আমরা কেন সি আর পার্কে থাকি




দিল্লিতে থাকলে আমরা যে ভাড়াবাড়িতেই থাকব সেটা মোটামুটি স্থির। এর আগে আমাদের সংসারী গৃহস্থ বন্ধুদের দিল্লির বাইরে থেকে শুরু করে ক্রমাগত কিনে বেচে, কিনে বেচে, ধীরে ধীরে দিল্লির ভেতর পছন্দসই জায়গাতে ঢুকে পড়ার মারকাটারি স্ট্র্যাটেজিসমূহ দেখেশুনে একসময় হাঁটু দুর্বল হয়েছিল। ভাবছিলাম, প্রাপ্তবয়স্কতার একটা মূল শর্ত কি নিজেদের জন্য একখানা পার্মানেন্ট অ্যাড্রেসের বন্দোবস্ত করা নয়? কিন্তু অর্চিষ্মান অনেক রিসার্চ করে আর আমি সিলিঙের দিকে তাকিয়ে শবাসনে শুয়ে থেকে থেকে সিদ্ধান্তে এসেছি যে এ শহরে যতদিন আছি ভাড়াটে হিসেবে থাকাই আমাদের পক্ষে বুদ্ধিমানের। পার্মানেন্ট অ্যাড্রেসের জোগাড়যন্ত্র দুপক্ষেরই পূর্বপ্রজন্মরা করে রেখেছেন, কাজ ফুরোলে সেগুলোর কোনও একটাতে গিয়ে ঢুকে পড়ব। এই রুক্ষশুষ্ক মাটিতে শিকড় পোঁতার এনার্জি ক্ষয় করব না।

কিন্তু ভাড়া কোথায় থাকব সেই নিয়ে এখনও দ্বিধা থেকে গেছে। আমার না, অর্চিষ্মানের। এখনও মাঝেমাঝে পুলে চেপে দিল্লির নতুন নতুন পাড়া দিয়ে যেতে যেতে অর্চিষ্মানের দৃষ্টি উদাস হয়। এই পাড়াগুলোও তো কী শান্ত, গাছওয়ালা। এখানেও তো থাকা যায়, যায় না? 

আগে প্রতিবাদ করতাম। কেন? এখন যেখানে আছি সেখানটাই বা খারাপ কীসে? অন্তত যতদিন না 'ইচ্ছামতী’ আর ‘পথের শেষে’ নামওয়ালা বাড়িগুলো ভেঙে ফেলে সব ফ্ল্যাটবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, আর সত্যিকারের গাছগাছালি জমি থেকে উৎখাত হয়ে সব ব্যালকনিতে প্লাস্টিকের টবে ফোলিয়েজ হয়ে না যাচ্ছে, ততদিন তো থাকাই যায়। অর্চিষ্মান চুপ করে যায়, কিন্তু মুখের ভাব দেখে বুঝি কনভিন্সড হয় না। না হওয়ার কারণটাও জানি। আমাদের দুজনের অফিসের অবস্থান, বাড়িভাড়া, শেষ-মাইল সংযোগ, স্কোয়্যার মিটার ইত্যাদি ভেরিয়েবল নিয়ে অপটিমাইজেশনের অংক কষলে ফলাফলটা সম্ভবতঃ সি আর পার্ক বেরোবে না। মাঝে মাঝেই তাই,  ‘প্র বলছিল ওদের সফদরজং এনক্লেভের অ্যাপার্টমেন্টে একটা ফ্লোর খালি হচ্ছে’ কিংবা ‘ন-এর জংগপুরার টু বি এইচ কে-র ভাড়া কত জান?’ বলে আমার দিকে তাকায়। আমি ওর প্রত্যাশাপূর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হওয়ার ভঙ্গি করি তারপর জানালার দিকে মুখ ফেরাই। বলি, শীতটা কেমন গিয়েও যাচ্ছে না দেখেছ এইবার?

এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর বাজারে দিল্লির জলবায়ু খুবই অদ্ভুত আচরণ করছে। শীত তো যাচ্ছি যাব করে গা মুচড়ে মুচড়ে থাকল বেশ কয়েকদিন, তারপর শুরু হল বৃষ্টি। পরশু রাতেও মেঘগর্জনের সঙ্গে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। রাতে চকো-ভ্যানিলা কর্নেটো খেতে বেরিয়ে দেখি একখানা সবুজ, কচি পাতায় ভরা গাছের ডাল রাস্তার মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এটা একটা রহস্য আমাদের দুজনের কাছেই। জন্মে থেকে যে কালবৈশাখী দেখে এসেছি তার তুলনায় এখানকার বৃষ্টিবাদলা নেহাতই দুধভাত, কিন্তু তাতেই জোয়ান গাছেরা টপাটপ ভেঙে রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। 

এই সব অপ্রতুল ঝড়বাদলেরা প্রতাপে আমাদের ইমপ্রেস না করতে পারলেও কাজ চালানোর পক্ষে যথেষ্ট। শিরশিরে হাওয়া বয়, ধুলোগুলো নাকেমুখে ঢোকে না, চোখগলা জ্বালায় না,  পরের আধঘণ্টা অন্তত লোকজনের মেজাজে জল ছিটিয়ে আঁচ কমিয়ে রাখে।

গত সপ্তাহে না তার আগের সপ্তাহে অফিস থেকে বেরোনোর মুখে ঝমঝম করে বৃষ্টি হয়ে গেল আধঘণ্টার জন্য। একখানা কনফারেন্স কলের ঝামেলা সেরে বেরোতে অলরেডি দেরি হয়েছিল, তারপর এখানেসেখানে মুখ থুবড়োনো গাছের ডাল, জমা জলজনিত জ্যামট্যাম মিলিয়ে এতটাই দেরি হল যে সন্দেহ হতে লাগল যে আমার আর অর্চিষ্মানের ফেরার সমাপতন না ঘটে। ফোন করলাম। অর্চিষ্মান ধরল।

এখনও পৌঁছওনি?

পৌঁছব পৌঁছব করছি। সাবিত্রী দিয়ে পাস করছি এখন। 

আরে আমিও তো সাবিত্রীতেই! তোমার কত নম্বর ট্যাকসি? 

নম্বর মনে ছিল না, থাকলেও সাবিত্রীর জ্যামে একে অপরের ট্যাক্সি খুঁজে বার করা কঠিন। এত কাছাকাছি সময়ে বাড়ি ফেরা, তার ওপর একই মোড় দিয়ে একই সময় পাস করার মির‍্যাকল উদযাপন দাবি করে, তাই স্থির হল বাজারে মিট করা হোক। রায়সিনা বেঙ্গলি স্কুলের সামনের বড় গাছটার নিচে যে আগে পৌঁছবে সে নেমে পড়ে অন্যজনের অপেক্ষা করবে। তারপর বাজার ঘুরে বাড়ি ফিরব দুজনে।

গাছের নিচে দেখা হল। হেঁটে হেঁটে বাজারে গেলাম। তখনই বললাম, খাও আমার সঙ্গে ফুচকা, অর্চিষ্মান মুখ ভেচকে গেল চপের দিকে। আমার ফুচকা খাওয়া হতে না হতেই একহাতের শালপাতায় আলুর চপ অন্যহাতের শালপাতায় একখানা পাটিসাপটা নিয়ে উপস্থিত। পাশে দাঁড়িয়ে একজন চারখানা পাটিসাপটা বাড়ির জন্য প্যাক করাচ্ছিল, সেই দেখে ও-ও নাকি একটা না নিয়ে পারেনি।

রেলিং-এর ওপর ফাঁকা জায়গা দেখে বসে দুজনে চপ আর পাটিসাপটা খেলাম। পাটিসাপটার পেট ফেটে বেরোনো গুড়নারকেলের গুঁড়ো চেটে খেতে খেতে অর্চিষ্মান জিজ্ঞাসা করল, ফুচকাটা কেমন ছিল? বললাম, দারুণ। বিশেষ করে এই বৃষ্টির বাজারেও খোলাটা মারাত্মক মুচমুচে আর টকটাও মৃদু, তোমার মনের মতো। শুনে অর্চিষ্মান বলল, দাঁড়াও এক প্লেট খেয়ে আসি।

উদযাপন যখন হচ্ছে ভালো করেই হোক। এ বাজারে আরও অনেকে বসে মোমো নিয়ে, কিন্তু করুণাদির মোমো বেস্ট। এক প্লেট নিয়ে খাওয়া হল হাফ হাফ। আমাদের আর সত্যিই খাওয়ার কোনও দরকার ছিল না, কিন্তু বলা যায় না, পাপী পেট, হয়তো দশটার সময় বলে বসল, ‘খাবার কোথায়? তোমরা না হয় ডায়েটিং করছ, আমি তো করছি না।’ তখন ফ্রিজ থেকে ভাত ডাল পেঁপের তরকারি বার করে কেঁচেগণ্ডূষ করতে হবে। কিন্তু ফুচকা, চপ, পাটিসাপটা আর মোমোর পর দু’ঠোঙা ঝালমুড়ি খেয়ে নিলে একেবারে ফুলপ্রুফ। পেঁপের হাত থেকে মুক্তি, খাবার গরম করা থেকে মুক্তি, থালা পাতা, খাবার বাড়া, চিবোনো, থালা তোলা, উদ্বৃত্ত ফ্রিজে ফেরত দেওয়া, থালা মাজা - সব থেকে মুক্তি। মুড়ি খেয়ে ঠোঙাতেই হাতের তেলটুকু মুছে গোল পাকিয়ে টিপ করে ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেলারই যা পরিশ্রম। তারপর বসে থাকা অবস্থা থেকে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ার। 

কপাল ভালো, কাবলিদা সাতদিন পরে বাজারে এসেছেন। কাবলিদার থেকে আমি মুড়ি খাচ্ছি প্রায় সাত-আট বছর, কিন্তু ওঁর নাম যে কাবলি, জেনেছি মাসতিনেক। যেদিন রাস্তার ওপার থেকে কে যেন ’কাবলিদা’ ‘কাবলিদা’ করে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছিল আর আমারই জন্য মুড়ি মাখতে মাখতে আমাকে ভয়ানক চমকে দিয়ে ভদ্রলোক মুখ তুলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। ‘কী হয়েছে কী? ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?’

কাবলিদা, করুণাদির মতোই, বাজারের শ্রেষ্ঠ ঝালমুড়ি প্রস্তুতকারক। সে কথা সকলেই জানে। আমি তো বাজার জমার একটু আগেই চলে আসি, একদিন অর্চিষ্মান সাতটা নাগাদ মুড়ি কিনতে দাঁড়িয়েছিল, বাড়ি ফিরে বলেছিল, ভদ্রলোক জাস্ট থামতে পারছেন না। হাত নাকি মেশিনের মতো চলছে। কাবলিদাকে পোচ করার একাধিক চেষ্টা দেখেছি চোখের সামনেই। এন সি আর-এর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন সি আর পার্কে নানাবিধ প্রয়োজনে আসেন। কাজ সেরে, দাদুর চপ, কাবলিদার মুড়ি, মা তারার থালি খেয়ে ফেরত যান। সে রকম কেউ কেউ কাবলিদাকে প্রস্তাব দিচ্ছেন দেখেছি, আমাদের ওদিকে শিফট করার কিছু প্ল্যানট্যান আছে নাকি? ওদিকে ভেলপুরিটা ভালোই বানায়, কিন্তু ঝালমুড়িটা জাস্ট…

কাবলিদা মিষ্টি হাসেন। কথা বাড়ান না। আমার মতো কাবলিদাও সি আর পার্কেই থেকে যেতে চান, কোনও কারণে। 

কাবলিদার থেকে দু’প্যাকেট মুড়ি প্যাক করিয়ে বাড়ি গেলাম। হেঁটে বাড়ি যেতে যেতে আগের খাবারগুলো গলা থেকে খানিকটা নামবে, আর বাড়িতে চায়ের সঙ্গে  খেতে খেতে টিভিও দেখা যাবে।

বাড়ি ফিরলাম। চা করলাম। টিভি চালালাম। নাপতোলে টকিং ট্যাবলেটের বিজ্ঞাপন চলছে। আপ ইসমে গুগল ভি দেখ সকতে হ্যায়, ইউটিউব ভি দেখ সকতে হ্যায়। এইচ কিউ স্ক্রিন। অর্চিষ্মান প্রথমদিন কনফিউজড। কিউটা কী? আমি নাপতোল-প্রবীণ, বললাম, বুঝলে না, কিউ ইজ ফর কোয়ালিটি। হাই কোয়ালিটি স্ক্রিন। ঘোষক ঠাঁইঠাঁই টিউবলাইট ভাঙছেন স্ক্রিনের ওপর, হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুকছেন দমাদ্দম। এইচ কিউ স্ক্রিন টসকাচ্ছে না। যেমন চমকাচ্ছিল তেমন চমকাচ্ছে। রাতে হাতের ঠোক্করে খাট থেকে মেঝেতে পড়ে গেলে কী হবে, সেটার ডেমো দেখাবেন না কিছুতেই। আমরা মুড়ি খেতে খেতে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বড় ভালো বানিয়েছেন মুড়িটা। নুন ঝাল দুটোই একটু বেশি করে দিয়েছেন, ঝালের ওপর গরম চায়ে চুমুক দিয়ে অর্চিষ্মান হুসহাস। ঢকঢক করে জল খেয়ে ধাতস্থ অবশেষে।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই যে তুমি ঘনঘন সি আর পার্কে থেকে কী হবে কী হবে কর, শুধু এই রকম সন্ধেগুলোর জন্যই সি আর পার্কে থাকা, বুঝলে?

পাছে কিছু বলে ফেলে আফসোস করি, খপ করে আরেকমুঠো মুড়ি মুখে চালান করলাম। কাবলিদা মুড়িটা সত্যিই ভালো বানান। অন্ততঃ উনি যদ্দিন আছেন তদ্দিন সি আর পার্কে থাকাই যায়। 


Comments

  1. Replies
    1. আমার এইরকম মেনুই পছন্দ, চুপকথা।

      Delete
    2. ami majhe modhyei fuchka dinner ba chop muri dinner kori. aro erokom lokjon achhey dekhe bhalo lagchhey

      Delete
    3. আমার হাতে (আর পেটেও) ক্ষমতা থাকলে আমি রোজ রাতে আলুকাবলি দিয়ে ডিনার করতাম।

      Delete
  2. Besh bhalo laglo lekhata.
    Kablida'r kachhe ekbar jete hochhe tahole :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. চলে আসুন, অরিজিত। কাবলিদা মুড়ির সঙ্গে সঙ্গে নিরামিষ আর পাঁঠার ঘুগনিও বানান। স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য আজকাল স্প্রাউট স্যালাডও রাখছেন দেখছি।

      Delete
  3. বৈজয়ন্তীMarch 14, 2019 at 6:31 PM

    মোমো, ফুচকা, পাটিসাপটা, চা, টিভি, ঝড়বাদলা সন্ধ্যে সব একসাথে পেয়ে গেল। সাথে মুড়ির বদলে পেঁয়াজি পেলো।
    কাবলিদা নামটা চরম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, এটা ভালো বলেছ, বৈজয়ন্তী। আরে কাবলিদার মুড়ি খেলে পেঁয়াজির সঙ্গে মুড়িকেও রাখতে হবে। ওঁর হাতের কাজও নামের মতো চমৎকার।

      Delete
  4. Offf esab ayojon er kotha bhablei jibhe jol aar monkharap eksathe hoi. Haate pochhonder boi sandhyete jhalmuri, alukabli diye dinner sara.... sathe ektu bidyut gorjon aar jhiri jhiri kichhu fota....ba bosonter mishti haoa...Kono kotha hobe na

    ReplyDelete
  5. লেখার স্বাদ‌ও ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  6. Uff ki je hingshe hochche na eishob shune :-(

    BM

    ReplyDelete
    Replies
    1. হিংসে করবেন না, বরং বাড়িতে মুড়ি মেখে খান।

      Delete
  7. Ei menu ta mathay thaklo.. oboshyoi try korte hobe.. patisapta baad dileo hobe.. alukabli dhukiye nebo sei jaygay.. ☺️

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, পাটিসাপটা অন্য কেউ বানিয়ে দিলে ঠিক আছে। নিজে বানাতে যাস না, ঊর্মি। তার থেকে আলুকাবলি অনেক বেটার।

      Delete
  8. আপনার ব্লগ পড়তে খুবই ভাল লাগে। নিয়মিত আপডেট পাওয়ার কি কোন উপায় আছে? ফিডলিতে যোগ করতে পারছি না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, রাকেশ। আমি ফিডলিতে যোগ করে দেখলাম এইমাত্র অবান্তর, হল কিন্তু। আপনি ফিডলির পাতার নিচের বাঁদিকে 'অ্যাড কনটেন্ট' দিয়ে আরেকবার চেষ্টা করে দেখুন তো, https://abantor-prolaap.blogspot.com/ এই লিংকটা পেস্ট করে, হয় কি না।

      নয়তো আপনি ইমেল সাবস্ক্রিপশন অপশন নিতে পারেন, অবান্তরের ডানদিকের সাইডবারের সবথেকে নিচের লিংকটায় ক্লিক করে। আশা করি কোনও না কোনও একটা কাজ করবে।

      Delete
    2. অনেক ধন্যবাদ, আমি সার্চের পেজ থেকে চেষ্টা করছিলাম বলে হচ্ছিল না। এইবার হয়েছে।

      Delete
  9. আহা চমৎকার সন্ধ্যে ....কাবলিদা পার্মানেন্টলিই থাকুন ওখানে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমারও তাই মনের আশা, প্রদীপ্ত।

      Delete

Post a Comment