তিনটি প্রেমের গল্প
সব গল্পই লেখা হওয়ার আগে পারফেক্ট। লেখকের কাজ মাথার ভেতরের সেই নিখুঁত, নিটোল, পারফেক্ট গল্পটিকে শব্দে বন্দী করতে বসে মাটিং চকার করা।
কতটা কম মাটি হল, সেটাই সাফল্যের মাপ। লেখকের নিজের কাছে, অবশ্যই। কারণ তিনি ছাড়া কেউ তাঁর মাথার ভেতরের পারফেক্ট গল্পটিকে দেখেনি। আর দেখেনি বলেই, তারা পাঠপরবর্তী যে প্রতিক্রিয়াই দিক না কেন, প্রশংসা, নিন্দে, উদাসীনতা, লেখক সর্বদাই জানবেন তিনি ওই গল্পটার কতটা কাছে যেতে পারলেন, বা পারলেন না। কতখানি সফল হলেন, বা ব্যর্থ। ও বাবদে মনকে চোখ ঠারানোর সুযোগ শূন্য। জিরো। জিলচ। নাদা।
এই যেমন এ বারের চার নম্বরের গল্পটা। গল্পটি বেশ কয়েকটি দিক থেকে ব্যতিক্রমী। গল্প হিসেবে নয়, গল্পটির সঙ্গে গল্পটির টাইপিস্ট হিসেবে আমার সম্পর্কের হিসেবে। মানে দায়িত্ব নিয়ে মাটি করা অন্যান্য গল্পের সঙ্গে আমার লেখক হিসেবে যা সম্পর্ক তার নিরিখে এই গল্পটি বেশ কয়েকটি মাপকাঠিতে ব্যতিক্রমী।
প্রথম ব্যতিক্রম, গল্পটা প্রেমের। সবাই জানে, এ পৃথিবীতে আমার সবথেকে ভালো লাগে গোয়েন্দাগল্প পড়তে। লিখতেও খারাপ লাগবে না মনে হয়। মরার আগে একটা গোয়েন্দা উপন্যাস লিখে মরব, এই রকমটা ভেবে রেখেছি।
যেটা অনেকেই জানে, পৃথিবীতে সবথেকে খারাপ লাগে আমার প্রেমের গল্প পড়তে। হাই ওঠে, কান্না পায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় নিজের মাথা দেওয়ালে ঠুকি, তেমন তেমন ক্ষেত্রে লেখকের মাথাও হাতের কাছে পেলে... অথচ এই গল্পটা একেবারে বিশুদ্ধ প্রেমের গল্প। একটা নয়, তিনতিনটে প্রেম।
আক্ষরিক তিনটে গল্প নয়, সে আপনারা গল্পগুলো বা গল্পটা পড়লে বুঝতে পারবেন।
দ্বিতীয় ব্যতিক্রম হচ্ছে এই গল্পটা আমার অ্যাটেম্পট নেওয়া সেই বিরল (সম্ভবত এ যাবৎ একমাত্র) গল্পদের মধ্যে পড়ে যা লেখার সময় মালমশলার থেকেও গল্পের বহিরঙ্গের দিকে নজর ছিল। অর্থাৎ কী বলছির থেকে, কীভাবে বলছি। বলার বিষয়টা প্রেমের মতো জরাজীর্ণ বলেই হয়তো। নতুন কিছুই বলার নেই, কাজেই কেমন করে বলা হবে সেই নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিলাম।
তিন নম্বর যে জায়গাটায় আমি আমার এতদিনের প্যাটার্ন থেকে চ্যুত হয়েছি তা হল, এই গল্পটার থেকে দ্রুত আমি জীবনে আর কোনও গল্প লিখিনি। এর জন্য সময়ের অভাবের থেকেও দায়ী অন্য আরেকটি গল্প যেটা চার নম্বরের জন্য লেখা হচ্ছে গত পাঁচ মাস ধরে। ছ’হাজার শব্দের ফার্স্ট ড্রাফট হয়ে পড়ে আছে, ডাম্পস্টার ফায়ারের প্রতিশব্দ বাংলায় খুঁজে পাচ্ছি না, যদি কিছু থাকে, অবিকল সেই চেহারায়। আগের বার ডেডলাইনের অন্তত পনেরোদিন বাকি থাকতে বুঝেছিলাম, এবার ডেডলাইনের তিনদিন আগে এসে উপলব্ধি করেছি, সে গল্প* আমি শেষ করতে পারব না। কাজেই তিন দিনে অন্য একটা কিছু নামিয়ে আমাকে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ দু'হাজার শব্দের বেশি কিছুতেই হওয়া চলবে না। সাধারণত আমি শব্দসংখ্যা নিয়ে একেবারেই ভাবি না। আমার নীতি হচ্ছে গল্পটা বলতে যত শব্দ লাগবে তত শব্দ খরচ করা, কিন্তু এবার ভাবতে হল।
এতগুলো জায়গায় অভ্যেসচ্যুত হলাম বলেই হয়তো খচখচ করছে, হয়তো মাথার ভেতরের নিখুঁত গল্পটার দিকে হেঁটে যাওয়া তো দূর, হয়তো এগোতেই পারিনি। হয়তো ভুল রাস্তায় হেঁটেছি। হয়তো পিছিয়ে গেছি।
যাকগে মরুকগে। ডান ইজ বেটার দ্যান পারফেক্ট।
এই রইল লিংক।
*পরের মাসে হয় ওই গল্প শেষ করে চারনম্বরে পাঠাব, নয় এফিডেভিট করে শকুন্তলা হয়ে যাব।
Excellent. Sometimes constraints are good.
ReplyDeleteBhalo laglo
iti
Shuteertho
অসংখ্য, অজস্র ধন্যবাদ, সুতীর্থ। আমারও খুব ভালো লাগল আপনার আশ্বাস পেয়ে।
Deleteগল্প খুবই ভালো লেগেছে।
ReplyDeleteধন্যবাদ, নালক।
DeleteI have been an ardent reader of your blog since a decade . Lyad katiye konodin hajira deoa hoy ni .. golpo ta durdanto .. Aar eksomoy tomar blog aamake depression katate sahajjo koreche .. tar jonyo oshyonkhyo dhonyobad
ReplyDeleteUpali
থ্যাংক ইউ, উপালি। আলাপ হয়ে ভালো লাগল। অবান্তর আমার অনেক কিছু সারায়, কাটায়। অন্য কারও কাজে লাগে জানলে অবাক হই, ভালোও লাগে।
Deleteদারুণ লাগলো। গল্পের শেষে এক চিলতে হাসি ফুটেছিল সেটা নিয়েই কমেন্ট করলাম।
ReplyDeleteধন্যবাদ, প্রদীপ্ত।
Delete