যদি কাজে লাগে
কাল বেলা দশটা নাগাদ এক সহকর্মী কাঁদো কাঁদো মুখে এল। নার্ভাস ব্রেকডাউনের কিনারে থরথরাচ্ছে। বললাম, চল প্যান্ট্রিতে। চায়ে চুমুক দিয়ে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে সে বলল, দেখছ কী হচ্ছে? আমি বললাম, উঁহু। আমার কথা যদি শোন তো তুমিও দেখো না।
সে বলল, আরে আমিও দেখতে চাইছি না, নার্ভের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে যাচ্ছে কিন্তু লোকে ক্রমাগত খবর দিয়েই যাচ্ছে। থামছেই না। বললাম, লোককে কাটিয়ে দাও। ফোনের মোড আলটিমেট পাওয়ার সেভারে নিয়ে যাও যাতে ফোনে শুধু ফোনই করা যায়। আর এস এম এস পড়া। কম্পিউটারে নেট বন্ধ কর। যে পেপারটা লিখছ সেটার ওপর ফোকাস ফেরাও। ঘাড় গুঁজে শেষ কর। যাতে দ্রুত পাবলিশ করতে পারো। যাতে সিভি ভালো হয়, মাইনে বাড়ে, অনেক টাকা হয়। যাতে দেশ গোল্লায় গেলেও তুমি বেঁচে যাও।
ঘণ্টাখানেক পর তার সিটের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম সে ভুরু কুঁচকে একমনে টাইপ করছে। নিষ্প্রাণ ফোন পড়ে আছে কোণে। ভালো লাগল। এই বাজারে একঘণ্টার জন্য কারও কাজে লাগলেই অনেক।
ভেবে ভেবে কয়েকটা টোটকা আরও লিখলাম। আপনারাও যদি কেউ দুঃখিত, স্তম্ভিত, বিপর্যস্ত হয়ে থাকেন, কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। আপনার যদি নাও লাগে, আমার নিজের জন্যই জমিয়ে রাখলাম। কখনও প্রয়োজন হলে নিজেকে মনে করাতে সুবিধে হবে।
১। খবরের নাগালের বাইরে যান। মনে রাখুন “ইনফর্মড” না থাকা আপনার জন্মগত এবং মূলগত অধিকার। যা হল কেন হল, কাদের জন্য হল, কী করলে নাও হতে পারত, সমস্ত রকম অ্যানালিসিস এড়িয়ে চলুন।
২। মনের মণিকোঠায় জপতে থাকুন, সত্যিমিথ্যের সঙ্গে বিশ্বাসের কোনও সম্পর্ক নেই। তর্কে নামবেন না। ওটা একটা প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্স আর্ট। ওতে জেতাহারা দিয়ে যদি কিছু প্রমাণ হয় তা হল কে বেটার তার্কিক। যে জিততে চায় তাকে জিততে দিন। হারলে মন খারাপ করবেন না। সবথেকে ভালো হয় খেলাটা সম্পূর্ণ পরিহার করতে পারলে।
৩। জয়ীদের অভিনন্দন জানান। অতখানি উদারতা জোগাড় করতে না পারেন চুপ করে সরে যান, আড়ালে বসে ঘা সারান। তারা সামনে এসে অঙ্গভঙ্গিসহ বিদ্রূপ করলে মাথা নামিয়ে নিন। মনে রাখুন, জিতলে আপনিও হয়তো ওইরকমই করতেন। আচ্ছা মেনে নিলাম আপনি করতেন না, এরা আপনার থেকে খারাপ লোক তাই করছে। করতে দিন। কিন্তু এরা আপনাকে পাচ্ছে কোথায়? প্রথম পয়েন্টটা আবার পড়ুন। নাগালের বাইরে যান।
৪। হ্যাঁ, জানি, আপনি যাঁদের কল্পনা করতে পারেননি, বাবা কাকা মামা মাসি পিসি, আপনার অতি আপনজনেরা, শয়তানের সাইড নিয়েছে। আপনি হতভম্ব। একটা কথা মাথায় রাখবেন। বাবা কাকা মামা মাসি পিসিদের বহিরঙ্গের চেহারাগুলো যেমন রাতারাতি বদলায়নি, অন্দরেরটাও না। লোকে এত অল্পে বদলায় না। আসলটা চিরদিন এইরকমই ছিল, ওপরের খোলসটা হালকা স্ক্র্যাচ করতেই বেরিয়ে পড়েছে। নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিন যে আপনারও একটা খোলস আছে। হয়তো আরেকটু মোটা, তাই এখনও কিছু বেরোয়নি। বেশি খোঁচাখুঁচি করলে তার তলা থেকেও কী বেরোবে কে জানে।
৫। গাছের কাছে যান। হাসবেন না। সিরিয়াসলি বলছি। হাতের কাছে বড় গাছ পেলে তার দিকে তাকিয়ে থাকুন। দেখুন, কী নির্বিকার। প্রেরণা নিন। গাছ না পেলে স্ক্রিনসেভারে উইটি টুইটের স্ক্রিনশটের বদলে গাছের ছবি সাঁটুন। অফিসের ডেস্কে, পড়ার টেবিলে মানিপ্ল্যান্ট রাখুন। চুপ করে থাকলেও কানে কথা তো আসেই, আমারও আসছে। বেগতিক দেখলেই আমি গাছ তুলে গুটি গুটি প্যান্ট্রির দিকে হাঁটছি। পুরোনো জল পালটে, শিকড়ে লেগে থাকা কালো নরম তন্তু সরিয়ে দিয়ে নতুন জল ভরছি। আজ সকালেই পুঁচকে একটা পাতা উঁকি দিয়েছে। পোষ্য থাকলে তার গলা জড়িয়ে বসুন। মোদ্দা কথা মানুষ অ্যাভয়েড করুন। বিরোধীপক্ষ, সেমপক্ষ উভয়কেই। একদলের সঙ্গে আপনি এঁটে উঠবেন না, আরেকদলের সঙ্গে লেবু কচলে বৃথা প্রেশার বাড়বে।
৬। বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। বিশুদ্ধ, অরাজনৈতিক বিনোদন। এই দুনিয়ায় কিছুই অরাজনৈতিক নয় ইত্যাদি তত্ত্বের ফাঁদে পা দেবেন না। টিভির খবরের চ্যানেলগুলোকে বিশ্রাম দিন। এতদিন সাংবাদিকরা চাকরি বাঁচাচ্ছিলেন। ওঁদের আর ফুটেজ দেওয়ার দরকার নেই। অনেক ফাঁকি মেরেছেন, এবার নিজের চাকরি বাঁচান। দেখতেই হলে নাপতোল চ্যানেলে রঙিন প্রেশারকুকারের স্টক এসেছে, তাতে দুটো সিটিতেই ঘুগনি কেমন সুসিদ্ধ হচ্ছে দেখুন। ইউটিউবে কুকুরছানার সাঁতার শেখা আর বেড়ালছানার সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘুমোনোর ভিডিও দেখুন। মোবাইলে হইচই অ্যাপ নেওয়া আছে? ওতে শাহজাহান রিজেন্সি এসেছে, সেটাও দেখতে পারেন। দুঃখ ভোলাতে এফেক্টিভ।
৭। বেড়াতে ভালো লাগলে চট করে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসুন। মানুষহীন, গাছবহুল জায়গায় যেতে পারলে ভালো হয়। যদি ছুটি না পান, তাহলে নিকটবর্তী বোটানিক্যাল গার্ডেন আর চিড়িয়াখানা (গাছ এবং অমানুষদের সঙ্গের জন্য) ঘুরে আসুন। দিল্লির মতো ঐতিহাসিক শহরে যদি থাকেন, ভাঙাচোরা প্রাসাদের নির্জন কোণার পাঁচিলে পা ঝুলিয়ে বসুন। ভাবুন, এই সব রাজারাজড়ারাও পঞ্চভূতে বিলীন হয়েছে, এরাও হবে। হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল। ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মশা হলেও, তার ভবিতব্য একই।
Thank you Kuntala...
ReplyDelete"যে পেপারটা লিখছ সেটার ওপর ফোকাস ফেরাও। ঘাড় গুঁজে শেষ কর। যাতে দ্রুত পাবলিশ করতে পারো। যাতে সিভি ভালো হয়, মাইনে বাড়ে, অনেক টাকা হয়। যাতে দেশ গোল্লায় গেলেও তুমি বেঁচে যাও...." :)
আল্টিমেটলি যে বাঁচাবে, তার শরণ নেওয়াই ভালো।
Delete5 no ta on its own bhalo. Manush avoid korar jonye na. Briksha sarbongsoha.
ReplyDeleteহ্যাঁ, গাছ বেশ জরুরি জিনিস।
DeleteSesh line ta fatafati...
ReplyDeleteহাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল। ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মশা হলেও, তার ভবিতব্য একই।
Apnar sobkota boktobyer songe ekmot :|
থ্যাংক ইউ।
Deleteঅঅঅঅওসাম। দুরন্ত।
ReplyDeleteধন্যবাদ।
DeleteOnline shopping siteguloi ba pore thake keno. Jabong, myntra,flipkart , amazon er doulotei to etodin eto frustration e thele soriye rakhlam.
ReplyDeleteআমি ওদিকে পয়সা খরচের ভয়ে ঘেঁষি না আসলে। তাছাড়া বাড়িতে জিনিস রাখারও জায়গা নেই।
Deleteশাহজাহান রিজেন্সি এবং তার পূর্বসুরি চৌরঙ্গী দুটি-ই অতি depressing সিনেমা। ওটা বোধহয় না suggest করা-ই ভালো। কিন্তু আপনার যদি এই গুলো পছন্দের সিনেমা হয়ে থাকে তাহলে argument করবো না। আপনাকে walkover দিয়ে দেব।
ReplyDeleteচৌরঙ্গী দেখিনি, শাহজাহান দেখে হাসি পেয়েছিল বলে সাজেস্ট করলাম। তবে হাসিকান্নার ট্রিগার সবার আলাদা হতে পারে মানছি।
Deleteতারাপদ রায় এর রম্যরচনা সমগ্রও পড়তে পারেন, ভালো কাজ দেবে মনে হয়। আমি এখন পড়ছি।
ReplyDeleteএটা ভালো সাজেশন।
DeleteAmi Facebook app ta delete korlam ageyr robibaar, purbabhash peye.
ReplyDeleteJa pochhondo hochhe na, sheta meney nitei hobe. Ta bole sheta niye celebration dekhte hobe amaake, amaar nijer mejaj gorom kore, tar kono maane nei
আমার মতে সঠিক সিদ্ধান্ত। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্ব সর্বাগ্রে।
DeleteDurdanto.. chorom.. all points.. ami ei bochor tv channel gulo theke dure achi tai onekta sustho bodh korchi.. ২। মনের মণিকোঠায় জপতে থাকুন, সত্যিমিথ্যের সঙ্গে বিশ্বাসের কোনও সম্পর্ক নেই। ekdom thik..
ReplyDeleteআমি খবরের চ্যানেল ত্যাগ দিয়েছি অনেক বছর। এ বছর সে সিদ্ধান্তের জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
DeleteShajahan regency r ekta review likhun na..ektu annyo kichhu pori..
ReplyDeleteওরে বাবা।
DeleteHahaha..oi "ore baba" tai jatheshto!!
DeleteAmi robi thakur-e ashroi niyechi, "tobu bihongo, ore bihongo mor, akhoni ondho bondho koro na pakha"
ReplyDeleteরবি ঠাকুরের মনের জোর লিজেন্ডারি ছিল।
DeleteAmar ager theke booking kora chilo, 22-25 Nagarhole forest and Coorg coffee plantation e vacation. Date bhebe korini, tarpore bujhlam ki durdanto decision chilo! 23rd amra dupure ekta durdanto lunch ar raate homestay te totodhik bhalo dinner korlam. Tarpore mone porlo, ajke to result day chilo tokhon dekhlam phone e kono signal nei :D
ReplyDeleteএইটা চমৎকার সমাপতন হয়েছে। ভালো ঘুরলেন আশা করি।
DeleteDurdanto hoyechhe lekhata....
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ।
Deleteami ektai jinish korchhi, torker theke duure thakchhi. pranpon cheshta korchhi. besh kichhu bondhu bichhed howar sombhabona dekha diyechhe. tara jodi rajnoitik motobaad er karone bichhed kore tahole tara bondhu i noy - eta bishwas korleo, okaron tokro jhogra kore tiktota barate chaichhi na. atmiyo der katha teo hnu hnaa kore chaliye dichhi. khobor dekhechhi sob i, manoshik biporjoy o holo, kintu motamot poshon beshi na kore arektu mature holum.
ReplyDeleteএইটা আমারও ডিপ্রেসিং লাগে। বিপর্যয় আমাদের যত শিক্ষা দেয়, অনুকূল ঘটনাপত্র তার এক কণাও দেয় না।
Deleteদুর্দান্ত - ইচ্ছাডানা
ReplyDeleteআমি অবশ্য ওই তর্ক এড়িয়ে যাবার রাস্তা ধরেছি | - ইচ্ছাডানা
Deleteএকেবারে ঠিক রাস্তা ধরেছেন।
Deleteবেশ বলেছেন। "কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো" - এটাই সেরা উপায় ভাল থাকার :D
ReplyDeleteধন্যবাদ।
DeleteDurdanto laglo lekha. Khub bhalo bolechen.
ReplyDeleteIndrani
থ্যাংক ইউ।
DeleteBesh!! Tobe reaction ta sevabei deoa Jak...
ReplyDelete