Posts

Showing posts from May, 2018

বাসাবদলের পরে

স্কুলে বাধ্যতামূলক কেমিস্ট্রি পড়তে হওয়া নিয়ে আমার একসময় ক্ষোভ ছিল। কী লাভ হয়েছে? জলের আরেক নাম এইচ টু ও আর নুনের আরেক নাম এন এ সি এল জানা ছাড়া? পরে অবশ্য ক্ষোভ মিটেও গেছে। আমার কাজে লাগেনি, অনেকের নিশ্চয় লেগেছে। সব বিষয় ক্লাস টেন পর্যন্ত আবশ্যিক করে রাখাটাও বাড়াবাড়ি মনে হত একসময়। সেটাও কেটে গেল যখন শুনলাম অনেক দেশে, রীতিমত সভ্য দেশে ক্লাস ফোরটোর নাগাদই অ্যাপটিচিউড চিহ্নিত করে স্ট্রিম আলাদা করে দেয়। ক্লাস ফোর ফাইভে আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি না কী একটা ক্লাস হত যেখানে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ শঙ্করাচার্য নিতাইনিমাই জগাইমাধাই এইসব পড়ানো হত। আমি তাতে নিয়মিত পঁচানব্বই পেতাম। সেই দেখে আমার অ্যাপটিচিউড নির্ধারণ যে হয়নি ভালোই হয়েছে।   নিজের এবং পরের শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে অনেক বিশ্বাস আমার উলটেপালটে গেছে, কেমিস্ট্রি কিংবা ভারতীয় সংস্কৃতি পড়া উচিত না উচিত না, কতদিন পড়া উচিত এসব নিয়ে আমার আর কোনও মাথাব্যথা নেই। ইন ফ্যাক্ট, পড়েছি ভালোই হয়েছে, না পড়ে টিভি দেখলে খারাপ হত।   কিন্তু যে ব্যাপারটাতে আমার প্রত্যয় ক্রমশ বাড়ছে সেটা হচ্ছে বাকিগুলোর সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু বিষয় আমাদের পড়ানো উচিত ছিল। ঐ...

অনলাইন রিডিং

Image
আমি বেশিরভাগ সময়েই হয় SR;PW নয় RB;GB। কখনও কখনও TL;DR, ক্বচিৎকদাচিৎ VS;SDR। SR;MP ও নিশ্চিত ঘটে অবরেসবরে। কিন্তু RH; PAC? কক্ষনও নয়। আপনি? শিল্পী: Tom Gauld

বাসাবদলের সময়

যা যা ফেলা সহজ -বুড়ো আঙুল ছেঁড়া/ জোড়াহারা মোজা -বুড়ো আঙুল ছেঁড়া/ জোড়াহারা গ্লাভস -পুরোনো পাড়ার প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, ট্যাক্সি সার্ভিস, হোম ডেলিভারির ফোন নম্বর লেখা চিরকুট -সেমিনার থেকে জোগাড় হওয়া নেমকার্ড -সেমিনার থেকে জোগাড় হওয়া ব্রশিওর, রিডিং মেটেরিয়াল, জ্যালজেলে নোটপ্যাড ও কালি-শুকোনো ইউজ অ্যান্ড থ্রো বলপেন -বেসিক্যালি সেমিনার থেকে জোগাড় হওয়া সবকিছু -অফিসের দেওয়ালি পার্টিতে পাওয়া সোনালি রঙের গণেশের উৎকট মূর্তি -এক্সপায়ার্ড ওষুধ -বাক্সভর্তি নেলপালিশ, লিপস্টিক, সুগন্ধী সাবান, আসল এবং পাছে আসলে চুল উঠে যায় সেই দুশ্চিন্তায় কেনা নকল সিঁদুর, হেয়ার লোশন/সিরাম/প্যাক (এক্সপায়ার্ড), ফেস লোশন/সিরাম/প্যাক (এক্সপায়ার্ড)।   যা যা ফেলা সহজ নয় -গত পাঁচ সাত দশ বছরে তোলা অন্তত তেত্রিশখানা পাসপোর্ট সাইজ ফোটো। গোমড়ার বদলে হাসি হাসি মুখে অফিশিয়াল ছবি তুলতে শুরু করার ইন্টারেস্টিং ট্রানজিশনটা মনে রাখার জন্য ছবিগুলো জরুরি। -দাগ লাগা/ফুটো হয়ে যাওয়া মায়ের হাতে বোনা সোয়েটার। -পার্সের ভাঁজে আটকা পড়া দশ পয়সার কয়েন। -সেমিনারের নোটপ্যাড, পেন, রিডিং মেটেরিয়াল এবং ব্রশি...

বাসাবদল

একটা বাড়িতে পাঁচ বছর থাকলে সে বাড়ির সমস্ত রহস্য উন্মোচন হয়ে যাওয়ার কথা। সারারাত টপ টপ আওয়াজ হয় কোত্থেকে? বেসিনের কল থেকে। সর্বশক্তি দিয়ে টাইট করে বন্ধ করা সত্ত্বেও। বাড়িতে একা থাকলে সন্দেহ হয় আগের কোনও ভাড়াটে অপঘাতে মরেছিল হয়তো। হয়তো তার শুচিবায়ু রোগ ছিল, সারারাত কল খুলে হাত ধোয়।  দোকা থাকলে সে সমস্যা নেই। কারণ দুজনেই জানি ভূত বলে কিছু নেই। নির্ঘাত তুমি ভালো করে কল বন্ধ করনি। আমি! আমি গত তিনঘণ্টায় বাথরুমমুখো হইনি। তোমাকেই বরং দেখলাম পাঁচ মিনিট আগে ওদিক থেকে আসতে। কাজেই তুমি যাবে কল বন্ধ করতে। বাঃ, আমি যে চা করে দিলাম পনেরো মিনিট আগে? আমি পনেরো মিনিট পরে চা করে দেব, হয়েছে?   এ মোকদ্দমায় কোনও ন্যায়বিচার নেই। যাকে কল বন্ধ করতে যেতে হয় প্রতিবারই তার মনে হয় অবিচার হল, আর যাকে যেতে হল না তার সান্ত্বনা রইল, যাক, পৃথিবীতে সুবিচার বলে এখনও কিছু আছে।   কলরহস্য উন্মোচন হয়। ভূতের দোষ নেই, আমাদেরও না। কিছু কিছু কাজে গায়ের জোর ইউজলেস, কৌশলই আসল। যেমন আমাদের বেসিনের বাঁ দিকের কল বন্ধ করা। ক্লকওয়াইজ ঘুরিয়ে কল পুরো বন্ধ হওয়ার মাইক্রোসেকেন্ড আগে আবার মিলিমিটারখানেক অ্যান্টি...

গুপ্তধনের সন্ধানে

Image
উৎস গুগল ইমেজেস গুপ্তধনের সন্ধানে-র চরিত্রদের নামকরণ মহা কনফিউজিং। সিনেমার আবীর হচ্ছেন বাস্তবের অর্জুন চক্রবর্তী আর বাস্তবের আবীর চ্যাটার্জী হচ্ছেন সিনেমার সুবর্ণ সেন, সোনাদা। অক্সফোর্ডে সাত বছর পড়িয়ে কলকাতা ফিরেছেন। ইনি সম্পর্কে সিনেমার আবীরের কাকা, কিন্তু আবীর ওঁকে দাদা বলেই ডাকে। আবীরের মামাবাড়ি মণিকান্তপুরের জমিদার। সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো জমিদারবাড়ির গল্প শুনে হিস্ট্রির প্রফেসর সোনাদা সেখানে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। মস্ত এস ইউ ভি চালিয়ে সোনাদা আর আবীর মণিকান্তপুর রওনা দিল।   অকৃতদার জমিদার, আবীরের মামা হরি (চরিত্রের পুরো নাম ভুলে গেছি, অভিনয় করেছেন গৌতম ঘোষ) ঘরভর্তি বইয়ের মাঝখানে বসে থাকেন। জমিদারবাড়িতে আর থাকেন রামকৃষ্ণ নামের গোপালমন্দিরের পূজারী, মহাদেব, মহাদেবের স্ত্রী (নাম মনে নেই), আর এঁদের ছেলে নীলু।   বাংলা সংস্কৃতিতে চাকরের ভূমিকা নিয়ে রিসার্চ হওয়ার দরকার। যে কোনও নাটক, নভেল, সিনেমা, ওয়েব শর্টস দেখুন, এক তো বটেই, খুব সম্ভব একাধিক চাকরের দেখা পাবেন। এবং এই সব সিনেমার চাকরবাকরের সঙ্গে রক্তমাংসের কাজের লোকদের কোনও মিল পাবেন না। অন্তত আমি পাই...

পেনশন ফান্ড

এই নেট ব্যাংকিং-এর যুগে মাসের এ মাথা ও মাথায় ব্যাংকে যাওয়ার কী দরকার থাকতে পারে আমি বুঝি না। প্রথমে ভেবেছিলাম মা বোধহয় অনলাইন ব্যাংকিং-এ সড়গড় নন। জলের মতো সোজা ব্যাপার, এই দেখো, বলে কম্পিউটার খুলে বোঝাতে গেছি, মা তাঁর তিনখানা অ্যাকাউন্টের ন'খানা ইউজার আইডি,  লগ ইন পাসওয়ার্ড, প্রোফাইল পাসওয়ার্ড টপাটপ টাইপ করে অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমাকে সব দেখিয়ে দিলেন। বললেন, আমার সাতষট্টি হল, তোর এমনিও সব দেখে রাখা দরকার, সোনা। আমি এদিকে আগের সপ্তাহেই আমার সবেধন একখানা অ্যাকাউন্টের একখানা প্রোফাইল পাসওয়ার্ড, হিন্ট কোয়েশ্চেন সব ভুলে মেরে দিয়ে ব্যাংকে হত্যে দিয়েছিলাম। সাতাশি পর্যন্ত এসব নিয়ে খবরদার মুখ খুলবে না, বলে কোনওমতে মান বাঁচিয়ে পালালাম। তুমি তাহলে এত ঘনঘন ব্যাংকে যাও কী করতে জিজ্ঞাসা করাতে মা বললেন, আরে কাজ থাকেই, তুই জানিস না। কী কাজ আমি সত্যিই জানি না, তবে এটা জানি বাড়িতে হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে মায়ের ভালো লাগে না। তাই বললাম, আচ্ছা যাবে যখন যাও, কিন্তু সাবধানে যেয়ো, রাস্তায় ফোন এলে ধোরো না, আমার ফোন এলেও না, চলতে চলতে ফোনে কথা বোলো না, রেললাইন পেরোনোর সময় ডান, বাঁ, ডান দেখো আর ফিরে এসে ...

মাইসোর ক্যাফে, ইন্ডিয়া গেট

Image
আমা থাকালিতে খেতে যাওয়ার দিনটা ভালো ছিল। খাওয়া হল, রাহুলের সঙ্গে দেখা হল, রাহুলের বাড়ি যাওয়া হল, রাহুলের বোন শ্বেতার সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হল, রোমহর্ষক সব গল্প শোনা হল। বেরোনোর সময় শ্বেতা বলল, বাই দ্য ওয়ে, যদি কোনওদিনও তিনমূর্তি ভবনের দিকে যাও মাইসোর ক্যাফেতে খেয়ে আসতে পার। তিনমূর্তি ভবনের দিকে আমাদের বিনাকারণে যাওয়ার চান্স খুবই কম। যদিও জায়গাটা আমাদের পছন্দের। প্রশস্ত পরিষ্কার রাস্তা, বড় বড় গাছ, গাছের ছায়ায় রাজকীয় বাংলো, পর্দাটানা অ্যামবাসাডর ইত্যাদি তো আছেই, ও সব ঝামেলা বড় রাস্তায় ছেড়ে গলির ভেতর ঢুকলেই একটা লুকোনো মধ্যবিত্ত পাড়াও আছে। দিল্লির বাকি মধ্যবিত্ত পাড়াদের মতো যেটা হতশ্রী নয়। এক ইঞ্চি জায়গার জন্য এখানে আঁচড়াআঁচড়ি করতে হয় না, দুটো রং চটা বাড়ির মধ্যে দম নেওয়ার ফাঁক থাকে। সস্তা পাজামা আর জ্যালজেলে তোয়ালেরা কংক্রিটের বিচ্ছুরিত তাপে ভাজাভাজা হয় না, গাছের হাওয়ায় দোল খেতে খেতে গা শুকোয়। দুপুরবেলা একের পর এক বাড়ির শবদেহের ওপর ফ্ল্যাট তৈরির হুংকারের বদলে সাইকেলচড়া ফিরিওয়ালার ডাক শোনা যায়। ঘাড়ের ওপর স্প্রলিং শপিং মলের স্বচ্ছ লিফট দিবারাত্রি মুখভেংচে ওঠানামা করে না, এ পাড়ার গল...

মায়ের চাওয়া

অনলাইন বেচাকেনার এই বাজারে সোমবার সকালে অফিস পৌঁছে ডেস্কের ওপর পার্সেল পড়ে থাকতে দেখাটা কিছু সারপ্রাইজ নয়। কিন্তু সে বাক্সের ওপর প্রিন্ট আউটে খুদি খুদি অক্ষরের বদলে নীল কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে আমার নামঠিকানা লেখা থাকাটা সারপ্রাইজ। কে পাঠিয়েছে তাতে অবশ্য কোনও সারপ্রাইজ নেই, অক্ষরের ছাঁদ আমার চেনা।   মা অফিসে মেডিক্যাল বিল জমা দিতে গিয়েছিলেন। কলেজ স্ট্রিট হয়ে বই কিনে পাঠিয়েছেন। সাহিত্য অকাদেমি প্রকাশনের 'বাংলা গল্প সংকলন' প্রথম এবং দ্বিতীয় খণ্ড। ফ্লিপকার্ট থেকেও পাঠাতে পারতেন কিন্তু তাতে নিজে হাতে লিখে দিতে পারতেন না, তাই সশরীরে কিনে প্রথমপাতায় শুভেচ্ছাবার্তা লিখে পাঠিয়েছেন।   খুব খুশি হলাম, তারপর মনে হল আমারও মাকে কিছু দেওয়া উচিত। তাছাড়া আমাদের বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের এত কাছে মাদার’স ডে, মাকে কিছু দেওয়ার এর থেকে ভালো ছুতো আর কী হতে পারে।   মাকেই জিজ্ঞাসা করলাম। তোমাকে কী দেব মা? শাড়ি? পাগল, কয়েকটা নিয়ে গিয়ে আমার আলমারিটা খালি কর সোনা। স্মার্ট ফোন? সুখে থাকতে ভূতের কিল খাওয়াবি সোনা? কাছে থাকলে খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া যেত, যদিও সেটাও একটা স্ট্রাগল। মা বলবেন, কী হবে...

কাঠ

আমার পুরোনো ছবি দেখতে ভালো লাগে না। যে সব ছবিতে আমাকে দারুণ দেখতে লাগছে, সে সব ছবিও না। বাড়ির ছাদে কিংবা ইউনিভার্সিটির মাঠে, দোলের রং মেখে কিংবা রেস্টোর‍্যান্টে ক্যান্ডলাইটের আলোয়, কোনও জায়গায় কোনও পরিস্থিতিতে তোলা ছবিই না। কারণ একটা পার্টিকুলার মুহূর্তকে বন্দী করলেও ছবি দেখতে বসে আমি শুধু সেই মুহূর্তটা দেখি না, আশেপাশের অনেক মুহূর্তও দেখতে পাই। এক বা একাধিক ছায়া। একটা ফোনকল বা একটা কথোপকথন। মুহূর্তের হাসির আর সুখের ছটায় অন্ধ কুন্তলার গোচরের আড়ালে, সাত দিন কিংবা তিন মাস, ম্যাক্সিমাম ছ’মাস দূরে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আচম্বিতে আড়াল থেকে যখন ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে তখন হাসি কেমন উড়ে যাবে, সেই কল্পনায় তাদের ঠোঁট বঙ্কিম। পুরোনো ছবি দেখলে তাই আমার আরাম হয় না। আফসোস হয়। যদি সাবধান করতে পারতাম। যদি ফোটোর ভেতর হাত বাড়িয়ে ওই অজ্ঞান, অচেতন মেয়েটার কাঁধে টোকা দিতে পারতাম।   অত না হেসে পড়তে বস।   ***** অর্চিষ্মানের ফোনে আমাদের দুজনের একটা ছবি আছে। বছর ছয়েক আগের। আমরা তখন আই ব্লকের বাড়িটাতে থাকতাম। ডিসেম্বর মাস ছিল। তিন্নি এসেছিল দিল্লিতে। কোনও একটা শনি বা রবি তিনজন বেড়...

চোপতা, তুঙ্গনাথ, চন্দ্রশীলা, ক্ষিরসুঃ ৩ (শেষ)

Image
চোপতার কাছে সারি গ্রাম, সেখান থেকে ঘণ্টাখানেক ট্রেক করলেই দেওরিয়াতাল। ভাগ্যবানেরা যার টলটলে জলে চৌখাম্বার ছায়া দেখতে পান। বছর বছর দিওয়ালিতে অফিসের তাম্বোলা পার্টিতে অংশগ্রহণ করে নিজের ভাগ্যের দৌড় আমার জানা হয়ে গেছে, তবু যে দেওরিয়াতালে যাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল তার দুটো কারণ। এক, দেওরিয়াতাল একটি বুগিয়ালের মধ্যে। বুগিয়াল হচ্ছে পাহাড়ি প্রান্তর যা আমার মতে কখনও কখনও পাহাড়ের থেকেও বেশি সুন্দর। উঁচু শৃঙ্গের রাজসিকতা নেই, কিন্তু শান্তি আছে। সেই রকম সবুজ মাঠে ওপর পুকুরের ধারে বসে থাকার আইডিয়াটা আমার মনে ধরেছিল।   দুই, কেউ কেউ বলে এই তালেই নাকি যুধিষ্ঠির ও যক্ষের প্রশ্নোত্তরপর্ব চলেছিল। মহাভারতের বিরল গল্পের একখানা, যাতে চিটিংবাজি নেই, বস্ত্রহরণ নেই, ঊরুভঙ্গ নেই, বুক চিরে রক্তপান নেই, জাস্ট মুখোমুখি বসে সিভিলাইজড কথোপকথন। পরীক্ষার একটা অ্যাংগল আছে ঠিকই, কিন্তু সে পরীক্ষার রেজাল্ট সবাই জানে।কাজেই টেনশনের কিছু নেই।   দেওরিয়াতাল পৌঁছনো চন্দ্রশীলা চড়ার মতো কঠিন নয়, ঘণ্টা তিনেকের ওঠানামা। সোমবার সকালে বারান্দা পর্যন্ত গিয়ে ভিউ দেখতেই কান্না পেয়ে যাচ্ছিল আমার, কাজেই দেওরিয়াতালে...

চোপতা, তুঙ্গনাথ, চন্দ্রশীলা, ক্ষিরসুঃ ২

Image
পাহাড়ের ওয়েদার অনেকটা আমার মেজাজের মতো। এই চা খেতে খেতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পরিষ্কার আকাশে সূর্যাস্ত দেখলাম, এই সূর্যের শেষ রশ্মি পাহাড়ের ওপারে অদৃশ্য হতে না হতে গুড়গুড় মেঘ ডেকে ঝমঝম বৃষ্টি নেমে গেল। অর্চিষ্মান ভেবে অস্থির, কাল বৃষ্টি হলে পাহাড় চড়বে কী করে। প্রকাশজি আশ্বাস দিলেন। কুছ নেহি হোগা, সকালবেলা সব ঝকঝকে হয়ে যাবে। আর যদি নেহাতই বৃষ্টি পড়ে তবে রেনকোট নিয়ে যাবেন নিচ থেকে, সব মিল যাতা হ্যায় উধর। আলো থাকতে থাকতে খেয়ে নিলাম। পেঁয়াজ, লংকা সহকারে ডাল, রুটি, তরকারি। নাইটক্যাপ ফিকি চা। ডাইনিং হল থেকে একটা সোলার ল্যাম্প দিয়ে দিলেন প্রকাশজি। মাঝরাতে যদি ঘুমটুম ভাঙে, বাথরুমটাথরুম যেতে হয়। বৃষ্টি হয়ে ঠাণ্ডাটা আরও জাঁকিয়ে নেমেছে। লেপের তলায় ঢুকলাম। এই সেদিন শান্ত জায়গার কথা হচ্ছিল, চোপতাও ভারি শান্ত জায়গা। এত শান্ত যে প্রতিটি রাতপাখির ডাক, রান্নাঘরে রুটি এহাত ওহাত হওয়ার চটপট, পাতার ফাঁকে হাওয়ার শনশন, কংক্রিটের বারান্দায় বৃষ্টির ফোঁটার পটপট সব প্রকাণ্ড হয়ে কানে আসে।   দুপুরে ঘুমিয়েছি, ভেবেছিলাম আর ঘুম আসবে না বোধহয়। কিন্তু লেপের ভেতর শুয়ে শুয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে ঘু...

চোপতা, তুঙ্গনাথ, চন্দ্রশীলা, ক্ষিরসুঃ ১

Image
শুক্রবার অফিস থেকে বেরোতে দুজনেরই বাজে রকমের দেরি হল, নন্দাদেবী এক্সপ্রেসে ওয়েটিং লিস্ট টিকিট কনফার্ম হল না, তুলে রাখা কোটসোয়েটার নামিয়ে ব্যাগে পুরতে আন্দাজের তুলনায় বেশি সময় লাগল, ওলা টাইমে এল না। বাসের স্লিপার সিট ততক্ষণে সব শেষ। ভোর চারটের সময় হরিদ্বারে যে গাড়ি আমাদের তুলতে আসবে তার ডিটেলস, সারাদিনে তিনবার ফোন করে মনে করানো সত্ত্বেও, তখনও এসে পৌঁছয়নি। অ্যাট লিস্ট বাসে প্রচুর লেগস্পেস আছে ভেবে খুশি হয়ে ব্যাগ রাখলাম সিটের নিচে, নামার সময় দেখি সামনের দিকের কে জল ফেলেছে, গড়িয়ে এসে ব্যাগের তলা চুপচুপে, ভেতরে সদ্য কেনা টাটকা গল্পের বই আর আমার তিন মাসের পুরোনো নীল ডায়রি নেতিয়ে কাদা।   ঝাড়া দু’ঘণ্টা লেট করে ভোর সাড়ে ছ’টায় বাস আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। কাল রাতে যখন বাসে সিট-স্লিপারের অক্ষাংশদ্রাঘিমাংশ নিয়ে কুরুক্ষেত্র চলছিল তখনই অবশেষে ড্রাইভারজিকে ফোনে পেয়েছি এবং খবর দিয়েছি আমরা ট্রেনে আসছি না, আসছি বাসে। বহোৎ আচ্ছা বলে তিনি জানিয়েছেন বাস আড্ডাতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন। অথচ আমরা যেখানে নেমেছি চারপাশে আধখানা বাসও দেখা যাচ্ছে না। বোর্ডটোর্ডও নেই কোথাও কিছু। খালি একজন পাগল...