা খাট্টা খাই, অন্য কিছু খাওয়ার প্ল্যানও নেই। বাকিগুলো নির্ঘাত এক্সপায়ার্ড।

এগারোটা পাঁচে অনুপম অবশেষে 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও' ধরলেন। সাড়ে আটটা থেকে, যখন অনুপমের গলায় উত্তরীয় হ্যানাত্যানা দেওয়া হচ্ছে, একজন দর্শক চিৎকার করে গানটার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। শেষটায় সাড়ে দশটা নাগাদ অনুপম আর না থাকতে পেরে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখুন, ওই গানটা না গেয়ে আমি তো কোথাও যাচ্ছি না, আপনার যদি তাড়া থাকে তো বলুন। গোটা প্যান্ডেল হেসে এর ওর গায়ে পড়ল। শেষটা যখন গানটা সত্যি সত্যি হল, সে এক আবেগঘন ব্যাপার। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, আমার বাবার থেকেও বেশি বয়সী লোকেরা মাথা নেড়ে নেড়ে ‘নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি’ কোরাস ধরছিলেন। এটা আমি সবসময় বলি, তোমাকে চাই-এর পর আর কোনও গান যদি ফেনোমেনন হয়ে থাকে (দুটো গানের কোয়ালিটির তুল্যমূল্যতা নিয়ে মন্তব্য করছি না) , তবে সেটা 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।' 

লাইভ শো দেখার পর অ্যাড্রিনালিন রাশ হয়ে যায়। বাড়ি এসে আমরা আরও খানিকক্ষণ কী হল, কেমন হল,কে কেমন নাচ করল আলোচনা করলাম। অর্চিষ্মানের দেখি কেমন আনমনা, চিন্তিত ভাব। বললাম, কী হয়েছে বল দেখি। 

অর্চিষ্মান বলল, একটা জিনিস খেয়াল করলাম বুঝলে।

কী জিনিস?

অনুপম রায় তো ছেড়েই দাও, আমি লগ্নজিতার গানগুলোও সব জানি। কয়েকটার তো লিরিকসও জানি, যেগুলো জানি না সেগুলোও হুঁ হুঁ করে গাইতে পারার মতো চিনি।

আমিও চিনি। চেনাই স্বাভাবিক। আমাদের টিভিতে যে রেটে সংগীত বাংলা চলে না জানলেই অদ্ভুত হত। তাছাড়া উপল সেনগুপ্তর বাড়ির ছাদের রুফটপ কনসার্টের ইউটিউব প্লে লিস্ট ইত্যাদি আমাদের বাড়িতে ননস্টপ চলে। বাংলা আধুনিক গানের জ্ঞানের একেবারে ফ্রন্টিয়ারে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। 

অর্চিষ্মান শর্মিলা ঠাকুরের মতো মুখ করে বলল, সেটা ভালো না খারাপ?

ওর দ্বিধা হচ্ছে আমাদের কালচারাল কনসাম্পশনের ছিরি দেখলে লোকে আড়চোখে তাকাবে। নিজেদের ইনটেলেকচুয়াল বলে চালানোর আমাদের যে মারাত্মক সাধ, তা আর যুক্তিযুক্ত প্রমাণ করা যাবে না।

আমি বললাম, ছাড়ো তো। লোকের কথা শুনে কেউ কোনওদিন বড়লোক বা ইন্টেলেকচুয়াল, কোনওটাই হয়নি।

অর্চিষ্মানের সংশয় ঘোচাতে পারলাম কি না জানি না। আর সবেতেই তো পিছিয়ে পড়েছি , অন্তত বাংলা মেনস্ট্রিম সংগীতের ক্ষেত্রে যে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছি তাতে আমি শুধু গর্বিত হওয়ারই কারণ দেখছি। 

শনিবার মেলার পেছনে অনেক সময় গেছে, কাজেই রবিবার কোমর বেঁধে কাজের সদিচ্ছা ছিল। কিন্তু রোদঝলমল শীতের দুপুর, গেটের বাইরে পা দিলে একটা আস্ত মেলা বসেছে, মাইকে গান, কথা, ভেসে আসছে, একবার উঁকি না দিলে কেমন না?

নিজেদের চিনতে বাকি আছে এখনও তাই ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে ফুলকপির তরকারি দিয়ে ডাল ভাত খাব। মাঠে চেয়ার পেতে রোদ পোয়াতে পোয়াতে জনতাকে নানারকম সুখাদ্য সেবন করতে দেখে হাঁটু দুর্বল হল, বিরিয়ানি আর চাউমিন দিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সারলাম।


খাওয়ার পর চা খুঁজতে গেলাম, পেলামও একেবারে যা চাই তাই। লেমন টি। বাড়ি গিয়ে কাজ করলেও হত, আবার চায়ে চুমুক দিতে দিতে চেয়ারে বসে সামনে পা টানটান ছড়িয়ে কুইজ শুনলেও হত। আমরা কোনটা করলাম আন্দাজ করার জন্য কোনও প্রাইজ নেই। পুরস্কার বিতরণ দেখে, জোরে জোরে হাততালি দিয়ে বিজয়ীদের অভিনন্দিত করে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে অর্চিষ্মান বলল, সামনের বছর আমি তুমি নাম দিই চল কুইজে।

কুইজ হয় ফাংশানের মূল মঞ্চে, গোটা মেলা গ্রাউন্ড এবং সি আর পার্ক মেন রোডকে সামনে রেখে। প্রতিযোগীরা হাতে ধরা মাইকে উত্তর দেন, যাতে গোটা মাঠ আর মাঠের চারপাশের বাড়ির লোকেরা বাড়িতে বসেই সব শুনতে পান। 

সবকিছু জানা সত্ত্বেও যে অর্চিষ্মান যে সামনের বছর কুইজে নাম দিতে চাইছে তার দোষ নির্ঘাত বিরিয়ানি, লেমন টি, শীতের ছুটির দুপুর আর দুপুরের ওই মিষ্টি রোদ্দুরটার। আর কোনও ব্যাখ্যা থাকতেই পারে না।














Comments

  1. osadharon likheche. mone holo aamio mela ghure elam, anupam er gaan shune elam. ekhon kaaj korte korte anupam er gaan shuni ektu. lagnajitar gaan shunini kokhono. Aaj shunbo.

    Purono boi gulo dekhe mon huhu kore uthlo.. Bombay ta ekta bicchiri jaiga.. oboshyo dillite thakleo aamra je oi melay jeye uthte partam na, setao nischit..

    khub bhalo thakben.. onek onek dhonyobad erokom sundor lekha amader porte deyar jonne..

    ReplyDelete
    Replies
    1. sorry.. prothom line e "likheche" ta "likhechen" hobe.. tarahuroy bhul korechi.

      Delete
    2. আরে নো প্রবলেম, ইন্দ্রাণী। মেলার গল্প পড়তে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আমরাও খুব মজা করেছি। লগ্নজিতার 'বসন্ত এসে গেছে' শোনেননি? শিগগিরি শুনে ফেলুন, না হলে বাঙালি হওয়া এক ইঞ্চি কম পড়ে যাবে কিন্তু।

      Delete
    3. accha... bosonto ese geche - shunechi.. gayikar naam dekha hoini.. :)

      Delete
  2. Boigulo dekhe, shotyi bolchhi, bhishon hingshey holo ... Amader barite j purono almari ta chhilo, sekhane erokom onek purono purono boi chhilo, paata gulo khanik ui a kata, ektu shukno lagey dhorte aemon texture ... kintu ki j bhalo lagto ... shomoyer sathe sathe shei shomoy o choley gaechhe ... kintu ei choobigulo chhotobelar smriti firiye dilo ... Onek dhonyobaad ... bhalo thakben

    ReplyDelete
    Replies
    1. পুরোনো বই দেখতে কী ভালো লাগে না, অনুরাধা? মায়াও হয়। দোকানে দেখে মনে হচ্ছিল, একসময় কত সার্ভিস দিয়েছে,এখন কোণা দুমড়ে গেছে আর মলাট খুলে এসেছে বলে বাতিল? যা দেখছি তাই কিনে নিতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু বাড়িতে রাখার জায়গা নেই, তাই।

      Delete
  3. Ki sundor lekho tumi! Porlei mon bhalo hoye jay.:)

    C R Park e je poush mela hoy jantam-i na!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। পরের বছর নিশ্চয় এস পৌষমেলায়, ভালো লাগবে মনে হয়।

      Delete
  4. উলটোরথ বইটা এবং তার উপরে সুচিত্রার ছবিটা দেখে টাইম মেসিনটা বোঁ করে পিছনের দিকে ঘুরে গেল; আপ্লুত মনটা আর ফিরতে চাইছিল না। তোমার লেখাটা ছিল বলে অনুপমের গান দারুণ উপভোগ করা গেল। নতুন বছর, পৌষমেলা সব রসময় হয়ে গেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, মালবিকা।

      Delete
  5. আহাহাহা| পড়ে আমারই মেলা দেখতে যেতে ইচ্ছে করছিল :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. এখন তো মেলারই সিজন, অন্বেষা। আমি শিওর খুঁজলে আশেপাশে একটা না একটা পাওয়া যাবে।

      Delete
  6. শেষ প্যারাটা খুবই ইঙ্গিতবহ - হিউমার টা বেশ এসেছে | আজকালকার গানে খুব পিছিয়ে পড়েছি | রেডিও বাংলা নেট শুনছি, কিন্তু তাতে শিল্পীর নাম বলে না | এই রুফ্ টপ কনসার্টের লিংক পাওয়া যাবে ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ। ইউটিউবে গিয়ে রুফটপ কনসার্ট টাইপ করলে পেয়ে যাবেন।

      Delete
  7. ইশ, তোমার গল্প পড়ে মেলা, মেলা মন করে উঠলো। এদেশেও মেলা হয়, তুমিও তো গেছো নিশ্চয়ই, কিন্তু সেই ক্রিস্টমাস মেলা বা গরমকালের মেলার চরিত্র দেশের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই রবিবার "আপনা হাত জগন্নাথ" বলে প্রথমবার পিঠে বানাবার চেষ্টা করবো। দেখি কি দাঁড়ায়। আর সব শেষে তোমার সাথে একটুখানি ঝগড়া আছে। "নয়" এর কথা আগে বলোনি কেন? সেই কবে থেকে ইঁট পেতে বসে আছি এটার জন্য।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এইবার বলব আরকি, চুপকথা। মেলার ব্যাপারটা যথার্থ বলেছ, দুটোর কোনও তুলনাই হয় না।

      Delete
  8. পুরনো বইয়ের ছবিগুলো 💖💖💖

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও বইগুলো দোকানে রক্তমাংসে দেখে ভালোবাসাই পেয়েছিল।

      Delete
  9. Sei colg er somoy rupam islam stage e lafiye, suye pore , doure kisob korechilo.. tokhon onar sathe lafano sombhob chilo.. ekhon anupam roy er live dekhar sokti pabo to... Darun lekha.. pithe korar inspiration o pelam.. ��

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আমি যখন পাচ্ছি, তুইও শক্তি পাবি, ঊর্মি। তড়িঘড়ি বলে রাখি, আমি লাফাইনি, চুপ করে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হেসে আনন্দ উপভোগ করছিলাম। কী পিঠে বানালি, জানাস।

      Delete
  10. ki valo j laglo lekha pore. kotodin melay jaina. purono boi gulo dekhe chotobelar kotha mone pore gelo. barir kacher library theke eirokom cheharar boi niye astam roj. Anupam er performance er bornona poreo besh moja pelam. College life e Rupam er college fest er performance er kotha mone pore gelo. sanghatik kandokarkhana korten uni, ami ekbar oi style e matha jhakabar chesta kore ghare batha peyechilam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এইসব ঘাড়টার ঝাঁকানো ওঁদেরই শোভা পায়, আমারতোমার মতো নশ্বর মানুষরা টুকতে গেলেই ব্যথা, সুহানি।

      Delete
  11. Aha, khub sundor bornona....porar pore amaro mela bhromom hoye gyalo. :)
    Boiguli khasha. :) :)
    Anupam er function ekbar Powai te dekhechhilam, bochhor tinek age, bhaloi legechhilo.
    Tobe eita best:

    আমি বললাম, ছাড়ো তো। লোকের কথা শুনে কেউ কোনওদিন বড়লোক বা ইন্টেলেকচুয়াল, কোনওটাই হয়নি।
    :) :)

    ReplyDelete

Post a Comment