অতি উত্তম
গুড ফ্রাইডের উইকেন্ডে তো আমরা কসোল চলে গেলাম। অতি উত্তম দেখার প্ল্যান কাটিয়ে। সোমবার সকালে ফিরলাম। আশায় ছিলাম অর্চিষ্মান ভুলে গেছে। ভোলেনি। সোমবার চুপ করে ছিল মঙ্গলবারে ঠিক টিকিট কেটে ফেলেছে। নেহরু প্লেসে চলছে কুন্তলা। না দেখলে পরে যদি হইচইতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার না হয় কেঁদে কূল পাবে না। কাজেই অতি উত্তম দেখা হল। অবান্তরে এ বিষয়ে কিছু লিখব না ভেবেছিলাম। এবার লোকে ভাববে নির্ঘাত পারসোন্যাল রাগ কিছু আছে। দেখিসই বা কেন নিন্দেই বা করিস কেন? কিন্তু না করলে ইমিডিয়েটলি আরেকটা ভ্রমণকাহিনীতে ঝাঁপাতে হয়। একটা বই নিয়েও লিখব লিখব ভাবছি কিন্তু তাতে খাটনি আছে। তাই ফাঁক ভরাতে নিন্দেমন্দ রইল।
সৃজিত মুখার্জির প্রশংসা বন্ধুদের মুখে তিনটে শুনেছি। এক, ভ্যারাইটি। ফিল্ম স্টার, নেতাজী, ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্মৃতিভ্রংশ, জন্মান্তর, ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু। ইয়ার্কির মতো শোনাচ্ছে কিন্তু ইয়ার্কি করছি না। সত্যিই এক চিক্কুর পাড়েন না ভদ্রলোক। দুই, গান। কোন গান জনগণ ধরবে সেটা বোঝার কান ওঁর তৈরি। গত দশ বছরে বাংলা ভাষার অধিকাংশ মনে রাখা গান ওঁর সিনেমা থেকেই বেরিয়েছে। তার ক্রেডিট যেমন সংগীত পরিচালকদের, সিনেমার পরিচালকেরও নিশ্চয় একটা ভূমিকা থাকেই। আমি যেমন এখন ‘বাউন্ডুলে ঘুড়ি’র ট্রিপে আছি। ক’সপ্তাহ আগে ‘আমি সেই মানুষটা আর নেই’-এর ট্রিপে ছিলাম। দশম অবতারকে অত গালি দিয়েও দশম অবতার-এর গান শুনে চলেছি এটা একটা বলার মতো ব্যাপার। বোবা টানেল তো রেগুলার ইন্টারভ্যালে আমার জীবনের জাতীয় সংগীত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তিন নম্বর প্রশংসাটা হচ্ছে অ্যাট লিস্ট মেসেজ দেয় না।
আমাদের গুরুমুখী সমাজে বাবা মা রাঙাপিসি শিবুদা সবাই মিলে এত মেসেজ দিয়েছে, গানে মেসেজ, স্কুলে মেসেজ, নাটকনভেলসিনেমায় মেসেজ এমনকি আইকনোক্লাস্ট রোদ্দুর রায়ও আসলে নাকি মেসেজ দেওয়ার জন্যই জেলে পর্যন্ত চলে গেছেন, সেই বাজারে কেউ মেসেজ দিচ্ছে না দেখলে সত্যিই দুই হাত ধরে বলতে ইচ্ছে করে বাঁচালেন দাদা। অতি উত্তম দেখে সে রকমটাই বলতে হবে। একটা শিল্পকর্মের একেবারে কিচ্ছু বলার না থাকলে কেমন দাঁড়ায় অতি উত্তম তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
উত্তমকুমারের হাসির সামাজিক তাৎপর্য নিয়ে পি এইচ ডি করছে কৃশানু। দূর থেকে দেখে সে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছে। প্রেমের কথা মেয়েটিকে জানিয়েওছে। যে ভাবে জানিয়েছে তাতে আমার কৃশানু চরিত্রটার প্রতি শ্রদ্ধা ঝড়াং করে বেড়ে গেছে। অনিন্দ্য চক্রবর্তীকে এমনিই ভালো লাগে; কৃশানুকে ভালো লাগার কাজটা ওই দৃশ্যটা আরও সহজ করে দিয়েছে।
কৃশানু বলল। মেয়েটা শুনল। তারপর বলল সবই তো বুঝলাম কিন্তু এখানে সুবিধে হবে না কারণ আমি তোমার “আউট অফ লিগ”। কৃশানু চোখ বড় বড় করে বলল এই রে, কী হবে? আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
অর্চিষ্মান বলল ওরে বাবা কুন্তলা তুমি এখানে আবার নো মিনস্ নো ইত্যাদি লাইনে শুরু কোরো না। ওর মতে ওই পর্যন্ত যাওয়ার আগে এ সিনেমা এত কিছুতে ফেল করবে যে মিসোজিনি পয়েন্ট আউট করা মানে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা মারা। আমি একেবারেই একমত নই। অসুবিধের কমবেশি মাপাও অসুবিধেজনক। ক্যামেরার অ্যাংগলে উইথ ডিসটিংশন পাস করার পরেই টক্সিক মাসকুলিনিটি পয়েন্ট আউট করা যাবে - এর থেকে অদ্ভুত যুক্তি আর হয় না।
অর্চিষ্মানের এত ডিফেন্সিভ হওয়ার দরকার ছিল না। মিসোজিনি মাসকুলিনিটি নিয়ে কিছুই বলার নেই আমার। আমার কৌতূহলটা মানবমনসংক্রান্ত। নারীপুরুষ নির্বিশেষে। ধরা যাক আপনি একজনকে বললেন তোমাকে ভালো লাগে। সে বলল আমি তোমার অনেক ওপরের লিগ। তারপরও তাকে একই রকম ভালো লাগবে? কী ভালো লাগবে? আগে তো দূর থেকে দেখে ভালো লেগেছিল। কাছ থেকে তো এই বেরিয়েছে। তার পরেও তাকে ভালো লাগছে কেন? আমাদের আসলে কী ভালো লাগে?
অনেকে বলবে চেহারা, টাকা, ক্ষমতা। হতে পারে। আবার অন্য একটা কিছুও হতে পারে। হতে পারে আমাকে যে অপমান করছে এক্স্যাক্টলি সেটাই আমার ভালো লাগছে। লোকে যে প্রেমের নামে কত কিছু সয় তার জন্য প্রেমের মহিমার থেকে অনেক বেশি দায়ী লোকের আত্মসম্মানের অভাব। আমরা অপমান পেতেই কন্ডিশনড। রেসপেক্ট হ্যান্ডল করার ট্রেনিং আমাদের অধিকাংশেরই নেই। ভদ্র ব্যবহার আমাদের পোষায় না। বদ ব্যবহার আমরা আমাদের প্রাপ্য বলে মনে করি।
সেটা না হলে বিকল্পটা আরও ভয়ের। আউট অফ লিগ? দেখাচ্ছি মজা। আমার লিগে যদি টেনে না নামাতে পারি নাম বদলে ফেলব।
এর মধ্যে কোন বিকল্পের কারণে জানি না, মেয়েটি আমি তোমার লিগের বাইরে বলার পর কৃশানু চোখ বড় বড় করে বলল কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি? সত্যিই তো। ভালোবেসে ফেলেছে; এবার তুমি আমার লিগে কি না, তোমার আমাকে ভালো লাগে কি না এ সব ইমমেটেরিয়াল। তাছাড়া মেয়েটির ইচ্ছেঅনিচ্ছে ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া আচারআচরণের ওপর তো যে কৃশানুর ভালোবাসা নির্ভর করবে না। ভালোবাসা একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট ব্যাপার, শূন্যতায় চরে বেড়ায়। এবং শুধু বাড়ে। কমেটমে না। লিগটিগ দিয়ে তাকে টসকানো যায় না।
কাজেই কৃশানু চেষ্টা চালিয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে মগজে বিদ্যুল্লতা। বাঙালিকে প্রেমের পথ দেখানোর জন্য বেটার কে আছেন, উত্তমকুমার ছাড়া? তার ওপর সে উত্তমকুমারের নাতি যখন বাজারেই ঘুরছে? কৃশানু স্থির করে নাতিকে মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করে প্ল্যানচেটে উত্তমকুমারকে নামিয়ে পরামর্শ চাইবে।
উত্তমকুমারের নাতির চরিত্রে অভিনেতার নাম পরিচালককে এক সেকেন্ডও ভাবতে হয়নি। কে আর করবে? উত্তমকুমারের রিয়েল নাতি থাকতে? পাড়ার অ্যানুয়াল ফাংশানে দইওয়ালার পার্ট আর কে করবে, মাদারডেয়ারির শিবু ছাড়া? সৃজিত মুখার্জির সিনেমাতে এই পাড়ার নাটকের ফুর্তির ভঙ্গিটা জাগরূক থাকে। ইন্টারভিউতে বলছিলেন, আমি সেই সিনেমাটাই বানাই যেটা আমার ভালো লাগে। স্টেটমেন্টের সত্যতা এই সব সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায়। উত্তমকুমারের নাতির রোলে উত্তমকুমারের অ্যাকচুয়াল নাতি অ্যাকটিং করছে এটা ভেবে ওঁর ফুর্তি হয়েছে এবং উনি সেটা কাজে পরিণত করেছেন। এটা সহজ কথা নয়। আমার যেটাতে ফুর্তি হচ্ছে বছরের পর বছর সেটাই করে যাব এবং প্রোডিউসাররা টাকার থলি হাতে লাইন লাগাবে - এটার জন্য একটা অন্তর্লীন মাস্তানি লাগে। সেটা সৃজিত মুখার্জির টইটম্বুর আছে।
গোড়াতে কৃশানু পদ্মাসনে বসে চোখ বুজে সিনেমা আর চরিত্রের নামটাম ধরে ডাকাডাকিতে উত্তমকুমার ঘাপটি মেরে ছিলেন, যেই না বুদ্ধি খাটিয়ে কৃশানু ভালো ভালো বাঙালি খাবারের নাম বলেছে অমনি সুড়সুড়িয়ে নেমে এসেছেন। পরিচালক দর্শকের পালস কী অসামান্য বোঝেন এটা তার নিদর্শন। বাঙালি শিল্পীরা নিজেদের শিল্পের থেকে কচিপাঁঠার ঝোলের প্রতি ইন্টারেস্ট বেশি না দেখালে বাঙালি দর্শক রিলেট করতে পারে না। নেহরু প্লেসের হলের দর্শকদের হইহই গড়িয়ে পড়াই তার প্রমাণ।
উত্তমকুমারের বুদ্ধিতে ( উত্তমকুমারের ফ্যান কোনওদিন কেন হতে পারিনি বোঝা গেল) কৃশানু ডান্সফ্লোরে ভাড়াটে গুণ্ডা পাঠায়। তারা কৃশানুর ইম্যাজিনারি প্রেমিকার সঙ্গে ফেক অসভ্যতা করে এবং মেয়েটি ফায়ারব্র্যান্ড ফেমিনিস্ট হয়ে লাফাঙ্গাদের চোখে চোখ রেখে ভার্বাল ফাইট দেয়। কিন্তু তাতে কার্যসিদ্ধি হবে না। রিয়েল ফাইট লাগবে যেখানে মেয়েটি পিছু হটে কৃশানুকে পৌরুষ দেখানোর সুযোগ করে দেবে।
ভাবছিলাম আজ থেকে সত্তর বছর পর এই সিনগুলো দেখে লোকের কী রিঅ্যাকশন হবে। সবাই অবাক হয়ে সেমিনার পেপার নামাবে যে কী দিন ছিল? লুচ্চাগুলোকে দু’ঘা দিতে একজন পুরুষ লাগল? মেয়েটার দ্বারা হল না? নাকি কশনারি টেল হিসেবে দেখাবে? সত্তর বছর আগে সমাজ কতখানি নেমেছিল ভাবা যায়? মেয়েরা ডান্স ফ্লোরে গিয়ে নাচত? আই গেস রাজনীতির পেন্ডুলামের মোশন কোনদিকে তার ওপর ডিপেন্ড করবে।
যাই হোক এখনটা সত্তর বছর পর নয় এখনটা এখন। কাজেই হস্ত থাকিতে মুখে কেন কথা বল-র স্টেজ এসে পড়াতে মাতঙ্গিনী মেয়ে পিছু হটে এবং প্ল্যানমতো সেই ফাঁকে কৃশানু সেঁধিয়ে ঝাড়পিট করে মেয়েটির লিগে উঠে যায়। প্রেম নামে না। নট ইয়েট। বন্ধুত্ব নেমে যায়। উত্তমকুমার কৃশানুর বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে যান। লাবণি ফ্লার্ট করেন। শুভাশিস আড়চোখে দেখেন। কৃশানু বান্ধবীর সঙ্গে উত্তমকুমারের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং যে মেয়ে জীবনে উত্তমকুমারের একটাও সিনেমা দেখার আগ্রহ বোধ করেনি সে বুকের কাছে প্যান্ট পরা উত্তমকুমারের আবছা ঝিরিঝিরি ফুটেজের প্রেমে পড়ে যায়।
একজন রিভিউয়ার, যিনি মাথার পেছনের দেওয়ালে তারানতিনোর “আই ডিডন’ট গো টু ফিল্ম স্কুল আই ওয়েন্ট টু ফিল্মস” বাঁধিয়ে নেমে পড়েছেন এদিকে যারা ফিল্ম স্কুলে গেছে তাদের প্রতি রাগে শরীরের প্রতিটি বিন্দু ফুটছে, ইউটিউবের রিভিউয়ারদের উচ্চারণকে নিচু চোখে দেখার অপরাধে অঞ্জন দত্তকে এলিট গাল পেড়ে তিনশোখানা রিঅ্যাকশন ভিডিও নামিয়ে ফেলেছেন এদিকে অতি উত্তম-এর রিভিউ দিতে গিয়ে বলছেন "আমি বলছি না সিনেমাটা ভালো, আমি বলছি পাবলিকের ভালো লাগবে," তিনিও এই জায়গাটায় এসে থমকেছেন।
এই মেয়ে উত্তমকুমারের প্রেমে পড়ে গেল? কথা নেই বার্তা নেই? সম্ভব?
আমি থমকাচ্ছি না। থমকাতে পারতাম। কিন্তু কাল নাইট শো-তে ‘লেট নাইট উইথ ডেভিল’ দেখে ফিরে এসে সিনেমাটার রিভিউ পড়ছিলাম ইন্টারনেটে। একজন দেখলাম লিখেছেন অ্যালফ্রেড হিচকক একদল দর্শক সমালোচকের নাম দিয়েছিলেন “দ্য প্লজিবল্স”। এঁরা হচ্ছেন তাঁরা যারা একটা শিল্পকর্মকে সম্ভাবঅসম্ভবের মাপকাঠিতে বিচার করেন। নাকের জায়গায় চোখ থাকে না কাজেই পিকাসো আঁকতে পারে না। ডাইনোসর কবে লুপ্ত হয়ে গেছে কাজেই জুরাসিক পার্ক কোনও সিনেমাই হয়নি। এটা কি হতে পারে যে একজন মায়ের কংকাল বাড়িতে নিয়ে বসে আছে আর কেউ টের পাচ্ছে না কাজেই হিচককের সিনেমা পাতে দেওয়া যায় না। আমি যদি বলি যে ধুস ও রকম প্রেম আবার হয় নাকি আমাকেও হিচকক ‘দ্য প্লজিবল্সে'র দলে ফেলবেন। তাছাড়া প্রেম যে কীসে হয় সত্যিই প্রেডিক্ট করা অসম্ভব। হয়তো হয়েছে।
প্রেম হয়। আধুনিক প্রেম তাই ইউ কে আর উচ্চলিগের মেয়ে লিভ টুগেদার শুরু করেন। আধুনিক প্রেম তবু আর্লি টোয়েন্টিজের তরুণী প্রেমের নাটকে পুলিসের পার্ট পায়। কোথায় গিয়েছিলে, কখন ফিরবে, কার সঙ্গে ছিলে যে আমাকে ফোন করতে পারোনি? আধুনিক প্রেম তবু আটানব্বই বছরের হিরোর অশক্ত ফুটেজ বেতোয়াক্কা ব্যাড বয় রয়ে যায়। থাকলে থাকো নইলে কাটো পুরুষসিংহ। নাতনির সুবিধেজনক মিডিয়াম হাতের কাছে না থাকা সত্ত্বেও সুপ্রিয়া দেবীর ভুত ছাদে এসে নামেন। দুই ফুটেজের জাপটাজাপটি দেখে মেয়েটি শোকের ঢোঁক গিলে ইউ কে-র সঙ্গে ব্রেক আপ করে। লিগের মই বেয়ে যাবতীয় ওঠানামার পর লাস্ট সিনে কৃশানু ও প্রেমিকার ছাদনাতলায় দেখা হয়ে যায়।
সিনেমা শেষ। আতসকাচ চিরুনি নিয়ে নামলেও কোনও কোণা থেকে এককণা মেসেজ বার করা যাবে না। সিনেমাটা বানানো হয়েছে পরিচালকের উত্তমকুমারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক আছে বলে, বাঙালি বুড়োরা বড়পর্দায় উত্তমকুমারকে মিস করছিলেন বলে, বাঙালি ছোটরা ইউ কে-র মর্ম না বুঝতে পেরে পুরো বাঙালি হয়ে উঠতে পারছিল না বলে। শুধু এই ক’টা কারণের জন্য উত্তমকুমারের তিরাশিটা ছবি তিরাশিবার করে দেখে, ছোটাছুটি করে পঞ্চান্নজন প্রযোজকের থেকে পারমিশন জোগাড় করে, এ আই-এর দ্বারস্থ হয়ে উত্তমকুমারের দাঁড়ানো, তাকানো, হাঁটাচলা একটা মেয়ে-তোলার-গল্পের মধ্যে গোঁজা হয়েছে। গল্পের ডায়লগের সঙ্গে মিলিয়ে ডায়লগ খুঁজে বার করা হয়েছে। খুঁজে পাওয়া ডায়লগের সঙ্গে মিলিয়ে গল্পের ডায়লগ লেখা হয়েছে। পরিণাম যাই হোক না কেন প্রস্তুতির পরিশ্রম স্ট্যান্ডিং অভিবাদন দাবি করে। আমার শুধু মনে হয়েছে ঝিন্দের বন্দীর ফুটেজগুলো বাদ দিলেও হত। মানে একটাই দৃশ্যে উত্তমকুমারের পরনে শার্টপ্যান্ট, ধুতিপাঞ্জাবী, হাতে চায়ের কাপ, হাতে সুটকেস এগুলো অবধি ঠিক আছে কিন্তু হঠাৎ মুকুট পরে তরোয়াল গুঁজে একজন রাজা এসে উপস্থিত হলে জাম্প স্কেয়ার তো হয়ই অট্টহাসিও পেয়ে যায়। হলশুদ্ধু লোক যেখানে হাসছে সেখানে হাঁ করে থেকে হলশুদ্ধু লোক যেখানে হাঁ করে দেখছে সেখানে হেসে ওঠা অস্বস্তিজনক।
সৃজিত মুখার্জির সিনেমায় গানের গুরুত্বের কথা বলছিলাম। উপলের গলায় গাওয়া “বন্ধু ভাবি” গানটা সিনেমা রিলিজের আগে থেকেই ইউটিউবে থেকে শুনছি। সংগীত পরিচালক সানাই গান তৈরির গল্প বলছিলেন। বলছিলেন যে পরিচালকের মাথায় এই আশ্চর্য কনসেপ্ট মাথায় আসার পর ওঁরা গানটা তৈরি করে ফেলেন। যদি কেউ শুনে না থাকেন, গানটা হচ্ছে এই রকমঃ
এখনও তো সেই তোমাকে বন্ধু ভাবি
ও হাসি আজও চিরদিনের চাবি,
জীবনের দেয়া নেয়া চুকিয়ে দিয়ে
ফিরে এলে চিরসবুজ ও মন নিয়ে।
চাওয়া পাওয়ার খুললে নয়া ইস্কুল বাড়ি
কচি প্রেমের কোচিং এবং রাজকুমারী।
পথে হলো দেরি তবু পৌঁছে যাবো
হোঁচট খেয়ে হাত বাড়ালেই বন্ধু পাবো,
আজও সবার ওপরে তাই তুমি আছো
শহরের রীতি কথায় দিব্বি বাঁচো,
ওপারে চলে গিয়েও রাজাসাহেব
এ নগর দর্পণেতে হওনি গায়েব।
দুটি মন জুড়বে তুমি এ অঙ্গীকার
হাজার মনে রাজার দেয়া এই উপহার।
তুমি শুধু শিল্পী তো নয় প্রেমের গুরু
কায়াহীনের কাহিনী তাই হচ্ছে শুরু ..
ধাঁ করে মনে পড়ে গেল। আমাদের স্কুলের পত্রিকা ছিল ‘উদয়রাগ’। বছরে একবার ছাপা হত। সেই পত্রিকায় এই কনসেপ্ট প্রথম দেখেছিলাম। ভার্বেটিম মনে নেই, অনেকটা এই রকম।
প্রিয় দেবদাস,
বিজয়া-র শুভেচ্ছা গ্রহণ করিয়ো। কাশীনাথ, হরিচরণ, হরিলক্ষ্মী, পরেশ, লালুকে আমার আশীর্বাদ এবং বড়দিদি, মেজদিদিকে আমার প্রণাম জানাইয়ো। পল্লীসমাজ-এর কানাকানিতে শুনিয়াছিলাম বিন্দুর ছেলে চরিত্রহীন হইয়া গিয়াছে, আশা করি সে অন্ধকারে আলো দেখিয়াছে। রামেরও শুনিয়াছি সুমতি হইয়াছে; সে নারীর মূল্য বুঝিয়া পথের দাবী ছাড়িয়া গৃহদাহ নিভাইতে তৎপর হইয়াছে।
বিরাজ বৌ-এর স্বামী অবশেষে অভাগীকে নিষ্কৃতি দিয়া স্বর্গে আরোহণ করিয়াছে। বারংবার পথ নির্দেশ চাহিয়া বিরক্ত করায় মহেশ মেজাজ হারাইয়া গুঁতাইয়া দেওয়ায় ভরা হাটে শ্রীকান্তের দর্পচূর্ণ হইয়াছে।
অনুপমার প্রেম বিবাহে পর্যবসিত হইতে হইতেও দেনা পাওনার চক্করে ভেস্তাইয়া যাওয়ার খবর পাইয়াছিলাম। ভারতীয় দণ্ডবিধির ডাউরি প্রোহিবিশন অ্যাক্টের আওতায় মামলা দায়ের হইয়াছিল শুনিয়াছিলাম। মামলার ফল কি বাহির হইল? জানাইয়ো। শেষ প্রশ্ন। বৈকুণ্ঠের উইল-এ তোমার শিকে কিছু ছিঁড়িল? চিঠির অপেক্ষায় রহিলাম। বাল্য স্মৃতি আজকাল সদা জাগ্রত থাকে।
ইতি, দত্তা
সেটা ক্লাস সিক্স, মেরেকেটেে সেভেন। বেঁচে থাকতে আবার যে এই কনসেপ্টের সঙ্গে দেখা হবে ভাবিনি। হয়ে গেল।
Mithye bolbo na, "bondhu bhabi" gaan ta sei kobe theke loop e shunchhi, kintu cinema ta sahos kore ekhono dekhe uthte parini. Tomar sahos ke kurnish.
ReplyDeleteআমার সাহস না, সাহস অর্চিষ্মানের, বিম্ববতী। তবে সিনেমাটা প্লিজ দেখো। প্লিজ। হইচইতে তো আসবে তখন দেখো, হইচই না থাকলে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে দেখো।
Delete"অতি উত্তম" দেখা হয়নি। হৈচৈতে এলে (বা অন্য কোথাও এলে) দেখবো।
ReplyDeleteসৃজিত মুখার্জির দশম অবতার থেকে আমি রিল্কের কবিতাটা পেয়েছি। আগে রিল্কেকে চিনতাম না (যদিও নামটা শোনা লেগেছিলো), তাই ওটা লাভ। অন্য কিছু সিনেমাতেও বোধয় কিছু কবিতা পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন মনে পড়ছে না।
উত্তমকুমারের সেরকম ফ্যান আমিও হয়ে উঠিনি। অবশ্য ওনার অনেক সিনেমাই দেখা নেই। তবে নায়ক সিনেমাতে ওনাকে দারুন লেগেছিলো।
অতি উত্তম পয়সা দিয়ে না দেখাই ভালো, রাজর্ষি। রিলকে-কে অডিয়েন্সের কাছে পরিচিত করাটা ভালো, তবে অতবার করে না করলেও হত। উনি অল্পে সারতে পারেন না, এটা আগেও খেয়াল করেছি।
DeleteNicher chithiti ta apni banalen, na? Mochotkar hoyechhe :P Cinemata dekhini, tobe ei review ta epic :D
ReplyDeleteভাবছিলাম, আমার এত মাথা খাটিয়ে শরৎবাবুকে দেওয়া ট্রিবিউটটার কেউ একটু প্রশংসা করলে পারে। আপনি করলেন। থ্যাংক ইউ, সায়ন।
Delete