হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ
একেকটা গান দড়াম করে মাথায় এসে যায়। এই গানটা অবশ্য দড়াম করে আসেনি। একটা প্রম্পট ছিল। এলই যখন, নস্ট্যালজিয়ার খাতিরে গানটা খুঁজতে গেলাম ইউটিউবে। গিয়ে দেখি হইহই ভিউজ। যা ভেবেছি তাই, প্রথম অন্তত একশোটা কমেন্ট বলছে তারা সেম প্রম্পট শুনে এই ভিডিওয় এসে হাজির হয়েছে। কেউ কেউ আবার মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করছে যে গানটার অস্তিত্ব তারা আগে জানত না, ওই প্রম্পটটি জানার আগে। তাদের জাজ করে গানটা শুনলাম।
প্রম্পট নিয়ে রহস্য করার দরকার নেই। নেটফ্লিক্সের অধুনা সম্প্রচারিত বহুচর্চিত চার গল্পের সিরিজ ‘রে’। ওরই একটা গল্পের নাম এই গানটির নামে।
রে সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়েছিলেন সুগত। বেশি কিছু নেই। বোধহয় দুটো অ্যাডাপ্টেশন দেখেছি, একটাও না দেখার ইচ্ছে ছিল। এমনকি ট্রেলর দেখতেও আমি উৎসাহিত বোধ করিনি বিশেষ। তারপর আড়মোড়া ভেঙে দেখলাম ফরগেট মি নট, যেটা ওই বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম নিয়ে আর হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ, যেটার সূত্র বারীন ভৌমিকের ব্যারাম।
দেখব না ভেবেছিলাম কারণ জানতাম হতাশ হব। আমার আবার অন্ধ হয়ে প্রলয় বন্ধ রাখার দুরাশাপোষণের ব্যামো আছে। না দেখেই কী করে জানলাম হতাশ হব জিজ্ঞাসা করলে, জবাব দেব যেমন করে জানি শারদীয়া আনন্দমেলা কিনে হতাশ হব, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া পৃথিবীর যে কোনও জায়গার ফুচকা (বা যে নামেই তারা সে শহরে পরিচিত হোক না কেন) খেয়ে হতাশ হব, দার্জিলিং দার্জিলিং করে লাফিয়ে গিয়ে ম্যালে দাঁড়িয়ে এদিকওদিক তাকিয়ে হতাশ হব, তেমন করে।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে আমার হতাশ হতে আপত্তি আছে। এ বছরও আমি আনন্দমেলা কিনেছি, নর্থ পোলে গিয়েও ফুচকা দেখলে খাব, দার্জিলিংও চান্স পেলেই যাব। কেভেন্টারসে বাকি সবাই গুছিয়ে সসেজ খাবে, আমি পেটে কিল মেরে বসে থাকব।
তবু রে দেখতে আমার বুক কেঁপেছিল কারণ এখানে এমন একটা লোকের কথা হচ্ছে, যিনি আমাকে শৈশবে প্রতি সপ্তাহে তিনবার আক্ষরিক হাত ধরে লাইব্রেরি নিয়ে গেছেন এসেছেন, পড়ার নেশা ধরিয়েছেন, ভালো জিনিস চিনিয়েছেন। এবং বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ ঘুরে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করে আমার অনেকদিনের একটা সন্দেহও নিশ্চয়তায় পর্যবসিত করেছেন যে তাবৎ বিশ্বে দেশকালধর্মবর্ণ নির্বিশেষে পুরুষজাতির শ্রেষ্ঠ স্পেসিমেনটির জন্ম দিয়েছেন ইনিই।
সত্যজিৎ রায়ের জিনিনিয়াসের নমুনা দেখাতে গেলে আমি তাঁর সিনেমা দেখতে বলব না (কী করেই বা বলব, বুঝি না, কাজেই মর্যাদা করতেও পারি না), ফেলুদা পড়তেও বলব না (স্পেসিমেনের ব্যাপারটা মাথায় রেখেও), বলব এই নিন, ছোটগল্পগুলো পড়ুন।
অনেক টুইস্টওয়ালা ছোটগল্প দেখেছি, বারীন ভৌমিকের ব্যারাম-এর মতো ঝটকা কম দেখেছি, হৃদয়ের তন্ত্রীতে ঘা দেওয়া বহু গল্প পড়েছি, কিন্তু যখন গল্পের শেষে নিষ্ঠাভরে নিজের তুচ্ছতম কাজটি সম্পন্ন করা কোনও চরিত্র বলে উঠেছে, টাকার তাঁর অভাব ঠিকই - কিন্তু আজকের এই যে আনন্দ, তার কাছে পাঁচটা টাকা আর কী? তার জুড়ি দেখিনি। গালভরা গথিক সাসপেন্স অনেক পড়েছি, কিন্তু জালঢাকা জানালায় একটা মাথার জেগে ওঠা আর লন্ঠনের আলোয় দুটো জ্বলজ্বলে কটা চোখের নিষ্পলকে তাকিয়ে থাকার বর্ণনা যেমন কাঁটা দিয়েছে তেমন কম দিয়েছে। জানালার দিকে তাকাতে অ্যালাউ করেনি ঘোর দুপুরে। শব্দ দিয়ে অনেক ছবি আঁকতে দেখেছি, কিন্তু ছাইয়ের মতো স্থির মেঘ ভরা আকাশের ব্যাকড্রপে গুড় গুড় গুম গুম শব্দ আর চোখ ঝলসানো হেডলাইটের আলো জ্বেলে ট্রেন যখন ওভারব্রিজের নিচে এসে পড়েছে সেই গর্জন, দাপটে অন্তরাত্মা যেমন কেঁপে উঠেছে, লিখতে গিয়ে এখন, এই মুহূর্তেও যেমন উঠছে, সে গল্প প্রায় পাঁচ মাস না পড়া সত্ত্বেও, অন গড ফাদার মাদার, তেমন খুব কমই ঘটেছে।
বোনাস কুইজ
১। "টাকার তাঁর অভাব ঠিকই - কিন্তু আজকের এই যে আনন্দ, তার কাছে পাঁচটা টাকা আর কী?" কে বলেছেন?
২। ওভারব্রিজের ওপর কে দাঁড়িয়ে ছিলেন? ওভারব্রিজটা কোন স্টেশন বা জায়গার?
ভীষণ ভীষণ কম পড়ার পরিধি দিয়েই আমি এই দাবি করার সাহস দেখাচ্ছি। ছোটগল্প লিখে দুনিয়া কাঁপানো গল্পকারদের অনেক গল্পকে কান ধরে ওঠবোস করাতে পারে সত্যজিতের ছোটগল্প।
ওঁর ছোটগল্পগুলো আমার আরও একটা কারণে মারাত্মক ইন্টারেস্টিং লাগে। এমন স্মার্ট লোক, মনে হয় ছোটদের লক্ষ করে লেখা হলেও লেখার মাধ্যমে ভ্যালু জাজমেন্ট দেবেন না বা গল্পের মাধ্যমে বা নীতিশিক্ষার ক্লাস নেবেন না। তা তিনি অ্যাবসলিউটলি নেনও না। কিন্তু তাঁর ছোটগল্পগুলোর প্রায় সবগুলোর থিমেই মেসেজ আছে। ভালো ভালো মেসেজ। দয়ালু হও। যা জান না তা নিয়ে অবিশ্বাসী হওয়ার আগে দুবার ভাব। পয়সা, সাফল্য, খ্যাতির থেকে আর্ট আর সেই আর্ট নিষ্ঠা দিয়ে চর্চা করার আনন্দ বড়। টাকা দিয়ে সব কেনা যায় না। এই সব থিম আর কারও হাতে পড়লে যে কী কাণ্ড হত (রেগুলারলি হয়) ভাবলে আমার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু আমার প্রস্তুত থাকা উচিত ছিল যে কারও না কারও হাতে পড়বে একদিন। এ হীরকখনি বেশিদিন না ঘাঁটানো পড়ে থাকবে না।
রে দেখে আমার সবথেকে কষ্ট যেখানে হয়েছে সেটা হচ্ছে সূক্ষ্মতা, পরিমিতি, চন্দ্রিলের ভাষায় অমানুষিক সংযম, ঠিক যেগুলো সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্পের আত্মা - ঠিক সেই জায়গাগুলোতেই বানিয়েরা ফেল ফেলেছেন। 'হাঙ্গামা' গল্পটা নিয়ে এত লাফালাফি হচ্ছে, ওটার প্রথম দৃশ্যেই ট্রেনের কামরায় দু’জনের কথোপকথনে এমন একটি রসিকতা গুঁজে দিয়েছেন পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার, সে রসিকতা সত্যজিৎ সাত জন্ম পার করে অষ্টম জন্ম নিলেও হাত থেকে বার করে উঠতে পারতেন না।
রসিকতার কথাই যখন উঠল। পৃথিবীতে প্রায় কিছুর প্রসঙ্গেই আমি 'যার থাকে তার থাকে', 'যার নয়ে হয় না নব্বইইয়েও হওয়ার আশা নেই', ইত্যাদি লাইনে কথা বলি না, কারণ এক, নিজের প্রতি মায়া; দুই, এই ধরণের মন্তব্যগুলোয় একটা হাহাকার আর নৈরাশ্য ছেয়ে থাকে, যেটা আমার অপছন্দ। যে আঙুলে গোনা কয়েকটি জিনিসের ক্ষেত্রে আমি এই ধরণের মনোভাব সত্যি সত্যি পোষণ করি, সেটার একটা হচ্ছে রসবোধ। ওটা গজাতে খুব একটা দেখিনি। বা গজালেও ভারি অদ্ভুতদর্শন হতে দেখেছি। আর রসবোধের একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, যার থাকে তার সব পরিস্থিতিতেই সেটা জাগরূক থাকে। ব্যাপারটা ঠিক আলোপাখার মতো অন অফ করা যায় না। (তার মানে কিন্তু আমি বলছি না রসিক লোক চব্বিশঘণ্টা জোক বলে বেড়াবেন। রসের সঙ্গে হাসাহাসির সম্পর্ক অনেকসময় যেমন থাকে আবা থাকেও না। এর একজন মোক্ষম উদাহরণ হচ্ছেন রাজশেখর বসু। ভদ্রলোক জীবনে ক'বার হেসেছেন আমার সন্দেহ আছে, কিন্তু তাঁর রসবোধ নিয়ে কারওরই থাকার কথা না।
অসমঞ্জবাবুর কুকুর- আমার মারাত্মক, মারাত্মক ফেভারিট গল্পের একটা মারাত্মক, মারাত্মক প্রিয় দৃশ্য হচ্ছে এলাকার অবসরপ্রাপ্ত খেঁকুরে অধ্যাপকের বাড়ির দৃশ্যটা। ব্রাউনির হাসির ব্যাখ্যা খুঁজতে ঢুঁ মারতে মারতে অসমঞ্জবাবু হাজির হয়েছেন অধ্যাপকের বাড়িতে এবং অকওয়ার্ড আইসব্রেকিং কথোপকথনে জানতে চাইছেন এ বাড়িতে ক’টা কুকুর আছে, তাঁর নিজের কটি কুকুর আছে ইত্যাদি। উত্তরে বদমেজাজি অধ্যাপক যখন জিজ্ঞাসা করছেন অসমঞ্জবাবু কুকুর পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে আসছেন কি না, এবং সারকাজমটা সম্পূর্ণ মিস করে যাচ্ছেন সহজসরল অসমঞ্জ, এবং পাঠক যেহেতু অসমঞ্জবাবুর দলে এবং কিছুতেই খেঁকুরে অধ্যাপকের দলে নয়, গোটা ব্যাপারটার কারুণ্য উপলব্ধি করা সত্ত্বেও যে পাঠকের হাসি পাচ্ছে না, তার ক্ষুরে ক্ষুরে।
বোনাস কুইজ
৩। খেঁকুরে অধ্যাপকের নাম কী?
রায়ের গল্প নিয়ে ছবি বানিয়েছেন এঁরা। কিন্তু রায়ের সেন্সিবিলিটিটার কেশাগ্র ছুঁতে পারেননি। আত্মাটা মিস করে গেছেন। সে আত্মা ছুঁতে গেলে সম্ভবত আরেকটু কম উচ্চকিত হতে হবে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে, এত কথা বলে, এত আয়োজন করে হবে না।
তবে এ আমার ব্যক্তিগত মত। কারও যদি ব্যান্ডপার্টি নিয়ে সত্যজিৎ রায়কে উদযাপনের শখ জাগে, করবে। বেআইনি তো কিছু করছে না। যার যা করতে ইচ্ছে করছে, যদি তা অন্যের অসুবিধে করে না হয়, সর্বদা করা উচিত। বেশি বেশি করে করা উচিত। রোদ্দুর রায়ের ইচ্ছে হলেই রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া উচিত, কোক স্টুডিওর আরও কোমর বেঁধে পল্লীগীতি থেকে মার্গগীতির পৃষ্ঠপোষকতায় নামা উচিত, মৈনাক ভৌমিকের ইচ্ছে হলে কলকাতার এলিট স্কুলের ছাত্রদের প্রেমভালোবাসা যৌনতা সমস্যা কেন্দ্র করে পাগলা দাশুর সময়োপযোগী রিইন্টারপ্রিটেশন বাজারে ছাড়া উচিত। শুনি না শুনি, দেখি না দেখি, সোৎসাহে উৎসাহ দেব।
(মৈনাক ভৌমিকের পাগলা দাশু অবশ্য দেখতে যাব ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো। বা ওয়েব সিরিজ হলে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের দশ মিনিটের মধ্যে। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প হয়তো দুচারখানা না পড়া রয়ে গেছে, কিন্তু মৈনাক ভৌমিক পৃথিবীর একমাত্র স্রষ্টা যাঁর এ যাবত কমপ্লিট oeuvre আমি কভার করেছি, ভবিষ্যতেও করব, এ আমার নিজের কাছে, মনে মনে মৈনাকের কাছেও, অঙ্গীকার।)
কাজেই রে যে বানানো হয়েছে, ভালোই হয়েছে। আমার ভালো লাগেনি সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
কেউ বলতে পারে যে আমার সত্যজিৎ রায়ের প্রতি এমন পক্ষপাত যে তাঁর গল্প নিয়ে যে-ই যত ভালোই সিনেমা বানাক না কেন আমার মন উঠবে না, তেমনটাও নয়। হয়তো সম্পূর্ণ ভুল বলছি, কিন্তু সম্ভবত দিবাকর ব্যানার্জি পটলবাবু ফিল স্টার-এর আইডিয়াটা নিয়ে একটা কিছু বানিয়েছিলেন, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি ছিলেন, দিব্যি লেগেছিল। দুর্জনে বলতে পারে, দিবাকর এবং নওয়াজুদ্দিন দুজনকেই আমার পছন্দ বলে তারা যাই করবেন আমার ভালো লাগবে, তাও না। এঁদের দুজনের প্রতি আমার পক্ষপাতকে এক কোটি দিয়ে গুণ করলে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি আমার মুগ্ধতার দিকে অন্তত হাঁটা শুরু করা সম্ভব। কাজেই আমার যদি মনে হত এঁরা দুজন মিলে সত্যজিতের পিণ্ডি চটকেছেন, আমিও এঁদের পিণ্ডি চটকাতে দ্বিধা করতাম না।
দুঃখের যেটা, রে-র গল্পগুলো রে-র না হলে আমার ধারণা আমার যাতনা কম হত এবং আমি হাত খুলে হাততালিও দিতে পারতাম। দুটো গল্পই চকচকে দেখতে, অভিনয় তো মচৎকার, বিশেষ করে ওই ট্রেনে ঘড়ি চুরির গল্পটাতে। কিন্তু গল্পগুলোতে বুক বাজিয়ে রে-র ছাপ্পা মেরেই কর্তৃপক্ষ আমার মজা খানিকটা, অনেকটা, কিরকিরা করে দিয়েছেন। (ছাপ্পাটা মেরে অবশ্য ভালোই করেছেন, উইদাউট ছাপ্পা ঝেড়ে দিলে ভয়ানক হত।)
যাই হোক, মুশকিলটা হচ্ছে পোস্টটা আমি রে নিয়ে লিখব বলে বসিনি। বসেছিলাম ওই গানটা নিয়ে লিখব বলে। সে পরের পোস্টে লিখব’খন। ততক্ষণ আপনারা যদি কেউ রে দেখে থাকেন, কেমন লেগেছে জানাতে পারেন।
বোনাস কুইজ
ReplyDelete১. পটলবাবু ফিল্মস্টারের পটলবাবু
২. এটা ঠিক বুঝতে পারছিনা। রতনবাবু কি! আর জায়গাটা সিনি?
৩. রজনী চ্যাটুর্য্যে
'রে' দেখা শুরু করেছিলাম। ফরগেট মি নট। যত খারাপই লাগুক না কেন আমি সিনেমা- সিরিজ চট করে মাঝপথে ছাড়ি না। কিন্তু এটা প্রথম পনেরোমিনিটের পর আর নিতে পারলাম না। সম্ভবত কি ছিল, কি হল গোছের হাহাকার করে কান্না জুড়েছিলাম বলে। আমার এরকম মানসিকতা নিয়ে 'রে' দেখতে যাওয়া উচিত হয়নি, সেটা মানছি।
প্রতিটা উত্তর, যেটায় সন্দেহ প্রকাশ করেছ সেটা শুদ্ধু, ঠিক। অভিনন্দন, আধিরা। রে-র ক্ষেত্রে আমার ওই হাহাকার হয়েছে মানছি, তবে হাহাকারটা জাস্টিফায়েড, কাজেই বেশি কাঁচুমাচু হচ্ছি না।
Deleteখুব খুব ভাল লাগল আপনার রিভিউ। বাকি দুটো সিনেমা দেখবেননা। শেষেরটা তো একেবারেই নয়। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প নিয়ে আপনি যা বলেছেন, আমি সেটা চিরকাল সবাইকে বলে এসেছি, হাই ফাইভ। আর আপনার বর্ণনা করা ওই গল্পগুলোর প্রতিটা আমার ফেভারিট। ছোটগল্পকার হিসেবে সত্যজিতের আরও নাম হলনা স্রেফ অন্যদিকে এত প্রতিভা থাকার ফলে। এ প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলি, খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু একরকম। সুকুমার রায়ের ননসেন্সের কথা সবাই বলে, সেটা তুলনাহীন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ? দেশবিদেশের জেনারেল নলেজ? গ্রিক আর নর্স মাইথোলজি? আমি আজ যতটুকু জানি, আর যে কোনোরকম জিনিস জানার জন্য আমার যেটুকু কৌতূহল, তার প্রায় সবটাই ওই মানুষটা তৈরী করে দিয়ে গেছেন।
ReplyDeleteঢাকঢোল না পিটিয়ে বানানো "Ray" এর বিপরীত মেরুর একটা এমেচার প্রোডাকশন দেখতে চাইলে এটা দেখতে পারেন: https://youtu.be/BPzH7DeZLNo. সিজিআই বাজেট ছিলনা, তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেই জায়গাটা হাস্যকর রকমের দুর্বল। কিন্তু বাকি সিনেমাটাতে, আমার মনে হয়েছে, সত্যজিতের আত্মাটা ধরতে পেরেছে।
ক্যুইজের উত্তর তো আধিরা দিয়েই দিয়েছেন, তাই আর দিলামনা।
যাক, অপেক্ষাকৃত পদস্থ দুটোই দেখেছি তাহলে। গুড গুড। সত্যজিতের ছোটগল্পের ব্যাপারে হাই ফাইভ। ভাবুন একটা লোকের এত প্রতিভা যে কিছু কিছু প্রতিভার প্রতি অবিচার হচ্ছে। লোকের কী কী সব সমস্যা থাকে জীবনে।
Deleteআপনার দেওয়া লিংকটা দেখব, তবে সপ্তাহখানেক পর। আপাতত একটু ঝামেলায় আছি।
Khub bhalon hoyechhe Ray r review. Satti aamio oi Bipin Chowdhury r Smritibhrom er prothom 15 minute dekhe bondho kore diyechhi. Ray r chhotogolper charm tai noshto kore diyechhe. Sab kichhukei jobordasti ei bortomaan dark ekta frame e felar chesta. sei sorolota tai nei.
ReplyDeleteSatyajit Ray er chhotogolpo ke niye aamar aar apnar bhabna ekdam mile jachche. Asadharon srishti...
Aar je gaan tar kotha shurute bolchhen ota ki Ghulam Ali Khan er bikhyato ghazal ? Aami to setai jaani. Tabe aajkaal eto srishti r samahar chardike....notun kichhu hole radar er baire.
ওই গানটাই সুস্মিতা। এক এবং অদ্বিতীয়।
Deleteআপনি একটা দামি কথা বলেছেন, যেটা আমার নিজের কাজেও লাগতে পারে। সবকিছুকে ঠেলে ডার্ক থিমে ঢোকানোর সমসাময়িক ব্যামোর ব্যাপারটা। আমার ধারণা ও উপসর্গ আমার ভেতরে আছে, বা ঠেলে বেরোতে পারে। খেয়াল রাখব। থ্যাংক ইউ।
সত্যজিতের ছোটগল্পের কমন অনুরাগে হাই ফাইভ।
Oi gaanta aamar khub priyo college jibon theke. Poisa jomiye Ghulam ali r ekta casssette kinechhilam oi gaan ta shunbo bole.
Deleteamar sabkichhu kei dark e dekhte bhalo laage na tate anek somoy mone hoi je aasol flavor ta miss hoye jai. Eta ekantoi amar byaktigoto mot.
আপনাকে পছন্দ করার আরও একটা কারণ বেরোল। গুলাম আলিকে আপনিও ভালোবাসেন, আমিও ভালোবাসি।
Deleteএই দেখুন গানটার একটা ভিডিও। গান তো ভালোই, মজলিশের চরিত্রটাও আমার দিব্যি লেগেছে।
https://youtu.be/8G32hS635uE
Dhonyobad link tar jonyo. Bhalo laglo jene je apnar o Ghulam Ali ke pochhondo.
Deleteরে দেখে আমার কিছু টা খগম পড়ে যেমন সরিসৃপ দেখে হতো সেটা হয়েছে...
ReplyDelete😁 এই প্রতিক্রিয়াটা একঘর।
Deleteএকটু দেখার পর, প্রাণের দায়ে কেটে পড়েছি । The old TV series Satyajit Ray Presents was much much better.
ReplyDeleteআমারও পুরোনগুলোই ভালো লাগে, ঘনাদা। যেমন এত যে ব্যোমকেশ হয়েছে, হচ্ছে, হবে, আমার এখনও বেস্ট লাগে দূরদর্শনের তিরানব্বই সালের বাসু চ্যাটার্জির সিরিজটা। আমি বই পড়ে ব্যোমকেশকে যেমন ভেবেছি রজিত কাপুরের থেকে তার বেশি কাছাকাছি কেউ যেতে পারেনি। অজিতের ভূমিকায় কে কে রায়নার থেকে ভালো কাস্টিং পৃথিবীতে আর কোনও চরিত্রের হয়েছে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া গল্পগুলোও ওই সিরিজটাতেই সব থেকে বেশি বিচার পেয়েছে বলে আমার মনে হয়। এখনকার সিনেমা/সিরিজগুলো সব পরিচালকদের নিজের কথা বলা/মত প্রকাশের ছুতো। ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে এঁরা খুব একটা চিন্তিত নন। ব্যোমকেশ বক্সীকে এঁরা নিজেরা কী মনে করেন সেটা দর্শকের কাছে পৌঁছনই আসল কথা।
Deleteএকেবারে ঠিক ঠিক ঠিক ।
Deleteহায়েস্ট ফাইভ,অন্বেষা। এই মতটা মেলায় যারপরনাই খুশি হয়েছি।
DeleteJah...quiz gulor uttor eshe gechhe :(
ReplyDeleteRay ..shotti ta bolei pheli ..amaar kharap lageyni... interpretation ke koto korte paare, interpretation a ar adaptation er chul chera bichare na giyei bolchhi...ontoto chhi chhi korar moto kichhu mone hoyni...
Kono golpo ke "contemporary" korar ekta mushkil achhe eta thik... Muloloto chhoto der jonno lekha golpo ke adult backdrop e anle aaro mushkil etao thik...tobe oi...ami cheshta kori prejudice chhara cinema dekhte.. shei bichaare kharap lageyni...barin bhowmik er golpo uni nije "contemporary" bhaabe likhle kemon likhten sheta na bhebei dekhlam...
Spotlight golpo ta emniteo amaar darun kichhu lageyni...tai series eo eta shob theke kharap lagate alaada kore dukhho hoyni..
বুঝলাম, অর্পণ। আমার একটাই কথা বলার, এই গল্পগুলো কনটেম্পোরারি করলেও বা অ্যাডাল্ট ব্যাকড্রপে ফেললেও আরও ভালো করে ফেলা যেত বলেই আমার ধারণা। ফরগেট মি নট-এর লাস্টটা অত অতিনাটকীয় না করলেও হত। আর হাঙ্গামার শেষে ওই দোকানের দৃশ্যগুলোর আমি কোনও অর্থই খুঁজে পাইনি। আমার মনেই হয়নি গল্পটাতে ওই ল্যাজাটুকু কোনওভাবে অবদান রেখেছে।
Deleteaami hocchi asol bhitu.. ei bhoy e Ray ta dekhini.. emnitei aamaaro dharona kharap lagbe.. tar upor mathay eto review gojgoj korbe je bolar kotha noy.. :) oboshyo aami ekhon kichudin movie webseries er phase e nei.. ekta challenge e naam likhiye, gograse boi poRchi.. setao ektu jontronar byapar.. anyway..
ReplyDeleteaamaaro dibakar banerjee r potolbabu filmstar ta khub bhalo legechilo
and yes, satyajit ray er chhoto golpo sotti osadharon.. hajarbaar poRa jay..
bhalo thakben,
Indrani
সত্যজিতের ছোটোগল্পে আর দিবাকরের পটলবাবুতে হাই ফাইভ, ইন্দ্রাণী। চ্যালেঞ্জটা সম্পর্কে যদি বিশদে বলেন। এখন আমার মরার সময় নেই, তবে সময় হলে সে চ্যালেঞ্জ নিজেকে দিতে পারি।
Delete"রে দেখে আমার সবথেকে কষ্ট যেখানে হয়েছে সেটা হচ্ছে সূক্ষ্মতা, পরিমিতি, চন্দ্রিলের ভাষায় অমানুষিক সংযম, ঠিক যেগুলো সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্পের আত্মা - ঠিক সেই জায়গাগুলোতেই বানিয়েরা ফেল ফেলেছেন। " একেবারে, একেবারে ।
ReplyDeleteআর একটা জিনিসও আমার মনে হয়েছে । সত্যজিতের ছোটোগল্পগুলোয় একটা অনায়াস বাঙালিয়ানা মাখামাখি হয়ে থাকে, যেটা 'রে'-তে প্রায় অনুপস্থিত (বানিয়েদের ক্যারদানি দেখানোর ইচ্ছেতেই সম্ভবতঃ )। প্রায় বললাম এই কারণে, 'হাঙ্গামা' তে এই ফ্লেভারটা খানিকটা পেয়েছি, যদিও ওই রসিকতাটা...যাকগে । হাঙ্গামা-ই আমার সেরা লেগেছে, যদিও সেটা বানানোর গুণে না গজরাজ আর মনোজের অসামান্য অভিনয়ের ফলে, বলা মুশকিল । দ্বিতীয়টাই হবে মনে হয় ।
হ্যাঁ, অভিনয় একভর। ওই বাঙালিত্বের অভাবটা আমারও চোখে পড়েছে, অ্যাকচুয়ালি। বাকি দুটো গল্পে আছে কি না জানি না, আমার দেখা গল্পদুটোর চরিত্ররা কেন বাঙালি হলেন না (একটা গল্পেও) এটা সামান্য হলেও কৌতূহলের উদ্রেক করেছে আমার মনে। গভীর কোনও কারণ থেকে থাকবে হয়তো।
DeleteHi Kuntala, kibhabe ei post ta miss kore gechi bhebei pachhina. Tomar review gulo darun lagey ebong onekangshe amar shathe mileo jay. Ray web series tao dekhchi review matching. Kichu dialogue chilo ek dom ga kirmir kora, mone hoy Satyajit nije adult backdrop e likhle kono motei emon dialogue likhten na. Stay safe and happy.
ReplyDeleteঅনুপমা, মারাত্মক দেরি করলাম উত্তর দিতে, ক্ষমা করবেন। ব্যস্ত, যাকে বলে ব্যতিব্যস্ত ছিলাম। মত, বিশেষ করে তা যদি নেগেটিভ মত হয়, মেলার থেকে শক্তপোক্ত বন্ডিং আর কিছুতে জন্মায় হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। আপনার সঙ্গে সে বন্ডিং হয়েছে জেনে রিয়েলি খুশি।
Delete