আজ



পরশু ভোরে ঘরে ঢুকে চটি, চাদর ছাড়তে ছাড়তে রীতা বলল, নাঃ, হোলি এসে গেছে বোঝা যাচ্ছে। মদের দোকানে যা মারামারি লেগেছে যদি দেখতে। চেল্লামেল্লিতে কাল সারারাত ঘুমোতে পারিনি, বাপ ছেলেকে ধরে ঠ্যাঙাচ্ছে, ছেলে বাপকে ধরে, আমার ননদাই টিফিনবাক্স হাতে ঝুলিয়ে অফিস যাচ্ছিল সকাল ন'টার সময়, 'আবে ইতনা সাফসুৎরা কিউ বে' বলে দুটো ছেলে বাইকে চড়ে এসে দুই গালে ঠাস ঠাস দুই চড় মেড়ে চলে গেছে। 

রীতার মতো রোমহর্ষক না হলেও আমার কাছেও হোলির পূর্বাভাস এসেছিল। প্রথম তো গরমটা গিলোটিনের মতো ঘাড়ে এসে পড়ল। এই সেদিন সব খাটের খোপরে ঢুকিয়েও আবার যুক্তি করে একখানা পাতলা দেখে চাদর বার করে রাখলাম রাতে গায়ে দেব বলে, পরের রাতেই ফ্যান চালিয়ে হাঁসফাঁস। অফিসে এসির অপর্যাপ্ততা প্রকট। আন্টিজির দোকানে দুপুরের ট্রিপটা আর চালানো যাবে না বোধ হচ্ছে। সকাল ন’টার সময় ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর, পাঁচের বেশি সাত মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে কপালে ঘামের ফুটকি। 

তার মধ্যেও কিছু লোক সোয়েটার জ্যাকেট পরে ঘুরছে। অফিসে তো ঘুরছেই, কিন্তু অফিসের লোকদের ঠাণ্ডাগরমের বোধ নিয়ে মাথাঘামানো ছেড়ে দিয়েছি বহুদিন। রাস্তাতেও লোকে কী করে দুপুরবেলা সোয়েটার পরে হেঁটে চলেছে, রহস্য। ইউসুফ সরাইয়ের জ্যামে নির্বিকার বাইকের ওপর বসে আছে, গায়ে জ্যাকেট, হাতে গ্লাভস। অবশ্য এ ব্যাপারেও সি আর পার্ককে টেক্কা দেওয়া শক্ত। সন্ধেবেলা দোকানে দাঁড়িয়ে টমেটো পালংশাক কিনতে কিনতে হাতে ধরা নোটটা কপালের কাছে নেড়ে নেড়ে হাওয়া জেনারেট করার ব্যর্থ চেষ্টা করছি, পায়ের কাছে ধাক্কা। সাদা মোটকা কুকুরটা টেরিয়ে টেরিয়ে কী দেখতে দেখতে আমার দিকে ঘেঁষে এসেছে। এ রকম তেজিয়াল কুকুর হঠাৎ ঘাবড়াল কীসে জানতে ঘাড় ঘুরিয়ে আমিও থতমত। ফুল সোয়েটার, তার ওপর হাতকাটা জ্যাকেট, গলায় মাফলার আর মাথায় মাংকি টুপি গুটিয়ে মাথায় পরে, দুই হাত শরীরের পেছনে জড়ো করে একজন হেঁটে চলেছেন। 

দৃশ্যখানা নজর না করে থাকা অসম্ভব কাজেই সকলেই করেছে। দোকানদার আমার গলা কেটে খুশমেজাজে ছিলেন, হেঁকে বললেন, আরে অমুকদা যে, টুপি পরেছেন দেখছি, গরম লাগছে না? অমুকদা ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন, এই ঠাণ্ডাটা ডেঞ্জারাস, লেগে গেলে আর দেখতে হবে না।

আরও নানারকম চিহ্ন জমেছে আশেপাশে। লালহলুদ ফুলেরা গাছেদের মাথা উপচে ফুটপাথে গড়াগড়ি যাচ্ছে। রোজ সকালে বেলচা দিয়ে কুড়িয়ে কুড়িয়ে সে সব ফুল তুলে নিয়ে যান ভাইসাব, ঠেলাগাড়ি জুড়ে তারা ফুটে থাকে। কাল অফিস যাওয়ার পথে ফুলের সঙ্গে সঙ্গে পুলিসও ফুটেছে দেখলাম প্রচুর। দেশবন্ধু, দয়াল সিং কলেজের গেটের সামনে স্পিড-ব্রেকার দিয়ে রাস্তা অর্ধেক করে পাহারা দিচ্ছেন। অফিসে প্যান্ট্রির টেবিল জুড়ে অরগ্যানিক আবীর আর গুজিয়ার বাক্স। বিকেল চারটে নাগাদ সবাই লটবহর নিয়ে ছাদে হোলি খেলতে গেল, আমি ‘হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো এক মিনিট বাদেই আসছি’ বলে রাস্তা ফাঁকা হতেই সুট করে বেরিয়ে পড়লাম। বাকিরা যখন অকওয়ার্ড স্মল টক করতে করতে একে অপরের গালে আবীরের টিপ পরাচ্ছে আমার উবার তখন বাড়ির পানে ছুটে চলেছে ভাবতেই রোমাঞ্চ।

বাজারে নেমে ফুচকা খেয়ে রসরাজে ঢুকলাম। রসরাজের ছেলেটা আলাপী, আমাকে রোজ দেখলেও রোজই বলে, অনেকদিন পরে এলেন দিদি। কাল বলল, গুজিয়া নিয়ে যান। মোটা মোটা রসে চুবোনো গুজিয়া থালা ভর্তি করে রাখা। আমি খুঁজলাম আমার ছোটবেলার গুজিয়া, অশ্রুবিন্দুর মতো দেখতে, মা আনতেন অফিস থেকে ফেরার পথে। নেই। কাছাকাছি ভ্যারাইটির একটা কড়াপাকের সন্দেশ প্যাক করিয়ে বাড়ি এলাম। মোবাইলের ট্যাব রিফ্রেশ করলাম। অর্চিষ্মানের প্লেন ল্যান্ড করে গেছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে সুটকেস তোলার আওয়াজ। সামনে চারদিন ছুটি। এবার ফ্যানের তলায় চিৎপাত হয়ে আমাদের হোলি উদযাপন শুরু হবে। 

আপনাদের সঙ্গে রং না খেললেও মনের যত রঙিন শুভকামনা পাঠালাম। আপনাদের সবার আজকের দিন, সারাটা জীবন রঙে রঙে ভরে উঠুক। 

হ্যাপি হোলি। 



Comments

  1. Baah Shubho doljatra aar happy holi!!! Lekhata besh laglo pore. Ekhono loke maane March maase Delhi te monkey tupi porchhe!!!!!! Aar duto sampurno bhinno Gujiya je exist kore prothom jante pere abak hoyechhilam. Bangali gujiya amar chhotobelai boro bhalo lagto. Bishesh kore Shyambajar e Jogmaya Sweets bole ekta mishtir dokan darun banato. Aar ei gujiya to ekdom i alada.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাপি হোলি, সুস্মিতা। দিল্লির লোকে মাংকিটুপি পরছে না, শুধু বাঙালিরা পরছে। না পরলেই অদ্ভুত হত। গল্প করছিলাম সহকর্মীদের সঙ্গে, বললাম সি আর পার্কে এখনও মাংকিটুপি চলছে, বাঙালি সহকর্মী বললেন, 'অফ কোর্স', অন্য প্রদেশের যারা ছিলেন বললেন, ফেলো বেংগলিস কো লেকে হাসো মৎ। আমরা বললাম, হাসছি কোথায়, আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করছি।

      এদের গুজিয়া দেখে আমিও প্রথমটা বিষম খেয়েছিলাম মনে আছে।

      Delete
  2. এক মুখ হাসি হল এটা পড়ে। দোল উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে। আজকাল সমস্যা হল শুভ দোল বললে সবাই বলছে আমার নাম শুভ না, হলেও দুলতাম না। হ্যাপি হোলি বললে হ্যাঁ হলাম বলে পালিয়ে যাচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এইটা ভালো বলেছেন, রাকেশ। শুভেচ্ছা রইল আপনাকেও।

      Delete
  3. ei rokomer dol e amar o pochhondo. chardiner ononto lyad

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও, চুপকথা। এবার দোলে খুব আরাম করেছি।

      Delete

Post a Comment