হুলোর হানা



চেনা অ্যালার্মের সঙ্গে সঙ্গে একটা অচেনা আওয়াজে ঘুম ভাঙল। অ্যালার্মের তুলনায় ঢের সুরেলা আওয়াজ।

অ্যালার্মের বেসুরোপনা অবশ্য ইনটেনশনাল। অর্চিষ্মানের অ্যালার্মের মতো সুললিত অ্যালার্ম সেট করার মানে বুঝি না আমি। আমার অ্যালার্মের প্যাঁচাল পাড়তে বসে অর্চিষ্মানের অ্যালার্ম নিয়ে পড়ার দরকার নেই জানি। তবে জীবনটাই তো কমপ্যারেটিভ। ওর তুলনায় কত সুখে রইলাম, এর তুলনায় কত দুঃখে। এর তুলনায় কত বেশি দর পেলাম, ওর তুলনায় কত কম, এই তো জীবনের পাশফেলের মাপ। কাজেই অ্যালার্মের তুলনা ন্যায্য।

অর্চিষ্মানের অ্যালার্মের থেকে কৌতূহলোদ্দীপক অ্যালার্ম জীবনে শুনিনি। পিড়িং পিড়িং করে মৃদুস্বরে বাজতে থাকে, অর্চিষ্মান মহানন্দে ঘুমোতে থাকে। অর্চিষ্মানের দোষ নেই, পৃথিবীর পঁচানব্বই শতাংশ লোকই ঘুমোবে। চার দশমিক নয় নয় নয় শতাংশ জেগে থাকলেও অ্যালার্ম শুনে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম ভাঙবে খালি শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য এক শতাংশের, যার মধ্যে কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে। গোড়ার দিকে এমনও হয়েছে যে ঘুম ভেঙে উঠে ভেবেছি স্বপ্নে শিবকুমার শর্মার কন্সার্ট চলছিল বুঝি। তারপর টের পেয়েছি ওটা অর্চিষ্মানের অ্যালার্ম।

নরমগরমে বলার চেষ্টা করেছি। কেউ যদি পয়েন্ট আউট করেন অর্চিষ্মানের অ্যালার্মে আমার গরম হওয়ার কিছুই থাকতে পারে না, একেবারে ঠিক পয়েন্ট আউট করবেন। কে কার অ্যালার্মে কী সাউন্ড সেট করবে সেটা যদি তার ফান্ডামেন্টাল রাইট না হয় তাহলে এ ব্রহ্মাণ্ডে কিছুই ফান্ডামেন্টাল রাইট না। তাছাড়া অর্চিষ্মানের অ্যালার্ম বাজার নিরানব্বই শতাংশ সময় আমি অলরেডি জেগে থাকি, কাজেই ওর অ্যালার্ম আমার কাঁচা ঘুমের পিণ্ডি চটকাচ্ছে তাও না।

তবু আমি গরম হই। গোটা ব্যাপারটার পয়েন্টলেসনেস আমাকে উত্তপ্ত করে। একটা অ্যালার্ম সাড়ে সাতটায় বাজছে, সাতটা একত্রিশে, বত্রিশে, পঁয়ত্রিশে, সাঁইত্রিশে, সাড়ে আটত্রিশে, চল্লিশে, বিয়াল্লিশে, তেতাল্লিশে, পঁয়তাল্লিশে, সাতচল্লিশে, ঊনপঞ্চাশে, বাহান্নয়...হাঁক পাড়ি, থামাবে? অর্চিষ্মান চোখ বন্ধ রেখেই হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে কী সব যেন করে। বাহান্নরটা থামে। তিপ্পান্ন থেকে শুরু হয়। চুয়ান্ন, পঞ্চান্ন, সাতান্ন, ঊনষাট। অর্চিষ্মান যেমন ঘুমোনোর ঘুমোতে থাকে। একটা শনিবার না রবিবার দেখে, একটুও বাড়িয়ে বলছি না, সাড়ে তিনঘণ্টা ধরে অর্চিষ্মানের অ্যালার্মের সন্তুর শুনেছিলাম, দেখছিলাম কখন ওর ঘুম ভাঙে। ভাঙেনি। সেই চেঁচাতেই হল। সেই থেকে আর অপেক্ষা করি না, গোড়াতেই আপত্তি প্রকাশ করে ফেলি।

আপত্তির থেকেও বেশি কৌতূহল। এ রকম অ্যালার্মের মানে কী যাতে ঘুম ভাঙে না?

অর্চিষ্মান বলে, কে বলল ভাঙে না? দিব্যি ভাঙে। এই যে এত ফিল্ডে যাই, ঘুম ভাঙে কীসে? এই অ্যালার্মেই।

তাহলে বাড়িতে ঘুম ভাঙে না কেন? কারণ বাড়িতে ঠেলা মেরে ঘুম ভাঙানোর আমি আছি। যখন ঘুম থেকে তোলার লোক আছে তখন কানে ঢোকে না, যখন নেই তখন ওই টুংটাং বাজিয়েই সুখস্বপ্ন খানখান করে, এ রকম হোমিওপ্যাথিক অ্যালার্মের দরকারটা কী? এই অকাট্য প্রশ্নের উত্তরে অর্চিষ্মান হাতজোড় করল। জেরা থামালাম। অ্যালার্ম একান্ন বাহান্ন তিপান্ন চুয়ান্নয় টুংটাং বাজতে লাগল।

আমি অর্চিষ্মানের মতো নই, আমার অ্যালার্মও অর্চিষ্মানের অ্যালার্মের মতো না হওয়াই স্বাভাবিক। অর্চিষ্মানের অ্যালার্মের বাগবাজারী বাবুয়ানি, আমার অ্যালার্মের বরিশাইল্যা বদমেজাজ। একবার বাজলে পাড়াশুদ্ধু লোকের কুলকুণ্ডলিনী না জাগ্রত করে থামবে না। তালেগোলে আমার দুটো ফোন। একটাকে কোলে নিয়ে ঘুমোতে যাই। ওই ফোনেই বেশিরভাগ বই সেভ করা আছে, বই পড়ার উচ্চাশা নিয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে খেলতে ঘুমোই। অন্য ফোনটায় অ্যালার্ম হায়েস্ট ভলিউমে সেট করে রেখে আসি ঘরের ওই প্রান্তে, যাতে শুয়ে শুয়ে হাত বাড়িয়ে অ্যালার্মের গলা টেপা না যায়। আর ও জিনিস বাজতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে গলা না টিপলে প্রতিবেশীরা থানায় যাবে। থানা পাশের গলিতে, পুলিশ আসতে পনেরো মিনিটের বেশি লাগবে না।

একরকমের অ্যালার্ম হয়েছে শুনেছি, ঘড়িতে বা ফোনে নয়, খাটে বিল্ট-ইন। অ্যালার্মের সঙ্গে সঙ্গে গোটা খাট রিখটার স্কেলে সাড়ে নয় তীব্রতায় ঝাঁকাতে শুরু করে। যতক্ষণ না খাটের অধিবাসী চাদর বালিশ শুদ্ধু মাটিতে ছিটকে পড়েন। এ দেশে ও রকম অ্যালার্ম-খাট পাওয়া যায় কি না জানি না, পেলেও অনেক দাম হবে নির্ঘাত। তার থেকে সহজ হচ্ছে বদখত অ্যালার্ম হায়েস্ট ভলিউমে সেট করে এমন দূরত্বে রেখে আসা যাতে অ্যালার্মের গলা টিপতে বিছানা ছেড়ে উঠে স্প্রিন্ট টানতে হয়।

সেদিন টানা গেল না, কারণ ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে টের পেলাম অ্যালার্মের সঙ্গে আরেকটা আওয়াজ হচ্ছিল যেটা এখন আর হচ্ছে না।

পরিস্থিতিটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করব। রাত তিনটে দশ, পিচ ব্ল্যাক চরাচর। জানালার বাইরে। ঘরের ভেতরেও। অন্যদিন অর্চিষ্মানের ল্যাপটপ মৃদু আলো ছড়ায়, সেদিন ছড়াচ্ছে না। কারণ পরদিন একটা ভীষণ জরুরি কাজ শেষ করতে হবে (শেষ হয়নি যথাবিধি) বলে রাতে সলিড ঘুম নিশ্চিত করার উচ্চাশায় পাশের ঘরে শুয়েছি। যে ঘরের দরজা দিয়ে বারান্দায় যাওয়া যায়। এদিকে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে ঘুমিয়েছি সেই সাড়ে বারোটায়, অর্থাৎ আমার ঘুম হয়েছে রোজকার মতোই কমবেশি আড়াই ঘণ্টা, কাজেই ঘুম ভেঙে উঠে আমার ল্যাটিচিউড লংগিচিউড, আমি কোন ঘরে, মাথা উত্তরে না দক্ষিণে, চশমা খাটে না টেবিলে, আমি আদৌ আছি না গেছি সব কিছুই নিয়ে মগজের ভেতর উত্তুঙ্গ সংশয়।

কিন্তু দ্বিতীয় আওয়াজটা হয়েছে। এখন আর হচ্ছে না। থেমে গেছে। কিন্তু যে নিঃসংশয়তায় ভিড়ের মধ্যে কেউ একদৃষ্টে আমার মাথার পেছন দিকে তাকিয়ে থাকলেও ঘাড়ের কাছটা শিরশিরিয়ে ওঠে, অবিকল সেই নিঃসংশয়তায় আমি টের পেয়েছি এই অন্ধকার ঘুটঘুটে ঘরে আমি ছাড়াও আরও কেউ আছে, যে অর্চিষ্মান নয়।

চিৎকার শুরু করলাম। আমার অ্যালার্মের চিৎকার ছাপিয়ে। অর্চিষ্মান! অর্চিষ্মান! অর্চিষ্মান! নো সাড়া।

এই মুহূর্তে, সকাল থেকে চার কাপ টাইফু ব্র্যান্ড আসাম টি, এক কলসি লার্জ আইসড অ্যামেরিকানো এবং এক গামলা ডার্ক রোস্ট পোর ওভার পেরিয়ে শরীরের অর্ধেক রক্ত যখন ক্যাফাইন, সাড়া না পাওয়ার একটাই ব্যাখ্যা মাথায় আসছে। অর্চিষ্মান কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোচ্ছে। সেই মুহূর্তের জোম্বি স্টেটে সম্পূর্ণ অন্য একটা ব্যাখ্যা মাথায় এসেছিল।

হয়তো যে লোকটা ওই ঘরে ঘুমোচ্ছে সে অর্চিষ্মান নয়। আর যার নাম অর্চিষ্মান নয় সে অর্চিষ্মান ডাকে সাড়া দেবেই বা কেন। আমার কানের কাছে এসে শকুন্তলা শকুন্তলা চেঁচালে আমিও সাড়া দিতাম না।

নাম বদলে চিৎকার শুরু করলাম। প্রসেনজিৎ! প্রসেনজিৎ! প্রসেনজিৎ!

ওয়েট। দিস কান্ট বি রাইট। সাড়া দিক না দিক, ওই ঘরে অর্চিষ্মানই আছে। আর কারও থাকা সম্ভব না।

এত চেঁচামেচিতে একটাই কাজ হল। অর্চিষ্মান সাড়া দিক না দিক, সে সাড়া দিল। আমার চিৎকার, অ্যালার্মের আর্তনাদ, অর্চিষ্মানের কানফাটানো নৈঃশব্দ্য ছাপিয়ে, দেওয়াল, সিলিং বুককেস আয়না ভাসিয়ে বেজে উঠল, ম্যাও, ম্যাও, ম্যাও।

ঘুম সম্পূর্ণ চটল। হাতড়ে টেবিলল্যাম্পের সুইচ অন করলাম। চশমাও আঙুলে ঠেকল। ঘরের ওই প্রান্তের হলুদ কভারপরানো ডিভানের ওপর সিপি-র সরকারি হ্যান্ডিক্রাফটসের শোরুম থেকে কিনে আনা বেগুনীসাদা মধুবনী প্রিন্টের তিনটে কুশনের আরাম ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠল আগুনকমলা একটা দলা। তার দুটো কান, চারটে পা, একটা ল্যাজ। 

গোটা ঘটনাটা নিয়ে আর কোনও ধোঁয়াশা নেই। বারান্দার দরজাটা বন্ধ না করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। না করার কারণ নেই, কারণ বারান্দা জোড়া লোহার গ্রিল। কোনও মানুষের ক্ষমতা নেই বারান্দা দিয়ে ঘরে ঢোকে। মানে চুপিসাড়ে ঘরে ঢোকে।

হুলো ঢূকেছে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। প্রথমে পেছনের গেটের সানসেটে লাফ দিয়ে উঠেছে, তারপর গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে গলেছে। আমি শিওর, অন্ধকারেই ঘুরে ঘুরে সারাবাড়ি জরিপ করেছে, দুটো খাট অকুপায়েড দেখে ডিভানটায় শুয়ে ঘুমিয়েছে। তারপর অ্যালার্মে ঘুমের বিঘ্ন ঘটায় সরবে আপত্তি প্রকাশ করেছে।

আমি হুলোজন্ম প্রাপ্ত হলে, প্রথম তো লোকের বাড়িতে ঢুকে ঘুমোনোর সাহস হত না, যদি বা হতও, বাড়ির বৈধ মালিকরা ব্যাপারটা ধরে ফেললে ল্যাজ তুলে পালাতাম, মোটা গলায় নিজের আপত্তি জানাতাম না। এভিডেন্টলি, হুলো আমার থেকে সাহসী। হুলো ততক্ষণে রয়েল বেঙ্গলের রাজকীয়তায়  শোবার ঘরের দিকে হেঁটেছে। যে ঘরে অর্চিষ্মান, অ্যালার্ম, হুলো এবং আমার চিৎকার অগ্রাহ্য করে অম্লানবদনে ঘুমোচ্ছে। সাহসী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুলো লজিক্যালও। এ ঘরে গোলযোগ, যে ঘরে শান্তিতে ঘুমোনোর পরিবেশ সে ঘরে গিয়েই শোওয়া ভালো।

আমি তো স্রেফ চেঁচিয়েছি। হুলো যদি লাফ দিয়ে খাটে উঠে গা ঘেঁষে শোয়, হুলোর রোমশ, উষ্ণ, কম্পিত শরীরের অপ্রত্যাশিত ছোঁয়ায় রোমাঞ্চের বদলে অর্চিষ্মানের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাই বেশি। কাজেই হুলোকে তাড়াতে হবে। এবং গলার জোরে হবে না। তাহলে এতক্ষণে হয়ে যেত। দৌড়ে বারান্দার দরজা হাট করে খুলে দিলাম, হাত পা নাড়লাম, হুশ হ্যাট জাতীয় ধ্বনিসূচক অব্যয়, বেরো বলছি গোত্রের  ব্যকরণসম্মত বাক্যরচনা করে হুলোকে দরজার দিকে চালনা করার চেষ্টা করলাম। বৃথা গেল।

অস্ত্রের কথাটা তখনই মাথায় এল।

আপনারা ফার বেবির অভিভাবক না হতে পারেন, রাস্তায় কুকুরছানা দেখলেই লাফিয়ে গাল না টিপে না দিতে পারেন, তা বলে তার ল্যাজে পটকা বেঁধে ফাটান না, বেড়ালবাচ্চা লাথান না বলেই আমার আশা। নিজেদের থেকে আড়েবহরে ছোট বলেই কাউকে ঠেঙিয়ে পাট করতে হবে এই লজিকে আপনাদের মাথা চলে না, হোপফুলি। কাজেই অস্ত্রশস্ত্রের প্রসঙ্গে আপনাদের অস্বস্তি স্বাভাবিক। আমি শুধু এটাই বলতে পারি, এর পর আমাকে যা করতে হলে তার মধ্যে আক্রমণের উদ্দেশ্য শূন্য, পুরোটাই আমার এবং অর্চিষ্মানের আত্মার রক্ষার্থে। অস্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাই দ্রুত এই পয়েন্টগুলো বিচার করেছিলাম। এক, অস্ত্র পলকা হতে হবে। দুই, কোনও ধারালো কিনারা থাকা চলবে না। তিন, লক্ষ্যবস্তুর মিনিমাম দু'হাত দূর মার্জিনে ভ্রষ্ট হতে হবে। আর কিছু নিয়ে না থাকুক, নিজের টিপ সম্পর্কে আমার অ্যাদ্দিনে নির্ভুল ধারণা জন্মেছে, কাজেই জানি হুলোর দু'হাত দূর দিয়ে অস্ত্রনিক্ষেপের আইডিয়া অসমীচীন হবে। হুলোর  অপস্রিয়মাণ শরীর আন্দাজ করে অস্ত্র নিক্ষেপ করলাম। শরীরের দু'হাত দূর দিয়ে ঠকাস শব্দে সে বারান্দার মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ল। অক্ষত হুলো শেষ হুংকার ছেড়ে গ্রিল গলে গেল। হুংকারটা শুনতে 'ম্যাও'-এর মতো, কিন্তু আই ব্লকের আকাশবাতাস কাঁপিয়ে নির্ঘোষিত হল, "সব কুছ ইয়াদ রাখ্‌খা যায়েগা।"

দরজার ছিটকিনি যত ওপর সম্ভব ঠেলে, ঘরে ফিরে অর্চিষ্মানকে ঝাঁকালাম। হুলোটা ঘরে ঢুকে ডিভানের ওপর ঘুমোচ্ছিল। অর্চিষ্মান ছিলা ছিঁড়ে টান হয়ে বসল। বার করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। অর্চিষ্মান বলল, ঠিক করে করেছ তো? খাটের তলায় ডিঙি মেরে দেখেছ? কারিগাছ ভালো করে ঝেড়েছ? বললাম, না। কারণ স্পষ্ট দেখেছি গ্রিল গলে পালিয়েছে। অর্চিষ্মান বলল, দেখার সময় চশমা পরে ছিলে? বললাম, অন গড ফাদার মাদার। অর্চিষ্মান দড়াম করে বিছানায় পড়ে নিমেষে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন প্রসেনজিৎ বারান্দা ঝাঁট দিয়ে ঘরে এসে হাত বাড়িয়ে বলল, তোমাদের অল আউট, বারান্দায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল। বলে আমাদের দিকে পঞ্চাশ পার সেন্ট কৌতূহলী, পঞ্চাশ পার সেন্ট সন্দিগ্ধ দৃষ্টিপাত করল। অর্চিষ্মান ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়ে গলার ভেতর খুক আওয়াজ করল। আমি ভীষণ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করলাম।


ঘটনার দুয়েকদিন পর অটো থেকে নেমে গেটের সামনের দৃশ্য। ছবি তুললাম। পেরিয়ে এসে গেট খুলে বাড়ি ঢুকলাম। সরে শোওয়া তো দূর, ল্যাজটা শুধু অল্প নড়েছিল আর প্রায় অশ্রুত একটা ম্যাও বেরিয়েছিল গলা দিয়ে। রাতে ঘুমোতে দেবে না, দুপুরেও শান্তি নেই।

Comments

  1. orebbas, enaar to alada attitude, dekhei bojha jaye. Tobe raat dupure alarm baajle birokto hotei paare. aar beral der choritro jetuku bujhechhi, ora manusher sristhi kora ownership byapar take shompurno ograjhyo kore. sheta khabaar hok, ki bichana.
    odike arekta shombhabonao uriye deya jaye na, je tumi tomaar ghore ekta rumal rekhechhile...ar shetai tarpor...

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই সব বলে হাড় কাঁপিয়ো না। আলমারিতে শত শত রুমাল, তারা সবাই যদি একে একে...

      আমাদের হুলোর অ্যাটিচিউড লেজেন্ডারি।

      Delete
  2. Replies
    1. সে আর বলতে। আমার ধারণা মানসিক স্বাস্থ্যও চমৎকার।

      Delete
  3. হুলোদের স্বভাব একটু বদগোছের বটে।
    তবে লেখাটা চমৎকার হয়েছে।
    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  4. সুরেলা অ্যালার্মে ঘুম ভাঙার বদলে ঘুম এসে যায় বেশি। ওই একত্রিশ, বত্রিশ, পঁয়ত্রিশ ... বেপারটাই হতো বলে ফাইনালি ফোনের মধ্যের সবচেয়ে বাজখাই বাজে কর্কশ অ্যালার্মটাই বাছতে হয়েছে নিজের জন্যে। তবে অ্যালার্ম স্নুজ করে যে ঘুমটা হয়, সেটার সুখই আলাদা।

    দারুন হয়েছে লেখাটা।
    হুলোকে আমার তরফ অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মনে করিয়ে দিলেন, হুলোকে আমারও ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। পোস্টের আইডিয়ার যা আকাল, সেদিন রাতে ঢুকে পড়ে পিলে না চমকালে এই পোস্টটাও লেখা হত না।

      Delete
  5. হুলোকে অনেক আদর! ওকে একটা ভালো নাম দাওনা কুন্তলা! বেড়ালের এই কাউকে তোয়াক্কা না করাটা আমার দারুন লাগে!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও, অমিতা। কারণ আমিও গোপনে একদিন বেড়াল হয়ে ওঠার স্বপ্ন লালন করি। পুরোটা না হলেও, অন্তত এই তোয়াক্কাহীন হওয়ার দিকটায়।

      আমরা নাম দেব কী, আমাদের কি নাম দেওয়ার সম্পর্ক? হুলো আমি শিওর আমাদের নাম দিয়েছে নিজের মাথার ভেতর। যদিও সে নাম শোনার সাহস আমার নেই।

      Delete

Post a Comment