দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন
উৎস গুগল ইমেজেস
অনেকদিন পর মধুর বিস্ময়। বাড়ির কাছে বাংলা সিনেমা রিলিজ করেছে। গত বেশ কয়েকটা বাংলা সিনেমা নয়ডার লজিক্সে গিয়ে দেখেছি। এটাও সেভাবেই দেখতে রাজি ছিলাম। এমন কিছু পরিশ্রমের ব্যাপার নয়, মেট্রোতে মিনিট চল্লিশ। শুক্রবার কাজের চাপ ছিল। বললাম, শনিবার যাই চল। সবুরে সুস্বাদু মেওয়া ফলল, উইকএন্ডে দেখি বাড়ির কাছের হলেও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন। চল্লিশ মিনিটের মেট্রো হয়ে গেল দশ মিনিটের অটো। বুকমাইশো-তে টিকিট কেটে চলে গেলাম।
‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’-এর গল্প হচ্ছে এইরকম। বনপুকুরিয়ার দেবরায় বাড়ি থেকে একটি অ্যান্টিক ছুরি চুরি যায়। সেই চুরি হওয়া ছুরি সোনাদার হাতে পড়ে এবং ছুরিতে লুকোনো গুপ্তধনের ধাঁধা দাদা পড়ে ফেলেন। বোঝাই যাচ্ছে সেয়ানা কোনও লোক বা লোকেরা ছুরির পেছনে পড়েছে, এবং দেবরায় বাড়িতে লুকোনো গুপ্তধন হাতানোর ফন্দিতেই। তাই যখন বেরোল দেবরায় বাড়ির ছোট ছেলে সোনাদার ছাত্র এবং তার ভারি ইচ্ছে যে এবার দুর্গাপুজোয় সোনাদা, আবীর (অর্জুন চক্রবর্তী) ও ঝিনুককে (ঈশা সাহা) নিয়ে বনপুকুরিয়ার দেবরায় বাড়ির পুজো দেখতে আসেন, তখন আর সোনাদা না করলেন না।
পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জির সোনাদা ওরফে সুবর্ণ সেন সিরিজের প্রথম ছবি 'গুপ্তধনের সন্ধানে' রিলিজ করেছিল আগের বছর, আমরা দেখেওছিলাম। তার সঙ্গে এ সিনেমার মিল আছে। গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড বাংলার ইতিহাস। সুবর্ণ সেন ইতিহাসের প্রফেসর, কাজেই প্রেক্ষাপট ঐতিহাসিকই হবে। আগেরটায় শাহ সুজার গুপ্তধনের খোঁজ চলেছিল, এবার কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের গুপ্তধনের খোঁজ। তৃতীয় মিল, সেই পুরনো বাড়ি, সেই গুপ্তধন। এবারের গল্প শুরু হয় আগেরটার মতোই ভয়েস ওভারে গুপ্তধনের উৎস বর্ণনা করে। কীভাবে জগতশেঠের অপার ধনসম্পত্তি ক্রমে কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ঘুরে বনপুকুরিয়ার বড়লোক দুর্গাগতি দেব রায়ের হাতে এসে পড়ল।
(দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, বাংলার ইতিহাসের ওই সময়টা কী রোমহর্ষক। চুরি, জালিয়াতি, খুন, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতিশোধ। অবান্তরের পাঠকদের মধ্যে যদি কেউ ঐতিহাসিক থ্রিলার লিখতে চান, ওই সময়টায় ফোকাস করতে পারেন। আর যদি কারও কাছে অলরেডি ওই সময়ের মালমশলা নিয়ে লেখা থ্রিলারের খোঁজ থাকে, আমাকে জানাবেন প্লিজ।)
দুটো সিনেমার অমিলও আছে কিছু। সেই অমিলগুলোর জন্যই ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ আমার ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’র থেকে ভালো লেগেছে। এই সিনেমাটা আগেরটার থেকে বেশি টানটান। প্লটের মোচড়ও বেশি। সংলাপেও লম্বা লম্বা ইতিহাসের ক্লাস নেওয়ার লোভ অনেক বেশি সামলানো গেছে। বাঙালির খাওয়াদাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়িটা এ সিনেমাতেও আছে, তবে ভুল ইংরিজি বলা নিয়ে কমেডিটা বাদ পড়েছে, এইটা ভালো। আবীর আর ঝিনুকের চরিত্রে অর্জুন ঈশার জুটি দিব্যি। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বাড়ির বড়ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, জুন মালিয়া বড়বউ, কৌশিক সেন বিদেশবাসী মেজছেলে, লিলি চক্রবর্তী পিসি। খরাজ পারিবারিক বন্ধু।
আর যার কথা না বললেই নয়, তিনি হচ্ছেন স্বয়ং সোনাদা, প্রফেসর সুবর্ণ সেন। কিশোরোপযোগী সিনেমার হিরোর চরিত্রে আবীরের চেহারা, উপস্থিতি এত মারাত্মক উপযুক্ত যে বলার নয়। দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনের দু’নম্বর দৃষ্টিনন্দন ব্যাপার হল লোকেশন। আমার খুব জানার ইচ্ছে শুটিং কোথায় হয়েছে, জানলে বেড়াতে যাওয়া যেত।
আজকাল আমাদের সিনেমা উপভোগ করার ক্ষেত্রে কী কী আছের থেকে কী কী নেই সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওপরচালাকি, বিশ্বপাকা পার্শ্বচরিত্র, ছত্রে ছত্রে উইট আর ওয়ার্ড প্লে আর পান না থাকলেই আমার আর অর্চিষ্মানের যে কোনও বাংলা সিনেমা চমৎকার লাগে। কাজেই দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন এমনিই ভালো লাগত। তার ওপর গোটা সিনেমাটার মধ্যে একটা ছোটবেলার আনন্দমেলাসুলভ অনুভূতি জড়িয়ে থাকায় দুজনেরই সিনেমাটা বেশ ভালো লেগেছে।
একটাই চিন্তার, সুবর্ণ সেনকে ইতিহাসের প্রফেসর করে একটা সম্ভাবনা অলরেডি সংকীর্ণ করে ফেলা হয়েছে, সম্ভবতঃ পরবর্তী রহস্যগুলোও সবই ঐতিহাসিক হবে। তাতে অসুবিধে নেই, বাংলার ইতিহাসে ভেদ করার মতো অনেক রহস্য আছে আমি নিশ্চিত। কিন্তু গুপ্তধনের ট্রোপটা থেকে বেরোতে পারলে ভালো। কারণ ওই ট্রোপের কান টানলে বনেদি বাড়ি, বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো, ছেলের বিদেশ থেকে ভিজিট, সাবেকি আধুনিকতার লড়াই ইত্যাদি ট্রোপগুলোও আপসে আসে।
সোনাদা সিরিজের তৃতীয় সিনেমাও আসছে এবং নতুন আকর্ষণ সহ, শেষ দৃশ্যে পরিষ্কার। আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, সে আকর্ষণ অম্লমধুর, তবু দেখতে যে যাব সে একরকম নিশ্চিত।
Amio dekhe elam, khub bhalo legeche. Onekdin bade sudhu Delhi te noi Gurgaon teo Bangla cinema release korlo. Amonki Pujor somoy je 4/5 ta movie release korechhilo- tar ektao Gurugram e dakhano hoyni. Tobe Arjun er khabar byapar ta ektu besi barabari kora hoyechhe. Mitinmasi'r husband er thekeo besi okormonno, khali gak-gak kore khachhe...ar token hisebe ekbar jole dub diyechhe.
ReplyDeleteহাহা, তোমার অকর্মণ্যতার বেঞ্চমার্কটা চমৎকার, রণদীপ। আমিও এবার থেকে ব্যবহার করব। খাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক। অত নোলা পোষায় না। ওকে ফুডি বলে না, বলে হ্যাংলা। তবে অতক্ষণ যে দম বন্ধ করে জলের তলায় ছিল তারপর আবার আন্ডারওয়াটার ফাইটিং, খানিকটা মুখরক্ষা হয়েছে আরকি।
Deleteপুজোর বাংলা সিনেমা একটাও আমাদের এখানেও আসেনি এবং আমরা আশায় থেকে থেকে মারাত্মক বোকা বনেছিলাম।
বাই দ্য ওয়ে, মিতিনমাসি বড় পর্দায় আসছেন জান তো? আমি অলরেডি উত্তেজিত।
Deletehttps://www.anandabazar.com/entertainment/arindam-sil-starts-a-new-film-with-koel-mallick-dgtl-1.997831
আমরাও গত রবিবার দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন দেখলাম| কয়েকটা খটকা ছাড়া ভালই লেগেছে| এই সিনেমার শুটিং হয়েছে ঝাড়গ্রামের রাজবাড়িতে| যেটা বনপুকুরিয়ার দেবরায় বাড়ি| একই রাজবাড়ি টিনটোরেটোর যীশু সিনেমাতেও দেখানো হয়েছিল| ক্লাইম্যাক্সে যে সিঁড়িওয়ালা বাড়িটা দেখানো হয়েছে সেটা শিমুলতলায়|
ReplyDeleteসাগরদ্বীপে যকের ধন নামে একটা সিনেমা আসছে, টিজার এসেছে-
https://www.youtube.com/watch?v=eWLMQIu8KIg
কোয়েল মল্লিক মিতিনমাসি হয়ে কিন্তু মেনে নিলেন উনি মাসির বয়েসি হয়েছেন, সাধারণতঃ অভিনেতাদের বয়স বাড়ে না| শুনলাম মিতিন মাসির সিনেমায় বিনয় পাঠকও অভিনয় করছেন, ওঁর অভিনয় আমার দারুণ লাগে|
বা বা, নতুন নতুন বাংলা সিনেমার খবর পেয়ে দারুণ লাগল। থ্যাংক ইউ, সৌগত। বিনয় পাঠক আমারও প্রিয়ও। ঝাড়গ্রাম এবার যেতেই হবে।
Deletehttps://www.wbtdcl.com/home/lodge_search?Lodge_id=NTI&Lodge_destinationName=NDU
Deleteঝাড়গ্রামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টুরিস্ট কমপ্লেক্স হয়েছে, একদম রাজবাড়ির পাশেই| আমি যদিও যাইনি তবে শুনেছি খুব ভালো|
থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
Deleteদুর্গেশগড়ের যে দুর্গ - যেখান থেকে রত্নভাণ্ডার উদ্ধার হয় ওটা আসলে বিহারের শিমুলতলায়। মিজোরামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী লালডেঙ্গার স্বাস্থ্যনিবাস - যা ওখানকার লোকমুখে 'নলডাঙা রাজবাড়ি'। সামনেই লাট্টু পাহাড় - যে পাহাড়ের আড়াল থেকেই সত্যজিত তাঁর 'কাপুরুষ ও মহাপুরুষ'-এ বিরিঞ্চিবাবার সূর্য-ওঠানো দেখিয়েছিলেন। এই বাড়িটা কয়েক দশক আগের ছবি 'বারবধূ'-র লোকেশনও।
Deleteআরে শিমূলতলা তো গেছি! দেখেছেন, এতদিন হয়ে গেছে যে চিনতেই পারিনি। অগুন্তি ধন্যবাদ, শুভ্র। আরেকবার যে শিমূলতলা ঘুরে আসতে হবে সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
Delete