কেরালা হাউস, কাঠপুতলি



কেরালা হাউস ক্যান্টিন, ‘সমৃদ্ধি’




কেন কেরালা, কেন কর্ণাটক বা নাগাল্যান্ড বা ঝাড়খণ্ড নয়, সেটা আমাদের জিজ্ঞাসা করলে বলতাম, কর্ণাটক হাউসটা উদ্ভট জায়গায়, আর নাগাল্যান্ডটা কেন জানি আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না আর লিট্টি খাওয়ার সম্ভাবনায় অর্চিষ্মান মুখব্যাদান করেছিল তাই, কিন্তু আমার বাবাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তিনি বলবেন ওগুলো কোনও ফ্যাক্টরই নয়। "তোরা সেদিন কেরালা ভবনে গিয়েছিলি কারণ তোদের কপালে সেদিন কেরালা ভবনে যাওয়াই লেখা ছিল। ক্যান্টিন ক্যান্টিন পে লিখখা হ্যায় খানেওয়ালো কা নাম।"

যন্তরমন্তর রোডের তিন নম্বর বাড়িতে কেরালা হাউসের অফিস। চেনা খুব সোজা। প্যাটেল চক মেট্রো থেকে বেরিয়েই দেখলাম একটা দিল্লি পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। জানতাম থাকবে। ওই চত্বরটা হচ্ছে দিল্লির সবথেকে খতরনাক চত্বর। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, হরতাল, অবরোধ, অনশন, মৌনমিছিল, স্লোগানমিছিল, মোমবাতি মিছিল, কিছু না কিছু একটা লেগেই আছে।

পুলিশ দেখলে কি আপনার ভয় করে? আমারও করে। যে কোনও সুস্থ মানুষেরই করে। বিশেষ করে তাঁরা যদি দিল্লির পুলিশ হন। সকলেই ছ’ফুটিয়া, সকলেরই কবজি দেখলে এবং সে কবজির রদ্দা ঘাড়ে এসে পড়লে কী হবে কল্পনা করলেও আপনার হৃদপিণ্ড কাঁপতে থাকে। উল্টোদিকে আবার মায়ের শিক্ষাও ভুলতে পারি না। রাস্তা জিজ্ঞাসা করতে হলে পুলিশকাকুর থেকে ভালো সোর্স আর কিছু নেই। জোর করে মাথা থেকে ভয় সরিয়ে ভ্যানের কাছে গিয়ে বিনীত সুরে জিজ্ঞাসা করলাম, “ভাইসাব, কেরালা হাউস কিধার সে যানা হোগা?”

অমনি ভ্যানশুদ্ধু সবাই ভয়ানক হেল্পফুল হয়ে রুপোর বালা পরা, লাল সুতলি বাঁধা বিরাশি সিক্কার কবজি নাড়িয়ে নাড়িয়ে রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। পুলিশের সঙ্গে মোকাবিলা করে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল, আমি বুক ফুলিয়ে কেরালা হাউসের দিকে হাঁটা দিলাম। দূর থেকে দেখতে পেলাম অর্চিষ্মান গেটের সামনে হাঁটাহুঁটি করছে। আমার একটা সমস্যা হল অর্চিষ্মানকে দেখলেই আমার মুখটা হাসি হাসি হয়ে যায়, আমি কিছুতেই মুখের পেশিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। আমি হাসিমুখে পাঁচশো গজ দূরে অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলাম, উল্টোদিক থেকে ফুটপাথ ধরে যাঁরা হেঁটে আসছিলেন তাঁরা কেউ কেউ ভাবলেন আমি তাঁদের দেখে হাসছি বুঝি, তাঁরাও কনফিউজড মুখে হাসলেন, বেশিরভাগই ভাবলেন পাগল, দ্রুত পা চালালেন।

কেরালা হাউসের ক্যান্টিনের খাওয়াদাওয়া এতই কেজো যে সেটাকে নিয়ে ফুলিয়েফাঁপিয়ে লেখা একরকম অসম্ভব। তাই আমি ছবি দিয়ে কাজ সারছি। সব ছবিই ফোনে তোলা।

আমি প্রথমে ভেবেছি থালায় করে মুড়ি দিয়ে গেছে। তারপর মুখে দিয়ে বুঝলাম মুড়ি নয়, ভাতই।

এই হচ্ছে সম্পূর্ণ মিল। ভাত,  নারকেল দিয়ে ডাল, নারকেল দিয়ে বিনের তরকারি, মাছভাজা, পাঁপড়। টেবিলে সম্বরের বাটি আর রসম আর বাটারমিল্কের জগ রাখা আছে, যত খুশি নিয়ে খাও।

খাওয়া শেষ করে বাইরে বেরিয়ে মেট্রোর দিকে হাঁটছি, অর্চিষ্মান বলল, “তোমার ছবি তোলার ধুম দেখে দুটো ছেলে খুব হাসছিল।”

হাসছিল তো হাসছিল। মা সারদা বলে গেছেন লজ্জা ঘেন্না ভয় তিন থাকতে নয়। তাছাড়া হাসাই স্বাভাবিক। কেরালা ভবনে গিয়ে খাওয়া আমার কাছে যেমন একটা অভিনব ব্যাপার ওদের কাছে তো নয়। আমিও হাসি যখন শুনি এথনিক বেঙ্গলি ফুডওয়াকের অংশ হিসেবে লোকে দু’নম্বর মার্কেটে এসে দাদুর দোকানের আলুর চপ আর ফিশফ্রাই খায়। কাজেই আমি কিছু মনে করলাম না।

মনে যে করিনি তার প্রমাণ।


কাঠপুতলি



রাজস্থানে আমি প্রথমবার গিয়েছিলাম কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়। সাধারণত আমার বাবামা নিজে নিজে ঘোরাই পছন্দ করতেন কিন্তু রাজস্থান অনেক বড় ট্রিপ বলে ‘মুণ্ডু’র সঙ্গে মিলওয়ালা নামের এক বিখ্যাত ট্র্যাভেলসের সঙ্গে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে গিয়ে খুব মজা হয়েছিল, অনেকরকম লোকের সঙ্গে আলাপপরিচয় হয়েছিল, সে আলাপ আজীবন রক্ষা করা হবে সে প্রতিশ্রুতি দেওয়ানেওয়াও হয়েছিল। সে সব পরে কখনও গল্প করে বলা যাবে। ট্র্যাভেলসের লোকজন আমাদের খুব যত্নআত্তি করেছিলেন, দারুণ দারুণ সব হোটেলে রেখেছিলেন, তিনবেলা চমৎকার সব খাবার খাইয়েছিলেন। সেটা প্রত্যাশিতই ছিল, কারণ এই বিশেষ ট্র্যাভেলসটির খ্যাতির একটা অন্যতম কারণ ছিল তাঁদের খাওয়াদাওয়া। জলে, জঙ্গলে, পর্বতে, মরুভূমিতে, ট্রেন লেট করা ভিড়ে ভিড়াক্কার প্ল্যাটফর্মে - সর্বত্র তাঁরা তাঁদের ভ্রমণার্থীদের ভাত মাছ মুসুরডাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতেন এবং সে প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। আমার মনে আছে প্রতিদিন উচ্ছেভাজা থেকে চাটনি পর্যন্ত নিখুঁত বাঙালি মেনু খাওয়া হত। একবেলা মাছ বাদ গেলে পরের বেলাতেই ম্যানেজারবাবু মাংস দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিতেন। না দিলে তাঁর চাকরি থাকবে না নাকি। বেড়ানোর শেষ দিনে মহাফিস্ট হয়েছিল। তাতে কী কী পদ ছিল মনে নেই, কিন্তু রাজস্থানি পদ যে কিছু ছিল না সেটা গ্যারান্টি

রাজস্থানি খাবার খেতে খেতে আমার লেগে গিয়েছিল আরও চার বছর।  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে। বন্ধুদের সঙ্গে জয়পুরে গিয়ে। বাসস্টপের পাশেই একটা গিজগিজে ভিড়ে ঠাসা হোটেলের কাঠের বেঞ্চিতে বসে। থালার ওপর একটা ছোটখাট বাতাবিলেবু সাইজের জিনিস চুরচুর করে ভেঙে দিয়ে তার ওপর হাতে ধরা দুটো স্টিলের বালতির একটা থেকে একহাতা থকথকে ডাল আর অন্যটা থেকে আরেকটা চূর্ণবিচূর্ণ জিনিস ঢেলে দিয়ে পরিবেশক দৌড়ে চলে গেলেন। জানা গেল ওটাই হচ্ছে রাজস্থানের জাতীয় খাবার, ডাল বাটি চুরমা। আর ওই দোকানটা হচ্ছে ডাল বাটি চুরমার মক্কা। জয়পুরের যাবতীয় লোক ওই দোকানে ডাল বাটি চুরমা খেতে আসেযত চাই তত খাও।

আমি অবশ্য দু’চামচ খাওয়ার পর আর খেতে চাইনি। শুধু সেদিন নয়, তার পরেও বহুদিন আমার ডাল বাটি চুরমা শুনলেই বুকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠত। অর্চিষ্মানেরও নাকি একই দশা। ও-ও নাকি একবার বন্ধুদের সঙ্গে জয়পুরে গিয়ে ডাল বাটি চুরমা খেয়ে নাককান মুলেছে। সে অভিজ্ঞতা আমরা কেউই ভুলতে পারিনি। এই এতদিন পরেও না। জম্মুকাশ্মীর থেকে কেরালা, মহারাষ্ট্র থেকে মেঘালয়, এই যে আসমুদ্র ভারতের খাবার খেতে শহরের ক্যান্টিনে ক্যান্টিনে ঘুরি,  রাজস্থানের ক্যান্টিনের নামটা দাঁতের ফাঁক দিয়ে উচ্চারণও করি না।

অর্চিষ্মানের মনে কী হত জানি না, দিনের পর দিন একটা রাজ্যের প্রতি এই যে বৈষম্য, এতে আমার মনে লজ্জার শেষ থাকত না। এই যে একটা গোটা রাজ্যের খাবারকে একটা খারাপ অভিজ্ঞতার নিরিখে বাতিল করে দেওয়া, এ পাপ আমাকে কুরে কুরে খেত।

অনেকদিন ভাবছিলাম এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব। সোজা উপায় হাতের কাছেই ছিল, পৃথ্বীরাজ রোডের রাজস্থান হাউসে সোমবার সোমবার দুপুরবেলা রাজস্থানি থালি পাওয়া যায় ভয়ানক সস্তায়, কিন্তু আমি সেখানে যেতে চাইছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল, ব্যাপারটা সম্পর্কে যেহেতু একটা ভয় ঢুকে গেছে, ভয়টা তাড়ানোর জন্য ন্যাড়া, কেজো স্টেট ক্যান্টিন আদর্শ নাও হতে পারে। যে খাবারটা খারাপ লাগার একটা সম্ভাবনা আছে সেটাকে ভালো লাগানোর জন্য একটা সুন্দর, সুসজ্জিত পরিবেশের দরকার হতে পারে। লাঞ্চের ঊর্ধ্বশ্বাস তাড়ার বদলে ছুটির দুপুরের তাড়াহীন আলস্যের দরকার হতে পারে। এই সব ভেবেচিন্তে শনিবার দুপুরবেলা আমরা ‘কাঠপুতলি’তে খেতে গেলাম।

ডিফেন্স কলোনি মার্কেটে ঢোকার পর কাঠপুতলি খুঁজে বার করা শক্ত নয়। 'সোনার কেল্লা'য় শোনা গেঁয়ো বাজনার আওয়াজ অনুসরণ করে হাঁটতে থাকুন, একটু পরেই দেখবেন ফুটপাথের ওপর রংচঙে জোব্বা আর রংচঙে পাগড়ি পরে কয়েকজন লোক রবাবে ছড় টানছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলেই কাঠপুতলি।


কাঠপুতলি হচ্ছে গিয়ে রাজস্থানি খাবারের বুটিক দোকান। এখানে রাজস্থানি খাবার ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। মেনুরও বালাই নেই। বাঁধাধরা নিরামিষ থালি। টেবিলের ওপর বিরাট বড় ডিমের আকারের স্টিলের থালার ওপর সারি সারি স্টিলের বাটি সাজানো ছিল। আমরা গিয়ে বসার সঙ্গে সঙ্গে একজন চিমটেয় ধরে ঠাণ্ডা ভেজা ন্যাপকিন নিয়ে এলেন। হাত মুছলাম। তারপর রাজস্থানি সাজ পরা একটি বালক দুটো মাটির গ্লাসে করে নিম্বুপানি আর ঘোলের শরবত রেখে গেল। আরেকজন চামচে করে পাতের পাশে দিয়ে গেল শশাটমেটোর কাচুম্বর স্যালাড আর সরু সরু কচুর লতির মতো একরকম জিনিস দিয়ে বানানো আচার। প্রতিটি পদ দেওয়ার আগে সেটার নাম বলে দেওয়া হচ্ছিল। আচারের নামটিও ছেলেটি বলেছিল, আমি শুনতে পাইনি। আরেকবার জিজ্ঞাসা করার পর এবং ছেলেটি আরেকবার উত্তর দেওয়ার পরেও যখন শুনতে পেলাম না তখন আমি ক্ষান্ত দিলাম। প্রায় কুড়ি পদের এই মহাভোজে এই একটিমাত্র পদই আমার কাছে রহস্যময় রয়ে গেল।


এই হচ্ছে আমাদের স্টার্টার। ধোকলা তো দেখেই চিনতে পারছেন, ওই চাইনিজ এগরোলের মতো দেখতে জিনিসটা হচ্ছে আটা বা ময়দার খোলের ভেতর কড়াইশুঁটির পুর দিয়ে বানানো একরকমের ভাজা, আর এই এদিকের ছোট গোল চাকতির মতো জিনিসটা হচ্ছে মুগডালের বড়া। তিনটিই অমৃতের মতো খেতে। এত নরম, ফাঁপা ধোকলা আমি আর খাইনি। কড়াইশুঁটির পুরের ভাজাটা তপ্ত, কুড়মুড়ে। আর ডালের বড়াটি একেবারে ফার্স্ট ক্লাস। লংকারসুনবাটার লাল চাটনি দিয়ে খেতে চমৎকার লাগছিল।


এর পর এসে গেল ডাল বাটি চুরমা। আমাদের যা মাছভাত, বিহারিদের যা লিট্টিচোখা, জার্মানদের যা ব্রেড উন্ড ব্রাটউর্স্ট, রাজস্থানিদের তাই হচ্ছে ডাল বাটি চুরমা। ডাল বাটি চুরমার ডাল বানানো হয় পাঁচ রকমের ডাল আর তার সঙ্গে অন্যায় রকমের বেশি ঘি মিশিয়ে। আটার সঙ্গে দই আর জল মিশিয়ে বানানো গোল গোল শক্ত বড়ার মতো করে বানানো হয় বাটি। আর এই বাটিকেই বা অন্য বাজরা বা আটার রুটি গুঁড়ো করে তার সঙ্গে চিনি আর দিশি ঘি মিশিয়ে বানানো হয় চুরমা। কাঠপুতলির মতো ভালো দোকানে সে চুরমায় কাজুকিশমিশও দেওয়া থাকে। তিনটি পদ মিলিয়ে ডাল বাটি চুরমা একটা কমপ্লিট মিল।

অথেনটিক রাজস্থানি চেনার একটা সোজা উপায় হচ্ছে সে ডাল বাটি চুরমা কেমন করে খায় সেটা পরীক্ষা করা। প্রথমে বাটিটাকে হাত দিয়ে চূর্ণ করতে হবে। তারপর সেটার ওপর ডাল ঢেলে খেতে হবে। আমি হাঁদার মতো বাটিটা তুলে তাতে ফুলুরির মতো কামড় বসাতেই দু’জন পাগড়িওয়ালা ছুটে এসে আমাকে ঠিক কায়দাটা শিখিয়ে দিল।

বোনাস কুইজঃ কোন গল্পে একজনের খাওয়া দেখে ফেলুদা রহস্যের একটা জরুরি ক্লু বার করে ফেলেছিল? (হিন্টঃ ভদ্রলোক খেতে বসে বেশ কিছুক্ষণ ইতস্তত করে প্রথমে খেয়েছিলেন ডাল, তারপর মাছ, সব শেষে শুক্তো)

আমি নেহাতই আনাড়ির মতো বাটি চূর্ণ করেছি।    


ওপরের ছবিতে দূরের বাটিটা হল গাঠঠে কি সবজির। গাঠঠি হল বেসনের তৈরি একরকমের বেঁটে মোটা জিনিস, চানাচুরে থাকে। ঘি আর মশলা দিয়ে রাঁধা সেই গাঠঠির ঝোলকে বলে গাঠঠে কি সবজি। সাধারণত এ ধরণের তরকারি আমার ভালো লাগে না। রীতিমতো হাতের তার না থাকলে এ সব তরকারির মূল উপকরণের সঙ্গে ঝোলের মিলমিশ হয় না। ধোকা ধোকার মতো থেকে যায়, পনির পনিরের মতো ব্যাজার মুখে বসে থাকে, আশেপাশে ঝোলেরা খেলে বেড়ায় কাঠপুতলির রাঁধুনির হাতের তার আছে মানতে হবে। গাঠঠিরা একেবারে ভেঙেচুরে ঝোলের সঙ্গে মিশেও যায়নি আবার তার মধ্যে টকঝালমিষ্টি ঝোলও যথেষ্ট পরিমাণে ঢুকেছে।


ডাল বাটি চুরমা শেষ করার পর এল বাজরার রুটি আর ছোলার ডালের পুর দেওয়া বিকানিরি পরোটা। বিকানিরি পরোটা নিয়ে বলার কিছু নেই, পুর দেওয়া পরোটা যেমন হয় তেমনই। তবে পুর দেওয়া পরোটা যে অত পাতলা করে বেলা যায় সেটা আমি না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। যেটা নিয়ে বলার আছে সেটা হচ্ছে এই পুঁচকে বাজরার রুটি।


বাজরার রুটি দেওয়ার পর পরিবেশক তার ওপর চামচে করে দিশি গুড় দিলেন, আর গুড়ের ওপর দিলেন দিশি ঘি। ঘি-এর পরিমাণ দেখে দুঃখ পাবেন না। ছেলেটি বালতিতে ডুবিয়ে মস্ত এক হাতা ঘি তুলেছিল, আমি হাঁ হাঁ করে উঠে তাকে থামিয়েছি। অর্চিষ্মান থামায়নি, গরম ঘি ওর বাজরার রুটি ছাপিয়ে থালার এদিকসেদিক দৌড়চ্ছিল। ঘি ঢেলে দিয়ে বালক ফিরে গেল, আমরা ঘি আর গুড়শুদ্ধু রুটিটাকে পানের মতো মুড়ে মুখে পুরে দিলাম। তারপর মুখের ভেতর, জিভের ওপর, যে ঘটনাটা ঘটল সেটা ভাষায় ব্যক্ত করার সাধ্য আমার নেই। তবে তার দরকারও নেই, কারণ এ ধরণের অভিজ্ঞতা আপনাদের সবারই আছে। পাড়ামিষ্টির দোকানের সানমাইকা দেওয়া টেবিলে বসে স্টিলের প্লেটচামচ করে করে একের পর এক গরম রসগোল্লা মুখে পোরার স্মৃতি মনে করে দেখুনরগরগে পাঁঠার ঝোলের বাটি চেটেপুটে শেষ করার পর বাঁচিয়ে রাখা লাস্ট লুচিটা দিয়ে একখাবলা চিনি মুড়ে মুখে পুরে দেওয়ার অনুভূতি মনে করে দেখুন। পৃথিবীর যে কোনও নির্ভার, নির্প্যাঁচ খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা মনে করে দেখুন। বুঝতে পেরে যাবেন।


জিভ থেকে সে অমৃতের স্বাদ মেলাতে না মেলাতেই এসে গেল ফুলকা। তার সঙ্গে আমরা খেলাম সরষে দিয়ে বরবটি, মাখামাখা আলুর ভাজি, পাঁপড়ের তরকারি আর রাজস্থানি কড়ি, পকোড়াহীন।


তারপর এল সুগন্ধী পোলাও আর খিচুড়ি আর সাবুদানার পাঁপড়। সত্যি বলব? আমাকে আর কিচ্ছুটি না দিয়ে যদি শুধু ওই খিচুড়ি আর ঘিগুড় দেওয়া বাজরার রুটিটা খেতে দেওয়া হত, আমি তবুও দু’হাত তুলে কাঠপুতলির জয়গান করতাম।  

একটা মানুষের পেট কতখানি ভরা সম্ভব? যতখানি সম্ভব আমাদের পেট ততখানিই ভরে গিয়েছিল কিন্তু দইয়ের বাটি তখনও না-ধরা পড়ে ছিল। ঘরে পাতা ঘন দই। নষ্ট করলেও পাপ। চামচে করে অল্প অল্প দই মুখে পুরছি, এমন সময় ছোট ছোট আরও দুটো বাটি এনে থালার পাশে রেখে পাগড়িওয়ালা পরিবেশক জানালেন, “বাসুন্দি অওর হালুয়া


বাসুন্দি হল একরকমের ঘন রাবড়ির মতো মিষ্টি। দুধ অনেকক্ষণ জ্বাল দিয়ে, তাতে বেশ করে মিষ্টি দিয়ে বানানো হয়। খেতে খারাপ হওয়ার কোনও কারণই নেই। আর হালুয়া কাকে বলে সে আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেটা যে এত ভালো খেতে হতে পারে সেটা আমি এতদিন জানতাম না। উষ্ণ, মোলায়েম, সুগন্ধী। ‘ঘিয়ে জবজবে’ কথাটা লিখতে আমার হাত সরছে না, কারণ আমার অভিধানে ওটা এতদিন একটা চরম খারাপ কথা হিসেবে গণ্য হত, কিন্তু সেটা যে ভালো অর্থেও ব্যবহার করা যেতে পারে 'কাঠপুতলি'র হালুয়া তা প্রমাণ করে দিয়েছে।


মোটের ওপর, রাজস্থানি খাবারের প্রতি আমাদের এতদিনকার যে অন্যায় অশ্রদ্ধাটা ছিল, তা আমূলে নিপাত করার জন্য ‘কাঠপুতলি’র থেকে ভালো জায়গা আমরা আর পেতাম না। আপনারও কি আছে এ’রকম পক্ষপাত? কিংবা নিরামিষ খাবারের প্রতি নাককোঁচকানি? তাহলে সময় করে কাঠপুতলি ঘুরে আসুন, পস্তাবেন না।

*****
   


Samridhi
Kerala House, 3 Jantar Mantar Road, Near Patel Chowk Metro Station,Janpath, New Delhi
011 30411411


Kathputli
35, Defence Colony Market, New Delhi 110024
+91 9911729955
011 41552046


Comments

  1. Robin babu. Tintorrettor Jishu
    Arpan

    ReplyDelete
  2. Kathputli niye lekhata la-jobaba hoyeche :-) Mon bhore gelo chhobiteo. Sakalbelay monta suswade bhoriye tullen to :)

    Sayan

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, সায়ন। আমার ধারণা কৃতিত্ব যত না আমার লেখা আর ছবির তার থেকে বেশি আপনাদের মনের।

      Delete
  3. কেরালার ওই লাল ভাতটাকে মাট্টা চাল বা মাট্টা রাইস বলে। একটু মিষ্টি মিষ্টি খেতে না? মাসখানেক আগে কোচিনে বসে একদিন দুপুরে ঠিক ওই ভাতটা দিয়ে সম্বর দিয়ে মেখে খেয়েছিলাম। খেতে খুব একটা ভালো লাগেনি, কিন্তু খেতে খেতে এই নিচের প্যারাগ্রাফটার কথা মনে পড়ল -
    **************************************************************************************************************
    খালি রোজ সকালে যখন ঘরে ঘরে পাথরের উনুনে কাঠের জ্বালে ভাত ফোটে তখন তার ধোঁয়া দেখে, দূর গাঁয়ের মানুষরা বলে, “ওই যে মুলকি গাঁয়ের লোকেরা ভাত রেঁধেছে, ওরা বড়ো গরিব।”

    ভাতগুলো কিন্তু খেতে কী মিষ্টি! শিম বিচির মতো বড়ো দানা, টুকটুক করছে লাল, ফুটলে পর একপাশ দিয়ে একটু ফেটে যায়। নুন লংকা দিয়ে রান্না শুঁটকিমাছের চচ্চড়ি দিয়ে খেতে হয়। কতক্ষণ মুখে লেগে থাকে, কী ভালো লাগে। অ্যাত্তটুকুন দিয়ে সবাই অ্যাত্তগুলি ভাত খায়।
    **************************************************************************************************************
    কার লেখা বলতে পারলে হাততালি। অবান্তরের সাথে রিলেভেন্স কি সেটা বলতে পারলে ডবল হাততালি।

    আমার তো রাজস্থানি খাবার দারুণ লাগে। কাঠপুতলিতে যাইনি, কিন্তু রাজধানীতে অনেকবার গিয়েছি। ওখানেও কাঠপুতলির মতই ফিক্সড মেনুর ব্যাবস্থা।
    ডাল বাটি চুরমা আমিও আনাড়ির মতই খেয়েছি, ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
    সেই কচুর লতির মত জিনিসটার নাম হল কের সাঙ্গরি। আমার খুব একটা সুবিধের লাগে না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা লীলা মজুমদার। রেলেভ্যান্স বলতে পারব না।

      রাজধানীর নাম আমিও শুনেছি অনেক, দেবাশিস। যাওয়া হয়নি। আপনি কোচিন গিয়েছিলেন বুঝি? কেমন জায়গাটা?

      Delete
    2. এই প্যারাগ্রাফটা অবান্তরের একটা কুইজে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। যথারীতি আমি গাড্ডু মেরেছিলাম।
      কোচিন ভালো তবে কোচিনের খাবারদাবার ভালো নয়।

      Delete
    3. ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, এটা একটা কুইজে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বটে। সে সঙ্গে এটাও মনে পড়ল, বহুদিন অবান্তরে কুইজ হয়নি।

      Delete
    4. অন্বেষা সেনগুপ্তAugust 8, 2015 at 2:46 PM

      হুমমম | আমাদেরও মনে পড়ছে | হয়ে যাক তাহলে |

      Delete
  4. Chobiguli ki shundor! Oi achar ta ker sangrir achar hote pare. Ar oi gatte (t ta tea'e t er moton uccharon hoye ) ki sabzi je gatte gulo kintu besan mekhe boil kore, ketey, bheje tarpor ranna hoye. Chanachur e jeta thake ota sev ... ota diye o ranna hoye kintu shetake sev ki bhaji/sabzi bole.
    Kerala r menu ektu shaanto mone holo. Koto rokomer maacher ranna hoye ... dilo na keno?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি যেটা বললে সেটারই আচার ছিল বটে, শর্মিলা। কেরালার খাবার বাড়াবাড়ি রকমের শান্ত, সেটা ঠিকই।

      Delete
  5. tumi jodi keralar oi thali ta niye onek boro kichu likhte... ami sotti bhabtam tumi bariye bariye onek kichu lekho... ota niye je lekha jay na besi seta khub e bhalo bujhte parchi... bohubar oi thali kheyechi.. ar tomar motoi prothom bar bhat ta dekhe muri bhebechilam.. :) oi beans er torkari tar naam thoran... badhakopi diyeo hoy...
    rajasthani thali khaini... kintu tomar lovoniyo bornona pore r photogulo khub bhalo lagche.. dhokla chara oi koraishuti dewa jinista kheyechi... khuub e bhalo khete sotti... ar papor er torkari to amader barite hoy... setar orijin rajasthan? naki rajasthani ra bangali der theke niyeche mone hocche... :P quiz ta tintorettor jishu- rajsekhar neogi..
    ar oi berate giye roj ucchebhaja , rui macher kalia , chatni khawar bhoy ei ami mundu er songe mil jukto travels er sathe berate jete pochondo korina... :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. পাঁপড়ের তরকারি আমাদের বাড়িতেও হত, ঊর্মি, কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় ওটার উৎস অবাঙালি হওয়াই সম্ভব। কেন মনে হয় বলতে পারব না, তবে হয়।

      Delete
  6. Ore baba re... Ato kheli ki kore... Kath putlir sob khabar ki marattok rokomer sundor.... Amar prochondo lobh lagche re...

    ReplyDelete
    Replies
    1. তবেই ভাব, ভট্টা। রাজস্থানি থালি সত্যিই খুব ভালো ছিল।

      Delete
  7. অন্বেষা সেনগুপ্তAugust 8, 2015 at 1:31 AM

    টিনটোরেটোর যীশু পুরনো হয়ে গেছে, ওটা আর বলব না|

    কেরালা হাউসের খাবারটা দেখে সত্যিই ভক্তি হল না| অভিয়্ল দেয় নি, মাছ টা দেখে মনে হচ্ছে আমসত্ত্ব| জঘন্য| আমি কেরালায় গিয়ে ওখানকার খাবার খেয়ে দেখেছি, দিব্য খেতে| নারকোল তেলের গন্ধে সমস্যা না হলে বাঙালি জিভে আরামদায়কও বটে|

    বাঙালি কেন সর্বত্র গিয়ে নিজের ঘরের খাবার খোঁজে, এই এক রহস্য| আমি একবার বাসে এক মহিলাকে তাঁর সখীর কাছে দুকখু করতে শুনেছি, ' জানিস তো, কেরালা বেড়াতে গেলাম, কোত্থা-ও বাঙালি খাবার পেলাম না !'এদিকে রান্নায় মিষ্টি দেয় না ঝাল দেয় সেই নিয়ে তক্কো, ইলিশ ভালো না চিংড়ি সেই নিয়ে মারদাঙ্গা, কিন্তু অন্য জায়গার খাবার, সে যতই সুস্বাদু হোক না কেন, চেখে দেখতে প্রবল অনীহা| একটা জায়গার খাবার না খেলে তো সেই জায়গাটা বেড়ানো শেষ হতে পারে না| সেখানকার খাবারের সঙ্গে তার ইতিহাস সংস্কৃতি সভ্যতা মানুষ সব জড়িয়ে থাকে, ভাত মুসুর ডাল আলুপোস্ত খেলে সেটা আমি বুঝব কেমন করে? আর আমায় যদি মোচার ঘন্ট খেতেই হয়, তাহলে মুন্ডু স্পেশালে খেতে যাব কেন? রা-মঃ| ওই রাঁধুনির চেয়ে আমার মা-দিদা সেটা দেড় হাজার গুণ ভালো রাঁধবেন, বেশি অথেনটিকও হবে সেটা| পেট বাঁচবে, পকেটও| তবে মুন্ডু-র পাইকারী হারে বাঙালি খাবার খাওয়ানোর একটা প্র্যাকটিকাল দিক থাকতে পারে | নতুন জায়গায় বিজাতীয় খাবার সকলের সহ্য নাও হতে পারে, বিশেষত উত্তর ভারতের খাবারে মশলা/তেল/ঘি ইত্যাদির আধিক্য বাঙালির পাচনতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ( বাবা বলেন, পাঞ্জাবীদের ইনটেসটাইন লোহা দিয়ে তৈরী :P) আর মাঝরাস্তায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে টুরের বারোটা, এসব ভেবেই বোধহয় ওঁরা সেফ খেলেন|

    রাজস্থানী খাবারের কথা পড়ে আমার একটা পুরনো কথা মনে পড়ল| ২০০৬ সালে ( অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক যুগে) আমরা আহমেদাবাদে এক জায়গায় গুজরাটি থালি খেতে গিয়েছিলাম| মাটিতে মাদুর পাতা, সামনে বেঁটে টেবিলে খাবার ব্যবস্থা| মাটির থালা, মাটির গেলাস, লন্ঠনের আলোয় খাওয়া| পরিবেশকরা এসে কখনো খিচুড়ি, কখনো নানারকম পুরি, কখনো জিলিপি দিয়ে যাচ্ছিলেন | মনে পড়ছে, সে খাওয়াটা মোটেই জুতের হয়নি| সেটার কারণ কতটা খাবারের স্বাদ আর কতটা পেটের মধ্যে গজগজ করতে থাকা দুপুরে খাওয়া ম্যাক ডি-র বার্গার, এখন আর খেয়াল নেই| কিন্তু আপনার পোস্টটা পড়তে পড়তে মনে হল, এখন খেলে হয়তো অতটা খারাপ লাগবে না| আসলে স্বাদের ব্যালান্সটা বোঝার জন্যে হয়তো কিছুটা মানসিক পরিণতির দরকার হয়| বাচ্চারা একখানা স্যান্ডউইচ খেয়েই খুশি, আমরা বুড়োরা কোথায় উচ্ছেভাতে রে, কোথায় লাউছেঁচকি রে, কোথায় পার্শে মাছের ঝোল রে, করে হেদিয়ে মরি|

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার প্রতিটি কথার সঙ্গেই আমি একমত, অন্বেষা। মুণ্ডু স্পেশালের ওই না খাইয়ে উপায়ও নেই। বাইরে গিয়ে বাড়ির খাবার খোঁজাটা একটা চেনা প্রবণতা। বাঙালি থালির বদলে রাজস্থানি থালি খেতে দিলে সেটা ভ্রমণার্থীদের কাছে সুখের নাও হতে পারত। তাছাড়া স্বাস্থ্য, খরচ, এসবের ব্যাপারও আছে।

      লোকাল কায়দায় লোকাল খাবার অনেকসময়ই জুতের হয় না। এটা আমিও দেখেছি।

      Delete
    2. অন্বেষা, আহমেদাবাদের সেই জায়গাটার নাম বিশালা কি? বিশালা হলে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
      পুরানো সেই দিনের কথা...

      Delete
    3. অন্বেষা সেনগুপ্তAugust 8, 2015 at 2:35 PM

      একদম, দেবাশিস | বিশালা-ই বটে | আবার ঢুকবার সঙ্গে সঙ্গেই জুইফুলের মালা দিয়েছিল , সেসব আমরা হাতে জড়িয়ে নিয়েছিলাম :)

      Delete
  8. ছবি দেখে আর বর্ণনা পড়ে খুব ভাল লাগলো কুন্তলা। :)
    কাঠপুতলীর কথা পড়ে আমার কেন জানিনা রাজধানীর মহারাজা থালিটার কথা মনে পড়ে গেল, ওখানে অনেকগুলো কমন আইটেম ছিল। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, অরিজিত। রাজধানীর কথা অনেকেই বললেন, ওখানে একবার যেতে হবে।

      Delete
  9. রাজস্থান মানেই কিন্তু নিরামিষাশী অঞ্চল নয়। মানে গুজরাট বললেই যেমন ম-নিষিদ্ধ (মদ ও মাংস) প্রদেশের ছবি মনে ভাসতে থাকে সেরকমটি নয়। এটা সত্যি যে এখানকার জৈনী ও মাড়োয়ারী সমুদায় মোটামুটি ভাবে শাকাহারী। তবে রাজস্থান রাজাদের দেশ ও বটে। তাঁরা আমিষাশী ছিলেন, কার্‌ তাঁরা ছিলেন রাজস্থানে বহিরাগত।

    তাই রাজস্থানে আমিষ ভোজনের ভালই চল রয়েছে। আর আমিষাশী রাজস্থানীদের কাছে "লাল মান্স" অনেকটা বাঙালী গৃহস্থ বাড়িতে রবিবার দুপুরের কচি পাঁঠার সুরুয়ার সঙ্গে তুলনীয়। রাজারা শিকারে যেতেন - শিকার করে সেটি মাটি-চাপা উনুনে রান্না করতেন - শিকারের গায়ের চান না করা গন্ধ এড়াতেই নাকি অতিরিক্ত লাল লঙ্কা দেওয়া এই পদের আবির্ভাব।

    বর্তমানে এই খাবারের রন্ধন প্রণালী (https://en.wikipedia.org/wiki/Laal_maans) সময়ের সঙ্গে একটু আধুনিক হয়তো হয়েছে কিন্তু এর 'সময়ের টুকরো-স্বাক্ষর' ভাব ভঙ্গিমা বদলায়নি। বাজরার রুটি দিয়ে গ্রহিতব্য। তবে নধরকান্তি পাঁঠা জোগাড় না করতে পারলে এর মজাটাই মাটি - রাজস্থানে (আর গুজরাতে) নধরকান্তি ও অকুতোভয় পাঁঠা স্বাধে গন্ধে গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পাঁঠার থেকে অনেক ভালো - দায়িত্ব নিয়ে বলছি। মরুপ্রদেশ থেকে আমদানীকৃত পাঁঠা সহযোগে কেউ যদি এটি বাড়িতে বানাতে চান তাইলে 'ঠাকুর-সাবের' 'কাপুর-থালা' রেসিপি অনুসরণ না করাই বিধেয়।

    এছাড়াও আরো অনেক আমিষাশী রাজস্থানী পিরিচের নাম শুনেছি - 'জংলি মান্স', 'সফেদ মান্স' ইত্যাদি। তবে না খেয়ে কাউকে কিছু খেতে সুপারিশ করা অনুচিৎ মনে করে বিরত থাকলাম।


    -সবিরাম পাঠক

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ বাঃ, আপনার কমেন্ট থেকে অনেক কিছু জানা হয়ে গেল। লাল মাস-এর কথা আমিও শুনেছি, সেটা বাড়িতে একবার বানিয়ে দেখারও ইচ্ছে আছে, কিন্তু সফেদ মাংসটাংসের কথা এই প্রথম শুনলাম। অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  10. tintorettor jishu robin babu holo... kintu keralar khabar dehe oto bhakti holo na..aviyal nei, machh er jhol nei..spicy duck curry nei..sokaler breakfast e khaoya jhal jhal beef keema r sathe rumali rutir moton parota o nei..asole hostel e porte incidentally amar dui roommate e malayali chhilo. Tader o tader ma der kalyane besh bhalo bhalo malayali ranna kheyechhi eksomoy. R ekhon new york er ekta malayali restaurant e khai ba barite banai..
    Authentic rajasthani khabar khaini kokhono kintu eta sudhu veg dekhe ektu obak lagto.. chhotobelay rajkahini ba Cornell todd er lekhay portam rajput ra khali khali buno murgi ba buno suor shikare beroten..ta tarpor ki segulo na kheyei fele diten..eta ektu khoj niyo. tobe ja kheyechho se golpogulo osadharon.

    ReplyDelete
    Replies
    1. কেরালা হাউসের দোষ নেই, চুপকথা। ব্যাপারটা যত না কেরালার কুইজিন উদযাপন করার জন্য তার থেকে বেশি কেরালা হাউসের কর্মচারীদের দুপুরের খাওয়ার জোগান দেওয়ার জন্য। আরে রাজস্থানিরা যে আমিষ খান তাতে আমারও কোনও সন্দেহ নেই, তবে প্রচুর রাজস্থানি যে নিরামিষও খান সেটাও সত্যি। আর আমার তো সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবারের দোকান দারুণ ভালো লাগে। এতদিন শুধু সারাভানা ভবন ছিল, এখন কাঠপুতলি যোগ হল।

      Delete
  11. আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে এই ট্রাভেলস - এর অফিসটা ঠিক কোথায় ? এখনো আছে নাকি ? "মুন্ডু"-র সঙ্গে মিলওয়ালা না কি যেন নাম তার !!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আছে মানে, রমরম করে চলছে, হংসরাজ। চলাই উচিত। খুবই ভালো কোম্পানি। কলকাতাতেই অফিস সে অফিসের। দু'খানা। দুটো অফিসই দু'জন বিখ্যাত মনীষীর নামওয়ালা রাস্তায়।

      Delete
    2. যাহ , খুঁজে পেলুম না তো !!! :( মনীষীর নাম বললে তো বোঝা আরো কঠিন | এখানে কি মনীষীর অভাব আছে , না , রাস্তা আর ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর অভাব আছে |

      Delete
    3. আমি 'কুণ্ডু স্পেশাল' ট্র্যাভেলসের কথা বলছিলাম, হংসরাজ।

      Delete
    4. ও বুঝেছি !! উপরে "কুন্ডু"র জায়গায় মুন্ডু লিখে ফেলেছ ! আমিও অন্ধের মতো "মুন্ডু" খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম !

      Delete
  12. Tomra Kerala House e na giye INA market e gele na keno? Okhankar malabar cuisine khub bhalo shunechhi. Keralar beef curry to khub bikhyato :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে শ্রমণ, এটা কেরালার খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে যত না যাওয়া তার থেকে বেশি স্টেট ক্যান্টিনগুলোর আরেকটায় খাওয়ার তাগিদ থেকে বেশি যাওয়া। না হলে মালায়ালি খাবার খাওয়ার অপশন দিল্লিতে প্রচুর। এখানে অবশ্য বিফ পাওয়া যায় না, বাফ দিয়ে কাজ চালাতে হয়।

      Delete

Post a Comment