মাইসোর ক্যাফে, ইন্ডিয়া গেট
আমা থাকালিতে খেতে যাওয়ার দিনটা ভালো ছিল। খাওয়া হল, রাহুলের সঙ্গে দেখা হল, রাহুলের বাড়ি যাওয়া হল, রাহুলের বোন শ্বেতার সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হল, রোমহর্ষক সব গল্প শোনা হল। বেরোনোর সময় শ্বেতা বলল, বাই দ্য ওয়ে, যদি কোনওদিনও তিনমূর্তি ভবনের দিকে যাও মাইসোর ক্যাফেতে খেয়ে আসতে পার।
তিনমূর্তি ভবনের দিকে আমাদের বিনাকারণে যাওয়ার চান্স খুবই কম। যদিও জায়গাটা আমাদের পছন্দের। প্রশস্ত পরিষ্কার রাস্তা, বড় বড় গাছ, গাছের ছায়ায় রাজকীয় বাংলো, পর্দাটানা অ্যামবাসাডর ইত্যাদি তো আছেই, ও সব ঝামেলা বড় রাস্তায় ছেড়ে গলির ভেতর ঢুকলেই একটা লুকোনো মধ্যবিত্ত পাড়াও আছে। দিল্লির বাকি মধ্যবিত্ত পাড়াদের মতো যেটা হতশ্রী নয়। এক ইঞ্চি জায়গার জন্য এখানে আঁচড়াআঁচড়ি করতে হয় না, দুটো রং চটা বাড়ির মধ্যে দম নেওয়ার ফাঁক থাকে। সস্তা পাজামা আর জ্যালজেলে তোয়ালেরা কংক্রিটের বিচ্ছুরিত তাপে ভাজাভাজা হয় না, গাছের হাওয়ায় দোল খেতে খেতে গা শুকোয়। দুপুরবেলা একের পর এক বাড়ির শবদেহের ওপর ফ্ল্যাট তৈরির হুংকারের বদলে সাইকেলচড়া ফিরিওয়ালার ডাক শোনা যায়। ঘাড়ের ওপর স্প্রলিং শপিং মলের স্বচ্ছ লিফট দিবারাত্রি মুখভেংচে ওঠানামা করে না, এ পাড়ার গলি আলো করে থাকে মাইসোর ক্যাফের মতো দোকান।
পরিচ্ছন্নতা, ভদ্র ব্যবহার, সুস্বাদু খাবার ইত্যাদি ছাড়া মাইসোর ক্যাফে আর সমস্ত রকম বাহুল্যবর্জিত। এমনকি ন্যাপকিনও নেই কারণ দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো বেসিন আছে। আমার মতো আপনার বারোয়ারি বেসিন-ফোবিয়া থাকলে অবশ্য ওঁরা ন্যাপকিন দেবেন। তবে হোল্ডারটোল্ডার নেই। প্লাস্টিকের ছেঁড়া প্যাকেটের ভেতর থেকে বার করে নিতে হবে আপনাকেই।
মাইসোর ক্যাফেতে মূলত দক্ষিণ ভারতীয় খাবারই পাওয়া যায়, তবে আমরা যতক্ষণ ছিলাম দুজনকে ভাতডালের থালিও খেতে দেখলাম। অর্চিষ্মান নিয়েছিল মাইসোর মসালা দোসা, আমি মাইসোর প্লেন। মাইসোর ক্যাফের দোসা মুচমুচে, চাটনি ঘন, সম্বর ধোঁয়া ওঠা এবং সবক’টিই অতীব সুস্বাদু।
দোসার থেকেও আমাদের বেশি পছন্দ হয়েছে পানিয়ারম বলে এই পদটি। অন্যান্য সাউথ ইন্ডিয়ান দোকানের মেনুতেও এই নামটা দেখেছি, কিন্তু দোসা ইডলি মেদু বড়া ইত্যাদি খাওয়ার পর পাছে আর পেটে জায়গা না থাকে, অর্ডার দিয়ে পয়সা নষ্ট হয়, এই ভয়ে অর্ডার করিনি কখনও। মাইসোর ক্যাফেতে সেই ভয় কম কারণ দুজনের খেতে খরচ হয় কমবেশি দুশো টাকা।
জিনিসটা খেতে আমার এত ভালো লেগেছে যে ভাগের থেকে একটা বেশি খেয়ে নিয়েছি।
বাড়িতে এসে ইন্টারনেটে রেসিপি সার্চ করে মন আরও খুশি হল। জিনিসটা আর কিছুই না, দোসা বানানোর যে চালডালের মিশ্রণ, সেটাকে গোল বলের মতো আকার দিয়ে অল্প তেলে সেঁকলেই তৈরি হয়ে যায় পানিয়ারম। পানিয়ারম বানানোর বিশেষ পাত্রও পাওয়া যায় বাজারে, আমাদের চিতই পিঠের সাজের মতোই, খালি মাটির বদলে মেটাল আর গর্তগুলো বেশি গভীর। আমি মারাত্মক উৎসাহিত হয়ে পড়লাম। একটা কিনে নিই, শনিরবিবার পানিয়ারম ভেজে খাওয়া যাবে। রেডিমেড দোসা ব্যাটারের প্যাকেটও কেনাই আছে বাড়িতে।
তারপর মনে পড়ল। ওই প্যাকেটটা কেনার আগেও অবিকল এই উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম। প্রতি শনিবার সকালে দোসা-পার্টি আয়োজনের প্রত্যয় টের পেয়েছিলাম। কেনার পর ছ’মাসে (ন’মাসও হতে পারে) একদিন দোসা বানিয়ে খাওয়া হয়েছে।
Ami barite dosa banai majhe majhe. Onek hotel eo dosa kheyechi bor er favourite bole. Eder modhey best legeche Howrah station er baire ekjon gari nie darano Anna r dosa. Or daily turnover onek majhari hotel k hariye debe
ReplyDeleteবাড়ি গেলেই হাওড়া দিয়ে যাতায়াত হয়, কিন্তু সবসময় দৌড়ে বেরোই আর দৌড়ে ঢুকি। যদি হাতে সময় থাকে আন্নার দোসার খোঁজ করে দেখব। থ্যাংক ইউ, সুহানি।
Deleteবাঃ, সুন্দর লেখা।পানিয়ারমের নাম এই প্রথম জানলাম।
ReplyDeleteধন্যবাদ, নালক।
DeleteBaah besh bhalo Mysore dosa khelen dekhchhi...amar ek Kannar bondhu oi paniyarm er moto ekta jinis banato otake bolto Pado/paro. Dekhte ba ja bornona diyechhen ekdam orokom hoto.
ReplyDeleteহ্যাঁ,একই জিনিস,সুস্মিতা।
Deleteউফফফ কুন্তলাদি, বহুদিন বাদে খাবারের রিভিউ দিলে। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteআচ্ছা, শোনো না, তুমি তোমার অন্যান্য সব লেখার ফাঁকে কিছু কিছু খাবারের রিভিউ ও দিও প্লিইইজ।
যেমন ধরো, প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজন কিংবা নৈশভোজ ...
বাড়ির গুলোই দিও।
তোমার খাবারের বর্ননা গুলো পড়তে এত ভাল্লাগে আমার।
নওশীন, ঢাকা, বাংলাদেশ
থ্যাংক ইউ নওশীন।
DeleteKerala te eta serokom khay na bodhoy .. ami 2.5 yrs e khaini.. kolkatay o kono restaurant e dekhini.. dhut..
ReplyDeleteকলকাতায় আমিও দেখিনি, ঊর্মি।
Delete